ইংলিশ মিডিয়াম পর্ব-১০

0
67

#ইংলিশ_মিডিয়াম
১০ম_পর্ব
~মিহি

-“কী হয়েছে মিত্তি? মন খারাপ?”

-“আপনি একা এভাবে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন? আপু বা আঙ্কেল আন্টি দেখলে?”

-“হয়েছে টা কী তোমার? তুমি আমি আমার রুমেও একা ছিলাম! ইউ কিসড মি!”

-“তখন বাড়িতে অনেক মানুষ ছিল তাই কেউ খেয়াল করেনি কিন্তু এখন অবশ্যই সন্দেহ করবে।”

-“করলে করুক। আমি কি সেসবের ধার ধারি? সন্দেহ করলে ভালো, বিয়ে দিয়ে দিবে আমাদের। সমস্যা কোথায়?”

মিত্তিম মাথা নিচু করলো। মনে চলতে থাকা দোটানার নিরসন কোথায় হবে বুঝে উঠতে পারছে না সে। মিত্তিমের মাথা নিচু করা শৈশবের নজর এড়ালো না। শৈশব দু’হাতে মিত্তিমের বাহু আঁকড়ে ধরলো। অকস্মাৎ শৈশবের স্পর্শে মিত্তিম তাকালো তার দিকে। চোখ ছলছল করছে মিত্তিমের। নিজের সাথে জড়ানো দ্বন্দ্বটা বোধহয় পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল যুদ্ধ! শৈশব কিছুক্ষণ মিত্তিমের চোখের দিকে অপলক তাকিয়ে রইলো। দুজনে ছাদের এককোণে দাঁড়িয়ে। ফায়ায নিচে গেছে আফরাকে ডাকতে। শৈশব সিঁড়িঘরের দরজার দিকে খেয়াল করলো। কারো পায়ের শব্দটুকুও নেই। মিত্তিমের চোখ বেয়ে গড়ানো প্রথম অশ্রুফোঁটাটাও ঠোঁট দিয়ে শুষে নিল শৈশব। মিত্তিম কেঁপে উঠে দূরে সরে গেল। শৈশবের ছোঁয়ার থেকে খানিকটা বাইরে। চোখে ভয়ের ছাপ।শৈশব বুঝে উঠতে পারছে না মিত্তিম তাকে এত ভয় পাচ্ছে কেন হঠাৎ?

-“মিত্তি কী হয়েছে তোমার? তুমি আমাকে কেন ভয় পাচ্ছো এভাবে? আ’ম স্যরি! আমার স্পর্শ খারাপ লেগেছে বুঝেছি। আমি স্পর্শ করবো না তোমাকে কিন্তু প্লিজ এভাবে ভয় পেয়ে অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ো না আমার দিকে। ইট’স হার্টিং মি জান!”

-“শৈশব প্লিজ লিভ মি অ্যালোন!”

-“আমি পারবো না। আমি তোমাকে সাফার করতে দেখতে পারবো না মিত্তি। প্লিজ বলো কী হয়েছে, আমি কিছু করেছি? আচ্ছা আমি স্যরি জান, প্লিজ! তুমি এভাবে মন খারাপ করে থেকো না।”

শৈশবের দিকে তাকাতে মিত্তিমের চোখে বাঁধছে। এই ছেলেটা এত ভালো কেন? মিত্তিমের এভাবে যত্ন শেষবার কে নিয়েছিল? নিলয়? নাহ! সে কখনো এভাবে স্যরি বলেনি, এভাবে কনসার্ন দেখায়নি। বেপরোয়া ভালোবেসেছিল নিলয়, কোনোকিছুর ধার না ধেরে। এমন মানুষগুলোর মিথ্যে কথার জালেই মেয়েসমাজ কেন যেন জড়িয়ে পড়ে অথচ শৈশব যখন মন থেকে যত্ন করতে চাইছে তখন পৃথিবীর সমস্ত দ্বিধা এসে ঘিরে ধরছে তাকে। আমরা সবসময় কেন ভুল মানুষকে ভালোবাসি বুঝতে বাকি নেই মিত্তিমের। কিন্তু শৈশবকে ভালোবাসার সিদ্ধান্তটা তো মোটেও ভুল নয়। এই ছেলেটা নিতান্তই একটা বাচ্চা এখনো যাকে সযত্নে আগলে রাখতে ইচ্ছে করে মিত্তিমের। শৈশবের কাতর চাহনি দেখেই যে মিত্তিমের চোখ বেয়ে অবিরত অশ্রু গড়াচ্ছে তা ব্যক্ত করতে পারছে না মিত্তিম।

-“মিত্তি, তোমার কী হয়েছে? আমরা এখানে একা দাঁড়িয়ে এজন্য সমস্যা? আচ্ছা আমি নিচে চলে যাচ্ছি, মিত্তি! প্লিজ তবুও তুমি এভাবে মন খারাপ করে থেকো না।”

শৈশব মাথা নিচু করে দরজার দিকে এগোতেই মিত্তিম শৈশবের হাত টেনে ধরলো। শৈশবের বাহু জড়িয়ে নিল নিজের সাথে। পরমুহূর্তেই একটু উঁচু হয়ে কয়েক ন্যানোসেকেন্ডের জন্য শৈশবের ওষ্ঠ স্পর্শ করলো। শৈশব এমন অকস্মাৎ আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল না। মিত্তিম সাথে সাথে সরে গেল। শৈশব মৃদু হেসে মিত্তিমের দু’গালে হাত রেখে কপালে চুমু দিল।

-“আমার পিচ্চির মান ভেঙেছে?”

-“আপনার উপর মান করিনি তো!”

-“ফায়ায এখনো আসছে না কেন বলো তো!”

-“ও আপনাকে আর আমাকে প্রাইভেসি দিচ্ছে। ও মোটেও আপুকে ডাকতে যায়নি। ও ভাবছে আপনি আমার প্রেমে পড়েছেন। তাই সে নিজের ভাইকে তার হবু ভাবীর সাথে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছে।”

-“বাহ! এত ভালো কেন আমার ভাইটা!”

-“আপনার প্রাক্তনের কথাও সব জানে ফায়ায?”

-“আংশিক! কতটুকু জানে তা জানিনা। আর তিথির কথা ভেবো না মিত্তি। ওকে আমি প্রাক্তন ভাবিনা।”

-“ওহ? প্রাক্তন ভাবেন না?”

-“মিত্তি! আই লাভ ইউ, শী ইজ আ স্ট্রেঞ্জার নাও! বুঝছো? আমার লাইফে ও আর এক্সিস্ট করে না, বুঝছো জান?”

মিত্তিমের প্রচণ্ড ইচ্ছে করছে শৈশবকে জড়িয়ে ধরতে। এই ছেলেটা এত ভালো কেন? গ্রিন ফ্ল্যাগ? নোপ…এই ছেলেটা গ্রিন গার্ডেন!

-“জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে জান?”

মিত্তিম চমকালো। ছেলেটা মন পড়তে পারে নাকি? শৈশব আলতো করে মিত্তিমকে কাছে টেনে নিলো। মিত্তিম ক্ষণিকের জন্য শৈশবের বুকে মাথা রাখার সুযোগ পেল।

-“এখন নিচে যাই? আপনাকে আর আমাকে এতক্ষণ এখানে দেখলে ফায়ায আরো সন্দেহ করবে।”

-“করুক!”

-“শৈশব!”

শৈশব মুচকি হেসে মিত্তিমকে ছেড়ে সরে দাঁড়াতেই কারো পায়ের শব্দ পেল। শৈশব তৎক্ষণাৎ খানিকটা দূরে সরে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো। একটু পরপর গুনগুন করছে। মিত্তিম বুঝতে পারলো শৈশব গান শুনছে। এয়ারবাডস কানে, এতক্ষণ খেয়াল করেনি। মিত্তিমও অন্যদিকে ঘুরে তাকালো। ফায়ায এসে দুজনকে দুই প্রান্তে দেখে খানিকটা আশাহতই হলো। তার সন্দেহ সত্যি না হওয়ায় সে যে যথেষ্ট বিষাদগ্রস্ত তা তার মুখমণ্ডল বলে দিচ্ছে। ফায়ায এসে মিত্তিমের পাশে দাঁড়ালো।

-“কী রে, এতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়েই ছিলি?”

-“না নাচছিলাম!”

-“আরে বেডি, হুদাই চেতিস ক্যান? না মানে ভাইয়ার সাথে টুকটাক কথা হইলো নাকি?”

-“তুই কয়দিন আগে কইলি তোর ভাইয়ের প্রেমিকা আছে, তারপর বললি বিয়ে করবে, তারপর বললি প্রাক্তন, এখন বলতেছিস তোর ভাইয়ের আমাকে পছন্দ। গাঁজা দিচ্ছে কে তোকে? ফাইজা?”

-“ধূর! ফাইজা মেইবি আমাকে সিরিয়াস না রে।”

-“কেন?”

-“এখন অবধি আমাকে টেক্সট করেনি।”

-“তুই কর!”

-“কিন্তু আমার কাছে তো নম্বর নাই ওর।”

-“ওকে নিজের নম্বর দিয়েছিস?”

-“ইয়ে মানে না…”

বলেই ফায়ায মাথা চুলকাতে লাগলো। মিত্তিম সজোরে ফায়াযের পিঠে এক ঘা বসিয়ে বলে উঠলো,”বলদ একটা!” ফায়ায পিঠের ব্যথায় কুঁকড়ে খানিকটা দূরে সরে গেল।

-“গাধা! যা আপুর ফোন থেকে নম্বর খোঁজ।”

-“নম্বর চুরি করবো?”

-“তোর প্রেম করার দরকার নাই! ছাগল একটা!”

মিত্তিমের প্রলয়ঙ্করী রূপ দেখে সেখানে দাঁড়ানোর মতো সাহস অবশিষ্ট রইলো না ফায়াযের। উল্টোদিকে ছুটলো সে। শৈশব তৎক্ষণাৎ এসে মিত্তিমের হাত চেপে ধরলো শক্ত করে।

-“তুমি ওকে টাচ করলা কেন?”

-“ওকে তো আমি সবসময় মারি!”

-“আর মারবা না জান।”

-“আপনার জ্বলতেছে?”

-“নাহ!”

-“একটুও জ্বলতেছে না?”

-“পিটাবো তোমাকে বেঁধে রেখে! মাইর চিনো? হ্যাঁ জ্বলতেছে আমার, আমার জান অন্য কোনো ছেলেকে স্পর্শ করলে আমার জ্বলবেই।”

-“আচ্ছা বুঝছি! এত অবসেশন ভালো না, মি.ইংলিশ মিডিয়াম!”

-“তুমি আমার সেই নেশা মিত্তি যেটা ভালো হোক কিংবা খারাপ, আমার রক্তে মিশতে বাধ্য! এ নেশার ঘোরে সর্বোচ্চ মাতলামি করতে আমি অপেক্ষারত!”

-“খুব সাহিত্য ঝাড়া হচ্ছে যে?”

শৈশব মিত্তিমের চোখের দিকে তাকালো। এই মেয়েটার চোখে এত মায়া কেন? মায়ার সাগর জমা করেছে চোখে? অদ্ভুত! এ সাগরে বারংবার ডুবছে শৈশব, অতল গভীরে তলিয়ে যাচ্ছে যেন। সে তো সাঁতার জানেনা, তাই বুঝি ডুবছে এভাবে?

_____________________

-“তিথি তোর মাথা গেছে? শৈশব খুন করে ফেলবে যদি তুই এমন কিছু করিস!”

-“ও কী করতে পারে সেটাই আমি দেখবো। আমি যা প্ল্যান করছি সেটাতে আমাকে সাহায্য করবি শুধু। বুঝেছিস?”

-“এটা ঠিক না ভাই, আমি রিস্কে পড়ে যাবো। কেউ যদি জানতে পারে…”

-“কেউ জানবে না…তুই শুধু তোর কাজটা কর!”

তিথি হাসলো। কী ভয়ানক ষড়যন্ত্র যে তার মস্তিষ্কে চলছে তা এখনো কেউ আন্দাজটুকুও করতে পারেনি। শৈশব? সে তো মোটেও না! এই ষড়যন্ত্রের মায়াজালে বাঁধা তো তাকেই পড়তে হবে।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে