ইংলিশ মিডিয়াম পর্ব-১৪

0
98

#ইংলিশ_মিডিয়াম
১৪তম_পর্ব
~মিহি

-“আপনি সময় নষ্ট করছেন আপু। আপনার যা বলার বলে ফেলেছেন তো। আপনি প্রেগন্যান্ট এইটা আপনার পরিবারে জানান, আপনার প্রেমিকের পরিবারে জানান। অযথা আমাকে কেন বিরক্ত করছেন?”

-“শৈশবের মোহে তুমি অন্ধ হয়ে গেছো মিত্তিম!”

-“প্রথমত আমার কোচিং ক্লাস ছিল, আপনি রাস্তা থেকে টেনে এনেছেন এই ক্যাফেতে। আপনার এখন পরিবারে জানানো উচিত! আমি কে? আমাকে এভাবে এক্সপ্লেইন করার কী আছে?”

-“মিত্তিম, তুমি আমার রিপোর্ট চেক করো। প্লিজ আমার সাহায্য দরকার।”

-“আপু, আপনি আপনাদের পরিবারে জানান। সমস্যা কোথায়? যার বাচ্চার মা হচ্ছেন তার পরিবারে জানালেই তো সমাধান হয়!”

-“বেশ! তুমি মেনে নিতে পারবে তো?”

-“হাসালেন আপু। শৈশবকে আমি চিনি, বিশ্বাস করি। মানুষ দেখলেই চেনা যায় আপু কার পক্ষে কী সম্ভব! শৈশব যদি সত্যিই আপনার এ অবস্থা করে থাকে, তবে ও কখনোই অস্বীকার করতো না আপনাকে। আপনাদের ব্রেকাপ তো অনেক আগেই হয়েছে। তবে এখন হঠাৎ এই সুখবর কোত্থেকে?”

-“আফরা আপুর বিয়ের সময় এক রাতে আমি শৈশবের ঘরে গিয়েছিলাম।”

-“আর তাতেই শৈশব গলে গেল? ভালোই! আপনার এক্টিং তো প্রধানমন্ত্রী আপার লেভেলের। পরেরবার স্ক্রিপ্ট ভালো আনিয়েন।”

মিত্তিম হাসতে হাসতে উঠে বের হতে নিল। তিথি পেছন থেকে কেবল বললো,”একটা মেয়েই যে একটা মেয়ের সবচেয়ে বড় শত্রু হয় তা বোধহয় তোমার মতো মেয়েকে না দেখলে কখনো জানতেই পারতাম না!” মিত্তিমের তাতে কিছু যায় আসলো বলে বোধ হলো না। সে খানিকটা হেসেই ক্যাফে থেকে বের হলো। আজ এই ফায়াযটা ক্লাস করতে আসেনি বলেই এই শাকচুন্নি তার সাথে দেখা করার সুযোগটুকুও পেত না। আসমা যে আবার কিছু বলবেন তেমন আশাই করেছিল সে কিন্তু সে কিছু বলছে না। শৈশবকে তিথির ব্যাপারটা জানানো দরকার কিন্তু আসমা থাকতে তা কোনোভাবে সম্ভব না। মিত্তিম দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আজ শৈশবের ভার্সিটি নেই তবুও মিত্তিম চাইলেই শৈশবের সাথে কথা বলতে পারবে না। আসমার বাজের দৃষ্টি যে প্রতিক্ষণ তার উপরে থাকবে এও নিশ্চিত। আজ অনি না আসায় বাড়ি যথেষ্ট শান্ত।

ক্লাসে আর যাওয়া হলো না মিত্তিমের। চুপচাপ বাড়িতে ফিরে এসেই নিজের খালার সম্মুখীন হলো। কোনো কথা না বলে চুপচাপ ঘরে ঢুকলো সে। আসমা রান্না করছে দেখে খানিকটা অবাক লাগলো মিত্তিমের।

-“মা তো রান্না করে রেখে গেছে। আপনার কিছু লাগলে আমাকে বললেই হতো।”

-“কেন? আমি কি আগে রান্না করিনি? একজন মেহমান আসবে আর কী!”

-“মেহমান? কই মা তো আমাকে জানায়নি কিছু।”

-“আপা জানেনা। আমিও জানতাম না, আমার নিকটাত্মীয়। হঠাৎ কী যেন দরকার পড়েছে এদিকে তাই আসছে।”

-“ওহ আচ্ছা। তবুও মাকে জানাতে পারতেন। আমি জানিয়ে দিচ্ছি।”

-“আমি জানাচ্ছি, তুই অত চিন্তা করিস না। যা গোসল সেরে নে।”

আসমার কথাবার্তা কেমন একটা মনে হচ্ছে মিত্তিমের কিন্তু কিছু না বলে গোসলে ঢুকলো সে। মাথাটা ধরেছে। এই তিথির বকবকানি! ওকে আপু ডাকাই ভুল হয়েছে, ডাইনী একটা! মিত্তিম গোসল সেরে বের হয়ে চুল মুছে নিল ভালোমতো। ডাইনিং থেকে হাসাহাসির শব্দ আসছে। পুরুষ কণ্ঠের শব্দ পেয়ে মিত্তিম খানিক চমকালো। মেহমান আসবে বলেছিল খালামণি কিন্তু পুরুষ কিনা মহিলা তা অবশ্য বলেনি। ওড়না গায়ে জড়িয়ে ঘরের দরজা খুলতেই চমকালো সে। সোফায় বসে থাকা লোকটাকে মিত্তিম চেনে। আসমার দেবর, শাহেদ। এই লোকটাকে তার খালা এখানে ডেকেছে? মিত্তিমের আচমকা প্রচণ্ড ভয় হলো। হাত-পা রীতিমতো কাঁপছে তার। এজন্যই কি তবে তার খালা আগে থেকে কিছু জানায়নি?

-“আয়, এদিকে আয়! ওখানে দাঁড়িয়ে কী করছিস ওভাবে? দেখ কে এসেছে!”

মিত্তিম কী করবে বুঝে উঠতে পারছেনা। এক পাও এগোতে ইচ্ছে করছে না তার। সে ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো সেখানেই। আসমা নিজে এসে মিত্তিমের বাহু ধরলো যেন ছেলে দেখাতে নিয়ে যাচ্ছে। মিত্তিমের প্রচণ্ড রাগ হলো। হাত সরিয়ে নিলো সে। আসমা শাহেদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মিত্তিমকে নিয়ে ওর ঘরে ঢুকলো।

-“সমস্যা কী তোর? এমন ভাব করছিস মনে হয় তোর বিয়ে দিচ্ছি আমি!”

-“তুমি মাকে না জানিয়ে ঐ লোকটাকে কেন এনেছো?”

-“ঐ লোকটা মানে? আমার আত্মীয় আসতে পারে না আমার বোনের বাড়িতে?”

-“অবশ্যই আসতে পারে কিন্তু কাউকে না জানিয়ে হুট করে কেন? তার মধ্যে ন্যূনতম জ্ঞানবোধ নেই? তোমাকে আমি কম চিনি না খালামণি! যা ইচ্ছে করো, আমি এ ঘর থেকে বের হবো না।”

আসমা কিছু বলতে যাবে তার আগেই শাহেদ ডাকলো। মিত্তিম এ সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। আসমা বের হতেই ঘরের দরজাটা লাগিয়ে দিল সে। ফোন বের করে তৎক্ষণাৎ মায়ের নম্বর ডায়াল করলো সে। আকলিমা বেগম ক্লাসে ছিলেন। কল ধরতে পারলেন না তিনি। মিনিট দশেক পর মিত্তিমের বেশ কয়েকটা মিসড কল দেখে কল ব্যাক করলেন তিনি। মিত্তিম ভয়ে কাঁপছে তখনো। কেন যেন ঐ লোকটার দৃষ্টি বড্ড ভয়ানক লাগে তার। অদ্ভুত একটা নজরে তাকায়। মিত্তিম বোঝে এ দৃষ্টি মোটেও সুবিধের নয়। আকলিমা বেগম কল করতেই সাথে সাথে রিসিভ করলো সে। গলা কাঁপছে তার।

-“মা…”

-“কী হয়েছে মা? তোর কণ্ঠ এমন লাগছে কেন? শরীর খারাপ তোর?”

-“মা..খা..খালামণি এ..এসেছে।”

-“হ্যাঁ তুই তো জানতি কিন্তু কী হয়েছে?”

-“উনি ওনার দেবরকে এনেছে মা। আমার ঐ লোকটাকে ভালো লাগে না মা। আমি ওনার সামনে যেতে চাই না। ত..তুমি এসো মা..তুমি প্লিজ এসো..”

-“আচ্ছা আচ্ছা তুই চিন্তা করিস না, আমি আসছি এখনি।”

দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হতেই মিত্তিম আরো ভয় পেল। আসমা ডাকছে বাইরে থেকে কিন্তু সেসব মিত্তিমের কানেই ঢুকছে না। এ মুহূর্তে কোনোক্রমেই সে ঘর থেকে বের হবে না। বারবার দীর্ঘশ্বাস ফেলছে সে। নিজেকে শান্ত করার প্রচেষ্টায় শৈশবকে কল করার দুঃসাহসটুকু পাচ্ছে না। শৈশবকে কী করে বোঝাবে সে এইটুকু সময়ে সবটা?

______________________

মিত্তিমের সাথে দেখা করার পর তিথি ভেবেছিল বোধহয় কাজ হবে কিন্তু মেয়েটা বেহায়াপনার সর্বোচ্চ ধাপে থাকে মেয়েটা। আস্ত একটা নির্লজ্জ শাকচুন্নি! তিথির রাগে মাথা গজগজ করছে। শৈশবের পরিবারকে এবার সে জানাবেই। এই মিথ্যে দিয়েই শৈশবকে আবার নিজের করে পাবে সে। তিথি আর কিছু ভাবলো না। এখন যা হবে হোক, শৈশবকে সে নিজের করেই ছাড়বে।

শৈশবের মা তাহমিনা বেগম মাত্র ঘরদোর গুছিয়ে ডাইনিংয়ে বসেছেন। ফায়ায গেছে আফরার বাড়িতে। শৈশবের বাবাও বেরিয়েছেন। কলিংবেলের শব্দে খানিকটা বিরক্তই হলেন তাহমিনা। দরজা খুলে তিথিকে দেখে অবাক হলেন। বিস্মিত মুখেই ভেতরে আসতে বললেন।

-“তুমি? এ সময়? তুমি তো কখনো এভাবে হঠাৎ আসোনি। বসো এসো!”

তিথির চোখমুখ লাল। বাড়ি থেকেই খানিকটা প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে সে। তাহমিনা বেগম তার চোখমুখের অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করছে না কেন?

-“বসো এসো। তোমার কী হয়েছে? এমন অবস্থা কেন চোখমুখের? কোনো বিপদ হয়েছে কি?”

এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল তিথি। তাহমিনাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো। অকস্মাৎ এমন কান্নায় নিজেকে সাপোর্ট পিলার হতে দেখে তাহমিনা খানিকটা ভড়কালেন। তিথিকে বসিয়ে পানি খাওয়ালেন তিনি।

-“কী হয়েছে? বলো তো আমাকে ভালো করে।”

-“আ..আমি অনেক বড় একটা ভুল করেছি আন্টি! আ..আমায় প্লিজ মাফ করে দিন..”

-“কী হয়েছে সেটা তো বলো।”

-“আ …আমি আর শৈশব একে অপরকে ভালোবাসতাম আন্টি। আ..আমরা…আমরা আসলে বুঝতে পারিনি কিভাবে সব….”

-“যা বলবে ক্লিয়ারলি বলো। কথা ঘুরিয়ো না।”

-“আ..আমি প্রেগন্যান্ট আন্টি! আমি শৈশবের বাচ্চার মা হতে যাচ্ছি!”

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে