ইংলিশ মিডিয়াম পর্ব-১৩

0
71

#ইংলিশ_মিডিয়াম
১৩তম_পর্ব
~মিহি

-“মিত্তিম, আমার তোমাকে কিছু বলার আছে। বিশ্বাস খুব দুর্লভ বস্তু! আর অপাত্রে তা দান করলে জীবন বরবাদ যেমন আমি করেছিলাম। শৈশবকে খুব ভালো মনে হচ্ছে না এখন? আমারো হতো! তার এই ভালোমানুষির ছল কখনো বুঝিনি আমি। যা চেয়েছে সবটাই দিয়েছে তাকে। সব বলতে কী বুঝিয়েছি তা আশা করে তোমাকে এক্সপ্লেইন করতে হবে না। আমি ভাবিনি দুনিয়ার সব ছেলের মতো শৈশবও এসবের উদ্দেশ্যেই আমার সাথে জড়িয়েছিল। যাই হোক, আমি প্রেগন্যান্ট মিত্তিম! শৈশবকে এখনো জানাইনি কারণ ও আমার কল ধরবে না কখনো। তোমাকে জানাচ্ছি যেন আমার মতো ভুল তুমি না করো। পৃথিবীর সব ছেলের মতো শৈশবও একটা ভালোমানুষির মুখোশ পড়ে আছে মিত্তিম! উদ্দেশ্য হাসিল হলেই তোমাকে রাস্তায় ফেলে দিবে।”

-“পৃথিবীর সব ছেলেকে টেস্ট করতে গেছিলেন কেন আপু?”

মিত্তিমের টেক্সটে তিথির মাথায় রীতিমতো আগুন ধরে গেল।এ কেমন বেহায়া মেয়ে? সম্পর্কের কয়দিন হইছে যে এত বিশ্বাস উথলে উঠতেছে? তিথি ফোনটা বিছানার উপর ছুঁড়লো। মাথা ঠাণ্ডা করতে হবে। মিত্তিমকে এভাবে টেক্সট করে হবে না। ওর সাথে সামনাসামনি দেখা করে ওকে বুঝিয়ে বলতে হবে। ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে হবে একটু, তাতেই কাজ হবে। লং ডিসট্যান্সে অত বিশ্বাস আর কয়দিনই বা থাকে? প্রথম প্রথম তো তাই খুব উড়তেছে নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে। তিথির মাথা রাগে দপদপ করছে, পরক্ষণেই শৈশবের কথা খুব মনে পড়ছে তার। সে এই ছেলেকে ছেড়েছিল এটা ভেবে যে শৈশব আর কখনো অন্য কাউকে চাইবে না নিজের জীবনে। শৈশব এত সহজে তার জায়গা অন্য কাউকে কী করে দিতে পারে? এই ছিল তার ভালোবাসা? তিথির মাথা ঝিমঝিম করছে। তার আর শৈশবের মুহূর্তগুলো মানসপটে ভেসে উঠছে। প্রথম যেদিন মুখ ফুটে সে শৈশবকে বলেছিল ভালোবাসার কথা! আচ্ছা শৈশব তো বলেছিল তিথির জায়গা সে কখনো কাউকে দিতে পারবেনা তবে এখন ঐ মেয়েকে এত সহজে সে জায়গা কী করে দিয়ে দিল?

_______________

-“সারাদিন কী কী করলেন?”

-“ভার্সিটি, ল্যাব, অ্যাসাইনমেন্ট! জানো মিত্তি, আজ মেডিসিন নেওয়ার জন্য ফার্মেসিতে ঢুকছিলাম। একটা কাপল আর ছেলেটার কোলে পাঁচ-ছয় মাসের একটা বাচ্চা। এত কিউট লাগলো দেখে! নিজেদেরকে ইম্যাজিন করতে ইচ্ছে হচ্ছিল। আমি বাসায় জানাবো তোমার এডমিশন পরীক্ষা শেষ হলেই।”

-“এত তাড়াতাড়ি?”

-“হুহ! যদি বিদেশে যেতে হয় মাস্টার্সের জন্য, তাহলে আমি আপনাকে ওয়াইফি বানায়ে রেখে যেতে চাই। বুঝেছেন?”

-“জ্বী বুঝেছি। আপনি এখন রেস্ট করেন।”

-“আর তুমি পড়াশোনা করো।”

-“যথা আজ্ঞা!”

মিত্তিম ফোন রেখে একবার ভাবলো তিথির কথা কি শৈশবকে জানাবে? ছেলেটা যদি অযথা দুশ্চিন্তা করে? এমনিতেই ভার্সিটি নিয়ে যথেষ্ট প্যারা খাচ্ছে, এর মধ্যে এসব উটকো ঝামেলা ওর কানে তোলা কি উচিত হবে? তিথির কথার উপর সিকিভাগ বিশ্বাসও মিত্তিমের নেই। ঐ মেয়েটাকে প্রথমবার দেখার পর থেকেই মিত্তিম বুঝেছে এ মেয়ের পক্ষে সব সম্ভব। মাঝরাতে অযাচিতভাবে শৈশবের ঘরে ঢুকে পড়ার ষড়যন্ত্র যে করতে পারে, তার এসব কথায় শৈশবকে ন্যূনতম অবিশ্বাস মিত্তিম করবে না। মিত্তিম ফোন রাখেনি এখনো হাত থেকে। শৈশব হুট করেই বলে উঠবে, মিত্তি আমার কাছে থাকো আরেকটু! মিত্তিমের খুব ভালো লাগে এই বাক্যটা। শৈশবকে ইদানিং প্রতিমুহূর্তে মনে করে সে। শৈশবের ব্যস্ততাকে নিজের সতীন মনে হয়। এত কেন ব্যস্ত থাকবে ছেলেটা? অর্ধাঙ্গিনীর মতো অধিকার ফলাতে ইচ্ছে হয়। ইশস! মিত্তিম কি বড্ড বাচ্চামি করে ফেলছে? অবশ্য বাচ্চাবেলারই তো প্রেমিক। তার সাথে বাচ্চামি করা মিত্তিমের ভালোবাসাগত অধিকার। শৈশব টেক্সট করলো ঠিক পাঁচ মিনিট পর।

-“আই লাভ ইউ আ লট মিত্তি!”

-“আই লাভ ইউ টু মি.ইংলিশ মিডিয়াম মুরগী!”

-“এই তুমি আমাকে মুরগী বললে?”

-“বললাম।”

-“জেন্ডার চেঞ্জ করে ফেলছো। ছিঃ!”

-“আচ্ছা শুনুন।”

-“জ্বী আমার প্রাণপ্রেয়সী, বলুন।”

শৈশবের কথায় খানিক লজ্জা পেল। ছেলেটা মাঝেসাঝে এমন শব্দ আওড়ায় যে মিত্তিমের প্রচণ্ড লজ্জাবোধ হয়। শৈশবকে সে এত দ্রুত এত অধিক ভালোবেসে ফেললো কী করে? অকস্মাৎ ভালোবাসার অনুভূতি নাকি অনিশ্চিত হয়! মিত্তিমের বেলায় তো হচ্ছে না, শৈশবের প্রতি তার অনুভূতি প্রতিমুহূর্তে বেড়েই চলেছে। ভালোবাসা, স্নেহ, শৈশবকে একটু যত্ন করবার আকাঙ্ক্ষা তাকে প্রতিমুহূর্ত অতৃপ্ত রেখেছে। শৈশবের সাথে এ রাস্তার দুরত্ব তাকে হুটহাট বড্ড পীড়িত করে।

-“শৈশব, আমার আপনাকে ছাড়া কিছু ভালো লাগছে না।”

-“মিত্তি! ধৈর্য ধরো সোনাপাখি। তোমাকে ধৈর্য রাখতে হবে, পড়াশোনায় মন দিতে হবে। আমি এবার বাড়িতে ফিরলে আব্বু আম্মুকে জানাবো।”

-“ওনারা রাজি না হলে?”

-“তুমি পাগল মিত্তি? ওনারা ছোট থেকে তোমাকে চেনেন, স্নেহ করেন। তোমাকেই সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেন। তবে কেন আপত্তি থাকবে তাদের?”

-“জানিনা শৈশব। ভয় লাগে আমার।”

-“শোনো, ফারহায ইফতেখার শৈশব তোমার ব্যক্তিগত সম্পদ! বুঝেছো আফিয়া রুশতাহানা মিত্তিম?”

-“বুঝেছি।”

-“বেশ! এখন পড়ো। পড়া শেষ করে আমাকে নক দিবা।”

মিত্তিম সম্মতি জানিয়ে ফোন রাখলো। তার মোটেও এখন পড়তে বসতে ইচ্ছে করছে না। তিথির কারণে খানিকটা মেজাজ খারাপ হয়েছে বৈকি তার উপর কাল আবার তার অতি সোহাগের খালা আসছেন। ভদ্রমহিলার আসলেই লজ্জা নেই। কথাটা ভেবে মিত্তিম অবশ্য খানিকটা সংকোচবোধ করলো। আপন খালাকে এভাবে বলা ঠিক হচ্ছে না কিন্তু ঠিক কতখানি ক্ষোভ যে মিত্তিমের মনে জন্মেছে তা সে কাউকে বলে বোঝাতে পারবে না।

_________________

সকাল থেকে মারাত্মক রোদ উঠেছে। সেই রোদে অযথা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মায়ের নাটক দেখছে ফাইজা। একপাশে আকাশে মেঘ করেছে একটু। তিনি আধ ঘণ্টা যাবত ঠাওর করার চেষ্টা করছেন আটা শুকোতে দেবেন কিনা। ফাইজা বিরক্তমুখে কিছু বলতেও পারছেন না। মহিলার মেজাজ ভালো নেই আজ। ফাইজার বাবার সাথে ঝগড়া হয়েছে। কিছু না বলতেই ছ্যাঁত করে উঠতেছেন একটু পরপর। একটু আগেই আফরাকে ঝেড়েছেন অযথা। ফাইজার দিকেও বাজ পড়বে পড়বে ভাব। আটা শুকোতে দিয়ে ফাইজাকে বললেন চুপ করে এখানেই বসে থাকতে, বৃষ্টি আসলে যেন ডাক দেয়। ফাইজা ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না তার মায়ের মাথা ঠিক আছে কিনা! এই রোদে বসে সে অপেক্ষা করবে কখন বৃষ্টি আসে?

-“মা, আমি রোদে বসে থাকবো?”

-“নাহ!”

-“থ্যাংকু মা!”

-“নিচে গিয়ে ডাইনিং রুমটা মুছে দে।”

ফাইজার মুখের হাসি মিলিয়ে গেল। তার মা তাকে কাজ করতে দেখলে কী আরামটা যে পান! রাগে গজগজ করতে করতে ফাইজা বালতি ভর্তি পানি নিয়ে ওড়না কোমরে বেঁধে ঘর মোছা শুরু করলো। আচমকা কলিং বেল বেজে ওঠাতে খানিক বিরক্তই হলো সে। তেজী ভাব নিয়ে দরজা খুলেই চমকালো সে। ফায়ায দাঁড়িয়ে। চক্ষু চড়কগাছ হলো ফাইজার। এই ছেলে এমন ফুলবাবু সেজে এসেছে কেন? ইশস! ফাইজা নিজের দিকে তাকালো। মারাত্মক অস্বস্তিতে নিজের ঘরে ছুট লাগানোর প্রস্তুতি নিল সে।

-“এই যে! মিস.ওয়াইফ ম্যাটেরিয়াল, পালাচ্ছেন নাকি?”

-“না…না! পা..পালাবো কেন?”

-“আরেব্বাস! তুমি তোতলাতেও পারো? এই আগে খেয়াল করিনি তো।”

-“থাপ্পড় চেনো?”

-“না তো। চেনাও, তোমার থাপ্পড় খেতে খুব একটা খারাপ লাগবেনা।”

-“কেন এসেছো?”

-“মা আপু আর আপনাদের জন্য পিঠা পাঠিয়েছে।”

-“ভেতরে এসে বসো।”

ফায়ায মাথা নাড়ালো। ফাইজা আগে আগে এগোলো। ফায়ায পিছু পিছু। মেয়েটার এ রূপ মোটেও মন্দ লাগছে না তার। মায়া বোধহয় এটাই? আচ্ছা ফায়াযকেও কি ফাইজা ভালোবাসে? ফায়ায যদি এখন ফাইজাকে তার মনের কথা জিজ্ঞাসা করে? খুব তাড়াহুড়ো হয়ে যাবে? ফায়ায ধৈর্য রাখতে পারছে না। মনের কথাটুকু অতিসত্বর ফাইজা জানিয়ে দিক তাকে! এইটা জানার উদ্দেশ্যেই সে এসেছে মূলত।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে