#আহানের_শ্যামবতী
#পর্বঃ১১
Sam Ira
আহান ইতির সাথে মজা করছে সেটা ইতি বুঝে গেছে তাই বিছানায় গিয়ে অন্যদিকে মুখ তরে শুয়ে পরলো। আহান রুমের লাইট অফ করে দিয়েছে কিন্তু বারান্দায় রঙিন লাইট থাকায় রুমের মধ্যে সব আবছা আবছা দেখা যায়।
আহান পিছন থেকে ইতিকে জরিয়ে ধরছে, তারপর এক এক করে সব গহনা খুলে ফেললো। ইতির মুখে অনেক গুলো কিস করে গলায় মুখ গুজলো………………………
রাত ৩:৫০
আহান ফ্রেস হয়ে এসে দেখে ইতি এখনো কান্না করতেছে। আহান ইতির কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো —-
“সরি শ্যামবতী। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি, ফাস্ট টাইম সবার এমন হয় আর তোমার বয়সও অনেক কম তাই একটু বেশি প্রবলেম হয়েছে।
আহান ইতিকে ওয়াসরুমে দিয়ে এসে বেডশীট পরিবর্তন করে বসে বসে মোবাইল দেখছে। ইতি ফ্রেস হয়ে এসে আহানের বিপরিত দিকে মুখ করে শুয়ে পরছে। আহান পিছন থেকে ইতিকে জরিয়ে ধরে বললো-
“রাগ করছো শ্যামবতী??
ইতি আহানের হাত ছাড়তে ছাড়তে বললো,
“ছাড়ুন আমায়, ঘুমাবো।
“আমাকে জরিয়ে না ধরলে ঘুমাবো না।
ইতি আহানের বুকে মাথা রেখে জরিয়ে ধরলো, আহান ইতির চুলে বিলি কাটতে কাটতে দেখলো ইতি ঘুমিয়ে আছে তাই আহান ইতির কপালে একটা কিস করে ঘুমিয়ে গেলো।
সকাল ১০:০০
ইতি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নিচে গিয়ে দেখে আমেনা বেগম দুপুরের রান্নার আয়োজন করতেছে। ইতি তার পাশে গিয়ে বললো —
” সরি মা, উঠতে অনেক লেট হয়ে গেছে। আমাকে ডাকেন নি কেনো???
“নতুন বিয়ে হলে এরকম একটু আকটু হয়। তুমি গিয়ে আহানকে ডাকো আর নাস্তা করে নেও।
ইতি লজ্জায় মাথা নিচু করে ছোট করে হুম বলে রুমে চলে গেলো।
ইতি আহানের পাশে বসে বললো,
” উঠুন, মা খেতে ডাকছে।
“তুমি যাও তো এখন থেকে, আমি এখন ঘুমাবো।
“১০ টা বাজে, আম্মু খেতে ডাকছে, তাড়াতাড়ি উঠুন।
আহান ইতির দিকে তাকিয়ে বললো,
“তোমাকে যেতে বলছি আমি??
তুমি যাবে নাকী আমি ৩ ঘণ্টার জন্য রুম থেকে না বাহির হওয়ার ব্যবস্থা করবো???
“আপনি উঠবেন কিনা বলেন??
আহান রেগে গিয়ে ইতিকে কোলে নিয়ে খাটে ফেললো। ইতিকে কিছু বলতে না দিয়ে ইতির ঠোট দখল করে নিলো……….
ইতি ফ্রেস হয়ে আসার পর আহান ইতিকে শাড়ি পরিয়ে দিয়ে ২ টা ঔষধ দিলো খাওয়ার জন্য।
ইতি আহানের সাথে কথা বলবে না বলে ঠিক করছে তাই কোনো কথা না বলে চুপচাপ ঔষধ খেয়ে নিলো।
সন্ধার সময় আহান ইতিকে একটানা তিন ঘন্টা পড়াইছে। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমানোর সময় ইতি গিয়ে সোফায় শুয়ে পরলো। আহানও এসে কোনো কথা না বলে ইতির গায়ের উপর শুয়ে পরলো। ইতি বললো–
” উঠুন আপনি, আমার ব্যাথা লাগে।
“আগে বলো তোমার সমস্যা কি?
কথা বলো না কেনো??
“কিছু না।
আহান ইতির উপর থেকে উঠে সোফার মধ্যে বসছে, ইতিও উঠে বসছে।
ইতি বললো —
” নিয়ম অনুযায়ী আজকে আমাদের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিলো, আপনার কালকে একটা অপারেশন আছে তাই আপনি যেতে পারবেন না সাথে আমাকেও যেতে দিবেন না, এইসবের মানে কি??
আহান বললো,
” তোমার সামনে টেস্ট পরীক্ষা, সিলেবাস এখনো শেষ হয় নি। যদি টেস্ট পরীক্ষার আগে সিলেবাস শেষ করতে পারো তাহলে তোমাদের বাসায় যেতে পারবে। তোমার আব্বু-আম্মু কালকে আসবে, ইহানও আসবে, এখানে দুইদিন থাকবে।
ইতি চুপচাপ গিয়ে বিচানায় শুয়ে পরলো, আহানও ইতির পাশে শুয়ে পরলো।
এভাবেই একমাস সময় শষ হয়ে গেছে। ইতিকে প্রতিদিন সন্ধায় আহান পড়তে বসায়। রিমিও দেশে চলে আসছে।
আজকে রিমি ইতির শ্বশুর বাড়ি আসবে। ইতির আব্বু আম্মুও আসবে। ইতিকে শাড়ি পরিয়ে দিয়ে আহান হসপিটাল চলে গেছে। ইহান আর আহান হসপিটাল থেকে দুপুরে আসবে।
রিমি বসে বসে ইতির সাথে গল্প করছে, ইতির দুঃখের কাহিনী শুনতেছে। ইতি ভাবছে বিয়ের পর পরালেখা করতে হবে না কিন্তু আহান সারাদিন শুধু পড়াই, যেইদিন পড়া পারে না সেইদিন সারারাত তাকে জ্বালায়, ঘুমাতে দেয় না।
দুপুরে সবাই একসাথে খেতে বসছে। ইহান অনেকদিন পর রিমিকে দেখছে তাই রিমির পাশেই বসছে। খাওয়া না শুরু করতেই ভাজা মাছের গন্ধ পেয়ে রিমির বমি আসছে তাই সে ওয়াসরুমে চলে গেলো। ইতিও রিমির পিছন পিছন চলে গেলো।
রিমিকে ইতি রুমে নিয়ে গিয়ে বললো,
” হঠাৎ তোর কি হইছে বইন??
” কিছুনা। ঠিক হয়ে যাবে তুই চিন্তা করিস না।
“আচ্ছা
আহান ইতি আর রিমির জন্য রুমে খাবার নিয়ে আসলো। রিমি খাটের সাথে হেলান দিয়ে শুয়ে রয়েছে। ইহান গিয়ে রিমির পাশে বসে বললো,
“হঠাৎ তোমার কি হয়ছে??
রিমি আস্তে করে বললো,
” কিছু হয়নি।
ইহান ইতির দিকে তাকিয়ে বললো,
“বনু, তোরা একটু অন্য রুমে যা তো।
ইতি বললো,
” ওকে সমস্যা নাই।
তবে আমার বান্ধুবির সাথে বেশি কিছু করিস না পরে দেখা যাবে বিয়ের আগেই সে প্রেগন্যান্ট হয়ে গেছে।
আহান রুম থেকে বাহির হওয়ার সময় বললো,
” ইতি, এইসব ফালতু কথা রেখে তাড়াতাড়ি রুমে আসো।
ইতি যাওয়ার পর ইহান গিয়ে রিমির পাশে বসলো,
” আগে খেয়ে নেও তারপর তোমার সব কথা শুনবো।
রিমি বললো,
” আমি কিছু খাবো না প্লিজ। এইগুার ঘ্রান নাকে আসলেই বমি আসে।
” what??
এইখানে বমি আসার কি আছে?
তুমি কি প্রেগন্যান্ট নাকী??
রিমি চুপ করে রয়েছে। রিমিকে চুপ করে থাকতে দেখে কিছু একটা ভেবে বললো………….
#আহানের_শ্যামবতী
#পর্বঃ১২
Sam Ira
রিমি চুপ করে রয়েছে। রিমিকে চুপ করে থাকতে দেখে কিছু একটা ভেবে বললো,
“লাস্ট বার যখন আমার সাথে থাকছো ইতির বিয়ের সময় তখন ঔষধ খাইছো??
রিমি এখনো চুপ করে আছে। ইহানের মেজাজ অনেক গরম হয়ে গেছে তাই রিমিকে কিছু না বলে ফার্মেসি থেকে একটা প্রেগনেন্সি কিট এনে রিমিকে দিলো। রিমি বসে বসে কান্না করতেছে, ইহিনের ধমক শুনে তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
রিমি প্রেগন্যান্ট এটা সে আগে থেকেই বুঝে গেছে, কিন্তু ইহানকে কিছু বলার সাহস হয়ে উঠে নি। এখন তো প্রেগনেন্সি কিটে রেসাল্ট পসিটিভ আসছে। ইহানক কি জবাব দিবে সেটা নিয়ে ভাবছে রিমি। রিমির ভাবনার মাঝেই ইহিন দরজা ধাক্কাচ্ছে, তাড়াতাড়ি বাহির হতে বলছে।
ইহান প্রেগনেন্সি কিট হাতে নেওয়ার পর রিমিকে বললো,
“তুমি কি ঔষধ খাও নাই??
রিমি আস্তে করে বললো,
“না
ইহান বললো,
” তুমি কি ইচ্ছা করে ঔষধ খেতে না।
“ফ্যামেলি মানবে না তাই ঔষধ খাই নাই।
ইহান আর কোনো কথা না বলে রিমির গালে জোরে একটা থাপ্পড় মারলো। রিমি তাল সামলাতে না পেরে খাটে গিয়ে পরলো, কিন্তু খাটের সাথে মাথায় আঘাত লেগে একটু কেটে রক্ত বের হচ্ছে।
ইহান গিয়ে রিমিকে উঠিয়ে তার মুখ উপরে উঠিয়ে বললো,
“এই চোখে খুলো, চোখ বন্ধ করলে তোকে এইখানেই মেরে পুতে ফেলবো।
রিমির চোখ দিয়ে শুধু পানি পরছে, চোখ পিটপিট করে ইহানের দিকে তাকাতেই দেখলো চোখ দিয়ে মনে হয় আগুন বের হচ্ছে, ইহানকে আগে কখনো এরকম রাগতে দেখেনি। ইহান রিমির মুখ চেপে ধরে বললো,
” এই তোকে কি পারমিশন দিয়েছি সন্তান আনার জন্য??
তোর বয়স কতো তুই সেটা জানিস?? বেবি নিয়েছো ভালো কথা এরপর যদি বেবির কিছু হয় তাহলে তোমায় একদম পুতে ফেলবো।
ইহান আর কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।
ইতি রিমির মুখে সবকিছু শুনে স্তব্ধ হয়ে বসে রয়ছে। আহান ইতি আর রিমিকে রেডি হতে বলে নিজের রুমে চলে গেলো।
রিমিকে নিয়ে আহান আর ইতি ডাক্তারের কাছে আসছে। তারা ফার্মেসি থেকে ঔষধ নিয়ে বাহির হওয়ার সময় দেখলো ইহান হসপিটাল থেকে বাহির হয়ছে । আহান ইহানকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো, ইতি আর রিমিও পিছনে বসলো।
ইতি রিমির আব্বু আম্মুকে কল দিয়ে তাদের বাসায় আসতে বলছে। ইতির কল কাটার পর ইহান বললো,
” এই, তোকে এতো ফাইজলামি করতে বলছি??
তোর বান্ধুবির বাবুর খুব শখ হয়ছে তাই নিছে, তার মধ্যে তুই বাম হাত দেস কেনো??
ইতি বলে,
“তুমি চুপ থাকো , আমার ভাবি আমি যা ইচ্ছা তাই করবো। আর তুমি যদি বেবি সহ্য করতেই না পারো তাহলে বিয়ে করছো কেনো??
” তোর মতো এক পাগলের কথা শুনে সেইদিন বিয়ে করছি। কিন্তু তখন তো আর জানতাম না এইভাবে আমাকে ফাসাবে।
ইতি বললো,
” ওকে, আমার ভাবিকে আমার কাছে রাখবো তোমাকে দিবো না।
ইহান বললো,
“আমার লাগবো না।
রিমির বাবা-মা সব শুনে রাগ করে চলে গেলো, রিমির সাথে আর কোনো সম্পর্ক রাখবে না বলছে, রিমিকেও বলছে কোনো যোগাযোগ না রাখতে।
রিমি ছাদের দোলনার মধ্যে বসে বসে কান্না করছে। ইতি এসে অনেকবার ডাকছে কিন্তু যাই নি। এখন আহান এসে ডেকে গেছে তাই চলে গেছে।
ইহান রুমের দরজা লক করে রাখছে, আহান অনেকবার ডাকছে কিন্তু খুলে নি। তাই আহান রিমিকে ইতির কাছে থাকতে বলে সে অন্য রুমে চলে গেছে।
ইহান সব কাজ শেষ করে দেখলো ১ টা বেজে গেছে। এখন একটু পানি খাওয়া প্রয়োজন তাই ইহান দরজা খুলে কিচেন রুমে গেলো। যখন ইতি ছিলো তখন ঘুমানোর আগে পানি এনে রেখে যেতো। ইতি চলে যাওয়ার পর থেকে ইহান প্রতিদিন রাতে রুম থেকে বাহির হয় পানি খাওয়ার জন্য।
ইহান পানি খেয়ে কিচেন রুম থেকে বাহির হওয়ার সময় দেখলো ড্রয়িংরুমের পাশে যে বেসিন সেখানে রিমি বমি করতেছে।
রিমি হাত মুখ ধুয়ে গিয়ে সোফায় পেটে হাত দিয়ে বসে পরলো, চোখ থেকে অনর্গল পানি পরতেছে।
ইহান রিমির পাশে বসে বললো,
” কি হয়ছে??
তুমি এখানে কি করছো?? আর তুমি ঔষধ খাও নাই, এতো বমি করতেছো কেনো??
রিমি চোখের পানি মুছে বললো,
” কিছু না।
এটা বলেই রিমি চলে গেলো। ইহান গিয়ে রিমিকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের মধ্যে ঢুকে দরজা লক করে দিলো।
ইহান অনেকবার রিমিকে বলছে খাটে এসে ঘুমাতে কিন্তু রিমি সোফায় বসে রয়ছে। তাই ইহান রিমির পাশে বসে জিজ্ঞাস করলো,
” তুমি কি চাও সত্যি করে বলো তো
” আপনার সাথে কথা বলতে চাইনা। আমার আর বেবির দায়িত্ব আমি একাই নিতে পারবো।
” সরি, রাগের মাথায় তোমায় অনেক কিছু বলে ফেলছি। তোমার বয়স অনেক কম, এখন বেবি নেওয়া রিস্ক তাই আমার মাথা গরম হয়ে গেছে।
রিমিকে চুপ করে থাকতে দেখে ইহান রিমির কপালে ব্যান্ডেজ করা জায়গায় একটা কিস করে বললো,
” আজকে তুমি অসুস্থ তাই বেচেঁ গেলা নাহলে খবর ছিলো আজকে।
“হুম বুঝছি।
ইহান রিমিকে বুকের উপর শুইয়ে দিয়ে বললো,
” এখন ঘুমাও।
বিয়ের পর থেকে একদিনও ইতিকে ছাড়া ঘুমায়নি আহান। এখন একা একা ঘুমাতে ভাল্লাগছে না তাই উঠে চলে গেলো ইতির রুমে। রুমে গিয়ে যা দেখলো তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না আহান।
চলবে।