ইংলিশ মিডিয়াম পর্ব-১৫

0
97

#ইংলিশ_মিডিয়াম
১৫তম_পর্ব
~মিহি

শৈশব প্রচণ্ড বিরক্ত। তার মা আহসিনা বেগম হঠাৎ জরুরি তলব করেছেন এখনি বাড়িতে ফিরতে হবে। শৈশব বুঝে উঠতে পারছে না কিছু। সে এখানে এসেছে মাত্র ক’টা দিন হয়েছে। এত তাড়াহুড়োর মধ্যে তাকে কখনো বাড়ি থেকে ডাকেনি। বড়সড় কোনো বিপদ হলো না তো? আহসিনা বেগম কিছু বললেন না, কেবল জানালেন দ্রুত বাড়িতে আসার কথা। মায়ের এ হেন আচরণে শৈশব খানিকটা বিরক্তই হলো। আচমকা এমন করে বললে আসা যায়? তৎক্ষণাৎ টিকিট কেটেও রাত দশটার টিকিট পাওয়া গেল কোনোক্রমে। রাতে যাতায়াতের অভিজ্ঞতা প্রায় শূণ্যের কোঠায় তার। রাতে ঠিকঠাক ঘুম না হলে সে মাথাব্যথায় চোখ তুলতে পারে না আর বাসে ঘুমোনোর মতো বিশ্রি অভিজ্ঞতাও তার নেই। আচ্ছা, অভিজ্ঞতাটাকে বিশ্রি বলা কি ঠিক হলো? সে তো কখনো এ অভিজ্ঞতার কবলে পড়েইনি। বিরক্তিতে চ’কারান্ত শব্দ করে ছোটখাটো একটা ব্যাগ গোছালো সে। তিনজোড়া কাপড় আর দরকারি কাগজপত্র নিল সাথে। সব গুছিয়ে বিছানায় রেখে মিত্তিমের নম্বরে কল করলো সে। মিত্তিমের নম্বর বন্ধ বলছে। শৈশব বুঝে উঠতে পারছে না এ সময় ওর নম্বর বন্ধ কেন?

_________________________

-“আসমা তুই বেশি করে ফেলেছিস! তুই তোর দেবরকে বাড়িতে আনার আগে আমাকে একবার জানানোর প্রয়োজনবোধ করলি না? এত সাহস পেলি কোথায় তুই?”

-“আপা, ও তো হুট করে আসতে চেয়েছে। তাছাড়া অল্প সময়ের জন্যই এসেছিল। তা নিয়ে এমন করার কী আছে? তুমি যে তাড়াহুড়ো করে এলে, তাতে মনে হচ্ছে তোমার মেয়েকে আমরা খেয়ে ফেলেছি! তোমার মেয়ে তো দরজা লাগিয়ে বসে আছে। আমার দেবর বেচারা লজ্জাবোধ থেকেই চলে গেল এখন।”

-“তাও ভালো ওর এটলিস্ট লজ্জা আছে!”

-“তুমি বলতে কী চাইছো? মেয়েকে নিয়ে এত নাচানাচি করার কী আছে? তোমার মেয়ের রেজাল্ট আমি জানিনা? যে মেয়ে এস.এস.সিতে গোল্ডেন পায় নাই, এবার পাইলো অটোপাশ, সে কি পড়ে ঈশ্বরচন্দ্র হবে?”

-“আসমা তুই বেশি বলতেছিস এখন।”

-“আপা দেখো, আমি ওর ভালো চাই। দুইদিন পর যারে তারে ধরে এনে বলবে বিয়ে করবো, তখন?”

-“ও যদি এমন বলে, আমি নিজে দাঁড়িয়ে ওদের বিয়ে দিব। তোর সমস্যা? আমার মেয়ে যার কাছে নিজের ভালো থাকা খুঁজে পাবে, আমি বিয়ে দিব তার সাথে। তোর সমস্যা?”

-“তাই বলে যার তার সাথে?”

-“তোর দেবর আমার মেয়ের চেয়ে কমপক্ষে এগারো বছরের বড়! এমন ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়ার চেয়ে আমার মেয়ের ধরে আনা যা তা ছেলেই ভালো।”

আসমা প্রচণ্ড অপমানবোধ করে বাড়ি থেকে বের হলো। সে চলে যেতেই আকলিমা বেগম মিত্তিমের ঘরের দরজায় কড়া নাড়লেন। মিত্তিম সবই শুনেছে এতক্ষণ। মায়ের ডাকে সে দরজা খুলে দিল।আকলিমা বেগম মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। মায়ের স্পর্শ পেয়ে মিত্তিম চোখের পানি আটকাতে পারলো না। এতক্ষণের জমে থাকা ভয়, মানসিক চাপ সব মিলিয়ে অশ্রু হয়ে ঝরলো তার আদ্র চোখ বেয়ে। আকলিমা বেগম তৎক্ষণাৎ স্থির হলেন এবং দৃঢ় এক সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত হলেন।

-“তোমার পছন্দের কেউ আছে মিত্তিম?”

মিত্তিম চমকালো। মায়ের শীতল কণ্ঠের সম্মুখে এ প্রশ্ন বড্ড বেমানান লাগছে তার। মিত্তিম মিথ্যে বলার দুঃসাহস দেখাতে পারবে না, কোনোভাবেই না।

-“আমার উত্তর চাই মিত্তিম! সত্যি জানতে চাই আমি।”

-“আছে।”

-“ছেলেটা কে?”

-“ফারহায ইফতেখার শৈশব।”

-“ফায়াযের বড় ভাই?”

-“হ্যাঁ!”

-“তুমি কি নিশ্চিত ছেলেটা তোমাকে বিয়ে করবেই?”

-“হ্যাঁ।”

-“আমি যদি এখনি বিয়ে করতে বলি?”

মিত্তিম ঘাবড়ালো। তার মা কি সত্যিই এসব বলছে নাকি সবটা কল্পনা বুঝে উঠতে পারছে না সে।

-“বলো মিত্তিম।”

-“করবে।”

-“বেশ, চলো আমি ওর মায়ের সাথে দেখা করতে চাই।”

মিত্তিম কিছু বললো না। আকলিমা বেগম মিত্তিমের বাবাকে কল করে স্রেফ এটুকু বললেন,”তোমার মেয়ের জীবনের অনেক বড় সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি।” তার বাবা খুব নরম স্বরে প্রত্যুত্তর করলেন,”তোমার নেওয়া সব সিদ্ধান্তে আমার সম্মতি আছে।” মিত্তিম শুনলো চুপচাপ। বিবাহ বন্ধন বোধহয় এর চেয়ে সুন্দর হতে পারে না। মিত্তিমের ঠোঁটে অজান্তেই হাসি ফুটে উঠলো, আশেপাশে ফোনটা খুঁজতে লাগলো সে। ফোন খুঁজে পেল ঘরে, অফ হয়ে আছে। দ্রুত ফোন চালু করতেই দেখলো শৈশবের অনেকগুলো টেক্সট আর কল। দ্রুত কল ব্যাক করলো মিত্তিম। অনেক কথা বলার আছে তার। শৈশব তড়িৎ গতিতে রিসিভ করলো।

-“কোথায় ছিলে মিত্তি এতক্ষণ? ফোন অফ! তুমি ঠিক আছো?”

-“হ্যাঁ! তোমাকে কিছু বলার আছে।”

-“আমারো! আমি আগে বলি।”

-“আচ্ছা বলো। আমি আসছি তোমার কাছে।”

-“মানে?”

-“জানিনা! মা আর্জেন্ট কল করে বললো বাসায় ফিরতে। আজ দশটায় বাস। কাল সকালবেলা আবার আমার এই বোরিং মুখটা দেখতে হবে তোমার।”

মিত্তিম কিছুটা অবাক হলো। এত চটজলদি ডাকা? তিথি কি তবে সত্যিই শৈশবের বাড়িতে গেছে? মিত্তিম কী বলবে বুঝে উঠতে পারছে না।

-“শৈশব, আমি কিছু বলতে চাই।”

-“হ্যাঁ, এখন বলো কী বলতে চেয়েছিলে।”

-“আসলে তিথি আপু আমার সাথে দেখা করেছে আজ। হুট করেই ক্লাসে যাওয়ার সময় টেনে নিয়ে গেল ক্যাফেতে। আগের রাতে টেক্সট করে বলছিল সে প্রেগন্যান্ট। তোমাকে যেন বিশ্বাস না করি, তুমি অন্য সব ছেলেদের মতো।”

-“তুমি কী বলেছো?”

-“আপনি সব ছেলের কাছে গেছেন কেন?”

শৈশব শব্দ করে হেসে উঠলো। মিত্তিমের কাছ থেকে এমস সোজাসাপ্টা জবাব সে আশা করেনি।

-“তারপর কী হলো?”

-“আজ ক্যাফেতে রিপোর্ট দেখালো। তাও বিশ্বাস করিনি তাই উল্টোপাল্টা বললো। আমি বলেছি পারিবারিকভাবে কথা বলতে। আমার মনে হচ্ছে আন্টি এজন্যই ডেকেছে তোমাকে।”

-“আচ্ছা বুঝেছি।”

-“আসলে…আমি না মাকে আমাদের কথা বলেছি। মা জিজ্ঞাসা করেছে তুমি আমাকে এখনই বিয়ে করতে পারবে কিনা! আমি হ্যাঁ বলেছি। এখন মা আন্টির সাথে কথা বলতে যেতে চাচ্ছে।”

-“এখন তো তিথিও আছে বোধহয়। আজ যেও না। আন্টিকে বলো আমি কাল আসছি। যা কথা বলতে চায়, আমার সামনেই যেন বলে।”

-“আচ্ছা!”

-“আই লাভ ইউ মিত্তি!”

-“আই লাভ ইউ টু…”

মিত্তিম মুচকি হাসলো। খুব অদ্ভুতভাবে সব ঘটছে যেন। সে কি কখনো ভেবেছে তার মা হঠাৎ শৈশবের কথা জানতে চাইবে? আচ্ছা মা কি রাজি হবে? মিত্তিমের ভাগ্যে শৈশবের থাকাটা চিরস্থায়ী হবে তো?

___________________

তিথি এখনো কাঁদছে। আহসিনা বেগম চুপচাপ দেখছেন। ফায়ায মনে মনে কটমট করছে আর বলছে,”নাটক কম করো পিও!” সরাসরি বলার সাহস পাচ্ছে না। শৈশবের বাবা বাড়িতে নেই। তিনি থাকলেও বিশেষ কিছু হতো না। বাড়িতে তুলকালাম কাণ্ড করার কর্তৃত্ব আহসিনা বেগমের হাতে। তিনিই যখন চুপ, তখন বাড়িতে আর কোনো ঝড় ওঠার সম্ভাবনা নেই।

-“তোমার বাবা-মাকে ডাকো।”

তিথির কান্না থেমে গেল আচমকা। বাড়িতে এখনো সে জানায়নি। জানলে কী প্রতিক্রিয়া হবে তাও সে জানে না কিন্তু এতদূর আসার পর এভাবে পিছু ফিরলে তার সবই যাবে।

-“ওনারা এখনো জানেন না। আমাকে মেরেই ফেলবে আন্টি। আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।”

-“আজব! এসব আবার কেন বলছো, একবার তো বলেছো। তোমার বাবা-মাকে আসতে বলো। শৈশব কাল আসছে। আমি আগে ওনাদের সাথে কথা বলি। তারপর শৈশবের সামনেই সব কথা হবে। তোমার কোনো আপত্তি আছে?”

-“না আন্টি!”

আহসিনা বেগম আর কথা বাড়ালেন না। তিথি কাঁপা কাঁপা হাতে মায়ের নম্বর ডায়াল করলো। তার বাড়িতে কী ঝড় যে উঠবে জানে না সে! কল রিং হচ্ছে, তিথি বারংবার ঢোক গিলছে।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে