ইচ্ছে যখন উড়নচণ্ডী পর্ব-০১

0
170

#সূচনা_পর্ব
#ইচ্ছে_যখন_উড়নচণ্ডী
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

‘ আপনি কি সিঙ্গেল? ‘

রাস্তায় গাড়ির জন্য দাড়িয়ে ছিল রুদ্র। হুট করে কারো বলা এই কথাটা কানে আসতেই নিজের পাশে তাকালো। স্কুল ড্রেস পড়োনে, দু’দিকে দুটো বেনী ঝুলিয়ে, কাঁধে ব্যাগ রেখে যে মেয়েটি রুদ্রর দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে আছে তাকে রুদ্র এর আগে কখনো দেখেনি৷ রুদ্রর ভাবনার মধ্যে আবারও প্রশ্ন ছুড়লো মেয়েটি।

‘ বলছেন না কেন? আপনি কি সিঙ্গেল? ‘

রুদ্র রাগ করতে গিয়ে হেঁসে ফেললো। মেয়েটির গাল টেনে দিলো।

‘ তোমার নাম কি পিচ্চি? কোথায় থাকো? ‘

মেয়েটির স্বর এবার ঝাঁঝালো শুনালো।

‘ আমাকে পিচ্চি বলবেন না! ‘

রুদ্র অবাক হয়ে মেয়েটিকে দেখতে লাগলো। এইটুকু মেয়ে কতো পাকা পাকা কথা বলে।

‘ আপনি কি উত্তর দিবেন না? ‘

রুদ্র কিছু না বলে একটি রিক্সা দাড় করিয়ে উঠে চলে গেলো। পেছনে রেখে গেলো কয়েক সেকেন্ডের দেখা মেয়েটিকে।

রুদ্রের চলে যাওয়া রিক্সার দিকে তাকিয়ে থাকলো মেয়েটি। চেহারায় অভিমান। মোড় থেকে বাড়ি যাওয়ার জন্যে হাঁটতে শুরু করলো। যেতে যেতে মনে মনে নাম না জানা ছেলেটিকে বকা দিতে ভুললো না।

তিনতলার ফ্ল্যাটে থাকে মেয়েটি তার মা বাবার সাথে৷ সিঁড়ি দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে উঠে গেলো তিনতলায়। কলিংবেলে চাপ দিতে লাগলো একনাগাড়ে।

রান্নাঘর থেকে খুন্তি নিয়ে ছুটে এসে দরজা খুললেন ইরা। দরজার বাহিরে দাঁড়ানো মেয়েটিকে ঝাঁঝালো স্বরে বললেন,

‘ পাড়াপ্রতিবেশির কান কি উড়িয়ে দিবি তুই? কয়বার কলিংবেল বাজাস? একবার বাজিয়ে দাড়িয়ে থাকতে পারিস না? ‘

মেয়েটি ঠোঁট উল্টালো।

‘ ভেতরে তো ঢুকতে দাও, দাড়িয়ে পা ব্যথা হয়ে গেছে। ‘

ইরা সরে গেলেন। মেয়েটি লাফিয়ে ভেতরে ঢুকলো।

‘ সবসময় লাফালাফি করিস, কোনদিন পা ভেঙে বসে থাকবি তুই। ‘

মায়ের কথাটাতে বিশেষ গায়ে মাখলো না সে। মোড়ে দেখা ছেলেটির কথা ভেবে সোফায় বসে মিটিমিটি হাসতে লাগলো। ইরা ভ্রু কুঁচকে মেয়ের কান্ড দেখছেন৷ রান্নাঘরে যেতে যেতে বললেন,

‘ বের হয়ে যেনো দেখি তুই গোসল করে টেবিলে এসে বসেছিস। ‘

দুপুরে খাওয়ার পর ঘুমানোর অভ্যাস মেয়েটির। ঘুম থেকে উঠে বিকালে ছাঁদে হাঁটাহাটি করে। আজও সবসময়ের মতো সে ছাঁদে হাঁটতে গেলো। এ সময় তেমন কেউ ছাঁদে থাকে না। মেয়েটি হাটাহাটি করার মধ্যে নজর ফেললো চারিদিকে। দৃষ্টি আটকালো ডান দিকের ছাঁদে। সকালের দেখা সেই ছেলেটি দাড়িয়ে আছে৷ মেয়েটি উঁচু আওয়াজে ডাকলো,

‘ এই হ্যান্ডসাম! ‘

রুদ্র চমকে তাকালো। কান থেকে মোবাইল নামিয়ে পকেটে রেখে ছাঁদের কিনারে এলো। মেয়েটিকে পরোখ করে বলল,

‘ তুমি দুপুরের সেই পিচ্চিটা না? ‘

মেয়েটি নাক ফুলিয়ে বলল,

‘ পিচ্চি বলবেন না। ‘

রুদ্র গম্ভীর স্বরে বলল,

‘ তো কি বলবো? ‘

‘ আমার নাম ঐশি আরা ইচ্ছে, আপনি ইচ্ছে বলে ডাকতে পারেন। আপনার নাম কি? ‘

‘ ইয়াসিফ, আমি দু’দিন হলো এই ব্যাচেলর বাসাতে এসেছি। অনার্সে চান্স পেয়েছি এখানকার একটি ভার্সিটিতে। তুমি কিসে পড়ো ইচ্ছে? ‘

ঐশি হেসে বলল,

‘ আমি নবম শ্রেনীতে পড়ি। আপনি আমাকে ঐশি ডাকতে পারেন। যদিও দুটো নামেই সবাই ডাকে। যার যেটা পছন্দ৷ ‘

রুদ্র ঠোঁট কামড়ে হাসলো,

‘ আমি তোমাকে ইচ্ছে বলেই ডাকবো। ‘

‘ তাহলে তো আপনার নাম আর আমার নাম মিলে গেলো। ইয়াসিফ ও ইচ্ছে৷ সুন্দর না? ‘

রুদ্র গম্ভীর হয়ে গেলো।

‘ এই সময় ছাদে কি করছো? ‘

‘ আমি এই সময় ছাঁদে হাটাহাটি করতে আসি। ‘

‘ এখন থেকে কম আসবে। কারণ পাশের ছাঁদ মানে আমি যেটাতে দাড়িয়ে আছি সেটায় ব্যাচেলররা থাকতে পারে। আর আমার সাথে তেমন কথা ও বলবে না, কারণ কেউ দেখলে তোমার নামে বাজে কমেন্টস করতে পারে। তুমি তো ছোট তাই বুঝতে পারছো না এখন। ঠিক আছে? ‘

ঐশি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।

‘ আমি সব বুঝি। আপনাকে আমার ভালো লেগেছে, আমি আপনার সাথে কথা বলবোই। ‘

রুদ্র কন্ঠস্বর কঠিন করলো।

‘ না ইচ্ছে, তুমি যদি এরকম করো তবে আমারও বদনাম হবে। আমি এখানে নতুন এসেছি। যদি আমার নামে উল্টাপাল্টা কিছু ছড়িয়ে যায় তবে বাড়িওয়ালা আমাকে বের করে দিতে দুবার ভাববে না। ‘

ঐশি ঠোঁট উল্টে বলল,

‘ তাহলে উপায়? ‘

রুদ্র রেগে বলল,

‘ আমি তোমাকে বাচ্চা মেয়ে ভেবেছিলাম। তুমি তো দেখি নাছোড়বান্দা। আরে মেয়ে আমার সাথে তোমার এতো কিসের কথা? প্রতিবেশী হয়েছো বলে কি মাথা কিনে নিয়েছো? আমারই দোষ তোমার সাথে কেন যে কথা বলেছি। ‘

‘ আমার সাথে কথা বললে কি হবে? কেউ দেখবে না প্রমিজ। লুকিয়ে কথা বলবো। আপনার ফোন নাম্বার দিতে পারবেন? ‘

‘ কেন? ‘

ঐশি হেসে বলল,

‘ বান্ধবীর মোবাইল দিয়ে স্কুলে গেলে ফোন করতাম আরকি। আমার তো নিজস্ব মোবাইল নেই, বাবা বলেছে স্কুল পাশ করার পর মোবাইল দিবে৷ ‘

রুদ্র হতভম্ব হয়ে গেলো।

‘ আমার সাথে কথা বলে লাভ কি তোমার? ‘

‘ আরে বুদ্দু, প্রেম চিনেন না নাকি? ‘

ঐশি কোমড়ে হাত রেখে রুদ্রের সাথে কথা বলছে। পড়োনে ফতোয়া ও প্লাজু। চিকন শরীরের লিলিপুট সে। রুদ্র সবে যুবকে পরিণত হয়েছে। লম্বায় ঐশি তার পেটে পড়বে হয়তো৷ এতো অল্প বয়সে কেউ প্রেম করবে সেটা রুদ্রের কাছে অবিশ্বাস্য হলেও জগতের কাছে নয়৷ এ যুগে ফাইভের বাচ্চা ও প্রেম করে। রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

‘ প্রেমের কি চিনো তুমি? দুধের দাঁত পড়েছে তোমার? ‘

ঐশি দাঁত বের করে দেখালো।

‘ আমার সব দাঁত পড়ে আবার নতুন দাঁত উঠে গেছে। ‘

‘ দেখো তুমি বাচ্চা একটি মেয়ে। মন দিয়ে পড়াশোনা করবে এখন। প্রেম করার বয়স তোমার হয়নী। আমাকে বলেছো তো বলেছো আর কাউকে এসব বলতে যেওনা। তারা সুযোগ নিতে দু’বার ভাববে না। ‘

‘ কেন বলবো না? আপনি যদি ফোন নাম্বার না দেন তো সবাইকে বলবো৷ ‘

‘ কি বলবে? ‘

ঐশি মুখে হাত রেখে ফিক করে হাসলো।

‘ আপনি আমাকে লাভু করেন৷ ‘

রুদ্র অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখে বলল,

‘ লাভু শব্দের মানে কি ইচ্ছে? ‘

‘ ভালোবাসা ‘

‘ তুমি কি কাউকে ভালোবাসো? ‘

ঐশি থমকালো। মাথা নাড়িয়ে বললো,

‘ মা বাবাকে ভালোবাসি। ‘

‘ মা বাবা তোমাকে অনেক আদর করে তাই না? ‘

‘ হু বাবা আমাকে প্রিন্সেস বলে ডাকে। ‘

‘ তুমি যে আমার সাথে কথা বলছো, তোমার যদি কোনো বদনাম হয় তবে তোমার বাবার অসম্মান হবে৷ তুমি কি চাও তোমার বাবা কষ্ট পাক? ‘

ঐশি ঠোঁট উল্টে না করলো। রুদ্র হেসে বলল,

‘ এইতো লক্ষী মেয়ে৷ এবার ছাদ থেকে চলে যাও। আর কখনো আমার সাথে কথা বলো না কেমন? ‘

ঐশি ছলছল চোখে তাকালো,

‘ আপনাকে দেখলেই আমার কথা বলতে ইচ্ছে করে। নাম্বার টা দিন তবে আমি আপনার সাথে সামনাসামনি কথা বলবো না। সত্যি! ‘

রুদ্র হতাশ, হাত জোড় করে বলল,

‘ ক্ষমা করো ভাই, তুমি আমার কেউ হও না তবুও তোমাকে এতোক্ষণ বুঝাতে চেষ্টা করেছি। তোমার বদনাম হলেও আমার কিছু আসবে যাবে না। বেহায়া মেয়ে মানুষ আমার পছন্দ না। যত্তোসব। ‘

রুদ্র ছাঁদ থেকে নেমে গেছে। ঐশি ঠোঁট উল্টে নাক টানছে৷ ইয়াসিফ তাকে পছন্দ করে না ভেবে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে৷

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে