ইচ্ছে যখন উড়নচণ্ডী পর্ব-০২

0
127

#ইচ্ছে_যখন_উড়নচণ্ডী
#পর্ব-০২
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

বাহিরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। কোচিং থেকে ফিরে ঐশি একমনে বৃষ্টি দেখছে৷ সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। বিকালে যে মেয়েটা ছাঁদে হাটাহাটি করতো সে এখন তিনটায় কোচিং এ যায়। দুপুরে বাসায় এসে খেয়ে একটু রেস্ট নিয়ে কোচিং এ যা-ওয়াটা এখন ঐশির রুটিন। সেদিনের পর থেকে ঐশির সাথে রুদ্রর দেখা হয়নি। রুদ্রকে ওপাশে দেখলে ঐশি আড়ালে চলে গেছে। ইচ্ছে করেই এমন করেছে সে। রুদ্র তাকে প্রথমদিনই বেহায়া মেয়ে বলেছিলো। ভুলে যায়নি ঐশি। হতে পারে সে চঞ্চল কিন্তু বেহায়া নয়। সে তার অনুভূতি চেপে রাখতে পারে না এটাই তার দোষ। রুদ্রর উপর প্রথম দেখায় সে ক্রাশ খেয়েছে এর বেশি কিছু না। অথচ দেখো কতো ভাব দেখালো। ভাবের ডিব্বা ঐশির কাছে এসে ভাব দেখায়!

‘ ইচ্ছে নাস্তা করবি না? জলদি টেবিলে এসে বোস। তোর বাবা অপেক্ষা করছেন তো। ‘

ঐশি গটগট পায়ে টেবিলে গিয়ে বসলো। তাহের ইফফাত মেয়ের প্লেটে নাস্তা তুলে দিলেন। ঐশি খেতে খেতে বলল,

‘ স্কুল থেকে ট্যুরের আয়োজন করা হয়েছে বাবা। ‘

‘ তুমি কি যেতে চাও মা? ‘

‘ যেতে ইচ্ছে করছে, সবাই যাবে। ‘

‘ ঠিক আছে যতো টাকা লাগে তোমার মায়ের কাছ থেকে নিয়ে যেও। কবে ট্যুর? ‘

‘ দু’দিন পরই ‘

নাস্তা করে ঐশি রুমে এলো। বই খাতা নিয়ে বসে অংক কষতে লাগলো৷ রাত আটটার দিকে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো সে। বৃষ্টির কারণে ঠান্ডা ভাব চারিদিকে।

রুদ্র যে ফ্ল্যাটে থাকে সেখানে আরও সাতজন থাকে। ফ্ল্যাটে তিনটা রুম। একটাতে তিনজন ও বাকি দুটোতে দু’জন করে থাকে তারা। শুধু এই ফ্ল্যাটটাই নয়, বিল্ডিংয়ের একটি তলাতে সবই ব্যাচেলর। নিচ তলাতে বাড়ির মালিক থাকেন। দু’তলাতে একটি সিঙ্গেল দম্পতি থাকে।

রুদ্র চট্টগ্রামের ছেলে। ঢাকাতে পড়তে আসা এ প্রথম। ঢাকায় এসে একমাস হয়ে গেছে তার। মা বাবাকে সামনাসামনি দেখতে ইচ্ছে করে ভীষণ।

‘ তোর হিরোইনের কথা ভাবছিস নাকি রুদ্র? ‘

রুদ্র ক্ষেপে গেলো। প্রায় অনেক দিন আগে ইচ্ছের সাথে ছাদে একবার কথা বলেছিলো সে। সেটা আড়ালে দাড়িয়ে শুনেছে রুমমেট’রা। সুযোগ পেলেই রুদ্রকে ক্ষেপাতে ভুলে না। রুদ্র বলতে বলতে হয়রান যে মেয়েটার সাথে তার কোনোরকম যোগাযোগ বা সম্পর্ক হওয়ার কোনো চান্স নেই।

‘ কোথায় ডুবে গেলি রুদ্র? তাকে ভাবা হচ্ছে বুঝি? ‘

রুদ্র হতাশায় দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো। যতোই মানা করুক এরা শুনবে না। সুতরাং চুপ থাকাটাই বেছে নিলো।

‘ আচ্ছা মামু তোর হিরোইনের সাথে সেদিনের পর আর দেখা হয়নি? ‘

রুদ্রর স্পষ্ট উত্তর,

‘ না, সে আমার কেউ হয়না সুতরাং দেখা হওয়ার কোনোরকম চান্স নেই। ‘

‘ সে বেচারি হয়তো তোর কথায় রাগ করেছে, তুই একবার দেখা দিতে তো পারিস। সেদিন দেখলাম মুখ গোমড়া করে হেঁটে যাচ্ছে। আহারে বেচারি৷ ‘

‘ দেখ তোরা যা ভাবছিস তা নয়। মেয়েটা হয়তো প্রথম দেখায় ক্রাশ খেয়েছিলো। এর বেশি কিছু নয়, সো এটা অফ কর। ‘

ওরা আর রুদ্রকে কিছু বললো না। রাতে খেয়ে পড়া শেষ করে ঘুমাতে ঘুমাতে এগারোটা বেজে গেলো। ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার আগে রুদ্র ভাবলো বেকার না থেকে কয়েকটা টিউশনি করালে মন্দ হয় না।

ভাবনা অনুযায়ী সকালে রুমমেট দের বললো সে। রুদ্রের রুমমেট একজনের নাম সবুজ। সে বলল,

‘ পাশের বিল্ডিংয়ে একজন আঙ্কেল নিজের মেয়ের জন্য টিউশন টিচার খুঁজছেন। সরকারি চাকরিজীবী, ভালো বেতন দিবে কিন্তু। পড়াবি তুই? ‘

রুদ্রর ভ্রু কুঁচকে গেলো। পাশের বিল্ডিং মানে যেটাতে ইচ্ছে থাকে।

‘ মেয়ের নাম কি? ‘

‘ আরে এতো কিছু জানি নাকি আমি? আমি টিউশন করি সেজন্য আঙ্কেল আমাকে বলেছিলো। তুই যদি করতে চাস তো বল ওদের বাসায় নিয়ে যাবো তোকে। কথা বলে আসবি, ভালো মনে হলে করবি নয়তো না। তোর তো আমার মতো টাকার চিন্তা করতে হয়না। তোর বাবা আছে সো চিল। ‘

রুদ্রের মন খারাপ হয়ে গেলো। বাবা না থাকা যে কতোটা কষ্টের সেটা সবুজকে দেখলে বুঝতে পারে সে। মাথার উপর ছায়া না থাকলে জীবন দুর্বিষহ লাগে। সবুজের বাবা নেই, টিউশন করায় দিনরাত। নিজের পড়াশোনা, থাকা, খাওয়ার পর যা থাকে তা বাড়িতে পাঠাতে হয় ওর। বাড়িতে মা বোন আছে৷

রুদ্র হঠাৎ বললো,

‘ টিউশনি টা বরং তুই কর, একটা পড়ালে দুটো টিউশনি করে যেটা পাস সেটা পাবি। দুটো আমাকে দিয়ে তুই এটা কর প্লিজ। তোর সময় বেঁচে যাবে তাহলে। ‘

সবুজ মাথায় হাত দিলো।

‘ আরে বোকা আমি করলে তো কবেই করতে পারতাম। তুই যদি করিস তো বল নয়তো বাদ দে। ‘

রুদ্র ইতস্তত করে বলল,

‘ ঠিক আছে চল কথা বলে দেখি। ‘

নাকেমুখে নাস্তা খাচ্ছে ঐশি। কাঁধে স্কুল ব্যাগ। ইরা কোমড়ে হাত রেখে দাড়িয়ে আছেন। ঐশী দ্রুত গিলে পানি খেলো।

‘ আর না মা, এবার আমি যাই? দেরি হয়ে যাচ্ছে তো। ‘

ইরা অনুমতি দিতেই ঐশি দরজা খুললো দৌড়ে গিয়ে। বের হবার আগেই সামনে দু’জন লম্বা পুরুষকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো।

সবুজ ও রুদ্র হা করে তাকিয়ে আছে। সবুজ সবেই কলিংবেলে চাপ দিতে যাচ্ছিল তার আগেই দরজাটা খুলে গেছে৷ সবুজ রুদ্রকে টেনে সাইট দিলো। ঐশি আড়চোখে দেখে এক দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে চলে গেলো।

ইরা এগিয়ে এলেন। সবুজ সালাম দিয়ে বলল,

‘ আন্টি আমি সবুজ, পাশের বাসাতেই থাকি। এটা আমার বন্ধু রুদ্র। তাহের আঙ্কেল বলেছিলেন টিউশন টিচারের কথা। আপনারা যদি চান তো রুদ্র পড়াতে পারবে। ‘

ইরা দুজনকে ভেতরে বসতে বললেন। চা নিয়ে সোফায় বসে দুজনকে খেতে বললেন।

‘ কবে বলেছিল টিউশন টিচারের কথা? ‘

সবুজ কপালে হাত ঘষে ভাবলো।

‘ হবে দেড় মাস বা দু’মাস আগে। ‘

‘ টিউশন টিচার পাওয়া যায়নি, বলতে বিশ্বস্ত কাউকে পাননি তোমাদের আঙ্কেল। সেজন্য মেয়েকে কোচিং এ ভর্তি করে দিয়েছেন। যদিও কোচিং টা দূর হয়ে যায়। আমি তোমাদের আঙ্কেলের সাথে কথা বলবো। মেয়েটা ওতো দূর কোচিং করে ক্লান্ত হয়ে যায় অনেক। টিউশন টিচার ফেলে ভালোই হবে। তুমি কিসে পড়ো বাবা? ‘

রুদ্র উত্তর দিলো,

‘ অনার্স ফাস্ট ইয়ারে আন্টি। ‘

‘ এইচএসসি কোন বিভাগ থেকে পাশ করেছো? ‘

‘ সাইন্স ‘

ইরা খুশি হয়ে বললেন,

‘ বেশ তো, আমার মেয়ে ও সাইন্স নিয়ে পড়ে নবম শ্রেনীতে। দরজা খুলার পর যাকে দেখলে ওই হবে তোমার ছাত্রী। একটু চঞ্চল তবে গম্ভীর চেহারা করে পড়াবে তাহলেই দেখবে ভয়ে পড়বে। ‘

সবুজ হেসে বলল,

‘ ঠিক আছে আন্টি, আমরা তবে আজ উঠি? ‘

‘ ঠিক আছে বাবা, তোমরা এসো। আমি তোমাদের আঙ্কেলের সাথে কথা বলে তোমাদের জানাতে বলবো। ‘

সবুজ ও রুদ্র বিল্ডিং থেকে বের হলো। রুদ্র লম্বা শ্বাস ছেড়ে বলল,

‘ এটা তো সেই মেয়ে দোস্ত। এই মেয়েকে আমি পড়াতে পারবো না। ‘

সবুজ বুঝানোর ভঙ্গিতে বলল,

‘ দেখ মেয়েটা তোকে একদিনই ডিস্টার্ব করেছে। ওটাকে যদিও ডিস্টার্ব বলে না, বাট যেটা করেছে তো করেছে। মেয়েটা তোকে আর ডিস্টার্ব করেনি যেহেতু তাহলে তাকে পড়াতে অসুবিধা কোথায়? তুই তো বলেছিস ক্রাশ খেয়েছিলো, এখন তার দেখাও হয়না,কথাও বলে না। তবে সমস্যা কি? ‘

রুদ্র ঠোঁট কামড়ে ভাবলো কিছুক্ষণ। মাথা চুলকে বলল,

‘ দেখ টিউশনি টা হয় কি না, যদি মেয়েটার মতিগতি ভালো না লাগে তবে কিন্তু আমি ছেড়ে দিবো। ‘

সবুজ গাল টেনে দিলো,

‘ আহারে বন্ধু, তুমি মেয়ে মানুষকে এতো ভয় পাও কেন? ‘

রুদ্র কিছু বললো না। ভাবলো ইচ্ছে উল্টাপাল্টা আচরণ না করলেই হয়।

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে