#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_3
#ইয়াসমিন_খন্দকার
রায়ান একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল প্রভাদের দিকে। সেটা নজর এড়ায় না প্রভা কিংবা অনুরাধার। অনুরাধা তো ক্ষেপে গিয়েই বলে,”তুই দেখতে পাচ্ছিস প্রভা, ঐ ছেলেটা কিভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে? সেটাকে দেখেই তো লু**চ্চা লু**চ্চা লাগছে আমার। ওকে তো আমি…”
প্রভা অনুরাধার হাত ধরে তাকে বাধা প্রদান করে বলে,”অনু, থাম তুই। আজ একটা ঝামেলা না বাধিয়ে বোধহয় শান্তি পাবি না!”
“ঐ ছেলেটাকে আমার সহ্য হচ্ছে না।”
“এত হাইপার হস না, ওদিকে চল। আজ মেবি কলেজে নবীন বরণ হবে। চল এরেঞ্জমেন্ট দেখে আসি।”
বলেই অনুরাধাকে একপ্রকার জোরপূর্বক নিয়ে গেল প্রভা৷ রায়ান তাদের যাওয়ার দিকেই দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। রায়ানের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা তার বন্ধু সৌভিকের নজর এড়ালো না বিষয়টা। সৌভিক রায়ানকে বললো,”কিরে? তুই ঐদিকে কি দেখছিস?”
“কিছু না।”
“আরে, বল না বন্ধু। কোন মেয়ের উপর ক্রাশ খেলি নাকি?”
“জানি না, তবে একজনকে দেখে মুগ্ধ হয়েছি।”
“রিয়্যালি? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। দ্যা গ্রেট রায়ান চৌধুরীকে শেষ পর্যন্ত কোন একটা মেয়ে মুগ্ধ করেছে!”
“কেন? তুই কি ভেবেছিলি? আমি কোন মেয়েকে দেখে মুগ্ধ হবো না?”
সৌভিক দুষ্টু হেসে বলে,”আমি ঠিক তাই ভেবেছিলাম। তুই যেভাবে সবসময় আবিরের সাথে চিপকে থাকিস আমার তো মনে হতো তুই আবিরকেই…”
নিজের কথা শেষ করতে পারে না সৌভিক। রায়ানের রাগী দৃষ্টি দেখে থেমে যায়। রায়ান কটমট করে তাকিয়ে বলে,”তোর আমাকে গে মনে হতো?”
সৌভিক ঢোক গিলে বলে,”না, সেটা না। আসলে স্কুল লাইফ থেকেই তো তোকে চিনি। কখনো কোন মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব তো দূরের কথা, কথা বলতেও দেখিনি। আর আবির তো তোর জিগরী দোস্ত। সবসময় তোদের একসাথেই দেখা যায়। তাই আমার…”
এমন সময় আবির চলে আসলো সেখানে। তার হাতে দুটো সেভেন আপের বোতল। আবির এগিয়ে এসে একটা বোতল রায়ানকে দিয়ে বলল,”এই নে দোস্ত ধর।”
সৌভিক বলল,”শুধু রায়ানের জন্য এনেছিস। আমার জন্য আনিস নি?”
আবির একগাল হেসে বললো,”না, আসলে সেভেন আপ দেখলে তোর দুঃখ হবে জন্য তোর জন্য আনিনি।”
সৌভিক মুখ লুকানোর যায়গা খুঁজলো। কারণ সে ব্রাজিল সাপোর্টার। আর এই রায়ান আর আবির দুজনেই আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। এই জন্য সুযোগ পেলেই ওরা এভাবে খোঁচায় তাকে। সৌভিক মুখ ভাড় করে চলে যায় অন্যদিকে। সে যেতেই রায়ান আবিরকে বলে,”তোর আসতে এত দেরি হলো কেন?”
আবির বললো,”একটা মেয়েকে দেখে থমকে গিয়েছিলাম তাই।”
রায়ান আবিরের চোখ থেকে তার চশমা নিলো। আবির রেগে বললো,”আরে, এটা কি করছিস?”
“দেখছি আমার বন্ধুর চোখের পাওয়ার ঠিক আছে কিনা। যদি চশমার দোষে ভুল মেয়েকে পছন্দ করে ফেলে।”
“রায়ান, আমার চশমা দে। জানিস তো আমি চশমা ছাড়া কিছুই দেখতে পাইনা।”
রায়ান আবিরকে চশমা পড়িয়ে দিতে দিতে বললো,”হুম, জানি তো। আমার এই চাশমিশ বন্ধু যে চশমা ছাড়া অসহায়।”
“তুই আবার আমাকে চাশমিশ বলছিস?”
“সরি, ভুল হয়ে গেছে। তোকে তো আমার কানা বলা উচিত।”
“তবে রে..”
বলেই রায়ানের পেছনে ছুট দিলো। তাদের এই খুনশুটি সবসময় চলে৷ ছোটবেলা থেকেই তাদের এমন সম্পর্ক। এই ঝগড়া-ঝাটি, মা**রামারি আবার দুজনে একে অপরকে ছাড়া অচল। তাদের এই ঘনিষ্ঠতার জন্যই তারা মানিকজোড় বলে খ্যাত।
~~~~~
অনুরাধা ও প্রভা দাঁড়িয়ে আছে তাদের নতুন কলেজের মাঠে অবস্থিত একটি বিশাল বট গাছের সামনে। অনুরাধা এখনো মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রভার সেদিকে খেয়াল নেই। সে নবীনবরণের আয়োজন দেখতে ব্যস্ত। চুপচাপ, শান্তশিষ্ট স্বভাবের মেয়ে হলেও তার এসব উৎসব, অনুষ্ঠান দেখতে খুব ভালো লাগে।
এরইমাঝে হঠাৎ করে প্রভা থমকে যায়। নিজের চোখকে যেন সে বিশ্বাস করতে পারছিল না। অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে, “ও এখানে!”
অনুরাধা প্রভার দিকে ফিরে বলে,”ও মানে কে?”
প্রভা অনুরাধার পানে তাকিয়ে বলে,”ঐ ছেলেটা।”
অনুরাধা প্রভার কথামতো সেদিকে তাকিয়ে দেখতে পায় একটা ছিপছিপে গড়নে উজ্বল ফরসা দেখতে ছেলে। চোখে তার চশমা। অনুরাধা প্রভার কাছে জানতে চায়,”কে ঐ ছেলেটা?”
প্রভা বলে,”এই ছেলেটার সাথেই আমার লাইব্রেরিতে দেখা হয়েছিল।”
অনুরাধা উত্তেজিত হয়ে বলে,”এই ছেলের সাথেই তো বই অদল বদল হয়েছিল?”
“হুম।”
অনুরাধা যেন সুযোগ পেয়ে যায়। বলে ওঠে,”ছেলেটাকে কেমন লেগেছে তোর?”
“ভালোই তো।”
“প্রেম করবি?”
প্রভা বলল ওঠে,”ধ্যাত, তুইও না। ভালো লাগলেই কি প্রেম করতে হবে?”
“না, তুই ছেলের সাথে প্রেম করবি কেন? তুই যা গিয়ে বইয়ের সাথে প্রেম করে। ঐ পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ওদের সাথে প্রেম কর। ওদেকেই বিয়ে করিস। আর ওদের নিয়েই সংসার করিস। এমনকি ওদের বাচ্চারই মা হোস।”
“অনু, এসব কি যা তা বলছিস!”
“তাহলে আর কি বলবো?”
“জানি না।”
অনুরাধা নিরাশ হয়ে তাকায় প্রভার দিকে। আর বলে,”তুই একটা গাধী। শুধু পড়াশোনা জানলেই হয়না। সব দিক দিয়ে এক্সপার্ট হতে হয়।”
এরইমধ্যে স্টেজে এক এক করে সব নতুন স্টুডেন্টদের ডাকা হয়। সিনিয়রেরা তাদের হাতে ফুল তুলে দিয়ে তাদের বরণ করে নিতে থাকে।
পর্যায়ক্রমে প্রভার পালাও চলে আসে। প্রভাকে ফুল দেওয়ার সময় স্টেজে দাঁড়িয়ে ছিল আবির। প্রভার মনে এবার বেশ অন্যরকম অনুভূতির তৈরি হয়। অনুরাধাও ফিসফিস করে বলে,”এটাই বোধহয় ডেস্টিনি প্রভা। এই ছেলের সাথেই তোর বই বদল হয়েছিল, এই প্রথম ছেলে যাকে নিয়ে মুগ্ধতার কথা তুই প্রথম আমায় বলেছিলি আর এই ছেলেই কিনা আজ তোকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিবে। এভাবেই দেখবি একদিন তোদের মালাবদলও হবে।”
প্রভা অনুরাধাকে চোখ পাকিয়ে চুপ করতে বলে। তারপর এগিয়ে যায় ফুল হাতে তুলে নিতে। যতই সামনে এগোচ্ছিল প্রভার হৃদস্পন্দন ততোই বাড়ছিল। সে বুঝতে পারছিল না কেন এমন হচ্ছে। অন্যদিকে আবির হাস্যোজ্জ্বল মুখে তাকিয়ে ছিল প্রভার দিকে। প্রভা স্টেজে উঠতে না উঠতেই রায়ান আবিরের হাত থেকে ফুলের তোড়াটা কেড়ে নেয়। অতঃপর সে এগিয়ে এসে প্রভার হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেয়। প্রভার মনটা খারাপ হয়ে যায়৷ তবুও সে সৌজন্যতার খাতিরে সামান্য হাসে। প্রভার হাতে ফুল তুলে দিয়ে রায়ান বলে,”মিস সাধাসিধা মেয়ে এখন থেকে তুমি আমার জুনিয়র। কোন সমস্যা হলে আমায় বলবে আমি সমাধান করে দেব।”
প্রভা সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে চলে আসে। রায়ান প্রভার যাওয়ার পানেই তাকিয়ে থাকে। প্রভা অনুরাধার পাশে এসে দাঁড়াতেই সে বলে,”এই ছেলেটা চাইছে টা কি? দেখলি কিভাবে উড়ে সে জুড়ে বসল। কাবাব মে হাড্ডি একটা।”
প্রভার মনটা এমনিই অনেক খারাপ ছিল। সে আর কিছু বলল না। রায়ান স্টেজ থেকেই প্রভার দিকে তাকায়। প্রভার নিষ্পাপ মুখশ্রী তাকে বিমোহিত করতে থাকে।
এদিকে কিছুক্ষণ পরেই অনুরাধার ডাক পড়ে। অনুরাধা যখন স্টেজে ওঠে তখন তার হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসে সৌভিক। অনুরাধার হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেওয়ার সময় অনুরাধার হাত ফসকে ফুলের তোড়া পড়ে যায়। সৌভিক বিরক্ত হয়ে বলে,”চোখে দেখতে পাওনা নাকি?”
অনুরাধা তেতে উঠে বলে,”ভদ্রভাবে কথা বলুন।”
“এখানে অভদ্রতার কি পেলে তুমি? নিজেই তো সিনিয়রের সামনে গলাবাজি।”
“বেশ করেছি গলাবাজি করেছি। আমাকে অন্ধ বলার সাহস তুমি কই পেলে? সিনিয়র বলে কি মাথা কিনে নিয়েছ। নিজের হাতে তো বল নেই আবার আমার খুঁত ধরে।”
“তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছ।”
“ঝগড়া আমি শুরু করিনি।”
সবাই তাদের এই কথা কাটাকাটি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। মাঝখানে আবির এসে সৌভিককে বলে,”এই সৌভিক! এখানে ছোট বাচ্চার মতো ঝগড়া করছিস কেন? চল আমার সাথে।”
সৌভিককে একপ্রকার টেনে নিয়ে আসে সে। এদিকে প্রভাও এসে অনুরাধাকে বলে,”আমি জানতাম তুই যেখানে যাবি সেখানেই কোন না কোন ঝামেলা পাকাবি।”
“আমি ঝামেলা পাকিয়েছি? তুই আমার বান্ধবী দোষ দিচ্ছিস? আর ঐ ছেলেটা যে আমায় যা নয় তাই বলল তার বেলা?”
“তুইও কিছু কম বলিস নি।”
“যা, তোর সাথে আর কথাই বলবো না।”
বলেই গাল ফুলিয়ে চলে যায় অনুরাধা। প্রভা ফোস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,”এই পাগলিকে নিয়ে আর পারিনা!”
এদিকে সৌভিক আবিরকে বলে,”বাপরে এটা মেয়ে ছিল নাকি অন্যকিছু! যার বউ হবে তার কপাল শেষ করে দেবে।”
আবির বলে,”তাতে তোর কি? তোর সাথে তো আর ওর বিয়ে হচ্ছে না।”
“তা আর বলতে। এই মেয়ে পৃথিবীর শেষ মেয়ে হলেও একে বিয়ে করব না।”
to be continue…