#উদাসীনী (৬)
লেখনীতে- Ditipriya Roy
রেললাইনের ধারে লাশ পাওয়া গেছে, মুহুর্তেই ছড়িয়ে পরে কথা। লোকজন জড়ো হতে শুরু করে। এই কথা আজওয়াদ চৌধুরীর কর্ণকুহরে গেছে। পুলিশ ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে লাশ গুলো আমানের সঙ্গী গুলোর ছিলো। কিন্তু এই লাশের মধ্যে আমান কে খুজে পাওয়া যায়নি। আজওয়াদ ফারহান কে বলতেই ফারহান থ মেরে যায়। ফারহানের মনে অনেক প্রশ্ন ঘুর পাক খাচ্ছে।” কি বলছো মামা আমান ছিলো না, অথচ তার সঙ্গী গুলোর লাশ?” মাথায় হাত দিয়ে পিছন দিক ঘুরতেই নীলিমা কে দেখতে পায়। তারাতাড়ি ফোন টা কেটে দিয়ে নীলিমার দিকে দৃষ্টিপাত করে।
— নীলিমা রাগান্বিত কন্ঠে বলে, কি বললি তুই ফারহান।” মা তুমি এখানে? হ্যাঁ, না আসলে তো শুনতেই পেতাম না। ” আমার কথাটা শোনো ভুল বোঝো না। কি কথা শুনবো তোর?যে কারণে তোকে শিক্ষকতার পেশায় ঢুকিয়ে দিলাম দূরে পাঠিয়ে দিলাম, তুই সেই, আমি এটা আশা করি নি। ভেবে ছিলাম তুই গ্রামেই ভালো থাকবি। কিন্তু না আমার ভাবনা টা ভুল ছিলো। তোর মা কে কি কখনই শান্তিতে থাকতে দিবি না?
— মা তুমি আমায় ভুল বুঝছো। একটা বার আমার কথাটা শোনো। দেখো আমি এখন খারাপ একটা পরিস্থিতিতে আছি। ” চুপ কর তুই, নিজের কানেই তো শুনলাম। তুই কোনো না কোনো ঝামেলায় জড়িয়েছিস। এতো কিছু হওয়ার পর কি করে তুই পারলি ফারহান।
— আমান নীলিমার হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে দেয় ।
মা কান্না করো না, আমি তো তোমার সামনেই আছি। তোমাকে আমি কথা দিয়েছি কিন্তু পরিস্থিতি টা এমন, না পিছাতে পারছি না এগোতে পারছি। আমি তোমাকে পরে সবটা ক্লিয়ার করে দিবো। টেনশন করো না তোমার ছেলের কিচ্ছু হবে না। আমি একটু বাইরে যাচ্ছি বাসায় আসলে ফোন করে জানিয়ে দিব।
— কোথায় যাবি তুই রাত ১০টা পার হয়ে গেছে।” মা আমি কি ছোট আছি তুমি জানো তোমার ছেলেকে তারপরেও। প্লিজ মা আমাকে বাধা দিও না। আসছি আমি, আর দরজা খুলে দেওয়ার সময় চেক করে নিবে হুটহাট করে খুলে দিও না। কথা গুলো বলেই চলে যায় আমান।
— ফারহান হাসপাতালে এসেই তন্ময়ের সাথে কথা বলে নেয়। তারপর কেবিনে চলে যায়। উদাসীনী বেডে সুয়ে আছে, দেয়ালের দিকে দৃষ্টি তার।চোখ দুটো এখনো ছলছল করছে। কেবিনে ঢুকে উদাসীর পাশে বসে। চোখের কোণে অশ্রু জমিয়ে আছে সেগুলো মুছে দেয়। উদাসী উঠে বসার চেষ্টা করে, ফারহান ধরে বসিয়ে দেয়।” স্যার আমি এখানে থাকতে চাই না। আমার এখানে দম বন্ধ হয়ে আসছে,বাড়ি যাবো আমি। নিয়ে চলুন না আমায়।
— তুমি আগে সুস্থ হয়ে উঠো তারপর বাড়ি নিয়ে যাবো। “আমি ঠিক আছি স্যার, দেখুন আমি একদম ঠিক আছি। বাড়িতে আমার বাবা অপেক্ষা করছে আমার জন্য। নিয়ে চলুন না আমায়। ” উদাসী একটু শান্ত হও,আমার দিকে তাকাও। আমরা যাবো তো বাড়ি, তোমাকে আগে ঠিক হতে হবে। তুমি এখন অসুস্থ, এখন তোমাকে ঘুমাতে হবে। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেই তুমি ঘুমিয়ে পরো। উদাসী কথা মতো বেডে সুয়ে পরে, ফারহান হাত বুলিয়ে দেয়। উদাসীনী ঘুমিয়ে পরলে ফারহান হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যায়।
— তিন দিন হয়ে গেছে ফারহানের কোনো খোঁজ নেই৷ নীলিমা প্রচুর কান্না কাটি করছে। আজওয়াদ কেও ফোন করেছিলো তিনিও বলেছে ফারহান এখানে আসি নি। কলেজেও খবর নিয়েছে সেখানেও যায়নি। প্রিন্সিপাল কে ফারহান ফোন করে বলেছে সমস্যার মধ্যে আছে কিছু দিন কলেজ যেতে পারবে না। ” আজওয়াদের কথা শুনে নীলিমার টেনশন বেরে যায়। আজওয়াদ কে ঢাকায় আসতে বলে।
— দুপুর বেলা কলিং বেল বাজতেই দরজা খুলে দেয় নীলিমা। সামনে দাঁড়িয়ে আছে ফারহান, হন্তদন্ত হয়ে ভিতরে ঢোকে। ” কোথায় গিয়েছিলিস তুই, তোকে আমি কত বার কল করেছি ধরিস নি কেনো? সব জায়গায় ফোন করেছি কোথাও তোর খোঁজ পাইনি। ” মা আমি ঠিক আছি, ফ্রেশ হয়ে আসছি তুমি খাবার রেডি করো খিদে পেয়েছে। ” একটুপর এসে খাবার খেয়ে নেয়। ” রুমে গিয়ে গাড়ির চাবি আর ফোন হাতে নিলে, নীলিমা বলে,
— আবার কোথায় যাচ্ছিস? ” আমার জরুরি কাজ আছে মা। নীলিমা অভিমান নিয়ে বলে, তুই আগের ফারহান হয়ে গেছিস। ” নীলিমার কথায় কর্ণপাত না করে চলে যায় ফারহান। হাসপাতালে এসে গাড়ি থেকে নেমে সোজা ভিতরে চলে যায়। ” নাদিয়া তার বান্ধবী সহ এসেছিলো হাতপাতালে একটা কাজে। ফারহান কে দেখে পিছু নেয় নাদিয়া।
— তন্ময়ের সাথে কথা বলছে, আগের থেকে এখন সুস্থ আছে উদাসী। অনেক বার নার্সকে ফারহানের কথা জিজ্ঞেস করেছে। তাই দ্রুত কেবিনে চলে যায়।
” ফারহান কে দেখে উদাসীর ঠোটের কোনে হাসি ফুটে উঠে।” স্যার আপনি এসেছেন? হ্যাঁ, এসেছি। কেমন আছো এখন? ” ভালো আছি স্যার৷, আমি এখানে আর থাকতে চাই না স্যার।
— আর দুটো দিন এখানে থাকো তারপর না হয় নিয়ে যাবো। চলো তোমাকে বাইরে হাঁটতে নিয়ে যাই। ”
— এদিকে নাদিয়া খুঁজেই যাচ্ছে কোথায় গেলো ফারহান? কিন্তু কোন কেবিনে ঢুকেছে কি করে জানবে। আর মানুষ কি ভাববে।
— উদাসী চারপাশ টা দেখছে, কত অসুস্থ লোক। সামনেই একটা বাচ্চা কে দেখে এগিয়ে যায়। বাচ্চা দেখতে কিউট তার মন কেড়ে নিয়েছে। কোলে তো নিতেই হবে। যেই ভাবা সেই কাজ, মহিলাটাকে বলে কোলে নিয়ে নেয়। ৩ তিনের বাচ্চা, চোখ বন্ধ করে আছে, ছোট ছোট হাত। বাচ্চাটার হাতে তার ওষ্ঠদ্বয় ছুঁইয়ে দেয়। ” ফারহান উদাসীকে দেখছে, হাসি খুশি থাকলে কত সুন্দর দেখায়। ” উদাসী বাচ্চা টাকে ফারহানের কোলে দিয়ে দেয়। ” মহিলাটির কিছু কাজ আছে বলে, উদাসীকে দেখতে বলে।
— নাদিয়া খুঁজতে খুঁজতে হাঁপিয়ে গেছে। মনে মনে বলে, এই বেডা ফারহান দেখি হাওয়া হয়ে গলো। ডান দিকে মুখটা ঘুরতেই দেখতে পায়। টুপ করে দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে পরে।” ফারহানের কোলে বাচ্চা, সাথে একটা মেয়ে, আবার হেসে কথা বলছে।
নাদিয়া সাথে সাথে নীলিমাকে ফোন করে।”
–আজওয়াদ এইমাত্র বাসায় ঢুকেছে। সোফায় বসে আছে ভাই বোন মিলে। ফোনটা টেবিলে রাখা ছিলো।
পরক্ষণেই বেজে উঠে, ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে নাদিয়া নাম টা। রিসিভ করে নাদিয়ার কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। নীলিমার রাগে গা গিজগিজ করছে। একমুহূর্ত দেড়ি না করে আজওয়াদ কে নিয়ে বেরিয়ে পরে। আজওয়াদ অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে
কিন্তু নীলিমা কিছুই বলছে না। শুধু একটা কথাই বলছে হাসপাতাল যাবে।
— এখনো উদাসী আর ফারহান সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে ৷ মহিলাটি এখনো হাসে নি, তাই বাচ্চা টাকে নিয়ে হাঁটা হাঁটি করছে। ” হাসপাতালে এসেই নাদিয়াকে দেখতে পায় নীলিমাকে।” নাদিয়া নিয়ে যায় ফারহানের কাছে।
— ফারহান পিছন ঘুরতেই দেখতে পায় নীলিমাকে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে প্রচুর রেগে আছে,ফারহান শুকনো ঢোক গিলে নেয়।” ফারহানের কাছে এসেই বলতে শুরু করে,
— তুই যে আমার ছেলে ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছে। তুই লুকিয়ে বিয়ে করেছিস আবার বাচ্চাও হয়েছে,একটা বারো কি তোর মায়ের কথাটা মনে পড়লো না। তোর কি মনে হয় তোর মা এতোটাই খারাপ নিজের ছেলের ইচ্ছে কে প্রাধান্য দিবে না। তোকে আমি কি শিক্ষা দিলাম বলতো। আমাকে বলে এসেছিস জরুরি কাজ আছে, এই তোর কাজ। একবার তো বলতে পারতিস তাই না।
— উদাসী আর আজওয়াদ নীলিমা কে দেখছে, কি বলছে এসব। কাউকেই কথা বলতে দিচ্ছে না। ফারহান মায়ের কথা শুনে অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেছে। ” মা তুমি এসব কি বলছো?
–দেখ ফারহান আমার বাড়ির বউমা তাই ও আমাদের সাথেই থাকবে। কেনো দূরে রেখেছিস, তোর মা কিন্তু অভিমান করেছে। আমার এতো সুন্দর বউমা আবার নাতনি ও হয়েছে, আমি এতো খুশি হয়েছি তোকে কি বলবো। বউমা দেও আমার নাতনি কে আমার কোলে দেও৷” নীলিমা নিতে গেলে উদাসী সরে যায়।
— উদাসীর এমন ব্যবহার দেখে, নীলিমা ফারহানের দিকে তাকায়। তখনি মহিলাটি এসে উদাসীর কোল থেকে বাচ্চাটিকে নিয়ে নেয়। মহিলাটি চলে যেতে ধরলেই নীলিমা বলে, একি আমার নাতনি কে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন? মহিলাটি হেসে উওর দেয়,
— এটা আমার মেয়ে, আপনার বউ আর ছেলের সন্তান নয়। কথা টা বলেই চলে যায়। নীলিমা ফারহানের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায় ৷ তারপর হেসে আবার বলে, যাই হোক মিস্টেক হয়ে গেছে। আমার বউ তো আছে, আমাদের বংশধর একদিন আসবে। ” উদাসী কিছুই বুঝতে পারছে না এসব কি হচ্ছে, না কথা বলতে পাচ্ছে।
— এই নাদিয়া চল তোর ভাবিকে বাড়ি নিয়ে যাবো। কথাটা বলেই উদাসীর হাত ধরে নিয়ে যায় দুজনে।
আজওয়াদ আর ফারহান দুজন দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে।” আমার বোনটা যে কোন জাতের কিছুই বুঝি না। ” মামা যা হচ্ছে হতে দেও। মাকে কিছু বলিও না, না হলে দাঙ্গা বাধিয়ে দিবে। আমার অনেক কাজ বাকি আছে এখনো। পরে না হয় মাকে বুঝিয়ে বলবো।
— উদাসীনী কে বাসায় নিয়ে এসেছে। ফারহানের সাথে কথাও বলতে দিচ্ছে না। সোজা ফারহানের রুমে নিয়ে গেছে। নীলিমার জন্য মাথা নত করে আছে, তার কেমন কেমন লাগছে। ” বউমা এটা আমার ছেলের রুম, এখানেই আজ থেকে থাকবে। তোমাকে তো ফ্রেশ হতে হবে। তুমি এই বাড়ির বউ তাই শাড়ি পড়বে, আমি শাড়ি নিয়ে আসি।
— এই ফাঁকে উদাসী ফারহানের সামনে গিয়ে বলে,
স্যার এসব কি হচ্ছে, আমি আপনার বউ হলাম কি করে। ” উদাসী মা যা করছে করতে দেও। মা তো গ্রামের কথা জানে না তাই এমন করছে। আমার কিছু কাজ আছে পরে না হয় মাকে সব কিছু ক্লিয়ার করে দিবো। আর তোমাকেও বলবো, মাকে যে কথা দিয়েছি যে..
— কথাটা বলার আগেই শাড়ি নিয়ে চলে আসে। দুজনে দুই দিকে চলে যায়। ” কি রে তুই এখনো দাঁড়িয়ে আছিস ফ্রেশ হয়ে নে আমি তোর বউ মানে আচ্ছা তোর বউয়ের নাম টাই তো জানা হলো না। ” মা তোমার নাম কি? উদাসীনী আন্টি। ” কি বলছো মা, আমাকে তুমি মা বলতে পারো।আমি তোমার শাশুড়ী হই বুঝছো। ” আমি উদাসীকে নাদিয়ার রুমে নিয়ে যাচ্ছি। ” ফারহান মাথায় হাত দিয়ে দুজনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
#চলবে