আড়ালে অনুভবে পর্ব-২১+২২

0
1915

#আড়ালে_অনুভবে🌼
#সাদিয়া_আফরিন_প্রতিভা
#পর্বঃ২১

চোখের সামনে রুকসানা রায়হান(উজ্জ্বল এর মা),নূহা এবং সানা(উজ্জ্বল এর দুই বোন) কে দেখে বিষ্ফরিত চোখে তাকিয়ে রইলো ইশা। সানা এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো এবার।

সানা:কি গো কেমন দিলাম সারপ্রাইজ?

ইশা:অবিশ্বাস্য সারপ্রাইজ পাগলি।কিন্তু তোমরা কখন এলে আর এই বাড়ি?

রুকসানা:তুই চলে যাওয়ার পর থেকেই বাড়িটা একদম ফাকা ফাকা লাগছিলো।সানা আর নূহাও মন খারাপ করে থাকতো।তাই ভাবলাম চলেই আসি।আর এই বাড়িটা আমাদের ই।তুই তো জানিস আমরা আগে এখানেই থাকতাম।সেসব বাদ দে তুই কি খুশি হোস নি?

ইশা:অনেকককক বেশি খুশি হয়েছি মামনি।আমিও তোমাদের অনেক মিস করছিলাম।ভালোই হলো তোমরা চলে এলে।

নূহা:আমাকে তো কারোর চোখেই পড়ে না।
(মুখ ফুলিয়ে বললো)
ইশা এবার ছুটে গিয়ে হুইল চেয়ার এর সামনে বসলো।
ইশা:এইরে রিয়ালি সরি আপু।এইযে কান ধরছি। হয়েছে এবার?

নূহা:ঠিকাছে ঠিকাছে ভেবে দেখবো ক্ষমা করা যায় কিনা।

ইশা এবার মুচকি হেসে খানিকক্ষণ গল্প করলো সবার সাথে।নূহা উজ্জ্বল এর বড় বোন।তিন বছর আগে একটা এক্সিডেন্ট এ তার স্বামী মারা যায় এবং সে নিজের পায়ে দাড়ানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।সানা ইশার চেয়ে চার বছরের ছোট।
সকাল বেলা হসপিটাল এ গিয়ে নিরব কে ডিসচার্জ করে দেয় ইশা।তারপর কেবিন এ বসে ছিলো এমন সময় উজ্জ্বল এসে বলে তার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।আর তারপর ই এই বাড়িতে নিয়ে আসে।

দুপুরে আর হসপিটাল এ যাওয়া হয়নি,উজ্জ্বল ও যায়নি।দুপুরে লাঞ্চ শেষ করে নিজের রুমে গিয়ে কিছুক্ষন রেস্ট নেয় ইশা,চোখটাও সামান্য লেগে গেছিলো।
ঘুম ভেঙে যেতেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বিকেল ৪টা বাজে। ওয়াশরুম এ গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে এসে তৈরি হয়ে নেয় হসপিটাল এ যাওয়ার জন্য। যে কদিন এখানে আছে সে কদিন অন্যান্য পেশেন্ট ও দেখবে সে।
নিজে তৈরি হয়ে উজ্জল কে ডাকার জন্য যেই তার রুমের দিকে যাবে তখনি দেখে নূহার রুম থেকে উজ্জের কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে।কেনো জানিনা তার খুব শুনতে ইচ্ছে করলো তাদের মধ্যে কি কথা হচ্ছে। দরজা খানিকটা খোলা থাকায় পাশে উকিয়ে ভিতরের কথা শুনতে লাগলো ইশা।

রুমের ভিতরে—

নূহা:ভাই..

উজ্জল:হুম

নূহা:দেশে যেহেতু এলি একটিবার ওর খোজটা তো নিয়ে দেখ

উজ্জল:ও ভালো আছে আপু।আমি সিওর ও অনেক ভালো আছে।আর আমি খোজ নিতে যাবোই বা কেনো?

নূহা:ভাই,তোর মনে হয় না তুই ভুল করছিস?সবটা না জেনে শুনে একজনের ব্যাপারে এমন কিছু ভাবতে পারিসনা তুই।

উজ্জল:আর কিছু জানার বাকি আছে আপু!

নূহা:দেখ ভাই আমি তোর ভালো চাই তাই বলছি, বাহিরের মানুষের কথায় কান দিয়ে কোনো ভুল করিস না।

উজ্জল:ভুল!হা হা হা ভুল তো করেছি ই।জীবিনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছি ওকে ভালোবেসে।আর ওর কথা ভেবে জীবনের পাচ পাঁচটে বছর নষ্ট করে।তবে আমি আর কোনো ভুল করবোনা।

নূহা:মানে!

উজ্জল:আমিও লাইফ এ মুভ অন করতে চাই আপু। নিজের জীবনটা নিজের মতো করে গুছিয়ে নিতে চাই।

নূহা:তুই ঠিক কি বলতে চাইছিস?

উজ্জল:আমি ইশা কে বিয়ে করতে চাই আপু

নূহা:কিহ!তুই ভেবে চিন্তে কথা বলছিস?

উজ্জল:আমি যথেষ্ট ভেবেই কথা বলছি।

নূহা:দেখ ভাই,তুই কিন্তু ইশার অতীত সম্পর্কে কিছুই জানিস না।

উজ্জল:আমিতো জানতে চাই ও না আপু।ওর অতীত এ যাই থাকুক না কেনো আই ডোন্ট কেয়ার।আমি এই পাচ বছরে এতটুকু তো বুঝেছি যে ইশা অন্য কারোর মতোন ঠকবাজ,প্রতারক নয়।ও খুব ভালো মনের একটা মেয়ে।আর এতটুকুই যথেষ্ট আমার কাছে।

নুহা:ইশা কে বলেছিস এই ব্যাপারে?

উজ্জল:উম হু,বলিনি।তবে বলবো,আমার কাছে ওর মতামতের যথেষ্ট গুরুত্ব আছে।ও যদি রাজি থাকে তবেই আমি এই বিষয় এগোবো নয়তো না।

নূহা:তুই কি ইশাকে ভালোবাসিস ভাই?

উজ্জল:জানিনা,হয়তো বাসিনা।চেষ্টা করেছি জানোতো।কিন্তু পারছিনা,প্রতিবার ওকে মনে পরে যায়।হয়তো আমি ইশাকে ভালো বাসতেও পারবো না,আবার হয়তো পারবো।কিন্তু আমি এতটুকু বলতে পারি,আমি ওকে এতটুকু কষ্ট পেতে দেবোনা।প্রতিটা মুহূর্তে ওর সঙ্গে থাকবো ওর পাশে থাকবো।একজন ভালো প্রেমিক না হতে পারলেও একজন দায়িত্ববান স্বামী হয়ে দেখাবো।আর আমি এটাও জানি,ইশা এমন একটা মেয়ে যাকে আমি প্রতিটা মুহূর্তে পাশে পাবো।নিজের সুখ দুঃখ সবকিছু ভাগাভাগি করে পারবো।ব্যাস,আর কি লাগে!

নূহা:আমি তোকে বাধা দেবোনা ভাই।আর ইশা কেমন মেয়ে তা শুধু তুই না আমরা ভালো করে জানি।শুধু এতটুকুই বলবো যা করবি ভেবে চিন্তে করবি।তোর এই বোন সবসময় তোর পাশে আছে।

উজ্জল:থ্যাংক ইউ আপু,থ্যাংক ইউ সো মাচ।

আর শুনতে পারলোনা ইশা।দৌড়ে বেরিয়ে এলো বাড়ি থেকে।এমনটা নয় যে সে উজ্জল এর উপর রেগে গেছে কিংবা ওর কথা শুনে অসন্তুষ্ট।উজ্জল এর কথায় সে বিন্দুমাত্র কষ্ট পায়নি।বরং সে মুগ্ধ হয়েছে প্রতিটা কথায়।কিন্তু সে যে পারবেনা নিজের জীবন অন্য কারোর সঙ্গে জড়াতে।নিরব এর ভালোবাসা মিথ্যে হতে পারে কিন্তু তারজন্য প্রভার ভালোবাসা তো মিথ্যে নয়।সে তো নিজের চেয়েও বেশি ভালোবেসেছিলো মানুষটাকে।না চাইতেও আজও তার হৃদয়ে,অনুভবে,প্রতিটি অনুভুতি তে শুধু একটা নাম ই লেখা,নিরব নিরব আর নিরব।
ইশা ভেবে নেয় উজ্জল তাকে এই ব্যাপারে কোনো কথা বললে সে এক বাক্যে না করে দেবে।

হসপিটাল এর করিডোর দিয়ে মাত্র কেবিন এ যাচ্ছে ইশা।তখন ই দেখে সামনে থেকে নিরব কোথাও যাচ্ছে।ইশা ভ্রুযুগল সামান্য কুচকে আড়ালে নিরব এর পিছন পিছন যেতে থাকে। কিছুটা দূর যেতেই দেখলো নিরব একটা কেবিন এ ঢুকলো।ইশা সেখান থেকে চলে যেতে নিএও গেলো না।সেই কেবিন এর সামনে গেলো।কিন্তু সেখানে এমন একটা জিনিস দেখলো যা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলো না।সিনথিয়া বেড এ বসে আছে।নিরব ওর পাশে গিয়ে বসতেই সিনথিয়া ওকে জড়িয়ে ধরলো।নিরব ও ওকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।হালকা ঘোলাটে কাচের দড়জা দিয়ে এতটুকুই দেখা গেলো।
ইশা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না।ঠোট চেপে কান্না আটকে রেখে হাত দিয়ে মুখ চেয়ে ধরে ছুটে চলে গেলো নিজের কেবিনে।

ইশা:কেনো নিরব?কেনো?তুমি তো তোমার দিয়াপাখির কান্না সজ্য করতে পারোনা তবে কেনো আমায় এতোটা কষ্ট দিলে?আমি কি এমন চেয়েছিলাম তোমার কাছে?শুধু একটু ভালোবাসা।তুমি তো দিয়েও ছিলে,তবে কেনো এভাবে দূড়ে সরে গেলে।আমি যে আর পারছিনা।
অবশ্য কি ই বা বলছি আমি।আমি তো আর নিরবের দিয়াপাখি নই,এই নাম তো আরো কতো বছর আগেই হারিয়েছি।
নাহ,আমি কাঁদবোনা।কেনো কাদছি আমি?কার জন্য কাদছি?ও ঐ মানুষটার জন্য?যার জন্য আমি মরতে বসেছিলাম!আ আর আমি এসব কি করছি।আমি কিনা এমন একটা মানুষের জন্য ফেরেশতার মতো উজ্জ্বল কে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম!ছিহঃ,ভাগ্যেস আমি ওর পিছু নিয়েছিলাম।নাহলে তো আমি উজ্জল কে ফিরিয়ে দিতাম,এতে তো আমার পাপ হবে পাপ।যেই মানুষটা বিনা স্বার্থে বিপদের দিনে আমার পাশে থেকেছে।যার জন্য আমি নতুন জীবন পেয়েছি তাকে কিনা আমি ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম?না না আমি এমনটা করতে পারবোনা,এত বড় স্পর্ধা আমি দেখাতে পারবোনা।সেই মানুষটা যদি কোনো স্বার্থ ছাড়াই আমায় আপন করে নিতে পারে তাহলে আমি কেনো পারবোনা?পারতে আমাকে হবেই।ভুলে যাবো সকল অতীত কে, ভুলে যাবো নিরব নামম ব্যাক্তির সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত,মুছে ফেলবো তার প্রতি থাকা সকল অনুভুতি।
উজ্জল যদি আমায় নিজের পাশে চায় তবে আমিও থাকবো তার পাশে।এটাতো আমার সাত জন্মের সৌভাগ্যের ব্যাপার।

#চলবে

#আড়ালে_অনুভবে
#সাদিয়া_আফরিন_প্রতিভা
#পর্বঃ২২

সিনথিয়া:ভ ভাইয়া ওরা এসব কি বলছে?কেনো বলছে?তুমি বলো না এসব কিছু মিথ্যে,আপুর কিছু হয়নি।বলো না,চুপ করে আছো কেনো বলো।
নিরব এর দু বাহু ঝাকিয়ে কাদতে কাদতে বলে সিনথিয়া।নিরব এতক্ষন চুপ ছিলো।এবার সে নিরবতা ভেঙে বলে,

নিরব:কে বলেছে তোর আপু নেই?কিচ্ছু হয়নি তোর আপুর।

সিনথিয়া:(ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে সিনথিয়ার)ব বলেছিলাম না আপুর কিচ্ছু হয়নি।আপু একদম ঠিক আছে,ওরা এতদিন আমায় মিথ্যে বলেছে তাই না?

নিরব:তোর আপু কোথায় আছে জানিস?

সিনথিয়া:ক কোথায়?

নিরব:আমার হৃদয়ে,আমার অনুভবে,আমার প্রতিটা অনুভুতির সঙ্গে মিশে আছে আমার দিয়াপাখি।ও তো বেচে আছে,আমার হৃদয়ে।আমি তো প্রতি মুহূর্তে অনুভব করি ও আমার সঙ্গেই আছে।

সিনথিয়া:(মুখিটা মলীন হয়ে যায় আবারো,চোখ থেকে অনবরত জল গড়িয়ে পরতে থাকে)

নিরব:দিয়াপাখি চলে যায়নি সিনথু।ও বেচে আছ। শুধু আমার না সকলের মনে ও বেচে আছে, যেখান থেকে চেষ্টা করলেও সরিয়ে ফেলা সম্ভব না।

সিনথিয়া:আমি পারবোনা ভাইয়া,আপুকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।আমি কেনো বেচে গেলাম বলতে পারো?আমাকেও সঙ্গে করে নিয়ে যেতো। কেনো রেখে গেলো আমায়?

নিরব:সবকিছুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।

সিনথিয়া:(অবাক হয়ে তাকায় নিরব এর দিকে)

নিরব:আমি যে বড্ড ক্লান্ত বোন।একা একা লড়তে লড়তে আর শক্তি নেই আমার মাঝে।তোকে যে খুব প্রয়োজন আমার।যাদের কারণে আজ আমার দিয়াপাখি আমার সঙ্গে নেই তাদের শাস্তি দিবিনা বোন?থাকবিনা তোর এই ভাইটার পাশে?

সিনথিয়া:(কাদতে কাদতে নিরব এর বুকে লুটিয়ে পরে) থাকবো ভাইয়া,থাকবো।উপযুক্ত শাস্তি দেবো তাদের।

নিরব:(চোখের কার্নিশে জমে থাকা অশ্রু গড়িয়ে পরার আগেই মুছে নেয়।তারপর সিনথিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে সরিয়ে কিছুটা সামনে বসায়)এভাবে বিছানায় শুয়ে থাকলে কি করে করবি এসব?তার জন্য তো সুস্থ হতে হবে তোকে। যে কদিন আছি তার মধ্যেই আমি আমার দিয়াপাখির খুনিদের শাস্তি দিতে চাই,যা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়।

সিনথিয়া:শেষের কথাটা কি বললে তুমি?

নিরব:আব না না,ছাড় তো ওসব।এখনও কি কেদেই যাবি?

সিনথিয়া:(নিজের চোখের জল মুছে নেয়)নাহ, কাঁদবো না আমি।শাস্তি দেবো আসল দোষিকে, নিজের প্রাণ দিয়ে হলেও আমি আপুর চলে যাওয়ার প্রতিশোধ নেবোই।নাহলে আমার নামও সিনথিয়া আফরিন প্রথা নয়।

বেশ শক্ত গলায় বলে কথাটা।সিনিথিয়াকে এমন দেখে নিরব এর কোণেও হাসি ফুটে ওঠে।মনে মনে বলে, “আসছি আমি,তবে এবার আমি একা নই।আর কতোদিন বেচে থাকতে পারিস তোরা তা এই নিরব দেখে নেবে।আমার দিয়াপাখির প্রতি বিন্দু বিন্দু চোখের জলের প্রতিশোধ নেবো আমি।”(কপালের সিরাগুলো খানিকটা ফুলে ওঠে নিরবের)

______🌿
জিসান:মে আই কাম ইন ইশা?

ইশা:আরে স্যার পারমিশন নিচ্ছেন কেনো?আসুন না। (ফাইল থেকে মুখ সরিয়ে বললো)

জিসান:তুমি যেহেতু ফর্মালিটি দেখিয়ে স্যার বলতে পারো তাহলে তো আমারো পারমিশন নেওয়া উচিৎ। (চেয়ার এ বসে বললো)

ইশা:মানে আসলে..

জিসান:আমি তোমার বাবার বয়সি।তাই আমায় আঙ্কেল বলতে পারো।এসব স্যার বলার কোনো দরকার নেই।

ইশা:আচ্ছা আঙ্কেল।তা হঠাত আমার কাছে?কোনো দরকার?

জিসান:তোমার সাথে কিছু কথা বলতে এসেছিলাম।

ইশা:হ্যা স্যার সরি আঙ্কেল বলুন না কি বলবেন।

জিসান:বিষয়টা নিরব কে নিয়ে।

ইশা:(ঠোটের হাসি মিলিয়ে গেলো)

জিসান:ইশা,আমি নিরব কে তিন বছর ধরে চিনি। নিজের ছেলের মতোই দেখি ওকে।কেনো জানিনা এক অদ্ভুত মায়া কাজ করে আমার ওর প্রতি।আমি এত বছর এ এইটুকু সিওর হয়েছি যে ও নিজের ভিতর খুব বড় কিছু লুকিয়ে রেখেছে।আমি যতবার ওকে জিজ্ঞেস করেছি ততবার ওর মুখে শুধু একটা নাম ই শুনেছি।আর বাকি যা বলে কোনোটাই ক্লিয়ার না,যার কিছুই বুঝতে পারি নি আমি।

ইশা:ক কি নাম?

জিসান:উমম হ্যা দিয়া।

ইশা:(বিষ্ফরিত চোখে তাকালো জিসান এর দিকে)

জিসান:আই থিংক ওর কিছু একটা পাস্ট আছে যা ও নিজের মাঝে চেপে রেখেছে।খুব মায়া লাগে ছেলেটার উপর,ওর ফ্যামিলি মেম্বার্স বলতেও কাউকে তেমন দেখতে পাইনা।ওর বাবা কে এই কয় বছরে শুধু একদিন দেখেছিলাম,তাও এই মাস খানেক আগে।একটাবার ভেবে দেখো তো, যার ছেলের অপারেশন এর পর বেচে থাকার চান্স অনলি ৩০% সে কি করে এতো স্বাভাবিক ভাবে নিজের বিজনেস এর কাজে লেগে থাকতে পারে?আসলেই,এতো ভালো একটা ছেলের খোজ খবর রাখার জন্য দু তিনজন ফ্রেন্ড ছাড়া কেউ ই নেই।

ইশা:(আপনি ওর ব্যাপারে সবকিছু জানলে এমন টা বলতে পারতেন না স্যার)মনে মনে বললো।

জিসান:এনি ওয়ে,আমি তোমাকে এসব এই কারণেই বলছি যে একজন ডক্টর হিসেবে তোমার এতটুকু জানা উচিৎ।কারণ প্রেজেন্ট এ ওর ব্রেইন এ প্রেসার পরা মানেই সিচুয়েশন আরো বেশি খারাপ হয়ে যাওয়া।এমনভাবে চললে হয়তো বা ওকে বাচানো যাবে ন..

ইশা:নাহ..মানে এমন ভাবে বলছেন কেনো আঙ্কেল। আমি শতভাগ চেষ্টা করবো।

জিসান:তোমার উপর আমার বিশ্বাস আছে।কালকে তোমাদের কথা শুনে আমার কেনো জানিনা মনে হয়েছিলো তুমি ওর খুব ভালো বন্ধু হয়ে উঠতে পারো।তাই তোমায় পারসোনালি বললাম এসব।বাকিটা তোমার ব্যাপার।আমি তাহলে আসছি এখন।

ইশা:মাথা নেড়ে হ্যা সম্মতি জানালো।

জিসান বেড়িয়ে যেতেই উজ্জ্বল কেবিনে ঢুকলো। ইশাকে কোথাও নিয়ে যেতে চাইলো।ইশাও কিছু না বলে ওর সঙ্গে যেতে লাগলো।কারণ ও জানে উজ্জ্বল এখন কি বলতে চলেছে।

________🌿
ইশা নিজের চোখ থেকে চশমা টা খুলে জমে থাকা জল মুছে নেয়।তারপর ওড়না দিয়ে চশমা টা মুছে আবারো চোখে দেয়।সামমে থাকা নদীর দিকে তাকিয়ে থাকে,চাঁদের আলোটা সরাসরি এসে পানির উপর পরায় মনে হচ্ছে আসল একটা চাঁদ।

উজ্জ্বল এখনো স্তব্ধ হয়ে আছে।নিজের অজান্তেই তার চোখের কোণেও জল এসে ভীর জমিয়েছে। কিছুক্ষন আগে ইশাকে এখানে এনে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর ইশা নিজের অতীত সম্পর্কে সবটা বলে উজ্জ্বল কে।সবটা শুনে সে নিজেই অবাক হয়ে যায়।
নিস্তব্ধতা ভেঙে এবার ইশা বললো,

ইশা:কি হলো?চুপ করে আছো যে?তুমি হয়তো আমার জীবনের সাথে নিজের জীবন জড়াতে চাওনা আর।তাই না?

উজ্জ্বল:আমি আগেই বলেছি আমি তোমার অতীত সম্পর্কে কিছু জানতে চাইনা।তবুও তোমার ইচ্ছে হয়েছে বলে তুমি বলেছো।কিন্তু এতে আমার মন পরিবর্তন হয়ে যাবে ভাবলে কি করে ইশা?

ইশা:(অবাক হঅয়ে তাকালো উজ্জ্বল এর দিকে)

উজ্জ্বল:আমি আর যাই হোক না কেনো তোমার প্রাক্তন স্বামীর মতো নই।হয়তো বা তোমায় ভালোবাসতে না পারলেও তোমার প্রতি দায়িত্ব পালনে আমি সামান্যতম ত্রুটি রাখবোনা।ঠকাবোনা আমি তোমায় এটুকু বিশ্বাস রাখতেই পারো আমার উপর।

ইশা:তোমার মতো মানুষকে নির্দিধায় বিশ্বাস করি আমি উজ্জ্বল।কিন্তু তোমার এখনো একটা জিনিস জানা বাকি।

উজ্জ্বল:আমিতো কিছু জানিতে চাই না ইশা।

ইশা:কিন্তু আমি বলতে চাই উজ্জ্বল।

উজ্জ্বল:ঠিক আছে বলো।

ইশা:সেই লোকটা আর কেউ নয়,সয়ং নিরব।

উজ্জ্বল:কিহ! (চোখ বড়বড় করে বলে)

ইশা:হুম।আর আমার নাম, সাদিয়া আফরিন প্রতিভা।

উজ্জ্বল:(নামটা শোনা মাত্রই উজ্জ্বল যেনো আকাশ থেকে পড়লো।তার মানে ও যা ভাবছে তাই সত্তি!)

ইশা:আর আমার সেই বোনের নাম সি..

উজ্জ্বল:সিনথিয়া আফরিন প্রথা!এম আই রাইট? (নিচের দিকে তাকিয়ে বলে)

#চলবে

[রিচেইক করা হয়নি।ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়।
হ্যাপি রিডিং❤️]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে