ইংলিশ মিডিয়াম পর্ব-১৬

0
99

#ইংলিশ_মিডিয়াম
১৬তম_পর্ব
~মিহি

বাড়ির পরিবেশ যথেষ্ট নীরব। একপাশে তিথি এবং তার বাবা-মা বসে, অন্যদিকে মিত্তিমের মা এবং মিত্তিম। আহসিনা বেগম বুঝে উঠতে পারছেন না হচ্ছে টা কী। শৈশবও আসার পর থেকে কিছুই বলছে না। কেবল ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো। মিত্তিমের মায়ের মুখোমুখি দাঁড়ালো সে।

-“আসসালামু আলাইকুম আন্টি। আপনার মেয়ে এবং আমি পরস্পরকে ভালোবাসি কিন্তু এ মুহূর্তে আমার উপর যে অপবাদ আনিত হয়েছে তা আপনার সামনেই ক্লিয়ার হোক এটা আমি চাই। সেজন্য আপনাকে এভাবে আসতে বলেছি। আমি ভুল করে থাকলে দুঃখিত কিন্তু আপনার এখানে উপস্থিত থাকাটা আমার সঠিক মনে হয়েছে।”

আহসিনা বেগম চমকালেন। মিত্তিম আর শৈশব? তিনি তো ভেবেছিলেন মিত্তিম এবং ফায়াযের মধ্যে কিছু ঘটলেও ঘটতে পারে! অবশেষে তার বড় ছেলে কিনা এই লক্ষী চঞ্চলাবতীর প্রেমে মাতোয়ারা হলো? মনে মনে হাসতে চাইলেও পারছেন না তিনি, পরিস্থিতি এখনো হাসির অনুকূল নয়। তিথির বাবা-মা মাথা নিচু করে বসে আছে। মেয়ের কাণ্ডে রীতিমতো অপমানিত বোধ করছেন তারা। তাদের মেয়ে কিভাবে তাদের মান-সম্মান নিয়ে এভাবে খেললো বুঝে উঠতে পারছেন না তারা অথচ ছেলেটাও বলছে সে অন্য মেয়েকে ভালোবাসে। এক মুহূর্তের জন্য মেয়ের চিন্তায় চোখে ভিজে উঠে তিথির বাবার। শৈশব খেয়াল করে সেটা। মিত্তিমের মায়ের সাথে কথা শেষ করে সে তিথির বাবা-মায়ের মুখোমুখি হয়, তিথির দিকে তাকায় না অবধি। ওর মুখের দিকে তাকানোর রুচিটুকুও অবশিষ্ট নেই শৈশবের।

-“আঙ্কেল আন্টি, আপনার মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক অনেক আগেই শেষ হয়েছে। আপনার মেয়ে নিজেই শেষ করেছে। হঠাৎ দুই বছর পর তার কী মনে হলো যে আমার বাচ্চা তার গর্ভে এমন কথা নিয়ে হাজির হলো? যেখানে সম্পর্কই নেই আমাদের, সেখানে আমার বাচ্চা কিভাবে আসবে?”

তিথি এবার চেঁচিয়ে উঠলো। সবার সামনে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। শৈশবের দিকে আঙুল তুললো আরো দৃঢ়ভাবে।

-“তুমি সবকিছু এভাবে অস্বীকার করতে পারছো শৈশব? এত সহজে? আফরা আপুর বিয়েতেই আমাদের আবার দেখা হয়, কথা হয়। এমনকি আমি তোমার ঘরে..”

তিথি কাঁদতে শুরু করে আবার। শৈশব কিছু বলছেই না। তিথির নাটক কতক্ষণ চলে তা জানার অপেক্ষায় আছে সে বোধহয়।

-“দেখো তিথি, তুমি আমার ঘরে আসার পর আমি তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে যাই। তোমার মতো চরিত্র আমার না যে মাঝরাতে তুমি ঘরে ঢুকলেই আমি তোমার সাথে কিছু করে বসবো! তুমি কেন এই নাটক করছো? আমি তো মরে গেলেও তোমাকে বিয়ে করবো না।”

-“তুমি বিয়ে না করলে আমি আমার গর্ভের বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাবো শৈশব?”

-“কী আজব! ওয়েট, তুমি তো প্রেগন্যান্ট? ঠিক আছে চলো হাসপাতালে। তোমার আবার প্রেগন্যান্সি টেস্ট করাও আমার সামনে। আমার তোমার উপর তিল পরিমাণ বিশ্বাস নাই।”

তিথি ঢোক গিললো। হাসপাতালে গেলেই তো সে ধরা পড়ে যাবে। তিথি শেষ চাল চাললো।

-“আমার প্রচণ্ড দুর্বল লাগছে শৈশব। তোমার এত সন্দেহ থাকলে প্রেগন্যান্সি কীট নিয়ে আসো, আমি আবার টেস্ট করে দেখাচ্ছি।”

শৈশব রাজি হলো না। সে হাসপাতালেই নিয়ে যাবে তিথিকে। তিথির ব্যাগে একটা প্রেগন্যান্সি কীট আগে থেকেই আছে কিন্তু হাসপাতালে গেলে তো সব সত্য ফাঁস হবেই। তিথি বুঝে উঠতে পারছে না কী করবে। শৈশব তিথির উত্তরের অপেক্ষা করলো না। মেডিকেল রিপোর্টগুলোর ছবি তুললো ফোনে। তিথি আটকাতে ধরলো।

-“শৈশব কী করতে চাচ্ছো তুমি? আমার রিপোর্টের ছবি তুলে ব্ল্যাকমেল করতে চাও আমাকে? অবশ্য এছাড়া আর কীই বা করবে! কাপুরুষ তুমি! একটা মেয়েকে ব্যবহার করে এভাবে ফেলে দিচ্ছো। তোমার বাচ্চাটার কথা অন্তত ভাবো শৈশব।”

শৈশবের ফোন হাতে নিয়ে অন্যদিকে এসে বসলো। তিথির গলা বসে গেছে কাঁদতে কাঁদতে। সে মিত্তিমের মায়ের সামনে বসলো।

-“আন্টি! বিশ্বাস করুন আমি আর শৈশব একে অপরকে অনেক ভালোবাসতাম, এখন যা হচ্ছে সবটাই একটা ভুল বোঝাবুঝির জন্য। আমি মিত্তিমকেই সবার আগে সবকিছু জানিয়েছিলাম। ও বিশ্বাস করেনি। আপনি অন্তত বিশ্বাস করুন।”

-“তুমি যদি সত্যিই প্রেগন্যান্ট হয়ে থাকো তবে তোমার হাসপাতালে যেতে সমস্যা কী মা? আবার চেক করাও! তাহলেই তো সব পরিষ্কার হয়ে যায়।”

তিথি বুঝলো হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে সবটা। অজ্ঞান হওয়ার নাটক করলো সে। ভাবলো বোধহয় একটু শান্তি পাওয়া যাবে। তা হলো না, শৈশব তার এক পরিচিত ডাক্তারকে কল করে আসতে বললো। ভয়ে হাত পা কাঁপছে তার। ডাক্তারের নাম শুনতেও ভয় লাগছে এখন। কপালে যে কোন শনি নাচছে তার সে নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না।

__________________________

ডাক্তার প্রায় মিনিট দশেক তিথিকে ভালোমতো পর্যবেক্ষণ করে ঘরের বাইরে আসলো। সবাই অপেক্ষা করছে বাইরে। তিনি এসে বসলেন মাঝখানে।

-“শৈশবের ধারণাই সঠিক। আমিও তো তাই দেখলাম আর অজ্ঞান হওয়ার ব্যাপারটা সম্ভবত স্ট্রেস থেকে। শরীর তো সুস্থই।”

-“আপনাকে ধন্যবাদ ডাক্তার সাহেব।”

ডাক্তার চলে যেতেই শৈশব তিথির বাবা-মাকে অনুরোধ করলো তাকে নিয়ে যেতে। তিথি তা জানতে পেরে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলো। এতদূর এসে এভাবে খালি হাতে সে কোনোক্রমেই যাবে না। শৈশবের কলার ধরে অশ্রাব্য গালিগালাজ শুরু করলো সে।

-“তুমি এটা করতে পারো না শৈশব! প্লিজ!”

-“থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দিব। ন্যূনতম লজ্জা নাই তোমার? তোমার রিপোর্ট আমি আমার পরিচিত গাইনোকলজিস্টকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছে এই রিপোর্ট ফেক। তারপরও তুমি নাটক করেই যাচ্ছো! বের হও বাড়ি থেকে এখনি। তোমার মুখও আমার দেখতে ইচ্ছে করছে না এই মুহূর্তে।”

তিথির বাবা-মা আর অপমান সহ্য করতে পারলেন না। মেয়েকে তৎক্ষণাৎ টেনে বাইরে নিয়ে গেলেন তিনি। শৈশবের মাথা ধরেছে। কোনোরকম সোফায় বসে কপালে হাত দিল সে। মিত্তিম বুঝতে পারছে শৈশবের প্রচণ্ড মাথাব্যথা করছে কিন্তু তার এ মুহূর্তে কিছু করার নেই। মায়ের সামনে সে মোটেও শৈশবের কাছে যেতে পারবে না। সে সাহস এখনো তার হয়নি। একটু পর শৈশব নিজেই উঠে মিত্তিমের মায়ের সামনে বসলো।

-“আন্টি দুঃখিত! আপনার এসব নাটক দেখতে হলো! আমি আপনার মেয়েকে প্রচণ্ড ভালোবাসি এবং একমাত্র আপনার মেয়েকেই ভালোবাসি। আপনার অনুমতি থাকলে আমি তাকে আমার করে রাখতে চাই চিরতরে।”

-“তুমি কি এখনি বিয়ে করতে চাইছো?”

-“না আন্টি। মিত্তিমের এডমিশন শেষ হোক। এরপর ও যেখানেই থাকুক না কেন, আমি বিয়ে করে নিব। ততদিনে আমারও একটা স্ট্যাবল ক্যারিয়ার তৈরি হোক। তবে আপনি চাইলে এখনি আমাদের বিয়ে করিয়ে রাখতে পারেন।”

-“আমি যদি বলি তোমার এই মুহূর্তে আমার মেয়েকে বিয়ে করে নিজের কাছে নিয়ে গিয়ে রাখতে হবে, তোমার আপত্তি আছে?”

-“নেই। আমি সামলে নিব। বিয়ে হয়ে গেলে সে আমার স্ত্রী আর স্ত্রীর ভরণপোষণ সহ যাবতীয় দায়িত্ব আমি কাঁধে তুলে নিতে দ্বিধা করবো না।”

-“দেখো শৈশব, তোমাদের এ প্রেম যে হঠাৎ তা আমিও বুঝেছি। আমি চাচ্ছি তোমার কথাই রাখতে। মিত্তিমের এডমিশন অবধি অপেক্ষা করো তোমরা। আমি তোমার মায়ের সামনেই এসব বলছি যেন কোনো সমস্যা না ঘটে।”

শৈশব মিত্তিমের মুখের দিকে তাকালো। মেয়েটার মুখ বর্ষার গন কালো মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মতো দেখাচ্ছে কেন? মেয়েটার মন খারাপ? কেন? মিত্তিমের কি এ সিদ্ধান্তে আপত্তি আছে? শৈশবের মাথায় প্রশ্নরা ঘুরপাক খাচ্ছে একাধারে।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে