একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় পর্ব-৩৩+৩৪+৩৫

0
353

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_33(ধামাকা)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

রায়ান সমানে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে চলেছে প্রভার সুস্থতার জন্য। সে অপেক্ষায় আছে কোন ভালো খবর শোনার আশায়। রায়ান চায় তার প্রভা আবার তার এবং তার সন্তানদের কোলে ফিরে আসুক। অবশেষে তার চাওয়া বোধহয় আল্লাহ পূরণ করল। ডাক্তার এসে বললো,”আপনার স্ত্রী এখন অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত। তবে উনি অনেক দূর্বল হয়ে পড়েছেন। ওনার খেয়াল রাখবেন।”

রায়ান আল্লাহকে লাখো শুকরিয়া জানায়। এবং বলে,”আমি কি প্রভাকে দেখতে যেতে পারি?”

“হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।”

রায়ান প্রভাকে দেখতে যায়। প্রভার তখন জ্ঞান ফিরেছিল। সে প্রভার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”তোমাকে আবার ফিরে পেয়ে আমি অনেক খুশি। আর তোমাকে আমার থেকে দূরে যেতে দেব না। তোমাকে আগলে রাখব। আমাদের সন্তানদের নিয়ে সুন্দরভাবে বাকি জীবন কাটাবো।”

প্রভা উত্তরে হেসে বলে,”আল্লাহ চাইলে তাই হবে। আমিও চাই তোমাদের সবার সাথে সুখে বাকিটা জীবন পার করে নিতে।”

২ মাস পর,
রায়ান ও প্রভার ছেলের নাম রাখা হয়েছে প্রত্যুষ। প্রণালী তার ভাই অন্ত প্রাণ। ভাইকে নিয়েই তার সারাদিন কে’টে যায়। প্রভার অবস্থা এখনো বেশি ভালো নয়। প্রত্যুষ হবার পর থেকেই অনেক বেশি দূর্বল সে। একদম শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছে। ডাক্তার বলে দিয়েছে প্রভার ইমিউনিটি সিস্টেম একেবারে কমে গেছে। তার উপর প্রত্যুষের সিজার করে জন্ম হয়েছে এবং সিজারের সাথে ইনফেকশনের সৃষ্টি হয়েছে। যা প্রথমদিকে বোঝা যায়নি। এখন পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। প্রভা বিছানা থেকে একদম উঠে দাঁড়াতে পারে না। তাই প্রত্যুষের দেখাশোনার জন্য একজন নার্সের ব্যবস্থা করেছে রায়ান। সেও যথাসম্ভব নিজের স্ত্রী-সন্তানের খেয়াল রাখছে।

প্রভার জন্য রায়ানের এখন অনেক চিন্তা হয়। তাই আজ নিজের অনেক জরুরি সভা থাকলেও সে আসে নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীকে দেখার জন্য। আর এসেই দেখল প্রভা গোঙাচ্ছে। রায়ান প্রভার মাথার পাশে বলে। তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার? ডাক্তার ডাকবো?”

প্রভা কষ্টমিশ্রিত গলায় বলে,”আর না রায়ান। আমি বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আমি আর পারছি না।”

রায়ান অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকে প্রভার দিকে। প্রভার চোখেমুখে আজ কোন কষ্ট নেই। সে হাসছে। রায়ানের হাতটা ধরে বলে,”জানো আমি না তোমাকে ভালোবাসি। অনেক বেশি ভালোবাসি। আমার সন্তানদেরকেও আমি অনেক ভালোবাসি। তোমাদের ছেড়ে আমি কোথাও যেতে চাইনা কিন্তু……আমার হাতে মনে হয় আর বেশি সময় নেই।”

“এসব তুমি কি বলছ প্রভা? কিছু হবে না তোমার।”

প্রভা স্মিত হেসে বলে,”জানো যখন কানাডায় তোমার জীবন সংশয় চলছিল তখন আমি আল্লাহকে বলেছিলাম আমার জীবনের বিনিময়ে যেন তোমায় বাঁচিয়ে দেয়। আল্লাহ বোধহয় আমার সেই কথা শুনেছেন। তাই আমার কোন আফসোস নেই। শুধু তোমার কাছে একটাই আবদার রাখব আমার সন্তানদের তুমি দেখে রেখো। কখনো ওদের মায়ের অভাব হতে দিও না। চাইলে একটা ভালো দেখে মেয়েকে…”

“প্রভা! আমি কিন্তু খুব রেগে যাচ্ছি। তুমি ছাড়া আমার জীবনে আর কেউ স্থান পাবে না।”

প্রভার চোখে এবার জল জমে। সে বলে,”আমি বোধহয় তোমাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি রায়ান। আমার নিজের মৃত্যুর কথা ভেবে একটুও কষ্ট হচ্ছে না। আমার কষ্ট হচ্ছে শুধু এটা ভেবে যে আমার মৃত্যুর পর তোমার কি হবে? তুমি কিভাবে সামলাবে নিজেকে? মধ্য রাতে তোমার ঘুম ভেঙে গেলে তুমি কার বুকে মাথা রেখে প্রশান্তির শ্বাস নেবে? সারাদিন সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং করে এসে তুমি কার মুখ দেখে শান্তি পাবে? তোমার অগোছালো জামা-কাপড় কে গুছিয়ে রাখবে? তোমার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কে তোমার সামনে এনে দেবে?”

রায়ানের চোখেও জল জমেছে। প্রভা রায়ানের চোখের জল মুছে দিয়ে বলে,”তুমি প্লিজ কেঁদো না। আমি তোমায় এভাবে দেখতে পারব না। আমি তোমার হাসিমুখ দেখতে চাই।”

“প্রভা…”

“অনেক কষ্ট করেছি আমি। আর পারছি না। এবার আমি শান্তিতে ঘুমাতে চাই।”

“তুমি ঘুমাও প্রভা। আমি এখানেই আছি।”

“রায়ান…”

“হুম বলো।”

“তোমার ইনোসেন্ট গার্ল তোমাকে অনেক ভালোবাসে।”

“আমিও আমার ইনোসেন্ট গার্লকে অনেক ভালোবাসি।”

“তোমার মনে আছে আমাদের প্রথম দেখার কথা? কিভাবে ধাক্কা খেয়েছিলাম আমরা। আমি পরপারেও আপনার সাথে দেখা করতে চাই। আবার তোমার সাথে ধাক্কা খেতে চাই। তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই।”

রায়ান অনবরত কেঁদেই চলেছে। প্রভা৷ বলে,”এবার একটু হাসো। আমি তোমায় হাসিমুখে বিদায় দিতে চাই। ধরে নাও এটাই আমার শেষ ইচ্ছা।”

রায়ান নিজের চোখের জল মুছে অল্প হাসে। হাসিতে ছিলে মলিনত্বের ছোয়া। প্রভাও হাসে রায়ানের দিকে তাকিয়ে। এরমধ্যে প্রণালী প্রত্যুষকে কোলে নিয়ে চলে আসে। প্রভা প্রণালীকে নিজের কাছে ডেকে বলে,”তোমার ভাই আর বাবাকে দেখে রাখার দায়িত্ব কিন্তু তোমার।”

প্রণালী কিছু বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। প্রভা আবারো রায়ানের দিকে তাকায়। অত:পর তার হাতটা ধরে বলে,”তাহলে আমি এবার ঘুমিয়ে পড়ি?”

রায়ান কিছু বলে না। সে বুঝতে পারছে প্রভা এবার চোখ বন্ধ করলে আর কখনো চোখ খুলবে না। রায়ান প্রভার সামনে আর কাঁদতে চায়না। নিজের প্রিয়তমাকে এভাবে বিদায়ও দিতে চায়না। প্রভা নিজের দুচোখ বন্ধ করে। রায়ান নিজ স্ত্রীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। নিজের থেকেও বেশি।”
~~~~~~~~~~~
পুরো বাড়ি জুড়ে শোকের মাতম চলছে। অনুরাধা, সৌভিক সহ রায়ানের সকল শুভাকাঙ্ক্ষী, আত্মীয়-স্বজন এসে উপস্থিত হয়েছে। তারা সকলেই প্রভার জন্য মর্মাহত। অনুরাধা তো কাঁদতে কাঁদতে কয়েকবার জ্ঞানও হারিয়েছে। প্রভার সাথে তার সেই ছোট বেলাকার বন্ধুত্ব। প্রভার এই মৃত্যু সে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না। ছোট্ট প্রণালীও হাউমাউ করে কাঁদছে নিজের মায়ের জন্য। প্রত্যুষ, সে তো জানেই না সে কি অমূল্য সম্পদ হারিয়েছে। তবে বাচ্চাটাও আজ কাঁদছে। হয়তো সবাইকে কাঁদতে দেখে সে কাঁদছে। তবে এত সবকিছুর মধ্যেও রায়ান স্বাভাবিক আছে। সে আর কাঁদছে না। কারণ তার প্রভা যে তাকে কাঁদতে বারণ করেছে।

শেষবারের মতো প্রভাকে দেখে নিলো সে। কিছুক্ষণ পরই প্রভাকে কাফনের কাপড়ে মুড়িয়ে দেওয়া হবে। প্রভার নিথর মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে ছোট্ট একটা চুমু খেয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে সে বলে,”ভালোবাসি, তোমায় আমি অনেক ভালোবাসি। আজীবন এভাবেই ভালোবেসে যাব।”

প্রভার জানাজা অনুষ্ঠিত হলো। এরপর রায়ান প্রভার কফিন বহন করে তাকে নিয়ে কবরস্থানে রেখে আসল। যেই মেয়েটাকে সবসময় আগলে রেখেছে তাকে কিনা আজ নিজের থেকে এত দূরে রেখে আসতে হয়েছে। প্রভাকে সমাধিস্থ করে এসে আকরাম খানের মুখোমুখি হয় রায়ান। নিচু কণ্ঠে বলে,”আমি আপনাকে দেয়া কথা রাখতে পারলাম না বাবা। পারলে আমায় ক্ষমা করে দিয়েন। আমি আপনার মেয়েকে আগলে রাখতে পারলাম না।”

আকরাম খান রায়ানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে। রায়ানও এবার আর নিজেকে সামলে রাখতে পারে না। কাঁদতে কাঁদতে বলে,”প্রভা আমায় একা করে কিভাবে চলে গেল? ওর কি একবারো আমার কথা মনে পড়ল না?”

রায়ানের জীবন যেন নিঃসঙ্গতায় ডুবে গেল। প্রভার সাথে ৬ বছরের সংসার যাত্রার ইতি ঘটল। রায়ান জানে বাকি জীবন তাকে এই নিঃসঙ্গতা নিয়েই কাটাতে হবে। কারণ প্রভার স্থান সে আর কাউকে দেবে না।

রায়ান বিমর্ষ মন নিয়ে বসে রইলো ঘরে। ভাবতে লাগল প্রভার কথা। তার সাথে কাটানো সুন্দর মুহুর্ত গুলো। পাশের ঘরের রেডিও থেকে বাজছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত গান,
“যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে
আমি বাইব না…
আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে গো
যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে
চুকিয়ে দেব বেচা কেনা, মিটিয়ে দেব গো
মিটিয়ে দেব লেনা দেনা
বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে

তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে
তারার পানে চেয়ে চেয়ে
নাইবা আমায় ডাকলে”

to be continue….

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_34(নতুন অধ্যায়)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

১৮ বছর পর,
আকাশে মেঘের ঘনঘটা। যেকোন সময় বৃষ্টি নামবে। আকাশও তর্জন গর্জন শুরু করে দিয়েছে। এসবের মধ্যেই হাতে ছাতা নিয়ে দৌড়ে চলেছে ২৩ বছর বয়সী এক তরুণী৷ তার চোখেমুখে খুশির ঝলক স্পষ্ট। পথিমধ্যে এক বৃদ্ধ তাকে দেখে বলে,”আস্তে দৌড়াও মা, পড়ে যাইবা তো। তোমায় এত খুশি লাগছে কিল্লাই?”

মেয়েটি হেসে উত্তর দিলো,”আমার ভাই মেডিকেলে চান্স পেয়েছে চাচা। আমি এই খুশির খবরটা পেয়েই তো এভাবে ছুটে যাচ্ছি বাড়ির দিকে। আমার ভাইটার জন্য দোয়া করবেন।”

বলেই মেয়েটি আবার দৌড়াতে শুরু করে। একদম নিজের বাড়ির সামনে এসে দম নেয়। বাড়িতে প্রবেশ করে প্রথমেই নিজের ভাইয়ের রুমে যায়। কিন্তু সেখানে তাকে দেখতে পায়না৷ মেয়েটি বুঝতে পারে তার ভাই এখন কোথায় আছে। সে ছুটে চলে যায় নিজের মায়ের রুমে। তার ভাবনাই সঠিক। নিজের মায়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার ভাই প্রত্যুষ। প্রণালী হেসে এগিয়ে যায় তার ভাইয়ের দিকে। প্রত্যুষের কাধে হাত রাখতেই প্রত্যুষ স্বাভাবিক ভাবে ফিরে তাকায়। প্রণালী দেখতে পায় তার ভাইটা কাঁদছে। সাথে সাথেই সে জড়িয়ে ধরে নিজের ভাইকে৷ অতঃপর শান্ত গলায় বলে,”পাগল ছেলে! আজকের মতো একটা খুশির দিনে তুই এভাবে কাঁদছিস কেন?”

প্রত্যুষ ব্যথিত কণ্ঠে বলে,”আজ মা বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতো। তাই না আপি?”

প্রণালীর চোখও এবার জলে ভিজে যায়। সে তাকায় তাদের মা প্রভার ছবির দিকে। আজ ১৮ বছর হয়ে গেছে প্রভার মৃত্যুর। মাকে ছাড়া ১৮ বছর পার করে দিল তারা দুজনে। প্রণালী তো তবুও মায়ের ভালোবাসাটুকু পেয়েছিল মায়ের মুখটাও মনে পড়ে অল্পস্বল্প। কিন্তু তার হতভাগা ভাইটার তো সেই সৌভাগ্যও নেই। মাত্র ২ মাস বয়সে মাকে হারিয়েছে সে। কিন্তু মায়ের প্রতি ভালোবাসার বিন্দুমাত্র কমতি নেই। তাই তো মায়ের প্রফেশনটাই বেছে নিলো সে। প্রণালী প্রত্যুষকে জড়িয়ে ধরে। তার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত স্বরে বলে,”মা যেখানেই থাকুক না কেন, তোর এই সাফল্যে অনেক খুশি হয়েছে ভাই।”

দরজায় দাঁড়িয়ে ভাই-বোনের এই সুন্দর মুহুর্ত গুলো দেখছিল রায়ান। তার চোখেও জল এসে গেছে। আজ ১৮ বছর হয়ে গেল তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে হারিয়ে ফেলেছে। তারপর থেকে দুই ছেলে-মেয়েকে ঘিরেই তার জীবন।। রায়ানের মধ্যেও এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। বয়স ষাট ছুঁইছুঁই। চুল, দাঁড়িতে পাক ধরতে শুরু করেছে। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। একজন ছাপোষা বাঙালি পিতার মতোই তার অবস্থা।
প্রত্যুষের নজর যায় তার বাবার দিকে। সে বলে,”বাবা, তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? ভেতরে আসো।”

প্রণালীও তাকায় নিজের বাবার দিকে। রায়ান ভেতরে এসে প্রত্যুষকে অভিনন্দন জানিয়ে বলে,”আমি অনেক খু্শি হয়েছি প্রত্যুষ। আমি আশা করি তুমিও তোমার মায়ের মতো অনেক ভালো ডাক্তার হতে পারবে।”

আর কিছু না বলেই তিনি চলে যান। প্রণালী প্রত্যুষকে বলে,”ভাই তুই কি খেতে চাস বল, আমি তোকে আজ সেটাই রান্না করে খাওয়াবো।”

প্রত্যুষ সামান্য হাসার চেষ্টা করে বলে,”তোর যা ভালো লাগে তাই কর, আমি সেটাই খাবো।”

~~~~~~~~~~~~~
নিজের রুমে বসে ভার্সিটির কিছু এসাইনমেন্ট করছিল প্রণালী৷ বর্তমানে সে একটি স্বনামধন্য প্রাইভেট ভার্সিটিতে ল নিয়ে পড়ছে। এখন তার ফাইনাল ইয়ার চলছে। আর মাত্র কিছুদিন তারপরেই নিজের স্বপ্নকে ছুতে পারবে সে। এসব ভেবেই প্রণালী খুশি হচ্ছিল। এমন সময় হঠাৎ করে রায়ান তার রুমের বাইরে থেকে দরজা নক করে বলব,”আসতে পারি?”

প্রণালী রায়ানের হঠাৎ এমন আগমনে চমকে গেল। রায়ানকে এখানে একদমই আশা করে নি সে। কারণ ৫ বছর আগে থেকে তাদের মধ্যে কিছু দ্বন্দ্ব চলছে। যার জন্য রায়ান প্রণালীর সাথে ঠিক করে কথা পর্যন্ত বলে না। প্রণালী তবুও স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,”জ্বি, আসো।”

রায়ান রুমের ভেতরে এসে নিজের মেয়েকে বলে,”কি করছ?”

“কিছু এসাইনমেন্ট করছিলাম। কিছু বলবে?”

রায়ান কিছুটা হতাশ কন্ঠে বলে,”তুমি তো জানোই প্রণালী আমি কি বলতে চাই। তোমাদের দুই ভাইবোনকে নিয়ে আমার যে কত চিন্তা হয় তুমি বোঝো না? প্রভাকে হারানোর পর এখন তোমরাই তো আমার সব। আমি চাইনা তোমাদের কোন বিপদ হোক। তোমাদের সুরক্ষিত রাখার জন্য তো আমি রাজনীতি ছেড়ে দিলাম। নিজের শহর চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় আসলাম। এসব কিছু কেন করেছি আমি? যাতে তোমাদের উপর কোন বিপদের আঁচ না পড়ে৷ অথচ তুমি সেই বিপদকেই আমন্ত্রণ জানাতে চাইছ। তুমি কেন বোঝো না প্রণালী তোমার জন্য আমার কতটা চিন্তা হয়?”

প্রণালী রায়ানের সব কথাই শোনে কিন্তু কোন প্রতিক্রিয়া জানায় না। সে জানে তার বাবার ভয়টা কোথায়। প্রভার মৃত্যুর পর রায়ানের মধ্যে আপনজনকে হারানোর ভয় জেকে বসে৷ এইজন্য নিজের ছেলে-মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে সে রাজনীতি ছেড়ে দেয়। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে বিজনেস শুরু করে। সবসময় চেষ্টা করেছে দুই ভাইবোনকে সুখী রাখার এমনকি দ্বিতীয় বার বিয়ের কথাও ভাবেন নি। প্রণালীর সাথেও রায়ানের সম্পর্ক ভালো ছিল। আসলে প্রত্যুষ ভীষণ চাপা স্বভাবের এবং খুব কম কথা বলে। সারাক্ষণ পড়ার মাঝেই থাকে। প্রচণ্ড ইন্ট্রোভার্ট হওয়ায় পরিবারের লোকের সাথেও তার কিছুটা মানসিক দূরত্ব আছে। সেখানে প্রণালী একদম বিপরীত। চঞ্চল, প্রাণবন্ত এবং ভীষণ আনন্দময় একটি মেয়ে। যেখানে থাকে সেই জায়গাই মাতিয়ে রাখে। সাথে ভীষণ প্রতিবাদীও সে। স্বাধীনচেতা মনোভাব নিয়েই বড় হয়েছে। প্রণালীর ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা সে একজন বড় উকিল হবে। আর রায়ানের ঠিক এটাই পছন্দ হয়নি। কারণ এই পেশায় অনেক ঝুঁকি রয়েছে এবং রায়ান চায়না তার সন্তানদের জীবনে নতুন করে কোন সমস্যা আসুক। ঠিক এই কারণে যখন ৫ বছর আগে প্রণালী ল’ নিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নেয় তখন থেকেই বাবার সাথে তার একটা মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়। তারপর থেকে রায়ান আর মেয়ের সাথে ঠিক করে কথা বলে না।আজ অনেকদিন পর তিনি নিজের মেয়ের সাথে নিজে থেকে কথা বলতে এসেছেন। প্রণালীও তাই নিজের বাবাকে রাগিয়ে দিতে চায়না। কিন্তু নিজের প্যাশনও সে ছাড়তে পারবে না। তাই প্রণালী এই বিষয়ে কথা বলতে চাইছিল সে। সে প্রসঙ্গ বদলে বলে,”বাবা, প্রত্যুষের এত বড় সাকসেসের কোন সেলিব্রেশন হবে না?”

“টপিক বদলানোর চেষ্টা করো না প্রণালী।”

প্রণালী বুঝতে পারে না এবার সে কি বলবে। তাই চুপ করে বসে থাকে। রায়ান বলতে থাকে,”আমি বুঝতে পারছি তুমি আমার কোন কথা শুনবে না। নিজের জেদেই তুমি অটল থাকবে। তাই আমিও আর তোমাকে কিছু বলব না৷ যা ইচ্ছা করো। তোমার মাকে তো অনেক আগেই হারিয়েছ এবার আমাকে হারালেই ষোলকলা পূর্ণ হবে।”

“বাবা! এসব কেমন কথা বলছ তুমি?”

রায়ান আর কিছু না বলে প্রণালীর রুম থেকে বেরিয়ে যায়। এদিকে প্রণালীর মন একদম খারাপ হয়ে যায়। তাই সে উদাস মনে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। সাথে করে সে নিজের ফোনটাও নিয়ে এসেছিল। সে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ানোর কিছুক্ষণ পরেই তার ফোন বেজে ওঠে। ফোনের দিকে তাকাতেই প্রণালীর মুখে হাসি ফুটে ওঠে। নাম্বারটা “প্রিয়তম” দিয়ে সেইভ করা। ফোনটা রিসিভ করতেই বিপরীত দিক থেকে কেউ বলে ওঠে,”নিশ্চয়ই এখন তোমার মন খারাপ?”

“তুমি কি করে বুঝলে? তোমার কাছে কি কোন সুপার পাওয়ার আছে শান্ত? সবসময় আমার মন খারাপের খবর তোমার কাছে কিভাবে পৌঁছে যায়?”

“এটাকে ট্যালিপ্যাথি বলে প্রণালী। যাদের মধ্যে ভালোবাসা বেশি থাকে তাদের মাঝে এটা বেশি কাজ করে।”

প্রণালী খুব খুশি হয় শান্তর কথা শুনে। শান্ত আর প্রণালীর মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক। তাদের প্রেম কাহিনিটাও কিন্তু বেশ রোমাঞ্চকর ছিল। শান্ত ছিল প্রত্যুষের হোম টিউটর। সেখান থেকেই প্রণালীর সাথে তার পরিচয়। শান্তর অসাধারণ ব্যক্তিত্ব প্রণালীকে মুগ্ধ করে এবং সে শান্তর প্রেমে পড়ে যায়। শান্তকে যখন সে নিজের মনের কথা ব্যক্ত করে তখন তো শান্ত কিছুতেই রাজি হয়না। কারণ সে একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আর প্রণালীরা এত বড়লোক। কিন্তু প্রণালী শান্তকে ঠিকই রাজি করিয়ে নেয়। তারপর থেকে ২ বছর ধরে তারা রিলেশনে আছে। প্রণালী তো ভেবে নিয়েছে উকিল হয়ে যাবার পরই সে রায়ানকে তাদের সম্পর্কের ব্যাপারে জানাবে। আর রায়ানের কাছেও এসব ধনী-গরিবের কোন পার্থক্য নেই। তাই রায়ানও খুশি খুশি সব মেনে নেবে। আর একটা সময় রায়ান হয়তো প্রণালীর প্রফেশনটাও মেনে নেবে। এসব ভেবে প্রণালীর দুঃখী মনে সুখের সঞ্চার ঘটে এবং সে খুশি মনে শান্তর সাথে কথা বলতে থাকে।

to be continue…

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_35
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রণালী আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই নিজের বাবা ও ভাইয়ের জন্য ব্রেকফাস্ট তৈরি করেছে। প্রত্যুষ চাউমিন খেতে অনেক পছন্দ করে। তাই ব্রেকফাস্টে সেটাই করেছে প্রণালী৷ ব্রেকফাস্ট তৈরি করার পর সে গেল প্রত্যুষের রুমে। সেখানে গিয়ে প্রণালী দেখল প্রত্যুষ বই পড়ছে। এতে অবশ্য সে অবাক হয়নি। প্রত্যুষ বরাবরই এমন। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই সে নামাজ আদায় করে পড়তে বসে। খাওয়া আর ঘুম ছাড়া বাকি সময় পড়াশোনাই করে ছেলেটা। প্রণালী প্রত্যুষের কাছে গিয়ে বলল,”ভাই, তুই তাড়াতাড়ি বাবাকে নিয়ে নিচে চলে আয়। আমি ব্রেকফাস্ট দিচ্ছি। আজ তো তোর মেডিকেলে প্রথম দিন। আমি এখন তোকে রেখে আসব।”

এই বলেই প্রণালী চলে যায়৷ প্রত্যুষের কোন কথা শোনার প্রয়োজন মনে করে না। এদিকে প্রত্যুষও কিছু বলার সুযোগটাও পায়না। সে তো পড়ে গেছে মাইনকার চিপায়। আগে তো প্রণালী আর রায়ান মিলে বাড়িটা মাথায় করে রাখত। আর যখন থেকে প্রণালীর উকিল হওয়া নিয়ে তাদের মাঝে ঝামেলা তৈরি হয়েছে তখন থেকেই তাদের মধ্যে কথাবার্তা কমে গেছে। তাদের কোন কথা বলার থাকলে তারা এভাবে প্রত্যুষকে বলে বলতে। নিজেরা মুখোমুখি হয়ে কথা বলেই না। প্রত্যুষ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সে জানে না তার বাবা আর বোনের এই মনোমালিন্য কতদিন চলবে। সে আর বেশি না ভেবে তার বাবাকে ডাকতে যায়।

রায়ানের রুমের সামনে গিয়েই প্রত্যুষ বলে,”বাবা, আপি ব্রেকফাস্ট করতে নিচে যেতে বলেছে।”

“তুমি যাও আমি যাচ্ছি। আর আজ তো তোমার মেডিকেলে প্রথম দিন, আমি কি তোমায় নিয়ে যাব?”

“আপি নিয়ে যাবে বলেছে।”

“আচ্ছা, ঠিক আছে।”

প্রত্যুষ চলে যায়। রায়ান নিজের ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রত্যুষকে দেখলেই তার প্রভার কথা মনে পড়ে। প্রত্যুষের চেহারার সাথে প্রভার চেহারার অনেক মিল। শুধু চেহারা নয় ব্যবহারেও দুজনের মধ্যে সাদৃশ্য অনেক। প্রত্যুষ যেন প্রভারই প্রতিরূপ। রায়ানের ইনোসেন্ট গার্ল প্রভার ❝ইনোসেন্ট বয়❞ এই প্রত্যুষ। শান্তশিষ্ট এবং ভদ্র, শুধু তাই নয় বেশ বাধ্য ছেলেও। রায়ান প্রণালীর কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মেয়েটা একদম মায়ের মতো হয়নি। বেশ চঞ্চল এবং জেদি তৈরি হয়েছে।

~~~~~
ব্রেকফাস্ট শেষ করে প্রণালী প্রত্যুষকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের দিকে রওনা হয়। সেখানেই চান্স পেয়েছে প্রত্যুষ। রাস্তায় যেতে যেতে প্রণালী প্রত্যুষকে কিভাবে চলবে ফিরবে সেসব বলতে থাকে,”ভাই, তুই কিন্তু একদম বাইরের খাবার খাবি না, এসব তোর সহ্য হয়না। তোর ক্ষিধে পেলে টিফিন করে দিয়েছি সেটা খাবি। আর হ্যাঁ, সবসময় এমন আঁতেল হয়ে থাকবি না মোটেও। তোকে তো যেই পায় বোকা বানিয়ে যায়। একটু চালাক হ বুঝলি।”

“হু।”

“আরে কি হু হু করছিস? যা বলছি মন দিয়ে শোন, কেউ যদি তোকে বিরক্ত করে তাহলে আমায় এসে বলবি। তারপর আমি তাকে দেখে নেব। প্রণালীর ভাইয়ের সাথে লাগতে আসার ফল বুঝিয়ে দেব।”

প্রত্যুষ আর কিছু না বলে চুপচাপ থাকে। প্রণালী তাকে এখনো ছোট বাচ্চার মতোই ট্রিট করে। যেন সে স্কুলে পড়ে। প্রত্যুষের মনে পড়ে যায় তাদের স্কুলের দিনগুলোর কথা। প্রণালী কিভাবে সবসময় তাকে প্রটেক্ট করত। একবার একটা ছেলে প্রত্যুষকে মে’রেছিল স্কুলে, প্রণালী কোনভাবে সেটা জানতে পেরে নিজের বন্ধুদের সাথে মিলে ছেলেটাকে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে সেই মা”র মে**রেছিল। শেষপর্যন্ত গার্জিয়ানদের কল করা হয়েছিল। এসব ভেবেই হাসতে থাকে প্রত্যুষ। তার বোন তাকে সত্যি ভীষণ ভালোবাসে।

হঠাৎ করে জ্যামে গাড়ি আটকে যায়। প্রণালী অবাক হয়ে বলে,”এই রাস্তায় তো জ্যাম হয়না। আজ হঠাৎ কি হলো?”

ড্রাইভার বলে,”সামনে খুব জটলা। মনে হয় কোন ঝামেলা হয়েছে।”

প্রণালী বলে,”ব্যাপারটা দেখতে হচ্ছে।”

বলেই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। প্রত্যুষও তার সাথে নামে। প্রণালী সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখতে পায় একজন লোককে ঘিরে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। প্রণালী একজনকে জিজ্ঞেস করে,”কি হয়েছে এখানে?”

“আরে দেখুন না, এই লোকটা একজন সাধারণ আইসক্রিমওয়ালা। রাস্তায় আইসক্রিম নিয়ে যাচ্ছিল এমন সময় ঐ লোকটা এসে ধাক্কা দিয়ে ওনার আইসক্রিমের গাড়িটা উলটে দেয়। অল্পের জন্য উনি বেঁচে যান। আর এখন ঐ লোকটা আইসক্রিমওয়ালার উপরই চটে গেছেন। ওনার গায়ে হাতও তুলতে চাইছেন।”

প্রণালীর মাথা গরম হয়ে যায়। সে আইসক্রিমওয়ালার দিকে তাকিয়ে দেখে বেশ প্রবীণ লোক। কতটা অমানুষ হলে কেউ নিজে অন্যায় করে এমন অসহায় বৃদ্ধ লোকের উপর চড়াও হয়। ঐ যুবকটি বৃদ্ধ লোকের উপর হাত তুলতে যাবে এমন সময় প্রণালী গিয়ে তার হাত ধরে ফেলে। যুবকটি নিজের সানগ্লাস চোখ থেকে খোলে। প্রণালীকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলে,”হু আর ইউ? এন্ড হাউ ডেয়ার ইউ টু টাচ মি?”

প্রণালী রাগী কন্ঠে বলে,”আপনি এত সাহস কোথায় পেলেন? একেই নিজে অন্যায় করেছেন এখন আবার এই অসহায় বৃদ্ধ লোকটির গায়ে হাত তুলছেন?”

যুবকটি বলে,”লুক। আমার ১ কোটি টাকার গাড়িতে ক্রাচ হয়েছে ওনার জন্য। আর আমি ওনাকে ছেড়ে দিব?”

“রাখেন আপনার গাড়ি। আপনার জন্য যে উনি মরতে বসেছিলেন সেটা দেখেন নি? ওনার জীবনের দাম কি আপনার গাড়ির থেকে বেশি।”

প্রত্যুষ বুঝতে পারে ঝামেলা বেশ ভালোই হতে চলেছে। প্রণালী বরাবরই বেশ প্রতিবাদী। তাই যাতে বড় কোন ঝামেলা না বাধায় তাই সে প্রণালীর উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আপি, তুমি চলে আসো। ঝামেলা করিও না প্লিজ।”

প্রণালী তবুও থামে না। বলতে থাকে,”বলুন, আপনার গাড়ির দাম কি ওনার জীবনের থেকে বেশি?”

“অবশ্যই বেশি। এই গরীব লোক সমাজের কোন কাজে লাগে? যত্তসব আবর্জনা।”

প্রণালীর মাথায় এবার রাগ উঠে যায়। সে আর নিজের রাগ সামলাতে না পেরে ঠাস করে থা’প্পর বসিয়ে দেয় যুবকটির গালে। সকলে হতবাক। প্রত্যুষ মাথায় হাত দিয়ে বিড়বিড় করে বলে,”এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম৷ আপি যেখানেই যাবে সেখানেই কোন না কোন ঝামেলা করবে।”

যুবকটি ক্রোধান্বিত হয়ে বলে,”তোমার এত বড় সাহস তুমি আমার গায়ে হাত তুললে? সমুদ্র চৌধুরীর গায়ে? এর পরিণাম তোমায় ভোগ করতে হবে। আই উইল সি ইউ।”

বলেই সমুদ্র নিজের গাড়িতে উঠল। তার মাথায় আগুন জ্বলছে। তার মা-বাবাও কোনদিন তার গায়ে হাত তোলে নি। আর আজ কিনা এতগুলো মানুষের সামনে একটা মেয়ে তার গায়ে হাত তুলল। সমুদ্র গাড়ি থেকে একটা মদের বোতল এনে সেই মদগুলো ছুড়ে মা*রল প্রণালীর মুখে। মদের বিশ্রী গন্ধে প্রণালীর বমি পেয়ে গেল। সমুদ্র বলল,”আমি মেয়েদের গায়ে হাত তুলি না জন্য তুমি বেঁচে গেলা। তবে এত সহজে তোমায় ছেড়ে দেব ভেবো না। সমুদ্র চৌধুরীর গায়ে হাত তোলার ফল অনেক ভয়াবহ হবে।”

এই বলে সে গাড়িতে উঠে চলে গেল। প্রণালী রাস্তার মাঝেই দাঁড়িয়ে ছিল। প্রত্যুষ দৌড়ে এসে টিস্যু এগিয়ে দিল প্রণালীর দিকে। বলল,”মুছে নেও।”

প্রণালী রেগে তাকিয়ে রইল সমুদ্রের যাওয়ার দিকে। আর বলতে লাগল,”স্পয়েল কিড কোথাকার!”

প্রত্যুষ বলল,”তোমাকে আমি বলেছিলাম ঝামেলা না করতে। দেখলে তো কি হলো। বাবা এসব জানলে খুব রেগে যাবে।”

“বাবাকে কিছু বলতে হবে না। তুই গাড়িতে উঠে পড়। দেরি হয়ে যাচ্ছে। এসব স্পয়েল কিডকে নিয়ে বেশি ভাবতে হবে না।”

এই বলে সে নিজের ব্যাগ থেকে পাঁচ হাজার টাকা বের করে আইসক্রিমওয়ালাকে দিয়ে বলে,”এই নিন আপনার ক্ষতিপূরণ। এটা দিয়ে নতুন গাড়ি কিনে নিয়েন।”
~~~~~~~~
প্রত্যুষকে মেডিকেল কলেজের সামনে নামিয়ে দিয়ে প্রণালী শান্তর সাথে দেখা করতে রমনায় এলো। সকালের ঘটনাটা ভেবে এখনো তার মাথায় আগুন জ্বলছে। শান্ত প্রণালীর মুখ দেখেই বুঝতে পারল সে রেগে আছে। তাই তো জিজ্ঞেস করল,”কি হয়েছে তোমার? এত রাগী লাগছে কেন?”

প্রণালী তখন শান্তকে সব খুলে বলে। সব শুনে শান্ত হেসে বলে,”তুমি সত্যিই বেশ সাহসী প্রণালী। একদম ঝাঁসি কি রাণী।”

প্রণালী বলে,”আমার এইজন্য এমন রিচ কিডদের সহ্য হয়না। বাপের টাকায় মস্তি করে বখে যায় একদম।”

“তুমিও তো রিচ কিড।”

“হ্যাঁ, কিন্তু আমি বা আমার ভাই আমাদের বাবার কড়া শাসনে বড় হয়েছি তাই বখে যাইনি। তবে বেশিরভাগ রিচ কিডই বখে যাওয়া। এইজন্য তো আমি সবসময় চাই কোন সাধারণ ফ্যামিলিতে বিয়ে করতে।”

“কিন্তু তোমার বাবা যদি কোন রিচ ফ্যামিলিতেই বিয়ে দিতে চায়?”

“বাবা এমন করবে না।”

বলেই শান্তর কাধে মাথা রাখে প্রণালী।

to be continue…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে