#এই_শহরের_পাখিগুলো_ডানা_মেলে_উড়তে_জানেনা
#লেখিকাঃতামান্না
#ষষ্ঠঃপর্ব
ডিবোর্স লেটারে সাইন করছে মেহরিন। আজ এক ফোটা ও জল তার চোখ থেকে পরছে না। শক্ত হাতে কলম ধরেছে সে। এক সময় স্বামীকে চোখের আড়াল হতে দেখলেই খুজতে খুজতে ক্লান্ত হয়েযেত এখন তা সম্পূর্ণ রুপে বন্ধ। আকাশকে আর এ বাড়িতে আসতে দেননি মেহরিনের বাবা। মাহিন চেয়েছিল আকাশকে পুলিশে দেওয়ার জন্য যেন কঠিন শাস্তি পায়। কিন্তু বাদ সাধলেন
মেহরিনের বাবা। তারমতে সব বিচার কাধে নিতে নেই
প্রকৃতির শাস্তি বলেও কিছু আছে। মেয়ে আস্তে আস্তে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে এতেই অনেক।
তার এখন মেয়েকে নিয়ে চলে চিন্তা মেয়েটা তার ভালো আছে এটাই চাই। অন্যকিছু ভেবে কিছুই করার নেই।
লোকের কথায় সমাজের কথায় কত বসে বসে মেয়ের নির্যাতন দেখবেন?
মেহরিন ডিবোর্স লেটার সাইন করে উঠেগেল, একবারো আকাশের ছবি আকাশের স্মৃতি কিছুই তার মানসপটে আসলো না। হয়তো আকাশের প্রতি এতটাই ঘৃণা জমেছে। এটাই কি সম্পর্ক? যেখান থেকে ভালোবাসা দিয়ে শুরু ঠিক ঘৃণা দিয়ে শেষ হয়! মেহরিন সাইন করে নিজের রুমে চলেগেল। সে হয়তো এখনো পুরোপুরি ভাবে বুঝেওনি সে কি করছে বা কি হচ্ছে। কিন্তু তার অজানাতেই তার সংসার নামক মায়া আর পবিত্র বন্ধন
সুতো ছিড়ে খন্ড খন্ড হয়েগেছে। খন্ড খন্ড হয়েগেছে বললে ভুল হবে আগেই ছিল খন্ডিত তবে তা জোড়াতালির আড়ালে ছিল এতদিন। এখন সেই সুতেয় টান পরে জোড়াতালি ছুটেগেছে।
_____________________________________
হরেক রকমের মিষ্টির প্যাকেট, পানসুপারি, আর কিছু ফল নিয়ে এসেছেন সুলতানা বেগম। হুট করে চলে আসবেন কেউ ভাবতেই পারেনি। দরজা খুলে সুলতানা বেগম দেখে খুশি হলেও এত কিছু দেখে মুখটা হা হয়েগেছে মেহরিনের মায়ের। মাথায় কিছু ডুকছে না তার। ধ্যাণ ভেঙ্গেছে শাফায়েতের নানুমার ডাকে।
– “কি মাহিনের মা! ডুকতে দিবা না?”
– “আরে কি বলছেন, আসুন!” তাদের বসতে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে মাহিনের স্ত্রীকে ডেকে বলে দিলেন তাদের জন্য নাস্তা তৈরি করতে। ড্রয়িং রুমে এলেন।
– “চাচি ভালো আছেন? আমি আসলে সময় পাই নাতো তাই দেখা করতে যেতে পারিনি। ”
– “সবই বুঝি, পরিবারের একজনের কিছু হলে পুরো পরিবারের যে কি অবস্থা হয় তা আমি জানি। তা তোমার সাথে আমি এবং সুলতানা একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে এসেছি। মেহরিনের বাবার যদি কোন জরুরি কাজ না থাকে তাহলে তাকে আসতে বলো।”
মেহরিনের মা তাদের মুখের দিকে চেয়ে আবার পানসুপারি, মিষ্টির কথা মাথায় আসতেই, হঠাৎ করেই তার মাথায় একটা জিনিস নাড়া দিয়ে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে মাহিনের স্ত্রীকে রান্নাঘরে গিয়ে বললেন -” বউমা মেহরিনকে তৈরি করো, ওকে সাজিয়ে দিয়ে আসো। যাও! এখন এ নিয়ে প্রশ্ন করো না!” মাহিনের স্ত্রী শাশুড়ির কথা মত মেহরিনকে সাজাতে চলেগেল।
চা, মিষ্টি, ফল, আর কিছু বাহারি রকমের পিঠা, সাজিয়ে
টি-টেবিলে রেখে বসলেন তাদের সামনে।
এতকিছুর আয়োজন দেখে অনেকটা অবাক হলেন সুলতানা বেগম। মেহরিনের মা ও তাহলে ধরে ফেলেছেন। ভেবেই মুচকি হাসলেন তিনি।
________________________________________
স্ত্রীর কাছ থেকে জরুরি তলব শুনেই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন মেহরিনের বাবা। চিন্তা ও হচ্ছিল তার কারনটা অবশ্য মেহরিন! ভয় হয় তার মেয়েটাকে নিয়ে সে এখনো পুরোপুরি ঠিক না কখন কি গঠিয়ে ফেলে তা নিয়ে চিন্তায় পরেগেছেন তিনি। বাসায় এসে দেখলেন মেহমান বসে আছে। স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে যা বুঝলেন তাতে খুশি হলেও আবার মুখটা তার শুকিয়ে গেল। তাদের সামনে গিয়ে বসে পরলেন।
শাফায়েতের নানুমা- “তোমার সঙ্গে জরুরী কথা আছে মঈন! আশা করি তুমি বুঝবে। তো যা বলতে চাইছি তা সরাসরি বলছি। তোমার মেয়ের স্বামীর সাথে নাকি সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না তাই সম্পর্ক নাকি শেষ করে ফেলেছো শুনলাম? ”
মঈন সাহেব- “জ্বী, চাচি!”
শাফায়েতের নানুমা-” ভালো করেছো, যে সম্পর্কের মূল্য দিতে জানেনা, স্ত্রী সন্তানের মূল্য দিতে জানেনা তার সাথে সব শেষ করে দেওয়াই ভালো। এখন আমার একটা প্রস্তাব ছিল, শুনবে? আগে শুনো বুঝ তারপর কথা রেখো। আমি জানি তোমরা আমার কথার অবাধ্য হবে না। ”
মঈন-” জি, চাচি!”
শাফায়েতের নানুমা-” আমার নাতিকে তো দেখেছো? শাফায়েত কে?” ওর স্ত্রীর বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায় একদম অনাকাঙ্খিত ভাবেই। সুস্থ মেয়েটাকে ডাক্তাররা তাদের গাফিলতির কারনে মেরে দেয়।
ওর শ্বাস কষ্ট হচ্ছিল সিজার করার সময়,খিচুনী বেড়ে গিয়েছিল, কেউ অক্সিজেন মাস্ক সময় মত দিতে পারেনি বলে মেয়েটা মারা যায়। এ নিয়ে কেস চলছে। কেস চললেই বা কি আমার নাতি আর তার মেয়ে তো আর তাদের কাছের মানুষ ফিরে পাবে না। ছেলেটা মেয়েটাকে খুব ভালোবাসত। বলেছিলাম বিয়ের ব্যাপারে ও নিষেধ করে দিয়েছিল কখনো এ ব্যাপারে কিছু বললে ও থাকবে না। কিন্তু কিছুদিন আগে মেহরিনের বিষয়ে বলার পর বলেছিল করবে না। কাল হঠাৎ করে বলল করবে তার মেয়ের জন্য হলেও বিয়ে করবে। ”
সুলতানা বেগম নড়েচড়ে বসলেন। কেউ না জানলেও তিনি জানেন ছেলেকে কত কাঠ খড় পুড়িয়ে রাজি করিয়েছেন। এখন শুধু বিয়ের পালা।
– ” তো তোমার মেয়েকে তো আমরা আগে থেকেই চিনি।
ওর মত লক্ষী মেয়ে আর হয়না, সুলতানা আমার অসুস্থতার পর ঐ দুমাস শাফায়েতকে ইচ্ছেমত বলেছে বুঝিয়েছে। তাই হয়তো ও রাজি হয়েছে । মেহরিনের বাচ্চা চাই আর ওর চাই একটা বাচ্চার মা যে কিনা নিজের সন্তানের মত আগলে রাখবে। সুলতানার কাছ থেকে শুনলাম তোমার মেয়ের স্বাভাবিক হতে এর থেকে ভালো উপায় আর হয়না! তারপর ও বলবো ভাবতে থাকো কি করবে তুমি।
– “চাচি সবই তো বুঝলাম, আমার কোন নিষেধ নেই, তবে মেহরিন, ওর মত ছাড়া! আর ওতো এখনো নিজের মধ্যেই নেই মাঝে মাঝে পুরোনো স্মৃতি মনে পরলে মাঝে মাঝে সব ভুলে যায়। আর তাছাড়া শাফায়েত এর সাথে আমার অসুস্থ মেয়েটাকে কি করে বিয়ে দেই বলুন তো।
তাও আপনাদের মত এত বড় ঘরে। এত বড় সমন্ধ!
শাফায়েতের নিজের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান আছে। এমন প্রতিষ্ঠিত ছেলের সাথে মেয়েকে আমি কিভাবে দেবো।”
-” মঈন তুমি একদম বেশিই চিন্তা করছো, সবসময় এক ঘটনা ঘটবে এমন কোন কথা হয়? আর মেহরিন কি অযোগ্য? কত সুন্দর, মার্জিত, ভদ্র, তার সঙ্গে মাস্টারর্স করা মেয়ে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। ওমন বউ কয়জন পায়? আমার এবং সুলতানার পক্ষ থেকে এবং আমাদের পরিবারের সবার পক্ষ থেকে সবাই রাজি। এখন তুমি ভাবতে থাকো তুমি এ নিয়ে কি করবে।
আমি কিন্তু দুটোর একটি শুনতে চাই। হ্যা টাই বেশি চাই!’
“ভেবে দেখো আমার নাতির মত কিন্তু কারো নাতি হবে না!” হেসে হেসে কথাটা বললেন নানুমা।
মেহরিনের বাবা খুব চিন্তায় পরেগেলেন। সমন্ধটা খারাপ না। মেহরিনের মা রাতের অতিথিদের জন্য খাবারের আয়োজন করেছে। আতিথেয়তার দিক দিয়ে যেন কোন কমতি রাখেননি তিনি। রাতের খাবার খাইয়ে দিয়ে বিদায় করলেন।
______________________________________
মাথার উপর প্রকান্ড আকাশ, বিশাল এই আকাশ জুড়ে
কত রঙ্গের পাখি উড়ে যাচ্ছে, কত মেঘ উড়ে উড়ে ভেসে ভেসে এদিক ওদিক যাচ্ছে। সেই আকাশে চেয়ে আছে মেহরিন, খোলা চুলগুলো বাতাসে উড়ছে, কিছুদিন ধরে বিয়ের আলোচনা চলছে, কার বিয়ে ভেবে পাচ্ছে না সে।
বিয়ের কথা বললেই মাথা তার ব্যাথা করে উঠে।
বিয়ের কথা মনে হলে শরীরটা কেমন কেপেঁ উঠে অজানা ভয়ে। ভেসে উঠে পুরোনো স্মৃতি! আবার কোন সর্বনাশের পুনরাবৃত্তি!”
চলবে।