এই_ভালো_এই_খারাপ পর্ব-৩২ এবং শেষ পর্ব

0
974

#এই_ভালো_এই_খারাপ(সমাপ্তের প্রথম অংশ)
#Jannat_prema

ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই বিছানার উপর থাকা মোবাইল ফোনটা সশব্দে বেজে উঠলো। সকাল দ্রুত পা ফেলে এগিয়ে আসলো মুঠোফোনের কাছে৷ ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে ” ঝগড়ুটে লোক। ” সকাল চুলে তোয়ালে পেঁচিয়ে কল রিসিভ করে কানে ঠেকালো। কল রিসিভ হতেই আদিল ব’লে উঠলো,

” কি করছো মর্নিং কুইন? ”

” গোসল করে আসলাম মাত্র। আপনি? ”

” তোমাকে কখন নিজের করে পাবো, সেই অপেক্ষায় আছি। ”

সকাল মুচকি হাসলো আদিলের কথায়। আদিল আবারও বললো,

” মর্নিং কুইন! ”

” হুম! ”

” ভালোবাসি! ”

” আমরাও তোমাকে ভালোবাসি আদিল ভাইয়া। ”

সকাল চমকে নিজের পাশে তাকালো। ওদিকে ভোরের কন্ঠ শুনে আদিল থতমত খেয়ে মোবাইল ফোন সামনে এনে দেখলো সকাল এখনো লাইনে আছে। ইশ! সে তো ভুলে গেছে, তার মা, বোন আর ভাবি তার হবু শ্বশুর বাড়িতে গেছে। আদিল কল কেটে দেওয়ার আগেই সকাল কল কেটে দিলো।

ভোরকে দেখা মাত্রই সকাল ঝটপট কল কেটে দিলো৷ থতমত খেয়ে বোনের দিকে তাকালো। সকালের ধরা খাওয়া চোরের মতো চেহারা দেখে ভোর উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো। তার বোনটা কেমন চমকে উঠলো তাকে দেখে। ভোর হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরে বললো,

” তোকে দেখতে একদম ধরা খাওয়া চোরের মতো লাগছে সকাল। ইশ! তোদের প্রেম নিবেদনে পানি ঢেলে দিলাম। ”

” মোটেও আমরা প্রেম নিবেদন করছিলাম না। আর তুই আমাকে চোর বলতে পারলি আপু! ”

ভোর সকালের ফুলিয়ে রাখা গাল টেনে ব’লে,

” ওলে সোনা রাগ করে না। কিন্তু তুই এখনো রেডি হসনি? ”

সকাল ঠোঁট উল্টিয়ে বিছানার উপর ধপ করে বসে বললো,

” আম্মু বললো শাড়ি পড়তে। কিন্তু আমি তো শাড়ি পড়তে পারি না। ভাবলাম তুই আসলে তোর থেকে পড়ে নেবো। আচ্ছা আলিফা আপু কই? উনার বেবিটাকে দেখবো। ”

ভোর সকালের হাতে ব্লাউজ আর পেটিকোট ধরিয়ে দিয়ে বললো,

” পরে দেখিস। আলিফা আপু এখন বেবিকে ফিডিং করাচ্ছে আমার রুমে তাই এদিকে আসেনি। আর পুরুষরা সবাই নামাজের পর আসবে। এখন এগুলো পড়ে আয়। আমি শড়ি পড়িয়ে দিবো। ”

সকাল বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে ওয়াশরুমে গেলো চেঞ্জ করতে। সকাল যেতেই ভোর ঝটপট আবদ্ধর মেসেজটা চেক করলো।

” তোকে পেলে খবর আছে। ”

ভোর মিটমিট করে হাসলো৷ আবদ্ধকে ডোন্ট কেয়ারের একটা ইমোজি পাঠিয়ে দিলো। সাথে আবদ্ধ মেসেজটা সিন করলো৷ সাথে সাথে নিজেও এংরি ইমোজি পাঠালো ভোরকে। আবদ্ধর এমন কাজে ভোর আবারো হেসে ফেললো। ” পাগল একটা! ”

জুমার নামাজের পর পরই হাতে গনা কয়েক জনকে নিয়ে আকদটা সেড়ে ফেলেছে সবাই। খাওয়া দাওয়ার আড্ডাটাও আজ অনেক দিন পর জমে উঠেছে। বাদল সাহেব চোখে তৃপ্তি নিয়ে দেখলেন সবটা৷ আজকে তার ছোট মেয়েটাও অন্য বাড়ির বউ। ভোরের সাথে করা ভুলটা তিনি সকালের সাথে আর করলেন না৷ তিনি তার দুই মেয়ে আর মেয়েদের জামাইদের দিকে তাকালেন। কি সুন্দর হাসছে তার মেয়েরা। মেয়েরা সুখে থাকলেই, বাবা – মা সুখী৷ বাদল সাহেব মনে মনে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করলেন৷ তার মেয়ে দুটোকে আল্লাহ সারা জীবন এমন হাসি খুশি রাখুক।

.

অস্বস্তিতে খাবার গলা দিয়ে নামছে না সকালের। আদিলের বাম হাতটা তার কোমড় জড়িয়ে ধরে আছে সবার অগোচরে। কিছুক্ষণ পর পর সেখানে চাপ প্রয়োগ করছে আদিল। যার দরুণ সকালের খাবার খেতে ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে। সকাল একবার চোখ গরম করে তাকালো আদিলের দিকে। অথচ আদিল হাত তো সরালোই না, উল্টো মুচকি হেসে সকালকে চোখ মেরে খাবারে মনোযোগ দিলো। আদিলের এমন কর্মে সকাল বিরক্ত হলো৷ মাথায় বুদ্ধি আসতেই চট করে আদিলের হাতের উপর জোরে চিমটি কাটলো। ব্যাথায় মৃদু চিৎকার করে উঠলো আদিল। সবাই তাকালো আদিলের দিকে।শ্রাবন্তি বেগম অস্থির হয়ে জিগ্যেস করলো,

” কোনো সমস্যা বাবা? ”

আদিল তপ্ত চোখে সকালের দিকে তাকালে, সকালও দাঁত কেলিয়ে হাসলো। অতঃপর শ্রাবন্তি আক্তারের প্রশ্নের জবাবে বললো,

” না আন্টি কোনো সমস্যা না। ”

আদিলের জবাবে শ্রাবন্তি আক্তার স্বস্তির নিশ্বাস নিলেন। সবাই আবারো নিজেদের খাবারে মনোযোগ দিলো। আদিল ধীর ভাবে নিজের মুখ সকালের কানের কাছে নিয়ে আস্তে করে বললো,

” তোমাকে একা পেলে চিমটি কত প্রকার ও কি কি সব বুঝিয়ে দেবো। ”

সকালের গলায় খাবার আটকে গেলো। ঝটপট পানি খেয়ে আদিলকে মুখ ভেঙ্গালো। যেনো সে বললো, ” আমি যেনো শিখতে বসে আছি। ”

.

” আমাকে না বলে ও বাড়ি গিয়েছিলি কেনো? ”

ভোর আসমান থেকে পড়ার মতো করে অবাক হয়ে বললো,

” আমি তো তোমাকে বলেই গিয়েছি , যে আমি মা আর আলিফা আপুর সাথে যাচ্ছি। ”

আবদ্ধ কঠোর চোখে তাকিয়ে বললো,

” আমি না করে ছিলাম না? বলে ছিলাম না আমার সাথে যেতে । ”

ভোর মুখ বাকালো।

” তো সবার সাথে গিয়ে কি সমস্যা হলো শুনি? ”

” অনেক সমস্যা হয়েছে৷ তোর গোবর মাথায় এসব ঢুকবে না। ”

আবদ্ধ ভোরের পেটে মুখ গুঁজে আবারো বললো,

” মাথা টিপে দে। পতি সেবা কর। সারাদিন তো ধেইধেই করতে থাকিস। ”

” আমি ধেইধেই করি? ”

আবদ্ধ ঠোঁট টিপে হাসলো। ভোরকে রাগানোর জন্য বললো,

” করিস তো৷ একটা সেকেন্ডও তোকে কাছে পাই? পাই না। সারাদিন বাচ্চাদের মতো এদিক সেদিক নাচা-নাচি করিস। ”

ভোর রাগলো। রেগে আবদ্ধর মাথার চুল টেনে বললো,

” সরো আমার কাছ,থেকে সরো! একদম আমার কাছে ঘেঁষবে না। ”

আবদ্ধ একটুও সরলো না। উল্টো ভোরের পেটে আলতো চুমু খেয়ে বললো,

” আমার বউয়ের সাথে আমি ঘেঁষাঘেঁষে করি বা চুম্মা-চুম্মি করি তাতে তোর কি? একদম বেশি পাকামি করবি না। ”

ভোর নাক মুখ কুঁচকালো। ছিঃ! এই ছেলের মুখে কোনো লাগাম নেই। সে কি বললো আর আবদ্ধ কি বলছে।

” তুমি দিন দিন নির্লজ্জ পুরুষে রুপান্তর হচ্ছো! ”

আবদ্ধ ললাটে ভাঁজ ফেলে মাথা উঠিয়ে বললো,

” আমার আবার লজ্জা ছিলো কবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো তোকে দেখলে আমার মুখে লাগাম থাকে না। বুঝলি? ”

” অসভ্য। ”

” তোর জন্য! ”

.

তপ্ত রোদে ভার্সিটির গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে সকাল৷ গ্রীষ্ম কাল না থাকার কারনে রোদটা কিছুটা সহনীয়। তবুও সকাল ঘেমে গেলো। মাথা বাকিয়ে ভার্সিটির ভিতরে তাকালো। আদিল এখনো আসছে না। পরিক্ষা শেষে কি একটা কাজ থাকায় প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে দেখা করতে গেছে৷ সকাল মনে মনে হাওয়ায় উড়ছে৷ কারণটা হলো, আজকে আদিলের মাস্টার্সের লাস্ট এক্সাম ছিলো। সকাল লম্বা করে শ্বাস নিলো৷ প্রায় অনেক দিন পর আদিল আজাদি পেলো যেনো। পরিক্ষার টেনশনে ছেলেটা কেমন নেতিয়ে গিয়েছিলো। তবুও হাজারো ব্যাস্ততার মাঝে সকালকে সময় দিতো। যেদিন আদিলের পরিক্ষা থাকতো না, সেদিন রাতে সকালকে নিয়ে ঘুরতে যেতো৷ দু’জনে কখোনো হাতে হাত রেখে খালি পায়ে নিরিবিলি রাস্তায় গল্প করতে করতে হাটতো৷ আবার কখোনো বা ঝগড়া করতো৷ ঝগড়ার এক পর্যায়ে যখন সকাল মুখ ফুলিয়ে রাখতো, আদিল চট করে সকালের কপালে চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরে বলতো,

” সরি। আর ঝগড়া করবো না। ”

সকালের রাগ তখন গলে পানি হয়ে যেতো। এভাবেই তাদের সম্পর্ক এগিয়ে যাচ্ছে। সকাল এতো কিছু ভেবে হেসে উঠলো। শরীর মন দুটো কেমন চনমনিয়ে উঠলো।

” কাকে দেখে হাসছো তুমি? ”

সকাল হাসি থামিয়ে আদিলের দিকে ফিরলো। আদিল শার্টের টপ বোতাম একটা খুলে সকালের সামনে আসলো। হাতের রুমাল দিয়ে সকালের মুখের ঘাম মুছে দিতে দিতে বললো,

” আমার সুন্দর বউটা ঘেমে কেমন লাল হয়ে গেছে রোদে। একদম লাল টমেটোর মতো। তুমি ছায়াতে দাড়াতে পারোনি? ”

সকাল মুচকি হেসে আদিলের বাহু জড়িয়ে ধরে হাটতে লাগলো।

” ছাড়ুন তো। আগে বলুন আজকের পরিক্ষাটা কেমন হলো? ”

” আলহামদুলিল্লাহ ভালো হয়েছে৷ বাট আমি অনেক খুশি সকাল। ”

” কেনো? ”

আদিল দাড়ালো৷ সকালের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,

” তোমাকে নিজের কাছে নিয়ে আসার সময়টা চলে এসেছে যে সকাল। ”

সকাল লজ্জা পেলো। আবারও আদিলের বাহু জড়িয়ে ধরে হাটা দিলো।

” বিয়ের পরেও কিন্তু আমরা এভাবে হাতে হাত ধরে হাটবো। ”

আদিল দুষ্টু সুরে বললো,

” দরকার পড়লে তোমাকে কোলে নিয়ে হাটবো। ”

.

ভোর হাতের জিনিসটার দিকে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে৷ নয়নে তার জল চিকচিক করছে৷ স্পষ্ট ভাবে দুটো লাল দাগ ফুটে আছে প্রেগন্যান্সি কিটে। ভোর নিজের পেটে হাত রাখলো৷ তখনই এক ফোটা চোখের পানি তার হাতের উপর পড়লো। আবদ্ধ বাসায় নেই। হাসপাতালে। ভোর ডুকরে কেঁদে উঠলো। সে মা হতে চলেছে৷ তারও আলিফা আপুর মতো ছোট্ট একটা বাবু হবে৷ তার পেটে ছোট ছোট হাত – পা, ছোট্ট একটা শরীর বেড়ে উঠবে। ভাবতেই ভোর খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠলো৷ চোখের পানি মুছে আবদ্ধকে কল দিতে গিয়ে থেমে গেলো৷ নাহ! আবদ্ধকে এখন জানাবে না৷ এখন জানালে আবদ্ধর এক্সপ্রেশনটা সে মিস করবে। আচ্ছা আবদ্ধ যখন জানতে পারবে, সে বাবা হতে চলেছে। তখন আবদ্ধ কি রকম রিয়াকশন করবে? ভোর সযত্নে কিটটা রেখে দিলো। চোখ মুখ স্বাভাবিক করে চলে গেলো নায়েলি বেগমের কাছে।

নায়েলি বেগম ভোরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে যাচ্ছেন। ভোর কখোন থেকে বলছে, ” মা কাঁদবেন না। ”
অথচ তিনি শুনলেন না সেই কথা। তার ছেলের ঘরে বাচ্চা হবে শুনে তিনি খুশিতে কেঁদেই যাচ্ছেন। মাকে এভাবে ভাবিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে দেখে আদিল পানি খেতে এসে ভড়কে গেছে৷ ভাবির কি কিছু হয়েছে? আদিল পানি খাওয়ার কথা ভুলে ছুটে এসে অস্থির হয়ে বললো,

” ভাবি তোমার কি হয়েছে? মা এভাবে কাঁদছে কেনো? কি হয়েছে বলবে তো? ”

নায়েলি বেগম ভোরকে ছেড়ে এবার আদিলকে ধরে কাঁদতে লাগলেন৷ এতে আদিল প্রায় অনেকটা ভয় পেয়ে গেলো। তার নানা কি মরে গেছে? ধুর! তার নানা তো সেই কবেই অক্কা পেয়েছে৷ তাহলে মা কাঁদছে কেনো? আদিল নিজের মনে কৌতূহল দমাতে না পেরে ভোরকে জিজ্ঞেস করলো,

” ভাবি বলো তো কি হয়েছে? মা এভাবে কাঁদছে কেনো? ”

ভোর কি বলবে ভেবে পেলো না। দেবরকে কি আর সে বলতে পারবে, যে ভাইয়া আমার বাবু হবে দেখে মা কাঁদছে। কখোনো না! ভোর কিচেন রুমে যেতে যেতে বলে,

” মাকেই জিজ্ঞেস করো, কেনো কাঁদছেন তিনি? ”

আদিল উপায়ন্তর না পেয়ে নায়েলি বেগমকে ছাড়িয়ে বললো,

” কি জন্য এতো কাঁদছো একটু বলবে? ”

নায়েলি বেগম আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছে বললো,

” ওরে তুই চাচ্চু হতে চলেছিস। আমার আবদ্ধর ঘরে ফুটফুটে একা বাচ্চা আসতে চলেছে। ”

কথাটুকু শুনে আদিল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে নায়েলি বেগমের দিকে। পর মুহুর্তে পুরো বাড়ি মাতিয়ে চিৎকার করে উঠলো। নায়েলি বেগমকে জড়িয়ে ধরে খুশিতে বললো,

” মা আমি চাচ্চু হবো তুমি, বাবা দাদা আর দাদু হবে। ”

নায়েলি বেগম হেসে বললো,

” হ্যাঁ! হ্যাঁ! এখন যা বাজার থেকে মিষ্টি কিনে নিয়ে আয়। আমি গিয়ে সবাইকে বলি। ”

আদিল মাথা নাড়িয়ে ছুটলো বাজারে। শ্বাশুড়ি আর দেবরের এমন খুশি দেখে ভোর নিজেও খুব খুশি হলো। এখন পালা শুধু আবদ্ধর রিয়াকশন দেখার। আবদ্ধ জানলে কি করবে তখন?

চলবে!

#এই_ভালো_এই_খারপ(অন্তিম সমাপ্তি)
#Jannat_prema

বাসায় ঢুকতেই আবদ্ধর কপাল কুঁচকে গেলো। ড্রয়িং রুমে বাদল সাহেব, শ্রাবন্তি আক্তার, আলিফা, তামিম, সকাল, আফিল রহমান, আদিল আর তার মা সহ সবাই হাসি ঠাট্টা করছে। সবাই আজকে হুট করে এখানে? আবদ্ধ তীক্ষ্ণ চোখে পুরো রুমে তাকালো। তার বউ কই? আবদ্ধ গলার টাই ঢিলে করে বাদল সাহেব আর শ্রাবন্তি বেগমকে সালাম জানালো। উনারা হাসি মুখে সালাম নিলো৷ বাকিরা সব মুখ টিপে হাসছে৷ আবদ্ধ এদের এমন হাসির মানে বুঝলো না। ভোর কোথায় জানতে মা’কে জিজ্ঞেস করলো,

” মা ভোর কোথায়? দেখছি না যে? ”

” তোর বউ একটু আগে রুমে গেছে।”

আবদ্ধ আলিফার দিকে তাকালো৷ আলিফা কথাটা বলে আবারও মিটমিট করে হাসছে। এতে আবদ্ধর কিছু যায় আসলো না৷ সে ঝটপট সিড়ি দিয়ে উঠে নিজের রুমে আসলো।

” ভোর পাখি! কোথায় তুই? ”

আবদ্ধর ডাকে ভোর তখন ক্লান্ত চোখ, মুখ ওড়না দিয়ে মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলো৷ আবদ্ধ গলার টাই খুলে ভোরের দিকে এগিয়ে আসলো৷ এমন ক্লান্ত লাগছে কেনো মেয়েটাকে?

” কি হয়েছে তোর? চোখ মুখ এমন লাগছে কেনো? শরীর খারাপ লাগছে? ”

আবদ্ধ অনেকটা অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো। ভোর মিটমিট করে হাসলো৷ এখন তো একটু আকটু ক্লান্ত লাগবেই। ভোর আবদ্ধর পাশ কাটিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো৷ আবদ্ধ অবাক হলো। ভোর কখনো এমন করে তাকে পাশ কাটিয়ে যায়নি৷ সব সময় সে হাসপাতাল থেকে আসলে, তার শার্ট খুলে দেয় অথবা জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা রাখতো কিছুটা সময় ৷ কিন্তু আজকে তার বিপরীত কিছু করায় আবদ্ধ যারপরনাই অবাক হলো৷ আবদ্ধ এগিয়ে এসে ভোরের সামনে হাটু গেড়ে বসলো। ভোর ক্লান্ত চোখে চাইলো আবদ্ধর অবাক চোখে।

” বল না! কি হয়েছে তোর? কোথায় সমস্যা হচ্ছে বল আমাকে। ”

ভোর লাজুক হাসলো। আবদ্ধ যে বাবা হতে চলেছে এই কথাটা সে কি ভাবে বলবে৷ তার যে লজ্জা লাগছে বলতে। তবুও ভোর কাঁপা হাতে আবদ্ধর ডান হাতটা তার পেটে রাখলো। এতে আবদ্ধর কপালের ভাঁজ আরো গাঢ় হলো৷ বললো,

” পেটে ব্যাথা করছে? ”

ভোর তপ্ত চোখে তাকালো। বললো,

” না! ”

” তাহলে? তাহলে খিদা লেগেছে? ”

ভোর বিরক্ত হলো। আবদ্ধ তো বুঝছেই না। তবুও ভোর না দমে বললো,

” আমার পেটে ব্যাথা করছে না, আর না খিদা লেগেছে। এগুলো কিছুই না৷ এটা অন্য কিছু আবদ্ধ। ”

আবদ্ধ কিয়ৎকাল স্তব্ধ হয়ে চুপ করে ভোরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো৷ পরপরই ভোরের হাত দুটোর উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো আবদ্ধ। ভোর বিস্মিত হয়ে আছে। আবদ্ধ কি তার ইঙ্গিতটা বুঝতে পারেনি? সে তো এতটাও অবুঝ নয় যে, সামান্য একটা বিষয় বুঝতে পারবেনা। নাকি আবদ্ধ অন্যকিছু ভাবছে? ভোরকে আরো বিষ্মিত করতে আবদ্ধ ধীর ভাবে নিজের মাথাটা ভোরের পেটে রাখলো৷ আলতো করে কয়েকটা চুমু খেয়ে বললো,

” কয়দিন হলো? ”

ভোর অবাক সুরেই বললো,

” দেড় মাস হলো। আজকেই জানতে পারলাম। ”

আবদ্ধ মাথা উঠিয়ে চাইলো ভোরের দিকে। ভোর দেখলো, আবদ্ধর ফর্সা নাক কেমন লাল হয়ে আছে৷ চোখ ছলছলে। ভোরের চোখও ছলছল করে উঠলো।

” তুমি খুশি হওনি আবদ্ধ? ”

ভোরের কথাটা শেষ হতে না হতেই আবদ্ধ ভোরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ভোর আবদ্ধ পিঠে হাত রাখলো। ঘাড়ে উষ্ণ কিছুর আভাস পেয়ে ভোর চমকালো৷ আবদ্ধর পিঠে থাকা তার হাত দুটোর বাঁধন শক্ত করে ভোর বললো,

” তুমি কাঁদছো আবদ্ধ? ”

আবদ্ধ ভোরকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো,

” আমার জীবনে আর কোনো অপূর্ণতা থাকবে না ভোর। তোকে পাওয়ার পর আবারো এতোটা আনন্দিত হলাম আমি! আমি বাবা হবো ভোর। তোর এই ছোট্ট শরীরে আরো একটা ছোট্ট প্রাণ বেড়ে উঠবে। আমাকে বাবা বলে ডাকবে। ভোর আমি যে কতটা খুশি হয়েছি তোকে বলে বুঝাতে পারবো না৷ ভালোবাসি তোকে। খুব ভালোবাসি ”

” আমিও তোমায় খুব ভালোবাসি আবদ্ধ! অনেক বেশি ভালোবাসি।”

আবদ্ধ ভোরের কপালে উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে বললো,

” বলেছিলাম না। বেবি নেওয়ার সময় আসলে ডাউনলোড করে নিবো? ”

আবদ্ধ এমন অকপটে বলা কথায় ভোর খিলখিল করে হেসে উঠলো। আবদ্ধ মুগ্ধ হয়ে দেখলো সেই হাসি। ভোর যতবার হাসে, আবদ্ধ যেনো ততবার মুগ্ধ হয়। তার ভোরপাখি পুরোটাই তো মুগ্ধতায় ঘেরা৷ ভোরের মতো কোমল স্নিগ্ধ। প্রাণচঞ্চল তার ভোরপাখি। আবদ্ধ ঝুঁকে আবারো ভোরের পেটে চুমু খেয়ে চোখ বুঝে সেখানে মাথা রেখে লম্বা করে শ্বাস টানলো। বিরবির করে বললো,

” ভালোবাসি! ভালোবাসি! ”

.

” দেখি এদিকে ফির! ”

ভোর ফুলো পেটটা নিয়ে ফিরলো আবদ্ধর দিকে। আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সে৷ দেখতে দেখতে কবে যে চোখের পলকে আট.. আটটা মাস কেটে গেলো। বুঝাই গেলো না। প্র্যাগনেন্ট হওয়ার পর থেকেই আবদ্ধ যেনো আগের চেয়ে দ্বিগুন কেয়ারিং হয়েছে। ভোরকে কিছু করতেই দেয় না। নায়েলি বেগম নিজেও ভোরকে কোনো কাজ করতে দেয় না। এতে ভোর গাল ফুলালেও কারো কিছু যায় আসেনা।

” শাড়িই পড়া লাগবে তোর? বললাম থ্রি-পিস পড়তে। না তুই তো ত্যাড়া। শাড়িই পড়বি৷ যদি শাড়ি পড়ে উষ্ঠা খেয়ে পড়ে কোনো অঘটন ঘটিয়েছিস তো তখন আমার খারাপ রুপটা দেখতে পাবি বলে দিলাম। ”

ভোর ঠোঁট উল্টালো। আজকে তার এক মাত্র ছোট বোনের বিয়ে। আর সে শাড়ি পড়বে না সেটা তো হবে না৷ আবদ্ধ ভোরের শাড়ির কুঁচি সব ঠিক করে দিয়ে উঠে দাড়ালো। কালো শাড়িতে ভোরকে আবদ্ধর কাছে অপ্সরির মতো লাগছে। ফুলো শরীর, ফুলো গালের ভোর যেনো দিন দিন আরো বেশি সুন্দর হয়ে যাচ্ছে। এতে আবদ্ধর কাছে ভোরকে মনে হচ্ছে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নারী। মাতৃত্বের ছাপ যে পড়েছে তার ভোরপাখির উপর। আবদ্ধ ভোরের চোখের কাজলটা আঙ্গুল দিয়ে ঠিক করে ব’লে,

” এতো সেজেছিস কেনো? ”

” এটা কেমন কথা? আমার বোনের বিয়েতে আমি সাজবো না? ”

” সাজতে তো নিষেধ করিনি। কিন্তু তুই দিন দিন যেই মারাত্মক সুন্দরী হচ্ছিস। তোকে সারাদিন আমায় পাহারা দিয়ে রাখতে হয়। কোথা থেকে কোন ছেলে আবার নজর দিয়ে বসে আমার জিনিসে। তাই একটু কম করে সাজবি। ”

শেষের কথাটা বলে ভোরের ঠোঁটের লিপস্টিকটা মুছে হালকা কালার করে দিলো৷ ভোর হা করে দেখলো সবটা৷ এই ছেলেতো দেখি মারাত্মক জেলাসি মানুষ। ভোর আবদ্ধর দিকে ভালো করে তাকিয়ে ফুঁসে উঠে বলে,

” কালো রঙের ব্লেজার পড়েছো কেনো? আর কোনো রঙের ব্লেজার পাওনি? খুব তো আমাকে সাজতে নিষেধ করছো অথচ তুমি নিজেকে দেখো। তুমি কি মনে করেছো আমি কিছু জানি না৷ বিয়েতে মেয়েদের ইমপ্রেস করার ধান্দা সব!”

আবদ্ধ মুচকি হাসলো। ভোরের নাক টেনে বললো,

” বউকেই এখনো ভালো করে ইমপ্রেস করতে পারলাম না। সেখানে আবার বাইরের মানুষ৷ ”

ভোর মুখ ভেঙ্গালো। সত্যি তো আবদ্ধ কেনো কালো ব্লেজার পড়বে? আবদ্ধ কি জানে না তাকে কালো রঙের যে কোনো পোশাকে কি রকম মারাত্মক হ্যান্ডসাম লাগে। আবদ্ধর দিকে অন্য কোনো মেয়ে তাকালে, ভোরের খুব রাগ হয়৷ হিংসেয় রজ্বলে পুড়ে যায় অন্তঃদেশ। সে ছাড়া আর কেউ তাকাবে না তার আবদ্ধর দিকে। শুধু সেই দেখবে তার প্রাণ প্রিয় মানুষটাকে। মন ভরে দেখবে।

সকাল গাড়িতে উঠার পর থেকে ফ্যাঁসফ্যাঁস করে কেঁদে যাচ্ছে। আদিল আসহায় চোখে তাকিয়ে আছে। মেয়ে মানুষ কি ভাবে এতো কাঁদতে পারে? নাক, মুখ লাল হয়ে গেছে কাঁদতে কাঁদতে। আদিল এক সময় অতিষ্ঠ হয়ে বলে উঠলো,

” তুমি এমন ভাবে কাঁদছো মনে হচ্ছে তোমাকে আমি জোর জর করে তুলে নিয়ে যাচ্ছি। অথবা মনে হচ্ছে তুমি আর জীবনেও নিজের বাড়িতে আর আসবে না। ”

কাল টিস্যু দিয়ে নাক মুছে আদিলের দিকে শক্ চোখে তাকালো মেজাজ দেখিয়ে বললো,

” আপনি তো আর বিয়ে করে সবাইকে ছেড়ে যাচ্ছেন না। যাচ্ছি তো আমি। তাই আমি কাঁদছি। ”

আদিল বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললো,

” তোমার জায়গায় আমি হলে কাঁদতাম না। ”

চোখ মুছতে গিয়ে থেমে গেলো সকাল।

” কাঁদবেন কেনো? চ্আপনি তো আর সবাইকে ছেড়ে যাচ্ছেন না। যদি যেতেন আমার মতোই কাঁদতেন। ”

” উহু! মোটেও কাঁদতাম না। কারণ আমার বড় বোন তো আছে আমার কাছে। বাসায় তো ভোর ভাবি আছেন। তোমার আপু! দুই বোন এখন একসাথে একই বাড়িতে থাকবে৷ তাহলে এতো কান্নার কি আছে? ”

সকালের কান্না থেমে গেলো। আসলেই তো, সে আর তার আপু এখন থেকে একসাথে থাকবে। সকালের কান্না থামতেই আদিল মুচকি হেসে সকালের মাথাটা নিজের কাঁধে রেখে বললো,

” আর কান্না করো না। বাসায় যাওয়া অব্দি একটু বিশ্রাম নাও। রাতে কিন্তু সেই সুযোগ পাবে না। ”

শেষের কথাটুকু সকালের কানে কানে বললো আদিল। লজ্জায় কুঁকড়ে গেলো। ছিঃ! আদিল তো ভারি বেশরম লোক। সকালের এমন লজ্জায় কুঁকড়ে যাওয়া দেখে আদিল হেসে উঠলো৷ এতে যেনো সকালের লজ্জা দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। লজ্জা ঠেকাতে আদিলের বুকে মুখ লুকালো ঝটপট।

ভোর ঠোঁট উল্টে বিছানায় জড়সড় ভাবে বসে আছে। তার পড়নে বর্তমানে ব্লাউজ আর পেটিকোট। শাড়িটা আবদ্ধ খুলে ফেলেছে বিয়ে থেকে আসার পর থেকে। আবদ্ধ সোফায় বসে কঠোর চোখে ভোরের দিকে তাকিয়ে আছে৷ তার হাতের নীল রগগুলো এখনো অনেকটা ফুলে আছে৷ ভোর একবার আড় চোখে আবদ্ধর রাগত চেহারার দিকে তাকালো৷ তার দিকেই চেয়ে আছে সে। ভোর দৃষ্টি সরিয়ে ফেললো ঝটপট। আবদ্ধর ভালো লাগলো না ভোরের এভাবে তার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়াটা। তাইতো তড়িৃৎ গতিতে উঠে এসে ভোরের দুপাশে তার দু’হাত রেখে ঝুঁকে গেলো। আচমকা এহেন কাজে ভোর হকচকিয়ে গিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকাল। আবদ্ধ রেগে কিছু বলতে যাওয়ার আগে ভোরের ফুলো উম্মুক্ত পেটের দিকে চোখ পড়তেই চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ দমন করলো কিছুটা। তবুও কন্ঠের তেজ কমলো না । চোয়াল শক্ত করে বললো,

” তুই ওভাবে তখন আমার থেকে চোখ সরালি কেনো?

” তুমি রেগে ছিলে দেখে। ”

“ওই ছেলেটার সাথে কেনো কথা বলছিলি? বল কেন কথা বলছিলি? ”

ভোর শুকনো ঢো’গ গিললো। তোঁতলানো সুরে বললো,

” উনি..উনি বাবার ক্লায়েন্টের ছেলে ছিলো। ”

” তো? ”

ভোর পড়লো মহা ফ্যাঁসাদে।

” কি হলো বলছিস না কেনো? ”

” ওই ছেলেটা নিজ থেকে আমার সাথে কথা বলতে এসেছিলো৷ ”

” তাই বলে তোকেও হেসে হেসে কথা বলতে হবে? তুই জানিস ছেলেটা তোর দিকে কেমন বাজে নজরে তাকিয়ে ছিলো? তোর কোমড়ের দিকে কেমন কামুক দৃষ্টি তাক করেছিলো তুই জানিস? ”

ভোর অবাক হলো। তার কল্পনায়ও আসেনি এমন কিছু। সকালের বিয়েতে তার বাবার ক্লায়েন্টদেরও পরিবার আসছিলো৷ হুট করে কোথা থেকে একটা ছেলে এসে বললো, সে তার বাবার ক্লায়েন্টের ছেলে। ভোর তখন আবদ্ধর জন্য দাড়িয়ে ছিলো। ছেলেটার সাথে কথা বলতে বিরক্ত লাগলেও মানবতার খাতিরে সে মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে কয়েকটা কথা বলার মাঝেই কোথা থেকে আবদ্ধ এসে ভোরকে টেনে নিয়ে আসলো বাসায়। তখন বাসায় খালি নায়েলি বেগম আরো কয়েকজন মেহমান ছিলো। কিন্তু এতোকিছুর মাঝে যে, ছেলেটা কখন তার দিকে বাজে নজরে তাকিয়েছে সে বলতেও পারবে না৷

আবদ্ধ ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো। ছেলেটাকে তো সে শায়েস্তা করেই এসেছে৷ তবুও তার যতবার মনে পড়ে যে ভোরের দিকে বাজে নজরে তাকানোর দৃষ্টিটা। ঠিক তখনই তার শরীরের রক্ত টগবগিয়ে উঠে৷ ইচ্ছে করে ছেলেটার চোখ দুটো তুলে আগুনে পুড়ে ফেলতে৷ আবদ্ধ উঠে গিয়ে ওয়্যারড্রব থেকে মেক্সি বের করে ভোরের হাতে দিয়ে ব’লে,

” এটা পড়ে নে৷ হাত পা ঠান্ডা হয়ে আছে তোর। ”

ভোর মুখ ভেঙ্গালে, আবদ্ধ চোখ গরম করে তাকাল। তারপর ভোরের কপালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।

সকালের মনে ভিতর ঢিপঢিপ করছে। অজানা এক অনুভূতিতে ডুবে আছে তার তনু মন। ঘোমটা দিয়ে বসে থাকতে তার অস্বস্তি হচ্ছে। আদিল এখনো আসছে না কেনো! পরক্ষণেই লজ্জায় হাবুডুবু খেলো সকাল। দরজা ভিড়ানোর আওয়াজে ধ্যান কাটলো সকালের। বুঝতে পারলো কাঙ্ক্ষিত মানুষটা এসে গেছে। আদিলের উপস্থিতি টের পেতেই সকালের বুকের ভিতরটা অতিমাত্রায় লাফানো শুরু করলো। শ্বাস প্রশ্বাস নিতে যেনো তার কষ্ট হচ্ছে।

আদিল বিছানায় ঘোমটা দিয়ে বসে থাকা সকালকে দেখে মুচকি হেসে ধীর পায়ে এগিয়ে আসলো। সকাল সালাম করতে আসলে আদিল নিজের পা দুটো পিছিয়ে নিলো৷ সকাল অবাক হয়ে তাকাল। আদিল সকালেকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে আবারো এগিয়ে আসলো সকালের নিকট৷ সকালের মাথার ঘোমটাটা খুলে ছুড়ে ফেলে দিয়ে মুগ্ধ হয়ে তাকাল। আদিলের এমন কাজে সকাল ভিতরে ভিতরে লজ্জায় কুঁকড়ে গেলেও উপর দিয়ে একদম স্বাভাবিক দেখাচ্ছে নিজেকে৷

” মুখে সালাম দিলেই হবে৷ পা ধরে সালাম করতে হবে না মুখে দেওয়া সালামটাই বেস্ট। ”

সকাল মুখে সালাম দিলো। আদিল হেসে সকালের কপালে চুমু দিয়ে নিজের শেরওয়ানির পকেট থেকে ভারি বস্তুটা বের করে সকালের গলায় লাগিয়ে সেখানে চুমু খেলো৷ সকালের পুরো শরীরটা বিদ্যুৎ বেগে কেঁপে উঠলে৷ প্রথম কারো এমন গভীর স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো। আদিল মাথা উঠিয়ে সকালের দিকে তাকালো। সকাল চোখ বন্ধ করে আদিলের হাত খামচে ধরে আছে। সকালের তিরতিট করে কাঁপতে থাকা ঠোঁট দুটো দেখে আদিল ঢো’গ গিললো৷ সে এখনই সকালের এতো কাছে যেতে চাইছে না। সকালের মত না জেনে এখনই কিছু করবে না। সকাল চোখ খুলে নিজের সামনে নেশালো দুটি চোখ দেখে আবারো কেঁপে উঠলো। আদিল নেশালো চোখে অপলক সকালের দিকে তাকিয়ে আছে৷ সকালের কাঁপতে থাকা ঠোঁটে আবারো চোখ গেলে আদিল যেনো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললো। ঝট করে সকালকে কোলে নিয়ে লাইট বন্ধ করে বিছানার দিকে এগিয়ে আসলো৷

সকাল তখন লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে আদিলের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। তার মনের ভিতরটা অদ্ভুত ভালো লাগায় ছেয়ে আছে৷ সে বুঝতে পারলো আদিল তাকে চায়। পুরোপুরি নিজের করে চায়৷ সেটা আদিলের চোখের দিকে চেয়েই বুঝেছে সকাল। সকাল নিজেও আদিলের সান্নিধ্য পেতে চায়।

আদিল সকালেকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে সকালের মুখের উপর ঝুঁকে ধীর ভাবে বললো,

” আমার তোমাকে চাই সকাল। পুরোপুরি নিজের করে চাই। তোমাতে সিক্ত হতে চাই৷ সেই অনুমতি কি পাওয়া যাবে? ”

সকাল কি ভাবে কি বলবে ভেবে পেলো না৷ নিরব থাকলো। আদিল আবারো বললো,

” মে আ’ই সকাল? ”

সকাল আদিলের শেরওয়ানির কলার খামচে ধরতেই আদিল নিজের উত্তরটা পেয়ে যেতেই সকালের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দিলো। সকাল চোখ বন্ধ করে আদিলের পিঠ জড়িয়ে ধরলো। আদিলের হাত তখন সকালের উম্মুক্ত পেটে বিচরণ করছে। দম বন্ধ হয়ে আসতেই আদিল সকালের ঠোঁট ছেড়ে কপালে কপাল ঠেকালো। দু’জনেই তখন ভারি নিঃশ্বাস ঠেকাতে ব্যাস্ত। পরক্ষণেই আদিল সকালের ব্লাউজের উপরের বোতামে হাত রাখলো৷ আবারো অধর মিলালো সকালের অধরে। হারিয়ে গেলো সকালের মাঝে৷ জানালা খোলা থাকায় মৃদু হাওয়ায় জানলার পর্দা উড়ে এক ফালি আলো যেনো উঁকি দিলো পুরো রুমে৷ যেনো সে চাইছে তাদের লজ্জা দিতে। অথচ তাকে ব্যার্থ করে জানালার পর্দাগুলো আগের ন্যায় নিজ স্থানে কঠোরভাবে স্থির হয়ে গেলো।

.

দু’হাত কপালে ঠেকিয়ে হাসপাতালের করিডরে বসে আছে আবদ্ধ। সে যে একা তাও না। তাদের পরিবারের সবাই বসে আছে৷ ভোরকে আজকে সকালে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে৷ হুট করে ভোরের সকালে প্রসব ব্যাথা উঠায় আবদ্ধ তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে আসলো। বড় বড় ডাক্তারদেরও হাজির করেছে সে৷ যদিও ডাক্তার বলেছে, নরমাল ডেলিভারি হবে। তবুও আবদ্ধ কোনো প্রকার ত্রুটি রাখেনি৷ এমনকি আলগা রক্ত পর্যন্ত রেডি করে রেখেছে। সে চায়না তার ভোরপাখির কোনো কষ্ট হোক৷ আবদ্ধ কপাল থেকে হাত সরিয়ে দাড়ালো। হালকা শীতেও আবদ্ধ কেমন দরদর করে ঘামছে৷ তার সব কিছু অস্থির লাগছে৷ যতক্ষণ না ভোর আর তার অনাগত বাচ্চাটা সহিসালামতে তার কাছে না আসছে। ততক্ষণ পর্যন্ত সে শান্তি পাবে না৷ আদিল গিয়ে ভাইয়ার পাশে দাড়ালো। কাঁধে হাত রেখে বললো,

” রিলেক্স ভাই৷ ভাবি আর আমাদের পুচকু সুস্থ থাকবে, ইনশাআল্লাহ। ”

আবদ্ধ দু’হাত দিয়ে নিজের মুখ মুছে বললো,

” তবুও আমি শান্তি পাচ্ছি না আদিল৷ যতক্ষণ না ভোরকে একবার সুস্থ ভাবে দেখতে পাবো, ততক্ষণ শান্তি নেই। ”

ভোরের বন্ধ চোখের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে আবদ্ধ। তার হাতের মুঠোয় ভোরের হাত। সেখানে অসংখ্য চুমু খাওয়া শেষ আবদ্ধর৷ তবুও তার মন ভরছে না। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ভোর চোখ খুলে দেখলো আবদ্ধ তার দিকে তাকিয়ে আছে৷ ভোর মুচকি হেসে আবদ্ধর গালে হাত রাখলো। জিজ্ঞেস করলো,

” ছেলেকে দেখেছো? সুস্থ আছে ও? ”

আবদ্ধ ভোরের কপালে চুমু খেয়ে বললো,

” না। ”

ভোর অবাক হলো৷

” তুমি ছেলেকে একবারো দেখোনি? ”

আবদ্ধ মাথা নাড়লো। যার মানে, না আমি দেখেনি।

” কেনো দেখোনি? ”

আবদ্ধ ভোরের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে বললো,

” তোকে আগে দেখবো বলে। ”

ভোর হাসলো। আবদ্ধর চুলে হাত বুলিয়ে বললো,

” পাগল একটা। ”

” তোর জন্য! ”

সমাপ্ত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে