উদাসীনী পর্ব-০১

0
917

#উদাসীনী
সূচনা_পর্ব
লেখনীতে-Ditipriya Roy

“নিজের মায়ে’র কু’কর্মের জন্য ভুগতে হচ্ছে আমার প্রতি”বন্ধী বাবা আর আমাকে। ”

–পর-পুরুষের সাথে এক ঘরে অন্ত”রঙ্গ অবস্থায় দেখে নেয় আমার বাবা। এই দৃশ্য দেখে বাক’রুদ্ধ হয়ে যায়!
গ্রামের মানুষ- জন আমার মায়ের সাথে সেই লোকটা’কে প্রায় দেখে। কিন্তু এই কথা গ্রামে’র লোক বললে আমার বাবা বি’শ্বা’স করতো না। ”

–বাবা উত্তে’জনা’র বসে লো’হা’র রড দিয়ে মাকে মারতে থাকে। লোকটি ভয়ে পালিয়ে যায়। বাড়ির আশে পাশের লোক জন ভীর করে ফেলে। ”

–তখন আমি ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ি। কিছুটা হলেও বোঝা’র মতো ক্ষমতা ছিলো আমার। মায়ে’র প্রতি ঘ্রিনা জন্ম নেয়, রাগে মস্তিষ্কে রি রি করছে। মুখ দিয়ে কোনো বাক্য উচ্চারণ করে পাচ্ছি না।”

–গ্রামে’র মানুষ আমাদের সম্পর্কে খারাপ ম’ন্ত’ব্য করতে শুরু করলো। ” এতে বাবার এতো দিনের মান”সম্মান মাটির সাথে মিশে যায়। ”

–আমার মা বাবা’র পায়ে ধরে ক্ষমা চায়, আর কোনো দিন পর”পুরুষের দিকে তাকাবে না। যা করেছে সব ভুল করেছে। ”

–বাবা মায়ে’র কথায় কোনো প্রতি”ক্রিয়া না করে মাকে মারতে থাকে।” লো’হা’র রডে’র মার সহ্য করতে না পেরে মাটির সাথে লুটিয়ে পড়ে।”

–উদাসীনী’র কর্ণকুহরে মায়ে’র আত্ম চিৎকার যেনো ভিতর টাকে চুর”মার করে দিচ্ছে। ”

–বাবা মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।কাট কাট গলায় বলে দিয়েছে, এই মুখ যেনো আর কোনো দিন বাবা’র সামনে নিয়ে না আসে। এই বাড়ির চৌকাঠে চেনো পা না দেয়। লোক-জন মাকে যা নয় তাই বলে অপমান করে। ”

–এতো কিছু সহ্য করতে না পেরে রাতে’র অন্ধ’কারে কোথায় যেনো চলে যায় মা।”

–বাবা’কে রেখে মাকে খোঁজা’র চেষ্টা করলাম কিন্তু পেলাম না। বাড়ি’তে এসে বাবার ঘরে গিয়ে দেখি, বাবা মাথা নত করে আছে। ”

–বাবা আমার উপ’স্থিত টের পেয়ে মাথা তুলে আমার মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে বলে, উদাসীনী।”

–বাবার এমন বিষাদে ভরা কন্ঠ শুনে, এগিয়ে যাই। বাবার আঁখি জোড়া’য় অশ্রু টলটল করছে। বাবার দুই হাত ধরে মাথা ঠে’কি’য়ে কাঁদতে থাকি। বাবা
মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, কাঁদিস না মা। আজকে’র পর থেকে তোর মা মারা গেছে। এই দুনিয়া’য় শুধু তুই আর আমি।” এই ভাবে কত”ক্ষন বাবা কোলে মুখ গুঁজে ছিলাম জানা নেই।”

–বাবাকে বিছানায় সুয়ে দিয়ে, নিজের ঘরে গেলাম। ভিষণ দুর্বল লাগছে শরীর, না ঘুমালেই নয়। কিন্তু ঘুম চোখে ধরা দিচ্ছে না,বি’ষন্ন’তায় মন ছুঁইয়ে গেছে। সারাদিনের ঘটনা বারবার চোখে ভেসে উঠছে। চোখ দিয়ে এখনো অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি জানা নেই।”

–সকাল সকাল কারো চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙে যায়। এখনো বি’ষ’ন্ন মন ছন্ন”ছাড়া। বিছানা থেকে নেমে গুটি গুটি পায়ে বাইরে বেড়িয়ে এলাম। পাশের বাসার শফিক চাচা বললো, তোর মায়ের লাশ পাওয়া গেছে রে রেল’লাইনের ধারে। তোকে খবরটা দিতে এলাম,তোর তো মা তোর একটু হলেও মায়া আছে।

–পাশের বাসা’র চাচি বললো,এরকম মহিলা’র এই ভাবে মৃত্যু হওয়া স্বাভাবিক। নোং’রা মনের মহিলা এই সমাজে না থাকাই ভালো।”

–মায়ের মৃত্যুর কথা কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই নিজের মধ্যেই যেনো আমি নেই। হ্যাঁ,মায়ের প্রতি ঘ্রিনা আমার আছে তাই বলে মৃত্যু এটা তো চাই নি।”

–এক মুহুর্ত দেড়ি না করে রওনা দেয় রেলস্টেশনের দিকে।গ্রামে রাস্তা পেরিয়ে জমির মাঝ দিয়ে চিকন রাস্তা তারপর বড় রাস্তায় উঠতে হবে, কিছু দূর যেতেই রেলস্টেশন। রেলস্টেশনে গিয়ে দেখি অনেক লোক জমা হয়ে আছে।”

–লোক জনকে ধাক্কা দিয়ে ভীরের ভিতরে ঠুকে যাই। মায়ের ছন্নছাড়া রক্তমাখা দেহ দেখে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি এর পর কি হয়েছে কিছুই মনে নেই। ”

–চোখ খুলে নিজের বিছানা নিজের ঘর দেখে তারাতাড়ি বিছানা থেকে নেমে ঘরের বাইরে বেড়িয়ে আসে।” বারান্দায় বাবাকে বসে থাকতে দেখে বললাম,

–বাবা মায়ের দেহ কোথায়? ” বাবা র’ক্তি’ম চোখে তাকিয়ে বলে, ওই নোংরা মহিলা তোর মা নয়। আর ওই নোংরা মহিলার কথা যেনো এই বাড়িতে না শুনি।”

— বুঝতে পেরেছি, বাবা’কে বলে কোনো লাভ হবে না। তাই বাড়ির বাইরে এসে শফিক চাচার পাশে দাঁড়ালাম।আমার উপস্থিত টের পেয়ে বলে, তুই উঠেছিস তোর মা কে দাফন করে দিয়েছি রে মা। ”

–চোখ বয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। দৌড়ে গিয়ে নিজের ঘরে বিছানা’য় সুয়ে পড়ি। সকাল থেকে কিচ্ছু খাওয়া হয়নি, শরীর বেশ দুর্বল।” বাবার কথা চিন্তা করে, রান্না ঘরে গেলাম।রান্না শেষ করে খাবার নিয়ে বাবার ঘরে গেলাম।” বাবা খাবার খেয়ে নেও তোমাকে ওষুধ খেতে হবে।”

–খাবার কি গলা দিয়ে নামবে বল। জীবনে বুঝি অনেক ভুল করেছিলাম তার শাস্তি পাচ্ছি। আল্লাহ আমাকে তুলে নিলো না কেনো এসব দেখার আগে।”

–বাবা এমন করে বলো না। দোষ তো মা করেছে তার ভোগান্তি আমরা পাচ্ছি। কিন্তু আমাদের তো বেঁচে থাকতে হবে। বাবা তুমি খেয়ে নেও, হা করো।”চোখের
অশ্রু মুছে বাবাকে খাইয়ে দিয়ে বিছানায় সুয়ে দিলাম।

–এভাবেই চললো কয়েক মাস। বাবার প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়ে বাবা মেয়ে চলছিলাম।কিন্তু এভাবে তো আর জীবন চলে না। তাই ভাবলাম টিউশনি করাবো।কিন্তু কেউ তাদের বাচ্চাকে আমার কাছে পড়াবে না বলে না করে দেয়।” ভেঙে পড়েছিলাম, নিজের পড়ালেখার খরচ চালাতে পাচ্ছিলাম না। কলেজের বান্ধবী বলেছিলো ওদের পাড়ায় একটা বাচ্চা কে টেউশনি করারনোর জন্য তাই গিয়েছিলাম। দুই দিন পড়ার পর
সেই মহিলা কি ভাবে এসব বিষয়ে জেনে যায়। তিনি মুখের উপর বলে দেয়, আমার বাচ্চাকে আর পড়াতে আসবি না। শুধু তাই নয় অনেক বাজে কথাও শুনিয়ে দেয়।”

–কথা গুলো আমি হজম করতে পারলাম না। কেঁদে দেই সেখানেই, বেড়িয়ে আসি সেই বাড়ি থেকে। রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আনমনে। পিছন থেকে বড় কালো গাড়ি এসে পাশে দাঁড়ায়।”

–আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেও সামলে নেই।” গাড়ির কাচের জানালা খুলে একটা সুদর্শন পুরুষ মুখশ্রী বের করে বলে,

–এই মেয়ে চৌধুরী বাড়ি কোনটা তুমি কি বলতে পারবে।”আমি শুঁকনো ঢোক গিলে জবাব দিলাম, হ্যাঁ পারবো। ” ছেলেটি আমার শঙ্কিত চেহারা দেখে বলে,

–তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছো? এই ভাবে সাপের মতো আঁকাবাকা হয়ে দাড়িয়ে আছো কেনো?

–আমি মাথা নত করে জবাব দিলাম,” না মানে এমনি।
আপনি এই দিক দিয়ে বা দিকে যাবেন তার পর ডান দিকে গেলেই চৌধুরী বাড়ি পেয়ে যাবেন।”

— থ্যাঙ্কউ।

–হটাৎ করে একটা ছোট ছেলে’র চিৎকার শুনতে পাই। আমি দৌড়ে যাই ছেলেটার কাছে। ছেলেটা হাত দিয়ে দেখিয়ে দেয়, পু’কু’রের দিকে। পু’কু’রের মাঝখানে চোখ যেতেই দেখি বাচ্চা টা পুকুরের মাঝখানে চলে গেছে। এখনে না বাঁচালে অ’ঘটন ঘটে যাবে। তাই ওড়না টা কোমরে গুঁজে লাফ দিলাম পুকুরে। ছেলেটা’কে পুকুর থেকে তুলে নিয়ে আসলাম রাস্তায়। রীতিমতো অনেক লোক জড়ো হয়ে গেছে। সাথে সেই কালো গাড়ির ছেলেটিও এসে দাঁড়ায়। তিনি এগিয়ে এসে বলে,

–আপনারা একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ান। এখনি পেটের পানি বের করতে হবে। তারপর তিনি পেটের উপর চাপ দিলেন।ছেলেটির মুখ দিয়ে পানি বেড়িয়ে আসছে
গলগল করে। একটুপর ছেলেটির জ্ঞান ফিরে আসে। ছেলেটির মা এসে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।
কিন্তু এই মহিলায় সেই মহিলা যার বাচ্চা’কে টিউশনি পড়াতে গিয়ে অপমানিত হয়েছি একটু আগে। মহিলাটি বলে,

–বাবা তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিব তা আমার জানা নেই। তুমি হাজার বছর বেঁচে থাকো বাবা। “আন্টি আমাকে এসব না বলে এই মেয়েটিকে বলুন। আপনার ছেলেকে এই মেয়ে বাঁচিয়েছে।”

–উদাসীনী তুমি আমার ছেলেকে বাঁচিয়েছো। আর তোমাকে কত কথা শুনিয়ে দিলাম। সত্যি আমার খুব বড় ভুল হয়েগেছে,আমাকে ক্ষমা করে দেও। তুমি আমার ছেলেকে আবার টিউশনি পড়াতে আসিও।

–কি বলছেন চাচি, আমি আপনার থেকে ছোট। আপনি বুঝতে পেরেছেন এটাই অনেক। কিন্তু আমি আর আপনার ছেলেকে পড়াতে পারবো না। কারণ আমার আত্মসম্মান বলতে কিছু আছে। যেখানে একবার আমার আত্মসম্মান খুন্ন হয়েছে সেখানে কি করে দ্বিতীয় বার যাব। আমি অন্য কোথাও টিউশনি খুঁজে নিবো ঠিক জুটে যাবে। কথা গুলো বলে সেখানে এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে প্রস্থান ত্যাগ করি।

–ভেজা শরীর নিয়ে রাস্তা দিয়ে যেতে কেমন অসস্তি হচ্ছে। আশেপাশের মানুষ- জন দেখছে কুনজরে। কালো গাড়ির ছেলেটা পিছন থেকে এসে বলছে, আমি তোমার বাড়িতে নামিয়ে দিতে পারি।

–আমার লাগবে না আমি যেতে পাবো।”কালোগাড়ির ছেলেটি গাড়ি থামিয়ে বেড়িয়ে এসে বলে,

— তোমাকে ভালোর জন্য কথাটা বলতেছি চলো আমার সাথে। ছেলেটির ধমক শুনে গাড়িতে উঠে যাই। আমি গুটিশুটি মেরে বসে থাকি। ” ভয় পেয়েও না ভুত আমি নই। কোন দিক দিয়ে যাবো বলো।
“আমি রাস্তা বলে দিলে তিনি বাড়ির সামনে নামিয়ে দেয়। আশেপাশের বাড়ির মহিলা সন্দিহান চোখে দেখছে। কারো কথায় কান না দিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে যাই। ফ্রেশ হয়ে জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখি লোকটি নেই চলে গেছে।”
চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে