#উচ্ছ্বাসে_উচ্ছ্বসিত_সায়রী
লেখনীতে: #মাশফিত্রা_মিমুই
[পর্ব:১২]
অফিস থেকে ছুটি নিয়ে একেবারে বসের হাতে বিয়ের কার্ড ধরিয়ে দিয়ে তার রুম থেকে বের হলো উচ্ছ্বাস। সায়রীর কথামতো সর্বপ্রথম গিয়ে দাঁড়ালো মিশমির টেবিলের সম্মুখে। নিজের টেবিলের সামনে হঠাৎ উচ্ছ্বাসকে দেখে চমকায় মিশমি। কিছু একটা ভেবে চমকিত মুখখানাতেই ফোটে ওঠে এক ফালি হাসি। উচ্ছ্বাস তার দিকে এগিয়ে দেয় কারুকাজের একটি সোনালী রঙের কার্ড। ভ্রু কুঁচকায় মিশমি। কার্ডটা নিজ হাতে নিয়ে প্রশ্ন করে,”বিয়ের কার্ড? কার বিয়ে? আমাকে দিচ্ছেন যে?”
ঠোঁটের কোণে থাকা হাসিটা চওড়া হলো উচ্ছ্বাসের। হাস্যজ্জ্বল মুখে উত্তর দিলো,”আমার বিয়ে।”
শ্রবণালী পর্যন্ত কথাটা পৌঁছাতেই হকচকিয়ে ওঠে মিশমি। আশেপাশে তাকায়। ঠিক শুনলো তো সে? নাকি মজা করছে উচ্ছ্বাস? পাশ থেকে আরো কয়েকজন উঠে এলেন। একে একে সবাইকে কার্ড দেওয়া শেষ করল উচ্ছ্বাস। সবাই সম্মোস্বরে অভিনন্দন জানালো তাকে। কার্ডটা খুলে এতক্ষণে ভেতরের সব লেখা পড়ে নিয়েছে মিশমি।ঘোর যেনো কিছুতেই তার কাটছে না। শুধালো,”তার মানে সত্যিই আপনার বিয়ে উচ্ছ্বাস?”
“জ্বি, বিয়ে থেকে শুরু করে বৌ ভাত সবকিছুতেই কিন্তু আপনাদের এটেন্ড করতে হবে।”
হতবাক, হতভম্ব দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে মিশমি। কিছুক্ষণ নিরবতার পর প্রশ্ন করে বসলো,”পরিবার থেকে বিয়ে ঠিক করেছে?”
“বিয়ে তো পরিবার থেকেই ঠিক করে তাই না? পালিয়ে বিয়ে করলে কী আর দাওয়াত পেতেন নাকি?—বলেই শব্দহীন হাসলো উচ্ছ্বাস।
“ওভাবে বলিনি। আসলে জিজ্ঞেস করছিলাম মেয়ে কী পরিবারের পছন্দের? পরিবারের পছন্দে বিয়ে করছেন?”
“বিয়ে করছি নিজের পছন্দে তবে মেয়েকে পরিবারেরও খুব পছন্দ।”
“প্রেমের বিয়ে? তা কতদিনের সম্পর্ক?”
“উহু প্রেমের নয়। প্রেম আমরা কখনোই করিনি। তবে দুজন দুজনকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করি। কলেজ লাইফ থেকে ওকে আমার পছন্দ আর ও আমায় ভালোবাসে সেই ক্লাস নাইন থেকে। অবশেষে পরিবার মেনে নিলো আর বিয়েও ঠিক হলো।”
আশ্চর্য হলো মিশমি। এতদিনকার ভালোবাসার সামনে তার এই এক তরফা অনুভূতি মুহুর্তেই যেনো তুচ্ছ হয়ে গেলো। এই অফিসে মিশমি চাকরি করছে এইতো এক বছর হতে চললো। যেদিন উচ্ছ্বাস এখানে ইন্টারভিউ দিতে এসেছিল সেদিনই মিশমির নজরে আটকায় সে।এই পরিপাটি সুদর্শন পুরুষটিকে দেখতেই কেমন অদ্ভুত এক অনুভূতির বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে যায় মেয়েটি। মনে মনে দোয়া করে ছেলেটি যেনো এই কোম্পানিতেই চাকরিটা পেয়ে যায়। তার মাস খানেক পরেই উচ্ছ্বাস জয়েন করে অফিসে। জয়েনের প্রথমদিন তাকে দেখে কী খুশিই না হয়েছিল মিশমি। সেদিন পুরো সময়টা শুধু উচ্ছ্বাস নামক পুরুষটিকে পর্যবেক্ষণ করেই কাটিয়েছে সে। তার হাসি, তার ঠোঁট নাড়ানো, হাঁটাচলা সব লক্ষ্য করতেই জড়িয়ে গেছে তার মাঝে। সেদিন সারারাত ধরে ভেবেছে পুরুষটির কথা।
বৃদ্ধা মায়ের দেখভাল আর চাকরি সামলাতে গিয়ে কারো সঙ্গে প্রণয় নামক সম্পর্কে জড়ানো হয়নি মিশমির। বিভিন্ন সময় মা বিয়ের কথা তুললেও তা এড়িয়ে গেছে সম্পূর্ণ ভাবে।শুধু ভয় হতো, বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ির লোকেরা যদি চাকরি করতে না দেয় তখন কী হবে? মাকে কে দেখবে? মায়ের চিকিৎসা, ওষুধের পেছনেই তো বেতনের অর্ধেক টাকা খরচ হয়ে যায়। স্বামী কী দিবে সেই খরচ? এসব চিন্তায় আর বিয়ের কথা মাথায় আনেনি মেয়েটা।
কিন্তু উচ্ছ্বাসের উপর তার অবাধ্য মন সৃষ্টি করেছে প্রণয় নামক অনুভূতি। পরেরদিন অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই লিফটের মধ্যে দুজনার দেখাদেখি হয়, চোখাচোখি হয়। সৌজন্যতা বজায় রেখেই মিশমি আগ বাড়িয়ে কথা বলে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে। কিন্তু উচ্ছ্বাসের এড়িয়ে যাওয়া দেখেই তীব্র রাগ হয়। কীভাবে কথা বলবে, পরিচিত হবে এসব ভাবতে ভাবতেই লাঞ্চের জন্য ইনভাইট করে বসে। এই জন্যই তাহলে বারবার তাকে ইগনোর করেছিল উচ্ছ্বাস? এবার সবটা খুব ভালো করেই পরিষ্কার হয় মিশমির কাছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রত্যুত্তরে বললো, “অবশ্যই আমি আসবো আপনার বিয়েতে।”
মুচকি হাসলো উচ্ছ্বাস। কয়েক মিনিট পর বিদায় নিয়ে বের হলো অফিস থেকে।
______
অবশেষে গায়ে হলুদের দিন ঘনিয়ে এলো। হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য ছাদেই আয়োজন করা হয়েছে। হলুদ রঙের শাড়ি, হিজাব আর গা ভর্তি সতেজ জীবিত ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে সায়রীকে। একটু পর পর একজন একজন করে মহিলা আসছেন আর সামনে সাজানো খাবার থেকে একটু একটু করে সায়রীর মুখের মধ্যে পুরে দিচ্ছেন। এসব অতিরিক্ত নিয়মগুলো বিরক্ত লাগছে সায়রীর নিকট। কে এসব আজব নিয়মগুলো তৈরি করেছে? ধীরে ধীরে সময় অতিক্রম হতে লাগলো। শুরু হলো হলুদ মাখানোর পর্ব। যে যেভাবে পেরেছে হলুদ মাখিয়ে একেবারে ভূত বানিয়ে দিয়েছে তাকে। চোখমুখ কুঁচকে বসে আছে সায়রী।
লাউড স্পিকারে গান বাজছে। গানের শব্দে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার উপক্রম। এই গান বাজনা বড্ড বিরক্ত লাগে সায়রীর। পইপই করে বাবা-মাকে জানিয়ে দিয়েছিল বিয়েতে কোনো গান বাজনা সে বরদাস্ত করবে না কিন্তু কাজিন নামক আপদ গুলো তার কোনো কথাকেই গুরুত্ব দিলো না। বিকেলে গিয়ে বিশাল বড়ো কয়েকটা সাউন্ড বক্স ভাড়া করে এনে নিজেদের মতো বেহায়াপনা শুরু করে দিয়েছে।
ছাদের একপাশে গিয়ে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে রইলো সায়রী। আকাশে অর্ধ চাঁদ আর তার চারিদিকে ছড়িয়ে আছে অজস্র তাঁরা।মোবাইলের ক্যামেরা অন করে নিজেকে নিবিড় ভাবে দেখে নিলো সায়রী। লাজুক হাসলো। এই মুহূর্তে তাকে হলুদ পরীর থেকে কোনো অংশেই কম লাগছে না। সর্বাঙ্গে শুধু হলুদ রাঙা। আনমনে কিছু একটা ভেবে শব্দ করে হেসে উঠলো।
কল লিস্টে প্রবেশ করতেই সবার উপরে পেয়ে গেলো উচ্ছ্বাসের নাম্বার। আর কিছু না ভেবেই অতিদ্রুত নাম্বারটায় বসিয়ে দিলো কল। বিয়ে ফাইনাল হওয়ার পর থেকেই যখন তখন ছেলেটাকে জ্বালিয়ে মারছে সায়রী। উচ্ছ্বাসও তাতে টু শব্দটি পর্যন্ত করছে না। সব কথা চুপচাপ মেনে নিচ্ছে। অন্যায় আবদার করলেও পূরণ করছে সেই আবদার গুলো। সায়রীর কেন জানি মনে হচ্ছে ছেলেটা নির্ঘাত বউ পাগলা হবে। রিং হতে হতে চতুর্থবারের দিকে কল রিসিভ করল উচ্ছ্বাস। তার অপরপাশ থেকেও হইহই শব্দ ভেসে আসছে। এক কান আঙুল দিয়ে চেপে ধরে আরেক কানে মোবাইল লাগিয়ে রেখেছে উচ্ছ্বাস। ব্যগ্ৰ কণ্ঠে সাড়া দিলো,”হ্যালো! সায়রী?”
“জ্বি, আপনার কাণ্ড কারখানা দেখে তো আমি খুব অবাক হচ্ছি উচ্ছ্বাস। কী করে করতে পারলেন এসব?”
“কী করলাম আমি? আমার জানামতে আমি তো তেমন কিছুই করিনি।”
“এটাই তো আমার প্রশ্ন কেন করেননি?”
“আহা কী করবো?”
“কী করবেন মানে? কী করবেন তাও কী আমায় বলে দিতে হবে?”
“হেঁয়ালি না করে কী চাও সেটা বলো।”
“কী আর চাইবো বলুন? আমি এতদিন ভেবে এসেছি আপনি খুবই রোমান্টিক একজন সুপুরুষ অথচ আমার ধারণা তো দিনেদিনে ভুল প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে উচ্ছ্বাস। আপনি কিনা আজকের মতো একটা দিনে হাত-পা গুটিয়ে বাড়ি বসে আছেন?”
“তো কী করবো? কোথায় যাবো? বন্ধু বান্ধব সবই তো এখন বাড়িতে।”
“আপনার বন্ধু বান্ধবের খবর কী আমি জানতে চেয়েছি? আপনাকে আমি বিয়ে করছি শুধুই জীবনটাকে এন্টারটেইনমেন্টে ভরিয়ে রাখতে। তাই আপনার উচিত সিনেমার নায়কদের মতো সবার চোখে ফাঁকি দিয়ে নিজের হলুদ বউকে দেখে যাওয়া। একটু হলুদ মাখিয়ে দেওয়া। লুকিয়ে লুকিয়ে কয়েকটা ছবি তোলা।”
আঁতকে উঠলো উচ্ছ্বাস। অসহায় কণ্ঠে বললো,”তুমি বরং নিজেই নিজের কয়েকটা ছবি তুলে আমায় পাঠিয়ে দাও ন্যাড়া সায়রী।”
“ন্যাড়া বলবি তো তোর জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলবো অসভ্য।”—ক্রোধমিশ্রিত কণ্ঠে বলে উঠলো সায়রী।
চমকালো উচ্ছ্বাস। চমকায়িত কণ্ঠেই জিজ্ঞেস করল,
“তুমি আমায় তুই বললে সায়রী? তোমার বেয়াদবি এবং সাহস দেখে আমি তো রীতিমতো অবাক হয়ে গেলাম।”
“সাহসের তো এখনো কিছুই দেখাইনি।”
“ভুলে যেও না কাল রাতটা কিন্তু আমার ঘরেই তোমাকে আসতে হবে।”
“ভয় দেখান? ওসব ভয়টয় সায়রী রেজা পায় না। এখন কথা না বাড়িয়ে আমাকে দেখে যান আর হ্যাঁ খালি হাতে হলুদ বউ দেখতে আসলে কিন্তু পাবলিকের হাতে মাইর খাওয়াবো।”
“কী আনবো সঙ্গে?”
“আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে, চকবার আইসক্রিম।”
“দোকান তো তোমার বাবার যে এতো রাত পর্যন্ত খুলে রাখবে।”
“কত্ত বড়ো সাহস বাপ তুলে কথা!”
“স্যরি।”
“আমার ঘুম পাচ্ছে দ্রুত আসুন।”
“না আসলে হতো না?”
“ভয় পাচ্ছেন? আপনি ভিতু আর আনরোমান্টিক হলে আসতে হবে না, রাখছি।”
কল কেটে দিলো সায়রী। বেচারা উচ্ছ্বাসের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস। বিয়ের আগেই যে এই রগচটা মেয়ে এভাবে নাকানিচুবানি খাওয়াবে তা কখনো ভাবতেই পারেনি উচ্ছ্বাস। এ যেনো সেই ছোট্ট বেলার সায়রী।
সাবিত ঘোষণা করেছিল,আজ রাতে ঘুমানো নিষিদ্ধ। আজ সারারাত শুধু আড্ডা হবে। তাতে অবশ্য রাজি ছিলো উচ্ছ্বাস কিন্তু অগত্যা সবার মধ্য দিয়েই লুকিয়ে চুপিয়ে বের হলো বাড়ি থেকে। বেশ রাত হয়েছে, বিকেলের দিকে নেহারের আদেশে আহিল গিয়ে বাচ্চাদের জন্য দোকান থেকে চকলেট আইসক্রিম এনে ফ্রিজ বোঝাই করেছে। সেখান থেকেই কিছু আইসক্রিম চকলেট পলিথিন ব্যাগে ভরে রেজা ভিলায় ছুটলো উচ্ছ্বাস। কয়েক মিনিটের পথ হেঁটে অতিক্রম করতেই পৌঁছে গেলো শ্বশুর বাড়ির সামনে। কিন্তু গেইটের কাছে আসতেই আশাহত হলো। ভেতর থেকে তালা লাগানো।
গেইটের সম্মুখে দাঁড়িয়ে সায়রীকে কল লাগালো উচ্ছ্বাস। একবার, দুবার বাজার পর তিনবারের মাথায় রিসিভ হলো কল। ঢুলুঢুলু কণ্ঠে অপরপাশ থেকে প্রশ্ন এলো,”সমস্যা কী?”
“গেইটে তো তালা ঝুলছে সায়রী। ভেতরে আসবো কী করে?”
“ভেতরে আসবেন কেন?”
“তুমিই না বললে আইসক্রিম নিয়ে তোমাকে দেখতে আসতে।”
ঘুমটা এবার পুরোপুরি ভাবে ছুটে গেলো সায়রীর। উচ্ছ্বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমে চোখ লেগে গেছিল তার। মিহি স্বরে বললো,”ওহ।”
“আইসক্রিম তো গলে যাবে সায়রী, গেইট খুলে দাও।”
“আপনি ভাবলেন কীভাবে গেইট দিয়ে সহজেই ভেতরে ঢুকে যাবেন? হলুদ বর হয়ে হলুদ বউকে দেখতে এসেছেন একটু টেকনিক খাটিয়ে লুকিয়ে চুরিয়ে তো আসতেই হয়।”
“এতো জ্ঞান না দিয়ে কীভাবে তোমার কাছে পৌঁছাবো তা বলো। আমি তো কোনো রাস্তাই খুঁজে পাচ্ছি না।”
“ভালো করে তাকিয়ে দেখুন নিচ থেকে একটা মোটা সোটা পাইপ বেয়ে গেছে উপরে।”
দালানের চারপাশে চোখ বুলিয়ে খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে পাইপটার দেখা পেয়ে গেলো উচ্ছ্বাস। বললো,”হ্যাঁ দেখেছি, এবার কী করবো?”
“এবার ওই পাইপ বেয়ে ছাদে চলে যান।পৌঁছে একটা মিসড্ কল দিয়েন আমিও চলে আসবো।”
“কীসের পাইপ এটা?”
“বাথরুমের পাইপ।”
সঙ্গে সঙ্গে নাক মুখ কুঁচকে নিলো উচ্ছ্বাস। রাগান্বিত স্বরে জিজ্ঞেস করল,”তুমি কী আমার সঙ্গে মজা করছো?”
“আপনি কী আমার বেয়াই লাগেন যে এই রাত বিরেতে আপনার সঙ্গে আমি মজা করবো? যা বলছি তাই করুন।”
প্রচন্ড বিরক্ত হলো উচ্ছ্বাস। তার সঙ্গে বাড়লো রাগ। রূষ্ট কণ্ঠে বললো,”ভার্সিটিতে পড়ুয়া মেয়ে হয়ে নিব্বি নিব্বি আচরণ করছো কেন?সব কথা মেনে নেই বলে কী এই মাঝরাতে ফাইজলামি করো আমার সঙ্গে? বাথরুমের পাইপ বেয়ে আমি ছাদে উঠবো? আমি!”
“আহা চটছেন কেন?”
“আমি চললাম আমার বাড়িতে। কবুল বলার আগ পর্যন্ত তোমার সঙ্গে আমার আর কোনো কথা নেই। এই আমি সুইচ অফ করলাম আমার ফোন। বাই।”
আর বিলম্ব না করে কল কেটে দিয়ে বাড়ির পথে হাঁটা ধরলো উচ্ছ্বাস। হাতের আইসক্রিম চকলেট গুলো রাস্তাতেই ছুঁড়ে ফেলে দিলো। আশেপাশে কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ উত্তাল তুলেছে। মোবাইলের স্ক্রীনে তাকিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে আছে সায়রী। উচ্ছ্বাস কী তাহলে সত্যি সত্যি রাগ করেছে? আচ্ছা রাগলে উচ্ছ্বাসকে কেমন লাগে? খুব দেখতে ইচ্ছে করছে সায়রীর। কয়েক মিনিট অতিক্রম হতে পুনরায় কল লাগালো কিন্তু কল আর ঢুকলো না। সত্যি সত্যিই মোবাইল সুইচ অফ করে দিয়েছে উচ্ছ্বাস। দীর্ঘশ্বাস ফেলে পূর্বের ন্যায় ঘুমানোর উদ্দেশ্যে বিছানায় শুয়ে পড়ল সায়রী।
নিজ বাড়িতে প্রবেশ করে অতি সাবধানে গেইটের তালা লাগিয়ে দিলো উচ্ছ্বাস। দারোয়ান বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। আশেপাশে তার কোনো খেয়াল নেই। বড়ো বড়ো কদম ফেলে লম্বা সিঁড়ি অতিক্রম করে ছাদে প্রবেশ করল উচ্ছ্বাস কিন্তু পরিবেশ খুবই শান্ত, নিরিবিলি। চারিদিকের কোলাহল গুলো বন্ধ হয়ে গেছে। কোথায় গেলো সকলে? প্রশ্নটা নিয়েই উল্টো ঘুরে নিচে নামার জন্য পা বাড়ালো কিন্তু তৎক্ষণাৎ পেছন থেকে ডেকে ওঠে এক নারী কণ্ঠের অধিস্বরী।
পেছন ফিরলো উচ্ছ্বাস। বিশাল বড়ো ট্যাংকের পেছন থেকে বেরিয়ে এলো মেয়েটি। তাকে দেখতেই স্লান হেসে শুধালো,”আরে টুম্পা সুন্দরী যে! তা এতো রাতে ছাদে কী করছো?”
“ঘুম আসছিল না তাই।”
“তোমার মা আসতে দিলো?”
“তোমার কাজিন নিমু আপু জোর করে নিয়ে এসেছিল আড্ডা দেওয়ার জন্য।”
“ওহ, তা সবাই কোথায় গেলো?”
“তুমি নেই তাই ওরাও চলে গেছে। তুমি ছাড়া আড্ডা জমে নাকি?”
প্রত্যুত্তরে কিছু বললো না উচ্ছ্বাস। তার উত্তরের অপেক্ষাও করল না টুম্পা। আকাশের দিকে দৃষ্টি তাক করে বললো,”আজকের আকাশটা অনেক সুন্দর তাই না উচ্ছ্বাস ভাই?”
“রাতের আকাশ সবসময়ই সুন্দর, তুমি দেখো না বলে হয়তো তোমার কাছে আজকের আকাশটাই বেশি সুন্দর লাগছে।”
তাচ্ছিল্য হাসলো টুম্পা। উচ্ছ্বাস যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। যেতে যেতে বললো,”এতো রাতে ছাদে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। ঘরে যাও। দরকার হলে ব্যালকনিতে গিয়ে আকাশ দেখো।”
“তুমি কী সত্যিই বিয়েটা করছো উচ্ছ্বাস ভাই?”
পথিমধ্যে থমকে দাঁড়ায় উচ্ছ্বাস। ঘাড় বাঁকিয়ে ভ্রু দ্বয় খানিক কুঁচকে শুধায়,”না করার কথা ছিলো?”
“জানি না, সায়রীকে খুব ভালোবাসো তাই না?”
“ভালোবাসি কিনা জানি না তবে বাকি জীবনটায় জীবনসঙ্গীনি হিসেবে আমার পাশে শুধু ওকেই চাই।”
কথাটা বলে নিচে নেমে গেলো উচ্ছ্বাস। উদাস দৃষ্টিতে টুম্পা এখনো তাকিয়ে রইলো আকাশ পানে। কেউ প্রিয় মানুষ পাওয়ার সুখে আনন্দিত। আর কেউ প্রিয় মানুষ হারিয়ে মলিন মুখে আকাশ পানে চেয়ে বিষাক্ত রাত কাটাতে ব্যস্ত।
চলবে _______
(ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।)