উষ্ণতা পর্ব-৫৩+৫৪+৫৫

0
29

#উষ্ণতা
#বিনতে_ফিরোজ
পর্ব:৫৩+৫৪

ফাইলের কাগজগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে মালিহা। চোখের পলক পড়ছে অনেকটা সময় পরপর। তার হৃদকুঠুরিতে হা’না দিয়েছে সম্পূর্ণ নতুন এক চিন্তা। অজানা তথ্যগুলো তাকে নাড়িয়ে দিয়েছে ভেতর থেকে। তিন চার বছর আগের কাগজগুলো হাতড়ে হাতড়ে দেখলো মালিহা। ফটোকপির কাগজে কালি মুছে আসছে। এক কোনায় মালিহার সাদাকালো ছবিটা জ্ব’লজ্ব’ল করছে। সকল প্রশ্নের উত্তর পেলেও মেনে নিতে সময় লাগছে মালিহার। ভয় হচ্ছে, বুক কাঁপছে।

“আপা! আপা!”
মিতুল স্কুল থেকে ফিরে এসেছে। তার আওয়াজ পেয়ে কাগজগুলো সরিয়ে ফেলতে চাইলো মালিহা। শেষ রক্ষা হলো না। মিতুল সরাসরি তার ঘরে এলো। দেখে ফেললো রাশি রাশি কাগজ।
“এগুলো কি আপা?”
“ঐ আমার অ্যাডমিশনের কিছু কাগজপত্র।”
এলোমেলো ভঙ্গিতে সেগুলো গোছাতে শুরু করলো মালিহা। মিতুল স্কুল ব্যাগ রেখে বোনের সাথে হাত লাগালো। এক পর্যায়ে তার হাতে এলো ক্লাস এইটের বেসরকারি বৃত্তি পরীক্ষার ফর্ম। ভালো করে দেখতেই বুঝলো এটা তার নিজের। সেবার সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পাওয়ায় মতিয়ার আলী তাকে নতুন সাইকেল কিনে দিয়েছিলেন। ভুলে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ভুরু কুঁচকে মিতুল বলল, “আপা তোর কাগজপত্রের ভেতরে আমার বৃত্তির ফর্ম কেনো?”
থমকে গেলো মালিহা। তাকালো ভাইয়ের হাতের কাগজের দিকে। মিতুল এগিয়ে দিলো, “এই দেখ।”
আসলেই ওটা বৃত্তি পরীক্ষার আবেদন ফর্ম।
“এই ফটোকপি কোথায় পেলি তুই? এই বৃত্তির খবর যে বাবা কোন জায়গা থেকে বের করে এনেছিল আজও জানলাম না। আমাদের স্কুলে কেউ কোনোদিন ওখানে পরীক্ষা দেয়নি। এই শহরে হয়ও না। সেই ইতু ভাইয়ের কলেজের ওদিকে পরীক্ষা দিয়ে এলাম।” শার্টের উপরের দুটো বোতাম খুলল মিতুল। গলাটা ঘেমে গেছে।
“মিতুল হতে তো পারে এটা ভাইয়াই করেছে।”
মিতুল কালবিলম্ব না করে বলল, “হতেই পারে। ভাইয়া হলো ছুপা রুস্তম। নাহ ছুপা রুস্তম বললে বেশি সম্মান দেয়া হয়। ইতু ভাই একটা ভীতু। সব লুকায় লুকায় করে।”
মালিহা শুনলো। বলল, “সব কি? আর কি করেছে?”
“এইটে বাবা আমাকে স্কুল পাল্টে দিলো কেনো? তোর মনে হয় বাবা নিজে নিজে খোঁজ পেয়েছে যে স্কুলের অবস্থা দিন দিন বাজে হচ্ছে? বাবা কোনোদিন আমার স্কুলে যায়নি, এমনকি আমার কাছে শোনেওনি পড়াশোনার কি অবস্থা। সেই মানুষ নিজের গরজে আমার স্কুল পাল্টাবে বলে তোর মনে হয়? সব ইতু ভাইয়ের কারসাজি। কোত্থেকে শুনেছে স্কুলের অবস্থা শোচনীয় তখন থেকেই বাবাকে বুঝিয়ে টুঝিয়ে আমার স্কুল পাল্টিয়েছে। সেদিন কথায় কথায় বলে ফেলেছে। ব্যাটা মা’র আঁচলের তলায় লুকিয়ে থেকে এসব করতো।” শেষের কথায় মিতুলের কণ্ঠ থেকে ঝরে পড়ল প্রশ্রয়। মুখে অসন্তুষ্ট ভাব থাকলেও মালিহা ঢের বুঝলো ভাই তার ইতমিনানের আচরণে ঠিক কতোটা প্রসন্ন।
“মিতুল।”
“বল আপা।”
“আমার এই কাগজগুলো মানে আমার অ্যাডমিশনের সব কাজও ইতু ভাইই করেছে।”
“জানা কথা। বাবা এসব এতো বুঝতো? তখন ছোট ছিলাম তাই এসব প্যাঁচ ট্যাচ ধরতে পারিনি।”
“এখন বড় হয়েছিস?”
“তো? এই দেখ আমার গোঁফ উঠছে। দুইদিন পর দাঁড়ি উঠবে ইনশাআল্লাহ্।” ঠোঁটের উপর ইশারা করে দেখালো মিতুল।
“তোর কাছে অস্বাভাবিক লাগছে না?”
“কি অস্বাভাবিক লাগবে?”
“এই যে যারা আমাদের সাথে এতদিন কথা বলেনি তারাই হুট করে এতো সাহায্য করেছে জানতে পারছিস।”
“চাচার ভীমরতি ধরেছিল। বাবা মা’রা যাওয়ায় ভালো ধাক্কা খেয়েছে চাচা। চোখের পর্দা পড়ে গেছে। চাচীকে নিয়ে আমি অতো ভাবি টাবি না। মিলি আপা এখন তার নিজের বাড়িতে থাকে তাকে নিয়েও চিন্তা করার মানে নেই। আর ইতু ভাইয়ের আচরণে আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। তার থেকে ঐ রকম ব্যবহার আশাই করিনি। কিন্তু ব্যাটা ভীতু। মা বাবাকে তো বোঝাবি কিছু? না সেসব তিনি করবেন না। সব দোষ কাঁধে নিয়ে লুকায় লুকায় কীর্তি করবেন।” থামলো মিতুল। আবার বলল, “সত্যি বলতে কি আপা, সবচেয়ে বেশি কষ্ট আমি ইতু ভাইয়ের থেকেই পেয়েছিলাম। কিন্তু কি আর করার বল? ভীতু ভাইকে ট্যাবলেট খাইয়ে সাহসী বানানোর কোনো উপায় তো নেই।” হাসলো মিতুল। সেই হাসি দেখে মালিহার মনে হলো সত্যিই মিতুল বড় হয়ে গেছে। তাকে কি বলবে?
“মিতু!”
“দেখ আপা তুইও এবার মিতু বলা শুরু করিস না। প্লিজ!”
“আমার জন্য একটা প্রস্তাব এসেছে।”
মিতুলের মুখের বিরক্তি ভাবটা চট করে উধাও হয়ে গেলো। সে জায়গায় ভর করলো একরাশ উত্তেজনা।
“কে দিয়েছে আপা? কবে দিলো?”
“বড় চাচা।” ইচ্ছে করেই বড় চাচার কথা বলল মালিহা। ইতমিনানের কথা বলতে হুট করেই যেনো লজ্জা পাচ্ছে সে।
“বড় চাচা মানে? কার জন্..” হঠাৎ করেই থেমে গেলো মিতুল। বড় বড় চোখ করে তাকালো মালিহার দিকে। তড়িৎ গতিতে উঠে এসে মালিহার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “ইতু ভাই!”
মুখ নিচু করে মাথা নাড়ল মালিহা। পরপর মুখ উঠিয়ে মিতুলের দিকে তাকালো। তার মুখে খেলা করছে স্বচ্ছ, সুন্দর হাসি।
“শাশুরির ডলা সহ্য করতে হবে আপা। ইতু ভাই তো কিছু বলতেই পারবে না। তুই থাকতে পারবি?”
হাসি সরে জায়গা নিলো বোনের জন্য চিন্তা।
“কি করবো?”
“ইতু ভাই ভালো মানুষ। সমস্যা যা দুই একটা আছে ইগনোর করা যায়। কি বলিস?” মিতুলকে আনন্দিত দেখাচ্ছে।
“হু।”
“কিন্তু মা’কে রাজি করাবে কে?”

••

রাশেদা জোর করে নাজিয়াকে রাবেয়ার বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। মিতুল, মালিহাও পিছিয়ে নেই। তারাও সাথে সাথে হাঁটছে। নাজিয়ার না যেতে চাওয়ার প্রধান কারণ সে শুনেছে আয়েশা, মকবুল আলীও ওখানে গেছেন। বিরক্ত কণ্ঠে সে বলল, “আমরা অন্যদিন গেলে হতো না মা?”
“আমি তোমাকে অনুরোধ করছি বউ মা। চলো। ওখানে যা হবে দেখে আগে থেকেই উত্তেজিত হবে না। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করবে। বয়স হয়েছে তোমার। কাঁধে অনেক দায়িত্ব। আমি চাই না একই ভুল তুমি বারবার করো।”
নাজিয়ার কপালে ভাঁজ পড়ল, “কি হবে ওখানে?”
“চলো, ওখানে গেলেই দেখতে পারবে। আমার ওপরে ভরসা আছে না?”
নাজিয়া মাথা নাড়লেন অস্বীকার করতে পারবেন না শাশুড়ি নামক এই মানুষটার উসিলায় কতো দিক দিয়ে কতো সাহায্য তিনি পেয়েছেন। তাকে ভরসা করবেন না তো কাকে করবেন?

••

রাবেয়া তো অসুস্থ না-ই বরং যেনো একটু বেশি সুস্থ। চড়ুই পাখির মতো এদিক ওদিকে ছুটছেন। কতো রকম নাস্তা যে জড়ো করেছেন!
আয়েশাকে দেখেও কিছু বললেন না নাজিয়া। না বললেন আয়েশা নিজে। দুজনের অবস্থা দেখে হতাশ নিশ্বাস ছাড়লেন রাশেদা। নাজিয়া এগিয়ে গেলেন ননদের দিকে।
“তুমি নাকি অসুস্থ? দেখে তো মনে হচ্ছে না।”
“অসুস্থ মানে অসুস্থ! এই তোমাদের দেখে সুস্থ হয়ে গেলাম!” চকচকে হাসি হেসে বললেন রাবেয়া।
“তোমার সেবা করা লাগবে নাকি তুমি আপ্যায়ন করবে?”
“না না! আজকে আমি আপ্যায়ন করবো। আর খুব দ্রুতই যেনো আপ্যায়ন পেতে পারি সেই ব্যবস্থা করবো।”
“কি ব্যাপার বলো তো? মা কেমন করে কথা বললেন। কি খিচুড়ি পাকাচ্ছ?”
নাজিয়ার হাত ধরে রান্নাঘরে টেনে নিয়ে গেলেন রাবেয়া। একটা চেয়ারে তাকে বসালেন। ইদ্দতের সময় পেরিয়ে গেছে অনেক দিন আগেই। একটু একটু করে যেনো শোক কাটিয়ে উঠেছেন নাজিয়া। রাবেয়ার ভালো লাগলো। মুষড়ে পড়া মানুষকে দেখতে কারই বা ভালো লাগে!
“ভাবি একটা কথা বলবো। কিছু মনে করতে পারবে না।”
“বলো। এমন করছো কেনো তোমরা মা মেয়ে মিলে?”
“ইতুকে তোমার কেমন লাগে?”
অভিজ্ঞ মস্তিষ্কে কথাটা ধরতে বেগ পেতে হলো না নাজিয়াকে। রাবেয়া ছোটখাট একটা ধমকের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে শান্ত কণ্ঠে নাজিয়া বললেন, “কি হিসেবে?”
ঢোক গিললেন রাবেয়া। “এই ধরো মেয়ের জামাই হিসেবে।”
নাজিয়ার শীতল দৃষ্টি দেখে রাবেয়া মনে মনে ভয় পেয়ে গেলেন।
“যেই মহিলা আমাকে দেখতেই পারে না সে আমার মেয়েকে নেবে কেনো?”
“তোমার মেয়ে কি ফেলনা নাকি! এভাবে বলছো কেনো?”
“সেটা ব্যাপার না রাবেয়া। আমার উপরের রাগ যদি আমার মেয়ের উপর ওঠায় তাহলে আমি মানব কেনো?”
নাজিয়ার হাত ধরলেন রাবেয়া। নরম কণ্ঠে বললেন, “বড় ভাবি নিজেই মালিহাকে চেয়েছেন তার ছেলের জন্য।”
অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকালেন নাজিয়া।
“পরে আবার বলবেন না তো লোভে পরে আমরা মেয়ে দিয়েছি?”
“বললেই আমরা ছেড়ে দেবো ভেবেছো? মা আছে, আমি আছি। মালিহা তো পানিতে ভেসে আসেনি। সবার কথা বাদ দাও। মেয়ে যার সাথে সংসার করবে তার কথা বলো।”
“ওকে নিয়ে তো আলাদা করে বলার কিছু নেই। সে ছেলে ভালো। এখন মায়ের সাথে বউয়ের সম্পর্ক ঠিকঠাক রাখতে পারলেই হলো।”
“তাহলে তুমি রাজি!” বয়স কম হলে রাবেয়া লাফিয়েই উঠতেন যেনো।
“মালিহার কাছে শুনতে হবে। আমার মেয়ের পছন্দ অপছন্দের দাম আছে।”
“অবশ্যই অবশ্যই।”

মেয়েকে এক ঘরে ডেকে বসালেন নাজিয়া। স্নেহ মাখা স্পর্শ খুব একটা মালিহা পায়নি। আজ সেটা পেলো।
মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন, “শুনছিস তো সবার কথা। তোর মত কি?”
মালিহা মাথা নিচু করলো, “তোমার অপছন্দের কিছু করবো না আমি মা।”
“ছেলেটাকে আমার অপছন্দ নয়। বাবা মায়ের স্বভাব সে খুব একটা পায়নি। তোর মত বল। ঐ মহিলার সাথে থাকতে পারবি?”
মালিহা বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। প্রায় ফিসফিসিয়ে বলল, “তুমি দোয়া করলে পারবো মা।”
নাজিয়া কিছু বললেন না। মালিহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলেন।

••

ইতমিনানের দৃঢ় বিশ্বাস এসবই ভ্রম। শেষ সময়ে এসে তার মাথা নষ্ট করার যতো ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রের সবটা করছে তার মন। জোট বেঁধেছে মস্তিষ্ক। সে শুনতে পাচ্ছে, দেখতে পাচ্ছে এমন কিছু যা ইচ্ছের তালিকা থেকে কে’টেকুটে সরিয়েছে বহু আগেই। কিন্তু সেই কণ্ঠস্বর এগিয়ে আসছে। ইতমিনান দম ছাড়লো। বিড়বিড় করে বলল, “আল্লাহ্ আমাকে বাঁচাও!”

“আসসালামু আলাইকুম।”
না চাইতেও মুখ তুললো ইতমিনান। তাকাতেই চক্ষু স্থির হয়ে গেলো। ভ্রম বলে ভাবতে চাইলেও পরিবেশ সায় দিলো না। আকাশী রঙের পর্দার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে মিতুল। তার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ল। রাফি দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে ধাক্কা খেলো টেবিলের পায়ার সাথে। দাদি তার বৃদ্ধ কণ্ঠস্বরে কথা বলছেন মকবুল আলীর সাথে। ভ্রম এতো পুঙ্খানুপুঙ্খ হয়? রং বেরঙের হয়?

গলা খাঁকারি দিলো মালিহা। জড়ানো পায়ে হেঁটে গেলো বিছানার কাছে। সেখানে বসার পাঁচ মিনিটেও ইতমিনান কিছু বলল না। আড়চোখে একবার তাকে দেখলো মালিহা। বিড়বিড় করে বলল, “আমি তো ভেবেছিলাম এই ঘরে একটা মানুষ আছে। পাথরের সাথে দেখা করতে তো আসিনি।”
ইতমিনান শুনলো কি না বোঝা গেলো না। অপলক সেই দৃষ্টির সামনে লজ্জায় অস্বস্তি বোধ করলো মালিহা। এভাবে তাকিয়ে থাকার কি মানে! আরো দুইবার কাশলো সে। একটু জোরেই। নাহ! ইতমিনানের কোনো হেলদোল নেই। তিতিবিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালো মালিহা। বের হয়ে গেলো ঘর থেকে। ইতমিনান তখনও বিছানার দিকেই তাকিয়ে আছে।
“ভেবেছিলাম তোমার সমস্যা ইগনোর করার মতো। কিন্তু যে হঠাৎ হঠাৎ স্ট্যাচু হয়ে যায় তার সাথে বোনের বিয়ে দেবো কিভাবে?” মিতুলের ধাক্কায় হুশ ফিরল ইতমিনানের। এসব যে বাস্তব সেটা বুঝতেই ঝট করে উঠে দাঁড়ালো সে। ছুটে গেলো ডায়নিংয়ে। আয়েশার সাথে চোখাচোখি হওয়ার অপেক্ষায় আকুল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। হঠাৎ তিনি তাকাতেই স্থির হয়ে গেলো ইতমিনান। ছেলের চোখের ভাষা বুঝলেন আয়েশা। হেসে চোখের পলক ফেলতেই ইতমিনান বুঝলো তার জীবনের স্বপ্নমাখা সময়টা সে পার করছে।

••

মিলিকে মানাতে পারেননি আয়েশা। সব শুনে সেই যে মেয়েটা ফোন বন্ধ করলো তো করলোই। কোনোভাবেই তার সাথে কথা বলা গেলো না। জামাইয়ের সাথে কথা বললেও মেয়ের সাথে কথা বলতে পারলেন না আয়েশা। কিন্তু মিলির জন্য আর দেরি করতে চান না তিনি। ছেলের মনের অস্থিরতা তিনি টের পাচ্ছেন। সবচেয়ে বড় কথা যেই ছেলে তাকে সম্মান দিয়ে নিজের ইচ্ছেকে ভুলতে চেয়েছিল তার যথাযথ পছন্দের সম্মান করতে তিনি কসুর করবেন না। মালিহাকে তিনি ভেবে চিন্তেই মেনে নিয়েছেন। মেয়েটা খারাপ নয়। আশা করা যায় তিনি মানিয়ে নিতে পারবেন।

দুই পক্ষের আলোচনার সময় মালিহার মামাকে ডাকা হলো। সকলের সম্মতিক্রমে ঠিক চার দিন পর এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের পূর্বপরিকল্পনা গ্রহণ করা হলো। আয়েশা, নাজিয়া বা ইতমিনান, মালিহা কেউ কারো দিকে একবারের জন্যেও তাকালো না। রাবেয়া হতাশ হলেন। এদের মাঝে কিসের আত্মীয়তা হবে!

চলমান।

#উষ্ণতা
#বিনতে_ফিরোজ
পর্ব:৫৫

আবারো একটা ট্রেন জার্নি। তবে একটু ভিন্ন। এক থেকে দুই আবার দুই থেকেই এক হওয়ার গল্প। অনুভূতিগুলো এক তরফা থেকে দুই তরফা হওয়ার গল্প। ছুটন্ত গাছপালার দিকে তাকিয়ে মালিহা ভাবছিল তার জীবন থেকেও এভাবে সময়গুলো ছুটে ছুটে গেছে। পাওয়া না পাওয়ার হিসেব কা’টাকা’টি হয়ে আজ সে সমানে দাঁড়িয়ে। যেখানে তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে সুখ। ঘাড় ঘুরিয়ে বামে তাকালো মালিহা। ইতমিনান মনোযোগ সহকারে পেপার পড়ছে। তার দিকেই তাকিয়ে রইলো মালিহা, অপলক।
শেষের পাতা শেষ করে ইতমিনান পেপার ভাঁজ করলো। বিরক্ত কণ্ঠে বলল, “ঘুরেফিরে এক খবর! দুনিয়ায় যেনো আর কিছু হয় না। বাংলাদেশের কিছু মানুষ সিলেক্ট করা। এরা কখন কথায় যায় কি করে, কি খায় এসবই এদের নিউজ। পারলে এটাও লিখত এরা দিনে বাথরুমে কতবার যায়।”
ফিক করে হেসে ফেললো মালিহা। ইতমিনানের হাত পেঁচিয়ে ধরে বলল, “তুমি এতো রাগছো কেনো?”
“রাগবো না? দশ টাকা দিয়ে পেপার কিনেছি। এসব ফালতু নিউজ পড়ার জন্য?”
“জানোই যখন তাহলে কিনেছো কেনো?”
“যদি তাদের সুমতি ফেরে, যদি নতুন কিছু ছাপায় এই আশায়।” দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল ইতমিনান।
মালিহা নড়েচড়ে বসলো। বাঁধন শক্ত করে বলল, “এই আমি এবার কোথায় যাবো?”
“কোথায় মানে? ভার্সিটিতে।”
ভুরু কুঁচকে মালিহা বলল, “বিয়ে করে ভার্সিটিতে থাকবো কেনো?” পরপর উৎফুল্ল হয়ে উঠলো সে, “তোমার ওখানে যাই?”
“পাগল নাকি! আমার ওখানে কিছুই নেই। খাট, আলমারি, ড্রেসিং টেবিল কিছুই না। এমনকি চাদরও বোধহয় একটা আছে। আসার আগে দেখেছিলাম আগেরটা মাঝখান থেকে একদম ছিঁড়ে গেছে।”
“তো কি হয়েছে? উপরে ছাদ আছে, নিচে মেঝে আছে। আর তার মাঝখানে তুমি আছো। আমি থাকতে পারবো না কেনো?” শেষটুকু নিচু কণ্ঠে বলল মালিহা। ইতমিনানের কপালের ভাঁজ শিথিল হয়ে এলো। চোখ রাখলো মালিহার তৎক্ষণাৎ একটা চিন্তা হা’না দিলো তার মনে। পুরোনো তবে টাটকা।
“এই তোর সেই লুকানো প্রেমিকের কি খবর?”
“লুকানো প্রেমিক মানে?”
“বুঝতে পারছিস না, না?” শক্ত শোনালো ইতমিনানের কণ্ঠ।
“উল্টাপাল্টা কথে বলবে না বলে দিলাম। আমি ভালো মেয়ে। কারো সাথে কোনো আউল ফাউল কিছু করিনি।”
“কিছুই করিসনি কিন্তু পেছনে লাইন ঠিকই ধরিয়েছিস। বাহ!”
এতক্ষণে তার কথার অর্থ ধরতে পারল মালিহা।
“ওহ! এহসানের কথা বলছো? তুমি জানলে কিভাবে!”
“যাক স্বীকার করলি।”
“বলো তুমি জানলে কিভাবে।”
“এসেছিল না বাড়িতে। যেভাবে তাকিয়েছিল তোর দিকে। পুরাই দিওয়ানা! এবার গেলে কি বলবি?”
“আমি তো আরো আগেই ওকে বলে দিয়েছি যে এভাবে সময় নষ্ট না করতে। সরাসরি নিষেধ করার পর ও আর আমাকে বিরক্ত করেনি। ছেলেটা ভালোই।”
“ভালোই? তাহলে ওকে না করলি কেনো?”
“আমার টাইপের না। ওর মন মানসিকতা আমার সাথে মেলে না। এজন্য।”
“মিলিয়ে নিতে পারতি।”
“ফিলিং জেলাস হু হু!”
কঠোর দৃষ্টিতে মালিহার দিকে তাকালো ইতমিনান। রুক্ষ কণ্ঠে বলল, “আমার বউয়ের দিকে মানুষ তাকাবে কেনো? তাও আবার ঐরকম করে! এখন থেকে মুখ ঢেকে থাকবি। ঢাক এখুনি ঢাক।”
মালিহার কানে বারবার বাজলো “আমার বউয়ের দিকে মানুষ তাকাবে কেনো?”
“তাকালে তুমি চোখ উঠিয়ে নিতে পারবে না? সিনেমার হিরোদের মতো?”
বিরক্ত কণ্ঠে ইতমিনান বলল, “বাচ্চাদের মতো কথা বলছিস কেনো? কতজনের চোখ ওঠাবো আমি? তখন সারাজীবন তুই একাই থাকিস।”
“কেনো? তুমি কোথায় থাকবে?”
“কেনো জেলে। বউয়ের দিকে তাকানোর জন্য যদি মানুষের চোখ ওঠাতে শুরু করি তাহলে আমার আর বাইরে ঘুরে বেড়ানো লাগবে না। জেলে যেয়ে থার্ড ডিগ্রি নিতে হবে।”
হেসে ফেললো মালিহা।
“মিতুল বলেছিলো ইতু ভাই ভীতু। তাই তো দেখছি।”
ইতমিনান শান্ত কণ্ঠে বলল, “মজা না মালিহা। কতো জনের চোখ নামাবো আমি? নামালেও তাদের স্মৃতি থেকে তোকে সরাতে পারবো? সেই ক্ষমতা আমার আছে? আমি একজন পুরুষ। পুরুষের দৃষ্টি কেমন হতে পারে ভালো করেই জানি। শুনতে খারাপ লাগলেও এটা সত্যি, একটা ছেলে একটা মেয়েকে কিভাবে কিভাবে দেখতে পারে তুই চিন্তাও করতে পারিস না। সবার চোখের কন্ট্রোল আমার হাতে নেই। তার চেয়ে আমি নিজের চোখ কন্ট্রোল করবো আর তোকে লুকিয়ে রাখবো।”
“কতদিন লুকিয়ে রাখবে?”
“যতদিন পারি। যতদিন আল্লাহ আমার দেহে প্রাণ রেখেছেন।”
কথাগুলো মালিহার কাছে নাটকীয় মনে হলো না। ইতমিনান সেভাবে বলেনি। বলতে পারে না। খুব সাধারণভাবে বলা কথাগুলো তাকে প্রশান্তি দিলো। ইতমিনান, নামের যথার্থ প্রয়োগ।
হঠাৎ একজন ম্যাগাজিন বিক্রেতা এলো। চারপাশে তাকিয়ে হাক ছাড়লো বিক্রির উদ্দেশ্যে। সেদিকে তাকিয়ে ইতমিনান চাপা কণ্ঠে বলল, “দেখ দেখ কিভাবে তাকাচ্ছে! মুখটা ঢাক না মালিহা!” আকুতি করে বলল ইতমিনান। সেট করা হিজাব পুনরায় খোলা কষ্টের বিষয়। তবুও স্বামীর আকুতির সামনে সেই কষ্টটুকু নিয়ে চিন্তা করলো না মালিহা। বলল, “তাহলে তুমি উঠে দাঁড়াও। হিজাব খুলতে হবে।”
ইতমিনান ঝটপট উঠলো। স্ত্রীকে আড়াল করে দিলো লোকচক্ষু থেকে। একপাশ থেকে প্যাঁচ খুলে গলার ভাজের দিক থেকে কাপড় নিয়ে নাকের উপরে টেনে নিলো মালিহা। খোলা প্যাঁচ কানের দিকে পিন দিয়ে লাগাতেই ইতমিনানকে ইশারা করলো। বসে পড়ল সে। মালিহার মনে পড়ল একদিন ইতস্তত করে এই পদক্ষেপটা নেয়া হয়নি। আজ হলো। এই বুঝি সঙ্গীর প্রভাব।
ম্যাগাজিন বিক্রেতার দিকে চোখ যেতেই ইতমিনানের হাত ঝাঁকালো মালিহা।
“কি হয়েছে?”
“আমি একটা ম্যাগাজিন কিনব।”
“এগুলো তো সব বাচ্চাদের।”
“বাচ্চাদেরটাই কিনব। চলে গেলো চলে গেলো! ডাকো!”
ইতমিনান ডাকলো। মালিহা “বাটারফ্লাই”এর পঞ্চান্ন তম সংখ্যা কিনে নিলো। সূচিপত্র খুলে খুঁজতে লাগলো কাঙ্খিত নাম। পেয়ে গেলো নিচের দিকে গল্পের তালিকায়। উচ্ছ্বসিত ভঙ্গিতে বলল, “দেখো! আমার সেই স্টুডেন্ট! ঐ যে তিশা। বলেছিলাম না তোমাকে?”
মাথা নাড়ল মালিহা। টেনে নিলো বইটা। নির্দিষ্ট পৃষ্ঠা বের করে গল্পটা পড়ল। বড় বড় অক্ষরে শিরোনামে লেখা “গোল্ডেন বার্ড”। গল্প শেষ করে ইতমিনানের চক্ষু চড়কগাছ।
“তোর স্টুডেন্ট তো মা’রা’ত্মক লেখে!”
“তাই না!” সাথে সাথেই মালিহার মুখে অন্ধকার ঘনালো। “ওর মা একদমই বোঝে না।” দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল মালিহা।
“দোয়া কর। আর কি করবি তুই।”
“আজকে ওখানে যেয়ে আগে ওদের বাসায় যাব। ভেতরে ঢুকবো না। যাবে?”
এক পলক তাকালো ইতমিনান। তার অর্ধাঙ্গী চোখে মুখে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে।

••

কলিং বাজালো মালিহা। দাঁড়িয়ে রইলো ছায়ার দিকে। রোদ চড়াও হয়ে উঠছে। একজন লোক এগিয়ে এলো দরজার দিকে। মালিহা, ইতমিনানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বলল, “কাকে চাই?”
মালিহা বলল, “আজিজা আন্টি আছেন? বা তিশা?”
“কেউ নেই। দুজনেই একটু বাইরে গেছে। তোমাকে তো চিনলাম না।”
“আমি কিছুদিন তিশাকে পড়িয়েছিলাম। গত দেড় মাস আগে ছেড়েছি। আপনি?”
“ওহ। আমি তিশার বাবা।”
লোকটা দরজায় দাঁড়িয়েই কথা বলল। তাকে পেয়ে মালিহা যেনো চাঁদ হাতে পেলো। হাতের ম্যাগাজিন খুলে “গোল্ডেন বার্ড” বের করে কেঁচি গেটের ফাঁকা দিয়ে লোকটার দিকে ধরে বলল, “আঙ্কেল এই দেখুন! এটা তিশার লেখা গল্প। নামকরা ম্যাগাজিনে ছেপেছে। আন্টিকে বলেছিলাম। উনি সম্ভবত আপনাকে বলেননি। আপনি একটু দেখবেন আঙ্কেল। আল্লাহর রহমতে তিশার অসাধারণ গুণ আছে। সেটাকে এভাবে ম’রে যেতে দিয়েন না!”
ম্যাগাজিন হাতে দাঁড়িয়ে রইলো লোকটা। মালিহার আকুল কন্ঠস্বর তাকে ছুঁয়েছে কি না বোঝা গেলো না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে মালিহা আবার বলল, “আপনার মেয়ে, আমি ওকে যতোটা ভালবাসি তার চেয়ে নিঃসন্দেহে আপনি বেশি ভালোবাসেন। আশা করব আপনিও আন্টির মতো ভুল করবেন না। আসি আঙ্কেল। আসসালামু আলাইকুম।”
পিছু ফিরল দুজনে। মালিহা একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো গল্পের এদিক ওদিকে ছুটে বেড়ানো তিশার বাবার চোখ।

••

মালিহার জেদে তাকে নিয়ে এসেছে ইতমিনান। আসার আগে চারদিকে চোখ বুলিয়েছে। লালপাহাড়কে কোথাও দেখেনি। সম্ভবত তাকে না পেয়ে পেয়ে এই রাস্তা আসা ছেড়ে দিয়েছে কুকুরটা। ব্যাপার না। মানিকের কাছে গেলেই তাকে পাওয়া যাবে।
ঘরে কেমন গুমোট গন্ধ। কয়েকদিন আটকা থেকেই এই অবস্থা। ব্যাগ রেখেই দরজা জানালা খুলে দিলো মালিহা। বারান্দার দরজা খুলতেই এক ফালি রোদ ঝপ করে মেঝেতে পড়ল। সেই ক্ষণে শোনা গেলো যোহরের আযান। ইতমিনান দ্রুত গোসল করে বের হলো। মালিহাকে বলে বের হলো মসজিদের উদ্দেশ্যে। এবার মালিহা কোমর বেঁধে নামলো। ছোট্ট দুটো ঘর। আসবাবপত্র একেবারেই কম। সেগুলোই ঝেড়ে মুছে গুছিয়ে ফেললো। জানালা দরজায় মাকড়সার জাল ঝুলছে। সেগুলো পরিষ্কার করে ঘর ঝাড়ু দিলো। মেঝে মুছলো পানিতে কাপড় ধোয়ার পাউডার মিশিয়ে। এক ঘণ্টার কিছু বেশি সময়ের মাঝে ঘর পরিষ্কার হয়ে গেলে গোসল ঢুকলো সে। ইতমিনান আসার আগেই নামাজে দাঁড়ালো।
ইতমিনান এলো আরেকটু দেরিতে। দুপুরের খাবার কিনলো বাইরে থেকে। ঘরের ভেতরে আসতেই তার চোখ জুড়িয়ে গেলো। তার ঘরে শোভা পাচ্ছে নতুন এক ফুল। যেই ফুল দুহাত তুলে মোনাজাত ধরেছে তার রবের কাছে। চারদিকে তাকালো ইতমিনান। ঘরের পরিবর্তন সহজেই চোখে ধরা পড়ল। প্লেট এনে সাজিয়ে ফেললো দুজনের খাবার।
নামাজ সেরে চটপট খেতে বসলো মালিহা।
“কি যে ক্ষুধা লেগেছে!”
“এতো কাজ করতে গিয়েছিস কেনো?”
“আবার তুই করে বলছো! আমার বাড়ির কাজ কে এসে করে দিয়ে যাবে?” হাসলো ইতমিনান। সুখের হাসি।
“শোনো, একটু হলে যাবো।”
“আচ্ছা।”
“তুমি অপেক্ষা করবে। তোমার সাথেই আবার চলে আসবো।”
“কেনো?”
“আমি হলে আর থাকবো না। খুব দরকার হলে তখন থাকবো। দরকারি জিনিসগুলো নিয়ে আসবো।”
“এতদিনের বান্ধবীদের ছেড়ে আসতে মন চাইবে?”
মালিহা মাথা নাড়ল। মনে মনে বলল, “বান্ধবীদের চেয়েও প্রিয় জিনিস পেয়েছি। মন চাইবে শুধু? অলরেডি চাইতে চাইতে লাফালাফি করছে।” কিছু মনে পড়ার ভঙ্গিতে মালিহা বলল, “তুমি কিন্তু এখনো বললে না এই শহরে কেনো চাকরি নিলে।”
“চাকরি তো পাওয়া লাগে। বাড়ির কাছাকাছি কোথাও যখন পাচ্ছিলাম না তখন ভাবলাম এদিকেই আসি। দূরে যখন থাকতে হবে এখানেই থাকি।”
আর কিছু বলল না ইতমিনান। তবে মালিহা বুঝে নিলো অব্যক্ত কথাটুকু।

শেষ বিকেলে ব্যাগভর্তি জিনিসপত্র নিয়ে ফিরল মালিহা। ইতমিনানের পুরাতন চাদর পাল্টে নতুন চাদর বিছিয়ে দিল। ডায়নিং রুম সাজালো কিছু পেইন্টিং, ফুলদানি দিয়ে। পাপোশ বিছিয়ে দিলো দরজার সামনে। টুকিটাকি জিনিস দিয়ে সাজিয়ে ফেললো তার ছোট্ট সংসার। এশার নামাজ পড়ে যখন ইতমিনান বাড়ি ফিরল তখন বাড়ির চেহারা পাল্টে গেছে আমূলে। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ইতমিনান। এই বুঝি যত্নের ছোঁয়া!

••

একদিন গভীর রাতে মিলি ফোন দিলো। ঘুমন্ত চোখে ফোন রিসিভ করলো ইতমিনান। মস্তিষ্ক চালু হওয়ার আগেই তার কর্ণকুহর ভেদ করে প্রবেশ করলো গগনবি’দারী চিৎকার।

চলমান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে