#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_21
#ইয়াসমিন_খন্দকার
প্রভা টের পেল কারো একজনের অস্তিত্ব। কেউ ছাতা হাতে তুলে তাকে বৃষ্টি থেকে আড়াল করছে। প্রভার মনে হলো এটা রায়ান। তাই সে অস্ফুটস্বরে বলে,””‘রায়ান! আপনি ফিরে এসেছেন আবার!”
প্রভা সাথে সাথেই পিছনে ফিরে তাকায়। পিছনে ফিরে তাকাতেই হতাশায় মজে যায় সে। প্রভার দৃষ্টিগোচর হয় দুটো নীল চোখ। ব্যক্তিটির মাস্ক পড়ে আছে বিধায় তার মুখ সে দেখতে পায়না। হতাশার শ্বাস ফেলে। লোকটির নীল চোখ, ব্রাউন কালারের চুল দেখেই বোঝা যায় সে এদেশীয় কেউ। তাই প্রভা নিজের ভুল বুঝতে পেরে হতাশ হয়। যুবকটি প্রভার থাকা ছাতাটি তুলে দিয়ে বলে,”Take this umbrella otherwise you will drench in the rain’s water.”
কথা টুকু বলেই যুবকটি চলে যায়। অদ্ভুতভাবে এই কন্ঠটা অনেক পরিচিত লাগে প্রভার। হুবহু রায়ানের মতো। কিন্তু সেটা কি করে হতে পারে? ইনি তো একজন বিদেশী ব্যক্তি। তাই প্রভা নিজের মনের দ্বন্দ্ব দূর করার জন্য যুবকটিকে ডাক দিলো। বলল,”Please wait.”
যুবকটি দাঁড়ালো। প্রভা তার সামনে গিয়ে বলল,”Can you show me your face, please!”
যুবকটি বোধহয় হাসলো। অত:পর বেশ ঠান্ডা মেজাজেই বলল,”Sorry. I can’t. Excuse me.”
বলেই সে চলে যায়। প্রভার হতাশার পাল্লা বাড়ে। যুবকটির কন্ঠ এবার ভালো করে শুনেছে প্রভা। তাই তার আবারো মনে হয় এটাই রায়ান। সে চিৎকার করে বলে,”রায়ান!”
কিন্তু যুবকটি এবার আর অপেক্ষা করে না। ত্রস্ত পায়ে হেটে চলে যায়। প্রভা তাকে অনুসরণ করতে যায় কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই যুবকটি তার দৃষ্টিগোচর হয়ে যায়। প্রভা হতাশার শ্বাস ফেলে বলে,”এতদিন পর তো একটা আশার আলো দেখতে পেলাম। সেটাও কি নিভে গেল?”
প্রভার হঠাৎ করেই মনে হলো এটা কি সত্যিই রায়ান ছিল? যদি রায়ান হতো তাহলে তার সাথে কথা বলল না কেন? তাহলে কি এটা অন্য কেউ? প্রভা কিছু বুঝতে পারছে না। সে তো কন্ঠটা শুনেছে ঠিক করে। অবিকল রায়ানের মতো। কিন্তু এ যে ভিনদেশী যুবক। প্রভার কাছে সবটা কেমন খালি খালি লাগছে। সে আর কিছু ভাবতে পারছে না৷ হঠাৎ করেই তার মাথা ঘুরতে থাকে। এরপর প্রভার চোখ ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে যায়। সে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। এমন সময় ঝাপসা চোখে সে দেখতে পায় কেউ এগিয়ে আসছে তারদিকে। জ্ঞান হারানোর পূর্বে আবারো তার দৃষ্টিতে এসে বাধে সেই দুটি নীল চোখ!
~~~~~~~~~
প্রভার জ্ঞান ফিরলে সে নিজেকে হাসপাতালের কেবিনে আবিষ্কার করে৷ তার পাশেই বসে থাকতে দেখতে পায় ডাক্তার অভিষেক চক্রবর্তীকে। প্রভা খুঁজতে থাকে সেই নীল চোখের যুবকটিকে। অভিষেক চক্রবর্তী প্রভার জ্ঞান ফিরতে দেখে বলে,”আপনি ঠিক আছেন তো? দেখেন তো কি কাণ্ড। ডাক্তার হতে এসে তো আপনি একদম রোগী হয়ে গেলেন।”
প্রভা বলল,”আসলে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু আমাকে এখানে কে নিয়ে এলো?”
অভিষেক চক্রবর্তী বলল,”আমি যতদূর শুনেছি একজন যুবকই আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছে।”
প্রভা অস্থির হয়ে জানতে চায়,”সেই যুবক এখন কোথায়? আমাকে প্লিজ তার কাছে নিয়ে চলুন না।”
অভিষেক চক্রবর্তী বলেন,”আপনি আগে শান্ত হন মিস:প্রভা। উনি আপনাকে হসপিটালের মধ্যে রেখেই চলে গেছে।”
“উনি আমার সাথে দেখা না করেই চলে গেলো?”
“আপনি ওনাকে চেনেন নাকি? কে ছিলেন উনি?”
প্রভা সম্বিত ফিরে পেয়ে বলে,”না, মানে আমার এত বড় উপকার করলেন তো। তাই ওনাকে ধন্যবাদ দেওয়ার ছিল। কিন্তু পারলাম না।”
“আরে এটা নিয়ে এত ভাবতে হবে না। এখানে সবাই এমন হেল্পফুল। আমার বাঙালিদের মতো কানাডিয়ানরা নয়। আমাদের বাঙালিদের ব্যাপারে তো জানোই একবার কোন উপকার করলে ঢাকঢোল পিটিয়ে বেড়ায়। কিন্তু কানাডিয়ানরা এমন না। কিছুদিন এখানে থেকেই বুঝতে পেরেছি এরা অনেক পরোপকারী এবং ভদ্র জাতি।”
এরপর ডা: চক্রবর্তী আরো অনেক কথা বলতে থাকেন৷ কিন্তু প্রভা সেসব কথায় আর কানই দেয়না। সে তো শুধু ঐ নীল চোখের যুবকের কথা ভাবতে থাকে। তার কেন জানি মনে হচ্ছে এই ছেলের সাথে রায়ানের অনেক মিল। তাই প্রভাকে যে করেই হোক তার সন্ধান পেতেই হবে। কিন্তু সেটা কি আদৌ সম্ভব হবে?
~~~~~~“
১ মাস পর,
প্রভার কানাডায় পৌঁছানোর পর এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। এই এক মাসে প্রভা কানাডায় নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। প্রথম দিকে একটু অসুবিধা হলেও সে এখন নিজেকে সামলে নিয়েছে। নিয়মিত সে অনুরাধার মাধ্যমে নিজের মা-বাবারও খবর নেয়। তবে সেই দিনের পর আরো অনেক খুঁজেও সেই যুবকের কোন খোঁজ পায়নি প্রভা। তাই তার আশাও ছেড়ে দিয়েছে।
প্রভা আজ হসপিটালের ডিউটি শেষে বের হচ্ছিল। এমন সময় তার এক সহকর্মী ইলিয়ানা এসে তাকে বলে,”আজ আমরা একটা কনসার্ট দেখতে যাব। তুমি কি যাবে আমাদের সাথে?”
প্রভা আপত্তি জানিয়ে বলে,”সরি, আসলে আমি আজ খুব টায়ার্ড আছি। তাই যেতে পারবো না।”
“ইটস ওকে। তুমি যেতে না পারো কিন্তু আমরা যেই কনসার্টে যাচ্ছি সেখানে আজ কে আসবে সেটা আগে শোনো শুধু।”
“কে আসবে?”
“রকস্টার রিহান।”
“রকস্টার রিহান? কে তিনি?”
“তুমি রকস্টার রিহানকে চেনো না? Oh my god, ওয়েট আমি তোমাকে ওনার একটা গান শোনাচ্ছি।”
এই বলেই ইলিয়ানা নিজের ফোন বের করে একটা গান চালিয়ে দেয়,
This night is cold in the kingdom
I can feel you fade away
From the kitchen to the bathroom sink and
Your steps keep me awake
Don’t cut me down, throw me out, leave me here to waste
I once was a man with dignity and grace
Now I’m slippin’ through the cracks of your cold embrace
So please, please
Could you find a way to let me down slowly?
A little sympathy, I hope you can show me
If you wanna go then I’ll be so lonely
If you’re leavin’, baby, let me down slowly
Let me down, down, let me down, down, let me down
Let me down, down, let me down, down, let me down
If you wanna go then I’ll be so lonely
If you’re leavin’, baby, let me down slowly
Cold skin, drag my feet on the tile
As I’m walking down the corridor
And I know we haven’t talked in a while
So I’m looking for an open door
Don’t cut me down, throw me out, leave me here to waste
I once was a man with dignity and grace
Now I’m slippin’ through the cracks of your cold embrace
So please, please
Could you find a way to let me down slowly?
A little sympathy, I hope you can show me
If you wanna go then I’ll be so lonely
If you’re leavin’, baby, let me down slowly
Let me down, down, let me down, down, let me down
Let me down, down, let me down, down, let me down
If you wanna go then I’ll be so lonely
If you’re leavin’, baby, let me down slowly
প্রভা গানটা শুনে হতবাক হয়ে যায়। কন্ঠটা তার কাছে নিদারুণ চেনা লাগে৷ ১২ বছর আগে এই কন্ঠেই তো সে সুমধুর গান শুনেছিল যা আজো তার কানে বাজে। প্রভা ইলিয়ানার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আমি তোমার সাথে যাব।”
to be continue…
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_22(Bonus)
#ইয়াসমিন_খন্দকার
প্রভা তার কলিগ ইলিয়ানার সাথে রকস্টার রিহান এর কনসার্ট দেখতে এসেছে। তার মনে অনেক আগ্রহ তৈরি হয়েছে এই ভিনদেশী রকস্টারকে নিয়ে। কারণ তার গান প্রভাকে কারো কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। যেই লোকটিকে সে ভুলতে পারছে না। ১২ বছর আগে যাকে হারিয়েছে কিন্তু এখনো খুঁজে বেড়ায়। প্রভার আজও মনে হয়, কোন একদিন রায়ান আবার তার সামনে এসে দাঁড়াবে। হোক না সেটা কোন রূপকথার গল্পের মতো। কিন্তু গল্পও তো কখনো বাস্তবতাকে ছাপিয়ে যায়। আর যেই গল্প বাস্তবতাকে ছাপিয়ে যায় তাই উদাহরণ সৃষ্টি করে দেয়।
প্রভা লক্ষ্য করছে ইলিয়ানা অনেক উদগ্রীব। দেখে বোঝাই যাচ্ছে সে রকস্টার রিহানের অনেক বড় গান। প্রভা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। তার রকস্টার রিহানকে নিয়ে কোন আগ্রহ নেই। সে তো শুধু নিজের মনের সন্দেহ দূর করার জন্য এখানে এসে পৌঁছেছে। রিহানের কনসার্ট দেখার জন্য তারা এসে উপস্থিত হয় অটোয়া শহরের কিংস গ্রাউন্ডে। এই কিংস গ্রাউন্ডেই আজ রিহানের কনসার্ট হবে। যেই উপলক্ষে লাখ লাখ মানুষ জড়ো হয়েছে চারিদিকে। প্রভা বুঝল রকস্টার রিহান বেশ জনপ্রিয়। সে খুব কমই এত জন সমাগম দেখেছে। কোথাও পা ফেলার পর্যন্ত যায়গা নেই। প্রভার মনে এই মুহুর্তে অন্য চিন্তা এলো। সে কি তবে এখানে ভুল বশত চলে এলো? তার সন্দেহ কি তবে শতভাগ ভুল? এতটা ভুল সে কি করে হলো রায়ানের গলার স্বর শুনতে। প্রভা বুঝতে পারল না কিছুই। তবে এখন তার রকস্টার রিহানের জন্য অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। তাই প্রভা অপেক্ষার প্রহর গুনতে লাগল।
সময় যতো এগোচ্ছিল প্রভার মনে উত্তেজনার পারদ ততোই চড়ছিল। এমনিতেই তার এত ভীড় ভাট্টা পছন্দ নয়। ছোটবেলা থেকেই এসব এড়িয়েই চলেছে সে। ইন্ট্রোভার্ট আর প্রচণ্ড ঘরকুনো ছিল প্রভা। এখন একটু চেঞ্জ হলেও পুরোপুরি বদলে যায়নি সে। তাই এত লোকের সমাগমে সে বিরক্তই ছিল। তবু দাঁতে দাঁত চেপে সব সহ্য করছিল সত্য উদঘাটন করার উদ্দ্যেশ্যে। সময় যতো এগোচ্ছিল প্রভার অপেক্ষা যেন আর শেষই হতে চাইছিল না। প্রভার পাশে বসে থাকা ইলিয়ানাও চরম উত্তেজিত। সে প্রভার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আর একটু পরই রকস্টার রিহান স্টেজে পারফর্ম করার জন্য উঠবে। আমার তো খুব এক্সাইটেড লাগছে।”
প্রভা হাফিত্তেশ করে। ইলিয়ানা দীর্ঘ সময় ধরে এই এক কথাই বলে চলেছে। তবে বাস্তবতা হলো রিহানের আসার এখনো কোন খোঁজ খবরই নেই।
প্রভার এহেন ভাবনার মধ্যেই স্টেজে উঠে এলো এই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক। তিনি এসেই বলেন,”Ladies and gentleman, thanks for your patience. I know that you all are waiting for Rock star Rihan. And he is on the way. Just wait… he will arrive soon. ”
উপস্থিত দর্শক আরো উত্তেজিত হয়ে যায়। তারা সকলেই নিজেদের আইডলকে দেখার জন্য উদগ্রীব ছিল। তাই কারো আর তড় সইছিল না৷ এমন সময় সঞ্চালক পুনরায় সবার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”The time is coming. Rock star Rihan is here…please welcome him.”
দর্শক উত্তেজিত হয়ে কড়তালি দেওয়া শুরু করে। কেউ তো আবার রিহানের নামে প্লাকার্ড নিয়ে চিল্লাতে থাকে। প্রভা এসবে বিরক্ত হচ্ছিল ভীষণ। তবু সে ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করে রিহানের আগমনের জন্য। অবশেষে প্রভার অপেক্ষার পালা শেষ হয়৷ রকস্টার রিহান এসে উপস্থিত হয় কিংস গ্রাউন্ডের মঞ্চে। প্রভা ভালো করে তাকিয়ে দেখতে পায় সেই দুটি নীল চোখ আর ব্রাউন চুলের লোকটিকে। প্রভা হতবাক কন্ঠে বলে ওঠে,”ইনিই রিহান!”
পাশ থেকে ইলিয়ানা বলে,”হ্যাঁ, এই হলো রকস্টার রিহান। যার জন্য সবাই পাগল। দেখেছ কি হ্যান্ডসাম? এইজন্য ওনার এত এত ফ্যান। শুধু হ্যান্ডসামনেস নয় ওনার গানও খুব সুন্দর। তুমি তো শুনলেই।”
প্রভা কিছু বলল না। লোকটি আজও মাস্ক পড়ে এসেছে। প্রভার এই ব্যাপারটা অনেক বিরক্ত লাগে। প্রভা শুধু অপেক্ষা করে তার মাস্ক খোলার। কিন্তু সে মাস্ক না খুলেই তার অডিয়েন্সের উদ্দ্যেশ্যে কিছু বলতে থাকে। প্রভা ইলিয়ানাকে জিজ্ঞেস করে,”আচ্ছা এই রকস্টার রিহান মাস্ক পড়ে আছে কেন? সে কি নিজের মুখ দেখাবে না?”
ইলিয়ানা মৃদু হেসে বলে,”ওহ তুমি বোধহয় জানো না, রকস্টার রিহান আজ অব্দি কোনদিন জনসম্মুখে নিজের মুখ দেখায় নি। মাস্ক পড়েই সবসময় কনসার্ট এটেন্ড করেছে। তার এত ফ্যান থাকার পরেও কারো আজ অব্দি তার মুখ দেখার সৌভাগ্য হয়নি। কত সাংবাদিক চেষ্টা করেছে তার ছবি তোলার কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। উনি এতোটা প্রাইভেসি মেইনটেইন করে চলেন যা বলার বাহিরে।”
প্রভা বিড়বিড় করে বলে,”স্ট্রেঞ্জ! এত বড় একজন সেলিব্রিটি অথচ তার মুখ কেউ দেখে নি। ব্যাপার টা বেশ রহস্যজনক লাগছে।”
এরমধ্যে রকস্টার রিহান ঘোষণা দেয় আজকের কনসার্টটা অনেক স্পেশাল হবে। কারণ আজ সে ১৫ টি ভিন্ন ভাষায় ১৫ টি দেশের গান বলবে। যার মধ্যে আছে ইংরেজি, তুর্কি, কোরিয়ান, ফ্রেঞ্চ, চাইনিজ, ইটালিয়ান,পর্তুগীজ, স্প্যানিশ, আরবি, ফার্সি, হিন্দি, জার্মান, ফিলিপিনো, সিংহলি এবং বাংলা।
রিহানের এই ঘোষণা তো তার ভক্তদের
অনেক খুশি করে দেয়। ইলিয়ানা তো উত্তেজিত হয়ে বলে,”আজ তো এই কনসার্ট লাখো দর্শকের হৃদয়ে আলোড়ন তুলবে। রিহানের ম্যাজিকাল কন্ঠে আজ আমরা ১৫ টি ভাষার ১৫ টা গান শুনতে পারবো। ভাবলেও খুশি হচ্ছে খুব।”
রিহান ঘোষণা দিয়েই বসে থাকে না। প্রথমেই সে জনপ্রিয় ইংরেজি গান, “See You Again” দিয়ে স্টেজে আগুন লাগিয়ে দেয়। এরপর টার্কির ভাইরাল আইসক্রিম সংগ গায়। এরপর কোরিয়ান “গ্যাংগনাম স্টাইল” গেয়ে স্টেজ কাপায় সে। হিন্দিতে গায়, “Dilwale Dulhaniya le jayegenge” মুভির টাইটেল সংগ। এরপর পালা আসে বাংলার। বাংলা গানের পালা আসতেই রিহান চুপ রয় কিছুক্ষণ।
এদিকে প্রভা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে রিহানের মুখে বাংলা গান শোনার জন্য। এতক্ষণ তার কন্ঠ ভালো ভাবেই পর্যবেক্ষণ করেছে প্রভা। তাতে সন্দেহ অনেকটাই গাঢ় হয়েছে। কিন্তু এবার যদি তার গলায় বাংলা গান শোনে তাহলে একদম শত ভাগ নিশ্চিত হতে পারবে যে এই তার রায়ান।।
অন্য দিকে রকস্টার রিহান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বাংলায় গাইতে শুরু করে,
❝যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম আমায় কাঁদায় তবে
প্রেমিকা কোথায় আর প্রেমই বা কোথায়?
যদি দিশেহারা ইশারাতে প্রেমই ডেকে যায়
তবে ইশারা কোথায় আর আশারা কোথায়?
যদি মিথ্যা মনে হয় সব পুরোনো কথা…❞
রিহান তার পুরো গান শেষ করার আগেই প্রভা চিৎকার করে বলে,”রায়ান! আপনি ফিরে এসেছেন!”
এই বলে দৌড়ে স্টেজের দিকে যায় প্রভা। ইলিয়ানাও কিছু বুঝে উঠতে না পেরে তার পিছনে দৌড় দেয়। প্রভাকে শুরু থেকেই তার অন্যরকম লাগে। আর আজ যা হলো তা সত্যিই অন্যরকম ছিল। এটা সে আশা করেনি।
প্রভা দৌড়ে স্টেজে উঠে রকস্টার রিহানকে জড়িয়ে ধরে। লাখ লাখ দর্শক একদম হতবাক হয়ে যায়। প্রভা রিহানকে জড়িয়ে ধরেই বলে,”আমি আপনাকে চিনতে ভুল করিনি। আপনি আমার রায়ান। কোথায় ছিলেন এতদিন আপনি? কেন আমার থেকে লুকিয়ে ছিলেন?”
রকস্টার রিহান বলে,”Who are you? And what are you saying? I can’t understand.”
“আমি প্রভা। তুমি আমায় চিনতে পারছ না?”
রকস্টার রিহান অপলক তাকিয়ে থাকে।
to be continue…
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_23
#ইয়াসমিন_খন্দকার
প্রভা রকস্টার রিহানের কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে। অপলক তাকিয়ে আছে তার দিকে। রকস্টার রিহান প্রভাকে হতাশ করে বলে,”May you have some misunderstanding. I am not Riyan, I’m rockstar Rihan.”
প্রভা তবুও জোর দিয়ে বলে,”আমার কোন ভুল হয়নি। আপনিই আমার রায়ান।”
রকস্টার রিহান বিরক্ত হয়ে প্রভাকে নিজের থেকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলে,”Somebody take her.”
প্রভা ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল রিহানের দিকে৷ তার সন্দেহ কি তবে ভুল? তাহলে কি এ তার রায়ান নয়? যদি রায়ান হতো তাহলে কি পারত প্রভাকে এভাবে বলতে? প্রভাকে কয়েকজন সিকিউরিটি গার্ড টেনে নিচে নামালো। ইলিয়ানা প্রভার কাছে এসে বললো,”কি হয়েছিল তোমার? তুমি হঠাৎ এমন করেছিলে কেন? এভাবে স্টেজে উঠে..”
“আমি যাচ্ছি।”
বলেই প্রভা চলে আসে৷ রকস্টার রিহান নিজের পারফরম্যান্স চালিয়ে যায়। এসবের মধ্যে বেচারি ইলিয়ানাকেও প্রভার পিছনে ছুটতে হয়। সে তো বুঝলই না এখানে কি কি ঘটল।
~ ~ ~~~~~~~~~~~~~~~~
সেদিনের পর আরো কিছু দিন পেরিয়ে গেল। প্রভা রকস্টার রিহানের ব্যাপারটা নিয়ে আর মাথা ঘামায়নি। বলা বাহুল্য ইচ্ছে করেই ব্যাপারটা এড়িয়ে গেছে সে। আপাতত প্রভা সৌভিকের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়েছে। আবির মোটেই সুবিধার লোক নয়৷ সে যেকোন সময় রুহুল আমিন বা প্রভার মা-বাবার কোন ক্ষতি করতে পারে। তাই প্রভা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবিরের আসল মুখোশ সবার সামনে আনতে চায়। সৌভিক প্রভাকে আশ্বাস দিয়ে বলে,”তুমি এত চিন্তা করিও না৷ আমি এদিকটা সব সামলে নিচ্ছি। আবির খুব শীঘ্রই বিপদে পড়তে চলেছে। তার অপরাধ সবার সামনে আসবেই।”
প্রভা কিছু একটা মনে করে সৌভিককে জিজ্ঞেস করে,”আচ্ছা দাদা, আপনি যে আমায় বলেছিলেন কানাডায় কেউ আমাকে সাহায্য করবে কিন্তু এখনো তো সেই ব্যাপারে কিছু জানলাম না।”
সৌভিক বলে,”যার সাহায্য করার সে ঠিকই গোপনে সাহায্য করে যাচ্ছে। সঠিক সময় সে সামনে আসবে।”
এই বলে সৌভিক ফোন রেখে দেয়। প্রভা আবারো ভাবনায় পড়ে যায়৷ সৌভিক কি বলতে চাইলো? গোপনে সাহায্য মানে? প্রভা চুপচাপ ভেবে গেলো। আর একটু পরেই তার মাথায় অন্য চিন্তা এলো। রকস্টার রিহানের কথাটা আরেকবার এলো তার মাথায়। অনেকদিন পর মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। প্রভা বলল,”যদি সুযোগ পাই তাহলে আমি সব সত্য বের করবোই।”
প্রভার ভাবনার মাঝেই ডা:ইলিয়ানা ও ডা:অভিষেক এলো তার কেবিনে। তারা এসেই প্রভাকে বলল,”আপনি কি এখন ফ্রি আছেন?”
প্রভা বলল,”জ্বি, কেন?”
ডা:ইলিয়ানা ও ডা:অভিষেক একে অপরের দিকে কিছুক্ষণ দেখল। অত:পর ডা:ইলিয়ানা প্রভাকে বলল,”আমরা সবাই সানা প্রিস্টের আমন্ত্রণে একটা পার্টি এটেন্ড করতে যাচ্ছি। আপনিও চলুন আমাদের সাথে।”
প্রভার এসব পার্টি তেমন ভালো লাগে না। কিন্তু সানা প্রিস্টের ডাক সে উপেক্ষা করতে পারবে না। মহিলাকে অসম্ভব ভালো লেগে গেছে তার। যখনই দেখা হয় হাসি মুখে কথা বলেন। যা থেকে বোঝাই যায় যে তিনি ভীষণ আন্তরিক। তাই প্রভা বলে,”ঠিক আছে। আমি যাচ্ছি আপনাদের সাথে।”
তিনজনে মিলে বের হলো সানা প্রিস্টের পার্টি এটেন্ড করতে। প্রভা এসে দেখলো পার্টিতে খুব একটা লোক সমাগম নেই৷ হাসপাতালেরই কিছু স্টাফ এখানে উপস্থিত। এটা দেখে সে স্বস্তি পেল। সানা প্রিস্ট তাদের দিকে এগিয়ে এসে হাসিমুখে বলল,”আপনারা এসে গেছেন। দেখে খুশি হলাম। এনজয় করুন।”
প্রভা সৌজন্য সূচক হাসে। অত:পর কয়েকজন পরিচিত কলিগের সাথে কিছু কথা-বার্তা বলে। এভাবেই সময় যাচ্ছিল।
কিছুক্ষণ পরেই সানা প্রিস্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলল,”আপনাদের সাথে আজ আমি কারো পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। আপনারা সবাই জানেন যে আমার একজন ভাই আছে৷ যে মূলত টরেন্টোতে থাকে। আজ সে এখানে এসেছে। আজ মূলত তাকে ওয়েলকাম জানানোর জন্যই আমি এই পার্টির আয়োজন করেছি। দীর্ঘ ৩ বছর পর আমার ভাইটা টরেন্টো থেকে আবার অটোয়াতে এলো আমার সাথে দেখা করতে। তাই আমার কাছে আজকের দিনটা খুবই স্পেশাল।”
সবাই সানা প্রিস্টের ভাইকে দেখার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। ইলিয়ানা প্রভা ও অভিষেককে বলল,”আমি অনেক শুনেছি সানা প্রিস্টের ভাইয়ের সম্পর্কে। দুই ভাই বোনের সম্পর্ক নাকি অনেক মধুর। কিন্তু ৩ বছর আগে কিছু একটা নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝামেলা হয়৷ আসলে সানা প্রিস্ট চেয়েছিল তার ভাই স্টাডি শেষ করে নিজের ক্যারিয়ারে ফোকাস করুক কিন্তু তার ভাই নাকি মিউজিকে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিল। এই নিয়ে দুই ভাই বোনের মধ্যে মান অভিমান হয়। আর সেই মান-অভিমান থেকেই ওনার ভাই টরেন্টোতে চলে যান। আজ আবার অটোয়াতে ফিরছেন। ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগল।”
এমন সময় কারো আগমন ঘটল। সানা প্রিস্ট সকলের উদ্দ্যেশ্যে বলল,”ঐ তো আমার ভাই এসে গেছে।”
সবাই পিছনে ফিরে তাকালো। প্রভাও তার ব্যতিক্রম নয়৷ সেও ফিরে তাকালো। তার পিছনে ফিরে তাকাতেই সে দেখতে পেল সেই পরিচিত দুটো নীল চোখ। চোখ দেখেই সে চিনে ফেলল ইনি কে। বিস্মিত কন্ঠে বলল,”রিহান!”
ইলিয়ানাও অবাক হয়ে গেছে রিহানকে এখানে দেখে। আর আজও সে মাস্ক পড়েই এসেছে। সানা প্রিস্ট সকলের উদ্দ্যেশ্যে বলল,”আপনারা একদম ঠিকই ধরেছেন ও হলো আমার ভাই রিহান প্রিস্ট। যাকে আপনারা সবাই রকস্টার রিহান নামেই চেনেন। লেট’স ওয়েল্কাম হিম।”
সবাই করতালি দিয়ে রিহানকে স্বাগতম জানালো। অনেকে তো হুমড়ি খেয়ে পড়লো তার সাথে সেলফি তোলার জন্য তো আবার কেউ অটোগ্রাফ নিতে গেল। কিন্তু প্রভা ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। রিহানকে এখানে দেখে সে ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। সেই ঘোর থেকে এখনো বেরই হতে পারছে না।
রিহানও কিছুক্ষণ পর লক্ষ্য করল প্রভাকে। সানা প্রিস্ট সকলের উদ্দ্যেশ্যে বলল,”আমিই সেই যে আমার ভাইয়ের মিউজিক ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ও নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী থাকলেও আমার মনে হয়েছিল এই প্রতিযোগিতা মূলক মঞ্চে ও নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারবে না। কিন্তু রিহান আমাকে ভুল প্রমাণ করেছে। ও নিজের ট্যালেন্ট দিয়ে আজ এই যায়গায় পৌঁছেছে যে সকলে ওকে এক নামে চেনে। এখন আমিও নিজের ভাইকে নিয়ে অনেক গর্ব করি।”
এরইমধ্যে ইলিয়ানা বলে ওঠে,”ম্যাম, আমার একটা প্রশ্ন আছে। যদি আপনি অনুমতি দেন তো করতে পারি।”
“হ্যাঁ, করো।”
“আচ্ছা রকস্টার রিহান কাউকে মুখ দেখায় না কেন? আজও উনি মুখ ঢেকেই এখানে এসেছেন।”
রিহান হেসে বলে,”আমিই এই প্রশ্নের উত্তর দেই। আমি নিজের মুখ এখনো কাউকে দেখাই নি কারণ আমি সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি। সঠিক সময় এলেই আমি সবাইকে আমার মুখ দেখাব।”
কথাটা প্রভার দিকে তাকিয়েই বলে রিহান। প্রভা ব্যাপারটা খেয়াল করে না৷ সে তো শুধু রিহানের বলা কথা আর সৌভিকের বলা কথার মধ্যে সাদৃশ্যই খুঁজে পাচ্ছিল। প্রভা চিন্তা-ভাবনা করতে থাকে। বিড়বিড় করে বলে,”তাহলে কি রিহানই সেই ব্যক্তি যে আমায় সাহায্য করবে?”
প্রভা রিহনের দিকে তাকায়। দুজনের চোখাচোখি হয়। অত:পর সবকিছুই শান্ত। কিছুক্ষণ পর প্রভার কাছে আসে রিহান। এসে ফিসফিস করে বলে,”কেমন আছেন আপনি আমার ক্রেজি ফ্যান?”
“আমি মোটেই আমার ক্রেজি ফ্যান না।”
“তাহলে সেদিন ওভাবে মঞ্চে উঠে আমায় জড়িয়ে ধরেছিলেন কেন?”
“আমার কিছু ডাউট ছিল।”
“ওহ, আমায় ভালো টালো বাসেন নাকি?”
প্রভা ম্লান হেসে বলে,”আমি শুধু একজনকেই ভালোবাসি। আর আজীবন তাকেই ভালোবেসে যাব৷ অন্য কারো প্রতি আমার কোন আগ্রহ নেই।”
রিহান বলল,”কে সেই ভাগ্যবান ব্যক্তি?”
প্রভা রাগী কন্ঠে বলে,”আপনাকে জানতে হবে না। আমার প্রতি এত আগ্রহ আপনার দেখানোর দরকার নেই।”
“আমার তো মনে হয় আপনি আমার প্রতি ইন্টারেস্টেড।”
প্রভা চোখ পাকিয়ে বলে,”আমার আপনার প্রতি কোন ইন্টারেস্ট নেই৷ শুধু কিছু ডাউট আছে। আপনার কন্ঠের সাথে একজনের খুব মিল পাই। কিন্তু অন্য কোন মিল নেই আপনাদের মাঝে।”
এটা বলেই প্রভা পার্টির ওখান থেকে চলে আসলো৷ রিহান প্রভার যাওয়ার পানে তাকিয়ে অদ্ভুত ভাবে হাসতে লাগল।
to be continue…