#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট2020
ইচ্ছে_ঘুড়িতে_উড়ব_আমি
লেখিকা_খাদিজাতুল_কোবরা
#ছোটগল্প
গরিব ঘরে জন্ম আমার তাই বলে কী আমার স্বপ্নগুলো ডানা মেলবে না ।
রংয়ের বাহারে সব কিছু রঙিন করতে খুব ভালো লাগে আমার ।যেখানে যেই রং পায় সেইটা দিয়েই
মনের আবেগ ফুটিয়ে তুলি ।
রংগুলোকে আকড়ে ধরে থাকি সারাক্ষণ । সামনে যা পায় তারই সৌন্দর্য আমি আমার আর্টকলার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলি ।
সবার কাছে প্রশংসা পেলেও বাবার কাছে তা কোন দিনও পায়নি।আর ভাই আমার ছোট তাই ভাইকেই খুব ভালবাসাতেন।সব কিছুই দেখত মা তবুও নিশ্চুপ হয়ে আমাকে আগলে রাখত।
সব থেকে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো আমি কথা বলতে পারিনা ।
আর আমার বাবা এসব পছন্দই করেন না ।আমি এত সুন্দর করে ছবি আঁকি তবু দেখতেও চাই না ।শুধু অপমান করার চেষ্টা করত।
কিন্তু মা আর রিধীমা আপু পাশে ছিল বলেই হয়ত এক টুকরো আশায় বুক বেঁধে ছিলাম । আমি নেহা,,ইচ্ছে বহু দূরের ছিল এবং পথটাও অনেক কঠিন ছিল ।তবুও ভয় কাটিয়ে জয় হাসিল করেছিলাম।
আমি বাবার কাছে যেন বোঝাসরূপ ছিলাম ।তবে মা সব সময় আমার স্বপ্নগুলো পূরণে পথ দেখিয়েছে ।আমার ঢাল হয়ে মা আমার পাশে ছিল।
ছবি অঙ্কনের সফরটা আমার অনেক দিনের।
¤¤¤ মা বাবা দুজনেই কাজ করতেন ।মা অন্যের বাড়িতে রান্নাবান্নার কাজ করত।
সেই সময় মাঝে মাঝে আমাকে সাথে নিয়ে যেত
সেই বাড়িতে।
আমি ওখানে গিয়েও থেমে থাকতাম না ।রিধীমা আপুর ঘরে গিয়ে ছবি অঙ্কন করতাম।
ওনার কাছে পড়ালেখা শিখতাম। আপু অনেক প্রশংসা করতো আমার ছবিগুলোর।
আর বলতো নেহা তুই অনেক দূর এগিয়ে যাবি।তোর ছবির অনেক সুনাম হবে একদিন ।অনেক
সুন্দর করে তুই তোর মনোভাব এই ছবিতে
তুলে ধরিস।তোর এই ছোট বয়সে অসম্ভব সুন্দর
ছবি আঁকিস তুই।
দেখলে মনে হয় একজন অভিজ্ঞ আর্টিস্ট ছবিগুলো এঁকেছে ।
আপুর কাছে আমি অণুপ্রেরনা পেতাম।আর আপুর কথা শুনেই মা অতি কষ্টে আমাকে একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে ছিল।কিন্তু বাবা রাজি ছিলেন না ।
তবুও মা একটু জোর করেই ভর্তি করেছিল ।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি আঁকাআঁকি নিয়েই নতুন পথচলা শুরু হয় ।স্কুলের প্রধান থেকে শুরু করে সবাই আমার আর্টের প্রশংসা করতেন।
সময়ের পরিবর্তনে এই ভাবে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকি ।আর প্রতিদিন বাবার অঢেল
অপমানের শিকার হতে থাকি।তবুও আমি হাল ছেড়ে দিইনি ।
নিজের প্রতিভা রং তুলির আঁচড়ে প্রকাশিত করতেই থাকি।নিজের স্বপ্নগুলোকে মুক্ত প্রজাপতির হরেক রকম রঙে সাজাতে থাকি।
যখন ক্লাস এইটে পড়ি তখন আমাদের স্কুলে কোন একটা উপলক্ষে বাইরের অনেক শিক্ষক আসেন ।
তারা সবাই আমার আর্টের প্রশংসা করতে থাকেন এবং আশ্চর্য হয়ে যান এত সুন্দর আর্ট দেখে।কিন্তু তারা সবাই আমার প্রতিবন্ধকতার কথা শুনে দুঃখ প্রকাশ করেন।
তাদের মধ্যে কিছু শিক্ষক এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। আর আমার ছবিগুলোর স্যাম্পল নিয়ে যান।
কিছুদিন পরেই খবর পাঠান দেশীয় চিএকলা অনুষ্ঠানে আমার নাম নির্বাচন করা হয়েছে।
ওখানে যে বিষয়ে ছবি আঁকতে দিবে তা সুন্দর করে করতে পারলে এবং বিজয়ী হতে পারলে বাইরের দেশেও প্রতিযোগিতার জন্য নিয়ে যাবে।এই কথা শুনে আনন্দের শেষ নেই।
মা মিষ্টি কিনে সবাইকে বিলিয়ে ছিল ।কিন্তু বাবা রাগে একাকার অবস্থা আমাকে যেতে দিবেন না ।মা অনেক জোরাজুরি করে দিয়ে পাঠান।
নতুন এক গন্তব্যে যাবার পর অনেক ভয়ে ছিলাম ।তবুও সেই ভয়কে জয় করে আমি বিজয়ী হয়ে সবার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠেছিলাম।আর বিদেশে প্রতিযোগিতার জন্য আমাকে সেরা আর্টকলা হিসেবে নির্বাচিত কর হয়েছিল ।
স্কুলে আমাকে নিয়ে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ।তারা সবাই আমাকে নিয়ে গর্বিত।আমার ছবিগুলো চার্ট বোর্ডে তুলে সাজিয়ে রাখাছিল ।
বাবা এবার একটু নরম হয়ে গিয়েছিল । আর কাজের জায়গায় গিয়ে সবাইকে বলে বেড়াতো ।
এইটা শুনার পর আমি আর মা আনন্দে কান্না করতে শুরু করেছিলাম ।
এরপর বিদেশে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে দেশের নাম উজ্জ্বল করতে সক্ষম হই।প্রথম বিজয়ীতা হওয়ার জন্য স্বর্ণপদক লাভ করি।
আর বাবা দোকানে বসে টিভিতে প্রোগ্রাম দেখে খুশিতে আটখানা ।মা আর পাড়ার সবাই রিধীমা আপুর বাড়িতে টিভিতে আমাকে দেখে
হাত তালি দিতে ব্যস্ত ।শিক্ষকরা সবাই আমার সফলতা দেখে খুশি ।
কথা বলতে না পারলেও রং তুলির টানে আজ নিজের মনোজগতের যত কথা যত আবেগ সবটা
প্রকাশ করেছি।
আজ আমার আনন্দের জুড়ি মেলা ভার। নিজের স্বপ্ন পূরণের স্বর্ণচূড়ায় রঙিন ঘুড়ি হয়ে গেছি।
আমার স্বপ্নগুলো আজ ডানা মেলছে মুক্ত
প্রান্তরে।অসহায়ের মতো প্রতিবন্ধকতার রেস কাটিয়ে জোরে জোরে বলতে মন চাইছে
“”ইচ্ছে ঘুড়িতে উড়ব আমি””
ভাল লাগলে অবশ্যই জানাবেন প্লিজ