এই_গল্পের_শেষ_কোথায়
পর্ব—-০৫
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
অর্পা আর আয়ুশের উদ্দেশ্য ছিলো রোদ্দুরকে খু*ন করা।ওরা দুজন রাতেই প্ল্যান করে রেখেছিলো যে রোদ্দুরকে পৃথিবী থেকে চিরকালের জন্য সরিয়ে দেবে।তখন আর অর্পা আর আয়ুশের ভেতরে কোনো বাঁধা থাকবে না।গেট থেকে বাড়ির ভেতরে ঢোকার পরের কোনো ঘটনাই মনে পড়ছে না অর্পার।
অর্পা আর আয়ুশ চেয়েছিলো রোদ্দুরকে খু*ন করতে।কিন্তু অদ্ভুতভাবে আয়ুশ কিকরে খু*ন হলো।আর সেটাও কিনা ওর নিজের বাড়িতে।ঐ রাতে আর কি ঘটেছিল অর্পা মনে করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে!কিন্তু ব্যর্থ হয়!
অর্পা এরপরে ওর রুমে ফিরে এলো।এসে বিছানার ওপরে শুয়ে পড়লো।পাশেই রোদ্দুর অঘোরে ঘুমাচ্ছে।
পরের দিন সকালবেলা।তুতুলের ডাকে ঘুম ভাঙে অর্পার।বিছানা থেকে উঠে বসলো অর্পা।তুতুল ওর মাকে প্রশ্ন করে
—মা আমার ঘরে গিয়েছিলে তুমি?
—কেনো রে,কি হয়েছে ?
—আগে বলো আমার ঘরে গিয়েছিলে কিনা তুমি?
—হ্যাঁ গিয়েছিলাম তো!
—তুমি কি আমার ঘর থেকে কিছু সরিয়েছো?
—তুতুল আমি কিন্তু সত্যি কিছু বুঝতে পারছি না,কি বলতে চাইছো তুমি?
তুতুল ওর মায়ের দিকে এগিয়ে আসলো।এরপরে নিজের চোখদুটো বড়ো করে অর্পাকে বলতে লাগলো
—মা আমার কেবিনেটে একটা শার্ট ছিলো,আর এখন ঐ শার্টটা আমি কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।বলো তুমি কি করেছো?
অর্পা নিজের মেয়ের কথা শুনে রীতিমত অবাক হয়ে যায়,সেই সাথে প্রচন্ড ভয়ও পেলো।তুতুল আগে কখনো এইভাবে কথা বলেনি ওর সাথে।ওর মতো শান্তশিষ্ট একটা মেয়ে এতোটা এগ্রেসিভ হয়ে উঠলো কিকরে সেটাই বুঝতে পারছে না।অর্পা তুতুলকে আশ্বস্ত করার জন্য বলে
—-এতোটা উত্তেজিত হয়ো না সোনা,আমি বুঝতে পারছি না একটা শার্ট নিয়ে এতো কিসের প্রবেলেম তোমার?
—প্রবেলেমটা আমার নয় তোমার।তাই তো তুমি শার্টটা চুরি করেছো।আমার ঘর থেকে বিনা অনুমতিতে আমার জিনিসে হাত দেওয়ার সাহস কোথা থেকে পেলে তুমি?
—তুতুল।এবার কিন্তু বেশী বাড়াবাড়ি হচ্ছে।এমন কোনো কাজ করো না,যাতে তোমাকে আমায় শাসন করতে বাধ্য হতে হয়।
—আমার শার্ট কি করেছো আগে সেটা বলো!আমি আমার শার্ট ফেরত চাই।
—আমি তোমার ঐ শার্ট পুড়িয়ে ফেলেছি!শুনতে পেরেছো আমার কথা তুমি!
—কি তুমি শার্টটা পুড়িয়ে ফেলেছো,
এটা তুমি কেনো করেছো মা?
—একটা শার্টের জন্য তুমি নিজের মায়ের জন্য যেটা করছো সেটা কি ঠিক।আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যাও।আমার তোমার সাথে কোনো কথা নেই।
তুতুল অর্পাকে অবাক করে দিয়ে একটা ঘরে রাখা একটা চিনামাটির ফুলদানি ছুড়ে মারলো।অর্পা আর্তনাদ করে মেঝের ওপরে বসে পড়ে।অমনি বাহির থেকে রোদ্দুর ছুটে আসলো।রোদ্দুর গিয়ে অর্পাকে সামলায়।অর্পাকে বিছানার ওপরে বসিয়ে তুতুলের দিকে এগিয়ে গেলো।
—তুতুল এটা কি করেছো তুমি!
নিজের মাকে হার্ট করেছো,এই মানুষ করেছি তোমায় আমি?
তুতুল কোনো কথা না বলে দাঁড়িয়ে আছে।
—কি হলো কথা বলছো না কেনো,
আজ সারাটা দিন তুমি নিজের ঘরে বন্দী হয়ে থাকবে।আর এটাই তোমার পানিশমেন্ট।
এই বলে তুতুলকে নিয়ে ওর ঘরের দিকে চলে গেলো রোদ্দুর।
রাতের বেলা।
অর্পা আর রোদ্দুর ওদের বিছানার ওপরে বসে আছে।অর্পার মাথায় একটা মোটা ব্যান্ডেজ।ওর মাথাটা রোদ্দুরের কাঁধের ওপরে।দুচোখ দিয়ে অশ্রুজল গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
—আবার কান্না করছো,
বাচ্চা মেয়ে বুঝতে পারেনি একটা ভুল করে ফেলেছে।এই নিয়ে এতো কষ্ট পেয়ো না তো!
—আমি তুতুলের কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছি না রোদ্দুর।
—তাহলে?
—সব আমার নিজের পাপের ফল।আমার পাপের ফল ভোগ করতেই হবে আমায়।
—তুমি আবার কি পাপ করেছো?
—আমি চাইলেও সেসব কথা এখন বলতে পারবো না তোমায়।আচ্ছা মেয়েটাকে ওর ঘরে আটকে রেখেছো সেই কখন থেকে।কাজটা কি ঠিক হলো?
—একদম ঠিক হয়েছে?
ওর বোঝা উচিত কতো বড়ো ভুল করেছে ও।
—একটু আগেই তুমি না বললে ছোটো মানুষ ভুল করে ফেলেছে।আমরা তো আর ওর মতো অবুঝ নই।ছাড়ো আমায়।ওর ঘরে গিয়ে একটু দেখে আসি।
—আচ্ছা ঠিক আছে যাও।খাবারগুলো খেয়েছে কিনা চেক করে দেখো।
এরপরে অর্পা তুতুলের ঘরের দিকে গেলো।দরজাটা খুলতেই অর্পা দেখতে পায় তুতুল ঘুমিয়ে আছে।পাশেই ওর মোবাইল ফোনটা।অর্পা এগিয়ে যায় তুতুলের দিকে।ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করে ফোনের লকটা খুলে ফেললো।এরপর ফাইল ম্যানেজারে ঢুকে চেক করতে লাগলো।সেরকম কিছুই পেলো না।ছবির গ্যালারীতে ঢুকে এক এক করে ছবিগুলো চেক করতে লাগলো।হঠাৎ একটা ছবি দেখে অর্পার চোখজোড়া আটকে যায়।নিজের চোখকে যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না অর্পা।
আয়ুশের স্ত্রী ডাহুকের সাথে তুতুলের বেশ কিছু ছবি।ডাহুকের সাথে তুতুলের কবে দেখা হলো আবার?ওদের তো একে অপরকে চেনারই কথা নয় কখনো।কি হচ্ছে এসব?
চলবে…..