ইচ্ছে যখন উড়নচণ্ডী পর্ব-০৩ এবং শেষ পর্ব

0
29

#ইচ্ছে_যখন_উড়নচণ্ডী
#পর্ব-০৩ (শেষ পর্ব)
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

আজ ঐশির ট্যুরে যাওয়ার দিন। সকাল সকাল তৈরি হয়ে কাধে জামাকাপড়ের ছোট্ট একটি ব্যাগ নিয়ে সে মোড়ে দাড়িয়েছে রিকশার জন্য।

রুদ্র তখন মোড়ের দোকানে চা হাতে নিয়ে বসেছে৷ রাস্তার দিকে চোখ পড়তেই ঐশিকে নজরে পড়ে তার। গতকালের কথা মনে করে রুদ্রর মুখ থমথমে হয়ে গেলো। ঐশির বাবা কিছু বলার আগে ঐশি নিজেই রুদ্রকে টিচার হিসেবে রিজেক্ট করে দিয়েছে। ব্যাপার টা মারাত্নক লেগেছে রুদ্রর। চায়ের বিল দিয়ে সে উঠে দাড়ালো। এগিয়ে গেলো ঐশির দিকে। পকেটে হাত গুঁজে টান টান হয়ে দাড়িয়ে বলল,

‘ কোথায় যাচ্ছো ইচ্ছে? ‘

ঐশি তাকালো না। জবাব দিলো,

‘ স্কুলে যাচ্ছি। ‘

‘ স্কুল ড্রেস ছাড়া ঢুকতে দিবে? ‘

‘ আজ ক্লাস হবে না। আমরা ট্যুরে যাবো। ‘

‘ কোন জায়গায়? ‘

‘ কক্সবাজারে ‘

রুদ্র খোঁচা খোঁচা দাড়িতে হাত বুলালো।

‘ আমি চট্টগ্রামের ছেলে ইচ্ছে। ‘

‘ এর আগেও একবার বলেছিলেন। ‘

রুদ্র ঐশির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। প্রথম দিনের মেয়েটির সাথে এই মেয়েটির একটু বেশিই অমিল।

‘ তুমি কি আমার সাথে রাগ করেছো? ‘

‘ না, মানুষ আপনজনের উপর রাগ করে। ‘

‘ তোমার কি মন খারাপ? ‘

ঐশি রিকশা দাঁড় করিয়ে তাতে উঠে পড়লো। রুদ্র তড়িৎ গতিতে চেপে বসলো রিকশায়। ঐশি হকচকিয়ে গিয়ে সরে বসলো। নাক ফুলিয়ে বলল,

‘ আপনি উঠলেন কেন? নামুন, নামুন বলছি। ‘

‘ আমার তোমাকে কিছু বলার আছে ইচ্ছে। ‘

রিকশা চলতে শুরু করেছে। ঐশি মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে। বলল,

‘ কি বলবেন বলুন, আর রিকশা থেকে নামুন। ‘

‘ আমাকে তোমার কেমন লাগে ইচ্ছে? ‘

‘ কোনোরকমই লাগে না। ‘

‘ ইগনোর করছো? ‘

‘ কি সমস্যা আপনার? ‘

রুদ্র কাতর স্বরে বলল,

‘ এভাবে কথা বলছো কেন? ‘

‘ তো কিভাবে বলবো? ‘

‘ ভালোবেসে সুন্দর করে কথা বলবে। ‘

ঐশির ভ্রু কুঁচকে গেলো।

‘ এহ! ‘

রুদ্র হাত বাড়িয়ে গাল টেনে দিলো।

‘ তুমি অনেক সুন্দর ইচ্ছে। ‘

‘ আপনি ঠিক আছেন? ‘

রুদ্র হাত ধরলো,

‘ তোমার মন খারাপ কেন ইচ্ছে? ‘

‘ আপনি আমাকে নিজের আসল নাম বলেন নি কেন? ‘

রুদ্র অবাক,

‘ তোমাকে আমি নিজের আসল নামই বলেছি ইচ্ছে৷ ‘

‘ তবে সবাই আপনাকে রুদ্র ডাকে কেন? ‘

‘ আমার পুরো নাম ‘রুদ্র ইয়াসিফ। ‘

ঐশি হাত ছাড়িয়ে নিলো।

‘ ঠিক আছে এবার নামুন। ‘

‘ আমাকে তোমার আরও কিছু জিজ্ঞেস করার আছে ইচ্ছে। ‘

‘ কি জিজ্ঞেস করবেন তাড়াতাড়ি করুন। আমার স্কুলে পৌঁছাতে বেশি দেরি নেই। ‘

‘ তুমি আমাকে নিয়ে কি অনুভব করো ইচ্ছে? ‘

‘ কিছুই অনুভব করি না। ‘

‘ আমি সিরিয়াসলি জিজ্ঞেস করছি ইচ্ছে। ‘

ঐশি মুখ বাকালো,

‘ আমিও সিরিয়াসলিই উত্তর দিয়েছি। ‘

রুদ্র রেগে গেলো।

‘ আমি না তোমার ক্রাশ? ‘

‘ তো? ‘

‘ তো তুমি আমাকে নিয়ে সত্যিই কিছু ফিল করো না? ‘

‘ জানি না ‘

স্কুলের গেইটের সামনে রিকশাটা থেমে গেলো। ঐশি নেমে অর্ধেক ভাড়া দিয়ে চলে যাচ্ছিল, তখনই রুদ্র হাত টেনে ধরলো। হাতের মুঠোয় কাগজের টুকরো দিয়ে বলল,

‘ যদি কিছু অনুভব করো, তবেই এটার ব্যবহার করো। ‘

রুদ্র চলে গেলো। ঐশি হাতের মুঠোয় কাগজ নিয়ে স্কুলের ভেতরে ঢুকলো। চারিদিকে হৈহৈ পড়েছে। কিছু সময় পরই বাস এলো। স্যারেরা স্টুডেন্টদের দেখেশুনে উঠতে বললেন। ঐশি জানালার পাশে বসলো। তার পাষে বসেছে ক্লাসমেইট ইশা। ঐশি জিজ্ঞেস করলো,

‘ আচ্ছা ইশা ধরো তুমি কাউকে নিয়ে কিছু ভাবো, তবে তাকে কি সেটা জানিয়ে দেওয়া উচিত? ‘

ইশা ভ্রু নাচিয়ে বলল,

‘ কোন বিষয়ে? ‘

ঐশি বিরক্ত হয়ে বলল,

‘ যেকোনো বিষয়ে। ‘

‘ দেখো আমি যদি তোমাকে নিয়ে মন্দ কিছু ভাবি তবে কখনোই চাইবো না তুমি সেটা জেনে যাও। আমিও তোমাকে কখনো সেটা বলতে যাবো না নিশ্চয়ই? বলা উচিত নাকি অনুচিত সেটা তোমার বিষয়টার উপর নির্ভর করছে আসলে। ‘

ঐশি হাতের কাগজটা দেখালো।

‘ আমি একজনকে নিয়ে বিশেষ কিছু অনুভব করি, প্রথম সেটা ক্রাশ মনে হলেও আমার মনে হচ্ছে আরও বেশি কিছু অনুভব করি। আমার কি তাকে সেটা জানিয়ে দেওয়া উচিত? ‘

‘ অবশ্যই জানাবে। তোমার হাতে ওটা কি? ‘

ঐশি কাগজের ভাজ খুললো। দেখলো তাতে নাম্বার লেখা। ইশা ঠোঁট চেপে হেসে বলল,

‘ আয় হায়, বিশেষ কিছু যেহেতু অনুভব করো, তাহলে তাকে উত্তর টা দিয়ে দাও। ‘

‘ সে নাম্বার দিয়ে বলেছে যদি কিছু অনুভব করি তবেই এটার ব্যবহার করতে। ‘

‘ দেরি করছো কেন পাগলি? তুমি জানো আমার সেকেন্ড বয়ফ্রেন্ডকে প্রথমে পাত্তা দেইনি বলে সে আরেকজনের সাথে রিলেশনে যেতে চেয়েছিলো। মাই গড! ‘

ঐশি হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

‘ সে এমন নয়, সে আলাদা। ‘

‘ আরে ওসব সবাই প্রথমে বলে। দুদিন পর ছ্যাঁকা খেলে বুঝতে পারবে সে কেমন। ‘

‘ না ইশা, সে সত্যিই আলাদা। ‘

‘ তো দেরি করছো কেন? ব্যবহার করো এটার। ‘

ঐশি গোমড়ামুখে বলল,

‘ আমার তো মোবাইল নেই। ‘

ইশা নিজের মোবাইল বের করে দিলো।

‘ এটা দিয়ে কল দাও। ‘

ঐশি তাই করলো। নাম্বার তুলে দুরুদুরু বুকে ডায়াল করলো রুদ্রের দেওয়া নাম্বারে। কয়েক সেকেন্ডেই রিসিভ হলো। রুদ্র কিছু বলার আগেই ঐশি বলল,

‘ আমি ইচ্ছে বলছি, নাম্বার টা আমার ক্লাসমেইট এর। ‘

রুদ্র কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

‘ আমি কি ধরে নিবো তুমি বিশেষ কিছু অনুভব করো? ‘

‘ ধরে নিতে পারেন। ‘

‘ ঠিক আছে ধরে নিলাম। ‘

‘ আপনি হঠাৎ চেঞ্জ হলেন যে? ‘

‘ হঠাৎ করেই মনে হলো নিজেকে ভালোবাসা উড়নচণ্ডী এই ইচ্ছে কে আমার ধরে রাখা উচিত। ‘

‘ হঠাৎ কেন? ‘

‘ জানি না, মনে হলো তাই ধরে রাখলাম। ‘

‘ আমি কি সেটা বিশেষ অনুভূতি ধরে নিবো? ‘

রুদ্র হেসে বলল,

‘ তুমি বিশেষ অনুভূতির শুরু হিসেবে ধরে নিতে পারো।’

‘ আমি তবে রাখি? ‘

‘ ইচ্ছে শুনো? ‘

‘ বলুন ‘

‘ একবার নাম ধরে ডাকবে? ‘

‘ আমি এখন রাখছি ইয়াসিফ, ট্যুর থেকে ফিরে বাসার মোবাইল থেকে কল করবো। ‘

রুদ্র কল কে*টে দিলো। ইশা জ্বলজ্বল চোখে তাকিয়ে বলল,

‘ কি দিলে মাইরি, তোমাকে দিয়েই হবে। ‘

‘ কি হবে? ‘

‘ প্রেম ‘

‘ উঁহু প্রেম নয়, ভালোবাসা হতে পারে। ‘

‘ ওই একই তো। ‘

‘ একদমই একই নয় ‘

ইশা মুখ গোমড়া করে বলল,

‘ ঠিক আছে মানলাম। তোমরা কি এখন রিলেশনে আছো? ‘

‘ এটা ঠিক সম্পর্ক না, আবার সম্পর্ক ও। ‘

‘ এটা কিরকম কথা? ‘

‘ দেখো আমরা কেউ কাউকে ভালোবাসি বলিনি, সবে শুরু..’

‘ আমি কি ধরে নিতে পারি এটা একদিন সম্পর্কে রুপ নিবে? ‘

‘ ধরে নিতে পারো। ‘

বাস চলছে নিজ গতিতে। উদাস মনে গালে হাত রেখে জানলার দিকে তাকিয়ে আছে ঐশি। আপন মনে বিরবির করলো,

‘ হয়েছে তোমার সাথে সন্ধি
তুমি আকাশ, আমি তোমার আকাশে
উড়ে বেড়ানো উড়নচণ্ডী। ‘

(সমাপ্ত)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে