#ইচ্ছে_দুপুর
খাদিজা আরুশি আরু
পর্বঃ৭
ও বাড়ি পৌঁছে আমি বেশ অবাক হলাম।আমার ধারনা ছিলো ও বাড়িতে আমার উপস্থিতি কেউ স্বাভাবিকভাবে নেবে না।যেহেতু আমি ডিভোর্স নোটিশ পাঠিয়েছি সেহেতু আমাকে দেখে সবাই গালমন্দ করবে,এমনটাই ধারনা ছিলো আমার।কিন্তু হলো তার উল্টো।সবাই আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করছিলো যেনো হাতে ওই আকাশের চাঁদটা পেয়েছে।আমার শ্বাশুড়ি আমাকে তার পাশে বসিয়ে একে একে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন।
আহসান স্যার চলে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আমার পরিবারের সবাই তাকে রাতে থেকে যেতে বললেন।স্যারও আর না করতে পারলেন না।আমার শ্বশুর মশাই তখন থেকে স্যারের সঙ্গে ড্রইংরুমের এক কোনে বসে কথা বলে চলেছেন।আমার এ পরিবারটা সত্যিই দারুন।ইস…গত চার বছরে কতো কি মিস করলাম,ভেবেই খারাপ লাগছে।
এতো কিছুর ভিড়ে যে মানুষটার বদৌলতে আমি এতো সুন্দর একটা পরিবার পেলাম সে মানুষটাকেই দেখছি না।আমার চোখ আশেপাশে সে মানুষটাকে খুঁজে চলেছে।আমার ব্যাকুলতা টের পেয়ে পাশ থেকে আমার চাচাতো ননদ পিয়ালি ফোঁড়ন কেটে বলে,
—কি ভাবি,দাদাভাইকে খুঁজছো?
তার কথার পিঠে আমার আরেক ননদ মোনালি বলে,
—আরে ভাবিতো দেখি দাদাভাইকে ছাড়া থাকতেই পারে না।
ওদের কথায় আমি অস্বস্থিবোধ করছি দেখে ওদের উদ্দেশ্যে আমার শ্বাশুড়ি মা বললেন,
—তোরা কি বলতো,মেয়েটা সবে এলো আর তাতেই তোদের দুষ্টামি শুরু!ওকে দুপুরের ঘরে নিয়ে যা।
ঠিক তখন আগমন ঘটলো আমার বড় ননদের।তার নাম তানহা।এ বাড়িতে আমার বরের সবচেয়ে কাছের সে।আমার শ্বশুররা তিন ভাই।আমার শ্বশুর মেজ।বড় জেঠার এক মেয়ে,তানহা আপু।তানহা আপু আর দুপুর,মানে আমার উনি পিঠাপিঠি।আমার উনি তানহা আপুর থেকে তিন মাসের ছোট।আর ছোট চাচার দুই মেয়ে, পিয়ালি আর মোনালি।আমার বর এ বাড়ির একমাত্র ছেলে।তাই সবাই তার বউ,মানে আমাকে অনেক আদর যত্ন করছে।
তানহা আপু আমি আসার পরে কেমনভাবে যেনো আমাকে দেখছিলো।তারপর কিছু না বলে উপরে চলে গেলো।এখন আবার এসে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—শুনো ইচ্ছে,দুপুর খুব গোছালো মানুষ।তুমি হুট করে যেখানে সেখানে হাত দিও না।
তানহা আপুর কথায় আমার রাগে গা টা জ্বলে যাচ্ছিলো।প্রথম দিন বলে কিছু বললাম না।তবে মনে মনে বললাম,”আমার বরের ঘর মানে আমার ঘর।আমার ঘরে আমি যা মন চায় করবো।তুই বলার কে,হুহ…”।আমাকে চুপ থাকতে দেখে তানহা আপু আবার বললো,
—শোনো ইচ্ছে,দুপুর আপাতত ঘরে নেই।ও কাল আসবে।তুমি ফ্রেস হয়ে নাও।বেশি দেরি করো না যেনো আবার।আমি তোমাকে খেতে ডাকবো একটু পর।
আমি কিছু না বলে পিয়ালি আর মোনালির পেছন পেছন উপরে চলে গেলাম।দক্ষিণ পাশের কোনার ঘরটায় গিয়ে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম।কি সুন্দর পরিপাটি করে ঘরটা গোছানো।আর ঘরের ডুকলেই একটা বড় ফ্রেমের দিকে চোখ যায়।ফ্রেমে একটা ছবি বাঁধাই করে রাখা।আমি বেশ বিস্মিত হই কারন ফ্রেমে বাঁধাই করা ছবিটা আমার কলেজে পড়াকালীণ একটা অনুষ্ঠানে তুলা।আমি সেদিন কলাপাতা রংয়ের একটা শাড়ী পরেছিলাম।আমার বর আমার কলেজে গিয়েছিলো,ভেবেই অবাক হচ্ছি।যখন গেলো তখন দেখা করলেই তো পারতো,কেনো দেখা করলো না তা ভেবে বড্ড অভিমান হচ্ছিলো।যখন আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ছবিটা দেখছি তখনই মোনালি আর পিয়ালি চিৎকার করে তানহা আপুকে ডাকলো।তাদের ডাকে আমি আঁতকে উঠে ওদের দিকে ফিরে তাকালাম।তানহা আপু ওদের চিৎকারে যেনো ছুটে উপরে এলো।এসেই ওদের ধমকে বললো,
—কি রে তোরা?সমস্যা কি তোদের?এভাবে চিৎকার করে বাসা মাথায় তুলছিস কেনো?
—দাদাভাইয়ের একটা ছবিও নেই কেনো ঘরে? সব ছবি কি তুমি সরিয়েছো?
—হ্যাঁ,আমি সরিয়েছি।কেনো তাতে তেদের কোনো সমস্যা?
—না,মানে দাদাভাইতো নিজের ঘরে পরিবর্তন পছন্দ করে না।
—দুপুর বলেছে বলেই সরিয়েছি।আর কিছু শুনতে চাস?
—না।
—এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?নিচে চল।অনেক কাজ আছে।
—না,মানে নতুন ভাবি…
—নতুন?হাহ…বিয়ের চার বছর হলো সে নাকি নতুন!তোদের আদিখ্যেতা দেখে বাঁচি না।চল, নিচে চল।
তানহা আপুর ধমকে পিয়ালি আর মোনালিও তানহা আপুর সঙ্গে নিচে চলে গেলো।এদিকে আমার রাগে সর্বাঙ্গে আগুন জ্বলছে।তানহা আপুর আমার আর আমার বরের মাঝে অনধিকার প্রবেশ আমাকে বেশ বিরক্ত করছিলো।আর এদিকে কষ্টে শেষ হয়ে যাচ্ছি এই ভেবে যে,মানুষটা নেই অন্তত ছবি থাকলে তো ছবি দেখতে পারতাম।আপসোস করতে করতে সে রাতে আর আমার ঠিক মতো খাওয়া হলো না।রাতে বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে করতে কখন ঘুমিয়ে গেছি খেয়াল নেই।
সকাল আটটা।তড়িঘড়ি ঘুম থেকে উঠে জামাকাপড় নিয়ে গোসলে চলে যাই।গোসল থেকে বের হয়ে আমি ভূত দেখার মতো চমকে চিৎকার করে উঠি।আমার চিৎকার শুনে বাড়ির সবাই মুহূর্তেই আমার রুমে এসে পড়লো।আমার শ্বাশুড়ি মা আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন,
—বউমা,কি হয়েছে?এভাবে চিৎকার করলে কেনো?
—মা,এই লোকটা আমার ঘরে কি করছে?বাড়ির বউদের ঘরে যাকে তাকে ঢুকতে দাও কি করে তোমরা?
—বউমা,তোমার কি দুপুরের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে?এভাবে কেউ সবার সামনে নিজের বরকে যা তা বলে?নিজেরা কথা বলে ঠিক করে নাও না মা।এভাবে সবার সামনে কেউ বলে নাকি!সবাই কি ভাবলো বলো তো…।
“নিজের বর” শ্বাশুড়ির মুখে কথাটা শুনে আমি নিমিষেই মিয়িয়ে গেলাম।মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম।সবাই একে একে রুম থেকে চলে যাচ্ছিলো।তানহা আপু যাবার সময় মুখ বেঁকিয়ে বললো,”ঢং দেখে বাঁচি না।সকাল সকাল যতোসব তামাশা।দুপুর,তোর বউকে বল এ বাড়ির লোক ভালো বলেই তোর বউয়ের এতো রঙ্গ সহ্য করছে”।আপুর কথায় আমার খুব কান্না পাচ্ছিলো।কোনো মতে আঁচলে মুখ গুঁজে কান্না লুকাচ্ছিলাম।তখন আবার পাশ থেকে পিয়ালি আর মোনালি বলে উঠলো,”ভাবি,তুমি তো বেশ মজার।দাদাভাই,তোর বউটা কিন্তু তোর মতো গম্ভীর আর রাগী না।ফানি আছে, হাহাহাহা…”।
সবাই চলে যাওয়ার পর আমি এবার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে তাকিয়ে শব্দ করে কেঁদে দিলাম।আমায় কাঁদতে দেখে উনি শান্তভাবে জিজ্ঞেস করলেন,
—কাঁদছো কেনো?
—ডিএম বিশ্বাস করুন আমি জানতাম না যে আপনি আমার বর।জানলে…
—জানলে তোমার আর ডাক্তার হওয়া হতো না।ক্যারিয়ার উচ্ছন্নে যেতো।একটা কথা বলো তো, ডিভোর্সের এপ্লাই করার সময় যখন আমার নাম শুনলে তখন বুঝো নি যে দুটো মানুষ এক?
—কি করে বুঝবো? আপনি ডিএম, সে দিগ্বিজয় মাহবুব…
—সত্যিই ভেবেছিলাম আমি, যে এতো ক্লু পাবার পরও কিছু বুঝে না সে আমাকে দেখলে নিশ্চিত পড়াশুনা উচ্ছন্নে যেতো।
ডিএম এর কথা শুনে আমি তার পাশে বসে অভিমানের সুরে বললাম,
—তা কেনো হবে?আমি তো অনেক সিরিয়াস পড়াশুনায়।
—হ্যাঁ,তা তো প্রথম দিন ক্লাস নিতে গিয়েই দেখেছি।
আমি আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলাম,
—কি…কি দেখেছেন?
—রুদ্রর ক্লাসে রুদ্রকে তো বসে বসে দেখতে।আর আমার ক্লাসে এতো সেজে আসতে…।
—সাজতে আমার ভালো লাগে।
—হাস্যকর…কই বিয়ের আগে তো কখনো এতো ঘটা করে সাজতে দেখিনি।
—আপনি বিয়ের আগে আমাকে দেখেছিলেন?
—হ্যাঁ,দেখেছি বলেইতো রাতারাতি বিয়ে করলাম।
—কখন দেখলেন?কবে দেখলেন?আমি তো দেখি নি।
—প্রথম দেখেছি এলাকার বসন্ত উৎসবে। লাল পাড় বাসন্তী শাড়ী, খোলা চুল,হাত ভর্তি চুড়ি, পায়ে ঝুনঝুন করে বাজা নূপুর আর ঠোঁটের সেই মিষ্টি হাসি সবটা আমাকে বশ করার জন্য যথেষ্ট ছিলো।সেদিন তুমি সেভাবে সাজো নি,হালকা লিপস্টিক আর চোখে কাজল।সুতরাং যে বসন্ত উৎসবে সাজে না সে কিনা শহরে ক্লাসে সেজে বসে থাকবে ব্যাপারটা বিশ্বাসযোগ্য?আমাকে এ কথা বিশ্বাস করতে বলছো?
ওনার কথা শুনে আমি আর কিছু বলতে পারলাম না।মানুষটা আমাকে কতো আগের থেকে চিনে।খুব ইচ্ছে করছে আমাদের বিয়েটা কি করে হলো তা জানতে।তবে তার আগে আমার আরও কিছু প্রশ্নের উত্তর জানার আছে।তাই ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
—আপনি আমাকে শুরুতেই বলেন নি কেনো যে আপনি আমার বর?মানে কলেজের সবার সামনে আমার আর আপনার সম্পর্কের কথা লুকালেন কেনো?
—বললে তোমাকে কেউ ডাক্তার ইচ্ছেবিলাসী মাহবুব হিসেবে চিনতো না।তারা তোমায় চিনতো ডাক্তার দিগ্বিজয় মাহবুব অর্থ্যাৎ ডিএম এর বউ হিসেবে।সেটা কি তোমার জন্য সম্মানের হতো?
—তো এখনও তো সবাই সেটাই জানবে।
—না ইচ্ছেবিলাসী,তারা এখন তোমাকে একনামে চেনে। তুমি তোমার যোগ্যতায় তা অর্জন করেছো।
—না,সেটাও আপনার জন্য।
—কি করে?
মুচকি হেসে বললাম,
—ফোনে বর হয়ে পড়িয়েছেন আর কলেজে স্যার হয়ে।
—তাতে তো বিশেষ কোনো ক্ষতি হয়েছে বলে মনে হয় না।
—না,উপকারই হয়েছে।
—আর কিছু জানার আছে?
—আহসান স্যারকে তো অন্তত বলতে পারতেন।
—কে বলেছে বলি নি?স্যারকে বলেছিলাম বলেই না স্যার তোমার সব খবর আমাকে দিতো।তিনি ছিলো তোমার সঙ্গে আমার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। প্রথম দিন থেকেই উনি সব জানতেন, এমনকি ওনার তোমার সঙ্গে প্রথম আলাপও আমার অনুরোধে…
—স্যার আমাকে বলে নি কেনো?
—মানা করেছিলাম।
—ফোনে কথা বলতেন অন্তত।
—তোমার যে কান,হ্যালো বললেই গলার স্বর চিনে যেতে।
—উপহাস করছেন?
—না, তোমার শ্রবণশক্তির সুনাম করছি।
ডিএম মুচকি মুচকি হাসছে।আমি কিছুটা রেগেই প্রশ্ন করলাম,
—আপনিই যখন আমার বর তখন শুধু শুধু এই ডিভোর্স আর দ্বিতীয় বিয়ের নাটকটা করলেন কেনো?
—তোমাকে সত্যি সত্যি জয় করবার জন্য।আমি চাইলেই জোর করে তোমাকে এ বাড়িতে নিয়ে আসতে পারতাম।কিন্তু তাতে কি তোমাকে সম্পূর্ণভাবে পাওয়া হতো?হতো না।কিন্তু এখন তুমি সম্পূর্ণভাবে আমার,শুধু আমার।প্রথমদিন থেকে আমি তেমাকে এভাবেই পেতে চেয়েছি।সেদিন কোর্টে যখন তুমি বিয়ে করবে না বললে তখন আমার চার বছরের অপেক্ষা স্বার্থক হলো।
—আপনি আমাকে ভালোবাসেন?
—না…।
ওনার উত্তরে আমার চোখ থেকে টুপ করে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।তখন উনি বললেন,
—ভালোবাসার উর্ধ্বে কিছু থাকলে আমার জন্য সেটা তুমি।আর সেই তুমিকে বারংবার নিজের করে কাছে পেতে চাই বলেই না এতো বছরের এই দূরত্ব।
ওনার কথাটা শুনে আমার মনের ভেতর রং বেরঙের প্রজাপতি উড়তে লাগলো।এমন একটা সুখ সুখ অনুভূতির সন্ধানেই হয়তো আমার মন এতোদিন অপেক্ষা করছিলো।আজ যখন সে সুখ পেলাম তখন মনে হচ্ছে এ মানুষটার সঙ্গে এ মুহূর্তটা যেনো এখানেই থমকে যায়।
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর উনি আমাকে নিয়ে বাবার বাড়িতে গেলেন। এখন আর আমার বাবা মায়ের উপর কোনো অভিমান অবশিষ্ট নেই।এর মধ্য হলো আরেক কান্ড।তুর্জর সঙ্গে আমার তুমুল ঝগড়া হলো।তুর্জ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে উনি ঘরে আসলেন।এসেই বললেন,
—তুর্জ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে সমস্যা কি?
—বাবা চায় তুর্জ আমার মতো ডাক্তার হোক।
—তোমার বাবার ইচ্ছেই যে ওর ইচ্ছে হবে তা কি বিশেষ জরুরি?
—আমি বাবার স্বপ্নকে নিজের করে ভালোবাসতে পারলে তুর্জ কেনো পারবে না?
—আমি তোমাকে নিজের মতো আমাদের সম্পর্ক মানতে সময় কেনো দিলাম জানো?
—কেনো?
—কারন আমাকে ছোটবেলা থেকে আমার বাবা মা স্বাধীনতা দিয়েছিলো নিজের জীবনের সিদ্বান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে।তাই আমি তোমাকে স্বাধীনতা দিতে পেরেছি।অবশ্য শুধু আমি না আমাদের বাড়ির সবাইকেই স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে।তানহাও তো নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছে।
—তানহা আপু বিবাহিত?
—হ্যাঁ কেনো?ওর বরকে দেখো নি?
—না।তানহা আপু আপনার সব ব্যাপারে নাক গলায় কেনো?তার নাক গলানো দেখে আমি ভাবলাম সে আবার আপনাকে পছন্দ করে কি না।
আমার বলা কথাটায় শব্দ করে হাসলো দুপুর।তারপর নিজেকে খুব কষ্টে সামলে বললো,
—তানহা আমার বোন কম বেস্ট ফ্রেন্ড বেশি।তুমি যে আমাকে কোর্ট থেকে ডিভোর্স নোটিশ পাঠিয়েছিলে সেটা তানহা রিসিভ করেছিলো।আর তখন থেকেই সে তোমার উপর ক্ষেপে আছে।
রাতে আমার বাসায় খাবার খেয়ে আমরা ওনাদের বাড়িতে যাই।নিজের ঘরে গিয়ে তো আমি অবাক।পুরো ঘরটা ফুল দিয়ে সাজানো।তখনই তানহা আপু এসে বললো,
—কি পছন্দ হয়েছে?
—খুব সুন্দর হয়েছে আপু।
—তোমাকে একটু ঝারি দিয়েছি।রাগ করো না ভাই কেমন?
—না,না তা কেনো…।
তখনই রুমে প্রবেশ করলো তানহা আপুর বর তিশান ভাইয়া।উনি এসে দুপুরকে জোর করে নিয়ে গেলো।তারপর তানহা আপু আমাকে একটা লাল বেনারসী পরিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিলেন।আয়নায় নিজেকে দেখেই নিজের লজ্জা হচ্ছিলো।আমাকেও কি এতো সুন্দর লাগতে পারে!জীবনে প্রথমবার নিজের ভালোবাসার মানুষের জন্য সাজলে সম্ভবত এমন অনুভূতিই হয়।তানহা আপু আমার কাঁধে নিচের চিবুক ঠেঁকিয়ে আমাকে পেছন থেকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বললেন,
—আজ দুপুরটা এ রূপের অনলেই জ্বলসে মরবে।
—ধুর কি যে বলো না আপু…।
এর মাঝে তিশান ভাইয়া দুপুরকে নিয়ে এসে গেছেন।সাদা পাঞ্জাবীতে দুপুরকে কোনো রাজকুমারের থেকে কম মনে হচ্ছে না।আমার দুপুর যেনো রূপকথার কোনো রূপবান পুরুষ।যার ভালোবাসায় বারংবার সিক্ত হতে আমি প্রস্তুত।
আমাদের বেস্ট অফ লাক বলে তানহা আপু আর তিশান ভাইয়া চলে গেলো।ওরা চলে যাবার পর দরজা আটকে দুপুর আমার কাছে এলে আমি রিতীমতো তাকে পায়ে ছুঁয়ে সালাম করতে যাই।দুপুর আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
—আমি এসব পছন্দ করি না ইচ্ছেবিলাসী।
কথাটা বলেই আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে দুপুর।দুপরকে ছাড়িয়ে আমি বলি,
—ওযু করে আসুন।আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে দুরাকাত নফল নামাজ পড়বো।
আমার কথাটা শুনে দুপুর বাধ্য বরের মতো ওযু করতে চলে গেলো।নামাজ পড়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি।আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে আমার চুলে নাক ঘষছে দুপুর।আমি হঠাৎ দুপুরকে জিজ্ঞেস করলাম,
—আমাদের বিয়েটা কি করে হলো?
—তোমাকে দেখার পর বাসায় এসে বলি তোমার সঙ্গে বিয়ে না হলে আর কাওকে বিয়ে করবো না।সন্যাসী হয়ে যাবো।আমার এই একটা কথাই যথেষ্ট ছিলো।বাবা আর জেঠুমনি তোমার বাবার সঙ্গে আলাপ করে।তোমার বয়স কম বলে তোমার বাবা প্রথমে অমত করলেও তুমি মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পর রাজি হন।কারন তিনি তোমাকে একা ঢাকা পাঠাতে সাহস পাচ্ছিলেন না।তাই যেহেতু আমি ওই কলেজের শিক্ষক সেহেতু তিনি আর আপত্তি করেন নি।তোমার ভর্তির আগেই সব ঠিক করলেন।কিন্তু বিপত্তি হলো তোমার পালানোর সিদ্বান্তে…তাইতো রাতারাতি বিয়েটা করতে হলো।সেদিন বুঝেছিলাম তোমাকে এতো সহজে পাওয়া হবে না আমার।তোমাকে অর্জন করতে হবে।আর আজ আমি তোমাকে অর্জন করে নিয়েছি।
দুপুর আমার কানের কাছে মুখ নামিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
—মিসেস ইচ্ছেবিলাসী মাহবুব আজ থেকে আপনার দুপুরের ভালোবাসায় সিক্ত হবার দিন শুরু।
পরিশিষ্টঃ
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে তিন বছরের স্নিগ্ধকে সঙ্গে করে দাঁড়িয়ে আছি।ছেলেটা হয়েছে বাবা ভক্ত। তখন থেকে জ্বালিয়ে মারছে “বাবা কখন আসবে,বাবা কখন আসবে” বলে।
দুপুর গত মাসে একটা ভিআইপি ডক্টর টিমের সঙ্গে নিউইয়র্ক গেছে।আজ সে ফিরবে।ভেবেই আনন্দ হচ্ছে যে,দীর্ঘ এক মাস পর আবার আমি দুপুরময় দিনের খোঁজ পাবো আর ইচ্ছে-দুপুরের স্নিগ্ধ পাবে বাবা-মায়ের ভালোবাসার পরশ।
“সমাপ্ত”
সময়ের অভাবে একি রকম গল্প পড়তে পড়তে বিরক্ত হয়ে গল্প পড়া ছেড়ে দিয়েছিলাম। অনেক দিন পর একটা ভিন্নধর্মী গল্প পড়লাম, গল্পটা অনেক সুন্দর হইছে।অনেক শুভ কামনা রইল লেখিকার জন্য।