উধয়রনী পর্ব-৪৫+৪৬

0
342

#উধয়রনী
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-৪৫||

৮৯।
হাসপাতালের করিডরে অস্থির ভাবে পায়চারি করছে তাজওয়ার। তার শার্টে রক্তের দাগ। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হাসপাতাল অথচ তাজওয়ার ঘামাচ্ছে। হঠাৎ তাজওয়ারের দিকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলো লিনাশা। এসেই কোনো কিছু না ভেবে তাজওয়ারের কলার চেপে ধরে তাকে ঝাঁকিয়ে বলল,
“তোর জন্য আহির এই অবস্থা হয়েছে। শয়তান, তোকে আমি মেরেই ফেলবো।”

লিনাশার পিছু পিছু নায়ীবও এসেছে। সে লিনাশাকে তাজওয়ারের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“লিনু, শান্ত হও।”

লিনাশা চেঁচিয়ে বলল,
“এই শয়তানটাকে এখান থেকে যেতে বলো। ও এখানে কি করছে? আমার আহিকে তো মেরেই ফেলেছে, এখন কি করতে চায়?”

তাজওয়ার লিনাশার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“আহির কিছু হয় নি।”

“চুপ, একদম চুপ। তুই ওর জীবনটা এলোমেলো করে দিয়েছিস।”

“আমি আহিকে ভালোবাসি।”

লিনাশা তাজওয়ারের গায়ে হাত তোলার জন্য এগিয়ে যাবে তখনই নায়ীব উঁচু গলায় বলল,
“এসব করে কোনো লাভ হবে না, লিনু। প্লিজ চুপ করো। এটা হসপিটাল। কোনো মাছের বাজার না।”

লিনাশা ধরা কণ্ঠে বলল,
“এই শয়তানের কথা শুনেছো তুমি? সে না-কি আহিকে ভালোবাসে। ভালোবাসার মানে বুঝে এই শয়তানটা? ভালোবাসা কি জানে? ভালো তো আহি বেসেছে। ভালোবাসার মতো ভালোবেসেছে। ভালোবাসায় সব ত্যাগ করেছে। ভালো তো রাদ বেসেছে। যে মুখ বুজে সব সহ্য করছে। ত্যাগ করছে। আর এই শয়তান না-কি ভালোবাসে? ভালোবাসা কি ফাজলামো না-কি?”

তাজওয়ারের হাত মুঠো হয়ে এলো। তাদের কথার মাঝখানে লাবণি ও রিজওয়ান কবির চলে এসেছেন। লিনাশা তাদের দেখে বলল,
“আসুন আসুন। বিশেষ অতিথি এসেছে, দেখছি। আপনাদের জন্য কি বসার ব্যবস্থা করতে হবে?”

লাবণি বিরক্ত মুখে বলল,
“লিনাশা, তোমার দুলাভাইয়ের সাথে ভদ্র ভাবে কথা বলো।”

“দুলাভাই? আমি তো আমার সামনে কোনো ভাইয়া দেখছি না। দেখছি আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের সো কল্ড বাবাকে।”

রিজওয়ান কবির শ্রান্ত স্বরে বললেন,
“আহি এমন একটা কাজ করবে তা আমরা কেউ ভাবতে পারি নি।”

“আপনি অন্তত কিছু ভাববেন না। আপনার চিন্তা-ভাবনা আধ্যাত্মিক পর্যায়ে চলে গেছে। আমরা তা স্পর্শও করতে পারবো না সেই ভাবনা। আপনাকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না, বাবা মানুষটা এমনও হয়। এক আমার বাবা, যে নিজের মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য চিন্তা করতে গিয়ে নিজের প্রাণটাই ত্যাগ করেছেন। আর এক আহির বাবা, যে নিজের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার জন্য নিজের মেয়ের সম্মানটাই বিক্রি করে দিচ্ছেন। ছি! এমন বাবা থাকার চেয়ে অনাথ থাকা ভালো।”

(***)

আহির ফোনে বারবার কল দিয়ে যখন লিনাশা আহিকে পাচ্ছিলো না, তখনই সে মুনিয়া খালার নম্বরে কল করলো। মুনিয়া খালার নম্বরটি সে অনেক আগেই সংগ্রহ করেছিল। কারণ আহির বাসায় একমাত্র তিনিই আহির শুভাকাঙ্ক্ষী। মুনিয়া খালা আহির সাথে হওয়া ঘটনাগুলো সব জানানোর পরই লিনাশা লাবণিকে ফোন করে হাসপাতালের ঠিকানা নিয়ে চলে এলো। ততোক্ষণে মোজাম্মেল চাচা দরজা খুলে মুনিয়া খালা আর চুনিকে বের করলেন। এদিকে রিজওয়ান কবির আর লাবণি অনেক আগেই বেরিয়েছিলেন। কিন্তু তারা আহির এমন আত্মহননের চেষ্টায় ভীত ছিলেন। তারা হাসপাতালে না এসে সোজা পরিচিত উকিলের সাথে দেখা করতে চলে গেলো। কারণ সালমা ফাওজিয়া সব জানার যদি মামলা করতে যায়, অন্তত তখন যাতে তাদের কোনো ঝামেলায় পড়তে না হয়। তাই এই পূর্ব প্রস্তুতি।

এদিকে লিনাশা মেসেজ দিয়ে আহির আত্মহত্যার ঘটনা পুষ্পকে জানালো। পুষ্প তখন চায়ের কাপ হাতে নিয়ে উজ্জ্বলের সামনে এসে বসলো মাত্র। লিনাশার মেসেজ দেখেই তার হাত ফস্কে চায়ের কাপ মেঝেতে আছড়ে পড়লো। উজ্জ্বল তা দেখে ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
“কি রে, মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না-কি তোর!”

পুষ্প উজ্জ্বলের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো,
“ভাইয়া, আহি সুইসাইড করেছে।”

কথাটা যেন উজ্জ্বলের কানে শ’খানেক বার ধাক্কা খেলো। কান গরম হয়ে গেলো তার। গতকালই তো আহিকে সুস্থ-স্বাভাবিক দেখেছিল। এক রাতে কি এমন হয়ে গেলো, যে আহিকে আত্মহত্যা করতে হলো?

(***)

প্রতিদিন সন্ধ্যায় লাবীব পুষ্পের সাথে এক ঘন্টা ফোনে কথা বলবে। আজ একটু দেরী হয়ে গেছে। পুষ্প মেসেজে বলেছিল তার কাজিন উজ্জ্বল বাসায় এসেছে। সে উজ্জ্বলের জন্য চা বানিয়েই লাবীবকে কল করবে। অথচ এক ঘন্টার বেশি হয়ে গেছে পুষ্পের কোনো খবর নেই। লাবীব ফোন দিতেই পুষ্প রিসিভ করলো। সে কিছু বলার আগেই পুষ্প কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
“আহি সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে। ওর অবস্থা খুব খারাপ।”

লাবীব বেশ অবাক হলো। শান্ত কণ্ঠে বলল,
“মজা করছো আমার সাথে? আহি যথেষ্ট স্ট্রং।”

“আমি হাসপাতালে এসেছি। লিনাশা, আহির বাবা-মা সবাই এখানে আছেন। অনেক আগেই ওকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। আমি তো একটু আগে এসেছি।”

“প্লিজ, পুষ্প। এমন মজা করা উচিত না।”

“মজা করছি না। আহিকে নিয়ে কেন মজা করবো? ওই তাজওয়ার খান না-কি আহির সাথে নোংরামি করতে চেয়েছিল, তাই ও এমন একটা স্টেপ নিয়েছে।”

লাবীব স্থির হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলো। তার মাথাটা একদমই কাজ করছে না। সে পুষ্পের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়েই বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো। পথেই সে রাদকে কল করলো। রাদ সাথে সাথেই কলটা রিসিভ করে বলল,
“ভাই, আহি কল রিসিভ করছে না কেন? আমি কাল রাত থেকে কল দিচ্ছি। ওই তাজওয়ার ওকে গাড়িতে করে যে নিয়ে গেলো, এখন কোনো হদিসই নেই এই মেয়ের।”

লাবীব ক্ষীণ কন্ঠে বললো,
“তোকে একটা এড্রেস পাঠাচ্ছি। ওখানে তাড়াতাড়ি চলে আয়।”

লাবীব কল কেটে রাদকে ঠিকানা পাঠিয়ে দিলো। রাদ মেসেজটা দেখে সাথে সাথেই ফিরতি কল করলো লাবীবকে। লাবীব ফোন ধরতেই সে বলল,
“কিছু হয়েছে? আহির কিছু হয়েছে?”

“হুম!”

রাদ ধরা কণ্ঠে বলল, “কি হয়েছে ওর?”

“সুইসাইড….”

লাবীব আর কিছু বলতে পারলো না। রাদ চেঁচিয়ে বলল,
“ও এমন কিছু করার মেয়ে না, বুঝেছিস? আমি এক্ষুণি আসছি। ওর গালে ঠাসিয়ে একটা চড় লাগাবো। মরার ভূত মাথা থেকে নামাবো ওর।”

রাদ দৌঁড়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে কয়েক সিঁড়ি গড়িয়ে পড়লো। নিচের ফ্ল্যাটের এক ছেলে রাদকে ধরে উঠালো। রাদ বেশ অস্থির হয়ে তাকে বলল,
“ভাই রিয়ান, আমাকে একটা সিএনজি ঠিক করে দাও না?”

তারপর ফোনটা রিয়ানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“এই এড্রেসে৷ আমার না হাত-পা চলছে না।”

রাদের এমন অবস্থা দেখে রিয়ান গাড়ি ঠিক করে দিয়ে নিজেও রাদের সাথে হাসপাতাল পর্যন্ত এসে তাকে নামিয়ে দিয়ে গেলো। রাদ উপরে উঠেই দেখলো সবাই মলিন মুখে বসে আছে। লাবীব রাদকে দেখে তার কাছে এসে বলল,
“আহির অপারেশন চলছে। হাত কেটে ফেলেছে। চিন্তা করিস না৷ কিছু হবে না। সব কি এতো সহজ না-কি!”

রাদ ধরা কণ্ঠে বলল,
“ওর কিছু হবে না৷ ওর পুরো জীবনটাই তো দেখতে হবে। ওকে তো বাঁচতে হবে। সুখ না দেখে ও এভাবে চলে যেতে পারবে না। পৃথিবীতে এতোটা নিষ্ঠুর বিচার হয় না।”

(***)

রাত ১টা। কাজ সেরে পদ্ম আফিফের পাশে বসলো। আফিফ স্থির হয়ে বসে আছে। বিকেল থেকেই তার মন ভারী হয়ে আছে। আহিকে এভাবে কষ্ট দিতে চায় নি সে। কিন্তু যা করেছে আহির ভালোর জন্যই করেছে। অন্তত মেয়েটা তার প্রতি মনে বিন্দুমাত্র ভালোবাসাও না রাখুক। রাদকে ওয়াদা করেছিল আফিফ। খুব শীঘ্রই সে আহির জীবন থেকে চলে যাবে। অন্তত যতোদিন আছে, ততোদিনে আহির মন থেকে উঠে যাওয়ার সব চেষ্টা করতে চায় আফিফ। কিন্তু শান্তি পাচ্ছে না। অপরাধবোধ ঝাঁকড়ে ধরেছে তাকে। পদ্ম আফিফের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। আফিফের সাড়া না পেয়ে সে তার বুকে মাথা রেখে বলল,
“কি হয়েছে আপনার? হঠাৎ মন খারাপ হলো কেন?”

আফিফ পদ্মের চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“কোথায়! আমি তো ঠিকই আছি।”

পদ্ম আফিফের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনাকে খুব অশান্ত মনে হচ্ছে। এমন তো আগে ছিলেন না। এমন কিছু কি হয়েছে, যা মনের বিরুদ্ধে?”

আফিফ মৃদু হেসে বলল,
“তুমি আমাকে একটু বেশিই বুঝতে চাও।”

“আপনি তো ভীষণ চাপা স্বভাবের৷ আপনাকে বুঝতেই তো আমার যুগ পেরিয়ে যাবে।”

হঠাৎ পদ্মের ফোন বেজে উঠলো। পদ্ম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার ফোনে এতো রাতে কে কল করেছে?”

আফিফের পাশেই পদ্মের ফোনটা ছিল। আফিফ ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে বলল,
“তোমার ফ্রেন্ড।”

পদ্ম ফোন হাতে নিয়ে কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে পুষ্প ক্লান্ত কণ্ঠে বলে উঠল,
“পদ্ম, তোর ব্লাড গ্রুপ কি বি পজিটিভ?”

পদ্ম ভ্রূ কুঁচকে বলল, “হ্যাঁ। কেন?”

“আহিকে রক্ত দিতে হবে।”

পদ্ম মাথা তুলে সোজা হয়ে বসে আফিফের দিকে তাকালো। আফিফ ভ্রূ কুঁচকে পদ্মের দিকে তাকিয়ে আছে। পদ্ম বলল,
“আহিকে রক্ত দিতে হবে কেন? কি হয়েছে ওর?”

আফিফ পদ্মের মুখে এমন কথা শুনে চমকে উঠলো। ওদিকে পুষ্প বলল,
“গ্রুপে দেখিস নি?”

“না। কি হয়েছে, বল না?”

“সুইসাইড করতে চেয়েছে ও।”

“কি! সুইসাইড?”

আফিফ স্তব্ধ হয়ে বসে আছে৷ পদ্ম ব্যস্ত কন্ঠে বলল,
“কি পাগলের মতো বলছিস, পুষ্প?”

“চিন্তা করিস না। ডাক্তার আশ্বস্ত করেছেন। আপতত ব্লাড লাগবে। একজন দিয়ে গেছে। কিন্তু আরো এক ব্যাগ লাগবে। তুই দিতে পারলে আমাদের বাইরে খোঁজ নিতে হবে না।”

“কেন দেবো না আমি? আমি এক্ষুনি আসছি। ঠিকানা পাঠা আমাকে।”

পদ্ম কল কাটতেই আফিফ ব্যস্ত কন্ঠে বলল,
“কি হয়েছে আহির?”

পদ্ম ভেজা কন্ঠে বলল,
“সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে। তুমি আমাকে নিয়ে যাবে ওখানে? ওর না-কি ব্লাড লাগবে। আমাদের ব্লাড গ্রুপ সেইম।”

আফিফ বিছানা ছেড়ে উঠে বলল,
“আমি বাইক বের করছি৷ তুমি তাড়াতাড়ি আসো।”

(***)

ভোর ছয়টা। হাসপাতালেই স্থির হয়ে বসে আছে কিছু মানুষ। একজন ব্যতীত কারো সাথেই আহির রক্তের সম্পর্ক নেই। অথচ তারা নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দিয়েছে। লিনাশা মলিন মুখে বসে আছে করিডোরের সাথে লাগোয়া বেঞ্চে। নায়ীব তার হাত ধরে রেখেছে শক্ত করে। একপাশে পুষ্প বেঞ্চে পা উঠিয়ে পদ্মের কাঁধে মাথা রেখে নিভু নিভু দৃষ্টিতে আহির কেবিনের দিকে তাকিয়ে আছে। সালমা ফাওজিয়া সেই কেবিনের বাইরে মেঝেতে বসে আছেন। তার পাশেই রাদ বসা। আর পেছনের বেঞ্চে ক্লান্ত শরীরে শুয়ে আছে লাবীব। আর আফিফ তার পাশেই বসে আছে। উজ্জ্বলকে রাত তিনটায় জোর করে বাসায় পাঠিয়েছিল পুষ্প। সবার জন্য খাবার নিয়ে এসেছিল সে। কিন্তু কারো মুখে দানা-পানি যায় নি। সেও এখন এক কোণায় বসে আছে। এদিকে রিজওয়ান কবির আর লাবণি অনেক আগেই চলে গেছেন। আর রাদ এসেই তাজওয়ারের সাথে হাতাহাতি লাগিয়ে দেওয়ায় তাজওয়ারও বাধ্য হয়ে চলে গিয়েছিল। ডাক্তার অনেক আগেই জানিয়েছে আহি আশংকা মুক্ত। কিন্তু জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত কেউ এই কথা বিশ্বাস করতে পারছে না। সালমা ফাওজিয়া কিছুক্ষণ পর পর ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছেন, সাথে লিনাশা, পদ্ম আর পুষ্পকেও কাঁদিয়ে দিচ্ছেন। মেয়ে তিনটা সারা রাত বসে কেঁদেছে। এতোগুলো মানুষ আহির চিন্তায় অস্থির। অথচ আহির জন্মদাতা যেন নির্বিকার হয়ে আছেন। তিনি সালমা ফাওজিয়ার প্রশ্নের উত্তর থেকে বাঁচতেই চলে গেছেন অনেক আগে। এরই মধ্যে মোজাম্মেল চাচা, মুনিয়া খালা আর চুনি এসেও চলে গেছে।

(***)

ঘড়ির কাঁটা সাতটা সাত মিনিটে এসে থামতেই নার্স বেরিয়ে বলল, আহির জ্ঞান ফিরেছে। সালমা ফাওজিয়া অস্থির হয়ে উঠে কেবিনে যেতে নিবে তখনই নায়ীব তার পথ আটকে বলল,
“আপনাকে দেখলে ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে। আপনাকে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে। আপনি একটু পড়ে যান৷ রাদ আগে যাক। ও আহিকে স্বাভাবিক করুক।”

নায়ীবের কথায় রাদের দেহে যেন প্রাণ ফিরলো। নায়ীব রাদকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“ওই ঘটনা নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করো না৷ শুধু ওকে মানসিক ভাবে সাপোর্ট করতে যাচ্ছো তুমি। যাতে বাকি সবার অভিযোগ নেওয়ার ক্ষমতা তাকে ওর।”

রাদ মাথা নেড়ে ভেতরে ঢুকলো। আহি নিভু নিভু দৃষ্টিতে কেবিনের দরজার দিকে তাকালো। রাদকে দেখে তার চোখ যেন হেসে উঠলো। আহির মুখের দিকে তাকিয়ে অনেক কষ্টে নিজের অশ্রু আটকালো সে৷ হয়তো এজন্যই নায়ীব তাকে পাঠিয়েছে। আহির ব্যাপারে ধৈর্য ধরার ক্ষমতা নিয়েই হয়তো জন্মেছিল সে। আহিকে দেখলেই তার মন শক্ত হয়ে যায়। বাকিরা তো দুর্বল। তারা কাঁদবে। আহিকেও কাঁদাবে।

রাদ আহির পাশে এসে বসলো। আহি কাঁপা হাতে রাদের হাতটা ছুঁয়ে দেওয়ার জন্য হাত বাড়ালো। রাদ আহির হাতটা ধরেই বলল,
“তোকে একনজর দেখার জন্য আমাকে এক যুগ অপেক্ষা করিয়েছিস মনে হলো। তোর অপেক্ষায় এক রাতেই আমার বয়স বেড়ে গেছে। এই বুড়ো রাদকে একটু ষোলোতে নিয়ে আয়। যেই বয়সে সে তোর সাথে দু’দন্ড কথা বলার জন্য তোর বেঞ্চের সামনে গিয়েও ফিরে আসতো। আচ্ছা, অন্তত একুশে নিয়ে আয়, যেই বয়সে তোর বন্ধু হতে পেরে কয়েক শ’বাচ্চাকে ট্রিট দিয়েছিলো। আচ্ছা, সেটাও বাদ দে। অন্তত সেই বয়সে তো নিয়ে আয়, যেদিন তুই তাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলি, তুই পাশে থাকলে আমার নিজেকে অসহায় মনে হয় না। তুই আমার মেডিসিন।”

আহি মৃদু হেসে কাঁপা কন্ঠে বলল,
“বেঁচে ফিরেছি আমি। এই ঘুমে আমি অনেক স্বপ্ন দেখেছি। সবচেয়ে সুন্দর স্বপ্ন কি ছিল জানিস?”

“কি?”

“লন্ডনের সেই বাড়ির ছাদে পা ঝুলিয়ে তোর পাশে বসে গল্প করা।”

“এর অর্থ কি!”

“আমি মুক্তি পাবো। আকাশ দেখবো। পাখি দেখবো। শান্তি দেখবো।”

রাদ আহিকে হালকা জড়িয়ে ধরে বলল,
“তোর জন্য সবাই বসে আছে।”

“কে কে এসেছে আমাকে দেখতে?”

“আন্টি এসেছে, লিনাশা, পদ্ম, পুষ্প, লাবীব সবাই বসে আছে।”

“আর?”

রাদ আহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“নায়ীব ভাইয়া, পুষ্পের কাজিন উজ্জ্বলও আছে।”

“আর?”

রাদ এবার কিছুক্ষণ থেমে বলল, “আফিফও আছে।”

আহি বলল,
“না, ও তো নেই। একটা তেলাপোকা আছে।”

রাদ হালকা হাসলো। আহি রাদের দিকে হাত এগিয়ে দিয়ে বলল,
“তোকে একটু ছুঁয়ে দেখি?”

রাদ আহির দিকে ঝুঁকে দাঁড়াতেই আহি রাদের গাল ধরে বলল,
“এবার বিশ্বাস করেছি, আমি বেঁচে আছি। রাদ, আমাকে আর ওই বাড়িতে যেতে দিস না।”

“যেতে দেবো না তোকে।”

“জানি, তুই যেতে দিবি না।”

“হুম, কখনো যেতে দেবো না। ভালোবাসি তোকে। খুব ভালোবাসি।”

“আমিও তো ভালোবাসি।”

“আমার ভালোবাসাটা তোর মতো না।”

আহি রাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
“আমাকে আমার মতো করে ভালোবাসিস না। ভীষণ কষ্ট পাবি। দেখ, আমি কষ্ট পেয়েছি।”

“আমাকে কি তুই ফেলে চলে যাবি?”

“না। কেন চলে যাবো?”

“তাহলে কেন কষ্ট পাবো আমি?”

“তুই যাবি না তো?”

“আমাকে কি তেলাপোকা মনে হয়?”

“তুই যদি তেলাপোকা হতি, আমার ভালোবাসা ফস্কে যেতো না। সুন্দর একটা গল্প হতো আমার।”

“এখন লিখবি। সুস্থ হয়ে লিখবি।”

“আমাকে কিন্তু সময় দিতে হবে।”

“সময় নে। তোর নামে আমি পুরো জীবনটাই লিখে দেবো।”

আহি শুকনো হেসে বলল,
“এতো ভালোবাসিস না, রাদ। অতিরিক্ত ভালোবাসা মানেই ক্ষতি, অভিশাপ, যন্ত্রণা।”

চলবে-

#উধয়রনী
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-৪৬||

৯০।
সালমা ফাওজিয়ার হাত ধরে আহি ধীর পায়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসতেই তাজওয়ারের মুখোমুখি হলো। তাজওয়ার ফুলের তোড়া আহির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“কেমন আছো, সুইটহার্ট?”

আহির শরীর এখনো দুর্বল। কিন্তু তাজওয়ারকে দেখেই তার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হলো। আহির রাগান্বিত চোখ দু’টি দেখে তাজওয়ার হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
“আই প্রমিজ, আমি খুব ভালো হয়ে যাবো। ভবিষ্যতে এমন কিছুই করবো না, যেটা তোমাকে কষ্ট দেবে। তোমাকে ছুঁয়েও দেখবো না।”

রাদ আহির পাশে দাঁড়িয়ে তার এক হাত আলতো ভাবে স্পর্শ করলো। আহি রাদের স্পর্শ পেয়ে তার দিকে তাকালো। এবার তাজওয়ারের দৃষ্টি আটকালো আহি আর রাদের আবদ্ধ হাতের দিকে। তাজওয়ার রাদের দিকে তাকিয়ে ক্ষীণ কন্ঠে বলল,
“তুমি এতো সহজে আমার ভালোবাসাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারবে না। তুমি হয়তো জানো না, আহিকে ভালোবাসা তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।”

তাজওয়ার এবার আহির দিকে তাকিয়ে বলল,
“আর আমার কাছে না আসা, তোমার জীবনের শেষ ভুল।”

লিনাশা, পদ্ম আর পুষ্প আহিকে আড়াল করে তাজওয়ারের সামনে এসে দাঁড়ালো। লিনাশা বলল,
“এখন এখানে দাঁড়িয়ে লম্বা-চাওড়া ভাষণ না দিয়ে, ব্যাগ-পত্র গুছিয়ে নাও। তোমার ঠিকানা হয়তো এখন আর খান বাড়ির গ্যারেজেও হবে না।”

তাজওয়ার বাঁকা হাসলো। তাজওয়ারের হাসি দেখে পুষ্প বলল,
“এতো মুখ বাঁকিয়ে লাভ নেই। পুলিশের ঠেঙ্গানি খেলে মুখটা আর সোজা হবে না।”

তাজওয়ার এবার রাগী দৃষ্টিতে পুষ্পের দিকে তাকালো। এবার পদ্ম বলল,
“দেখুন, এখানে তামাশা করে লাভ নেই। আমরা যদি আট-দশ জন লোক জড়ো করি, আপনাকে খুঁজেও পাওয়া যাবে না।”

পদ্মের কথা শুনে লাবীব বলল,
“আট-দশ জন কেন? এই এক পিসের জন্য আমরাই যথেষ্ট।”

লাবীব কথাটি বলেই হাসলো। রাদ লাবীবের পিঠে চাপড় মেরে সামনে এগিয়ে তাজওয়ারকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,
“রাস্তা মাপো। আহির আশেপাশেও তুমি আর ঘেঁষতে পারবে না।”

তাজওয়ার মৃদু হাসলো। সে পিছু যেতে যেতে বলল,
“আজ না হয় পুরো ফোর্স নামিয়ে দিয়েছো, কাল কিন্তু কেউ থাকবে না। আমার মুখোমুখি তুমিই থাকবে, আহি। মনে ভীষণ ক্ষোভ জন্মেছে আমার। এই পৃথিবীতে আমি ছাড়া তোমার দ্বিতীয় কোনো প্রেমিক থাকুক, এটা তো মানা যায় না। আহি শুধু একজনের।”

(***)

সালমা ফাওজিয়া আহিকে বাসায় নিয়ে এসেছেন। রোকেয়া ফাওজিয়া আহির পাশে বসে আছেন। লিনাশা, পদ্ম আর পুষ্প ছাড়া বাকিরা চলে গেছে। তিন বান্ধবী ব্যস্ত আহিকে হাসাতে। অনেক বছর পর আয়েশ করে আড্ডা দিলো তারা। সালমা ফাওজিয়ার ঘরে উষ্ণ আমেজ ছড়িয়ে পড়লো। দরজার কাছে এসে দাঁড়ালেন তিনি। আহির ঠোঁটের ফাঁকে মিষ্টি হাসি দেখে তার চোখ ভিজে গেলো। এভাবেই যদি মেয়েকে আগলে রাখা যেতো!

এদিকে পদ্ম একটু পর পর আফিফের নম্বরে কল করছে। কিন্তু কল যাচ্ছে না। ভীষণ চিন্তিত দেখাচ্ছে পদ্মকে। লিনাশা পদ্মের চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কি রে, কি হয়েছে?”

পদ্ম বলল, “উনি যে কোথায় গেলেন!”

“আরেহ, ভাবিস না। হয়তো অফিসে গেছে।”

“আমার না ভয় করছে। উনি ওই তাজওয়ার খানের কোম্পানিতে কাজ করছেন। উনার যদি কিছু হয়ে যায়?”

“কাজ ছেড়ে দিতে বল?”

“তাজওয়ার খান নিজ থেকে উনাকে বের না করলে, আফিফকে অনেক টাকা দিতে হবে। পাঁচ বছরের চুক্তিতে ঢুকেছেন।”

“এটা তো সমস্যা? কতো টাকা লাগবে?”

“কয়েক লাখ।”

“নায়ীব থেকে ধার নিতে পারে।”

“কি যে বলিস!”

“বিপদে তো বন্ধুই বন্ধুকে সাহায্য করে। পদ্ম, আমার মনে হয় ভাইয়ার ওখানে কাজ করা উচিত হবে না।”

(***)

নিজস্ব বাংলো বাড়ির সামনে বাগানে বসে টি-টেবিলের ওপর পা তুলে চেয়ারে আয়েশ করে বসে সিগারেট ফুঁকছে তাজওয়ার। ঘড়িতে বিকেল পাঁচটা। এই মুহূর্তে বাংলো বাড়িতে সম্পূর্ণ একা থাকে সে। বাড়ির বাইরে প্রহরীরা ছাড়া ভেতরে তাজওয়ার একাই। সোহাগকে জরুরি কাজে পাঠিয়ে সে। আজ তার ছিমছাম গড়নের সুন্দরী রমনীর প্রেমে ডুবে যেতে হবে৷ রাগে তার মাথাটা ভো ভো করছে। আর তাজওয়ারের মাথা ঠাণ্ডা করার জন্যই রমনীর সন্ধানে বের হয়েছে সোহাগ। হঠাৎ ধোঁয়া উঠিয়ে দ্রুতগতিতে একটা মোটর সাইকেল বাংলো বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকে তাজওয়ারের বাগানে এসে তার টি-টেবিলে ধাক্কা দিলো। মোটর সাইকেলের ধাক্কা খেয়ে টেবিলটি ভেঙে কয়েক হাত দূরে গিয়ে ছিটকে পড়লো। আকস্মিক ঘটনায় তাজওয়ার চেয়ার থেকে মাটিতে উলটো হয়ে পড়লো। আর তার হাতটি তারই আধ-খাওয়া জ্বলন্ত সিগারেটের উপর পড়লো। হালকা আঁচ লাগায় তাজওয়ার চোখ-মুখ কুঁচকে অশ্রাব্য গালি দিয়ে পেছন ফিরে দেখলো মাথায় কালো হেলমেট, হাতে কালো গ্লাভস, পরনে কালো জ্যাকেট আর ট্রাউজার, পায়ে কালো বুটস পরে তার সামনে এক আগন্তুক দাঁড়িয়ে আছে। হেলমেট আর মোটা জ্যাকেটের কারণে মানুষটির চেহারা আর শারীরিক কাঠামো আন্দাজ করা যাচ্ছে না। তাই তাজওয়ার বুঝে উঠতে পারছে না, কে এই আগন্তুক? তাজওয়ার মাটি থেকে উঠে এদিক-ওদিক তাকাতেই খেয়াল করলো আগন্তুকটির হাতে একটা স্প্রে। তাজওয়ার তা দেখে দ্রুত পায়ে হেঁটে গেটের দিকে এগুতেই দেখলো তার প্রহরীরা সব মাটিতে পড়ে আছে। তাজওয়ার তা দেখে আগন্তুকটির দিকে তাকাতেই আগন্তুকটি তার হাতে থাকা স্প্রেটি মাটিতে ফেলে দিলো। এরপর মোটর সাইকেলের চাবি হাতে নিয়ে এক হাতে শূন্যে উঠিয়ে অন্য হাত দিয়ে তা ধরে তাজওয়ারের দিকে এগুতে লাগলো। তাজওয়ার ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“কে তুমি? কি চাও?”

আগন্তুকটি তাজওয়ারের মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো। তাজওয়ার বাঁকা হেসে বলল,
“ডাকাতি করতে এসেছিস?”

আগন্তুকটি সাথে সাথেই তার মুষ্টিবদ্ধ হাত তাজওয়ারের নাক বরাবর বসিয়ে দিলো। তাজওয়ার নাক ধরে কয়েক পা পিছিয়ে আবার অশ্রাব্য গালি দিয়ে বলল,
“কে তুই? তোর সাহস হলো কি করে আমার গায়ে হাত তোলার? তুই জানিস আমি কে?”

আগন্তুকটি তাজওয়ারের কলার ধরে তাকে নিজের দিকে টেনে আনলো। আর ইচ্ছেমতো বুকে-পেটে ঘুষি মারতে লাগলো। তাজওয়ার ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে পড়ে যেতেই আগন্তুকটি মাটিতে পড়ে থাকা চেয়ার তুলে তাজওয়ারের গায়ে ইচ্ছেমতো আঘাত করতে লাগলো। এবারও সে ক্ষান্ত হলো না৷ তার মোটরসাইকেলটির সাথে লাগানো একটা লোহার রড হাতে নিয়ে তাজওয়ারের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। তাজওয়ার হাতজোড় করে বলল,
“তোর কি ক্ষতি করেছি আমি? যা, ঘরে যা আছে, নিয়ে যা। তোকে আমি এক্ষুনি কয়েক লাখ টাকার চেক লিখে দিচ্ছি। তুই বল কতো টাকা লাগবে?”

আগন্তুকটি নিঃশব্দে হাসলো। তাজওয়ার তার হাসির শব্দ শুনলো না। অথচ তার শরীর হেলানো দেখেই বুঝলো হেলমেট পরা আগন্তুকটি দিব্যি তার উপর হাসছে। তাজওয়ারের রাগ উঠলো ভীষণ। তবুও সে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে রইলো। সে কি করবে বুঝে উঠার আগেই লোহার রোডটি দিয়ে অনবরত তার গায়ে আঘাত করতে লাগলো আগন্তুকটি। প্রায় কয়েক মিনিট আঘাত করার পর লোহার রডটি মাটিতে ফেলে দিলো সেই আগন্তুক। এদিকে তাজওয়ার নিভু নিভু দৃষ্টিতে এখনো সেই হেলমেট পরা আগন্তুকটির দিকে তাকিয়ে আছে। আগন্তুকটি তার মোটরসাইকেলের কাছে গিয়ে চাবিটা ঘুরিয়ে মোটর সাইকেল চালিয়ে তাজওয়ারের চারপাশে তিন-চার বার ঘুরে গেট দিয়ে বেরিয়ে গেলো। মোটরসাইকেলটা বের হতে দেখেই তাজওয়ার মাটিতে মাথা ফেলে স্বস্তির শ্বাস ছাড়লো।

(***)

মোটর সাইকেলটা শূণ্য রাস্তায় এসে থামলো। সেকেন্ড খানিক পর মোটর সাইকেল থেকে নামলো সেই আগন্তুক যে ঘন্টাখানেক আগে তাজওয়ার খানকে বেধড়ক পিটিয়েছিলো। সে একপাশে এসে একটা বোতল বের করে তার গ্লাভসের উপর ঢাললো। রক্ত বেয়ে পড়ছে সেই গ্লাভস বেয়ে। রড দিয়ে মেরে তাজওয়ারের শরীর রক্তাক্ত করে এসেছে সে। শান্তি লাগছে তার। বোতলটা দূরে ছুঁড়ে দিয়ে পরনের জ্যাকেটটা খুললো। জ্যাকেট খুলতেই ঘামে গায়ের সাথে লেপ্টে থাকা সাদা শার্টটি দৃশ্যমান হলো। এবার সে মোটর সাইকেলে উঠে বসলো। জ্যাকেটটি পেছনে আটকে হেলমেটের উপরের অংশটা খুলে দিলো। এবার তার চোখ দু’টি দৃশ্যমান হলো। সেই গভীর আর শান্ত চোখ। একটু আগে তার এমন ভয়ংকর আক্রমণ দেখে বোঝার উপায় ছিল না, তাজওয়ারের উপর হামলে পড়া মানুষটি আফিফ রাফাত।

আফিফ মোটর সাইকেলে চাবি ঘুরিয়ে সামনে আগালো। গতি যতো বাড়ছে, আফিফের দৃষ্টি ততো সরু হচ্ছে। অঅনেকক্ষণ পর গাড়ি এসে থামলো একটা গ্যারেজের সামনে। তার বন্ধুর মোটর সাইকেলের শো’রুম। আফিফ বন্ধুর হাতে চাবি ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“যতোদিন আমার কাজ শেষ হবে না, এই বাইকটা বের করিস না।”

“কি করবি তুই?”

“কাজ আছে।”

“পুলিশ কেস হবে না তো!”

“হতেও পারে।”

“কি বলিস এসব?”

“এবারের ন্যায়টা আমার পক্ষেই আসবে। তুই শুধু এইটুকু সাহায্য কর।”

আফিফ শূন্য দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে বলল,
“আপা, এবার তোমার মৃত্যুর শোধ আমি তুলবোই। আমি তোমাকে হারিয়েছি, দ্বিতীয় বার আর কাউকে হারাতে চাই না। আহির কিছু হয়ে গেলে, আমি শান্তি পেতাম না। জানি না কেন? হয়তো কোনো এক ঋতুতে সে আমার খেয়াল হয়ে ছিল তাই। বর্তমানে আমার জীবনে তার অস্তিত্ব থাকুক না থাকুক। অন্তত যেখানেই থাকুক, যার সাথেই থাকুক, ভালো থাকুক সে। আমি তাজওয়ারের ছায়াও তার আশেপাশে আসতে দেবো না।”

চলবে-

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে