ইরোরা পর্ব-০৫ এবং শেষ পর্ব

0
21

( ১৮+ এ্যালার্ট , প্রাপ্ত বয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)

#ইরোরা
#পর্ব_পাচ ( অন্তিম পর্ব)
#কাওসার_আহমেদ

পরের দিন সবাই ব্যবহারিক খাতা জমা দিচ্ছিল। প্রতি বছর তাদের কলেজে একটি ব্যবহারিক পরীক্ষা হয়, এবং এ বছর খাতা সংগ্রহের দায়িত্ব রিয়ার উপর ছিল। সে সবার কাছ থেকে খাতা নিয়ে অফিসে জমা দেওয়ার দায়িত্বে ছিল। ইরাও তার খাতা জমা দিয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন পর যখন ব্যবহারিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হলো, তখন ইরাকে জানানো হলো যে তাকে ফাইন দিতে হবে, কারণ তার খাতা নাকি জমা পড়েনি। ইরা বুঝতে পারল, রিয়া নিশ্চয়ই কোনো গন্ডগোল করেছে।

ক্লাস শেষ করে ইরা রিয়ার কাছে গিয়ে প্রশ্ন করল,

“আমার খাতা অফিসে জমা দিলে না কেন?”

“কিসের খাতা?” রিয়া নির্লিপ্তভাবে জিজ্ঞেস করল।

“কিসের খাতা মানে! ব্যবহারিক খাতা, যেটা আমি তোমাকে দিয়েছিলাম।”

রিয়া হেসে বলল, “কোনো প্রমাণ আছে তোর কাছে?”

ইরা কিছু না বলে ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ, রিয়া পেছন থেকে জুতা খুলে ইরার দিকে ছুড়ে মারল। জুতাটি ইরার পিঠে আঘাত করল। আঘাত পেলেও ইরা কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে গেল। তার এই অবস্থায় দেখে অন্যরা হাসাহাসি করতে লাগল।

ইরা একটা গাছের নিচে বসে আছে। তখন ক্লাস হচ্ছে না। হঠাৎ একটি মেয়ে এসে জানায় যে রিয়া তাকে ক্লাসরুমে যেতে বলেছে। কিছুক্ষণ পর ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকায় ইরা ক্লাসরুমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ক্লাসে ঢোকার পর রিয়া ইশারায় তাকে কাছে আসতে ইঙ্গিত করে।

রিয়া বলল, “নেচে নেচে নিজের পরিচয় দে।”

ইরা অবাক হয়ে বলে, “তোমরা কি আমার সাথে মজা করছো?”

রিয়া মুচকি হেসে বলল, “আমাদের তো মজা লাগছে। তোর কেমন লাগছে জানি না। এখন সুন্দর করে একটা নাচ দে এবং নিজের নাম বল।”

ইরা দৃঢ়ভাবে বলল, “পারবো না। আমাকে কী পুতুল মনে হয়?”

রাইছা খোঁচা দিয়ে বলল, “রাগ হচ্ছে বুঝি।”

নিহা তখন ঠাট্টা করে বলল, “তোর নাচা লাগবে না। কিছু প্রশ্নের উত্তর দিলে তোকে ছেড়ে দেবো। তুই কী ভার্জিন?”

ক্লাসরুমে তখন ইরা, নিহা, রাইছা আর রিয়া ছাড়া আর কেউ নেই। নিহার কথা শুনে ইরা রেগে গিয়ে বলল, “আমাকে কী তোমার মতো চরিত্রহীন মনে হয়?”

ইরার কথা শুনে নিহা রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে চুলের মুঠি ধরে মারার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। ঠিক তখনই স্যার ক্লাসে প্রবেশ করেন । স্যারের সাথে সাথে অন্যারাও ক্লাসে আসে। ক্লাস শেষে, কলেজ ছুটির সময়, নিহা ক্রমাগত বলে চলেছে, “ইরা আমাকে চরিত্রহীন বলেছে। এর জন্য কঠিন শাস্তি পেতে হবে।”

নাহিদ পাশ থেকে শান্ত করতে বলে, “শান্ত হ।”

পরের দিন নিহা ইরার হাত পু*ড়ি*য়ে দেয়। ইরার হাতের বেশ কিছু জায়গা পুড়ে গেছে, আর ব্যথায় সে কাঁদছে। ইরার মুখে কাপড় গুঁজে দিয়ে, হাত বেঁধে রাখা হয়, আর তখনই অ*ত্যা*চা*র শুরু করে নিহা। সাথে ছিল রিয়া ও রাইছা। নিহা ইরাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“তুই আমাকে চরিত্রহীন বলেছিলি, তাই না? এবার মজা বুঝ। তোকে যদি আমি চরিত্রহীন না বানিয়েছি, তবে আমার নাম নিহা না।”

ইরা মাটিতে শুয়ে আছে। ওরা তিনজন কয়েকটা লাথি মেরে ইরার হাতের বাঁধন খুলে রেখে চলে যায় লাইব্রেরিতে। কলেজে রাইছা, নিহা, রিয়াদের ভয়ে কেউ তাদের সামনে পড়তে সাহস করে না। তাই লাইব্রেরিও তখন ফাঁকা ছিল। সেদিন ইরা আর ক্লাস করেনি। বাড়ি ফেরার পথে একটি ফার্মেসি থেকে কিছু ওষুধ নিয়ে সে সোজা বাড়ি চলে যায়। সুস্থ হতে এক সপ্তাহ লেগে গেল, এই সময়টাতে কলেজেও যেতে পারেনি ইরা।

এক সপ্তাহ পর ইরা কলেজে ফিরে এলে নাহিদা তাকে লাইব্রেরিতে যেতে বলে। সিনিয়র হওয়ায় নাহিদের কথা তাকে শুনতেই হয়। লাইব্রেরিতে প্রবেশ করতেই ইরা দেখে রাকিব ও লিমন সেখানে আছে। তারা দুজন বেরিয়ে যাওয়ার সময় লাইব্রেরির দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, লাইব্রেরিতে ইরা ও নাহিদ খারাপ কিছু করছিল। অথচ ইরা কিছুই করেনি। তখনই ইরার মনে পড়ে যায় নিহার কথা—সে বলেছিল যে ইরাকে চরিত্রহীন বানাবে। নাহিদের মাধ্যমে ইরাকে লাইব্রেরিতে পাঠানো, এবং তারপর লিমনের দরজা বন্ধ করে দেওয়া—এসব ঘটনার একজন শিক্ষিকা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তিনি জানতেন যে ইরা নির্দোষ, কিন্তু কাউকে কিছু বললেন না। প্রিন্সিপাল স্যার ইরা ও নাহিদকে অফিসে ডেকে বেশ কিছুক্ষণ বকাঝকা করেন, বিশেষ করে ইরার প্রতি উনার রাগ বেশি ছিল।

অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ইরার জীবন যেন তছনছ হয়ে গেল। একটা থাপ্পড়ের বদলে তাকে এতকিছু সহ্য করতে হলো, যা সে কল্পনাও করতে পারেনি।

এই ঘটনার পর থেকে সবাই ইরার দিকে সন্দেহের চোখে তাকাতে শুরু করে। কোনো দোষ না করেও তাকে “চরিত্রহীন” অপবাদ বয়ে বেড়াতে হচ্ছে, যা ইরার পক্ষে সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে ইরা, এবং এক সপ্তাহ কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। এক সপ্তাহ পর, যখন সে কলেজে ফিরে আসে, তখন রাইছা, রিয়া এবং অন্যদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। কিন্তু তা সম্ভব হলো না। ইরা যখন ওয়াশরুমে গেল, রাইছা এবং অন্যরাও তার পিছু নেয়। পিছন থেকে নিহা ইরার হাত ধরে সামনের দিকে ঘোরায়। ইরা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

নিহা ইরাকে প্রশ্ন করে,
“এতদিন কলেজে আসলি না কেন?”
“শরীর খারাপ ছিল,” ইরা উত্তর দেয়।
রিয়া পাশ থেকে বলে উঠতে যায়, “ওই দিন কী নাহিদ একটু বেশিই…”

তাকে থামিয়ে ইরা বলে, “তোমরা ভালো করেই জানো, ওই দিন কিছুই হয়নি।”
রাইছা তখন মুচকি হেসে বলে, “কে বলল আমরা জানি কিছু হয়নি? আমরা তো জানি অনেক কিছু হয়েছে। বল না, কী কী হয়েছে?”

এরপর সবাই হাসতে শুরু করে, এবং তারা ইরার সাথে আরও বাজে ব্যবহার করতে থাকে। কেউ কেউ ইরার গায়েও হাত তুলে। তারা যখন ইরাকে ছেড়ে দেয়, তখন নাহিদ, লিমন, রাকিব এবং আরও কয়েকজন ইরাকে ডেকে নিয়ে বিভিন্ন অশালীন প্রশ্ন করতে থাকে। ইরা কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয় না, শুধু চুপচাপ কান্না করতে থাকে।

একজন মেয়েকে এভাবে মানসিকভাবে নির্যাতন করা যে কতটা নির্মম হতে পারে, তা তারা হয়তো বুঝতে পারছে না। ইরা সাহস নিয়ে কলেজে এসেছিল, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কলেজে আসাই উচিত হবে না। কলেজে না এলে বাড়িতে কী জবাব দেবে, সেটাও ভাবতে পারছে না। ইরা কী করবে, নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না। অথচ, এখন যদি নাহিদ, রিয়াদের কাছে ক্ষমা চায়, তবে তারা ইরাকে আরও দুর্বল মনে করে আরও অত্যাচার করবে।

ইরার সাথে এমন হচ্ছে তা নয়, আরও অনেকের সাথেই হচ্ছে। তবে, ইরার ওপর নির্যাতনটা যেন একটু বেশিই। কেউই প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না, কারণ নাহিদ, রিয়া – এরা বড়লোকের সন্তান। ইরার সাদা ত্বকে আঘাতের চিহ্নগুলো এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এগুলো দেখলেই ইরার চোখে পানি চলে আসে। কিন্তু সে বুঝতে পেরেছে, এভাবে চলতে থাকলে হবে না। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ইরা এবার সাহস নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে ঠিক করে, কলেজে যাবে, আর কে কী বলল, কে কী করল – এসব নিয়ে আর মাথা ঘামাবে না। রিয়াদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে। ইরা এতদিন যথেষ্ট অত্যাচার সহ্য করেছে, এবার কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে হবে।

কলেজে যাওয়ার পর, আগের মতোই রিয়া, রাইছা ও নিহা এসে হাজির হয় তার সামনে। রিয়া নিজের জুতা খুলে ইরার দিকে ছুড়ে মারে। ইরা জুতাটা হাতে তুলে নিয়ে রিয়ার কাছে এগিয়ে যায়, যেন তাকে ফেরত দেবে। কিন্তু হঠাৎ ইরা সেই জুতা দিয়ে রিয়ার নাকে আঘাত করে। রিয়ার নাক দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। নিহা ও রাইছা দ্রুত রিয়াকে নিয়ে পাশের ফার্মেসিতে যায়।

ইরা এখন নিজের প্রতি হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। অনেক দিন পর তার একটা সপ্তাহ শান্তিপূর্ণ কেটেছে, যদিও রিয়া, রাইছা, আর নিহার সাথে হাতাহাতি হয়েছে, এমনকি কিছু ছেলেদের সাথেও ঝামেলা হয়েছে।

দ্বিতীয় সপ্তাহে, ইরা যখন কলেজে যায়, তখন নিহা তাকে লাইব্রেরিতে ডেকে নিয়ে যায়, বলার জন্য যে তারা সবকিছু মিটমাট করতে চায়। ইরাও আশায় খুশি মনে লাইব্রেরিতে যায়। কিন্তু লাইব্রেরিতে গিয়ে সবকিছু বদলে যায়। রিয়া তাকে একটি ভিডিও দেখায়, যেখানে ইরার ওয়াশরুমের দৃশ্য ধরা আছে। ইরা জানতেও পারেনি যে ওয়াশরুমে গোপন ক্যামেরা ছিল। যদিও ভিডিওতে গভীর কিছু নেই, তবু ভিডিওটা তার দুর্বলতা হয়ে দাঁড়ায়। রিয়া ইরাকে বলে,

“কেমন লাগলো ভিডিওটা? তুই আমাদের বাধ্য করেছিস এত নিচে নামতে।”

এই বলে রিয়া ইরার নাকে ঘুষি মারে। ইরা কিছুটা দূরে গিয়ে পড়ে, আর তার নাক থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। রিয়া হুমকি দেয় যে, এই ভিডিও ভাইরাল করে দেবে। এবার ইরার ওপর চাপ বেড়ে যায়, কারণ এখন তাকে বাধ্য হয়েই রিয়াদের কথা শুনতে হবে। ইরার শক্তি যেন আবার ভেঙে পড়ে।

আঘাত পেয়ে ফার্মেসি থেকে চিকিৎসা নিয়ে ইরা সিদ্ধান্ত নেয় যে সে প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে গিয়ে সব জানাবে। দ্রুত স্যারের অফিসের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু সেখানেও বিপদ তার জন্য অপেক্ষা করছিল। স্যারকে সব বলতে তাড়াহুড়ো করে সোজা তার রুমে প্রবেশ করে ইরা। ভেতরে গিয়ে দেখে, প্রিন্সিপাল স্যার ও এক শিক্ষিকা অবৈধভাবে একে অপরকে জড়িয়ে আছেন। ইরা ওই শিক্ষিকাকে চিনতে পারে—এই সেই শিক্ষিকা, যিনি লাইব্রেরির ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন। ইরা কিছু না বলে দ্রুত স্যারের অফিস থেকে বেরিয়ে আসে। ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানি দেয় এবং পাঁচ মিনিটের মতো সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে।

ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার সময়ই রিয়া, রাইছা, নাহিদসহ কয়েকজন এসে তাকে ঘিরে ধরে। তারা ইরার হাত-পা ও মুখ বেঁধে ওয়াশরুমে ফেলে রেখে চলে যায় এবং যাওয়ার সময় বাইরে থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়। ত্রিশ মিনিট পর, যখন কলেজ প্রায় ফাঁকা, তখন তারা আবার আসে, সাথে প্রিন্সিপাল স্যার ও সেই শিক্ষিকাও।

ওরা ইরার ওপর শারীরিক নি*র্যা*ত*ন করতে থাকে। সুঁই দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে, হাত-পা পুড়িয়ে দেয়। মুখে কাপড় ঢুকিয়ে দেওয়ায় ইরা চিৎকার করতে পারছিল না। নিহা এবার পলিথিনের ব্যাগ দিয়ে ইরার মুখ ঢেকে দেয়, যার ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল ইরার। এ ছাড়াও তাকে বারবার লাথি মারছিল। একপর্যায়ে ইরা অজ্ঞান হয়ে যায়।

প্রিন্সিপাল স্যার ইরাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রচণ্ড নির্যাতনের কারণে তার শরীর ভীষণভাবে ক্ষতবিক্ষত হয়। ইরার চিকিৎসা শুরু হয়, কিন্তু অজ্ঞান হওয়ার ঠিক আগে সে শুনতে পায় প্রিন্সিপাল স্যার বলছেন যে, ইরা তাকে ওই শিক্ষিকার সাথে দেখে ফেলেছিল বলে তাকে এমন শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এই কাজে প্রিন্সিপালের সাথে নাহিদ, রিয়া, নিহা সহ মোট নয়জন মিলে অংশ নিয়েছিল, তাদের মনের সমস্ত শখ মিটিয়েছে। পরে প্রিন্সিপাল স্যার ইরার বাবা-মাকে খবর দেন যে ইরা হাসপাতালে আছে।

পরদিন ইরার বাবা কলেজে আসেন। তিনি মেয়ের ওপর এত বড় অত্যাচারের বিচার চান। প্রিন্সিপাল স্যার বলেন,

“দেখুন, আপনার মেয়েও কিন্তু কম দোষী নয়। যাদের সাথে আপনার মেয়ের সমস্যা হয়েছে, তারা কিন্তু সমাজে অনেক ক্ষমতাশালী। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললে পরে সামলাতে পারবেন তো? বরং কথা বলে মিটিয়ে নিন সবকিছু।”

ইরার বাবা জবাব দেন, “আমি এর বিচার চাই। আমি থানায় যাব।”

প্রিন্সিপাল স্যার তখন বলেন, “থানায় গিয়ে কী করবেন? পুলিশ এই কেস নিতে আগ্রহী হবে না। আপনার হাতে কোনো প্রমাণ নেই। বরং তাদের কাছে আপনার মেয়ের বিরুদ্ধে প্রচুর প্রমাণ আছে।”

এই বলে প্রিন্সিপাল স্যার ইরার কিছু খারাপ ছবি ইরার বাবাকে দেখান। গতকাল ইরা অজ্ঞান হওয়ার পর তখন বেশ কিছু ছবি তুলে তারা। তারা এমনভাবে ছবি তুলে এবং হালকা এডিট করে এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যে মনে হচ্ছে ইরা ইচ্ছে করেই নাহিদ, লিমনদের সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছে। আরও কিছু ছবি দেখিয়ে প্রিন্সিপাল স্যার বলেন,

“দেখুন, আপনার মেয়ে বাড়িতে ভালো সাজে, কিন্তু কলেজে এসে সে অন্যরকম। ছেলেদের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়, এমনকি আরও অনেক কিছু করে।”

ইরার বাবা কোনো কথা না বলে স্যারের অফিস থেকে বেরিয়ে আসেন। তিনি ছবিগুলো অফিসেই রেখে দেন। নিজের মেয়ের এমন ছবি দেখে তিনি রাস্তার মধ্যেই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন এবং সেখানেই তার মৃ”ত্যু হয়।

ওদিকে হাসপাতালে ইরার চিকিৎসা চলছিল। প্রিন্সিপাল স্যার ইরার চিকিৎসার খরচ বহন করছিলেন। প্রায় দশ দিন পর ইরা কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে। বাড়ি এসে জানতে পারে, তার বাবা মারা গেছেন।

ইরা অতীতের ভাবনা থেকে ফিরে কলিং বেলের শব্দ শুনতে পায়। দরজা খুলতেই বাহিরে পুলিশকে দেখতে পায়। পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।

ইরার সামনে বসে আছেন আরমান ও ইশিতা। কেথজি স্যামুয়েল অন্য একটি কেসের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। আরমান প্রথমে প্রশ্ন করলেন,

“এতগুলো মানুষকে কেন খু*ন করেছিলে?”

ইরা ঠাণ্ডা মাথায় জবাব দিল,
“আপনি কি নিশ্চিত যে আমিই খু*ন করেছি?”

আরমান দৃঢ়ভাবে বললেন,
“প্রমাণ তো অবশ্যই আছে। হোক সেটা বড়, কিংবা ছোট। নিজের অপরাধ স্বীকার করে নাও।”

“প্রমাণ কী?”

“প্রমাণ হলো তোমার র*ক্ত। তুমি শেষ খু*ন করেছিলে তোমার কলেজের প্রিন্সিপালকে। ঘটনাস্থলে আমরা তোমার র*ক্ত পেয়েছি। পরীক্ষা করে জানতে পারলাম তুমি ক্যান্সারে আক্রান্ত। এই শহরের প্রতিটি হাসপাতালে খোঁজ নিয়েছি, কিন্তু কারোর র*ক্তে*র গ্রুপ তোমার সাথে মিলে না। বেশ কয়েকজনের র*ক্তে*র সাথে ঘটনাস্থলে পাওয়া র*ক্তে*র গ্রুপ মেলানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু ফলাফল শূন্য। তুমি এবং তোমার র*ক্তে*র গ্রুপ ছিল আলাদা। তা ছাড়া প্রিন্সিপাল স্যার ও ওই শিক্ষিকার ব্যাংক লকার থেকে দুইটা ফাইল খুজে পাই আমরা। দুইটা ফাইল ছিল তোমাকে নিয়েই।

ইরা এক সেকেন্ড চুপ থেকে বলল,
“আমি জানি আমি মা*রা যাবো। তাই তো, যাওয়ার আগে নিজেকে ধরা দিলাম। আমার নিজের র*ক্তে*র স্যাম্পল ইচ্ছে করেই ফেলে এসেছি।”

আরমান বুঝে গেল, কিন্তু আরো এক প্রশ্ন করলেন,
“তবে তুমি এতগুলো মানুষকে কেন খু*ন করলেন?”

ইরা এবার সবকিছু খুলে বলল। তার কথা শুনে আবার প্রশ্ন করলেন,

” তুমি নিশ্চিত কীভাবে হলে প্রিন্সিপাল স্যার তোমার বাবাকে তোমার বাজে ছবি দেখিয়েছেন এবং হার্ট অ্যাটাক করে মা*রা যান।”
” “অফিসার, ‘খুনের সাক্ষী বানে দেয়’—এমন একটা প্রবাদ শুনেছিলাম। পাঁচ বছরের বেশি সময় অপেক্ষা করেছি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। এই পাঁচ বছর এমনি এমনি যায়নি। নিজের মাকে হারিয়েছি, এই পৃথিবীতে একা একা নিজেকে তৈরি করেছি। প্রিন্সিপালই আমার বাবার খুনি, এটা ওই পাঁচ বছরে আমি খুঁজে নিয়েছি। প্রিন্সিপাল নিজেই এই কথা স্বীকার করেছেন।”

“দশজন বন্ধুদের মধ্যে নয়জনকে খু*ন করলেন, একজনকে কেন ছেড়ে দিলেন?”

ইরা একটু বিরতি নিয়ে বলল,
“এই একজন তখন ছিল না। আমার সাথে অন্যায় হওয়ার পর তখন সে আসে।”

আরমান আরো কিছু জানতে চাইলেন,
“প্রথম যে ব্যক্তিকে খু*ন করলেন, তার কারণ কী?”

ইরা তার চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নিলো, তারপর বলল,
“সে একজন শিক্ষক ছিল। ছাত্রীদের দিকে লোভী দৃষ্টিতে তাকাতো, খারাপ প্রস্তাব দিতো, খারাপ টাচ করতো।”

এই বলে ইরা চেয়ারে হেলান দিয়ে একটু শ্বাস নিলো। আরমান তাকে আরো কিছু প্রশ্ন করতে চাইলেন, কিন্তু কোনো উত্তর না পেয়ে ইশিতাকে ইশারায় বললেন ধাক্কা দেওয়ার জন্য।

ইশিতা ধাক্কা দিলে তারা বুঝতে পারলো, ইরা আর বেঁচে নেই। কিন্তু ইরার তো ক্যান্সারের প্রথম স্টেজ ছিল! হঠাৎ এভাবে মৃ*ত্যু*র মানে কী?

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে