#আড়ালে_অনুভবে
#সাদিয়া_আফরিন_প্রতিভা
#পর্বঃ১১
রোদেলা:১৬,১৭,১৮,১৯,২০..এই এই উঠুন, একদম ১০০ বার কমপ্লিট করতে হবে।
রোদ্দুর:এসব কি হচ্ছে রোদপাখি!আর পারছিনা, এবার তো ছেড়ে দাও (হাপাতে হাপাতে বললো)
রোদেলা:এটুকুতেই কষ্ট হচ্ছে তাই না?আর আমি যে দিনের পর দিন এর চেয়ে শতগুণ বেশি কষ্ট সজ্য করেছি তার কি হবে?
(রোদ্দুর এবার রোদেলার কাছে এসে গালে দু হাত রেখে মুখ টা উপরে তোলে)
রোদ্দুর:ক্ষমা করে দাও রোদপাখি।এই প্রথম এবং এই শেষ বারের জন্য।কথা দিচ্ছি আর কখনো তোমায় বিন্দুমাত্র কষ্ট পেতে দেবো না।
রোদেলা:আপনি আমায় হাজারো কষ্টের মধ্যে রাখলেও আমি খুশিমনে তা সজ্য করতে পারবো রোদ্দুর।শুধু একটাই অনুরোধ,কখনো দূড়ে সরিয়ে দেবেন না আমায়।থাকতে পারবোনা আমি।
(চোখ দুটো চিকচিক করে উঠলো রোদেলার। রোদ্দুর সজত্নে সেই জমে থাকা জল মুছিয়ে দেয় নিজের বুড়ো আঙুলের সাহায্যে।বুকে জড়িয়ে নেয় প্রেয়সি কে।)
রোদ্দুর:কথা দিচ্ছি,কখনো যাবোনা তোমায় ছেড়ে।ভরসা করে দেখই না এই অধম কে,তোমার বিশ্বাস ভাঙতে দেবোনা..
______🌼
সারাদিন এর কাজে কর্মে বেহাল অবস্থা প্রভার। হাজারো ক্লান্তি এসে ভর করেছে তার দেহে।ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঢুলতে ঢুলতে রুমে প্রবেশ করলো সে। শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি অবশিষ্ট নেই তার।
রুমে ঢুকেই দড়জা টা লক করে দিলো।ব্যাগ আর ফোন টা রেখে যেই না বিছানায় গা এলিয়ে দিতে যাবে তখনি ফোন টা বেজে ওঠে।
ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই ভ্রুযুগল আপনা আপনি কুচকে যায় তার।স্ক্রিনে স্পষ্ট মিঃচঞ্চল নাম টা এবং সাথে নিরব এর হাস্যজ্বল মুখ ভেসে উঠেছে।
প্রভা প্রথমে বিরক্ত হয়ে ভাবলো রিসিভ করবেনা, তাই বিছানার কাছে যেতে লাগলো কিন্তু পরক্ষনেই মনে হলো যদি কোনো জরুরী দরকার হয়!তাই ফিরে গিয়ে ফোন টা হাতে নিলো কিন্তু ততক্ষণে কল টা কেটে গেলে।প্রভা কিছুক্ষন চিন্তা করে যেই নিরব এর নাম্বার টা ডায়েল করতে যাবে তখন ই আবারো কল দেয় নিরব।প্রভা এবার দেড়ি না করে রিসিভ করে নেয়।
প্রভা মুখ ফুটে কিছু বলতে যাবে তার আগেই..
নিরব:ইউ হ্যাভ জাস্ট ১০ মিনিটস।তাড়াতাড়ি বাহিরে এসো।
প্রভা:মানে?
নিরব:তুমি বোধ হয় ইংরেজি বুঝতে পারোনা, ওকে নো প্রবলেম।আমি বাংলাতেই বলছি, তোমার কাছে মাত্র ১০ মিনিট সময় আছে।তার মধ্যে নিচে নেমে এসো।
প্রভা:কোন দেশের রাজা আপনি হ্যা?রাত বিরেতে বাড়ি থেকে বের হতে বলবেন আর আমি বেড়িয়ে যাবো?মামা বাড়ির আবদার পেয়েছেন? (বেশ রেগে গিয়ে কথাটা বললো)
নিরব:উফফফ,তোমাদের মেয়েদের না এই এক সমস্যা।একবারে কথা শুনতে চাও না।আবারো বলছি, ১০ মিনিট এর মধ্যে নিচে এসো নয়তো আমি ই উপরে চলে আসবো।
প্রভা:মানে টা কি?আমি কেনো এই রাতে নিচে নামতে যাবো?আর আমাকে কি পাগল কুকুরে কামড়েছে যে এই রাতে বাহিরে বেড়োতে যাবো আর তা দেখে বাড়ির সবাই হাজারো প্রশ্ন করুক!
নিরব:ব্যালকনি তে গিয়ে দেখো।সব কিছু রেডি করাই আছে।
প্রভা:হোয়াট!তার মানে আপনি আগে থেকেই এসব ঠিক করে রেখেছেন?যাবোনা আমি।কেনো যাবো হ্যা কেনো যাবো?
নিরব:আমি বলেছি তাই
প্রভা:আপ..
নিরব:এই তোমার এতো বকবক শোনার টাইম আমার নেই।অলরেডি ১ মিনিট চলে গেছে।আর আছে ৯ মিনিট।নিজে থেকে এলে তোমার ই মঙ্গল আর না এলে কি করে আনতে হয় তা আমার জানা আছে।
কথাটা বলেই ফোন টা কেটে দিলো নিরব।প্রভা রাগে দাত কিড়মিড় করে ফোন টা ছুড়ে ফেলে।
প্রভা:কি পেয়েছে টা কি উনি হ্যা?যখন যা বলবেন তাই করতে হবে নাকি!যাবোনা আমি,যা খুশি করুক গিয়ে।
বিড়বিড় করে কথাটা বলেই ধপ করে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।মুহূর্তেই যেনো রাজ্যের ক্লান্তি আরো কঠোর ভাবে এসে ভর করলো তার দেহে।ঘুমের দেশে তলিয়ে যেতে লাগলো সে।
বাড়ান্দা থেকে খটখট শব্দ আসায় সদ্য চোখে আসা কাচা ঘুমে বিঘ্ন ঘটে প্রভার।চোখজোড়া বন্ধ থাকা অবস্থ্যাতেই ভ্রুযুগল কুচকে নেয় সে।পিটিপিট করে চোখ খুলে বারান্দার দড়জার দিকে তাকাতেই চোখদুটো মারবেল এর রুপ ধারণ করে।ধপ করে উঠে বসে সে।আঙুল দিয়ে চোখদুটো কচলে নেয়,নাহ এবারো একই দৃশ্য।
নিরব বারান্দার দড়জায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।প্রভা দ্রুতগতিতে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ওরনা টা ঠিক করে নেয়।
প্রভা:আ আপনি!আ আপনি এখানে!কি করে?
নিরব:বলেছিলাম ৯ মিনিট টাইম আছে।নিজে থেকে না আসলে কি করে নিতে হয় তা আমার জানা আছে।
(কথাটা বলেই প্রভার কাছে এগোতে লাগলো।প্রভা শুকনো ঢোক গিলে পিছোতে লাগলো)
প্রভা:আ আপনি এ এদিকে আসছেন কেনো?
নিরব:বুঝতে পারছোনা কেনো?(কথাটা বলেই প্রভার আরো কাছে চলে এলো।পিছনে যেতে যেতে প্রভার পিঠ দেওয়াল এ ঠেকে গেলো। নিরব আর ওর মাঝে এখন দূরত্ব খুব সামান্য)
প্রভা:দ দেখুন,স সরে যান আপনি।
নিরব:সরার জন্য তো আসিনি প্রতিভা ম্যাম।
প্রভা:ক কি চাই আপনার? (চোখ বন্ধ কিরে বললো)
নিরব:তোমাকে।
(কথাটা বলেই প্রভা কে কিছু বলার সু্যোগ না দিয়ে কোলে তুলে নেয় নিরব।নিরব এর এমন কর্মে হতভম্ব হয়ে যায় প্রভা।)
প্রভা:এই এই কি করছেন আপনি?নামান আমাকে, নামান বলছি।
নিরব:ভালভাবেই বলেছিলাম।তখন চুপচাপ কথা শুনলে আমার ও কষ্ট করে উপরে আসতে হতো না।
প্রভা:দেখুন ভালো হবেনা বলছি।নামিয়ে দিন আমাকে প্লিজ
নিরব:ওকে নামাতে পারি।তবে এক শর্তে।চুপচাপ আমি যেখানে বলবো সেখানে যেতে হবে।
প্রভা:আ আচ্ছা যাবো।আপনি নামান তো আমায়।
,,
রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে নিরব আর প্রভা। আশেপাশে মাণূষ নেই বললে ভুল হবে।ঢাকা শহরে রাত ১১ টা ১২ টা বলতে মানুষের কাছে সন্ধ্যাবেলা। খুব একটা যানবাহন চলাচল না করলেও একেবারে বন্ধ হয়নি।ল্যাম্পপোস্ট এর আলোয় তার সাথে আকাশের পুর্ণিমার চাঁদের আলোয় এই সামান্য রাস্তাই বেশ সুন্দর লাগছে।
বেশ কিছুক্ষন হাটার পর প্রভা এবার বিরক্ত হয়ে যায়।
প্রভা:আপনি কি আমাকে এখানে হাটার জন্য নিয়ে এসেছেন?
নিরব:কেনো?খারাপ লাগছে?
প্রভা:আ আমি একবারো বলিনি খারাপ।তবে রাতের বেলা আপনি আমায় রাস্তায় হাটার জন্য নিয়ে এলেন?
নিরব:আসলে আগে প্রায় সময় ই রাতের বেলা এভাবে রাস্তায় বেড়িয়ে হাটতাম।রাতের বেলায় যেনো এই সাধারণ জায়গাটাই অন্যরকম সুন্দর লাগে,তার উপর যদি পূর্নিমা হয় তাহলে তো কথাই নেই।অনেকসময় এভাবে হাটতে হাটতে আকাশের তারাও গুনতাম জানোতো।তবে বর্তমানে সারাদিন এর ধকল সামলে আর রাতের বেলা বেরোতে ইচ্ছে করেনা।তাই ভাবলাম তোমায় সাথে নিয়ে আসি।
প্রভা এক দৃষ্টিতে নিরব এর দিকে তাকিয়ে হেটে চলেছে।কেনো জানিনা লোকটার মুখটা আজ বেশ মলীন লাগছে,আগে কখনো এমন দেখেনি। ওর সাথে ঝগড়া করা এবং ওকে রাগানো ছাড়া কোনো কথা নিরব বলেছে বলে মনে পরেনা প্রভার।তবে আজ যেনো তাকে এক অন্য মানুষ মনে হচ্ছে।
ভাবনার মাঝেই হঠাত দমকা হাওয়া এসে গাছপালা নাড়িয়ে দিলো।হঠাত করে হাওয়া আসায় প্রভা চোখ বন্ধ করে নেয়।চুলগুলো আলগা করে খোপা করা থাকায় বাতাসের কারণে সেটাও খুলে যায়।প্রভার দিকে তাকাতেই পরপর কতগুলো হার্টবিট মিস হয়ে যায় নিরবের।
মেকয়াপ অনেকটা বিগড়ে গেছে,চোখের কাজল ও লেপ্টে আছে,কপালে থাকা টিপ টা সামান্য সাইডে চলে এসেছে।বন্ধ চোখজোড়ার মাঝে বারবার বিরক্তির আভা ফুটে উঠছে।হয়তো চুল চোখে মুখে পড়ার ফলেই।
এমন মরণঘাতি দৃষ্য দেখে নিরবের অবাধ্য চোখ যেনো পলক ফেলা বন্ধ করে দিয়েছে।প্রভার ডাকে হুশ ফিরলো তার।পরক্ষণেই আসেপাশে তাকাতে মেজাজ টা বিগড়ে গেলো।বেশ কিছুজন লোক আশেপাশে থেকে প্রভার দিকে তাকিয়ে আছে।মুহূর্তেই নিরবের মাথায় রাগ উঠে বসলো।
নিরব:বাড়ি চলো।
প্রভা:মানে?এইমাত্র আপনি ই বললেন আসতে। আর এখন নিজেই বলছেন চলে যেতে!
নিরব: কারণ আমি চাইনা এই নিরবের নিজস্ব সম্পদ দিয়াপাখি নামক রুপসির এই অপরূপ সোন্দর্যের মোহে অন্য কোনো পুরুষ বিন্দুমাত্র নিমজ্জিত হয়ে যাক। (মনে মনে বলে)
প্রভা:কি হলো কিছু বলছেন না যে!
নিরব:কারণ আমি চাইনা তোমাকে দেখে কেউ পেত্নি ভেবে হার্টএট্যাক করুক।হয়েছে?এবার চলো।
প্রভা এবার কিছু বলতে যাবে তার আগেই চোখে তীব্র আলো এসে পরে।হাত দিয়ে চোখ ঢেকে নেয় সে।পরক্ষনে হাত সরিয়ে সামনে বাইক এ বসে থাকা মানুষটিকে দেখে একোড়াশ ভয় এসে ভর করে তার মনে।নিরব এর শার্ট খামচে ধরে খিছুটা নিকটে চলে যায় তার।
#চলবে
#আড়ালে_অনুভবে
#সাদিয়া_আফরিন_প্রতিভা
#পর্বঃ১২ (বোনাস পার্ট)
প্রভা:ন নিরব এখান থেকে চলুন প্লিজ।
নিরব:তা তো যাবো।কিন্তু তুমি এভাবে লুকোচ্ছো কেনো?আর ইউ ওকে?
প্রভা:হ হ্যা আমি ঠিক আছি।
নিরব:হেই,লুক এট মি।এভাবে কাপছো কেনো তুমি?কি হয়েছে বলো তো।এতক্ষন তো ঠিক ই ছিলে।
(প্রভা এবার সামনে এবং পাশে তাকিয়ে দেখলো লোকটি অন্য একজনের সঙ্গে কথা বলছে।তার মানে ওদের(প্রভা আর নিরব) দেখেনি।প্রভা কিছুটা সস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।নিরব এর থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে দাড়ালো)
প্রভা:বললাম তো আমার কিছু হয়নি।ঐ একটু মাথা ব্যাথা করছিলো আরকি।
নিরব:ওহ,ঠিক আছে চলো।
,,,
বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে আছে প্রভা।তবে তার চোখে ঘুম নেই।সকল ক্লান্তি ও যেনো এখন চোখে ঘুম আনতে পারছে না।তখন রাস্তায় বাইক এ সে আশরাফ কে দেখেছিলো।আশরাফ প্রভা কে অনেক আগে থেকেই বিরক্ত করে।সে যখন ক্লাস নাইন এ পরতো তখন থেকে।অনেকবার প্রপোজ ও করেছিলো কিন্তু প্রভা রিজেক্ট করে দিয়েছে।ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার এ ওঠার পর ও জানতে পেরেছিলো যে আশরাফ দেশের বাহিরে চলে গেছে।তবে আবার ফিরে এলো কেনো?
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো প্রভা।অতঃপর সকল চিন্তা বাদ দিয়ে ঘুমের রাজ্যে পা রাখলো।
______🌼
সময় কতো তাড়াতাড়ি অতিবাহিত হয়ে যায় তাইনা?সকলের জীবনে প্রতিদিন কতকিছুই না ঘটে তবে রাতের আধারে মানুষ সবকিছু ভুলে গিয়ে একটি নতুন দিনের সূচনা করে।
আরো তিন মাস কেটে গেছে।নিরব এর ইন্টার্নশিপ এখন একদম শেষ পর্যায়।আর মাস খানেক এর মতো সময় লাগবে মাত্র।
ইতিমধ্যে আহান আর নিশাত এর ও বিয়ে হয়ে গেছে বেশ ধুমধাম করে।নিরব আর প্রভা এখন আরো ক্লোজ হয়ে গেছে।প্রায়ই রাতের বেলা লুকিয়ে ঘুড়তে বের হয়।প্রভা অনুভব করছে যে সে নিরব এর প্রতি দুর্বল হয়ে পরছে।তবে এখনো কেউ ই কাউকে মনের কথা বলেনি।
রোদেলার বিয়ের সময় কিছুদিন এর জন্য বাড়িতে এসেছিলো প্রভা।কিন্তু বর্তমানে আবারো হোস্টেল এ থাকে।
আজ অঙ্কিত আর সুপ্তির মেহেন্দি অনুষ্ঠান।সুপ্তি তো এখনো বিশ্বাস করতে পারছেনা সবটা।পারিবারিক ভাবেই বিয়ে হচ্ছে ওদের।অঙ্কিত ই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলো সুপ্তির পরিবারের কাছে।সবটা মিলিয়ে তারাও আর আপত্তি করেন নি।
সুপ্তি দু হাত ভর্তি মেহেন্দি দিয়ে বসে আছে।নড়াচড়া ও করতে পারছে না।পরণে তার অরেঞ্জ কালার এর সিম্পেল এর মধ্যে কাজ করা লেহেঙ্গা।
রোদেলার খুব ইচ্ছে ছিলো মেহেন্দি দেওয়ার কিন্তু পরিবারের কেউ এলাও করেনি।সপ্তা খানেক আগেই জানতে পেরেছে সে প্রেগন্যান্ট।খুশিতে সেদিন কেঁদেই দিয়েছিলো রোদেলা,প্রথমবার মা হওয়ার অনুভূতি প্রতিটা মায়ের কাছেই স্মৃতি হয়ে থাকে।রোদ্দুর তো খুশিতে পারলে পুরো শহরে মিষ্টি বীটোড়োণ করতো।সেদিন থেকে রোদেলা কে বিছানা থেকেও উঠতে দেয় না।সিড়ি দিয়ে নামতে হবে তাই রুম টাও চেঞ্জ করেছে,এখন নিচেই থাকে তারা।রোদ্দুর একটা বিশাল কন্সট্রাকশন এর মালিক।এটা অবস্য পারিবারিক ভাবেই পাওয়া।বাবা মারা যাওয়ার পর তার চাচা ই সবকিছু দেখাশোনা করতো।রোদ্দুর এর পড়াশোনা শেষ হওয়ার সবটা তার হাতে তুলে দেয়।
বিশাল ডুপ্লেক্স বাড়িতে শুধু রোদ্দুর,নিশাত, রোদেলা আর ওদের চাচি ই থাকে।রোদ্দুর এর চাচা গত এক বছর আগে মারা যান।তার একটা মেয়ে ছিলো যার বিয়ে হয়ে গেছে,নাম তাহিরা।
যাই হোক বেশি কথা না বাড়াই।
স্টেজের পাশে একটা চেয়ারে বসে সবকিছু দেখছে রোদেলা।পরনে আকাশি রঙের স্টোন ওয়ার্ক করা শাড়ি।রোদ্দুর এর কড়া আদেশে সে এখান থেকে উঠতে পারবে না।রোদ্দুর ও আকাশি রঙের পাঞ্জাবি পরেছে।একটু পর পর এসে দেখে যাচ্ছে রোদেলা কে।
নিশাত এর মেহেন্দি দেওয়া কমপ্লিট হলে মেয়েটি জিজ্ঞেস করে,
মেয়েটি:আপু তোমার হাতেও কি কারো নাম বা নামের ফার্স্ট ওয়ার্ড লিখে দিবো?
নিশান:উমম,ওকে A লিখে দিন।
নিশাত কে মেহেন্দি পড়ানোর পর আসে প্রভার পালা।সিনথিয়া তো আধা ঘন্টা আগে থেকেই নিজের মেকাপ নিয়ে ব্যাস্ত।
প্রভা হাত বাড়িয়ে মেহেন্দি পড়া শুরু করে।পরণে তার কালার লেহেঙ্গা।মেহেন্দু ডিজাইন এর উপর তার কোনো নজর নেই।তার অবাধ্য চোখ তো অন্য কাউকেই খুজছে।
সুপ্তি:কিরে সাদু,কাউকে খুজছিস বুঝি?
প্রভা:ক কই না তো।
নিশাত:বললেই হলো?স্পষ্ট দেখলাম তুই কাউকে খুজছিস।আই থিংক আমি বুঝতে পেরেছি তুই কাকে খুজছিস।
সুপ্তি:কে রে?আমাকেও একটু বল
নিশাত:আরে ও ন..
প্রভা:আমি সিনথু কে খুজছিলাম।
নিশাত:কিন্তু আমার তো তা মনে হচ্ছে না।
প্রভা:ত তো আমি কি করবো?চুপ থাক বেয়াদ্দপ।
নিশাত:হুহ..
নিশাত এর থেকে চোখ সরিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই চোখ আটকে যায়।
নিরব খয়েরি রঙের পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করতে করতে এদিকে আসছে।অন্যদিনের মতো আজকে চোখে সানগ্লাস নেই তবে নরমাল চশমা আছে ঠিক ই।হাতে সিলভার ওয়াচ,চুলগুলো খানিকটা এলোমেলো হয়ে সামনে এসে পরছে।
হাতা ফোল্ড করা শেষ এ এবার হাত দিয়ে চুল গুলো ঠিক করে নিলো নিরব।পরক্ষনে সামনের দিকে তাকাতেই তার ও চোখ আটকে গেলো প্রভা কে দেখে।খুব সাধারণ মেকাপ এও যেনো অপ্সরী লাগছে তাকে,চুলগুলো খোপা করা তবে সামনের দিকে অনেকটা চুল খোলা রাখা।
দুজনের চোখাচোখি হতেই সময়টা যেনো থমকে গেলো।
মেয়েটি:আপু আপনার হাতে কিছু লিখবো?
(মেয়েটির কথায় দুজনের ধ্যান ভাঙলো।নুরব শুকনো ঢোক গিয়ে পাশে এসে অঙ্কিত এর পাশে দাড়ালো)
নিশাত:আপু আপনি ওর হাতে N লিখে দিন।
সুপ্তি:ওয়েট ওয়েট,N কেনো লিখবে?
নিশাত:N ফর ন..
প্রভা:আপু আপনি S লিখে দিন।
সুপ্তি:এস দিয়ে তো তোর ই নাম।ও হ্যা,বয়ফ্রেন্ড নামক জিনিসটা যথাসম্ভব তোর নেই।তাই নিজের নাম ই লিখতিছিস।
(প্রভা এবার মুচকি হাসলো।নিশাত কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে থাকলো।তারপর ওর ঠোঁটের কোণেও মুচকি হাসি ফুটে উঠলো।কারণটা বুঝতে পারছেন না তাইতো?কারণ নিরব এর নাম ই তো এস দিয়ে শুরু।মানে সৈকত আহমেদ নিরব)
নিশাত:বুঝলি সুপু!নেক্সট টাইম প্রেম করলে এমন একজন এর সাথেই করবো যার নাম এর প্রথম ওয়ার্ড আর আমার নামের প্রথম ওয়ার্ড সেইম হবে।
আহান:তাই না?
নিশাত:হ্যা তাই।
(কথাটা বলে পিছনে তাকাতেই দেখলো আহান বুকে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে।নিশাত এবার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।)
নিশাত:হে হে (বলদ মার্কা হাসি দিলো🥴),I was just kidding.
নিশাত ওর অবস্থা থেকে উপস্থিত সবাই হেসে দিলো।সিনথুও এবার চলে এলো।সকলের মেহেন্দি দেওয়া শেষে মেয়েরা একসাথে বসে গল্প করছে।তখনি হঠাত আসেপাশে থেকে গানের সুর বাজতে লাগলো।সামনে তাকাতেই প্রভা দেখলো নিরবকে।পাশে আহান,অঙ্কিত ও রয়েছে।রোদ্দুর এখনো রোদেলার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।রোদেলার জোড়াজোড়িতে বাধ্য হয়ে ওকেও জেতে হলো।রোদেলাও অনেক কষ্টে চেয়ার থেকে ওঠার পারমিশন নিলো।
🎼Ban-Than Ke Mutiyara Aaiyan
Aaiyan Patola Banke
Kanna De Wich Pippal Patiyan
Baanhi Chuda Khanke (নিরব)
Ban-Than Ke Mutiyara Aaiyan
Aaiyan Patola Banke
Kanna De Wich Pippal Patiyan
Baanhi Chuda Khanke (আহান,অঙ্কিত,রোদ্দুর)
Mere Sohneya Sohneya Ve
Ve Maahi Mera Kithe Naiyo Dil Lagna
Mere Sohneya Sohneya Ve
Ve Maahi Mera Kithe Naiyo Dil Lagna (সব ছেলেরা একসাথে)
Maahi…
Ja Vi Chhod Ke Na Tere Naal Rehna Ve
Tu Singaar Mera Tu Hai Maahi Gehna Ve
(হাতে মেহেন্দি থাকা অবস্থাতেই স্টেজ থেকে নেমে নিরব এর আসেপাশে ঘুরে গাইলো)
Ja Vi Chhod Ke Na Tere Naal Rehna Ve
Tu Singaar Mera Tu Hai Maahi Gehna Ve
(বাকি মেয়েরাও একই ভাবে নাচলো,রোদেলা ও)
Haye Doori Hai Vairi
Jinna Tu Mera Onni Main Teri (প্রভা)
Mere Sohneya Sohneya Ve
Ve Maahi Mera Kithe Naiyo Dil Lagna(নিরব প্রভার সঙ্গে নেচে গাইলো)
Mere Sohneya Sohneya Ve
Ve Maahi Mera Kithe Naiyo Dil Lagna (সব ছেলেরা একইভাবে)
Haye Tera Rasta Ve Nange Pair Turna Ve
Tu Hai Nal Mere Ta Main Kyon Ae Darna Ve (প্রভা)
Tera Rasta Ve Nange Pair Turna Ve
Tu Hai Nal Mere Ta Main Kyon Ae Darna Ve (বাকি মেয়েরা)
Haye Dono Ne Rona, Dono Ne Hasna
Sab Nu Hai Dassna (সব মেয়েরা)
Mere Soneya Soneya Ve
Ve Maahi Mera Kithe Naiyo Dil Lagna
Mere Sohneya Sohneya Ve
Ve Maahi Mera Kithe Naiyo Dil Lagna (আগের মতো একইভাবে)
Ve Maahi Mera Kithe Naiyo Dil Lagna
Ve Maahi Mera Kithe Naiyo Dil Lagna (নিরব প্রভার কোমড় জড়িয়ে ধরে আরেক হাত দিয়ে কপালে পরে থাকা চুল সরিয়ে দিয়ে গাইলো)
Ban-Than Ke Mutiyara Aaiyan
Aaiyan Patola Banke
Kanna De Wich Pippal Patiyan
Baanhi Chuda Khanke
Ban-Than Ke Mutiyara Aaiyan
Aaiyan Patola Banke
Kanna De Wich Pippal Patiyan
Baanhi Chuda Khanke
(সবাই একসঙ্গে)
এতক্ষণ ধরে সবটা ভিডিও করলো সিনথিয়া। এই চারটে কাপাল (নিরব-প্রভা,রোদেলা-রোদ্দুর, সুপ্তি-অঙ্কিত,নিশাত-আহান) এর মধ্যে নিরব আর প্রভার নাচ ই সবচেয়ে সুন্দর লাগছিলো।সিনথিয়া কেমন যেনো একটু সন্দেহ হলো।পরক্ষণে কিছু ভেবেই মুচকি হাসলো।
,,
সন্ধ্যা হয়ে গেছে।সকলে একত্র হয়ে বাগানে এসে বসলো মাত্র।কিছু একটা গেইম খেলার প্লান চলছে।নরব সেদিকে নজর না দিয়ে ফোন এ মুখ ডুবিয়ে আছে।
হঠাত করেই একটা মেয়ে “নিররর” বলে চিৎকার করে এসে নিরব কে জড়িয়ে ধরলো।
#চলবে।