উজান ঘাটের মাঝি পর্ব-১২

0
724

#উজান_ঘাটের_মাঝি
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
#পর্ব_১২

তিতির সুখ নাকি দুঃখ কোনটা অনুভব করছে সেটা তার বোধগম্য হচ্ছে না।তার শরীর মৃদু কাঁপছে।আরফানের হঠাৎ সিদ্ধান্তে সে তৎক্ষনাৎ ভাবনায় পরে গিয়েছিলো।সবাইকে না জানিয়ে বিয়ের মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত একা নেয়া কি যেই সেই কথা?কিন্তু তার আরফানের দিকে তাকিয়ে মনে হলো এখন,এই মূহুর্তে যদি সে সায় না জানায় তাহলে সারাজীবনের জন্য প্রিয় মানুষকে হারিয়ে অপ্রিয় মানুষের বুকে অনিচ্ছায় যেতে হবে,গুমরে কেঁদে ম,রতে হবে আজীবন।তিতির চোখ বন্ধ করে সিদ্ধান্ত নেয়।আরফান তো বাহিরের কোনো ছেলে না,সবার চেনা জানা নিজেদের ছেলে।হয়তো প্রথমে একটু ঝামেলা হবে কিন্তু পরে তো সব ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু এখন যদি সবার ভয়ে তার দিকে আরফানের বাড়িয়ে দেয়া হাতটা শক্ত করে না ধরে তাহলে এই মানুষটাকে সারাজীবনের জন্য হারাতে হবে।এটা তিতির কখনোই মানতে পারবে না।
তাছাড়া তার ভালোবাসা কি এতোই ঠুনকো নাকি যে হাত ছেড়ে দেবে।সবার রুদ্রমূর্তি দেখে তিতিরের বুকটা ধরাস ধরাস করে কেঁপে উঠে।সে আরফানের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়,সবকিছু আরফানই মোকাবিলা করবে।আরফান তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে তিতির ভ,য় পাচ্ছে সে সবার অগোচরে হাতের মৃদু চাপে তাকে আসস্ত করে দেয়।তিতির আরফানের পিঠের কাছের শার্ট শক্ত করে ধরে।

শাহাবুদ্দিন খান আরফানের দিকে শক্ত চোখে তাকিয়ে আছে।আরফান সবার দিকে তাকিয়ে মনোভাব বুঝার চেষ্টা করেছে।শাহাবুদ্দিন খান কোনো কথা না বলে ঠাস করে আরফানের গালে থা,প্পড় দিয়ে ফেলে।উনার এমন কাজে উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে যায়।শাহাবুদ্দিন খান আর মা রার আগে সালমা বেগম ছেলেকে আঁকড়ে ধরে বাধা দেয়।
“গায়ে হাত তুলেন কেনো;ছেলে কি এখনো ছোট আছে?যা বলার মুখে বলেন।”

শাহাবুদ্দিন খান চোখ পাকিয়ে বললো,
“তুমি সামনে দাঁড়িয়েছো কেনো?ওকে কথা বলতে দাও।”

সালমা বেগম সরে দাঁড়ান।আরফান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।আরফানের এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে তার আব্বা তাকে মে,রেছে।তার মুখের থমথম ভাব পেছনে দাঁড়ানো তিতিরও টের পায়।সে ডুকরে কেঁদে উঠে।
শাহাবুদ্দিন খান বললো,
“এমন কাজ করার মানে কি?”

আরফান গম্ভীর মুখে বললো,
“বিয়ের বয়স হয়েছে না।”

“বিয়ের বয়স হলে আমাকে বলতি।তাছাড়া বিয়ে করার জন্য কি দেশে আর মেয়ে ছিলো না?”

আরফান মাথা নেড়ে বললো,
“ওর ভাই আমার বোনকে বিয়ে করেছে তাই আমি ওকে বিয়ে করেছি।”

আরফানের এমন যুক্তি শুনে সবাই হতভম্ব হয়ে যায়।জয়তুন বেগমের সিদ্ধান্ত যে আরফান এমন হাতের তুড়িতেই নষ্ট করে দেবে তা কে জানতো।উনি রাগে লাল হয়ে বললো,
“বেয়াদবের মতো কথা বলিস না। ”

আরফান তার দাদীর দিকে তাকায় কিন্তু কিছু বলে না।শাহাবুদ্দিন খান বললো,
“মাহমুদ মারিয়াকে বিয়ে করেছে বলে তুই তিতিরকে বিয়ে করেছিস?”

আরফান স্বাভাবিক গলায় বললো,
“হ্যাঁ।”

“এটা কোনো কারণ হতে পারে না,সঠিক কারণ বল।”

“এটাই কারণ।”

শাহাবুদ্দিন খান উনার ছেলেকে ভালো করেই চিনেন,ছেলের মুখের কথা এক চোখের ভাষা এক।উনি গম্ভীর গলায় বললো,
“থা,পড়ে দাঁত ফেলে দেবো বেয়াদব।”

আরফানের তার আব্বার রাগ সম্পর্কে ধারণা আছে।সে গম্ভীর গলায় কারণটা বললো।মুখের ভাব এমন যেনো খুবই গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদন করেছে,
“আমি তিতিরকে ভালোবাসি।”

আরফানের এমন সরল স্বীকারোক্তিতে সবাই হতবাক।কে কি রকম প্রতিক্রিয়া দেবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছেনা।আরফান আর তিতিরের মাঝেও যে এমন সম্পর্ক থাকতে পারে তা বোধহয় কারো মাথায় ছিলো না।সবাই যখন আশ্চর্য হয়ে কথা বলার ভাষা হারিয়ে নির্বাক তখন শাহাবুদ্দিন খান স্বাভাবিক যেনো উনি এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ জানতেন।
“ভালোবাসিস! সেটা বললেই হতো,এমন কাজ করার দরকার কি?”

“বলার সুযোগ ছিলো নাকি?তার আগেই যে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন।আর তিতিরকে বিয়ে দেয়ার ব্যাপারটা কি আমি বসে বসে দেখবো?”

শাহাবুদ্দিন খানের কথা আটকে যায়।
“তাই বলে…”

“হুম।”

“তুই তিতিরকে জোর করে বিয়ে করেছিস?”

আরফান তিতিরের দিকে তাকায়।যেনো তিতিরের থেকেই প্রেমের স্বীকারোক্তি শুনতে চাইছে।তিতির যেনো আরফানের চোখের ভাষা নিমিষেই বুঝে গেলো।সে কাঁপা কাঁপা অধর মেলে তার বড়ো আব্বুর দিকে তাকিয়ে বললো,
“বড়ো আব্বু; এই বিয়েতে আমার সম্মতি ছিলো।”

জয়তুন বেগম উনার ছোট ছেলের দিকে তাকায়। মহিবুল্লাহ খান যদিও রেগে ছিলেন কিন্তু ভাই যেখানে নিজের ছেলেকে শাসন করছে সেখানে উনি আর কি বলবেন ভেবে পান না কিন্তু এখন মেয়ের কথা শুনে উনার মাথায় র,ক্ত চড়ে যায়।ক্ষিপ্ত গতিতে মেয়ের দিকে যায়,আরফানের পেছন থেকে তিতিরকে টেনে সামনে এনে তাকে মা,রতে প্রস্তুত হয়।তিতিরকে আ,ঘাত করার আগেই আরফান আবার তিতিরকে আগলে নিজের কাছে নিয়ে বললো,
“খবরদার চাচ্চু,তিতির এখন শুধুমাত্র আপনার মেয়ে না সে এখন আমার স্ত্রী।আর আমার সামনে আমার স্ত্রীকে আ,ঘাত করার কথা ভাববেন না।”

আরফানের এমন প্রতিরোধী মনোভাবে সবাই তার দিকে তাকিয়ে থাকে।তানিয়া বেগম সুখী হবেন নাকি মেয়ের উপর রেগে যাবেন তা ঠিক বুঝতে পারছে না।শাশুড়ির পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে হওয়ার চেয়ে আরফানের কাছে বিয়ে হওয়াতে যেনো ঢের ভালো হয়েছে।ডাক্তার জামাই!তানিয়া বেগম হাসি হাসি মুখে মেয়ে আর মেয়েজামাইর দিকে তাকিয়ে আছে,এই যে আরফান উনার মেয়েকে আগলে রেখে উনার স্বামীর আ,ঘাত থেকে রক্ষা করলো এই ব্যাপারটা দেখেই উনি আরফানের পক্ষে চলে গেলেন।কয়জন স্বামী নিজের স্ত্রীকে এমন আগলে রাখে!

আরশ পরিস্থিতি দেখে যদিও কষ্ট পেয়েছে কিন্তু এখন শতো কথা কাটাকাটি, মা,রা,মা,রি করলে কি আর তিতির তার হবে? হবে না তাই সংসারে অশান্তি করার কোনো মানেই হয় না। সে তার আম্মাকে কোনো কথা বলতে নিষেধ করলো।যদিও উনি কথা বলতে চাচ্ছিলেন।আরশ তার বড়ো মামার দিকে তাকিয়ে বললো,
“মামা;যা হওয়ার হয়েছে।এখন এসব নিয়ে আর কথা বাড়িয়ে লাভ কি,মানুষ শুনলে আরো কথা বাড়বে।এর চেয়ে বরং মেনে নিন,এটাই ভালো।”

আরশের কথায় না চাইতেও সবাই মত দেয়।শাহাবুদ্দিন আরফানের দিকে তাকিয়ে বললো,
“নিজেদের মতামত জানিয়ে এসব করা উচিত ছিলো।আমরা মেনে নিলে এমন চোরের মতো বিয়ে করতে হতো না।”

আরফান আর তিতির চুপ করে থাকে।ওদের এমন চুপ করে থাকতে দেখে যেনো শাহাবুদ্দিনের রাগ হু হু করে বাড়ে।
“বেয়াদব দুটো, কথা বলিস না কেনো?নির্লজ্জের মতো কাজ করে এখন চুপ করে আছিস?যা রুমে যা। ”

আরফান হাসে,তিতিরের হাত ধরে তাকে রুমের দিকে নিয়ে যেতে চায়,তার কাজ দেখে শাহাবুদ্দিন খান বললো,
“এই বেয়াদব ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?”

আরফান ভ্রু কুঁচকে বললো,
“আমার রুমে।”

” কেনো?”

“আমার বউ তো আমার রুমেই থাকবে। ”

শাহাবুদ্দিন স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললো,
“সালমা,এই বেয়াদবকে বলো,এমন অনুমতিবিহীন, নির্লজ্জের মতো বিয়ে করেছে কিন্তু তিতির ইন্টারমেডিয়েট পাস করার আগে যেনো ওর দিকে পা না বাড়ায়।বেয়াদব ছেলে নিজেও গোল্লায় যাবে মেয়েটাকেও নেবে।”

আরফান হতবিহ্বল চোখে তার আব্বার দিকে তাকিয়ে থাকে।এটা কি ধরনের শাস্তি! বউ কাছে না দিয়ে শাস্তি দিয়ে কি তাকে মে,রে ফেলতে চাইছে?তার মনে হচ্ছে এই শাস্তির চাপে সে ম,রে যাবে।সবাই গম্ভীরমুখে যার যার রুমে চলে গেলো,তিতিরও আরফানের দিকে তাকিয়ে তার রুমে চলে যায়।
আরফান চুপচাপ তার রুমে চলে যায়।বিয়ে করলো কেনো যদি বউই কাছে না থাকে!

মাহামুদ বাড়ি এসে সব শুনে কিছুক্ষণ থমকে বসে ছিলো।আরফান তিতিরকে পছন্দ করে সেটা তার চোখেই পরেনি,সে মূলত আজকে আরশ আর তিতিরের বিয়ে এই উপলক্ষেই এসেছিলো।বাড়ি এসে শুনে বিয়ে ঠিকই হয়েছে কিন্তু পাত্র বদলে গিয়েছে।সে খাওয়াদাওয়া করে রুমে যায়,রুমে যাওয়ার সাথে সাথে মেয়েলী সুভাস নাকে আসে আর তাতেই বুকের ভেতরটা কেমন ধিমধিম তালে জানিয়ে যায় এই রুমে তার প্রিয়তমা থাকে।
মারিয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে,মাহমুদের সামনে যেতে তার লজ্জা লাগছে।মাহমুদ মারিয়ার কাছে এসে দাঁড়ায়। মাহমুদের উপস্থিতি টের পেয়ে সে কেঁপে উঠে,নিঃশ্বাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে। মাহমুদ চুপচাপ মারিয়ার গায়ের মৃদু শিহরণ দেখে।কিছুক্ষণ পরে বললো,
“কি ব্যাপার!ভালো আছো?”

মারিয়া হাসিমুখে মাহমুদের দিকে তাকায়।তার অতী কাঙ্ক্ষিত পুরুষ তার দিকে কেমন হাসিহাসি চেহারা নিয়ে তাকিয়ে আছে।মাহমুদ মারিয়াকে কিছু বলতে না দেখে বললো,
“চুপ করে থাকলে কিন্তু আবার চলে যাবো।সেটাই চাইছো নাকি?”

মারিয়ার চোখে পানি চলে আসে।চলে যাবে!কতো কান্না,আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করেছে যেনো মাহমুদ ফিরে আসে।ফিরে এসেছে কিন্তু এখন আবার চলে যাওয়ার হু,মকি দিচ্ছে কেনো?
মারিয়ার কান্নাভেজা মুখের দিকে তাকিয়ে মাহমুদ বললো,
“আচ্ছা যাবো না।”

মারিয়া ফ্যাসফ্যাসে গলায় বললো,
“আপনি আমাকে এমন য,ন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিচ্ছেন কেনো?”

“তুমিও তো আমাকে শাস্তি দিয়েছো।”

“কিভাবে?”

“নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছো।এর থেকে বড়ো শাস্তি আর কি হতে পারে?”

মারিয়া অবাক হয়ে মাহমুদের দিকে তাকিয়ে আছে।মাহমুদ হেসে বললো,
“ভালোবাসি। ”

মারিয়া লজ্জা পায়,লাজুক হেসে রুমে চলে যায়, সেদিকে তাকিয়ে মাহমুদ বললো,
“রুমে গেলে তো আরো লজ্জা পাবে লজ্জাবতী বউ।”

মাহমুদ রুমে যায় না।নিজেকে প্রস্তুত করে,মারিয়াকে প্রস্তুত হতে সময় দেয়।সত্যি বলতে তার লজ্জা লাগছে,বিয়ে করা বউয়ের কাছে যেতে এতো লজ্জা লাগছে তা দেখে আকাশের ক্ষয় যাওয়া চাঁদ মিটিমিটি হাসে সেই হাসির সাথে মাহমুদের হাসিও প্রসস্ত হয়।

রাত বারোটা।তিতিরের সাথে তানিয়া আক্তার ঘুমাতে এসেছে।এই ঘুমানোর হুকুম উনার ভাসুরের দেয়া।আরো একটা হুকুমজারি হয়েছে তা হলো আগামী এক বছর আরফান বাড়িতে আসতে পারবে না।আরফান চুপচাপ তাতে সায় জানিয়েছে।এসব ভাবতে ভাবতে তিতিরের মোবাইলের আলো জ্বলে উঠে।আরফানের নাম্বার দেখে তিতির তার মায়ের দিকে তাকায়।
তানিয়া বেগম এতোক্ষণ মেয়েকে হাজারো প্রশ্ন করে জর্জরিত করে ফেলেছে।মোবাইলে আলো দেখে বললো,
“আরফান ফোন দিয়েছে তাই না?”

তিতির মাথা নাড়ে।তানিয়া আক্তার বললো,
“ভাইজান তোদের ভালোর জন্যই এসব বলেছে।কিন্তু যা আজকে কথা বল।”

তিতির হাসিমুখে বারান্দায় চলে যায়।মোবাইল রিসিভ করে বললো,
“এতো রাতে কি চাই?”

আরফান তখন ছাদে।সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“আকাশে এতো সুন্দর চাঁদ অথচ আমি চাঁদহীন।এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে বাঁচতে চাই না,আমাকে বাঁচাতে চাইলে এখনি আমার বউ চাই।”

তিতির খিলখিল করে হাসে।আরফান বললো,
“হেসো না সুন্দরী।আমার বুকে আ,গ্নেয়গিরির লাভা ফুটছে আর তুমি হাসছো?”

“আমার কি করা উচিত? ”

“আমার দুঃখে তোমারও দুঃখী হওয়া উচিত।আফটারঅল কাছে থাকলে আমার মতো একটা চকলেট বয় পেতে,এখন তো আর পাচ্ছ না সেই দুঃখে দুঃখী হও।”

তিতির আরফানের মন খারাপের আবহাওয়া ঠিক টের পায়।তারও যে খারাপ লাগছে না তা নয় তারও খারাপ লাগছে,ছটফট করছে বুকের ভেতরটা।সে আস্তে করে বললো,
“আচ্ছা।”

আরফান নালিশ দেয়ার ভঙ্গিতে বললো,
“আব্বা এটা একটা কাজ করলেন বলো।বিয়ে করেছি অথচ বউ কাছে নেই।আজব।”

“বিয়ে করলেই বউ কাছে থাকতে হবে?”

“হান্ডেড পার্সেন্ট থাকতে হবে,বিয়ে করার পরেও যদি বউয়ের বদলে কোলবালিশ বুকে নিয়ে থাকতে হয় তাহলে কিভাবে হবে?এই শোকে যদি আমি শুকিয়ে ম,রে যাই তার দায়ভার কে নেবে তুমি?”

“হুম।”

“বিয়ে করে ফায়দা কি হলো ভাই!”

তিতির হেসে বললো,
“আমি সারা জীবনের জন্য আপনার হয়ে গেলাম,এটাই লাভ।”

“হ্যাঁ বুঝেছি । ”

“সেটাই কি যথেষ্ট না?”

আরফান বিরস মুখে বললো,
“যথেষ্ট।”

“তাহলে আর কি?”

“আমার যে বিয়ে বিয়ে ফিলিংস আসছে না।”

“এর জন্য বউ চাই?”

“হ্যাঁ,বিয়ের পরে বউকে জড়িয়ে ধরতে না পারলে,আদর করতে না পারলে কি করে মনকে বুঝাবো যে আমার একটা নাদুসনুদুস বউ আছে।”

তিতির হাসে,আরফানের কথা শুনে সুখী মানুষের মতো তীব্র অনুভূতি হচ্ছে।মাহমুদ আবারো বললো,
“মাহমুদ আর মারিয়াও তো আমাদের বয়সী ওরা তো একসাথে থাকছে।তাহলে আমরা কি অ’পরাধ করেছি?

“সেটা আপনার আব্বাকে বুঝান।”

আরফানের ভিষণ রাগ হলো।মেয়েটা কি তার অব্যক্ত কথাটা বুঝতে পারছে না?সে ফোন কেটে দিলো।তারপর চুপচাপ রুমে চলে গেলো,কালকে ঠিকই সে ঢাকা চলে যাবে,এই মেয়ে স্বামীর কথা বুঝেনা,বোকা।

সকালে তিতির সোফায় বসে মোবাইল দেখছিলো তখন আরফান তার পছন্দের আইসক্রিম এনে তার সামনে বাড়িয়ে দেয়।তিতির প্রচন্ড খুশী হয়,খুশীর ঠেলায় মনে মনে আরফানের নাকের ঢগায় চুমু খায়।হাত বাড়িয়ে বক্স ধরতে গেলে আরফান সরে যায়।তার পাশে বসে আয়েশ করে আইসক্রিম খেতে আরম্ভ করে।আরফানের এমন কাজে তিতির আশ্চর্য হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।প্রিয় জিনিস না দেয়াতে এতো রাগ লাগছে।
আরফান আইসক্রিম খেতে খেতে বললো,
“কেমন লাগে আপু?”

তিতির আরফানের দিকে তাকিয়ে বললো,
“একটু দেন না।”

“একটুও না।তোর খাটাস বড়োবাপ আমাকে বউ থেকে বঞ্চিত করেছে,বিয়ে করার পরেও আমাকে সিঙ্গেল রাত পার করতে দিয়েছে। তুই কি ভেবেছিস আমি তোকে খেতে দেবো?কক্ষনো না।
প্রিয় জিনিস কাছে থাকার পরেও না ছুঁতে পারা,না খেতে পারার কষ্ট কি হতে পারে এবার বুঝ।”

তিতির চোখ বড়ো বড়ো করে বললো,
“আপনি আমায় খা… ”

তিতির পুরো কথা শেষ করার আগেই আরফান বললো,
“গাধা,সেটাতো কথার কথা বলেছি।”

তিতির আরফানের কথা বিশ্বাস করলো না।সে আরফানের আইসক্রিম খাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছুটে রুমে চলে যায়।
মনে মনে ভাবে, জামাই কি এমন লাগামহীন হয়?উফ!

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে