#ইরাবতী
#পর্ব-৩
লিখাঃঅরণ্য
আনমোনে সিএনজি চলছে।পেছনের সিটে কপোত কপোতি সেই আগের মতো দুপাশে বসে আছে।একজন পারলে হাউমাউ করে কান্না করতো।বিভোর বাইরে তাকিয়ে ভাবছে একি করে বসলো সে!
ইরা চকলেট বাচ্চাদের মতো করেই খায়।সফট ডেইরী মিল্ক খেতে গেলে মাঝে মাঝেই তার ঠোঁটের পাশে লেগে যায়।এ নতুন নয়।বিভোরও নিজের রুমাল বের করেছিলো মুছে দিবে বলে।ঠিক এসময়ে ইরা নিজের অজান্তে ঠোঁটদুটো জিভ দিয়ে স্লাইড করে।শেষ!এরপর আর কন্ট্রোল করা সম্ভব হয়নি।যা করার করেই ফেলেছে।
সিএনজি ড্রাইভার বয়স্ক মানুষ।তিনি রংতামাশার বয়স পার করে এসেছেন।তাই দেখেও না দেখার ভান করে সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন।রোবটের মতো।
-ইরা।আ..আম সরি।মানে কি থেকে কি করে ফেলেছি জানি না।আমি চাইনি এমনটা করতে।দেখ..
এবার ইরার ফুপিয়ে কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে।
-আপনি খুব খারাপ বিভোর ভাই।কল্পনার চেয়েও জঘন্য।
জঘন্য শব্দটা বিভোরের বুকে গিয়ে বিধলো।দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারো বাইরে তাকালো সে।আর বেশি দূরে নেই।
রাশেদা বেগম বাসায় বিশাল আয়োজন করে বসে আছেন।ছেলে আসছে।তাও বউ নিয়ে।বেজায় খুশি তিনি।প্রতিবেশীদের নিয়ে ঘরোয়াভাবে বেশ জাঁকজমক আয়োজনের ব্যাবস্থা ফেলেছেন।মহিলাদের ভীর জমেছে বেশ।বিভোরের বউকে দেখবে তারা।বিভোরদের মোটামুটি প্রতিপত্তি আছে এখানে।দশতালা বাড়ির মালিক বলেই হয়তো।
সাজানো গোছানো বাউন্ডারির সামনে সিএনজি থামলো।বিভোর কিছু বলতে যাবে তার আগেই পার্সটা হাতে নিয়ে হনহন করে হেটে চলে গেলো ইরা।দুইজনের ট্রলি নেবার দ্বায়িত্ব পড়লো বিভোরের কাধে।এবার নেও ঠেলা।সিএনজিওয়ালা হা করে তাকিয়ে রইলো।
ভাড়াটা মিটিয়ে দিতেই সিএনজি ওয়ালা বললো
-নতুন বউতো।একটু আবেগ দিয়াই অভিমান করবো।দেখবা তুমি একটু আল্লাদ দিলেই সব ভুইলা যাইবো।যাও গিয়া কুদ্দুর আল্লাদ দেহাও।
বিভোর হালকা হেসে ট্রলিদুটো নিয়ে লিফটের দিকে রওনা হলো।ইরা আগেই চলে গিয়েছে।
বাসায় দুনিয়ার লোকসমাগম।ইরা কোনোরকম ঘোমটা দিয়ে রুমে বসে আছে।একে একে সবাই এসে দেখছে আর মাশাল্লাহ মাশাল্লাহ বলে চলে যাচ্ছে।
এই বাড়িতে ইরা নতুন নয়।আগেও এসেছে।সেবার শুধু অতিথি হয়ে।আর এ বাড়ির বউ হয়ে।একসাথে খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই।সার্ভ করার মতো কেউ নেই।সবাই নিজের মতো নিয়ে খাচ্ছে।ইরার পাতে রাশেদা বেগম নিজেই বেড়ে দিলেন।
-রান্না কেমন হয়েছে মা?
-খুব মজা হয়েছে মামনি।
-ভাত দিবো আরেকটু?আরেক পিস মুরগী নিবি?
(দুনিয়াতে কয়টা শ্বাশুরি এমন করে আমার জানা নেই।তবে ছোট ছোট কেয়ারিংগুলো এ সম্পর্কটা মজবুত করে)
পেটভর্তি খাবার খেয়ে ইরাকোনোরকম উঠে গেলো।সে আসলেই বুঝতে পারছেনা সে এবাড়ির বউ।তার কিছু সৌজন্যতা আছে।বিভোরের বাবার বেশ রাগ হয়।তিনি কোনোভাবেই এসব পাগলামী মেনে নিতে পারছেন না।মানুষের সামনে এমন নির্বুদ্ধিতা করলে তাকে হাসাহাসির মুখোপাত্র হতে হবে।
খাবার খেয়ে গেষ্ট রুমে শুয়েই ঘুমিয়ে গেলো ইরা।মাঝরাতে ঘুম ভেংগে দেখে বিভোরের রুমে শুয়ে আছে।রুমের লাইট জ্বালানো।তবে বিভোর নেই।রাতে ঘুম ভাংলে সহজে ঘুম ফিরে না এটা স্বাভাবিক।ইরা এডযাষ্ট বারান্দাটায় যেতেই,দেখে বিভোর একটা চেয়ারে বসে সিগারেট টানছে।ইরাকে দেখে উঠে পড়লো সে,,”ঘুম ভেঙ্গেছে?”
ইরা প্রতিউত্তর করলোনা।কথার পাত্তা না দিয়ে রুমের দিকে যেতে নিলেই বিভোর হাত টেনে ধরলো,,
-কি সমস্যা তোর?অন্যসব বেলায় তো কিছুই বুঝিস না।আমি কাছে আসলে কেনো চালাক হয়ে যাস তুই?
-হাতটা ছাড়েন বিভোর ভাই।আপনার স্পর্শ আমার অসহ্য লাগে।
-আমি তোর স্বামী।দলিল করে বিয়ে হয়েছে।একটা স্বামী তার স্ত্রীকে টাচ করতেই পারে।
-না আপনি পারেন না।আপনাকে দেখলে আমার ঘেন্না হয়।আমার ভয় লাগে।গায়ে কাটা দেয়।আপনি আমাকে স্পর্শ করবেন না প্লিয।
কি বললি তুই?বিভোর আবারো দিশা হারিয়ে ফেলে।হাত দুইটা শক্ত করে দেয়ালে চেপে ধরে।ইরা কাটা কবুতরের মতো ছটফট করেও পেরে উঠে না।অগত্যা চোখে পানি ফেলে যায় নিরবে।বিভোরের সেদিকে লক্ষ্য নেই সে ইরাতে গভীরভাবে মত্ত।
একসময় হুশ আসলে টানতে টানতে রুমে এনে ইরাকে ছুড়ে ফেলে বিভোর।
-“তোরে কিভাবে লাইনে আনতে হবে আমি সেটা জানি।জিদ দেখাতে আসবি একদম মেরে ফেলে রাখবো।আর হ্যা আজকের পর থেকে রুমে আমার আর তোর কি হয়েছে আমরা কি কথা বলেছি সেটা যদি অন্য কেউ জানে তোর শরীর আমি কেটে কুচি কুচি করবো।কথাটা মনে থাকে যেনো।”
একপ্রকার হুংকার দিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো বিভোর।দরজা লাগানো থাকায় ভেতরের সাউন্ড বাইরে যায়নি।সাউন্ডপ্রুফ রুম বিধায়।ইরা ফ্লোরে হাটুতে মুখ গুজে বসে আছে।কি হচ্ছে তার সাথে!
“বিয়ে মানেই কি এমন?শুধু স্বামী নামক মানুষের অত্যাচার সহ্য করা!” তার জানা নেই এসবের উত্তর।
পরদিন সকালে ইরার মুখ দেখে রাশেদা বেগম বুঝলেন কিছু হয়েছে।ইরা ঘরের কাজকর্মে পটু।কোনো কথা ছাড়াই রান্নাঘরে ঢুকে রাশেদা বেগমের সাথে রুটি বানাতে শুরু করলো।তিনি যারপরনাই খুশিই হলেন।ইরার কপালে চুমু খেলেন তিনি।ইরা এতো অসহায়ত্বের মধ্যেও ফিক করে হেসে দিলো।
ইরা যেনো রোবটের মতো হয়ে গেছে।এর মধ্যে দুদিন কেটে গিয়ে ইরার কলেজের ছুটি শেষ।রাশেদা বেগম ইরার সাথে বিভোরকেও যেতে বললেন।তাহলে ইরার পড়াশোনায় হেল্প করতে পারবে।তিনি ভাবছেন হয়তো সবকিছুই স্বাভাবিক।
ইরা নানু বাড়ি ফিরে আসতেই নানী যেনো চাঁদ ফিরে পেলেন।দুদিন না থাকলেই তার কোল খালি লাগে।এই মেয়ে দুইটারে বিয়ে দেয়ার আগেই যেনো তার মরণ হয়।মনে মনে এই চিন্তা করছেন।ইরা যেনো রোবট হয়ে গেছে।আগের মতো হাসিখুশি নেই।জীবনের ঝড় সে মেনে নিতে পারছেনা।তার মোটা মাথায় স্বামী সংসার নিয়ে কিছুই আসছেনা।এটাই ঘুরছে বিভোর ভাই যতোই হ্যান্ডসাম হোক,সে একটা খারাপ লোক,তার কাছ থেকে পালাতে হবে তাকে।সেটা আজ হোক বা কাল ।
বাড়িতে থেকে নিজের বাইকটা নিয়ে এসেছে বিভোর।তাহলে আর বোরিং লাগবেনা দিনগুলো।বেশকিছু বন্ধুবান্ধব হয়েছে এ এলাকায়।
ইরার কলেজ টাইমে সুন্দর করে রেডি হয়ে অপেক্ষা করছে।সে বুঝতে পারছে এখন থেকে বিভোরই তাকে ড্রপ করে দিবে।কিন্তু সে তো এড়িয়ে যেতে চায়।
-চুপচাপ এসে পেছনে উঠ।যদি এক মুহূর্ত দেরি হয় বাইকটা তুলে তোর উপর ফেলবো।রাতে কিছু করিনা দেখে ভাবিস না তোকে ছাড় দিচ্ছি।
ব্যাস ভয়ে ভয়ে ইরা বিভোরের বাইকে উঠে বসলো।তার ভয় হচ্ছে।বান্ধবীরা তাকে দেখলে টিটকারি দিবে।আদতেও তাই হলো।কলেজ গেটে নামতেই পাশ থেকে বুনি ডাক দিয়ে বললো,,
“হেব্বি জিনিষ পেয়েছিস তো ইরা।বয়ফ্রেন্ড তাইনা?”
বিভোর হালকা কেশে বললো। “উহুম উহুম।বয়ফ্রেন্ড না শালিকা।হাসবেন্ড বলো।”
“কিরে ইরা বিয়ে করে ফেলেছিস আমাকে জানাস নি।বাহ আমাদের ভ্যাবলা ইরা চালাক হয়ে যাচ্ছে দিনদিন।আমাদের কাওকেই লাগে না।”
বিভোর বুঝলো এই মেয়ের মুখ ইরার মতোই লাগামছাড়া।তাই কথা ছাড়াই বাইক নিয়ে কেটে পড়লো সে।
বুনি নিজেও বিবাহিত।ইরার একমাত্র ফ্রেন্ড।ইরা জানে সে আর চার পাচটা মেয়ের মতো ম্যাচিউরড না।তার কথাবার্তার ভাবগতি সে কলেজে কাউকে বুঝতে দেয় না।হ্যারেস করবে তাকে।কিন্তু এই বুনির কাছে কিছু লুকায় না।হাবলার মতো সব বলে দেয়।
-বুনি তোর স্বামী কি করে রে?
-কর্পোরেট অফিসে জব করে।নতুন জানিস নাকি?
-মানে তোকে মারে টারে?ধমকায়?
-দেখ আদরের সময় আদর।শাসনের সময় শাসন।আমাদের বাবা মাও তো আমাদের মারে বা ধমকায়।তার মানে এই না যে ওরা আমাদের ভালোবাসে না।উনিও সেম।
-আচ্ছা স্বামী মানে কি রে?
-বোকা স্বামী মানে একটা ভরসার হাত।যে তোর সব আব্দার শুনবে।তোর সুখ দুঃখে পাশে থাকবে।আদর করবে।শাসনও করবে।তোকে অন্য পুরুষের নজর থেকে হেফাজত করবে।
বুনির উত্তর শুনে ভ্যাবলা ইরার মনে ভাবান্তর হলো।অনেক বছর আগে বিভোরের মারের কারণ সে বুঝেছে।মতিন চাচার চাহনী তাকেও যে অস্বস্তিতে ফেলতো!বিভোর ভাই সেটা বুঝেই তাকে ধরে এনেছিলো মাঠ থেকে।এখন সে তার স্বামী!
(আমার দ্বারা ভাই ধারাবাহিক গল্প লিখা সম্ভব না।আমি অনুগল্প বা ছোটগল্পেই বেশি সাবলীল।পরের পর্বে শেষ করে দিবো)
চলবে..