উষ্ণতা পর্ব-০৫

0
26

#উষ্ণতা
#বিনতে_ফিরোজ
পর্ব:৫

একের পর এক পাওনাদার এসে চলেছে। মালিহা হাবুডুবু খাচ্ছে। মতিয়ার আলীর এতো ঋণ ছিলো! মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়। এরা নিশ্চয়ই সুযোগসন্ধানী। কিন্তু প্রমাণ পত্র সামনে দেখে কিছু বলার উপায় থাকে না। ইতমিনানের সাহায্যে মতিয়ার আলীর জমানো টাকা থেকে কিছু টাকা তুলে এনেছে মালিহা। কিন্তু হাত মুঠো করার আগেই সব টাকা ঋণ মেটাতেই ফুরিয়ে গেলো। দিনশেষে মালিহা দেখলো আগামী এক সপ্তাহের বাজারটুকু খুব কষ্তে অবশিষ্ট টাকা দিয়ে হবে। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সে। মকবুল আলী স্মিত হেসে বললেন, “জীবন বড় কঠিন মা। কিন্তু তুমি যদি তাকে কঠিন মনে করে মগজে জায়গা দাও তাহলে সে তোমাকে পেয়ে বসবে। জীবনকে দেখবে পাহাড়ের মত। কখনও বন্ধুর পথ, কখনও ঢাল, কখনও চূড়া।” মালিহা কথাগুলো মাথায় গেঁথে নিলো, বুকে বেঁধে নিলো। বাবা তো তাকে ছাড়া বাঁচতে শিখিয়ে যায়নি।

সন্ধ্যার আগে আগে পাশের বাড়ির চাচী এলেন। সাথে অপরিচিত একজন মহিলা। মালিহা তাদের ভেতর বাড়িতে আমন্ত্রণ জানালো।
রাবেয়া তখনও যাননি। কিন্তু মনস্থির করে ফেলেছেন। আগামী কাল সকাল সকালই চলে যাবেন। এই মুহূর্তে তাকে আর এবাড়িতে প্রয়োজন নেই। বরঞ্চ বাড়তি তিনটা মানুষ কি খাবে সেই চিন্তায় মালিহার মুখ শুকিয়ে যেতে দেখেছেন তিনি। ভাতিজির এই কষ্টটুকু তিনি কমাতে চান।
অপরিচিত মহিলা দেখে রাবেয়ার কপালে ভাঁজ পড়ল।
“এইটা কে গো?”
চাচী হেসে বললেন, “আমার ননদের প্রতিবেশীর বোনের মেয়ে।”
নীতির মাথা ঘুরে উঠলো। সে বাক্যটুকু তার মাথায় নিতেই চাইলো না।
“মালিহা কই আপা? ওরে দেখতে আসলাম।”
রাবেয়া বেগম কপালে ভাঁজ ফেলে বললেন, “মালিহা আছে। ওরে কেনো দেখতে আসছো?”
“এমনেই। বাপটা ম’রে গেলো। মেয়েটার কথা ভাবতেই কষ্ট লাগে।”
“তাহলে ভাবার দরকার কি?”
চট করে মুখে হাত দিলো নীতি। চাচী তার দিকে তাকিয়ে বললেন, “এইটা কে?”
“মালিহার বান্ধবী।”
“ওহ। আসলে আপা মালিহার কথা তারে বললাম। মনি আবার কারো দুঃখ দেখতে পারে না। সে আমারে একটা ভালো প্রস্তাব দিছে। আপনাদের কাছে সেটাই বলতে আসলাম।”
রাবেয়া মনে মনে এটার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। শুরু হয়েছে তবে। নাজিয়া, রাশেদা কেউই আশপাশে নেই। রাবেয়া নিজেকে মুক্ত অনুভব করলেন। যাক,কিছু বলার পর অন্তত রাশেদার চোখ রাঙানি খেতে হবে না।
মালিহা চা, নাস্তা নিয়ে এলো। এগিয়ে দিয়ে সামনে বসলো। নীতি তাকে ভুরু তুলে ইশারা করছে। মালিহাও ইশারায় জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে?” নীতি নিজের ডান হাত গলার একপাশ থেকে আরেকপাশে নিয়ে গেলো। ফিসফিসিয়ে বলল, “তু তো গ্যায়ী কাম সে।” মালিহা বিরক্ত হলো। এই মেয়েটা সহজ কথা কখনও সহজে বলে না। অথচ পৃথিবীর জটিল কথাগুলো নির্বিকার ভঙ্গিতে বলে অপর পাশের মানুষটাকে পাথর বানিয়ে দেয়।
“এই যে মনি। এটাই মালিহা।” চাচী উচ্ছ্বসিত ভঙ্গিতে বললেন। মনি নামক মহিলা নরম করে হেসে মালিহাকে বললেন, “আমার কাছে এসে বসো মা।”
মালিহা না করতে পারলো না। কেউ এতো সুন্দর কেউ ডাকলে না করা যায়? মহিলার পাশে বসতেই তিনি আন্তরিকভাবে জড়িয়ে ধরলেন মালিহাকে। মালিহা বিস্মিত হলো। অনুভব করলো মহিলার অপত্য স্নেহ। জড়িয়ে ধরার ভঙ্গিতে কিছু একটা ছিলো যাতে মহিলাটিকে মালিহার আপন বলে মনে হলো।
“কেমন আছো মা?”
“আলহামদুলিল্লাহ। ভালো আছি আন্টি। আপনি কেমন আছেন?”
মনি মোটামোটি চাচীর বয়সী। সেই হিসেবেই তাকে আন্টি বলা। কিন্তু চাচী হইহই করে উঠলেন।
“কি বলো! কি বলো! মনি আমারে ডাকে আন্টি। তুমি আমারে ডাকো চাচী। আবার মনিরে বলো আন্টি। কেমনে কি হইলো?”
নীতি পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নিচ্ছে বোঝার চেষ্টা করছিল। মনি যে ইতোমধ্যে মালিহার মন জয় করে ফেলেছে এটা নীতি খুব বুঝলো। বিরক্ত হলো সে। মালিহা কি টোস্ট যে একটু পানি পড়লেই হ
গলে যেতে হবে? বিরক্তিকর! কিন্তু সম্পর্কের মারপ্যাঁচ আবার আসতেই তার মাথা ঘুরতে শুরু করলো।
“থাক মা। সমস্যা নেই। আন্টিই বলো।”
মালিহা স্বস্তির নিশ্বাস নিলো।
“শরীর সুস্থ আছে তো মা?”
“জি আন্টি।”
“কিসে পড়ছো এবার?”
“অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে।”
“অনুমতি দিলে একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করব। কিছু মনে করতে পারবে না।”
মালিহা মহিলার ব্যবহারে মুগ্ধ হলো। মুগ্ধতা নিয়েই বলল, “অবশ্যই আন্টি। বলুন। কিছু মনে করবো না।”
“বিয়ে করার কোনো চিন্তা করেছ কি? জানি তোমার বাবা মা’রা গেছে এখন পরিস্থিতি কিছুটা জটিল। তবুও এ বিষয়ে তোমার চিন্তা জানতে চাইছি।”
মালিহা বিব্রত বোধ করলো।
“আন্টি দেখতেই তো পারছেন আমাদের পরিবারের বর্তমান অবস্থা। ভাইটা ছোটো। পরিবারের দায়িত্ব নেয়ার মতো বয়স এখনো হয়নি। সেই মানুষটার মন মানসিকতা কেমন হবে এটা তো আগে থেকে বলা যায় না। এই বিপদের সময়ে সে যদি আমার পরিবারের পাশে না দাঁড়ায় তাহলে আমার একুল ওকুল সব যাবে। তাই ভাইটা একটু বড় না হওয়া পর্যন্ত এই বিষয়ে ভাবছি না।”
মালিহার উত্তরে মহিলা সম্ভবত খুব খুশি হলেন। তার চোখেমুখে হাসি খেলে গেলো। চায়ের কাপ হাত থেকে নামিয়ে বললেন, “সুন্দর বলেছ মা। তাহলে আমি আর এই বিষয়ে কিছু বলব না। কিন্তু সবাইকে নিয়ে ভাবতে যেয়ে নিজেকে ভুলে যেও না।”
মালিহার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন মনি। চাচী হায় হায় করে উঠলেন।
“কি আশ্চর্য! তুমি না ওর জন্য সম্বন্ধ নিয়ে আসলা? ওর পাশে এখন একটা খুঁটি দরকার না? একা একা কতদূর যাবে ও?”
মালিহার মনে হলো চাচী তাকে অবমূল্যায়ন করছে। মেয়ে বলে কি মালিহা তার পরিবারের দায়িত্ব নিতে পারবে না? মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো।
“বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওর মন তৈরি হয়নি। ওকে জোর করে বিয়ে দিলে কি ও সুখী হবে? তার চেয়ে নিজের বিষয়টা বুঝে নিক। বড় হয়েছে। এটুকু নিশ্চয়ই বুঝবে। তোমার মা কই মালিহা?”
এতক্ষণে কথা বললেন রাবেয়া। মানতে দ্বিধা নেই মহিলার কথার ধরন তাকে পছন্দের তালিকায় রাখতে বাধ্য করেছে।
“নাজিয়া ঘুমায়।”
“আচ্ছা তাহলে উঠি। আপাকে আমার সালাম দিয়েন। সাবধানে থেকো মা। নিজের যত্ন নিও।”
মালিহার মাথায় হাত রেখে বললেন মনি। মালিহা নিবিষ্ট হয়ে দেখলো মনির প্রস্থান।
রাবেয়া বানু মুখ ঝামটা দিয়ে বললেন, “শুরু হয়ে গেছে মানুষের নাক গলানো।”
রাফি চুপি চুপি দাঁড়িয়ে সবটা শুনছিল। মায়ের কাছে এসে বলল, “আম্মা মালিহা আপার বিয়ে?”
রাবেয়া ছেলেকে কোলে নিলেন।
“না রে বাপ। কিসের বিয়ে?”
রাফি মায়ের কল থেকে নেমে মালিহার কাছে গেলো। তার গায়ের সাথে লেপ্টে বসে বলল, “আপা আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তুমি আমাকে বিয়ে করবা?”
নীতি চোখ কপালে তুলে বলল, “কি সর্বনাশের কথা!”
মালিহা হেসে ফেলল। বাবার অনুপস্থিতি, পরিবারের দায়িত্ব, ভবিষ্যত চিন্তা সবটা হঠাৎ মস্তিষ্ক থেকে যেনো মুছে গেলো। হাসতে হাসতে রাফিকে কোলে নিলো সে।
“আমাকে বিয়ে করবি? কেনো?”
“আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আপা।” মালিহার গলা জড়িয়ে ধরে বলল রাফি। মালিহা হাসি থামিয়ে রাফিকে জড়িয়ে নিলো। সে জানে ছোট্ট রাফির ভালোবাসা হয়তো চাহিদার এই দুনিয়ায় গোনার তালিকায় থাকবে না। তবে খাদহীন এই ভালোবাসাটুকু সে বুকের মাঝে রেখে দিতে চায়। খুব যত্ন করে। যেখান থেকে দুর্বল সময় শক্তি পাওয়া যায়।

“দোস্ত তোর চাচাত ভাই তোর থেকে কতো বছরের বড়?”
মালিহা কিছুক্ষন ভেবে বলল, “ছয় বছর হবে মনে হয়। কেনো?”
মুখের সামনে বালিশ ধরে নীতি বলল, “এইটা পুরাই আমার অ্যাসাম্পশান। কিন্তু নীতির সিক্সথ সেন্স বলতেসে ব্যাটা তোর প্রতি উইক।”
বালিশের নিচে মুখ ঢাকলো নীতি। তখনই আরেকটা বালিশ দিয়ে তাকে আক্রমণ করলো মালিহা।
“ফালতু আলাপ করার জন্যে এখানে থাকছিস? অসভ্য মেয়ে।”
“আমি আগেই বলসি এইটা আমার অ্যাসাম্পশান। আক্রমণ করার কোনোই কারণ দেখি না।”
মালিহা শান্ত হয়ে বলল, “ভাইয়া তার সব কাজিনকেই ভালোবাসে। খেয়াল রাখে। এতে অন্য কিছু ধারণা করার কিছু নেই।”
“না থাকলে নাই। কিন্তু হইতে কতক্ষন।”
মালিহা কথা বাড়ালো না। নীতি বলল, “কি ভাবিস?”
“ফিরে যেতে হবে নীতি। ওখানে গুছিয়ে নিতে না পারলে এদিকে অবস্থা ঠিকঠাক করা সম্ভব হবে না। সামনে আমার জন্য খুব কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।”
নীতি মালিহাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরলো।
“ভয় পাইস না দোস্ত। আমি তোরে যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করবো।”
মালিহা জানে। নীতি নামক বাঁচাল মেয়েটার ওপর তার এই বিশ্বাস আছে।

গভীর রাতে ভাইয়ের ঘরে গেলো মালিহা। মিতুলের সাথে আলাদা করে দুদণ্ড সময় ব্যয় করা হয়নি। হালকা আলোয় মিতুলের নাকের নিচে অস্পষ্ট একটা দাগ দেখতে পেলো মালিহা। মিতুলের কি গোঁফ উঠছে? হাসি পেলো মালিহার। সেদিনের সেই ছোট্ট ভাইটা কতো বড় হয়েছে। আচ্ছা! সে কি আগামী দিনে মালিহার সঙ্গী হবে?

রাবেয়া সকালে মালিহার থেকে বিদায় নিলেন। মালিহা বলল তার যাওয়া পর্যন্ত থাকতে। রাবেয়া শুনলেন না।
“আমারও তো ঘর সংসার আছে নাকি? আর কয়দিন থাকবো?” অথচ তিনি জানেন আজ রান্না করার জন্য মালিহা পাঁচটা ডিম আলাদা করে রেখেছে। তারা চলে গেলে কিছু তো নিশ্চয়ই বাঁচবে।
“মাঝে মাঝে আমার মা’কে একটু দেখে যেও ফুপু। কিভাবে ওদের রেখে যাবো সেটাই বুঝতে পারছি না। মায়ের তো সংসারের দিকে কোনো খেয়ালই নেই।”
“তুই সব খেয়াল করছিস তাই তোর মা এমন করছে। তুই গেলেই দেখবি আবার নিজের দায়িত্ব পালন করছে। বেশি চিন্তা করিস না। আমি আসবো মাঝে মাঝে। বড় ভাইয়ের সাথে দেখা করে যাবো। যাই।”

মকবুল আলীর বাড়িতে এসে ভাইকে ডেকে রাবেয়া বললেন, “ভাই আপনি মা’কে আপনার কাছে নিয়ে আসেন। ওদের এই টানাটানির মধ্যে ওখানে থাকার দরকার নাই।”
“আমিও ভাবছিলাম রাবেয়া। কিন্তু ওদের সাথে একটা মুরুব্বী মানুষ না থাকলে মালিহার মা যদি আরো ভেঙে পড়ে এজন্যেই কিছু বলি নাই।”
“সেই কথাও ঠিক। তাহলে কি করা যায়?”
“আমি মায়ের উসিলায় ওদের জন্য মাঝে মাঝে কিছু বাজার ঘাট করে দিয়ে আসবো। তুই চিন্তা করিস না।”
রাফি ইতমিনানের ঘরে গেলো।
“রাফি কেমন আছে?”
ইতমিনান কোলে নিতে চাইলে রাফি দূরে সরে গেলো। ইতমিনান ভুরু কুঁচকে বলল, “কি হলো?”
“তোমার কোলে উঠবো না। তোমাকে আমার ভয় করে।”
“কেনো?” অবাক হয়ে বলল ইতমিনান।
“তোমার চোখ অনেক ছোট। যাদের চোখ ছোট তাদের আমি ভয় পাই। মালিহা আপার চোখ বড়। আমি মালিহা আপাকে পছন্দ করি।”
“তাই?”
“হ্যাঁ। তুমি জানো আমি মালিহা আপাকে বিয়ে করব।”
“আচ্ছা!” বিস্ময়ের ভঙ্গিতে ভুরু উঁচু করলো ইতমিনান। কোমরে দুই হাত রেখে বলল, “মালিহা তোকে বিয়ে করবে?”
“কেনো করবে না? কালকে একজন আপার বিয়ের কথা বলতে এসেছিল। অন্য কেউ আপাকে বিয়ে করার আগে আমি আপাকে নিয়ে করে নিয়ে যাবো। আপা সারাদিন কান্নাকাটি করে। আমি আপাকে কাদতে দিবো না।”
ইতমিনানের কপালে ভাঁজ দেখা দিলো। ফুপুর কাছে যেয়ে তাকে জেঁকে ধরলো।
“ফুপু মালিহার জন্য সম্বন্ধ এসেছিল?”
রাবেয়া অবাক হয়ে বললেন, “তোকে কে বলল?”
“রাফি।”
“হায় আল্লাহ! এই ছেলেকে নিয়ে আমি করবো!”
“তুমি আমার কথার উত্তর দাও।”
“ঐ আসছিলো একজন।”
“মালিহা কি বলল?” উত্তেজিত ভঙ্গিতে প্রশ্ন করলো ইতমিনান।
“বলল এখন বিয়ের কথা ভাবছে না। আগে মিতুল বড় হোক। এইসব। তুই এতো লাফালাফি করিস কেনো?”
ইতমিনান বিব্রত ভিঙিয়ে বলল, “লাফালাফি করলাম কই? তোমার যত উল্টাপাল্টা কথা।”
ইতমিনান চল গেলেও রাবেয়া সেদিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।

মালিহা যাবার কালে নাজিয়া কান্নায় ভেঙে পড়লেন। মালিহা শক্ত থাকতে পারলো না।
“তুমি কয়েকটা দিন একটু কষ্ট করে থাকো মা। আমি তাড়াতাড়ি তোমাদের ওখানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবো।”
“তোর বাপ আমারে কই রেখে গেলো মালিহা। আমি কেমনে ঐ ঘরে একা থাকবো।”
রাশেদা ছেলের বউকে আগলে নিয়ে নরম কণ্ঠে বললেন, “মেয়েটা চলে যাচ্ছে। এভাবে কান্নাকাটি করলে ও ওখানে যেয়ে থাকবে কিভাবে? তুমি মা। ওকে সাহস দিয়ে পাঠাও।”
নাজিয়া চোখ মুছে মেয়ের কপালে চুমু দিলেন। ফের ঝরঝরিয়ে কেঁদে দিলেন। মেয়ের যাওয়ার দিন মানুষটা যেনো পাগল হয়ে যেত।
মিতুল বোনের ব্যাগ নিয়ে আগে হাঁটছিল। মকবুল আলীর বাড়ির সামনে থেকে ইতমিনান তার সাথে যোগ দিলো। মিতুল আড়চোখে তাকিয়ে বলল, “তুমি কোথায় যাচ্ছ?”
“চাকরি করতে। ছুটি শেষ।”
“আজকেই ছুটি শেষ হলো?” সন্দেহী কণ্ঠে বলল মিতুল। ইতমিনান হেসে বলল, “তোর আপার সাথে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এই অবস্থায় একা একা যাওয়াটা ঠিক হবে না।”
মিতুলের ভাইসুলভ মনে ইতমিনানের ভাবনাটা পছন্দ হলো। তবুও বাঁকা কণ্ঠে বলল, “তোমার বোন আবার জমি নিয়ে লাফালাফি করবে না তো?”
“ওকে শশুরবাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। বলেছি আমরা যেটা বলবো সেটাই শুনতে হবে। নয়তো ও কিছুই পাবে না। ঠিক করিনি?”
মিতুল কথা বলল না। সে জানে মিলি এটুকুতে মেনে নেয়ার মেয়ে না।
ইতমিনান ভাবলো কতো কাঠখড় পুড়িয়ে বোনকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু মায়ের মাথা থেকে ভূতটা নামাতে পারেনি। দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে। কবে এসব ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবে জানে না।

ট্রেনে উঠে ইতমিনানকে দেখে মনে মনে স্বস্তি পেলো মালিহা। ট্রেনে এর আগে টিকিট ছাড়া যাতায়াত করেনি সে। সিট পাওয়া যায় নাকি সেটাই চিন্তার বিষয়। পরিচিত, বিশ্বস্ত একজন সাথে থাকলে ভরসা পাওয়া যায়। তার ভরসা পুরোটা পথ রাখলো ইতমিনান। কিভাবে কিভাবে যেনো তিনটা সিট খুঁজে বের করে ফেললো। একটু পরপর খোঁজ নিলো। কোনো কিছু প্রয়োজন হলে তাকে জানাতে বলল। নীতি সবটা চুপচাপ দেখে মালিহার দিকে তাকালেই সে চোখ রাঙালো।

চলমান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে