ইরাবতী পর্ব -০১

1
2892

#ইরাবতী
#পর্ব-০১
লেখা-অরণ্য(ছদ্মনাম)

খাবার টেবিলে সবাই একসাথে বসতেই ইরা কান্না করে উঠলো।গত দুই সপ্তাহ আগে বিভোরের সাথে বিয়ে হয়েছে তার।সম্পর্কে দুজনে ছিলো খালাতো ভাইবোন।এখন এখন একজন আরেকজনের খালাতো বউ আর খালাতো বর!ব্যাপারটা বেশ দাড়ুন।

বেশিরভাগ কাজিনদের বেলায় এমন হয় যে ছোট বেলায় হয়তো অনেকটা একসাথেই বেড়ে উঠা,মাঝে মাঝে সবাই একত্রিত হলে আনন্দ করা।ভাইবোনের মতোই থাকা।বিপত্তিটা হয় একটু বড় হলে।তখন বিপরীত লিঙ্গরা একে অপরের জন্য হয়ে যায় নন মাহরাম।আনন্দগুলো মিইয়ে যায়।আবার অনেকের ভেতরেই সুপ্ত অনুভূতির জন্ম হয়।যা ইরার বেলায় হতো বিভোরকে নিয়ে।

কাজিন গুষ্ঠির ভেতর সবচেয়ে বোকার ডিগ্রি অর্জন করা মেয়েটার নাম ইরা।লেখাপড়াতেও সমান তালে গাধা।তবে কথায় আছে আল্লাহ কাউকে একদিক না দিলে অন্য দিকদিয়ে ষোল কলা পূর্ণ করে দেন।তাই তার বিশেষত্ব তার রূপ।চোখ ধাধানো রূপ ইরার।

বর্তমানে,

বিশাল ডায়নিং টেবিলে সবাই বসে ছিলো।নিশ্চিন্ত মনে খাবার বাড়ছিলো বাড়ির বড়রা।ইরার কান্নামুখ দেখে বিভোরের মা জিজ্ঞাসা করলো ‘কি হয়েছে মা?কান্না করছো কেনো?’

ফুপিয়ে ফুপিয়ে ইরা কেঁদে উঠলো।পাশে থাকা শ্বাশুড়ি অর্থাৎ খালাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

-তোমার ছেলে খুব খারাপ।আমাকে নির্যাতন করেছে।

সবাই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইরার কথা শুনে।ইরার নানা শুনেই বিষম খেলেন।পাশে বসে থাকা সব কাজিনরা হেসে কুটি কুটি।রাশেদা বেগম জানতেন এমন কিছু ঘটবেই।তাই মুচকি হেসে বললেন,

-থাক মা।এসব মনে করতে নেই।শ্রাবনটা আসুক।ওকে ইচ্ছেমতো বকে দিবো।ঠিক আছে মা? খাবার‍টা খেয়ে নাও।

পাশ থেকে মেজখালার মেয়ে রিয়া টিপ্পনি কেটে বললো,

-আহারে আমার বোনটার কি হাল করেছে বিভোর ভাই।আচ্ছা উনি কি করেছে আপু?আমাদেরকে বলো যাতে এবার এলে ঠিক মতো শায়েস্তা করতে পারি।

বোকা ইরা এক লোকমা ভাত গেলার পর আবার কান্নার সুরে বলতে শুরু করলো,

-জানো খালামনি।ওইদিন যে মিথ্যা মিথ্যি বিয়ে দিলা বিভোর ভাইয়ার সাথে।ওইদিন রাতে নানু বলেছে বিভোর ভাইয়ার সাথে থাকতে।আমি রাজী হইনি।উনি আমাকে বলেছিলো রাতে থাকলে পরদিন আমতলায় যে মেলা ছিলো সেখানে নিয়ে যাবে আর চুড়ি কিনে দেবে।এরপর আমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে কোলে করে রুমে নিয়ে গেছে।এরপর আমার এখানে ছুঁয়েছে (হাত দিয়ে কোমড়ে দেখালো),আমার ঘারে কামড় দিয়েছে (উড়নাটা একটু সরিয়ে ঘারটা দেখালো)।আমি শারীরিক বইয়ে নারী নির্যাতনের একটা পার্ট পড়েছিলাম।উনি ঠিক সেইসব কাজ করেছে।তারপর…

বলতে বলতেই রাশেদা বেগমের নাকে মুখে খাবার উঠলো।কেশে উঠলেন।পানি খাবো বলে কোনো রকম কেটে পড়লেন।নাহয় এই মেয়ে যা মুখে আসবে সবই বলে বেড়াবে।জিহবায় কামড় দিয়ে আর মাথায় হাত দিয়ে বড়রা সবাই কেটে পড়লো।বাকি আছে কাজিনগুলা,,
যাবার সময় মেজখালা রুবিনা তার মেয়ে রিয়ার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে গেলো।রিয়া মুচকি হাসছে।সবার মুখেই হাসির ছোয়া।ইরা আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছে,”এভাবে সবাই চলে গেলো কেনো?আর তার কথায় তো কষ্ট পাবার কথা।সে নির্যাতিত হয়েছে। এটায় হাসার কি আছে।কেউ তাকে ভালোবাসে না,হুহ।”

এতোক্ষন যে বিভোর নামক পুরুষের নাম শোনা গেলো।তার পুরো নাম আহনাফ আহমেদ বিভোর।কাজিনদের মধ্যে তালিকায় প্রথম।ইরার মায়েরা চারবোন।এর মধ্যে প্রথম জনের সন্তান এই বিভোর।কাজিনগোষ্ঠীর সবথেকে আদরের এবং গন্যমান্য ব্যাক্তি সে।তার নামে সকলেই অজ্ঞান।বুয়েটে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে।সবাই কথায় কথায় তার পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে।দেখতে যতোটা সুপুরুষ কথায় কাজে ততটাই পটু।পড়ালেখায় আগুন।একেবারে সবদিক দিয়ে পার্ফেক্ট।

ইরা আর মিরা দুই বোন।ইরা মা বোনদের মধ্যে তৃতীয়।বাড়ির সবচেয়ে আদরের বোন ছিলেন তিনি।ভালোবেসে ইরার বাবার হাত ধরে পালিয়ে যান।কিন্তু ভালোবাসার মানুষ যদি বদলে যায় দুনিয়াটা ওখানেই থমকে থাকে।ইরার বাবা দুই বোনের জন্মের পর আসল রূপ দেখায়।হাজারো যৌতুকের আবদার,গায়ে হাত তোলা,পরকীয়া সহ্য করতে না পেরে একদিন রাতে বাড়িতে আসেন।ইরার বয়স তখন আট আর মিরা সারে তিন বছর।দুজনেই যেনো ঠিক মায়ের মতো।বসন্তের নতুন ফুলের মতো সুন্দর।মায়ের হাতে দুই কলিজার টুকরাকে তুলে দিয়ে এতটুকুই বলেন, “মা।আমি পাপ করেছি।এরা করেনি।আমি কষ্ট দিলে দিতে পারি।আমাকে তোমরা মাফ করে দিও।একটাই অনুরোধ আমার মেয়ে দুইটাকে তিনবেলা খেতে দিও।আর কিছুই চাইবো না।সবাইকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হুট করে চলে গেলেন সাজি(মিরার মা)।পরদিন খবর এলো নিজ বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।আত্মহত্যা নাকি খুন কেউই টের পায়না।আটবছরের ইরা শক খায়।তার ব্রেইনে ইফেক্ট পরে।মিরা কিছুই বুঝে না।সে শুধু বলে মা শুয়ে আছে কেনো।আমিও ঘুমাবো।সবাই দেখতে আসে।ইরার নানাভাই সবচেয়ে আদরের মেয়ের লাশ দেখে ঠিক থাকতে পারেননি।ষ্ট্রোক করেন সেখানেই।সবাই আসে আর ঘুমন্ত মুখটা দেখে কেঁদে উঠে।চেহারা জৌলুস হারিয়ে গেছে।কে বলবে এই মহিলার জন্য পাড়ার ছেলেরা মরতেও প্রস্তুত ছিলো!সবই কপাল।ইরার বাবার নামে মামলা হয়।ক্ষমতার দাপটে ছুটে যান তিনি।

সেদিন থেকে নানুবাড়িই ইরা আর মিরার পার্মানেন্ট।কথায় আছে আল্লাহ কিছু নিয়ে গেলে তার তিনগুন ফেরত দেন।তাই হলো।এক মা হারিয়ে চারটা মা পেলো।তিন খালা আর এক মামি।নিজের সন্তানের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন তারা ইরা আর মিরাকে।ইরার নানু মাঝে মাঝে দুজনকে এক ঘরে বসিয়ে চেয়ে থাকে।তার কাছে রূপ মানে অভিশাপ।নাহয় তার সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটার কপাল এমন হলো কেনো।আচল দিয়ে চোখ মুছে দুজনের কপালে শক্ত করে চুমু খান।তার মেয়েটা এদের মাঝেই বেঁচে আছে।নামাজে দাড়িয়ে অঝোরে কান্না করেন।আর আল্লাহর কাছে মেয়ের হয়ে মাফ চান।

সেই থেকে ইরা মানষিকভাবে দুর্বল।কোনোধরনের শক সে নিতে পারে না।বুদ্ধিসুদ্ধিও কম।অবশ্য কথায় আছে বাড়ির বড় সন্তান একটু হাবা গোবাই হয়।হয়তো ইরার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

এইতো তিন সপ্তাহ আগের ঘটনা।বিভোরের ইঞ্জিনিয়ারিং শেষের দিকে।একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে নিউ জয়েন করেছে।শুরুতেই বেতন চল্লিশ হাজার।এতেই মায়ের জেদ বিয়ে করাবে।বিভোরের বোন ইশার বিয়ে হয়েছে এক বছর।বিভোর থাকে ঢাকা।প্রচন্ড একাকিত্বে ভুগেন তারা।বিভোরকে জিজ্ঞাসা করেন তার কোনো পছন্দ আছে কিনা।বিভোর একবাক্যেই না করে দেয়।ফাইজার সাথে সাত মাস আগেই ব্রেকাপ করেছে।নাহয় তাকেই বিয়ে করতে চাইতো।পাত্রী খুজতে বলায় রাশেদা বেগম একবাক্যে বলে দেন।পাত্রী আমাদের ঘরেই আছে।আমি ইরাকে তোর সাথে বিয়ে দিতে চাই।মেয়েটাকে আমার ঘরে আমার চোখের সামনে রাখতে চাই।

বিভোর হাসে।বুকের কোণে ইরার প্রতি তারও একটা যায়গা আছে।কিন্তু মেয়েটা অবুঝ।কখনোই বুঝেনি তার আব্দার।

-মা ইরা তো যমের মতো ভয় পায় আমাকে।আর তোমার বোনঝি যেই গবেট।ওরে মানুষ করতে গেলে আমার বাকি দুনিয়া গোল্লায় যাবে।এমনিতেও আমার সামনে আসতে চায় না।

-আসবে কীভাবে।নানু বাড়িতে গেলে সবসময় জ্বালাস।মেয়েটাকে তুই বোকা পেয়ে সব কাজ করাস।খালি ধমকাস।তাহলে কি ভয় পাবেনা কি নাচবে?

বিভোর হেসে উঠে।মনে মনে দুষ্টু হেসে বলে “ইরাবতী।শেষমেষ আমার হয়েই গেলে।এবার বাচবে কিভাবে হুমম?”

রাশেদা বেগম মা কে ফোন দেন।তিনি শিওর না মা কাজিনদের মধ্যে বিয়ে দেয়া পছন্দ করবে কিনা।কিন্তু ইরাটাকে তার চাই।তার কলিজার বোনটার অস্তিত্ব তার কাছে রাখতে তিনি মরিয়া।যেভাবেই হোক ইরাকে বিভোরের বউ বানাবেন তিনি।

-মা বিভোরের জন্য মেয়ে দেখা শুরু করেছি।

-হ্যা ভালো করেছিস।তা আমি আসবো।আমারও ইচ্ছা পছন্দ করে আমার বড় নাতীর বিয়ে দেবো।

-মা আমার ইরাটারে খুব পছন্দ।আমার ইচ্ছা করে ওরে আমার ঘরেই রাখি।তুমি কি বলো মা?

নূরজাহান বেগম হেসে উঠেন।

-এখনো কি দামড়িই থাকবি।তোর মেয়ে তুই নিবি এটাতে আমার কি বলার আছে।আমারই তো ভালো।বলদটারে অন্য যায়গায় বিয়ে দিয়ে শান্তি পাবোনা।আর সবচেয়ে বেশি আদর তো তুই ই করিস।এখন দেখ কি করা যায়।

এসব কথাবার্তা সব ইরা শুনে।আর মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।শেষে ওই ধলা ইন্দুর বিভোর ভাইকেই বিয়ে করতে হবে তার!না এ কিছুতেই হতে পারেনা বলে কান্না শুরু করে।

পরের সপ্তায় সকল কাজিনদের খবর দেয়া হয়।আত্মীয় স্বজনদের সামনেই ইরা ভ্যা ভ্যা কান্না করে বলে “আমি বিয়ে করবোনা।খালামনি তোমার ছেলে আমাকে মারে।আমি এই বিয়ে করবো না”।তাকে ভোলানো মুশকিল।তাই রাশেদা বলেন,

-আরে এটা মিথ্যামিথ্যি বিয়ে।এমনিই।ওইযে জি বাংলা সিরিয়ালে দেখিসনি মিথ্যামিথ্যি বিয়ে?ওইরকম।

ইরা নাক টেনে উড়না দিয়ে নাকের পানি মুছে বলে, “সত্যিই?”

-হ্যা রে গাধী।নাহয় ওই পচা বিভোরের হাতে তোকে তুলে দেবো নাকি?আমার ছেলে তো কি হয়েছে।

-ঠিক বলেছো।ধলা ইন্দুর একটা।

বলেই ফিক করে হেসে দেয় ইরা।রাশেদা বেগম মায়াভরা চোখে চেয়ে থাকে ইরার দিকে।

কোনোরকম গুছিয়ে ইরা আসে।বিভোর আগে থেকেই বসে আসে।সব আয়োজন শেষে কবুল পড়ানো হয়।ব্যাস এখন থেকে স্বামী স্ত্রী তারা।অথচ বোকা ইরা বুঝতেই পারলো না কারো বন্ধনে চিরতরে বাধা পড়ে গেছে।এই বাধন খুব শক্ত।চাইলেই খুলে ফেলা যায় না।

অথচ ইরার বয়স যখন তেরো তখন থেকে সে বুঝে বিভোর ভাইকে তার ভালো লাগে।বিভোর তখন কলেজে পড়ে।নানু বাড়ি আসলে সারাক্ষন বইয়ে মুখ গুজে থাকে।বাকি কাজিনরা আশে পাশে হই হুল্লোড় করলেই কানমলা দিতো।আর ইরা যদি ভুলেও সামনে পড়তো!তাহলে তো সব শেষ।

ইরা কাছে আসলেই হাত পা টিপা,মাথা টিপা,কাপড় আয়রন করা,একের পর এক কাজ দিতেই থাকতো।ইরার করুন দৃষ্টি তার মনে কোনো দাগই কাটতো না।বিভোর নানুবাড়ি আসলে সে বাড়ির বাইরে পা রাখতে পারতো।আর এ পাড়ার ছেলে মেয়েরাও বেদম ভয় পায় বিভোরকে।যখনি অসময়ে খেলায় দেখতো কাউকে ধরে দিতো ধমক।এক ধমক খেয়েই ছেলেমেয়েরা কাঁদতে কাঁদতে চলে যেতো বাড়িতে।

একদিন গোল্লাছুট খেলার সময় উড়নার দিকে নজর ছিলোনা ইরার।কোনোরকম কোমড়ে গুজে দৌড়াতে ব্যাস্ত সে।এমন সময় আসরের নামাজ পড়তে মসজিদে যেতে থাকে বিভোর।নামাজ পড়ে আসার সময় ইরার দিকে নজর পরে তার।অদূরেই চা দোকানে বসে মতিন মিয়া চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলো ইরার সদ্য প্রস্ফুটিত কিশোরী দেহকে।যা নজর এরায় নি বিভোরের।হন্তদন্ত হয়ে মাঠে থাকা সব ছেলেমেয়েদের সামনেই ধিরিম করে চড় মেরে বসে ইরাকে।ইরা বুঝে উঠতে পারেনা কি হয়েছে কেনো হয়েছে।সে এটাই বুঝে যে তার কানের মধ্যে দিয়ে গরম হাওয়া বের হচ্ছে।ব্যাথা টের পেতে হরিণী আঁখি যুগল থেকে অশ্রু বের হতে লাগলো।আর ওদিকে একপ্রকার টেনে হিচড়ে ইরাকে বাড়িতে নিয়ে উঠানে ফেলে দিলো বিভোর।ইরার কান্না আর বিভোরের গর্জনে সবাই বাইরে আসে।বিভোর বলে,

-এই মেয়ে একটা গবেট।বড় হচ্ছে এটা ওকে কেউ বুঝাচ্ছে না কেনো?নানু ওর পর্দার ব্যাবস্থা করে রাখবা।হালদার বাড়ির মান সম্মান ডুবাবে।আর নেক্সট টাইম যদি ওই রাস্তার ধারের মাঠটায় তোকে দেখি আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা।

বলেই জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে ফেলতে রুমে চলে গেলো বিভোর।আর নানু গিয়ে বুকে জড়িয়ে আদর করতে লাগলো ইরাকে।সবাই স্বান্তনা দিচ্ছে।রাশেদা বেগমের রাগ হলো ছেলের উপর।ইরার কানের একপাশ লাল হয়ে আছে।রেগে বিভোরের রুমের দিকে গেলেন তিনি।বিভোরের চোখমুখ রেগে লাল হয়ে আছে।মনে হচ্ছে আগুন ঝড়বে।

-মেয়েটাকে এভাবে মারলি কেনো তুই?

-মারবো না?এখনো কি ছোট আছে?এইসব খেলার বয়স এখন হ্যা?লাই দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলে ফেলছো তোমরা।আশে পাশে তো লোকজন আছে পুরুষ মানুষ আছে।তারা তো আর সুনজরে দেখে না।এটাও মাথায় রাখতে হবে।

রাশেদা বেগম হাসেন।বুঝতে পারেন ছেলের রাগার কারণ কি।ইরার রুমে গিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে আদর করতে করতে সব বুঝিয়ে বলেন।বোকা ইরা সব না বুঝলেও এটা বুঝে যায়।যতদিন বিভোর ভাই বেড়াতে আসবে তার বাইরে যাওয়া নিষেধ।নাহয় এমন মার প্রতিদিনই পরবে।

সেদিন রাতে ঘুম হয়না বিভোরের।আলতো পায়ে সাবধানে ইরার রুমে ছুটে যায়।থাপ্পরের দাগ এখনো স্পষ্ট।নরম গালে হাত বুলাতে বুলাতে অনুশোচনা হয় তার।চিকন চিকন ঠোঁট নারিয়ে ইরা ঘুমের ঘোরেই বলে উঠে,,”বিভোর ভাই একটা ধলা ইন্দুর।নানু উনাকে শলা দিয়ে পেটাও।আমাকে খুব ভয় দেখায়”।বিভোর ফিক করে হাসে।ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে নিজেকে সংযত করতে ব্যার্থ হয় সে।আলতো করে ঠোঁটে ঠোঁট ছোয়ায়।ইরা ঘুমের মধ্যেই কেঁপে উঠে।নেশা বাড়তেই দ্রুত প্রস্থান করে বিভোর।এ মেয়ে নেহায়েত নেশার ভান্ডার।শেষ হবার নয়।

এরপর থেকেই বিভোরের প্রতি প্রেমানুভাব মাটি চাপা দেয় ইরা।কিন্তু সেদিনের কান্ডটা ওকে নাড়িয়ে দেয়।ইরার মিথ্যামিথ্যি বিয়ে কম্পলিট হওয়ার পর।রাতে বিভোর চলে যাবার বায়না ধরে।সামনে তার পরীক্ষা।এমন সময় নানু হাতটা টেনে ধরে বলে “বিভোর একটু জরুরী কথা আছে।আমার সাথে আয়।”

-কি কথা নানু?

-তুই আজকে থেকে যা।

-নানু আমার একমাস পরেই পরীক্ষা।হলে যেতে হবে।

-বিভোর এতোদিন তোরা খালাতো ভাইবোন ছিলি।ও তোকে ভাইয়ের নজরে দেখেছে আর তুই বোনের নজরে।কিন্তু এখন তোরা স্বামী স্ত্রী।নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে নে।আর আজ রাতটা ধর্মীয় হিসাবে বাসর রাত।আজ রাতটা একসাথে থাক।তোর মা আর বাকিরা চলে যাবে।তোরা একসাথে কাটানোর মতো কিছু সময় পাবি।

(বিভোর মুচকি হাসে।ইরা প্রতি তার বোনের নজর কখনোই ছিলোনা।ছিলো অবাধ্য ইচ্ছা।কাছে রাখার কু মতলব)

-ঠিক আছে নানু।তুমি যা ভালো মনে করো।

রাতে ইরাকে কোনোভাবেই বিভোরের সাথে থাকতে রাজী করানো যাচ্ছে না।বাসর রাতে বউ খাটে বসে থাকে।স্বামী পরে আসে।আর এদিকে বিভোর রুমে বসে আছে।ইরা বাইরে হট্রগোল করেই যাচ্ছে।এসব শুনে বিভোর বাইরে আসে।

-ইরা তোর সাথে যাষ্ট কিছু কথা বলার জন্যেই আমার সাথে থাকতে বলা হচ্ছে।

-না কখনোই যাবোনা আপনার কাছে।আপনি সারারাত পা টিপাবেন।কি ভেবেছেন আমি বুঝিনা?আমি আগের মতো বোকা নেই হুহ।

-আচ্ছা এমন কিছুই না।তোর পড়ার ব্যাপারে কথা বলবো।

-তো এখানেই বলুন।রুমে কেনো যেতে বলছেন।আর খাটে এতো ফুল কেনো?

-ফুল তো গন্ধ শুকার জন্য দিয়েছে।আচ্ছা পরশুদিন বাণিজ্য মেলা আছেনা?ওখানে তোকে নিয়ে যাবো।চুড়ি কিনে দেবো।তোর না কাঁচের চুড়ি পছন্দ?

-সত্যি!!প্রমিজ?

-হ্যা প্রমিজ।

বিভোর আশেপাশে তাকায়।নানা নানু আগেভাগে সটকে পড়েছেন।

আস্তে আস্তে বিভোরের পিছে পিছে বাসরঘরে ঢুকে ইরা।ইরা ঢুকতেই ছিটকিনি মেরে দেয় বিভোর।দরজায় তালা দিয়ে প্যান্টের পকেটে চাবি রেখে দেয় সে।

-একি বিভোর ভাই?তালা মেরেছেন কেনো?কি কথা বলবেন বলুন।আমার ঘুম পেয়েছে আমার টেডিটা রুমে একা পড়ে আছে।আমরা একসাথে ঘুমাই।

বিভোর কটমট করে তাকায়।নিজের সিল্কি চুলগুলো সামনে থেকে পেছনে নিয়ে আস্তে আস্তে ইরার দিকে যায়।বিভোরের রক্তলাল চোখ দেখে ইরা ভয়ে তটস্থ।সে চোখ বন্ধ করে ফেলে।আচমকাই বিভোর তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।ইরার মাথাটা বিভোরের বুকে চেপে আছে।

-কেনো বুঝিস না তুই ইরা?এতো বড় হয়েছিস।এখনো যদি না বুঝিস আমি আর কতো অপেক্ষা করবো।ভেবেছিলাম দুই তিনটা রিলেশন করলে সব ভুলে যাবো।কিন্তু না।তুই আমার মনে থাকিস শুধু।অন্য কেউ সেখানে টিকবে কীভাবে?

-বিভোর ভাই।আমার পড়ার ব্যাপারে বলবেন না?

-এখনো বোকা থাকবি ইরা?আজ আমাদের বাসর রাত।

-কিইইই?আপনারাই তো বলেছিলেন মিথ্যামিথ্যি বিয়ে।আমি সিরিয়ালে দেখেছি মিথ্যামিথ্যি বিয়ে হলে বাসর হয় না।আমাকে ছেড়ে দিন।আমি রুমে গিয়ে ঘুমাবো।

বিভোরের মাথায় আগুন ধরে যায়।বিয়েটা কি ছেলেখেলা!তার এতোদিনের ফিলিংস কি ছেলেখেলা!না এই মেয়েটাকে বুঝাতে হবে।যদি না বুঝে দরকার হলে খারাপ হবে সে।

“এটা মিথ্যামিথি বিয়ে তাই না?”কটমট করে কথা বলতে বলতে ইরার শাড়ির আঁচলের নিচ দিয়ে পেট শক্ত করে চেপে ধরে।ইরাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অধরে অধর মিশিয়ে দেয় বিভোর।ইরা শকের চোটে পাথর হয়ে যায়।এসব কি হচ্ছে তার সাথে।বিভোর আনমোনে সামনে আগায়।এখানে ওখানে হাত না চাইতেও চলে যাচ্ছে।ইরার চোখে অশ্রু ভীর করছে।কান্না আসছে তার।

-বিভোর ভাই।আপনার পায়ে পড়ি আমাকে ছেড়ে দিন।

এটা শুনে আরো হিংস্র হয়ে উঠে বিভোর।কোলে করে নিয়ে বিছানায় ছুড়ে ফেলে ইরাকে।নিজের শার্টটা খুলে আবারো ইরাতে মত্ত হয় সে।এবার কামড় দিয়ে রাগ মেটাচ্ছে।ইরার ছটফটানি থেমে যায়।তখন তার হুশ আসে।কি করতে যাচ্ছিলো সে।ইরা বাক্যহীন পাথর হয়ে শুয়ে আছে।এর জবাব কি দেবে সে!ইরা তাকে ক্ষমা করবেতো!উঠে খাটের একসাইডে শক্ত একটা লাথি দেয় বিভোর।শক্ত বক্স খাট ইরাকে নিয়েই কেঁপে উঠে।ভয়ে ইরা কুঁকড়ে যায়।হেচকি দিয়ে দিয়ে কান্না করতে থাকে।

বুকের যন্ত্রনা নিয়ে এডযাষ্ট বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়।উঠান চাঁদের আলোয় আলোকিত।বিভোর সিগারেট ধরায়।পেছনে বিছানায় ফেলে আসা প্রেয়সীর এলোমেলো শরীর তার মাথা নাড়া দিচ্ছে।ভনভন করে ঘুরছে সেগুলো।

ইরাটা বুঝবে তো বিভোরের ভালোবাসা?

চলবে?

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে