আয়োজন

0
885

আয়োজন

অফিস থেকে বের হয়ে আজ ট্রেনে উঠলাম না। ট্রেনে উঠলে পয়সা ও সময় দুটোই কম লাগে।
আজ আমার আর ডরোথির বিবাহবার্ষিকী। এই দু বছর হলো আমরা একসাথে আছি।
অত্যন্ত সুখী পরিবার আমাদের।
আমার সব কথাই ডরোথি চুপচাপ শোনে। কখনো দ্বিমত করেনা অবশ্য আমি ওকে অনেক ভালোবাসি বলেই এমনটা সম্ভব হয়েছে।
আজ আমি ডরোথির জন্য একটা কেক নিয়ে যাবো, শার্লি’স কিচেনে কাস্টমাইজ করে অর্ডার করেছি।
কেকের উপরে থাকবে অনেক গুলো চেরী।
সাথে দুটে টিউলিপ।
ডরোথির খুব পছন্দ।কেক নিয়ে গেলেই ও চেরী খোঁজে।
আজ ফ্লাওয়ার শপ থেকে সাদা ফুল কিনতে হবে।
গ্লাডিওলাস আর জারবেরা পেলেই ভালো হয়।
দেশে যখন ছিলাম, ডরোথি ভালোবাসতো রজনীগন্ধা।
এখানে রজনীগন্ধার থেকে গ্লাডিওলাস সহজলভ্য।

ওর জন্য একটা বেলীফুলের মালা কিনলে খুব ভালো হতো।
আগে ওর মাথায় একরাশ চুল ছিল। ইদানিং চুলগুলো ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে।
আগের মতো যত্ন করে না হয়ত।
আমার খুব ভালো লাগতো, রাতে ভালোবাসার সময়গুলোতে আমি ওর চুলে মুখ গুজে গন্ধ নিতাম।
তবে ডরোথি এটা খুব অপছন্দ করতো।
বাঙালী পুরুষেরা নাকি শ্যাম্পুর ঘ্রানকে প্রেয়সীর চুলের
সুবাস মনে করে।
কিন্তু তা নয়, প্রকৃত প্রেমিকেরা প্রেয়সীর চুলে এক স্বর্গীয় সুবাস খুঁজে পায়।
ডরোথি সেটা বিশ্বাস করতো না।
হয়ত ও তখনো আমাকে ভালোবেসে উঠতে পারেনি।
তবুও আমি ওকে খুব ভালোবাসি।
ডরোথি আমার থেকে প্রায় বছর পনের ছোট।
আমার যখন প্রায় চল্লিশ বছর, ডরোথির মাত্র পঁচিশ ছিল।
সবাই বলতো, ডরোথি নাকি মারাত্মক সুন্দরী।
আমার কপাল ভালো, এমন বউ পেয়েছি।
আমার একটা যোগ্যতা অবশ্য আছে, পশ্চিমা এ দেশে আমি স্থায়ী বাসিন্দা।
তাই ডরোথিও দুদিন ভালোবাসি বলে আমাকে বিয়ে করে এখানে চলে এসেছে।
যদিও আমার সাথে থাকতে হয়তো ওর ভালো লাগছিলো না।
কারণ ও সব সময় নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতো আগে।
এখন অবশ্য সারাদিন আমার অপেক্ষা করে।
আমি ফিরলে আমার সাথেই সময় কাটায়।
ওর আর কিছু করার নেই।

আমি আজ ওর জন্য বিরিয়ানি রান্না করবো।
স্টোর থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে নিলাম।
সাথে নিলাম দারূন ক্যান্ডেল একসেট।
আজ ক্যান্ডেল লাইট ডিনার হবে।
সব কেনা হলে আমি বাড়ির দিকে যাওয়ার জন্য ট্যাক্সি নিয়ে নিলাম।

ডরোথির সাথে আমার একবার খুব অভিমান হয়েছিল।
আমারই অফিসে চাকরি করতো, সুমিত বলে ছেলেটি, ইন্ডিয়ান।
খুব স্নেহ করতাম ওকে।
একদিন আমার ওভারটাইম ডিউটি ছিল, ডে অফের দিনে।
বস এসে আমাকে ছুটি দিয়ে দিলেন, কাজ প্রায় শেষ বলে।
আমি আমার কষ্টে জমানো টাকায় ট্যাক্সি নিলাম,দ্রুত বাড়ি ফিরে ডরোথির সাথে সময় কাটাতে।
কিন্তু বাড়ি গিয়ে দেখলাম, সুমিতের সাথে ডরোথি অন্তরঙ্গ সময় কাটাচ্ছে।
সুমিতকে আমি ক্ষমা করতে পারিনি।
হাতের কাছে ফ্লাওয়ার ভাসটা ছুড়ে মেরেছিলাম ওর মাথায়, আমার নিশানা অব্যর্থ ছিল।
তারপর রাত।অবধি অপেক্ষা করে ওকে পুতে দিয়েছি বাড়ির পেছনের বাগানে।
ডরোথি ভয়ে কুকরে ছিল, তবে ওর প্রতি আমি নিষ্ঠুর হতে পারিনি।
ওকে খুব ভালোবাসি তো!

ট্যাক্সি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিলাম।
জিনিসপত্র হাতে ডোরের লক খুলে বাড়িতে ঢুকলাম।
নিজে ফ্রেশ হয়ে বিরিয়ানি রান্নাও শেষ করে ফেললাম।
ডাইনিং টা সুন্দর করে সাজিয়ে নিলাম, কেক, বিরিয়ানী আর ক্যান্ডেল দিয়ে।
এখন সারপ্রাইজের পালা।
বড় ডিপফ্রিজটা খুলে ডরোথিকে নিয়ে আসতে হবে।
ওর নিশ্চয়ই আমার আয়োজন খুব পছন্দ হবে।

আয়োজন

লেখিকা: শানজানা আলম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে