#ইংলিশ_মিডিয়াম
৮ম_পর্ব
~মিহি
-“ঘরের দরজা লাগিয়ে আননোন নম্বরে ফিসফাস করা বুঝিনা আমি? গাধা মনে হয় আমাকে?”
-“খালামণি ভুল বুঝতেছো তুমি। এটা ফায়াযের বাড়ির নম্বর। বৌভাতে যাইনি তাই শরীর ঠিক আছে কিনা জানার জন্য বড় ভাইয়া কল করেছিল।”
-“তাই? আচ্ছা এখনি আমার সামনে কল ব্যাক কর আর ফোন লাউড স্পিকারে দে।”
মিত্তিমের মনে ভয় ঢুকলো খানিকটা। লাউড স্পিকারে কল দিতে হবে? শৈশব যদি বেফাঁস কিছু বলে ফেলে? কিন্তু আর উপায়ও তো নেই। ঢোক গিলে নম্বরটাতে কল দিল মিত্তিম। দু’বার রিং হতেই শৈশব কল রিসিভ করলো। তাকে প্রথমে কিছু বলার সুযোগই দিল না মিত্তিম।
-“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া!”
ভাইয়া ডাক শুনেই শৈশবের খটকা লাগলো একটু। মিত্তিমের কণ্ঠ কাঁপছে। নিশ্চিত স্বাভাবিক অবস্থায় সে কল করেনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখারই চেষ্টা করলো সে।
-“হ্যাঁ মিত্তিম বলো।”
-“ভাইয়া, ফায়ায কি গিয়েছে বৌভাতে? ওর নম্বরে কল ঢুকছে না।”
-“হ্যাঁ ও সকালেই গিয়েছে। তুমি কি যাবে? তাহলে আমার সাথে যেতে পারো এখন। আম্মু আর আপু দুজনেই বললো তুমি সুস্থ থাকলে তোমাকে যেন নিয়ে যাই।”
-“না থাক ভাইয়া, আমার শরীর একটু খারাপই। পরে আমি ফায়াযকে বুঝিয়ে বলবো।”
-“ঠিক আছে।”
-“আচ্ছা ভাইয়া রাখি।”
কল কেটে আসমার মুখের দিকে তাকালো মিত্তিম। মুখের ভাবভঙ্গিতে সে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না আদতে তার খালামণির সন্দেহ কি কমলো নাকি বাড়লো!
-“মিত্তিম, তুই কোনোভাবে এর সাথেই প্রেম করছিস না তো?”
-“ছিঃ খালামণি! তোমার সবকিছু নিয়েই সন্দেহ! কোনো না কোনোভাবে আমাকে ব্লেম করতেই হবে, তাই না তোমার? কারণটা কি খালামণি? হুট করে আমার পেছনে এভাবে কেন পড়ে আছো?”
-“আ..আমি তোর পেছনে কেন পড়ে থাকবো?”
-“আমি কি এখনো বাচ্চা মণি? কিছুই বুঝিনা? নাকি তোমার মনে হয় আমার বাবা-মাকে তুমি যা বলো সেসব আমার কানে আসে না?”
-“কী বলতে চাস?”
-“তুমি যে তোমার দেবরের সাথে আমাকে বিয়ে দেওয়ার মতলব করছো তা আমি জানি খালামণি! কিন্তু তুমিই ভেবে দেখো লোকটা আমার চেয়ে কমসে কম দশ বছরের বড়! আমার বাবা মা কোন হিসেবে রাজি হবে বিয়েতে? সরাসরি না বলাতে তোমার ইগোতে লাগতেছে? যে কারণে আমার উপর অপবাদ আনতেছো?”
-“তুই কিন্তু বেশি কথা বলতেছিস মিত্তিম!”
-“কম বললে তো তুমি আমায় ছিঁড়ে খাবা মণি! আমি খেলনা পুতুল না, মনে রাইখো এটা।”
-“আমার কথা ভালো লাগবে না বেশ! পরের ছেলের খেলনা পুতুলই হ, যেমন নাচায় নাচ! শেষে যখন খাওয়া শেষ হবে, তখন আমাদের দিকে যেন ছুঁড়ে না ফেলে!”
-“ছিঃ খালামণি!”
মিত্তিমের চোখের কোণে জল জমা হয়েছে। সত্যিই তার নিজের খালা তাকে এসব বলতে পারলো? এই মানুষটাকে সে কত ভালোবেসেছে!
-“আমার কথা এখন ভাল্লাগবে না এটাই স্বাভাবিক! ভালো লাগবে শুধু নাগরের কথা। ও এখন বিছানায় শুয়ে পড়তে বললে সেটাও ভালো লাগবে।”
-“এক্সেস হচ্ছে খালামণি! তুমি যা নয় তা বলা শুরু করছো আমার ক্যারেক্টার নিয়ে। তুমি বড় আমার, যেটুকু সম্মান বাদ আছে সেটুকু থাকতে দাও। একবার মন থেকে উঠে গেলে আর জীবনেও মান পাবা না!”
আসমা রাগে গজগজ করতে করতে তৎক্ষণাৎ অনিকে নিয়ে বের হয়ে গেল। মিত্তিম আটকালো না। সে জানে এটার ফল মোটেও ভালো হবে না তবুও সে খারাপটাই দেখতে চায়। আসমার কথাগুলো মাথায় ঘুরছে মিত্তিমের। নিজের প্রতি ঘৃণায় গা রি রি করছে। শৈশবকেও তো সে বিনা সম্পর্কে চুমু খেয়েছিল, বিনা নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে! এতটা খারাপ সে? সত্যিই কি মিত্তিম নিজের আত্মঅহমিকা হারিয়ে ফেলেছে? অনুতাপে ভেতরটা কুঁকড়ে আসে মিত্তিমের। এ বোঝা বড্ড ভারি! মিত্তিমের মন তা সইতে পারছে না।
______________________
-“শৈশব বোসো!”
-“কিছু বলবে আম্মু?”
-“সমস্যা কী তোমার? আফরার বড় ভাই তুমি! তুমি বৌভাতে না গেলে কত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় আমাদের তা বুঝি তোমার জানা নেই? একবার তো ভাবা উচিত মানুষ কী বলবে!”
-“কে কী বললো তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই আম্মু। আমার এসব অনুষ্ঠান এমনিতেও ভালো লাগে না, আপুর বিয়ে অবধি আমি সবকিছুতেই ছিলাম কিন্তু এখন এই আত্মীয়দের গেট টুগেদারে আমি নেই। ওনারা এমনিতেও জাজ করবে, তো দূরে বসেই করুক। এটলিস্ট আমার কানে না আসুক।”
-“অসামাজিক হয়ে যাচ্ছো শৈশব তুমি!”
-“থ্যাংকস ফর দ্য কমপ্লিমেন্ট মা!”
শৈশব হাসতে হাসতে নিজের ঘরে ঢুকলো। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। মিত্তিম একটিবার কলও করেনি। মেয়েটা কি কোনো বিপদে পড়লো? চেয়েও কল করতে পারছে না শৈশব। পাছে যদি আবার বিপদ বাড়ে! কিন্তু মনকে আর কতই বা দমিয়ে রাখবে? ঘরে এসে মিত্তিমের নম্বরে কল করলো সে। কল রিসিভ হলো না। শৈশবের চিন্তা ক্রমশ বাড়তে লাগলো। ফোন বের করে মিত্তিমের ছবির দিকে অপলক তাকিয়ে রইলো। লুকিয়ে তোলা ছবি। মিত্তিম আনমনে তাকিয়ে ছিল, শৈশব সুযোগ বুঝে ছবিটা তুলেছিল। চিন্তায় অস্থির লাগছে শৈশবের। তার বোকামির জন্য মেয়েটার কোনো বিপদ হলে নিজেকে সে কখনোই ক্ষমা করতে পারবে না। মিত্তিমের সামনেই বা কিভাবে দাঁড়াবে সে? সে তো মিত্তিমকে রক্ষা করতে চেয়েছে সর্বদা অথচ সে-ই কিনা মিত্তিমের সবচেয়ে বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ালো!
মিত্তিম খেয়াল করলো ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে। সেদিকে তাকালোই না, সামনে মা বসে। ফোনে খালামণির সাথে কথা চলছে আধঘণ্টা যাবত। মিত্তিম চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ওপাশে খালামণি চেঁচিয়ে কিছু বলছে। মিত্তিমের মা চুপচাপ শুনছে কেবল। মিত্তিম জানে আজ বড়সড় একটা ঝড় যাবে তার উপর দিয়ে। তার ফোনটা যে বাজেয়াপ্ত হবে না এরও নিশ্চয়তা নেই। নিলয়ের ব্যাপারটাও জানতো তার মা। জানতো বলতে, একদিন টেক্সট দেখেছিল নিলয়ের। শুধু এটুকুই বলেছিল,”আমরা তোমাকে বিশ্বাস করি, সেটার এই প্রতিদান দিও না!” মিত্তিম কথা শোনেনি, নিলয়ের সাথে সে যোগাযোগ তখনো রেখেছিল। বাবা-মায়ের কথা না শোনার পরিণতি কোন কালেই বা ভালো ফল এনেছে? দিনশেষে সেই নিলয় মিত্তিমের হৃদয়কে এত টুকরো করেছে যা জোড়া লাগাতে এখন মিত্তিমের নিজেরও বিরক্তি আসে। মিনিট দশেক বাদে কথা শেষ হলো মিত্তিমের মা এবং খালার। মিত্তিম মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিল বেশ কিছু কথা শোনার। ইতোমধ্যে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছে সে।
-“খালামণির প্রতি রাগ রেখো না মনে। যা বলেছে হিট অফ দ্য মোমেন্টে বলে ফেলেছে।”
-“উনি তোমাকে বলেছে সবকিছু?”
-“না! যা বলেছে তাতে শুধু তোমার দোষ দেখলাম কিন্তু তোমার মুখ বলছে নিশ্চিত সে এমন কিছু বলেছে যার কারণে তুমি অমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছো।”
-“মা, খালামণি আমায় এমন সব কথা বলেছে যার কারণে আমি চুপ থাকতে পারিনি। আ’ম স্যরি!”
-“সমস্যা নেই। আমি বিশ্বাস করি আমার মেয়েকে। সে কখনো ভুল স্টেপ রিপিট করবে না। তোমার স্বপ্নটা অনেক বড় মিত্তিম। ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুযোগ কিন্তু একবারই আসবে। বুয়েট প্রাঙ্গণে নিজেকে দেখার সুযোগ তুমি দ্বিতীয়বার পাবে না। তাই তুমি সিদ্ধান্ত নাও তোমার জন্য ফার্স্ট প্রায়োরিটি কী!”
মিত্তিম মায়ের কোলে মাথা রাখলো। মিত্তিমের মা মেয়ের মাথায় সযত্নে হাত বুলিয়ে দিলেন। মিত্তিম ফুঁপিয়ে কাঁদছে। শৈশবকে নিজের সাথে জড়িয়ে বড্ড ভুল করে ফেললো কি সে? ছেলেটা তো অপেক্ষা করতে চেয়েছিল কিন্তু মিত্তিম কষ্ট পাবে বিধায় অপেক্ষা করেনি। এখন সে কোন মুখে শৈশবকে বলবে তার জন্য অপেক্ষা করতে? প্রচণ্ড দোটানায় মাথাটা ঝিমঝিম করছে তার। বেশি তাড়াহুড়োয় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে কি সে? এ সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হবে না তো? মিত্তিমের বুক কাঁপছে! একই ভুল দ্বিতীয়বার করলে সে আর কখনো স্বাভাবিক হতে পারবে না!
চলবে…