#ইংলিশ_মিডিয়াম
৭ম_পর্ব
~মিহি
মিত্তিম শৈশবের সাথে কথা শেষ করে পিছু ফিরতেই শৈশব পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো তাকে। মিত্তিমের কানে কানে আলতো করে বলে উঠলো,”মিসেস.ফারহায ইফতেখার শৈশব, আই লাভ ইউ আ লট!” মিত্তিম কেঁপে উঠলো। হৃদস্পন্দনের ঊর্ধ্বগতি অনুভব করলো ঠিকই। মুচকি হেসে শৈশবের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বাইরে এসে অনিকে পর্যবেক্ষণ করলো। অনিকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে অন্যদিকে নিয়ে যাবে ঠিক সে মুহূর্তে আবার অশুভ কলিং বেলটা বেজে উঠলো। মিত্তিম দ্রুত অনিকে অন্য ঘরে ফোনে কার্টুন চালিয়ে বসিয়ে দিল। নিজের ঘরে ফিরে শৈশবকে ডাকলো।
-“আল্লাহ! এবার কে আসলো? খালামণি ফিরে আসলো না তো?”
-“মিত্তি রিল্যাক্স, আমি এখানেই আছি। যাও দরজা খোলো।”
-“না না! আপনার এখানে থাকা যাবে না। একটা কাজ করেন। আমি দরজার পিছনে লুকাবো আপনাকে। দরজা খুলে খালামণি যখন ঢুকবে, আমি কোনোভাবে খালামণিকে ডিসট্র্যাক্ট করবোনি। আপনি তাড়াতাড়ি বের হবেন। বুঝছেন কথা?”
-“হ্যাঁ জান বুঝছি!”
-“ইশসস! এই টেনশনেও জান-কলিজা বের হয় কেমনে মুখ দিয়ে?”
-“ভালোবাসায়। চলো দরজা খোলো।”
শৈশবকে দরজার পাশে লুকায়ে ধীরে ধীরে দরজা খুললো মিত্তিম। যা ভেবেছিল তাই, তার খালামণি ফিরেছে। আসমাকে দেখে ঘাবড়ালেও মুখে তা প্রকাশ করলো না মিত্তিম।
-“খালামণি? চলে আসলে যে?”
-“ফোনটা ফেলে গেছি। তাছাড়া বাইরে রোদ, পরে বের হবো আরেকটু।”
-“আচ্ছা আসো। আমার ঘরে একটা অদ্ভুত শব্দ হচ্ছে মণি, চলো তো একটু দেখো।”
-“শব্দ? কিসের? আচ্ছা চল দেখি।”
-“না না আমার ভয় লাগতেছে। তুমি যাও।”
আসমা বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকিয়ে মিত্তিমের ঘরে ঢুকলো। মিত্তিম তাড়াহুড়োয় শৈশবকে বের করলো দরজার পেছন থেকে।
-“তাড়াতাড়ি যান এখন।”
-“মিত্তি..”
-“যান তাড়াতাড়ি!”
শৈশব মিত্তিমের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো। পরক্ষণেই মিত্তিমের গালে চুমু খেল গভীরভাবে। “ভালোবাসি জান..” বলেই শৈশব তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে বের হয়ে গেল। মিত্তিম গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সেখানেই। এই ছেলেটা আস্ত পাগল একটা! দরজা লাগিয়ে সামনে তাকাতেই মিত্তিম খেয়াল করলো অনি দরজা হালকা একটু ফাঁকা করে তাকিয়ে আছে। ঢোক গিললো মিত্তিম। মেয়েটা কিছু দেখলো কিনা! এখনকার ওয়ানে পড়া বাচ্চাকাচ্চাও যথেষ্ট পাকনা। মনে মনে খানিকটা ভয় পেলেও হাসিমুখে অনির দিকে এগোলো সে।
-“অনি? কী হয়েছে?”
-“কিছুনা আপ্পি। মা যাবো।”
-“মণি তো আমার ঘরে। তুমি ফোনটা রেখে মণির কাছে যাও!”
-“আচ্ছা আপ্পি।”
অনি যেতেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো মিত্তিম। যাক মেয়েটা কিছু দেখেনি। ফোন হাতে পেয়েই ছাদের দিকে দৌড় দিল মিত্তিম। শৈশবকে একবার কল করা উচিত। ছেলেটা কি যেতে পারলো নাকি আবার কোনো বিপদে পড়লো? তড়িঘড়ি করে শৈশবের নম্বরে কল দিল সে। দু’বার রিং হতেই কল ধরলো শৈশব।
-“বাড়ি পৌঁছেছেন?”
-“হুহ, রেডি হচ্ছি। বাসায় কেউ নাই। আপুর বৌ ভাত যে আজ!”
-“আপনি যাবেন না?”
-“না, আম্মুকে আগেই জানিয়েছিলাম যাবো না। আম্মু বলেছিল তোমাকে নিয়ে আসতে। কিন্তু তোমার ওখানে গিয়ে ভাবলাম সুযোগ পেয়েছি একটু একা টাইম স্পেন্ড করার। ছাড়বো কেন? তাই বাহানা করলাম যে তুমি অসুস্থ!”
-“আপনি আসলেই বদমাশ লোক একটা!”
-“জ্বী, আমি বদমাশ! আপনাকে এখন তাহলে অফার করি আমার বাসায় এসে আমাকে একটু কফি খাওয়ানোর?”
-“লুচ্চা কোথাকার!”
-“কফি খাওয়াতে বলছি আজব! মনমাইন্ড এত নেগেটিভ কেন হ্যাঁ? ফ্রেন্ড সার্কেল অশ্লীল তোমার!”
-“আমার ফ্রেন্ড শুধু আপনার ভাই-ই। আপনি অশ্লীল!”
-“আচ্ছা মিত্তি স্যরি তো! মজা করছিলাম জানপাখি, রাগ কোরো না।”
মিত্তিম কিছু বলতে যাবে তার আগেই আসমা ডেকে উঠলো নিচে থেকে। মিত্তিম তড়িঘড়ি করে শৈশবকে বিদায় জানিয়ে নিচে নামলো। অনি সোফায় বসে খেলছে। আসমা তাকে ভেতরে পাঠিয়ে মিত্তিমকে সোফায় বসতে বললো। মিত্তিম ঢোক গিললো। হঠাৎ এত জরুরী তলব? ঘটনাটা কী?
-“বাড়িতে কেউ আসছিল মিত্তিম?”
-“না তো খালামণি! কেউ আসলে তো দেখতেই পারতা!”
-“অনি নাকি কোন এক ছেলেকে দেখছে বাড়িতে … তোর সাথে!”
-“কীহ? তুমি গেলা একটু আগে, আসলাও সাথে সাথে। এর মধ্যে বাড়িতে কোন ছেলে আসবে? কী যা তা বলো? ফায়ায ছাড়া আমার কোনো ছেলে বন্ধু আছে?”
-“দেখ মিত্তিম সত্যি বল! অনি মিথ্যা বলে না। ও একটা ছেলেকে দেখেছে তোর কাছে।”
-“খালামণি, অনি বাচ্চা। তুমিই ভাবো, ছেলে কোত্থেকে আসবে এখানে? আকাশ থেকে পড়বে ছেলে? তার চেয়ে বড় কথা আসবেই বা কেন? তোমরা মা মেয়ে সিরিয়াল একটু কম দেখো তো! কী যা তা শুরু করছো মণি!”
-“দেখ, তোর ভালোর জন্য বলতেছি। বয়সটা তো ভালো না। প্রথম দেখাতে সবাইকেই একদম সাধুপুরুষ মনে হয়। দেখলেই মনে হবে আরে এর চেয়ে ভালোমানুষ তো দুনিয়ায় নাই কিন্তু কয়টা দিন যাওয়ার পর এমন যন্ত্রণা দিবে যে সারাজীবন সেই রেশ ধরে কাঁদা লাগবে। সময় থাকতে শুধরে যা!”
-“ধূর! যা ইচ্ছে বলো তুমি, আমি ঘরে গেলাম।”
মিত্তিম কপট রাগ দেখিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে বুকে ফুঁ দিল। বড় বাঁচা বাঁচছে। এই অনিটাও হয়েছে পাজি! মিত্তিমকে বললো না কিছু অথচ মাকে ঠিকই বলে ফেলেছে। এমন খালাতো বোন থাকলে শত্রুর তো দরকারই নাই। মিত্তিমের অবশ্য মনটা খারাপ হয়ে এসেছে। খালামণি এভাবে না বললেও পারতো তাকে! সে তো আর ইচ্ছে করে শৈশবকে আনেনি। যা হয়েছে সব কাকতালীয়! শৈশবকে ফের কল করলো মিত্তিম তবে খানিকটা ধীরস্থির হয়ে।
-“হ্যালো..”
-“বলো মিত্তি!”
-“অনি দেখেছে তোমাকে আর মণিকে বলে দিয়েছে।”
-“শিট! তোমাকে বকছে? ঝামেলা করছে কোনো?”
-“না। আমি মণিকে বুঝাইছি এমন কিছু না।”
-“মিত্তি আই এম রিয়েলি স্যরি! আমি তোমাকে এভাবে বিপদে ফেলতে চাইনি। আমি তোমাকে না দেখে থাকতে পারছিলাম না। তার উপর তুমি সাফার করতেছিলা এটা সহ্যও করতে পারতেছিলাম না।”
-“শৈশব রিল্যাক্স! বুঝছি আমি কিন্তু এখন একটু সাবধানেই থাকি। মণি এত সহজে বিষয়টা ছাড়বে না। আমার ভয় লাগতেছে।”
-“ভয় কিসের? যদি ঝামেলা করে, আমি তোমার বাসায় প্রস্তাব পাঠাবো! ব্যস হয়ে গেল।”
-“তোমার মনে হয় আমাকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবে? আমার ক্যারিয়ার নিয়ে যারা এত টেন্সড! আমার এডমিশন নিয়ে সবাই অনেক আশাবাদী। আমার বিয়ের চিন্তা ভুলেও করবেনা আমার পরিবার।”
-“জানি মিত্তি! তুমি তোমার পড়াশোনাতেই ফোকাস করো। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করতে চেয়েছি যখন তখন অবশ্যই করবো।”
“মিত্তিম দরজা খোল তো…” আসমার ডাকে তড়িঘড়ি করে ফোন কেটে দিল মিত্তিম। ভয়ে বুক কাঁপছে তার। খালামণি আবার কিছু টের পেল নাকি? রীতিমতো হাদিস বেড়ে গেছে মিত্তিমের। ভয়ে ভয়েই দরজাটা খুললো সে। আসমা অনুসন্ধানী চোখে তাকিয়ে আছে।
-“তোর ফোনটা দে তো।”
-“কেন?”
-“দিতে বলছি দে!”
মিত্তিম কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা আসমার দিকে বাড়িয়ে দিল। আসমা কল লিস্ট চেক করলো। আননোন নম্বর দেখেই সন্দেহটা নিশ্চিত করলো সে। পরক্ষণেই কষে একটা চড় লাগালো মিত্তিমের গালে। মিত্তিম কিছুটা দূরে ছিটকে গেল। সে এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না তার খালামণি তাকে এমন অকস্মাৎ চড় মারলো! কী বুঝে আসমা তাকে চড় মেরেছে তাও জানেনা মিত্তিম। শৈশবের নম্বরটা অবধি সেভ করা নেই তবে কেন আসমা এমন করলো?
চলবে…