ইসলামিক পোষ্ট

0
1936
রাসূল মোহাম্মদ (সাঃ) একদিন মসজিদে বসে সাহাবীদের সাথে কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে তিনি সাহাবীদের জিজ্ঞেস করলেন ‘তোমরা কি একজন জান্নাতি দেখতে চাও’? সবাই বললেন ‘নিশ্চয়ই’। তখন মোহাম্মদ (সাঃ) বললেন ‘এখন যে লোকটা মসজিদে প্রবেশ করবেন তিনি জান্নাতি’। সাহাবীরা মসজিদের দরোজার দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রইলেন। সবাই দেখলেন সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) মসজিদে প্রবেশ করলেন। দ্বিতীয় দিন মোহাম্মদ (সাঃ) আবারও সাহাবীদের একই প্রশ্ন করলেন যে তারা কি জান্নাতি দেখতে চান? সাহাবীরা উৎসাহ নিয়ে দেখতে চাইলে মোহাম্মদ (সাঃ) আজও বললেন ‘এখন যে লোকটা মসজিদে প্রবেশ করবেন তিনি জান্নাতি’। এই দিনও ঐ সময়ে মসজিদে প্রবেশ করলেন সাহাবী সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রাঃ)। তৃতীয় দিনও রাসূল (সাঃ) একই কথা বললেন এবং এই দিনেও সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) ঐ সময়েই মসজিদে প্রবেশ করলেন। সব সাহাবী বুঝতে পারলেন যে সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) এমনই এক সৌভাগ্যবান যিনি দুনিয়ায় থাকা অবস্থাতেই জান্নাত প্রাপ্তির সুসংবাদ পেয়েছেন।
এই তিনদিনই সাহাবীদের মাঝে একজন ছিলেন যার নাম আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ)। তাঁর খুব জানার ইচ্ছে হলো যে সাদ (রাঃ) কি এমন আমল করেন যেটার কারনে তিনি জান্নাতের সুসংবাদ পেয়ে গেলেন! তিনি ভাবলেন যদি তিনি সাদ (রাঃ) এর সাথে একই বাড়িতে থাকতে পারেন তবে তিনি সেই অজানা আমল সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) গেলেন সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) এর কাছে এবং বললেন ‘ভাই, আমার বাবার সাথে আমার কিছুটা মনোনালিন্য হয়েছে। কয়েকটা দিন কি আমি আপনার বাড়িতে থাকতে পারি’? সাদ (রাঃ) খুব আনন্দে রাজী হলেন এবং বললেন ‘আপনার যে ক’দিন ইচ্ছা আপনি আমার বাড়িতে মেহমান হয়ে থাকবেন’। এরপর আব্দুল্লাহ (রাঃ) এবং সাদ (রাঃ) একত্রে সাদ (রাঃ) এর বাড়ি গেলেন।
প্রথম রাতে আব্দুল্লাহ (রাঃ) সর্বক্ষণ খেয়াল করলেন যে সাদ (রাঃ) কি এমন অজানা আমল করেন। তাঁর ধারনা ছিলো হয়তো সাদ (রাঃ) সারারাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করেন। কিন্তু আব্দুল্লাহ (রাঃ) অবাক হয়ে দেখলেন রাতের খাবারের পর সাদ (রাঃ) যথাসময়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। শুধু শেষরাতে উঠে কিছুক্ষণ তাহাজ্জুদ পড়লেন। আব্দুল্লাহ (রাঃ) বেশ অবাক হলেন। তিনি ভাবলেন যদিও সাদ (রাঃ) সারারাত জেগে ইবাদত করেননি তবে নিশ্চয়ই সারাদিন রোজা রাখবেন। কিন্তু সকালে আব্দুল্লাহ (রাঃ) দেখলেন যে সাদ (রাঃ) নাস্তা করে জীবিকার উদ্দেশ্য বের হয়ে গেলেন। আব্দুল্লাহ (রাঃ) ভাবলেন হয়তো আরও দু’একদিন এই বাড়িতে থাকলে তিনি জানতে পারবেন যে সাদ (রাঃ) কি এমন আমল করেন যার কারনে তিনি জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন। প্রথম রাতের পর আরও দুই রাত আব্দুল্লাহ (রাঃ) কাটালেন সাদ (রাঃ) এর বাড়িতে। কিন্তু এই তিনদিনেও তিনি সাদ (রাঃ) কে ফরজ ইবাদত এবং শেষ রাতের তাহাজ্জুদ ছাড়া বিশেষ কোনো আমল করতে দেখলেন না। তিনদিন পরে আব্দুল্লাহ (রাঃ) আর ধৈর্য রাখতে পারলেন না। তিনি সাদ (রাঃ) কে বললেন ‘ভাই, আমায় ক্ষমা করবেন। আমার বাবার সাথে আমার কোনো মনোমালিন্য হয়নি। আমি এই বাড়িতে থেকে নিবিড়ভাবে আপনায় পর্যবেক্ষণ করে শুধু জানতে চাইছিলাম আপনি কি এমন আমল করেন যার কারণে আপনি জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন’। সাদ (রাঃ) বললেন ‘আমি এমন কোনো বিশেষ আমলতো করিনা’। তবে আব্দুল্লাহ (রাঃ) আবারও জোর দিয়ে জানতে চাইলেন যে তিনি আর কোনো আমল করেন কি না। তখন সাদ (রাঃ) বললেন, ‘হ্যা, আমি একটা কাজ প্রতিদিন করি। রাতে ঘুমানোর আগে আমি অবশ্যই আমার সকল আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী এবং পরিচিতজন সকলকে- যারা আমায় কষ্ট দিয়েছে কিংবা যাদের কারণে আমার কোনো ক্ষতি হয়েছে তাদেরকে মনে মনে ক্ষমা করে দিয়ে ঘুমাই। আমার নিয়ত থাকে- যদি ঘুমের মধ্যে আমি মারা যাই তবে যেনো কারও উপর আমার কোনো দাবী না থাকে’।
সুবাহানআল্লাহ। মানুষকে ক্ষমা করার এই আমল আল্লাহর কাছে এতই পছন্দনীয় হয়েছে যে তিনি তাঁর বান্দাকে দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ পৌঁছে দিয়েছেন। ক্ষমা করার এই মহান শিক্ষা আমাদের মাঝে খুব বেশী নাই। আমাদের সকলকে আল্লাহ ক্ষমা করার এই বিশেষ আমলের তৌফিক দান করুণ…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে