উদাসীনী পর্ব-০৭

0
597

#উদাসীনী (৭)
#Ditipriya_Roy

উদাসীনীকে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে অনেক সুন্দর করে। নাদিয়া উদাসীকে আয়নার সামনে নিয়ে যায়। উদাসী মুখ তুলে নিজেকে দেখছে, নিজেই নিজেকে চিনতে পাচ্ছে না। কখনো এতো সুন্দর করে সাজেনি উদাসীনী। নিজেই নিজেকে বলছে, কেথায় ছিলাম আমি আর ভাগ্যে আমাকে কোথায় নিয়ে এলো। আঁখি জোড়া ছলছল করে উঠলো। নীলিমা রুমে ঢুকে উদাসীকে নিজের সামনে নিয়ে নেয়। উদাসীর আঁখি দুটোয় অশ্রু দেখে বলে, উদাসী তুমি কাঁদছ কেনো? বাবা মায়ের কথা মনে পড়ছে বুঝি?” নীলিমার দিকে দৃষ্টি রেখে বলে, মা আমার বাবা-মা বেঁচে নেই।
“কেঁদো না মা, আমি তো আছি। ক্ষনিকের পৃথিবীতে কে কখন চলে যাবে বলা যায় না। ” উদাসীকে বিছানায় বসিয়ে দেয়। নীলিমা বিস্মিত কন্ঠে বলে, তোমার নাকে দেখি নাকফুল নেই!

–আমার ছেলেটাও না কেমন যে, বিয়ে করেছে অথচ বউয়ের নাকে নাকফুল নেই। নাদিয়া টুপ করে এসে বলে, ভাইয়া আর ভাবিকে আবার বিয়ে দিয়ে দেও। কারণ আমরা তো জানি না ওদের বিয়ে কিভাবে হয়েছে। তোমার এক মাত্র ছেলে তোমার তো অনেক ইচ্ছে থাকতেই পারে। নীলিমার ঘারে হাত দিয়ে বলে, ও ফুফু রাজি হয়ে যাও অনেক মজা হবে।”

–কথাটা ফেলে দেওয়ার মতো না। ছোট একটা অনুষ্ঠান এরেন্জ্ঞ করায় যায়। কিন্তু সাহায্য করবে কে? কেনো ভাইয়া তো বেরিয়ে গেছে, বাবাও এখানে আছে। ফারহান ভাইয়ার ফ্রেন্ড রাসেল ভাইয়াকে ডেকে নেও।

–উদাসীর দুজনের কথা শুনে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। এখানে এসে কোথায় ফেঁসে গেলো। স্যার কে সে কি করে বিয়ে করবে? কথা গুলো ভাবতেই কেমন গা শিউরে উঠেছে। এমনিতেও নতুন জায়গা মানিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে।

–নীলিমা উদাসীকে খাবার দিয়ে গেছে আর ঘর থেকে
যেনো না বের হয়। চিন্তায় শেষ সত্যি সত্যি যদি বিয়ে দিয়ে দেয়। খাবার তো গলা দিয়ে নামছে না, শুধু পানি খেয়ে যাচ্ছে।

–নীলিমা আর নাদিয়া আজওয়াদ কে বলেছে ফারহানকে বিয়ে দিবে আবার। আজওয়াদ এই কথায় নারাজ। একটা মানুষের কয়বার বিয়ে হয়। নাদিয়া বলে, আব্বু তুমি বলো তো ওদের যে বিয়ে হয়েছে তুমি দেখেছো।

–না দেখি নাই। ” তাহলে কি করে তুমি এই কথা মানতে পাচ্ছো না। আমারা বলেছি মানে বিয়ে দিব। আর যদি এই কথা তুমি ভাইয়াকে বলছো, তোমার খবর আমি করবো। ” কি বলছিস নাদিয়া তুই। ” ঠিক বলছি,এখন অনেক কাজ বাকি আছে চলো আমার সাথে।

–ফারহান রাত ৮ টার সময় বাসায় আসে। দরজার বেল বাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু কেউ খুলছে না। বিরক্ত লাগছে তার। প্রায় ১৫ মিনিট পর দরজা খুলে দিলো রাসেল। রাসেলের সাথে তার কয়েকটা ফ্রেন্ড রয়েছে। বিস্মিত কন্ঠে বলে, তোরা এখানে কি করিস?
আমি তো তোদের ডাকিনি। রাসেল বলে,

–কি বলিস বন্ধু, তোর বাসায় কি আসতে পাবো না। তুই হয়তো আমাদের ভুলে গেছিস কিন্তু আমরা ভুলি নি। তোর এই কথা গুলোয় না রহস্য লুকিয়ে আছে আবার হুট করে আসা।” রাহুল কে সরিয়ে ভিতরে চলে যায়। সোফায় কাজি সাহেব কে দেখে চোখ বড় বড় করে ফেলে। ” আবার কয়েকটা কাজিন এসেছে। এতো খাবারের আয়োজন দেখে শুকনো ঢোক গিলে নেয়। ” নাদিয়া এসে বলে, ভাইয়া সারপ্রাইজ তোর জন্য। তোর কি ভাগ্যে বল, তোর দু’বার বিয়ে হবে। তাও আবার একটা মানুষের সাথে। ” বিস্মিত কন্ঠে বলে, কিসের বিয়ে?

–তোর বিয়ে আবার দিবো।” নাদিয়ার কথা শুনে পালাতে যায় ফারহান। পিছনে তার ফ্রেন্ড গুলো দাঁড়িয়ে আছে পালানোর রাস্তা বন্ধ । তাও জোড় করে পালাতে চাইলে তার ফ্রেন্ড গুলো আটকিয়ে দেয়।
তারপর রাগান্বিত কন্ঠে বলে, মা এসব কি হচ্ছে একটা মানুষের কয় বার বিয়ে হয় বলোতো।

–মায়ের উপর দিয়ে কথা বলবি না। রেডি হয়ে আয় তারাতাড়ি সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর আমি যা করতেছি বাধা দিস না। তোর মায়ের একটা স্বপ্ন আছে তোর বিয়ে নিয়ে। চুপ করে তো বিয়ে করে নিয়েছিস।
আমার ইচ্ছে টা পূরণ কর বাবা। যা রেডি হয়ে আয়।

–রাসেল সহ তার ফ্রেন্ড গুলো জোড় করে নিয়ে যায়।
এদিকে উদাসী ভারি শাড়ি পরে আছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। তার উপর গহনা পরেছে, এগুলোয় সে মোটেও অভস্ত্য না। নাদিয়ে রুমে এসে উদাসীকে বড় ঘোমটা নাক অব্দি টেনে দেয়। তারপর নিয়ে যায়। উদাসী মুখ ফুটে বলতেও পাচ্ছে না কিছু।

–ডাইনিং রুমে কে কে আছে কারো মুখ দেখতেও পাচ্ছে না উদাসী। ফারহানের সাথে কথা বলার সুযোগ নেই। সোফায় ফারহানকে বসিয়ে চারিদিকে ঘিরে আসে তার ফ্রেন্ড। উদাসীকে সোফায় বসিয়ে দিলো।
কাজী সাহেব তার কাজ শুরু করে। একটুপর উদাসী আর ফারহানের বিয়ে সম্পূর্ণ হয়ে যায়। তবে ফারহান আর উদাসীকে জোড় করেই রেজিস্ট্রেশনে সাক্ষর করিয়েছে।

–ফারহানের ঘরে উদাসীকে রেখে আসে। ” ফারহান কে নিয়ে তার ফ্রেন্ড ছাদে গেছে। ” রাসেল বলে, সালা তুই চুপিচুপি বিয়ে করে নিলি আমাদের বললি না। তুই যে এতো কিপটা হয়েছিস, আগে তো এমন ছিলি না।
ফারহান রাসেলকে বলে,তোর কথা আমার সহ্য হচ্ছে না। তুই আমার ফ্রেন্ড না শত্রু বুঝলি।” কি বলিস নতুন করে বিয়ে দিয়ে দিলাম এখন নাকি শত্রু। সালা বিয়ে হলে বুঝি সবাই পাল্টে যায়।

–ফারহান রাসেলের দিকে রক্তিম চোখে তাকায়। তারপর বলে, তুই জানিস উদাসী আমার স্টুডেন্ট। ” রাসেল বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, স্টুডেন্ট মানে, একটু ক্লিয়ার করে বল। ফারহান সবাই সব কিছুই খুলে বলে। রাসেল এবার হেঁসে দেয় আর বলে, বাদ
দে যা কিছু হয়েছে। তবে মেয়েটাকে বিয়ে করে ভুল করিস এটাই বলবো। যেমন করেই হোক না কেনো এখন তো তোর বউ। সত্যি মেয়েটার জন্য আমার খুব খারাপ লাগতেছে রে।

–মেয়েটা হুটহাট করে সব কিছু মানিয়ে নিতে পারবে না রে। ” হুম তোকেই সাহায্য করতে হবে। মেয়েটা তোর জন্য অপেক্ষা করছে চল তোকে রেখে আসি।

–ঘর টা ফুল দিয়ে অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। উদাসী সেই ফুলের মাঝখানেই বসে আছে। ঘরে ঢুকে ফারহান দরজা বন্ধ করে দেয়। উদাসী গুটিসুটি হয়ে বসে আছে, তার বুক ধুকধুক করছে ৷
ফারহান গিয়ে বিছনায় বসে। তারপর বলে, তোমার বুঝি অস্বস্তি হচ্ছে এগুলো পরে। ” উদাসী ঘুমটা খুলে ফারহানের দিকে তাকায়।

–ফারহান মুগ্ধ হয়ে উদাসীর দিকে তাকিয়ে থাকে। আসতে আসতে যেনো তার নেশা লেগে যাচ্ছে।” আকাশের চাঁদ যেনো তার সামনে বসে আছে। ফারহানের এই দৃষ্টি যেনো এখনে উদাসীকে গ্রাস করে ফেলবে। ” ফারহানের এমন চাহনি দেখে উদাসী মাথা নত করে নেয়। তার যে ভিষণ লজ্জা লাগছে আবার গা কাঁপছে।

–ফারহান নিজেকে কনট্রোল করে উদাসীকে বলে, সরি উদাসী আমার জন্য তোমাকে বিয়ে টা করতে হলো। জানি তুমি এখনো এসব কিছু মেনে নিতে পাচ্ছো না। তবে এই বিয়েটা যখন হয়ে গেছে তখন মেনে নিতেই হবে। তোমার কি আপত্তি আছে?

–উদাসী প্রত্যুত্তরে বলে,” বিয়ে তো একাবারেই হয়, যেহেতু হয়ে গেছে আপনি তো আমার স্বামী। বিয়েটা তো আর অস্বীকার করতে পারি না। “তোমাকে আমি কথা দিচ্ছি,

–ভালোবাসা দিয়ে তোমার সব কষ্ট আমি দূর করে দিবো। নতুম ভাবে রাঙিয়ে দিবো তোমার জীবন। আমায় কি তোমার মনে দেবে একটু ঠাই। তোমার জীবনের সঙ্গে আমার জীবন বাঁধতে চাই জন্মজন্মান্তর।” কথাগুলো বলেই হাত বাড়িয়ে দেয় ফারহান। উদাসী কিছুক্ষণ ফারহানের দিকে তাকিয়ে হাত বাড়ি দেয়। ফারহানের ঠোঁটে হাসির ঝিলিক।

–উদাসী যাও ফ্রেশ হয়ে নেও।” উদাসী বিছানা থেকে নেমে যায়।” ফারহান গোটা আলমারি খুঁজলো সব শাড়ি। তাই শাড়ি বের করে দেয়। ফরাহান নিজের কাপড় নিয়ে বেরিয়ে যায়।

–অনেকক্ষণ পর ঘরে এসে দেখে এখনো উদাসী ওয়াশ রুমে। ফারহান গিয়ে বলে, উদাসী তুমি ঠিক আছো।

–হ্যাঁ স্যার।

–বের হচ্ছো না কেনো ?

–আমি শাড়ি পড়তে পারি না।” আচ্ছা আমি নাদিয়া কে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ” নাদিয়া এসে শাড়ি পড়িয়ে দেয়। ফারহান খাবার নিয়ে চলে আসে। নাদিয়া বলে, বাহ! বউয়ের প্রতি এতো ভালোবাসা।

–তোর কাজ শেষ এখন যেতে পারিস। ” আমি আর তোর বউকে শাড়ি পড়াবো না। এখন থেকে তুই শাড়িয়ে পড়ে দিবি।” হ্যাঁ যেতে পারিস, আমি নিজে আমার বউকে শাড়ি পড়িয়ে দিবো। নাদিয়া ভেঙচি কেটে চলে যায়।

–ফারহান উদাসীকে বিছানায় বসিয়ে দেয়। খাবারের প্লেট নিয়ে উদাসীর সামনে বসে। নিজের হাতে খাইয়ে দেয়। উদাসী ফারহানের এমন যত্ন দেখে কেঁদে দেয়।
” এই পাগলি কাঁদছ কেনো? কাঁদবে না তুমি, তোমার চোখে পানি দেখতে পারি না যে। বুকে হাত রেখে বলে, এই জায়গায় কষ্ট হয়। খেয়ে নেও ওষুধ খেতে হবে তো। ” খাওয়া শেষ হলে প্লেট নিয়ে বেড়িয়ে যায়।” উদাসী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল গুলো বেনি করে নেয়। তারপর নাকের ফুল টা দেখছে। বেশ মানিয়েছে তাকে, তবে ব্যাথা করছে। নাকটা লাল হয়ে গেছে ৷
ফারহান ঢুকতেই আয়নার সামনে থেকে সরে গিয়ে বিছানার ফুলো গুলো তুলতে থাকে। ফুল গুলো তোলা শেষ হলে পিছন ঘুরতেই ফারহানের সাথে ধাক্কা খায়। টুপ করে বিছানায় বসে পরে। ফুল গুলো উদাসীর গায়ে পরে যায়।” উদাসী বলে, কি করলেন সব ফুল পরে গেলো তো।” ফারহান প্রত্যুত্তরে কিছু না বলে, বিছানায় বসে দুই হাত দিয়ে উদাসীর মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। তারপর নিজের ওষ্ঠদ্বয় দিয়ে উদাসীর নাকফুলে ছুইয়ে দেয়। উদাসীর গা শিউরে উঠে, নিঃশ্বাস নিতে পাচ্ছে না। এই প্রথম বার কোনো পুরুষের স্পর্শ পেয়েছে। ফারহান উদাসীকে ছেড়ে দেয়। সুয়ে পরো, আমি সোফায় সুয়ে পড়ছি। ” আপনি সোফায় ঘুমাবেন, আপনার তো কষ্ট হবে। তার উপর
শীত কাল ঠান্ডা লেগে যাবে। আপনি বিছানায় সুয়ে পড়েন। ” তাই বুঝি, আমার বউয়ের আমার উপর দরদ আছে তাহলে। ” বউ ‘ কথা টা শুনা মাত্রই মুখটা দুই হাত দিয়ে ঢেকে নেয়। ” ইশ রে আমার বউ লজ্জা পেয়েছে৷ দেখি আমার বউয়ের লজ্জা রাঙা মুখটা।
” ধুর, আমি ঘুমাবো সরেন। কথাটা বলেই বিছানায় উঠে সুয়ে পরে। ” ফারহান মুচকি হেসে উদাসীর পাশে সুয়ে পরে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে