ইরোরা পর্ব-০৪

0
12

( প্রাপ্ত বয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)

#ইরোরা
#পর্ব_চার
#কাওসার_আহমেদ

নিহা পলিথিনের ব্যাগ দেখে আতঙ্কে জমে গেল, তার পায়ের ব্যথাও তীব্র। খু*নি ঠোঁটে ঠাণ্ডা হাসি ফুটিয়ে বলল,
“ভয় পেও না। ভয় পেলে চলবে না। তুমি তো স্ট্রং গার্ল! দেখো, পলিথিনের ব্যাগটা ফেলে দিলাম।”
এই বলে খু*নি পলিথিনের ব্যাগটা মাটিতে ফেলে দিল। এরপর সে উঠে নিহার পেছনে দাঁড়াল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আরেকটা পলিথিনের ব্যাগ দিয়ে নিহার মুখ ঢেকে দিল। নিহার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, সে ছটফট করতে লাগল। কিছুক্ষণ পর খু*নি তার মুখ থেকে পলিথিনের ব্যাগ সরিয়ে নিল। মুক্তির স্বাদ পেয়ে নিহার মনে হলো, যেন বন্দি পাখি খাঁচা থেকে ছাড়া পেয়ে উড়ে যাচ্ছে আকাশে। সে ঘন ঘন, জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছিল।

ঠিক তখনই খু*নি আবার পলিথিনের ব্যাগ দিয়ে তার মুখ চেপে ধরল। নিহার হাত-পা বাঁধা, শরীর ঝাঁকানো ছাড়া আর কিছু করার উপায় নেই। কিছুক্ষণ পর আবার ব্যাগ সরিয়ে নিল খু*নি। এবার সে নিহার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“কেমন লাগছে, নিহা?”

নিহা কোনো উত্তর দিল না। খু*নি আবার প্রশ্ন করল,
“কেন করলে আমার সাথে এমন? কেন?”

নিহা এবারও কোনো উত্তর দিল না। তার কাছে সত্যিই কিছু বলার ছিল না। খু*নি তৃতীয়বার পলিথিনের ব্যাগ দিয়ে তার মুখ চেপে ধরল। এবার নিহা ধীরে ধীরে অজ্ঞান হয়ে গেল।

খু*নি ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
“এইটুকুতেই এমন অবস্থা? এখনও তো অনেক কিছুই করা হলো না। তোমার জন্য আরো বড় ব্যথা অপেক্ষা করছে।”

খু*নি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল, কখন নিহার জ্ঞান ফিরবে। সে পাশের চেয়ারে বসে ভাবছিল, এরপর কী করবে। তার মুখে সেই ঠাণ্ডা হাসি ফুটে আছে, যেন সাফল্যের খুব কাছেই পৌঁছে গেছে। অবশেষে নিহার জ্ঞান ফিরল। খু*নি ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে নিহার পাশে গিয়ে তাকে চেয়ার থেকে টেনে মাটিতে ফেলে দিল। এরপর আবার পলিথিন দিয়ে তার মুখ ঢেকে ইচ্ছেমতো লাথি মারতে শুরু করল।

প্রথমত, নিহার শ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে, দ্বিতীয়ত, শরীরে একের পর এক আ*ঘা*ত আসছে। খু*নি ইচ্ছাকৃতভাবে আস্তে আস্তে, অপ্রতিরোধ্য আনন্দ নিয়ে তার ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর খু*নি থামল। সে নিহার মুখ থেকে পলিথিন সরিয়ে তাকে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ দিল। তারপর আবার তাকে চেয়ারে বসাল। এবার খু*নি নিজেও তার সামনে বসে বলল,

“কিছু মনে পড়ছে, নিহা? কষ্ট কাকে বলে অনুভব করতে পারলে?”

নিহা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাল। খু*নি তাতে সন্তুষ্ট হলো না। এবার সে আরও ভয়াবহ অ*ত্যা*চা*র শুরু করল। প্রথমে গরম র*ড দিয়ে নিহার শরীরে আ*ঘা*ত করল, তারপর ড্রি*ল মে*শি*ন দিয়ে তার শরীর ছি*দ্র করল। যেমনটা সে আগেও করেছিল।

কাজ শেষ করে খুনি একবার ঘড়ির দিকে তাকাল। সময় তখন এগারোটা ছয় মিনিট। বৃষ্টি শুরু হয়েছে, এবং ঝড়ের সম্ভবনা বেশি। খু*নি মনে মনে এটাই চায়—বৃষ্টি যেন চলতে থাকে। তাকে এখন যেতে হবে কোথাও, তার শেষ শিকারকে পাওয়ার জন্য একটি ঢিল ছুঁড়তে হবে। কাজ না হলে তার জন্য বিকল্প পরিকল্পনাও প্রস্তুত। পরিকল্পিত জায়গায় পৌঁছাল, বারোটা বাজতে যাচ্ছে। খু*নি*র শেষ শিকার সেখানেই অপেক্ষা করছে। প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে, এবং রাস্তা প্রায় জনশূন্য। রাস্তার পাশে মানুষের বসার জন্য যে জায়গাটি আছে, সেখানেই বসে আছেন একজন বয়স্ক লোক, গাড়ির অপেক্ষায়। বৃষ্টির কারণে রাস্তা নির্জন হয়ে গেছে, দুই-তিন ঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টি থামার কোনো সম্ভাবনা নেই। খু*নি এবার লোকটিকে লক্ষ্য করে ডাক দিল,

“স্যার, কোথায় যাবেন? আসেন, আমি আপনাকে পৌঁছে দেই।”

“ধন্যবাদ, তার প্রয়োজন নেই। আমার ড্রাইভার আসছে,” বয়স্ক লোকটি শান্ত গলায় উত্তর দিলেন।

“দুঃখিত স্যার, আপনার ড্রাইভার আসতে পারবে না। পেছনের ব্রিজের সামনে একটা বড় গাছ ভেঙে পড়েছে,” খু*নি ঠান্ডা গলায় জানাল।

বয়স্ক লোকটির মুখ চিন্তায় ভরে গেল। তার ফোনেও চার্জ নেই, তাই কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। বিপদ বুঝি এমনভাবেই আসে। তিনি দেখলেন যে বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষণ নেই। মনে কিছু ভাবলেন, তারপর গাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলেন। লোকটি গাড়িতে উঠতেই ঠান্ডায় হাঁচি দিলেন, এবং সেই হাঁচি যেন থামছেই না। খু*নি দ্রুত তার কাছে একটি রুমাল এগিয়ে দিয়ে বলল,

“স্যার, মুখে রুমাল দিয়ে হাঁচি দিন।”

“স্যার, কোথায় যাবেন আপনি? স্যার! স্যার!”

কোনো উত্তর না পেয়ে খু*নি পেছনে তাকিয়ে দেখল, তার কাজ হয়ে গেছে। মুখে একটি ঠান্ডা হাসি ফুটে উঠল। রুমালে ক্লোরোফর্ম ছিল, যার ফলে বয়স্ক লোকটি অজ্ঞান হয়ে গেছে। ভুলবশত নিজের রুমাল ব্যবহার করতে ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। খু*নি এবার গাড়ি চালিয়ে তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।

রাত দুইটা পঁয়ত্রিশ মিনিট। কিছুক্ষণ আগে খু*নি তার গন্তব্যে পৌঁছেছে। তার সঙ্গে বয়স্ক লোকটিও রয়েছে, যার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় সে বসে আছে। লোকটির জ্ঞান ফিরতেই কানে ভেসে এলো একটি কণ্ঠস্বর—

“শুভ জন্মদিন, স্যার।”

বয়স্ক লোকটি চমকে উঠে বললেন, “তুমি? তুমি তো…!”

শব্দ শুনে তিনি সামনে তাকালেন, এবং খু*নি*কে দেখে বিস্ময়ে চোখ বড় করে ফেললেন।

“হ্যাঁ স্যার, আমিই। আপনাকে ছাড়া কীভাবে চলে যাই বলুন! কেমন লাগল জন্মদিনের উপহার?”

“উপহার?” লোকটির মুখ বাঁকা হয়ে গেল।

“ওমা, ভালো লাগেনি স্যার? কোনো সমস্যা নেই। আপনার জন্য আরও একটা উপহার আছে। আশা করি, এবার ভালো লাগবে,” খু*নি মুচকি হেসে বলল এবং অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। লোকটি কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে সেদিকেই তাকিয়ে থাকলেন।

এর কিছুক্ষণ পর খু*নি আবার ফিরে এল, সঙ্গে একজনকে নিয়ে। তবে কে সেই ব্যক্তি তা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না, কারণ তার পুরো শরীর কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। খুনি লোকটির সামনে এসে কাপড় সরাতেই, বয়স্ক লোকটি চমকে উঠে চিৎকার করে বললেন,

“সিমরান! ওকে তুমি ছেড়ে দাও, প্লিজ। সিমরান, ভেগে যা মা! উঠ, সিমরান, উঠ!”

খু*নি যাকে নিয়ে এসেছে, তিনি লোকটির মেয়ে, সিমরান। মেয়েকে এই অবস্থায় দেখে লোকটির অবস্থা একেবারে নাজুক হয়ে পড়ল। খু*নি*র মুখে তখন এক ভয়ানক হাসি। সে আত্মহারা হয়ে বলল,

“টাকার গোলামি করতে করতে যখন আপনার বিবেক-বুদ্ধি কাজ করছিল না, ঠিক এই মুহূর্তেও তাই হচ্ছে। এখন থেকে মুক্তি সহজে মিলবে না। আমি না চাইলে কেউ এখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে না। তাই মেয়েকে যতই ডাকুন, যতই চিৎকার করুন, কোনো লাভ হবে না।”

“দয়া করে আমার মেয়েটাকে ছেড়ে দাও,” লোকটি কান্নাজড়িত কণ্ঠে অনুনয় করলেন।

“পছন্দ হয়েছে উপহার?” খু*নি ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞাসা করল।

“দয়া করে, ছেড়ে দাও মেয়েটাকে।”

“তা কি করে হয়, স্যার! আপনার মেয়েকে দিয়ে এখনও অনেক কিছু করার বাকি আছে,” খু*নি হেসে বলল।

“আমার সাথে যা ইচ্ছে করো, কিন্তু আমার নিষ্পাপ মেয়েটাকে ছেড়ে দাও!” লোকটির গলায় বেদনাভরা আকুতি।

“আমিও তো নিষ্পাপ ছিলাম। আমার বাবার কী অপরাধ ছিল, যে তাকে এইভাবে মরতে হয়েছে? এখন আপনি বুঝতে পারছেন আমার বাবা-মা কতটা কষ্ট পেয়েছিলেন। ইশ, মেয়েটা যদি সজ্ঞানে সব দেখতে পারত, কত ভালোই না হতো! বরং আমরা তার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করি।”

“না! না! তুমি এমন কিছু করো না!” লোকটি আতঙ্কে চিৎকার করে উঠলেন।

ততক্ষণে বয়স্ক লোকটি বুঝতে পারলেন যে তার মেয়ের সঙ্গে কী হতে চলেছে। তিনি বারবার মেয়ের প্রাণভিক্ষা চাইতে থাকলেন, কিন্তু খু*নি*র মন কোনোভাবেই গলল না।

খু*নি কিছুটা দূরে গিয়ে কিছু একটা ভেবে আবার বয়স্ক লোকটার কাছে এসে বলল,
“মেয়েকে বাঁচাতে চান?”
বয়স্ক লোকটি দ্রুত মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালেন। তারপর বাকিদের মতো তারও একই পরিণতি হলো।

সকাল নয়টা বেজে আঠারো মিনিট। স্যামুয়েল ও আরমান কেস নিয়ে আলোচনা করছিল। ঠিক তখনই ইশিতা এসে জানাল,
“সিমিরাতি কলেজের এক্স-প্রিন্সিপালের লা*শ পাওয়া গেছে।”
ইশিতার কথা শুনে স্যামুয়েলের শেষ ভরসাটাও যেন বাতাসে মিলিয়ে গেল। স্যামুয়েল ভেবেছিল ওই প্রিন্সিপাল হয়তো তাদের কিছু সাহায্য করতে পারবেন, কিন্তু এখন সেই আশা শেষ হয়ে গেল।

টিভিতে নিউজে দেখানো হচ্ছে, নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে নিরীহ মানুষদের। কিন্তু এর পেছনের কারণ কী? এটাই কি শেষ হত্যাকাণ্ড, নাকি আরও কিছু বাকি আছে?

ইরা বসে টিভি দেখছিল। সাংবাদিকের কথা শুনে হাসতে হাসতে বলল, “নিরপরাধ, না ছাই!”

এই মুহূর্তে তার মনে পড়ে গেল অতীতের কথা।

অতীত

“তুমি যদি সেদিন আমাকে দাঁড় করিয়ে না রাখতে, তাহলে আমার পা ফুলতো না। তোমার কারণেই আমার পা ফুলে গেছে, যার ফলে আমি স্কুলে যেতে পারিনি, আর ক্লাস টেস্টও দিতে পারিনি। এসবের জন্য একমাত্র তুমিই দায়ী, রাকিব।”

ইরা রাগে ফুঁসে উঠে কথাগুলো বলল, আর রাকিবের গালে একটি থাপ্পড় বসিয়ে দিল। রাকিবের বাবা অনেক প্রভাবশালী, আর কলেজেও সে আলাদা ক্ষমতার অধিকারী। ভরা ক্লাসে ইরার হাতের থাপ্পড় তার ইগোতে আঘাত করল। রাকিব কিছু বলার আগেই তার বান্ধবী রিয়া বাধা দিল,

“ছেলে হয়ে একটা মেয়ের গায়ে হাত তুলবি, এটা ঠিক না। ব্যাপারটা আমরা দেখছি।”

তারপর সবাই আবার যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

ইরা ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন সেখানে রিয়া, রাইছা, আর নিহা এসে হাজির হলো। নিহা ওয়াশরুমের মেইন দরজাটা বন্ধ করে দিল। জায়গাটা বেশ বড়, একসাথে চার-পাঁচটা ওয়াশরুম রয়েছে। নিহা ইরাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“বেশ পাকনা বনে গেছিস তুই! পুরো কলেজে কেউ আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না, আর তুই রাকিবের গায়ে হাত তুললি। সাহস আছে বলতে হবে!”

ইরা সাহসের সাথে উত্তর দিল, “আমার কাছে যা সত্যি মনে হয়েছে, তাই করেছি। যদি পুরো কলেজ তোমাদের বিরুদ্ধে কথা বলতো, তাহলে আর কাউকে র‍্যাগিং করার সুযোগ পেতে না।”

ইরার সাহসিকতার প্রতি আক্রোশে রিয়া ইরার চুলের মুঠি ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল।

“অনেকদিন কাউকে টার্গেট বানাইনি। অবশেষে একজন পেলাম।” রিয়া ইরার পেটে হাঁটু দিয়ে আঘাত করল। ব্যথায় ইরা হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়ল। রাইছা ইরার মুখ চেপে ধরে রিয়াকে বলল, “সি*গা*রে*ট এনেছিস?”

“হ্যাঁ,” রিয়া উত্তরে জানাল।

রিয়া জ্ব*ল*ন্ত সি*গা*রে*ট*টা রাইছার হাতে দিল। ইরা মনে মনে ভাবল, “সি*গা*রে*ট দিয়ে কী করবে এরা? জোর করে খাওয়াবে নাকি? যদি তাই হয়, তবে খুব খারাপ হবে। অনুরোধ করবো কী না খাওয়ানোর জন্য? কিন্তু অনুরোধ করলে তো ওরা বুঝে যাবে এটা আমার দুর্বলতা। একবার দুর্বলতা বুঝতে পারলে বারবার এইভাবেই আ*ঘা*ত করবে। কী করবো আমি?”

ইরা কাঁপতে কাঁপতে বলল, “আমাকে আরও মারো, কিন্তু জোর করে সি*গা*রে*ট ,,,,,”

রাইছা কোনো উত্তর না দিয়ে জ্ব*ল*ন্ত সি*গা*রে*ট ইরার হাতে চেপে ধরল। ইরা ব্যথায় কাতরালেও, মুখ বন্ধ থাকায় চিৎকার করতে পারছিল না।

“আজকে তো শুধু হাত পু*ড়ি*য়ে*ই গেলাম। কিন্তু অন্যদিন এমন জায়গায় পোড়াবো, লুকাতে পারবি না!” বলে রাইছা এবং বাকিরা ওয়াশরুম ত্যাগ করল।

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে