এই_ভালো_এই_খারাপ পর্ব-৩০+৩১

0
659

#এই_ভালো_এই_খারাপ(৩০)
#Jannat_prema

তামিম ঝরঝর করে কেঁদে উঠলো। তার,কোলে সদ্য জন্ম নেওয়া তার আর আলিফার ফুটফুটে কন্যা। বুকের সাথে হালকা করে জড়িয়ে বাচ্চাটার কপালে চুমু খেয়ে তামিম হাসি মাখা মুখে নায়েলি বেগমের উদ্দেশ্যে বললো,

” মা দেখুন আমার আরেক মা। আমার রাজকন্যা! আপনাদের নাতি। ”

নায়েলি বেগম চোখের পানি মুছে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানিয়ে তামিমকে বললো,

” হ্যাঁ! হ্যাঁ! এতো তোমার আরেক মা। এখন একটু এদিকে দাও দেখি । ”

তামিম মেয়ের কপালে আবারো চুমু খেয়ে নায়েলি বেগমের কোলে দিলো৷ আবদ্ধ গেছে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে। যেহেতু নরমাল ডেলিভারি হয়েছে, তাহলে আজকেই ডিসচার্জ করে দিবে। এদিকে আফিল রহমান গেলেন হাসপাতালের পাশে থাকা মসজিদে নামাজ পড়তে। তামিম আদিলকে সাথে নিয়ে নিজেও গেলো নামাজ আদায় করতে৷ তাকে এতো সুন্দর রাজকন্যা দেওয়ার জন্য শুকরিয়া আদায় করতে হবে না!

ভোর কিছুক্ষণ পর পর বাচ্চাটার হাতে চুমু দিচ্ছে, তো আবার তার পা কাঁথার বাইরে বের করে আঙ্গুলগুলো দেখছে৷ কি নরম বাচ্চাটার হাত, পা পুরো শরীর। একদম যেনো তুলোর স্তুপ। নায়েলি বেগম ভোরের কান্ডে মুচকি হেসে বাচ্চাটাকে ভোরের কোলে দিতে দিতে বললো,

” ধর নে। সম্পর্কে তো তুই বড় মামি লাগিস। ”

ভোর আনন্দের সহিত হেসে বাচ্চাটাকে কোলে নিতেই বাচ্চাটা একদম ওর বুকের সাথে মিশে গেলো। ভোরের মনে হলো, যেনো আস্ত এক তুলা ওর সাথে মিশে আছে। বাচ্চাটার কপালে ধীরে চুমু দিয়ে ভোর বললো,

” একদম তামিম ভাইয়ার মতো হয়েছে! তাই না মা? ”

নায়েলি বেগম মাথা নেড়ে বললেন,

” হ্যাঁ! কিন্তু এখনো মুখটা ছোট বলে ভালো করে বুঝা যাচ্ছে না৷ তবে ওর থুতনিটা তামিমের মতো। ”

” বাপের মেয়ে বাপের মতো হবে না! ”

আবদ্ধ তখন ডাক্তারের চেম্বার থেকে ভোরদের নিকট এগিয়ে আসছিলো৷ বাচ্চা কোলে ভোরকে দেখে আবদ্ধ থামলো। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ভোরের হাসিমুখের দিকে৷ কি প্রাণবন্ত হাসি। তার ভোর এতো সুন্দর করে হাসে কেনো? ভোর বাচ্চাটার সাথে হালকা দুষ্টুমি করছে। আবদ্ধ এগিয়ে গিয়ে বললো,

” মা! আপিকে আর দেড় বা দুই ঘন্টা পরে ডিসচার্জ করে দিবে। আমি নামাজটা পড়ে আসি৷ তুমি দুই বাচ্চাকে সামলে রেখো। ”

কথাখানা বলে আবদ্ধ চলে গেলো৷ আবদ্ধর কথায় নায়েলি বেগম মিটমিট করে হাসছেন। এদিকে আবদ্ধর কথাটা বুঝতে ভোরের কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো৷ অতঃপর নাক ফুলিয়ে নায়েলি বেগমকে ব’লে উঠলো,

” দেখেছো মা! আমাকে বাচ্চা বলেছে! আমাকে কি দেখতে বাচ্চা লাগে?”

নায়েলি বেগম হাসি থামিয়ে ভোরকে স্বান্তনা দিতে ব’লে,

” না৷ তুই একদম বাচ্চা না৷ আবদ্ধ বাচ্চা! তুই তো ম্যাচিউর একটা মেয়ে। ”

ভোর বিস্তর এক হাসি দিয়ে বললো,

” ঠিক! ”

.

সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে৷ পাখিরা নিজ নিজ নিড়ে ফিরছে৷ আবহাওয়া কিছুটা ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। মৃদুমন্দ বাতাসও বইছে সাথে৷ এ যেনো শীত আসার আগাম বার্তা। অদুরে দাড়ানো পাহারগুলোর দিকে ভোর মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। হাতে তার ধোঁয়া উঠা গরম চায়ের কাপ। কিছুক্ষণ পর পর চায়ের কাপে চুমুক লাগাচ্ছে। আবদ্ধ বাসায় নেই। ইমারজেন্সী থাকায় তাকে ছুটতে হলো হসপিটালের দিকে। একটু আগেই সে আলিফা আর নতুন বেবির সাথে খুনসুটি, গল্প করে এসেছে৷ আলিফা বিশ্রাম নিবে বলে ভোর আর থাকলো না৷ নায়েলি বেগমের সাথে বেরিয়ে আসলো। ভোরের মনে হঠাৎ কেমন এক অনুভূতি নাড়া দিয়ে উঠলো। একবার তার পেটে হাত রাখলো৷ কোনো একদিন তার পেটেও বেড়ে উঠবে ছোট্ট একটা বাচ্চা। তার আর আবদ্ধর বেবি। ভোর আনমনে হেসে উঠলো। মনটা চনমনি উঠলো মাতৃত্বের স্বাধ নেওয়ার জন্য। আজকেই সে আবদ্ধকে বলবে বেবি নেওয়ার কথা৷ তারও একটা ছোট কিউট বেবি চায়।

.

” আলিফা আপুর বাচ্চার ছবি পাঠান না। আমি দেখবো বেবিটাকে। ইশ! ইচ্ছে করছে একবার সামনা-সামনি দেখতে৷ আচ্ছা বেবিটা কার মতো দেখতে হয়েছে? ”

আদিল মৃদু হেসে বললো,

” তোমার আর আমার মতো। ”

আদিলের কথা শুনে সকাল কপালে ভাঁজ ফেলে ব’লে,

” কি আবোল তাবোল বলছেন! ”

আদিলের মাথায় কুবুদ্ধির আর্বিভাব হতেই বললো,

” কোথায় আবোল তাবোল বললাম? ভবিষ্যতে তোমার আর আমার বেবি তো আমাদের মতোই হবে। তাই না? ”

সকালের মুখ হা হয়ে গেলো। সে কি বললো আর আদিল কি বলছে৷ চোখ ছোট ছোট করে নাক ফুলিয়ে সকাল বললো,

” আমি কি বলছি আর আপনি কি বলছেন? ”

” কি বললাম আমি? ”

” কি বলেছেন জানেন না৷ আর আমাদের তো এখনো বিয়ে-ই হলো না সেখানে আপনি বেবির কথা বলা শুরু করে দিলেন! ”

” তো? বিয়ে হতে কতক্ষণ! বিয়ে হলেই তো বেবি চলে আসবে । ”

” কে বলেছে বিয়ে হলে বেবি চলে আসবে৷ তার জন্য তো বাসর করা__”

অকপটে থেমে গেলো সকাল৷ কি বলছিলো সে? ছি! ছি! সকাল চোখ বড় বড় করে মুখে হাত চেপে ধরলো৷ নিজের কথায় নিজেই কঠোর ভাবে লজ্জা পেলো। তার গাল, কান গরম হয়ে গেলো৷

আদিল সকালের এমন অপ্রত্যাশিত কথা শুনে কিয়ৎক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইলো৷ কলের ওপাশ থেকে সকালের কোনো রেসপন্স না পেয়ে আদিল ঠোঁট চওড়া করে হাসলো।

” কি বললে সকালের রানি? ”

সকালকে কি পাগলা কুত্তা কামড়াইছে যে সে পুনরায় কথাটা বলবে আদিলকে৷ লজ্জা ঠেকানোর জন্য সকাল চটপট দেখিয়ে বললো,

” কি..কিছু না! কিছু না। রাখছি। ”

খট করে সকাল কল কেটে দিলো। সকালের এমন কাজে আদিল হো হো করে হেসে উঠলো। তার মর্নিং কুইন লজ্জা পেয়েছে।

” কি ব্যাপার আদিল ভাইয়া! একা একা হাসছো যে? ”

আদিল পিছনে ফিরে ভোরকে দেখে থতমত খেয়ে গেলো। ভোর আদিলের রুমের সামনে দিয়ে নিচে যাওয়ার সময় আদিলকে একা একা হাসতে দেখে দাড়িয়ে গেলো। আদিলের রুমের দরজা খোলা থাকায় পুরো রুমে চোখ বুলালো ভোর। আদিলের দিকে তাকিয়ে বুঝলো কলে কারো সাথে কথা বলে হাসছিলো। ভোর ভাবলো আদিলের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দেওয়া যাক।

” তেমন কিছু না ভাবি! এমনেই হাসলাম! ”

আদিলের কথায় ভোরের ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি ফুটে উঠলো। আদিলের রুমের সোফায় বসে বললো,

” থাক! বলতে হবে না৷ আমি জানি তো সব। নিশ্চয় সকালের সাথে কথা বলছিলে? ”

আদিল মাথা চুলকে হাসলো। কন্ঠে কিছুটা লজ্জা মাখিয়ে বললো,

” ওই আর কি! ”

” আদিল তুমি লজ্জা পাচ্ছো? ”

আদিল কিছু বললো না । তবে হাসলো। ভোর ফের ব’লে উঠলো,

“তবে একটা কাজ খুব ভালো করেছো। ”

আদিল বুঝলো না৷ চোখে প্রশ্ন নিয়ে ভোরের দিকে তাকালো। ভোর হেসে বললো,

” আমার বোনকে পটিয়ে ভালো করেছো৷ এবার আমরা দু’বোন মিলে তোমাদের দু’ভাইকে জ্বালাবো। ”

” এখন কি কম জ্বালাস? ”

ভোর চমকে দরজার পানে তাকালো৷ আবদ্ধ গলার টাই ঢিলে করে শার্টের টপ দুটো বোতাম খুলে দরজার সাথে হেলান দিয়ে ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে আছে। আদিল ভাইকে দেখে মিটমিট করে হাসলো। আবদ্ধ রুমের ভিতরে এসে ভোরের হাত আকড়ে ধরে যেতে যেতে বলে,

” আমার শ্যালিকার সাথে প্রেম করছিস কর। তোর ভাবির আজায়রা কথায় কান দিস না। ”

আবদ্ধর এমন কথায় ভোর রাগলো। আদিল ভাই আর ভাবির যাওয়ার পানে তাকিয়ে ভাবলো, তার ভাই তার ভাবিকে কত ভালোবাসে। আবদ্ধ যখন বিদেশে যাবে। তার দু’দিন আগের কথা। আদিল কোনো এক কাজে ভাইয়ের রুমে গিয়েছিল। আবদ্ধকে রুমে না পেয়ে বেলকনিতে গিয়ে দেখলো আবদ্ধ উদাস দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আদিল ভাইয়ের কাঁধে হাত রাখলো। আবদ্ধ যখন আদিলের দিকে তাকালো, ঠিক তখন যেনো আদিলের বুকে কেউ তীর ছুড়েছে। আবদ্ধর চোখে পানি টলমল করছিলো আবদ্ধ হুট করে আদিলকে জড়িয়ে ধরে কম্পিত সুরো বললো,

” আমি ভোরকে ছাড়া কি ভাবে এতো দূর থাকবো! ওকে… ওকে একটা দিন না দেখলে যে আমি শান্তি পাই না আদিল। ওকে ছাড়া থাকবো ভাবলে বুকের ভিতরটা হাহাকার করে উঠে । কখোনো ভাবিনি ভোরকো ছাড়া এতো দূর যেতে হবে আমাকে। আমি চলে গেলে ভোরকে আড়ালে একটু দেখে রাখিস। তোর ভাইয়ের এই আবদারটুকু রাখবি না? ”

আদিল তখন ভাইয়ের কাঁধে ভরসার হাত বুলিয়ে বললো,

” আমি দেখে রাখবো, ভাবিকে। ”

আদিল দীর্ঘশ্বাস ফেললো। নিজের মোবাইলের দিকে তাকাল একবার৷ সকালের ছোট্ট একটা মেসেজ এসেছে।

” আলিফা আপুর বেবির ছবি পাঠাবেন। ”

চলবে!

#এই_ভালো_এই_খারাপ (৩১)
#Jannat_prema

ভোর মুখ কালো করে খাটের উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে। তার পাশেই বসে মোবাইল ফোন স্ক্রোল করছে আবদ্ধ। আবদ্ধ আড় চোখে ভোরের ফুলিয়ে রাখা গালের দিকে বার কয়েক বার তাকিয়েছে। ভোর একবার পিছনে ঘুরে খাটের সাথে হেলান দিয়ে আধশোয়া আবদ্ধর দিকে তাকাল৷ আবদ্ধ ভাবলেশহীন ভাবে ফোন দেখছে৷ এমন কাজে যেনো ভোরের গা পিত্তি জ্বলে উঠলো। ফুঁসে উঠে বলে,

” অভদ্র! বেয়াদব! দেখছে আমি রাগ করেছি। কোথায় আদর করে রাগ ভাঙ্গাবে৷ সরি বলবে। কিন্তু দেখো মোবাইল ফোনের ভিতর কোন প্রেমিকাকে দেখতে মগ্ন হয়ে আছে। আমাকে তো এখন ভালো লাগে না৷ তাই না! ”

আবদ্ধ ভ্রু কুচকে ভোরের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আবদ্ধকে এভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভোর থতমত খেয়ে অন্য দিকে তাকালো। আচমকা আবদ্ধ ভোরকে হেচকা টান দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ভোরের উপর ঝুঁকে শক্ত কন্ঠে বললো,

” এই রকম কথা আর কখোনো বলবি না। আমার কাছে তুই আগেও যেমন ছিলি আমার মৃত্যু পর্যন্তও তেমন থাকবি আমার হৃদয়ের একাংশ তুই। আমার ভোর পাখি। তাই আমি ওয়ার্ন করছি, আর কখোনো এই কথাটা বলবি না। মাইন্ড ইট! ”

ভোর শীতল চোখে আবদ্ধর উতলা, কাতর চোখগুলোতে তাকিয়ে আছে৷ সে তো জানেই, আবদ্ধ তাকে কতটা ভালোবাসে। যাকে বলে পাগলের মতো ভালোবাসা। ভোর উঠে বসে খাটের সাথে হেলান দিয়ে আবদ্ধর মাথাটা নিজের বুকের মাঝে রেখে চুলে হাত বুলিয়ে ব’লে,

” আমি সরি, আবদ্ধ! আমি সত্যি কথাটা ওভাবে বলতে চাইনি। ”

আবদ্ধ ভোরের হাত সামনে এনে চুমু খেয়ে চোখ বন্ধ করে ব’লে উঠলো,

” তোকে ছাড়া একটা মুহূর্ত থাকবো ভাবলেই আমার নিঃশ্বাস ফুরিয়ে আসে৷ চারপাশটা ভীষণ অন্ধকার লাগে।আমি পুরোটাই কেমন এলোমেলো হয়ে যাই। সেখানে কোনো তৃতীয় ব্যাক্তিকে কল্পনা করা তো দুঃসাধ্য। ”

ভোরের বক্ষ যেনো শীতল হাওয়ায় ছেয়ে গেলো৷ আবদ্ধর চুলে চুমু খেয়ে সুযোগ বুঝে ব’লে উঠলো,

” আমার না একটা জিনিস চাই! ”

চোখ বন্ধ করে থাকা অবস্থায় আবদ্ধ কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

” কি চাই? শাড়ি, গয়না, মোবাইল ফোন নাকি নতুন কিছু? ”

ভোর মাথা ঝাকালো। তার এসব কিছুই চায় না।

” তাহলে কি চাই? ”

আবদ্ধ প্রশ্ন করলো। ভোর বড় করে শ্বাস ফেললো৷ মনে মনে কথা সাজিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো,

” আমার….আমার না আলিফা আপুর মতো একটা বেবি চাই। তোমার আর আমার বেবি। আমাদের বেবি। ”

অতঃপর আবদ্ধর কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ভোর ঝট করে চোখ খুললো। আবদ্ধ তার বুকের উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে। আবদ্ধ কি ঘুমিয়ে পড়লো? একটু আগে না জেগে ছিলো? সেকেন্ডের ভিতর কেউ ঘুমাতে পারে? এসব ভেবে ভোর ঠোঁট উল্টে আবদ্ধর চুলের মাঝে হাত বুলাতে লাগলো। আচমকা আবদ্ধ ব’লে উঠলো,

” তোর মাথার এসব আজায়রা মস্তিষ্কগুলো ডাস্টবিনে ফেলে আসবি৷ যখন বেবি নেওয়ার সময় আসবে, তখন বেবির বাবা তাকে ডাউনলোড করে নিবে। তাই অযথা গাল না ফুলিয়ে লাইট ওফ করে ঘুমোতে আয়। আমি তোকে বুকের মাঝে নেওয়ার জন্য ওয়েট করছি।”

আবদ্ধ খাটের একপাশে শুয়ে কথাগুলো বললো। ভোর ভ্রু জোড়া তীব্র ভাবে কুঁচকে ধুপধাপ পা ফেলে লাইট ওফ করে দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আবদ্ধ এভাবে বলতে পারলো কথাগুলা! তার বুঝি বেবি নেওয়ার শখ হতে পারে না? ভোর যাবে না আবদ্ধর কাছে৷ তাকে বেবি নিতে না দিলে সেও আবদ্ধকে তাকে টাচ করতে দিবে না। একদমই টাচ করতে দিবে না।

আবদ্ধ কপালে মৃদু ভাজ ফেলে ভোরের দিকে তাকিয়ে আছে। লাইট ওফ করে সংয়ের মতো দাড়িয়ে আছে কিভাবে?

” ঘুমোতে আসছিস না কেনো? সংয়ের মতো দাড়িয়ে না থেকে ঘুমাতে আয়। ”

ভোর আবদ্ধকে মুখ বাকিয়ে ভেঙ্গচি দিয়ে বুকে হাত ভাজ করে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বললো,

” না! আমি আসবো না। বেবি নিতে রাজি হলে তবে আসবো। তার আগে না। ”

আবদ্ধ বাঁকা হেসে উঠে বসলো। ভোর দেখলো না,সেই হাসি। টের পেলো আবদ্ধ তার দিকে এগিয়ে আসছে। ভোর শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে। আবদ্ধ তার হাত ধরে টানলেও যেনো নড়তে না পারে সেভাবে শক্ত হয়ে আছে। দরকার পড়লে ভোর টেবিল, চেয়ার হাতের কাছে যেটা পাবে সেটা আকড়ে ধরে শক্ত হয়ে থাকবে
তবুও আবদ্ধর কাছে যাবে না। ভোরের এতো সব কল্পনা জল্পনার উপর এক আকাশ সমান পানি ঢেলে আবদ্ধ ভোরকে পাঁজাকোলে তুলে নিলো। ভোর হকচকিয়ে গিয়ে আবদ্ধ গলা আঁকড়ে ধরে তপ্ত কন্ঠে বললো,

” এটা চিটিং আবদ্ধ! এটা হবে না। আমি মানবো না। আমার কথা না শুনলে আমিও তোমার কথা শুনবো না। ”

আবদ্ধ কিছু না বলে ভোরকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজে ভোরের গায়ের উপর ভর ছেড়ে দিয়ে বললো,

” বেশি কথা বলিস। আমি যখন বলেছি বেবি নেওয়ার সময় আসলে বেবি আসবে, তখন আসবে। আর বাকিটা আলাহ ভরসা। এখন বেবি বেবি করে কানের ভিতরটার বারোটা বাজাবি না।”

ভোর আবারও গাল ফুলিয়ে রাখলো৷ কথাই বলবে না সে আবদ্ধর সাথে। ত্যাড়া লোক! বেবি কি বললেই আসবে নাকি! আবদ্ধ বলবে, এই বেবি চলে আসো আমি তোমাকে নিতে এসেছি। আর বেবিও হাসি হাসি মুখে চলে আসবে। যত্তসব!

” আবারো আজায়রা চিন্তা ভাবনা মাথায় গেঁথে রাখছিস? ”

আবদ্ধর কথায় ভোর চমকে উঠলো। আচমকা কথায় ভড়কে গেছে। আবদ্ধ ভোরকে চেপে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ভোরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,

” জিদ করিস না ভোর পাখি। প্লিজ! এখন চুপটি করে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমা। ”

ভোর আর কিছু বললো না৷ চুপচাপ আবদ্ধর বুকের সাথে মিশে ঘুমিয়ে পড়লো৷ আবদ্ধ মুচকি হেসে ভোরের কপালে, গালে চুমু খেয়ে গায়ের উপর পাতলা কম্বল টেনে দিয়ে নিজেও ঘুমিয়ে পড়লো।

.

শ্রাবন্তি আক্তার আর কাজের মেয়েটা চটপট হাতে সব কাজ করছে। আজকে আদিল আর সকালের আকদ। তেমন কেউ না থাকলেও কম তো আর না। সকাল কতবার এসেছিলো মাকে সাহায্য করতে। অথচ শ্রাবন্তি আক্তার ততবার মেয়েকে ধমকে ধামকে রুমে পাঠিয়ে দিয়েছেন। বাদল সাহেব গেলেন বাজারে, মিষ্টি, রসমালাই আরো অনেক কিছু আনতে।

” মা! একটু হাত লাগাই না তোমার সাথে! ”

শ্রাবন্তি আক্তার তরকারিতে লবণ দিতে দিতে মেয়ের দিকে একবার তপ্ত চাহনি নিক্ষেপ করে ব’লে উঠলেন,

” তোকে রেডি হতে বললাম না। ভোরের শশুড় বাড়ির সবাই এখনিই এসে পড়বে। হাত মুখের কি অবস্থা। যা সুন্দর করে পরিপাটি হয়ে থাক যা। এদিকে আমি আর রাহেলা সব করতে পারবো। ”

সকাল মায়ের ধমকে গাল ফুলিয়ে রুমে চলে আসলো। সকাল চলে যেতেই শ্রাবন্তি আক্তারের চোখে পানি এসে ভর করলো। শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে কাজের মেয়ে রাহেলার উদ্দেশ্যে বললো,

” মেয়েগুলো কেমন বড় হয়ে গেলো নারে রাহেলা? বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়ে মনটা অর্ধেক শূন্য হয়ে গেলো। আর আজকে সকালেরও বিয়ে হয়ে যাবে। হোক না সেটা আকদ। তবুও সে তো অন্য বাড়ির বউ হয়ে যাবে। কয় মাস পরে তো আমাদের ছেড়ে চলেই যাবে মেয়েটা। আমার ঘরটা শূন্যতায় ভরে যাবে। ”

রাহেলা কষ্ট লাগলো খুব শ্রাবন্তি আক্তারের কথায় । তার একটা মাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়ে আজ তিনি নিজেও একা৷ এতো কষ্ট করে পেলে পুষে বড় করে এক সময় আরেকজনের হাতে তুলে দিতে হয় কলিজার মানিককে। রাহেলা চোখ মুছে পান খাওয়া দাঁতে হেসে বললো,

” এটাই তো নিয়ম গো আফা৷ মাইয়াগো আসল ঠিকানাই তো হলো স্বামীর ঘর। ”

শ্রাবন্তি আক্তার দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন। আবারো মনোযোগ দিলেন হাতের কাজে।

চলবে!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে