#এই_ভালো_এই_খারাপ(২৮)
#Jannat_prema
সকাল ভয়ে বুকে থুথু দিয়ে ফ্যালফ্যাল নেত্রে তাকালো তার সামনে দাড়ানো অতিব সুদর্শণ মানবটির দিকে। আদিল এ্যাঁশ কালার টিশার্টের সাথে কালো থ্রী-কোয়টার প্যান্ট পড়ে আছে। থ্রী – কোয়াটার প্যান্ট পড়ায় আদিলের ফর্সা পায়ের লোমগুলো উঁকি দিয়ে আছে। সকাল ঢোগ গিলে আদিলের পা থেকে চোখ সরিয়ে আদিলের চোখের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো। আদিলের ঠোঁটের কোণে থাকা হাসিটা দেখে সকালের বুকে যেনো তীরের মতো কিছু বিধলো। সকাল শুকনো ঢোগ গিললো৷ আদিলের গায়ে থেকে ভেসে আসা কড়া পারফিউমের ঘ্রাণে নিজে কে কেমন মাতাল মাতাল লাগলো সকালের। জামার নিচের অংশ খামঁচে ধরে চোখ নিবদ্ধ করলো ফ্লোরে। আদিল সকালের কাঁপতে থাকা ঠোঁটের দিকে সম্মোহিত চোখে চেয়ে বলে,
” আমাকে খুজছিলে সকালের রানি! ”
সকাল কিছু বললো না। তার বুকের ভিতরটা তীব্র বেগে ধুকপুক ধুকপুক করছে৷ নিজেদের মধ্যের এক ইঞ্চিখানেক দুরত্ব রেখে আদিল আচমকা সকালকে লজ্জায় ফেলে ব’লে উঠলো,
” বুকের ভিতর ঢিপঢিপ করছে কেনো তোমার? ”
লজ্জায় সকাল চোখ খিঁচে বুজে ফেললো৷ ভিতরের সত্তাটা অতি লজ্জায় কুকঁড়ে উঠলো৷ শেষমেষ আদিলও শুনে গেলো তার লাব ডাবের আওয়াজ। কাঁপা কন্ঠে সকাল বলে উঠলো,
” এএকটু সরে দাড়ান। প্লিজ! ”
আদিল দূরে তো সরলো না উল্টো সকালের আরেকটু ঘনিষ্ঠে এসে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
” তোমার ঠোঁটগুলা এতো গোলাপি কেনো? ”
সকাল চমকে ঝট করে বুঝে থাকা চোখ জোড়া খুলে আদিলের দিকে তাকাল। তার শরীরের শিড় দাড়া বয়ে যেনো শীতল রক্ত বয়ে গেলো। আদিল ততক্ষণে মুচকি হাসি দিয়ে সকালের কাছ থেকে সরে এসেছে। চুলে হাত বুলিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকা সকালকে বললো,
” ইউ আ’র সো কিউট, মর্নিং কুইন! ”
সকাল লজ্জায় পেলো এমন অপ্রত্যাশিত কথা শুনে। নিজেকে সামলিয়ে আদিলের দিকে কটমট চোখে তাকালো।
” আপনি তো ভারি লুচু লোক আদিল! ”
আদিল থমকালো খানিকের জন্য, সকালের মুখে নিজের নাম শুনে। কি সুন্দর করে সকাল তার নাম বললো। আদিল ঠোঁট প্রসারিত করে বললো,।
” এখনই লুচুর খেতাব দিয়ে দিলে৷ বিয়ের পর আর কি কি খেতাব লাগাবে আমার কপালে। আল্লাহ মালুম! ”
সকালের কান গরম হয়ে ধোঁয়া বের হওয়ার উপক্রম। ইচ্ছে করলো নিজের কপাল নিজেই চাপড়াতে। কোন সুখে এই লোকটার রুমের সামনো আসতে গেলো।
” আমাকে ভালোবাসো সকাল? ”
আচমকা সকাল ভড়কে উঠলো৷ আবারো আদিলকে নিজের অতিব নিকট দেখে বুকের লাব ডাব লাফাতে শুরু করলো। আদিলের চোখে তখন সকালের জবাব শুনার জন্য আগ্রহ ফুটে আছে। ব্যাকুল চোখে সকালের দিকে চেয়ে আছে। সকাল কি বলবে ভেবে পেলো না৷ সে ততক্ষণাৎ জবাব দিতে পারলো না। এমন না যে সে আদিলকে ভালোবাসে না৷ সে আদিলকে ভালোবাসে। খুব ভালোবাসে। তবে তার স্বীকার করতে কেমন শরম লাগছে৷ সকালকে চুপ থাকতে দেখে আদিল অধৈর্য হয়ে উঠলো।
” কি হলো? চুপ করে আছো কেনো? ভালোবাসো না আমাকে? ”
সকাল আদিলের অস্থিরতা দেখলো। মনের সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে সকাল বলে উঠলো,
” ভালোবাসি! অনেক..অনেক ভালোবাসি! ”
হুট করে আদিল সকালকে শক্ত করে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরলো। সকাল অবাক হলো বেশ৷ সে কল্পনাও করেনি আদিল তাকে আচানক জড়িয়ে ধরবে। শরীরে এই প্রথম কোনো পুরুষের শক্ত ছোঁয়া পেয়ে কেঁপে উঠলো সকাল৷ পুরো শরীর শিরশির করে উঠলো।
আদিল নিবিড়ভাবে সকালকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,
” আ’ই অলসো লা’ভ ইউ সকালের রানি। এতো…এতো ভালোবাসি যে তোমাকে ছাড়া আমি কিছু ভাবতেই পারি না । এই দুইদিন তোমার সাথে কথা বলিনি বলে নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছিলো৷ জানো? ”
” তাহলে কথা বলেন নি কেনো? ”
আদিল সকালকে ছেড়ে তার দুগাল হাতের আজলায় নিয়ে বললো,
” তোমাকে সময় দিতে চেয়েছি। আমার প্রতি তোমার ফিলিং কেমন তা বুঝার জন্য টাইম দিয়েছি৷ ”
সকাল মুগ্ধ হয়ে আদিলের চোখে তাকালো৷ আদিলের চোখে যেনো কাঙ্ক্ষিত কিছু পাওয়ার খুশি ঝলমল করছে। আদিল সকালের গাল থেকে হাত নামিয়ে সকালের ডান আকড়ে ধরলো। সকাল অবুঝের ন্যায় তাকাল সেদিকে। কিছু বলার আগে আদিল তাকে টেনে নিয়ে যেতে বললো,
” চলো! ”
” কোথায়? ”
সকালের কন্ঠে অস্থিরতা। আদিল রুমের দরজা খুলে সকালকে নিচে নিয়ে যেতে যেতে বলে,
” নিচে চলো। ”
” কিন্তু কেনো? ”
আদিল কিছু বললো না৷ সকালকে টেনে নিচে নিয়ে আসলো।
ড্রয়িং রুমের সবাই কিংকর্তব্যাবিমূড় হয়ে তাকিয়ে আছে আদিল আর সকালের দিকে। ভোর অবাক নয়নে একবার আবদ্ধর দিকে তাকালো। সে নির্বিকার। যেনো আগে থেকেই জানতো এসব। নায়েলি বেগম, শ্রাবন্তি আক্তার, বাদল সাহেব আর আফিল রহামান হা করে আছে৷ আদিল তখন সকালকে নিচে সবার মাঝে নিয়ে আসে৷ সবাই নিজেদের আলাপ আলোচনা রেখে ওদের দিকে নজর দেয়। সবচেয়ে অবাক যেটাতে হয়েছে সেটা হলো আদিল সকালের হাত চেপে ধরে তার সাথে ঘেঁষে দাড়িয়ে ছিলো৷ নায়েলি বেগম কিছু বলতে যাওয়ার আগে আদিল হুট করে বলে বসলো,
” বাদল আংকেল, আমি সকালকে বিয়ে করতে চাই৷ আ’ই লাভ হা’র! ”
নায়েলি বেগমের মুখের কথা যেনো মুখেই থেকে গেলো৷ ভোর তখন পানি খেতে যাচ্ছিলো। আদিলের কথাটা শ্রবণ হতেই বিষম খেয়ে গোলগোল চোখে তাকালো৷ সকাল নিজেও চমকে আদিলের মুখের দিকে তাকালো৷ এই ছেলে কি গাঁজা খেয়ে এসেছে? কি আবোলতাবোল বলছে এগুলো৷ আদিল সকালের দিকে চেয়ে চোখ টিপ মেরে আবার সবার দিকে তাকালো৷ আফিল রহমান সহসা দাড়িয়ে কঠিন স্বরে বললো,
” এসব কি বলছো, আদিল তোমার খেয়াল আছে? ”
আদিল সকালের হাত ছেড়ে একপলক আবদ্ধর দিকে তাকালো। আবদ্ধ চোখের ইশারায় কিছু একটা বললো। আদিল ভাইয়ের ইশারা বুঝে হাসলো। ভোর তীক্ষ্ণ চোখে দেখলো সবটা। তার মাথায় তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে সবটা৷ সকালের পাশে এসে তার মাথায় হাত রাখলো ভোর। সকাল অসহায় চোখে বোনের দিকে তাকালো৷ ভোর ফিসফিস করে সকালকে বললো,
” তুই কি আদিল ভাইয়াকে ভালোবাসিস। ”
সকাল দেনামোনা করে মাথা ‘ হ্যাঁ ‘ সূচক নাড়লো। ভোরের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সকাল বুঝলে না তার বোন রাগের বদলে হাসলো কেনো?
আদিল বাদল সাহেবের সামনে হাটু মুড়ে বসে পড়লো। বাদল সাহেবের দুহাত নিজের দু’হাতের মাঝে নিয়ে বললো,
” আংকেল আমি আপনার ছোট মেয়ে সকালকে পছন্দ করি। ওকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে চাই। আমি জানি কথাগুলো আপনার কাছে কেমন লাগছে। আংকেল বিশ্বাস করুন, সকালকে আমি আমার লাইফে চাই। ওকে সারাজীবন আমার সাথে চাই। আমি আপনার কাছে সকালের হাত চাইছি। আমার মাস্টার্সটা কমপ্লিট হলেই আব্বুর ব্যাবসার হাল ধরবো৷ চেষ্টা করবো সকালের জন্য যোগ্য কিছু হওয়ার। আর আমি চাইনা, বিয়ের আগে আমরা দু’জন কোনো হারাম সম্পর্কে জড়াই। তাই আপনাদের কাছে হালাল সম্পর্কের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি। ”
” কিন্তু স__”
” আপাতত এখন আকদটা করিয়ে রাখুন আংকেল। জানি এখন বলবেন সকাল ছোট। পড়াশোনা শেষ করুক৷ বিয়ের পরেও পরাশোনা করতে পারবে৷ আমি বা আমার পরিবার কেউ বাঁধ সাধবে না। আর আমার মার্স্টাসটা শেষ হলে নাহয় অনুষ্ঠান করে ওকে নিয়ে আসবো। ”
বাদল সাহেব কিছু বললেন না। সকাল হতভম্ব হয়ে আদিলের দিকে তাকিয়ে আছে। এই ছেলে এতো দূর চলে গেলো৷ কোথায় সে ভাবলো বিয়ের আগে একটু চুটিয়ে প্রেম করবে। অথচ তার সব ভাবনায় আদিল জল ঢেলে দিলো৷
ভোর হাসতে গিয়ে হুট করে আবদ্ধর দিকে চোখ পড়লে থেমে যায়। আবদ্ধ কড়া চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে৷ ভোর বুঝলো না আবদ্ধ হঠাৎ এমন করে তাকিয়ে আছে কেনো! ভোর মুখ ভেংচিয়ে মনে মনে বললো,
” দুই ভাই একই গাছের লাউ। কেউ কারো থেকে কম না। হুহ! ”
আদিল আবদ্ধর সাহায্যে সবাইকে মানালো তার আর সকালের আকদের বিষয়টা। বাদল সাহেব প্রথমে মানতে চাইলেন না৷ তার মেয়েটা এখনো ছোট৷ পরে আফিল রহমান আর নায়েলি বেগমের কথায় ভাবলেন৷ শ্রাবন্তি আক্তারও স্বামীকে বুঝালেন। ভোর বাবার কাছে এসে আদিলের সম্পর্কে বললো৷ আদিল অনেক ভালো ছেলে৷ তার ছোট বোনকে ঠিক আগলে রাখবে৷ আর সব চেয়ে বড় কথা যেখানে আবদ্ধই ভালো একটা ছেলে, তার ভাইও নিশ্চয় খারাপ হবে না। শেষে সকাল আর আদিলের আকদের ব্যাবস্থা করা হলো আগামী শুক্রবার। শুধু মাত্র ঘনিষ্ঠ কয়েকজন আত্নীয়স্বজনদের নিয়ে আকদ করা হবে। তাহলে আজকে হলো রবিবার। তার মানে হাতে আর তেমন সময় নেই৷
সব কিছু ভেবে ভোর আনন্দে নেচে উঠলো৷ আবদ্ধ রুমে ঢুকে ভোরকে একা একা দাড়িয়ে হাসতে দেখে কপাল কুঁচকালো। হাতের মোবাইল ফোনটা ট্রাউজারের পকেটে রেখে পিছন থেকে ভোরকে কোলে তুলে নিলো। হুট করা কাজে ভোর ভয়ে চোখ বন্ধ করে চিৎকার করার আগে আবদ্ধ ভোরের ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিলো৷ ভোর আর চোখ খুললো না৷ খামচে ধরলো আবদ্ধর টিশার্টের কলার৷ ভোরের ঠোঁট ছেড়ে দেওয়ার আগে জোড়ে কামড়ে দিলো। ভোর মৃদু আর্তনাদ করে আবদ্ধর বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো। অথচ আবদ্ধর বলিষ্ঠদেহখানা তার ছোট হাতের ধাক্কায় সরলো না৷ ঠোঁটের ব্যাথায় চোখে পানি জমলো ভোরের। আবদ্ধ ভোরের চোখের পাতায় চুমু খেয়ে ভোরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ভোরের দম যেনো বন্ধ হয়ে যাবে এখন৷ আবদ্ধ হঠাৎ এমন করছে কেনো বুঝলো না৷ চোখ মুখ কুঁচকে বললো,
” তুমি এমন করছো কেনো আবদ্ধ? আমার ব্যাথা লাগছে। ”
আবদ্ধ কঠোর গলায় বললো,
” দেখলাম তো! সকালকে কি সুন্দর জড়িয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নিচ্ছিলি। অথচ তোকে আমাকে জড়িয়ে ধরতে বললে এমন এক্সপ্রেশন দিস যেনো তোকে কত কঠিন একটা কাজ দেওয়া হয়েছে। আর এখন জড়িয়ে ধরায় ব্যাথা পাচ্ছিস। ”
আবদ্ধর কথায় যেনো ভোর বেক্কল বনে গেছে। কোমড় থেকে আবদ্ধর শক্ত হাতের বাধন ছাড়াতে গেলে আবদ্ধ কঠিন চোখে তাকালো৷ ভোর আর সাহস করে সরাতে গেলো না।
” তাই বলে তুমি এমন করবে৷ আর মেইন কথা হচ্ছে ও আমার বোন৷ অনেকদিন পরে দেখেছি বলে জড়িয়ে ধরেছি। এতে কি হয়েছে? ”
আবদ্ধ ভোরের কথায় চোখ ছোট ছোট করে বললো,
” অনেক কিছু হয়েছে। আমার হিংসে লেগেছে৷ এখন আমাকে তুই ঠিক, একদম ঠিক সকালকে যেভাবে জড়িয়ে ধরেছিলি, সেই ভাবে এক ঘন্টা আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকবি। একদম শক্ত করে।”
ভোরের মুখ হা হয়ে গেলো। বললো,
” ইম্পসিবল আবদ্ধ! ”
” ওকে ফাইন। তাহলে আমি তোকে __”
আবদ্ধ থামলো। ভোর ভ্রু কুঁচকে বললো,
” আমাকে কি? ”
আবদ্ধ বাঁকা হেসে বললো,
” তাহলে আমি তোকে এক ঘন্টা ধরে চুমু খেতে থাকবো। ”
চলবে!
#এই_ভালো_এই_খারাপ(২৯)
#Jannat_prema
সেই এক ঘন্টা ধরে ভোর আবদ্ধকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আধশোয়া হয়ে আছে। এদিকে তাকে বিরক্তিতে রেখে আবদ্ধ কি সাচ্ছন্দ্যে ল্যাপটপে কাজ করে যাচ্ছে। ভোর,যতবার হাতের বাঁধনটা ঢিলে করতে গিয়েছে ঠিক ততবার আবদ্ধর কড়া চোখের চাহনিতে দমে গেছে।
ভোরকে মুচড়া-মুচড়ি করতে দেখে আবদ্ধ ভোরের অগোচরে নিরবে হাসলো। ভোরের বিরক্তিমাখা ফেসটা দেখতে তার দারুণ মজা লাগছে। আর ধরবি কাউকে জড়িয়ে তাও শক্ত করে? আবদ্ধ মনে মনে কথাগুলো আওড়ালো।
” এক ঘন্টার বেশি হয়ে গেছে। এবার তো ছাড়তে পারি? ”
আবদ্ধ ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে ভোরের দিকে নিবদ্ধ করে বললো,
” আমাকে জড়িয়ে ধরতে তোর কষ্ট হচ্ছে নাকি বিরক্ত লাগছে? কোনটা? আন্সার মি! ”
আবদ্ধর কঠোর গলার কথা শুনে ভোর মনে মনে হাসলো। উপর দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললো,
” তা কেনো হতে যাবে! কিন্তু তুমি তো বলেছিলে এক ঘন্টা জড়িয়ে ধরে রাখতে! ”
” এক ঘন্টার বেশি ধরা যায় না? ”
ভোর কিছু বললো না৷ তার আসলে আবদ্ধর কাছাকাছি থাকতে ভিষণ ভালো লাগে৷ কিন্তু তাকে যে একবার তার শ্বাশুড়ির কাছে যেতে হবে। নায়েলি বেগম একবার কোনো কাজে ব্যাস্ত হয়ে গেলে নিজের ওষুধের কথা ভুলে বসে৷
” আসলে মা প্রেসারের ওষুধ খেয়েছে কি না সেটা একবার জেনে আসতাম। ”
আবদ্ধ কোলের ওপরে রাখা ল্যাপটপটা পাশে থাকা টেবিলের উপর রেখে ভোরকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো। ভোর অবাক হয়ে আবদ্ধর দিকে তাকাল। এই ছেলেকে সে একটু আগে কি বলেছে শুনেনি!
আবদ্ধ জানে ভোর মনে মনে কি ভাবছে। ভোরের ভাবনাকে আর না বাড়িয়ে আবদ্ধ ভোরের গালে চুমু খেয়ে বললো,
” মাকে আমি রুমে আসার আগে ওষুধ খাইয়ে আসছি। এখন চুপচাপ আমার বুকের মাঝে চুপটি করে ঘুমিয়ে পড়বি। যদি তিরিং বিরিং করতে দেখি তাহলে খবর আছে। ”
” আমি তিরিং বিরিং করি? ”
” করিস না ? ”
” না ! আমি মোটেও তিরিং বিরিং করি না। ”
” তুই কখোনো দেখেছিস, চোরকে চুরি করে স্বীকার করতে? ”
ভোর ফুঁসে উঠলো।
” আমাকে চোর বললে? ”
আবদ্ধ ঠোঁট টিপে হেসে ভোরকে আরেকটু ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে বললো,
” আমার মন চুরি করিস তুই৷ প্রতিটা ক্ষনে চুরি করিস। আমাকে ঘায়েল করিস তোর নজরে। নেশা লাগিয়ে দিস অন্তরে৷ তোকে পাওয়ার নেশা যাকে বলে। ”
পুরো শরীরে শীতল রক্ত বয়ে গেলো ভোরের। আবদ্ধর নেশালো কন্ঠে তার বক্ষ চিনচিন করে উঠে৷ নিজেকে দিশেহারা লাগে তখন। আবদ্ধর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে ভোর ঢোগ গিলে বললো,
” হয়েছে তোমাকে আর প্রেমালাপ করতে হবে না।”
ভোরের গলা থেকে মুখ উঠিয়ে তাকাল আবদ্ধ। জানতো ভোরের গাল এখন লাল হয়ে উঠবে৷ আবদ্ধ হেসে ভোরের গালে নাক ঘষে বললো,
” তোর লজ্জায় রাঙা গালটা একদম দেখতে চেরি ফলের মতো লাগে। তখন ইচ্ছে করে… ইচ্ছে করে তোকে টুপ করে খেয়ে ফেলি! ”
আবদ্ধর এহেন কথায় ভোর লজ্জয়া আড়ষ্ট হয়ে আবদ্ধর বুকে মুখ লুকিয়ে বললো,
” যাহ অসভ্য! ”
আবদ্ধ হেসে উঠলো ভোরের কথায়।
.
” আচ্ছা আপনি সব সময় রাত বারোটার পরে কল দেন কেনো? এর আগে কল দেওয়া যায় না? ”
আদিল হেসে বললো,
” কারণ রাত বারোটার পর হলো প্রেম করার সময়। এর আগে কল দিলে প্রেম প্রেম ফিলিংসটা স্বাদ মতো পাওয়া যায় না। সব চেয়ে বড় কথা, তোমার ঘুম ঘুম কন্ঠ শুনলে আমার প্রেম বেশি পায়। ”
সকাল লজ্জা পেলো৷ আদিলের নিশ্চয় মাথা খারাপ আছে৷ কি সব কথা বলছে।
” লজ্জা পাচ্ছো সকালের রানি? ”
সকাল ভড়কালো। আদিলকে বুঝতে না দিয়ে অন্য কথা বলে উঠলো সকাল,
” আপনি এটা কি করলেন? ”
আদিল অবাক হওয়ার ভাণ করে বললো,
” আমি আবার কি করলাম? ”
সকাল আফসোসের সুরে বললো,
” কোথায় ভাবলাম বিয়ের আগে একটু চুটিয়ে প্রেম করবো৷ বয়ফ্রেন্ডের হাতে হাত রেখে নিরিবিলি রাস্তায় প্রেমালাপ করতে করতে হাটবো। তার কাঁধে মাথা রেখে বাদাম খেতে খেতে গল্প করবো৷ অথচ সব কিছুকে ধুলিসাৎ করে আপনি ডিরেক্ট বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসলেন।”
আদিল চুলে ব্যকব্রাশ করে মৃদু হেসে বললো,
” আমি তোমাকে হালাল ভাবে চাই, মর্নিং কুইন। তুমি হালাল ভাবে নিজের স্বামীর কাঁধে মাথা রাখবে। তার হাত ধরবে। তখন তোমার ধরা খাওয়ার ভয় থাকবে না। আর না কেউ তোমাকে কটু কথা বলে খারাপ মেয়ে উপাধি দিতে পারবে। আর আমরা তো এখন একসাথে থাকছি না৷ তোমার আমার আকদ করে রাখা হবে৷ আমার এক্সাম শেষ হওয়ার পর তখন তোমাকে আমার কাছে সারাজীবনের জন্য নিয়ে আসবো। এর আগে নাহয় আমরা চুটিয়ে প্রেম করবো। ”
সকাল মুগ্ধ হয়ে আদিলের প্রত্যেকটা কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলো। কি সুন্দর কথাগুলো গুছিয়ে বলে তাকে বুঝিয়ে দিলো। আসলেই তো বয়ফ্রেন্ডের কাঁধে মাথা রাখতে গেলেও তো কত কিছু ভাবতে হবে। অথচ স্বামীর কাঁধে মাথা রাখতে গেলে বিনা সংকোচে রাখা যাবে।
” মর্নিং কুইন! ”
” হুম! ”
” ভালোবাসি ! ”
সকালের বুক ধক করে উঠলো । আদিলের মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনলে, নিজেকে এমন লাগে কেনো? মনে হয় সে বেসামাল হয়ে পড়ে। আদিল সকালের কোনো প্রত্যুত্তর না পেয়ে বললো,
” ভালোবাসি বলবে না? ”
সকাল আড়ষ্ট হলো লজ্জায়। ঝটপট আদিলকে ব’লে উঠলো,
” আমিও ভালোবাসি আপনাকে! ”
ব্যাস! কেটে দিলো লাইন। আদিল থতমত খেয়ে গেলো। পর মুহুর্তে হেসে উঠলো। তার মর্নিং কুইন এতো লজ্জা পায়! নিশ্চয় তখন তার মর্নিং কুইনের লজ্জায় গাল লাল হয়৷ উফ! আদিলের ইচ্ছে করলো একবার সকালের লজ্জা রাঙা মুখটা দেখতে। কবে যে দেখতে পাবে সে!
.
রাত তখন তিনটা পনেরো মিনিট৷ গভীর ঘুমে মগ্ন সবাই৷ ভারি নিঃশ্বাসে ছেয়ে আছে প্রত্যেকটা রুম। ভোর ঘুমের মাঝে ভ্রু কুচকালো। তার মনে হচ্ছে কেউ তাদের রুমের দরজায় করাঘাত করে যাচ্ছে অবিরাম। চোখ টেনে খুললে ভোর। আবদ্ধর বুকের মাঝ থেকে মুখ উঠিয়ে একবার আবদ্ধর মুখের দিকে তাকাল৷ কি সুন্দর তাকে জড়িয়ে ধরে নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমোচ্ছে।
” ভোর, আবদ্ধ? শুনছিস? ”
ভোর দরজার পানে তাকালো। মায়ের গলা না ওটা? ভোর আবদ্ধকে সরিয়ে উঠে বসলো। আবদ্ধর ঘুমও ভেঙ্গে গেলো। ভোরের দিকে তাকিয়ে কপালে ভাঁজ ফেলে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো,
” কি হয়েছে? উঠে বসলি কেনো? ”
ভোর খাট থেকে নেমে দরজার দিকে যেতে যেতে বলে উঠলো,
” মা ডাকছে আবদ্ধ! ”
আবদ্ধ লাফ মেরে উঠে বসলো। মা তো কখোনো এতো রাতে ডাকে না৷ কোনো সিরিয়াস কিছু না তো? ভোর দরজা খুলতেই নায়েলি বেগম কন্দরত সুরে বললো,
” আলিফাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। মেয়েটার প্রসব বেদনা উঠেছে৷ আবদ্ধ যেই হাসপাতালে কাজ করে সেই হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তামিম আমাদেরকে যেতে বলেছে৷ আদিলও উঠে গেছে৷ আমরা এখুনি বের হবো। রেডি হয়ে নে। ”
ভোর বিচলিত হলো৷ নায়েলি বেগমকে স্বান্তনা দিয়ে নিজে ও আবদ্ধ ঝটপট রেডি হয়ে নিলো। অতঃপর সবাই রওয়ানা দিলো হাসপাতালের দিকে।
হাসপাতালের করিডোরে সবাই বসে আছে৷ নায়েলি বেগম মনে মনে মেয়ের জন্য আল্লাহ কাছে সাহায্য চাইছে৷ যাতে তার মেয়ের কোনো কষ্ট নয় হয়। সহিসালামতে সব কিছু আল্লাহ উদ্ধার করুক৷ তামিম অশান্ত মনে ওটির সামনে পায়চারী করছে। তার আলিফার কি খুব কষ্ট হচ্ছে? তাদের বাবুটা সুস্থ থাকবে তো৷ এদিকে আবদ্ধ আর আদিল তামিমকে শান্ত করার চেষ্টা করছে তবুও যেনো তামিম শান্ত হতে পারছে না। আবদ্ধর হুট করে মানস্পটে ভেসে উঠলো, এমন একটা দিন তার ভোরেরও আসবে৷ সে অশান্ত মনে এদিক ওদিক পায়চারী করছে৷ তার কপাল বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝড়ছে। তার অশান্ত মন হুট করে শান্ত হয়ে গেলো একটা মিষ্টি সুরের কান্নার আওয়াজ শুনে। এটা যে তাদের বেবির কান্না। তার আর ভোরের সন্তান। নিজ ভাবনার মাঝেই আবদ্ধ মৃদু হেসে উঠলো। তার খেয়াল যেনো এমন একটা মুহুর্ত তাদেরও আসবে।
চলবে!