#উষ্ণতা
#বিনতে_ফিরোজ
পর্ব:৪১
আঁখি পনেরো হাজার টাকার কথা বলেছে। মনিকার আগে মালিহার বুকটা লাফিয়ে উঠলো। পনেরো হাজার টাকা সে কোত্থেকে দেবে! তাদের অবস্থা দেখে আঁখি বলল, “পাগল! একেকজন পনেরো দেবে নাকি! সবাই মিলে। তাহলে একজন পাঁচ হাজার টাকা দিলেই হচ্ছে।”
“আপনি কি দিতে চাচ্ছেন?” মনিকার প্রশ্নে আঁখি শোয়া থেকে উঠলো, “পাতলা একটা আংটি হবে। স্বর্ণের যেই দাম, ভালো কিছু দিতে হলে আমাদের কলিজা কা’টতে হবে। তাও কম পড়তে পারে।” বড় করে হাই তুললো আঁখি। এতো ঘুম আসছে কেনো! ভার্সিটি বন্ধ থাকলে যা হয়। অন্যদিন ঠিকই তো এই সময়ে এই ল্যাব থেকে ঐ ল্যাবে ছুটোছুটি করতে হয়। আজ আলস্য একদম জেঁকে ধরেছে।
“পাতলা একটা আংটি?” কেমন করে বলল মালিহা। প্রিয় বান্ধবীর জন্য এমন উপহার যেনো পছন্দ হলো না।
“তার চেয়ে আমরা ভালো একটা কম্বো দিই। একটা শাড়ি, কিছু ইউনিক ডিজাইনের অর্নামেন্টস, পারফিউম এসবের একটা সেট। কেমন হবে?”
“এটাও ভালো আইডিয়া। বাজেটও কম লাগবে।” আঁখি বলল।
“আমি খুঁজব?” মালিহা উৎফুল্ল কণ্ঠে বলল।
“খোঁজো। যেগুলো ভালো লাগবে সেভ করে রেখো। আমি একটু ঘুমাই।”
মনিকা মালিহার বিছানায় এসে বসলো। একবার আঁখির দিকে তাকিয়ে নিচু কণ্ঠে বলল, “আঁখিপুর সেই বন্ধু বাসায় প্রস্তাব পাঠিয়েছে।”
মালিহা চোখ বড় করে তাকালো। চেঁচিয়ে উঠবে সেসময় মনিকা মুখ চেপে ধরে চোখ রাঙিয়ে বলল, “আগেই চেচাবি তো আর কিচ্ছু বলব না।”
মালিহা মাথা নাড়ল। একটুও চিৎকার করবে না সে।
“আম্মা তো রেগে কাই হয়ে আছে। এক ভার্সিটির ছেলে। আমি নাকি কিছু করেছি। বল তো নিজের মা সন্দেহ করলে কেমনটা লাগে?” বিরক্ত মুখে বলল মনিকা।
“আঙ্কেল কি বলছে?”
“আব্বা বলল খোঁজ নিয়ে দেখি আগে। প্রস্তাব দিলেই আমরা একপায়ে রাজি হয়ে যাবো এমন তো না। আর আমিও ছেলের পক্ষ কিছু বলিনি তাই আমা আর কিছু বলতে পারছে না। সব ঠিক বলে তারপর আঁখিপুকে বলব। নয়তো আপু শুধু লেগপুল করবে।”
মালিহা ভগ্ন কণ্ঠে বলল, “বিয়ের পর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। সবাই মিঙ্গেল হয়ে গেলো!”
“তুইও হয়ে যা।”
“আমার আর বিয়ে! হাহ!”
•
বৃহস্পতিবার বিকেলে আর তিশার সাথে দেখা করা হলো না। আজিজা ছোট্ট একটা খাম হাতে দিয়ে বললেন, “আমার মেয়ের জন্য অনেক কষ্ট করেছ। ধন্যবাদ।”
মালিহা খাম হাতে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
“ফুপু আপনি..”
“সময় সুযোগ পেলে আবার এসো মালিহা। যার ভবিষ্যত নিয়ে এত চিন্তা ভাবনা করেছো তাকে একবার দেখে যেও।”
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল মালিহা। টাকার সম্পর্ক ছিল এটা? কত সহজেই ছিন্ন করা গেলো।
“তিশার সাথে একবার দেখা করা যাবে?”
“না। ও ওর টিচারের কাছে পড়ছে।”
খাম থেকে অর্ধেক টাকা বের করে আজিজার হাতে দিয়ে চুপচাপ বেরিয়ে এলো মালিহা। বন্ধ দরজার সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। পড়ন্ত রোদে সে যখন হাঁটতে শুরু করেছে তখন তিশা ছুটে এসেছে রাস্তার সাথে লাগোয়া বারান্দার এক প্রান্তে। মালিহা পিছু ফিরলো না। ফিরলে দেখতে পেতো উদগ্রীব এক জোড়া চোখের মাঝে টলমল অশ্রুর খেলা।
•
মালিহা ভেবে দিশেহারা হচ্ছিল বাচ্চাটার জন্য কি নেবে। ইতমিনান বলল, “চল একটা প্লাস্টিকের গামলা নিই। বড়সর। লাল টকটকে দেখে।”
“গামলা নেবো কেনো?” মুখ কুঁচকে বলল মালিহা।
“গোসল করাবে। মুখ বাঁকা করছিস কেনো? দুইদিন পর তো গামলায় করেই গোসল করাবে। আর কিছু বেবী লোশন টোশন নে তাহলেই হবে। এতো ভাবনা চিন্তা করার কি আছে?”
“কোথায় মুখ বাঁকা করলাম আমি।”
“না তুই করিস নি। আমার চোখ দেখেছে। চল দ্রুত। নাহলে আজকে আর নামাজে যাওয়া লাগবে না।”
দোকানে জোর জবরদস্তি করে মালিহা অর্ধেক টাকা দিলো। ইতমিনান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “এতো ঝগড়াটে হয়েছিস কবে থেকে? আমি তোর থেকে গুণে গুণে সাত বছরের বড়। মান সম্মান দিস কিছু? এখন এটা আমাকে চেয়ে নিতে হবে? চুপ কর। কথা বলবি না। হাট। হাট সামনে।”
মালিহা চুপচাপ হাঁটতে শুরু করলো। সে ভেবেই পেলো না ঝগড়া করলো কখন। লতার বাড়ির সামনে তাকে নামিয়ে দিয়ে ইতমিনান মসজিদে চলে গেলো। গামলার ভেতর আরো কয়েকটা প্যাকেট নিয়ে ভেতরে গেলো মালিহা। লজ্জায় তার চোখ মুখ ছোট হয়ে এলো। কে কবে গামলা নিয়ে দাওয়াত খেতে গেছে!
লতার বাড়িতে ছোটখাট আয়োজন করা হয়েছে। কাছের কিছু আত্মীয়স্বজন। তারাও সব লতার শশুরবাড়ির দিকের। মালিহা অবাক হয়ে। ভাই এমন হয়? বোনের মুখটা দেখতেও ইচ্ছা করে না? আল্লাহ তার শত্রুকেও এমন ভাই না দিক।
লতা বাচ্চা নিয়ে বসে আছে। দৌড়াদৌড়ি যা করার তার শাশুড়িই করছে। বোঝা যাচ্ছে সবটা সে আনন্দের সাথেই করছে। একমাত্র মৃ’ত সন্তানের চিহ্ন, আনন্দ থাকা স্বাভাবিক।
কয়েকজন মালিহার হাতের গামলা দেখে হাসলে লতার শাশুড়ি বলল, “কাজের কাজ করেছো মেয়ে। সবাই একই জামা এনেছে তাও আবার দুই তিনমাসের জন্য একেবারে। দোকানে সামনে যা পেয়েছে আর কি। তা আমার নাতি কি বড় হবে না? দুই তিনমাস ধরে এইটুকুন থাকবে? তার থেকে এই ভালো। কাজের জিনিস।” এদিক ওদিক ঘুরিয়ে গামলাটা দেখলেন মহিলা। মালিহার লজ্জা কমলো।
“এই লতা আয় বাবুকে গোসল করিয়ে দেই। নতুন গামলায় নতুন গোসল।”
মালিহা চোখ জুড়িয়ে দেখলো লতা এবং তার শাশুড়ির উজ্জ্বল চোখমুখ। বাচ্চাটা যেনো বাতি। তার দিকে তাকালেই তাদের চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
নামাজ পড়ে এলে পুরুষদের খেতে দেয়া হলো এক ঘরে। মহিলাদের আরেক ঘরে। এক মহিলা মালিহাকে আপাদমস্তক দেখে বললেন, “তুমি আর তোমার ভাই একসাথে থাকো নাকি?”
মালিহা হকচকিয়ে গেল। বলল, “না। একসাথে থাকবো কেনো। ভাইয়া অফিসের কাছে বাড়ি ভাড়া নিয়েছে। ওখানেই থাকে। আর আমি ভার্সিটির হোস্টেলে থাকি।”
“ওহ।”
ফেরার পথে ইতমিনান বলল, “বাড়ি যাবি কবে?”
“কয়েকদিন পর যাবো। তুমি কবে যাবা?”
“আমি তো কালকেই যেতে চাচ্ছি।”
“অফিস ছুটি দিয়ে দিলো এতো তাড়াতাড়ি?”
“না। আমি ছুটি নিয়েছি। একটু দরকার।”
“ওহ।”
“তুই একা যেতে পারবি তো?”
“ওদিকের কয়েকজন মেয়ে আছে। ওদের সাথে যাবো।”
“তাই করিস।” পরপর মনে মনে বলল, “এই শেষবার।” মালিহা তার দিকে তাকালে ঝটপট চোখ সরিয়ে নিলো সে। চোখ ছোট করে তাকালো মালিহা। তার দিকেই তাকিয়ে ছিল না?
তার পরেরদিন সকাল আটটার ট্রেনেই বাড়ির পথ ধরলো ইতমিনান। আয়েশা খুশিতে বাকবাকুম। ছেলেকে বলে রেখেছেন এলেই মেয়ে দেখতে নিয়ে যাবেন। ইতমিনান তৈরি হয়েই যাচ্ছে। এসপার ওসপার একটা করেই আসবে। ভেতরে ভেতরে বেশ অস্থির সে। ফুপু কিভাবে নেবেন বিষয়টা। দাদি আর বাবাকে রাজি করতে পারলেই পরিবেশ তার দিকে থাকবে। দুই মহিলা নিজেদের মাঝে যতো চায় ঝগড়া করুক তার কাজে বাগড়া না দিলেই হলো। দরকার হলে ইতমিনান বলবে, “তোমরা যেনো সারাজীবন সুন্দর করে ঝগড়া করতে পারো তার ব্যবস্থাই তো করছি।” সাই সাই করে চলে যাওয়া গাছাপালার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো ইতমিনান। নিজেকে তার কাছে স্কুল পড়ুয়া অস্থির বালক মনে হচ্ছে।
.
বাড়িতে এসে তাকে স্থির থাকতে দেননি আয়েশা। ইতমিনান বলল, “আজই এলাম। কাল যাই?”
“তোর উপরে আমার কোনো ভরসা নেই। আজকে দেখে এলে কি হবে?”
“আমি খুব ক্লান্ত মা।”
“বাড়ি ফিরে তোর গা মালিশ করে দেবো আমি।”
“মা।”
“বল।”
“কে কে যাবে?”
“তোর বাপ আমি আর তুই। মিলি যাবে কি না বলেনি এখনও। অবশ্য ওর বাড়ির কাছে। যেতেও পারে।”
“ফুপু যাবে না?” মিনমিন করে বলল ইতমিনান।
“রাবেয়া এখন যেয়ে কি করবে? পছন্দ হলে তখন না হয় নাহয় যাবে।”
“একটা দেখার বিষয় আছে না! ওরা দেখবে আমাদের কতো আত্মীয়। ফেলনা ভাবতে পারবে না।” আড়চোখে মায়ের দিকে তাকালো ইতমিনান। টোপ কাজে দিয়েছে মনে হচ্ছে।
“আচ্ছা তাহলে বলছি ওকে।”
ইতমিনান মনে মনে প্রস্তুতি নিলো। আশ্চর্য! এতো ভয় ভয় লাগছে কেনো!
চলমান।
#উষ্ণতা
#বিনতে_ফিরোজ
পর্ব:৪২
ইতমিনানের গলা শুকিয়ে গেছে। মেয়ের বাড়িতে এলাহী কারবার। বিশাল এক সোফায় তাদের বসতে দেয়া হয়েছে। সোফার চেহারা রাজকীয় ধরনের। সেদিকে তাকালেই বাড়ির আর্থিক অবস্থা মোটামুটি আন্দাজ করা যায়। মেঝের টাইলস চকচক করছে। নিচে তাকিয়ে নিজের চেহারা দেখতে পেলো ইতমিনান। মায়ের মুখের দিকে তাকালো। আয়েশা মোটামুটি হতভম্ব অবস্থায় আছেন। সেই তুলনায় রাবেয়া স্বাভাবিক।
মকবুল আলীর পাশে মেয়ের বাবা, চাচা, মামা সম্পর্কের প্রায় আটজন বসে আছেন। সকলের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ইতমিনানের দিকে। তার গলা শুকিয়ে যাওয়ার এটাই প্রধান কারণ।
“মা আমার তো কোনো মামা নেই। চাচা নিজের পথ ধরেছে। এতো ষন্ডা ষন্ডা লোকের পাশে তোমার স্বামীকে নিতান্তই নিরীহ দেখাচ্ছে।”
আয়েশা ছেলের ফিসফিসানি শুনলেন। আদতেও তাই। তার শুকনো বরটাকে এই লোকগুলোর পাশে দুর্ভিক্ষ থেকে উঠে আসা মানব বলে মনে হচ্ছে।
হঠাৎ ছোট ছোট কিছু ছেলেমেয়ে আসতে শুরু করলো। সবার হাতে একটা করে থালা। কাজিন একজন ভাই এসে টি টেবিল সরিয়ে বড় একটা টেবিল মাঝে রেখে গেলো। ছোট ছেলে মেয়েগুলো একে একে আসছে আর একটা করে প্লেট রাখছে। ইতমিনান মনে মনে গুনতে শুরু করলো, “এক, দুই, তিন, চার…”
লাইন ধরা ছেলেমেয়েগুলো সম্ভবত বয়স অনুযায়ী আসছে। আস্তে আস্তে বড় মুখ দেখা যাচ্ছে। তেরো নাম্বারে যেয়ে বেশ সাজগোজ করা একটা মেয়ে এলো। তার হাতের ট্রেতে চায়ের কেটলি। ইতমিনান চা দেখে নিশ্চিত হলো। এটাই তাহলে বোনের পছন্দের পাত্রী।
মেয়ে বসলো মামা চাচার মধ্যিখানে। চারপাশে বিশাল চেহারার পাহারাদার, মাঝে রাজকন্যা। সেই রাজকন্যা আবার সয়ম্বরা। মৌমাছির হুলের মতো একেকটা দৃষ্টি ইতমিনানের দিকে ধেয়ে আসছে। নিজেকে প্রার্থীর স্থানে পেয়ে ইতমিনানের নিজের প্রতি মায়া হলো। কি ভয়ানক দৃশ্য!
পাত্রীর মা চাচীরা এসে আয়েশা, রাবেয়ার সাথে খাতির জুড়লেন। মিলির কথা শুনে সে কেনো আসেনি এ নিয়ে খানিক আফসোস করলেন। ইতমিনান কথার ধরন শুনে বুঝলো তার মা, ফুপু এদের সাথে আলাপ জমাতে পারছেন না। পারার কথাও নয়। একজন চুপ করে তো আরেকজন সম্পদের ফিরিস্তি তুলে ধরে। কেউ একটার কথা দ্বিতীয়বার বলছে না। আর্থিক স্বচ্ছলতার উন্মুক্ত বহিঃপ্রকাশ। ইতমিনান দম ছাড়লো। আলাপ না জমার যথেষ্ট কারণ আছে। তাদের সম্পদের বর্ণনা দশ সেকেন্ডের মাঝে বলে শেষ করা সম্ভব। কাজেই মকবুল সাহেব যে হীনম্মন্যতায় ভুগছেন তা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
এক পর্যায়ে এক মামা গম্ভীর স্বরে বললেন, “ছেলে মেয়েকে ওদিকে পাঠিয়ে দিন। তারা নিজেদের মাঝে আলাপ সারুক।”
মেয়েকে অগ্রগণ্য পেলো ইতমিনান। অগত্যা তার পিছু নিতে হলো। নিজেকে কষে দুটো ধমক দিতে ভুললো না। মনের কথাটা আরো আগে বলে দিলে আজ পরের মেয়ের পিছু পিছু ঘুরতে হতো না।
বারান্দাও বেশ বড়। তার ভাড়ার ফ্ল্যাট এপাশ থেকে ওপাশ ঠিক যতোটা এদের বারান্দাই ততোটা। যাক একটা শক্ত পয়েন্ট পাওয়া গেছে। আয়েশাকে বোঝাতে সুবিধা হবে।
“আপনি কোথায় চাকরি করেন?”
চমকে গেলো ইতমিনান। নিজের ভাবনায় এতই ডুবে ছিলো যে মেয়েটার উপস্থিতি ভুলে গিয়েছিল। গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, “পলিফাইবারে, একটা প্রাইভেট কোম্পানী।”
“কোন পোস্টে? স্যালারি কতো?”
মেয়েটার স্পষ্ট অভিব্যক্তিতে অবাকই হলো ইতমিনান।
“জেনারেল ওয়ার্কার। কারেন্ট স্যালারি থার্টি ফাইভ।”
একটা ত্যাড়ছা বাক্য মেয়েটার থেকে আশা করেছিল ইতমিনান। তবে সে তেমন কিছুই বলল না।
“নতুন চাকরি খোঁজার চেষ্টা করছেন?”
“করেছিলাম। তেমন পাচ্ছি না আর। তাই আপাতত খোঁজা বাদ দিয়েছি।”
“ওখানেই পার্মানেন্ট হওয়ার ইচ্ছা।”
“আপাতত।”
“আপনি তো আমাকে দেখছেনই না। দেখে নিন। পরে আবার কোথায় পাবেন?”
ইতমিনান হাসলো। তার মাথায় তো একজন জেঁকে আছে। আর একজনকে দেখার কি দরকার? কোনো মানেই নেই।
“হাসছেন কেনো? আপনি তো আমাকে কিছুই জিজ্ঞেস করছেন না।”
“যেটুকু জানা জরুরী ছিল সেটা জেনে গেছি। আর কিছু জানতে চাই না।”
“কিভাবে জানলেন?” মেয়েটার কণ্ঠে কৌতূহল। তবে সেটা আর পূরণ হলো না। দরজার ফাঁক দিয়ে দূরে রাবেয়াকে দেখে ইশারায় ডাকলো ইতমিনান। তিনি কথাচ্ছলে উঠে এলেন। মেয়ের হাত ধরে বললেন, “এসো গল্প করি।” ইতমিনান হাঁফ ছাড়লো। কখন যে বাড়ি যাবে!
মকবুল আলী ভেবেছিলেন মেয়ের পক্ষ বিস্তারিত শুনে একবাক্যে না করে দেবে। কিন্তু তাদের কথাবার্তা শুনে নিমরাজি মনে হলো। মকবুল আলী বললেন, “বড় আপ্যায়ন করলেন ভাইজান! আজ উঠি। আমাদের আত্মীয় স্বজনদের সাথে একটু আলাপ পরামর্শ করি।”
বেশ আন্তরিকতার সাথেই বিদায় দিলেন তারা। জুতা পড়ার ফাঁকে ইতমিনান শুনলো চৌদ্দ পনের বছর বয়সী একটা ছেলে বলছে, “আমার একটুও পছন্দ হয়নি। ভ্যান্দা মার্কা ছেলে। নড়েও না চড়েও না। আমাদের দুলাভাই হিসেবে একটুও মানাবে না।” ইতমিনানের মন চাইলো ছুটে যেয়ে ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে।
সারা রাস্তা স্ত্রীকে বকতে বকতে গেলেন মকবুল আলী।
“কি এতো তাড়াহুড়া! খোঁজ নাই খবর নাই, নাচতে নাচতে চলে গেলা মেয়ে দেখতে। তোমার মেয়ের কাছে আমি আগে ফোন দেই। নিজের জায়গা বোঝেনা ও? আশ্চর্য লাগছে আমার। ওখানে সম্বন্ধ করার কথা ভাবে কিভাবে ও?”
রাবেয়া নিচুস্বরে ধমক দিলেন, “আহ! ভাইজান রাস্তায় কি শুরু করলেন? ফোন টোন সব বাড়ি যেয়ে হবে। রাখেন ফোন। রাখেন আগে। গাড়ির ভেতরে যতো হৈ হট্টগোল। ভাবি কি খোঁজ নিবে? আপনি খোঁজ নেন নাই কেনো?”
ননদের কথা মনে ধরলো আয়েশার। পছন্দ না হলেই তোমার মেয়ে তাই না?
ইতমিনান মনের সুখে হাওয়া খাচ্ছে। ভাঙাচোরা গাড়িকে তার কাছে চাঁদের গাড়ি মনে হচ্ছে। দেখতে যাওয়া মেয়েটার চেহারা মনে করার চেষ্টা করলো সে। স্পষ্ট মনে পড়ল না। তবে মেয়েটা বেগুনি রঙের শাড়ি পড়েছিল। এটা মনে আছে। নিজেকেই বাহবা দিলো ইতমিনান, “কি একটা ভালো মানুষ বর পেতে যাচ্ছিস যদি জানতি রে মালিহা!”
“এই বেয়াদব! তুই শিস বাজাচ্ছিস কোন সাহসে? তোর পাশে যে তোর বাপ বসে আছে খেয়াল নাই?”
বাবার ধমকিতে ইতমিনানের বুকটা ধড়াস করে উঠলো। খপ করে মুখে হাত দিলো সে। শিস দিলো কখন? আশ্চর্য তো।
•
বাড়ির পরিবেশ শান্ত। আয়েশা মুখ কালো করে খাবার গোছাচ্ছেন। মকবুল আলী ঘরে একা একাই বকবক করছেন। ইতমিনান উঠলো। এইতো মোক্ষম সুযোগ।
রাবেয়ার ঘরে নক করলো।
“কে?”
“ফুপু আমি।”
“দরজা খোলা। আয়।”
ভেতরে ঢুকলো ইতমিনান। রাবেয়া কাত হয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আছেন। ইতমিনান উকি দিয়ে দেখলো রাফি ঘুমিয়ে গেছে।
“কান্নাকাটি করেছে নাকি?”
“না। আমার ছেলে ভদ্র। তোদের মতো অসভ্য না।”
“আমি অসভ্য ছিলাম?”
“তুই, মালিহা, মিলি, মিতুল সবাই অসভ্য ছিলি। শুধু আমার ছেলেই ভালো। সবার কথা বাদ। তুই তো এখনো অসভ্য আছিস।”
“এমন কথা বলতে পারলা ফুপু? আমি তোমার একমাত্র বড় ভাতিজা।”
নরম কণ্ঠে বলল ইতমিনান। ছেলেকে সাবধানে শুইয়ে উঠে ইতমিনানের কান ধরলেন রাবেয়া।
“হতচ্ছাড়া! সেদিন অর্ধেক কথা বলে ফোন বন্ধ করেছিস কেনো? তোর বান্দরামি কিভাবে ঠিক করতে হয় আমি ভালো করেই জানি।”
“লাগছে ফুপু।”
“লাগার জন্যই ধরেছি।”
“আমি তো তোমার কাছে সেই কথাই বলতে আসলাম।”
এই পর্যায়ে নরম হলেন রাবেয়া। তবে কণ্ঠের গম্ভীরতা কমলো না, “কি বলবি?”
রাবেয়াকে ধরে বিছানায় বসালো ইতমিনান। নিজেও বসলো পাশে। আকুল হয়ে বলল, “ফুপু আমি এখানে বিয়ে করব না।”
“সে তোর বাপ দেবে বলে ভাবছিস?”
“অন্য জায়গায়ও করবো না।”
“কেনো চির কুমার থাকবি?”
“আস্তাগফিরুল্লাহ! একটাই জীবন। বিয়ে না করে ম’রে যাবো? বিয়ে তো করবো ফুপু।”
“তাহলে?”
“আমার পছন্দ আছে।” কণ্ঠ নিচু করে বলল ইতমিনান।
মুহূর্তেই রাবেয়ার চোখ মার্বেলের আমার ধারণ করলো।
“হতচ্ছাড়া! শহরে যেয়ে তুই এই করিস? এই তোর চাকরির নমুনা?” এবার চুলের গোছা ধরলেন রাবেয়া।
“আহ! ফুপু! লাগে তো! আমি অসহায় বান্দা। সেই বান্দার সাহায্যে আল্লাহ তোমাকে পাঠিয়েছে। আমার মা তো রাজি হবে না। তুমি যদি দয়া করে আমার ঘর বসাতে সাহায্য করো। ছাড়ো না ফুপু!”
রাবেয়া ছাড়লেন, “মানবে না কেনো তোর মা?”
“শত্রুর চোখে যাকে দেখে তাকে আত্মীয় করবে কেউ?” মাথায় হাত বুলিয়ে বলল ইতমিনান। ব্যাথায় তার মুখ কুঁচকে গেছে। সন্দেহী কণ্ঠে রাবেয়া বললেন, “মেয়েটা কে?”
ইতমিনান নির্বিকার গলায় বলল, “মালিহা।” তার সমস্ত মনোযোগ পড়ে যাওয়া দুটো চুলে।
চলমান।
#উষ্ণতা
#বিনতে_ফিরোজ
পর্ব:৪৩
রিপা ছুটি দিয়ে দিয়েছে। তারা নাকি এই ভ্যাকেশনে কোথায় ঘুরতে যাবে। মালিহা বাড়িতে ফোন দিলো।
“কবে আসবি আপা?”
“এই কাল পরশুর ভেতরে দেখি।”
“কাল পরশু! দুইদিন পরে আয়।”
“কেনো?”
“আমরা বাড়ি যেয়ে নিই। তুই এখন এলে মামা বাড়ি উঠতে হবে। কোনো দরকার নেই। আর দুটো দিন থাক। আমরা আগে বাড়ি যাই।”
“মামা বাড়ি গেলে কি হবে?”
“এতো কথা বলিস কেনো? আমি বলছি না আসবি না?” শক্ত কণ্ঠে বলল মিতুল। মালিহা হেসে ফেললো, “যথা আজ্ঞা বড় ভাই। আপনার জন্য কি আনবো বলুন।”
“কিছুই আনতে হবে না। বড় দেখে দুটো নোট রেখে দিস। ওগুলোই নেবো।”
“ধড়িবাজ হয়েছো খুব!”
“যা মনে হয়।”
“মা কই?”
“ঘুমাচ্ছে।”
“কবে যাবি তাহলে?”
“আজকে মাকে বলি। কাল নাহয় পরশু চলে যাবো ইনশাআল্লাহ্। তারপর আসিস তুই।”
“আচ্ছা।”
মালিহা ফোন রেখে ভাবলো টাকার জোগাড় কিভাবে করবে। আঁখির কাছে বলল, “আপু টাকা বাড়ি থেকে এসে দিলে হবে না?”
“আরে চিল! অনলাইনের বিষয়। এর ভেতরে অর্ডার দিয়ে রাখবো। নীতিকে দিতে পারলেই হলো। চয়েস করে তোমরা ছবি দিও। আমি নাহয় রিসিভ করে রাখবো। পরে তোমরা আমাকে টাকা দিয়ে দিও। হয়ে গেলো!”
সহজ সমাধানে খুশি হলো মালিহা। মনিকার সাথে মিলে শাড়ি, চুড়ির দারুন একটা সেট সিলেক্ট করে ফেললো।
•
ইতমিনান ভেবেছিলো রাবেয়া এক দফা চিৎকার চেঁচামেচি করবেন। কিন্তু তাকে স্থির হয়ে বসে থাকতে দেখে ভয়ই পেলো সে।
“ফুপু?”
“ও ফুপু!”
রাবেয়া ভাতিজার দিকে তাকালেন। শান্ত কণ্ঠে বললেন, “তুই সত্যি মালিহাকে পছন্দ করিস?”
“হু।” নিচু কণ্ঠে বলল ইতমিনান।
“আর মালিহা?”
“মালিহা কী?”
“ঔ তোকে পছন্দ করে?”
“জানিনা।” ইতমিনানের স্বর কিছুটা বিষণ্ন শোনালো।
“মানে?”
“মালিহা তো এসব কথা কিছু জানেনা। আমি বলিনি ওকে।”
রাবেয়া যেনো স্বস্তি পেলেন। দম ছেড়ে বললেন, “তোর মা মানবে না, ওর মাও মানবে না। মাত্র সম্পর্কগুলো একটু ভালো হওয়ার দিকে। তুই এখন এসব কথা কিভাবে বলিস ইতু?”
ইতমিনান কাতর কন্ঠে বলল, “মা আমার বিয়ে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে ফুপু।”
“বয়স হলে লাগবে না?”
“সেটা তো সমস্যা না। কিন্তু আমি যে মালিহাকে পছন্দ করি..” অস্বস্তি ঘিরে ধরলো ইতমিনানকে।
রাবেয়া নরম কণ্ঠে বললেন, “অবুঝ সাজিস না ইতু। তুই সবই জানিস।”
“জানি। আমি কি মালিহার জন্য বেশি খারাপ অপশন?”
“আহা! আমি কখন সেকথা বললাম।”
“তুমি আমার কথার উত্তর দাও।”
“না। খারাপ হবি কেনো?”
“তাহলে তুমি একটু সাহায্য করছো না কেনো?”
“বিয়ে তো শুধু দুটো মানুষের মিল না। পরিবারেও মিল। যেখানে মুখ দেখাদেখি অবস্থা নেই সেখানে আত্মীয়তা হবে কিভাবে? মতি ভাই বেঁচে থাকলে এই কথা বলতে পারতি তুই?”
চাচার মুখটা মন করে যেনো শক্তি ফিরে পেল ইতমিনান। মনে মনে বলল, “আরও আগেই পারতাম।” পরক্ষণেই ফুপুকে বলল, “তুমি কি ভাবছো আমি মালিহার অসহায় অবস্থার সুযোগ নিচ্ছি?”
“ধুর অশান্তি! এক ধাপ বেশি বুঝিস কেনো? ওর বাপ বেঁচে থাকলে তার সামনে এই কথা বলতে পারতি কি না তাই বল।”
“পারতাম।” ইতমিনানের দৃঢ় কন্ঠস্বর। রাবেয়াকে যেনো সেই দৃঢ়তা ছুঁয়ে গেলো। কিছুক্ষণ চুপ করে ভাতিজার চেহারা দেখলেন তিনি। কতগুলো হিসেবে কষে নিলেন যেনো। গুরুতর কণ্ঠে বললেন, “আমি নাহয় সাহায্য করলাম। কিন্তু আমাকে যেভাবে বলেছিস তোর মা’কে, মালিহার মা’কে এভাবে বলতে পারবি?”
ফুপুর মুখের দিকে তাকালো ইতমিনান। সময় ব্যয় না করে বলল, “ইনশাআল্লাহ্।”
সেই ক্ষণে আয়েশার ডাক শোনা গেলো। সবাইকে খেতে ডাকছেন তিনি।
.
ভাতের দানা নেড়েচেড়ে ধোঁয়া ওঠা ভাতকে ঠান্ডা বানিয়ে ফেলেছে ইতমিনান। কিছুক্ষণ পরপরই রাবেয়ার দিকে তাকাচ্ছে সে। তিনি নিশ্চিন্ত মনে ভাজি খেলেন। তারপর ইলিশ মাছের লেজ নিয়ে মনের সুখে কাঁটা বাছতে শুরু করলেন। ভেতরে ভেতরে উত্তেজনায় ফেটে পড়ছে ইতমিনান। রাবেয়া চোখ তুললেই ইশারা করলো সে। কিন্তু তিনি নির্বিকার। ওদিকে আয়েশাকে বকেই চলেছেন মকবুল আলী।
“তোমার মেয়ে আমার ফোন ধরছে না কেনো? আগে থেকে ফোন দিয়ে সাবধান করে দিয়েছো না? কোনোদিন ধরবে না নাকি?”
“চেঁচামেচি করবে না তো। তোমার মেয়ে তোমার মেয়ে কি? মেয়ে কি আমার একার? তোমার না? মেয়ে দেখেছে, পছন্দ হয়নি, শেষ। এতো হামতাম করার কি আছে?”
“তা যদি বুঝতেই তাহলে আজকে আর ঐ বাড়িতে যেতে হতো না।” মুখ ঘুরিয়ে নিলেন মকবুল আলী। রাবেয়া বিরক্তি মাখা কন্ঠে বললেন, “আহ! কি শুরু করেছেন আপনারা? দেখছেন না কাঁটা বাছছি? একটা ভেতরে ঢুকলেই তো বাড়িতে সে আসবে। আমাকে ওপারে পাঠানোর ধান্দা বন্ধ করো। তুই খাচ্ছিস না কেনো? বড়লোক মেয়ের শোকে গলা দিয়ে ভাত নামছে না?”
মকবুল আলী বোনের দিকে চেয়ে রইলেন। ইতমিনান থতমত খেয়ে গেল। রাবেয়া আরেক লোকমা ভাত খেয়ে বললেন, “শোনেন ভাবি মেয়ে আনতে হবে সমান ঘরের থেকে। কমও না, বেশিও না। সমান সমান। তাহলে শ্বশুর বাড়িকে নিচু করে দেখতে পারবে না আবার তাকেও নিচু হয়ে থাকতে হবে না।”
“তাই করতে হবে।” আয়েশা ননদের পাশে বসলেন।
“আমার কাছে এমন মেয়ের খোঁজ আছে।” পানির গ্লাস হাতে নিলেন রাবেয়া। ইতমিনানের কাশি শুরু হয়ে গেলো। আয়েশা তড়িঘড়ি করে ছেলের দিকে পানি এগিয়ে দিলেন। রাবেয়া চোখ রাঙালেন। ভীতুর ডিম একটা!
মকবুল আলীকে উৎসুক দেখা গেলো, “কে? তোদের ঐদিকে?”
“মেয়ে মানুষের খোঁজ। দেবো ভাইজান?” স্পষ্ট খোঁচাটা গিলে নিলেন মকবুল আলী। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতেই আয়েশা হেসে ফেললেন।
“বল।” গম্ভীর কণ্ঠে বললেন মকবুল আলী। রাবেয়া নির্বিকার ভঙ্গিতে বললেন, “মালিহা। আমাদের মালিহা।”
আয়েশার হাত চট করে থেমে গেলো। মকবুল আলী চোখ বড় করে তাকালেন বোনের দিকে। আড়চোখে সকলকে পরোখ করে নিলো ইতমিনান। সন্তর্পনে এক লোকমা ভাত মুখে দিলো।
“কি বললে রাবেয়া?”
“একদম সমান সমান ভাবি। না কম, না বেশি। খাপে খাপ মিলে যাবে।”
“যা বলছো ভেবে বলছো রাবেয়া?” আয়েশার গম্ভীর কণ্ঠে রাবেয়া গলা খাঁকারি দিলেন।
“হ্যাঁ ভাবি। সব বাদ দিন। মেয়েটা তো খারাপ না বলুন?”
“ওকে খারাপ ভালো কোনো কিছু ভাবার দরকার নেই। দুনিয়ায় মেয়ের কি অভাব পড়েছে?”
“তা পড়েনি। কিন্তু আপনার ছেলের মন মালিহার ওপরই পড়েছে।”
তৎক্ষণাৎ ছেলের দিকে তাকালেন তিনি। ইতমিনান চোখমুখ খিচে বসে ছিল। এই পর্যায়ে চোখ খুললো। স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলেও সে জানে তার ভেতরে কি ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
“রাবেয়া কি বলছে ইতু?”
ইতমিনান বার দুয়েক কাশলো বটে কিন্তু কিছু বলতে পারলো না।
“তুই মালিহাকে পছন্দ করিস?”
ইতমিনান মাথা নিচু করে ছিল। এই পর্যায়ে মায়ের চোখে চোখ রাখল। ছেলের সেই নীরবতার ভাষা পড়তে আয়েশাকে বেগ পেতে হলো না। মেয়ের আশঙ্কাকে সত্যি হতে দেখে আ’হত হলেন তিনি। তার মনে হলো ছেলে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
“তুই জানিস আমি ওদের পছন্দ করি না।” চুপ করে রইলো ইতমিনান। মন তো সে ইচ্ছে করে দেয়নি। কোনোদিন ভাবেইনি এই পরিস্থিতিতে তাকে পড়তে হবে।
আয়েশা উঠে ঘরে চলে গেলেন। তার আধ খাওয়া প্লেট পড়ে রইলো টেবিলে। রাবেয়ার খাওয়া তখন শেষ। ভাতিজাকে ধাক্কা দিয়ে বললেন, “ছুটে যাস না কেনো? এখন তোর কাজ।”
বাবার দিকে তাকালো ইতমিনান। মকবুল আলী স্তব্ধ হয়ে বসে সবটা শুনছিলেন। ইতমিনান বলল, “তোমারও কি একই মত বাবা?”
মকবুল আলী ছেলের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত কণ্ঠে বললেন, “এই কথাটা তো আমার মাথায়ই আসেনি! যা মা’র কাছে যা। কেমন ছেলে হয়েছিস দেখি।” বাবার সমর্থনে যেনো শক্তি পেলো ইতমিনান। প্লেট নিয়ে ছুটে গেলো মায়ের কাছে। আয়েশা গম্ভীর ভঙ্গিতে বসে আছেন। ইতমিনান কিছু বলার আগেই তিনি বললেন, “ওকে আমি কখনোই মানব না। নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে চাইলে আমাকে বাদ দিতে হবে।”
উচ্ছল হাতটা থেমে গেলো। ইতমিনান বুঝলো পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে।
চলমান।