আলো-আঁধার পর্ব-৩৫

0
1452

#আলো-আঁধার🖤
#লেখিকা:সালসাবিল সারা

৩৫.
রাণী ঘুমে কাতর।তূর্যয় রাণীকে নিজের বুকের সাথে আটকে রেখেছে।তার রৌদ্রকে সম্পূর্ণ নিজের করে নিয়েছে সে,এটা ভাবতেই তূর্যয়ের মনটা আনন্দে ছেয়ে যাচ্ছে।রাণীর পিঠে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে তূর্যয়।তূর্যয়ের পেটের উপর রাণীর জড়িয়ে রাখা হাতের আঙ্গুলের ভাঁজে নিজের আঙ্গুল গুঁজে দিলো সে।রাণীর পিঠ থেকে হাত সরিয়ে তূর্যয় রাণীর মুখে চলে আসা চুলগুলো সরিয়ে দিলো।কিন্তু একটু পরে আবারও রাণীর মুখে চুল চলে এলো।আবারও তূর্যয় রাণীর মুখের উপর থেকে চুল সরিয়ে দেওয়া আরম্ভ করলো।রাণীকে এমন শান্তিতে ঘুমাতে দেখে তূর্যয়ের মাথায় শয়তানি বুদ্ধি হানা দিলো।রাণীকে জ্বালাতে তূর্যয় ধীরে ধীরে রাণীর পিঠে চিমটি দেওয়া শুরু করলো।রাণী নড়ে উঠলো তূর্যয়ের এমন কান্ডে।রাণীর মুখে বিরক্তি স্পষ্ট।তূর্যয় নিজের ঠোঁট বাঁকা করলো রাণীর বিরক্তি মাখা মুখ দেখে।আবারও তূর্যয় রাণীর পিঠে চিমটি দিলে রাণী ঘুমের ঘোরে রেগে তূর্যয়ের বুকে খামচি দিলো। এতে তূর্যয় ব্যাথা না পেলেও সে রাণীকে বলে উঠলো,
–“আর কতো খামচি দিবি?অলরেডি আমি শেষ।”
রাণী ঘুম বিড়বিড় করে বলছে,
–“যেমন কর্ম তেমন ফল।রাক্ষস একটা।”
রাণীর কথায় তূর্যয় গা নাড়িয়ে হেসে উঠলো।রাণীর মাথায় চুমু দিয়ে পরম আদরে জড়িয়ে ধরলো সে।তূর্যয় রাণীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো,
–“তোর রাক্ষস আমি।”
রাণীর কোনো উত্তর পেলো না তূর্যয়।রাণীর দিকে তাকালে সে দেখলো,রাণী আবারও ঘুম বেহুঁশ।তূর্যয় ভেবে পায় না,রাণী এইভাবে ঘুমোচ্ছে কেনো।পরক্ষণে সে ভাবলো,
–“মানুষ নিশ্চিন্তে সেখানেই ঘুমোয়,যেখানে সে তার নিরাপত্তা খুঁজে পায়।আর আমার রৌদ্র আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে আর বিশ্বাস করে এটা আমার জানা আছে।আমি তোমায় কখনো আমার উপর তোমার এই বিশ্বাস বিলীন হতে দিবো না।আর হ্যাঁ,তুমি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ।আমার বউ তুই,আমার রৌদ্র।তূর্যয়ের রাজ্যর একমাত্র রাণী তুই।”
তূর্যয় কথাগুলো ভেবে রানীর হাত উঠিয়ে রাণীর হাতে গভীর একটা চুমু দিলো।তূর্যয় এক মনোযোগে রাণীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।তার কাছে নিজেকে এখন সবচেয়ে বেশি সুখী মানুষ বলেই মনে হচ্ছে।কিন্তু, তূর্যয় বেশিক্ষণ রাণীর এমন ঘুমন্ত মুখ উপভোগ করতে পারলো না।মোবাইলের রিংটোনের শব্দে তূর্যয় নিজের ভ্রু কুঁচকে ফেললো।রাণীকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে সোফার উপর থেকে মোবাইল নিয়ে ফোন ধরতেই অপর পাশ থেকে তার বাড়ির এক গার্ড বলে উঠলো,
–“বস,দুইটা পার্সেল এসেছে আপনার নামে।”
তূর্যয় থমথমে গলায় তাকে প্রশ্ন করলো,
–“জায়গার নাম কি?”
তূর্যয়ের প্রশ্নে লোকটা বললো,
–“কাঞ্চন শাড়ি হাউজ আর একটা জে.ডি সু কালেকশন। ”
–“মেইন দরজার সামনে রাখ।”
তূর্যয়ের কথায় লোকটি জবাব দিলো,
–“আচ্ছা,বস।”
তূর্যয় ফোন কেটে নিজের কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো।গোসল সেরে কোমরে তাওয়াল পেঁচিয়ে বেরিয়ে এলো তূর্যয়।ঘুমন্ত রাণীর কাছে গিয়ে নিজের ঠান্ডা হাত দিয়ে রাণীর গালে ছুঁতেই রাণী একটু ভ্রু কুঁচকে নিলো।তূর্যয় রাণীর এমন ভ্রু কুঁচকানো দেখে নিজ মনে হাসলো।রাণীর ঠোঁটে হালকা চুমু দিয়ে উঠে পড়লো তূর্যয় রাণীর পাশ থেকে।রাণীর গায়ের উপর চাদর ঠিক করে দিয়ে নিজের গায়ে টি শার্ট জড়িয়ে,ট্রাউজার পড়ে সে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে নামলো।দরজা খুলতে সে বড় দুইটা পার্সেল দেখতে পেলো।যেহুতু রাণী রুমে ঘুমিয়ে আছে তাই তূর্যয় কোনো গার্ডকে নিজের রুমে যাওয়ার অনুমতি দিলো না।অগত্য তূর্যয় নিজেই এই বড় পার্সেল দুটি নিয়ে নিজের রুমে এলো।সেগুলোর লিস্ট দেখে অনলাইনে পেমেন্ট করে দিলো সে জিনিসগুলোর।একে একে সব শাড়ি,জুতা বের করে নিজের আলমারিতে গুছিয়ে রাখছে।রাণীর হালকা ঘুম ভাঙতেই,সে দেখলো তূর্যয় আলমারিতে মেয়েদের কিছু কাপড় রাখছে।কিন্তু নিজের শরীরের দুর্বলতার কারণে রাণীর চোখ আবারও বটে এলো।রাণীর জিনিসপত্র সব ঠিক করে রেখে দিলো তূর্যয়।মোবাইল হাতে নিয়ে হ্যারিকে ফোন করলো সে।হ্যারি ফোন রিসিভ করতে করতে তূর্যয় ড্রয়ার থেকে লাইটার এবং সিগারেট নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো।সিগারেট জ্বালিয়ে ঠোঁটের মাঝে দিতেই হ্যারি তূর্যয়ের ফোন রিসিভ করলো।তূর্যয় সিগারেটে লম্বা একটা টান দিয়ে হ্যারিকে বললো,
–“মিটিংয়ে কোনো সমস্যা হয়েছিল?”
–“নাহ ব্রো।সব ঠিক ছিলো। বাট!”
হ্যারির কথায় ভ্রু কুঁচকে এলো তূর্যয়ের। ঠোঁটের মাঝখান থেকে তূর্যয় সিগারেট হাতে নিয়ে হ্যারিকে প্রশ্ন করলো,
–“কি?”
–“কিছুদিন আগের একটা গোল্ড ডিলারকে কিডন্যাপ করেছিলাম,সে স্টিল তার বসের নাম বলছে না।একটু আগে, সে আস্তানা থেকে পালাতে গিয়ে দুইজনকে কিল করেছে।বাট এখন হি ইজ আন্ডার কন্ট্রোল।সে বলছে,
তোমাকে একবার দেখেই সবটা বলবে সে।”
হ্যারির জবাব।
–“আমার সামনেই তো ওয়াদা করেছিল,তাকে দুইদিন সুস্থ হওয়ার সময় দিতে।এরপর সে সব সত্যি বলবে।ওকে, আমার আস্তানায় নিয়ে আসো।”
তূর্যয়ের কঠোর নির্দেশ।
–“ব্রো,জঙ্গলের আস্তানায় আসাটা তোমার জন্যে বেশ ফার হয়ে যাবে।তোমার বাড়ির আস্তানায় আনবো?”
তূর্যয় কিছু একটা ভেবে হ্যারির কথায় মত দিয়ে বললো,
–“আচ্ছা।আসো সাবধানে।”
কথাটা বলে তূর্যয় ফোন কেটে দিলো।রাণীকে কয়েকবার ডাকলো তূর্যয় কিছু খাওয়ার জন্যে।কিন্তু রাণী ঘুমের মাঝে তার ব্যথার কথা জানালে,তূর্যয় রাণীকে পেইন কিলার খেতে বলে।তবে, রাণীর ঘুমানোর জিদের সাথে না পেরে আর কিছু বলেনি তাকে।রাণীর কপালে হাত বুলিয়ে তার দিকে একবার শীতল নজরে তাকিয়ে তূর্যয় তার আস্তানায় চলে গেলো।
.
রাণীর ঘুম ভাঙতেই পাশে হাতড়িয়ে সে তূর্যয়কে খুঁজে যাচ্ছে।হালকা করে চোখ খুলতেই রাণী রুমে থাকা বড় ঘড়িতে দেখলো রাত আটটা বাজে।রাণী মাথায় হাত রাখলো।শরীরটা বেশ ব্যথা করছে তার।কিন্তু পরক্ষণে তূর্যয় আর তার অতি কাছের মুহূর্তের কথা মনে আসতেই লজ্জায় জমে গেলো রাণী।নিজের গায়ের উপর থাকা চাদর খামচে ধরে রাণী বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
–“এই লোকটা যেমন হিংস্র সন্ত্রাসী তেমনই বেশ রোমান্সে পটু।উফ,কি লজ্জা!”
রাণী নিজের মুখ ঢেকে দিলো চাদর দিয়ে।কিন্তু,তূর্যয় কোথায়; এটাই রাণীর মাথায় আসছে না। রাণী ধীরে উঠে বসলো।নিজেকে তার আজ অন্যরকম লাগছে।কোনো মতে চাদর জড়িয়ে উঠে পড়লো সে বিছানা থেকে।বাথরুমে যাওয়ার আগেই রাণী থেমে গেলো। সে বলতে লাগলো,
–“হায়রে,পড়বো কি গোসল করে?”
পরক্ষণে তার মনে এলো সে ঘুমের মাঝে তূর্যয়কে দেখেছিল আলমারিতে কিছু রাখতে।এখন এটা সত্যি নাকি মিথ্যা এটা যাচাই করতে আলমারির সামনে গিয়ে আলমারি খুলতেই রাণী অবাক হলো। সত্যিই অনেক শাড়ি দেখতে পাচ্ছে সে।একটা বেগুনি রঙের সুতির শাড়ি বেশ পছন্দ হলো রাণীর।সেটা নিয়ে ধীর পায়ে বাথরুমে গেলো সে।
গোসল শেষে রুমের সবকিছু ঠিক করে নিলো রাণী।সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে রাণী নিচে নামছে।এখন রাণীর উদ্দেশ্য হলো তূর্যয়ের খোঁজ নেওয়া।নিচে নেমে লিভিংরুমে থাকা টেলিফোন থেকে ফোন লাগালো সে তূর্যয়কে।গতকাল সে এখানে এসেছে তার মোবাইল ছাড়া।

নিজের ল্যান্ডলাইন থেকে ফোন আসছে দেখে তূর্যয় বুঝলো রাণী ফোন করেছে তাকে।তূর্যয় আস্তানায় কিছু লোকের সাথে কথা বলছিল।তূর্যয়ের চোখের চাহনি দেখে সবাই তার সামনে থেকে সরে গেলো।ফোন রিসিভ করলে রাণী তাকে ভাঙ্গা গলায় বলে উঠলো,
–“আপনি কোথায়?”
–“তোমার আশেপাশে আছি।কখন উঠেছো?ব্যাথা কমেছে?”
তূর্যয়ের চিন্তিত কণ্ঠ।
রাণী একটু থেমে তূর্যয়কে জবাব দিলো,
–“হ্যাঁ,কমেছে।আপনি চলে আসুন।আমি রান্না করছি।সেই কখন কি খেয়েছেন আর কিছুই তো পেটে পড়েনি আপনার।”
–“কে বলেছে খায়নি?আমার বউ আছে তো।তাকে ভালোবাসলে আমার আর কিছুই লাগে না।তুমি ঘুমন্ত অবস্থায় অনেক…”
–“ছি,চুপ!আমি রাখছি।”
রাণী তূর্যয়কে আর কিছু বলতে না দিয়ে ফোন রেখে দিলো।বুকে হাত দিয়ে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠলো,
–“মুখে কিছুই আটকায় না উনার।দুনিয়াতে এমন ঠোঁটকাটা মানুষ আছে নাকি আদৌ!”
রাণী তূর্যয়ের সাথে কথা বলে রান্নাঘরের দিকে গেলো।রাণীর মাথায় আসছে না সে কি রান্না করবে।মাথা চুলকিয়ে ফ্রিজ থেকে কিছু মাংস আর সবজি বের করলো রাণী।ভাত রান্না করে রাণী এইবার মাংস হাতে নিয়ে চিন্তায় পড়লো। সে টুকটাক রান্না জানে।কিন্তু নিজের জামাইকে তো আর খারাপ খাবার খেতে দিতে পারে না সে।নাস্তা হলে রাণী অনায়াসে বানিয়ে নিতে পারতো।অতঃপর রাতের খাবার রান্নার জন্যে, খাবার রান্না দেখতে রাণী তাদের রুমে এলো ল্যাপটপ নিতে।ল্যাপটপ নিয়ে সে আবারও রান্নাঘরে গেলো।”তূর্যয়ের রৌদ্র” পাসওয়ার্ড দিতেই ল্যাপটপের লক খুললো।রাণী সবকিছু সাবধানে করতে লাগলো।কারণ,এটা তূর্যয়ের ল্যাপটপ,এখানে অনেক জরুরি তথ্য আছে।অগত্য রাণী রেসিপি বের করে ধীরে ধীরে রান্নার কাজ শুরু করলো।
.
বেশ কিছুক্ষণ পর হ্যারি আর কিছু লোক প্রবেশ করলো তূর্যয়ের আস্তানায়।সেই গোল্ড ডিলারের মুখে কালো কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে।তূর্যয় চেয়ারে বসে আছে পায়ের উপর পা তুলে।তূর্যয়ের ভেতরকার হিংস্রতা ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে।তূর্যয়ের একটু দূরে গোল্ড ডিলারকে হাঁটু গেড়ে বসালো হ্যারি।পাশে তূর্যয়ের অন্য একটি গার্ডও লোকটির কাঁধ চেপে ধরেছে।তূর্যয়ের ইশারায় হ্যারি লোকটার মুখের কাপড় তুলে তার মুখের বাঁধন খুলে দিলো।লোকটা নিজের মুখ খোলা পেতেই চিল্লিয়ে বলে উঠলো,
–“আরে বালের কাছে আনছস তোরা আমারে?কইছিলাম তূর্যয়ের কাছে নিয়া যাইতে।আর তোরা আমারে ক..”
লোকটা সামনে তাকিয়ে আর কিছু বললো না।হ্যারি লোকটার চুলের মুঠি ধরে লোকটাকে সামনের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলতে লাগলো,
–“লাস্টবারের মতো দেখে নে।মরার জন্যে চেয়েছিলি ব্রো এর সামনে আসতে।এসেছিস,এইবার ডাই।”
তূর্যয়কে দেখে লোকটা বেশ ভয় পেলো।তূর্যয় রাগী কণ্ঠে লোকটাকে বলে উঠলো,
–“যারা আমাকে ওয়াদা করে তাদের প্রত্যেকের চেহারা আমার মাথায় এমনভাবে সেট হয় যেনো তাদের আমি কখনোই না ভুলি।আর তুই!তূর্যয়ের ওয়াদার মর্যাদা রাখিসনি।তাই এখন তোর মৃত্যু নিশ্চিত।এর আগে তুই তোর বসের নামটা বলে যা।”
লোকটা তূর্যয়ের কথায় বড় একটা ঢেঁকুর গিললো।ভয়ার্ত চোখে লোকটা তূর্যয়কে আকুতির সুরে বললো,
–“নামটা বলা আমার পক্ষে সম্ভব না।”
তূর্যয় ঘাড় বাঁকিয়ে ইকরামের দিকে তাকিয়ে হাত পাতলো,
–“ফিঙ্গার কাটার!”
ইকরাম তার হাতে থাকা ফিঙ্গার কাটার দিয়ে দিলো তূর্যয়কে।হ্যারি আর অন্য গার্ডটি সেই লোককে টেনে নিয়ে আসলো তূর্যয়ের সামনে।গার্ডটি তূর্যয়কে এগিয়ে দিলো লোকটার হাত।হ্যারি লোকটার মুখে কাপড় গুঁজে দিলো।লোকটা মাথা নাড়িয়ে যাচ্ছে।তবে তূর্যয় দেরী না করেই ফিঙ্গার কাটার দিয়ে লোকটার দুইটা আঙ্গুল কেটে দিলো।লোকটা আর্তনাদ করছে। কিন্তু শোনা যাচ্ছে না কিছুই তার মুখে কাপড় থাকার কারণে।একটু পরে লোকটা শান্ত হলেও ব্যাথায় ছটফট করছে সে।তূর্যয়ের নির্দেশে লোকটার মুখের কাপড় সরিয়ে দিলো হ্যারি।ফিঙ্গার কাটারের উল্টো দিকের ধারালো অংশটা লোকটার গলার মাঝ বরাবর ধরলো তূর্যয়।হালকা প্রেস করছে সে ফিঙ্গার কাটার।যার কারণে লোকটার গলা থেকে রক্ত বেরিয়ে আসছে।তূর্যয় লোকটার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে লোকটাকে বলে উঠলো,
–“নাম বল।”
–“ছাড়ি দিবেন তো আমারে?”
লোকটার ভয়ার্ত কণ্ঠ।
–“নাম?”
তূর্যয়ের কড়া প্রশ্ন।
–“সলিমুল হক। পিএইচপি অফিসের পেছনে তার আস্তানা।”
আর কিছু বলতে পারলো না লোকটা।এর আগেই তূর্যয় ফিঙ্গার কাটারের পেছনের ধারালো অংশটা তার গলায় ঢুকিয়ে দিলো,
–“ওয়াদা ভঙ্গকারীদের মাফ করে না,তূর্যয়।”
ফিঙ্গার কাটার এর আঘাতে লোকটা সাথে সাথেই সেখানে মৃত্যুবরণ করলো।তূর্যয় চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো।ইকরাম তূর্যয়ের সামনে পানি ধরতেই তূর্যয় নিজের হাত ধুয়ে হ্যারিকে বললো,
–“লাশ ঠিকানা লাগাও।আর কালকে যাবে সেই আস্তানায়।”
–“ওকে ব্রো।সিস কেমন আছে?”
হ্যারি প্রশ্ন করলো তূর্যয়কে।
–“রান্না করছে তোমার সিস। রাতের খাবার খেয়ে যাও।”
তূর্যয়ের শান্ত কণ্ঠ।
–“ওহ,সিস বিজি তাহলে। নো ব্রো, ফ্ল্যাটে যাবো। রেষ্ট দরকার আমার। কালকে মিট করবো সিসের সাথে।”
হ্যারির কথায় তূর্যয় জবাব দিলো,
–“আচ্ছা।”
তূর্যয় বেরিয়ে যেতে লাগলো আস্তানা থেকে।হ্যারি ইকরামের সাথে কথা বলে তার অ্যাপার্টমেন্টের জন্যে রওনা হলো।এরমধ্যে হ্যারির কাছে ফোন এলো সিমির।সিমিকে সে সন্দেহ করে রাণীর ব্যাপারে। তাই সিমির রহস্য উদ্ধার করতে হ্যারি বেশ নাটকীয় ভাব নিয়ে সিমির সাথে কথা বলা শুরু করলো।তাদের কথা শেষ হতেই হ্যারি বাঁকা হেসে বললো,
–“মিস. সিমি।আম নট এ ফুল।একবার সব প্রুফ পেয়ে যায় আমি।দেন তোমায় আমি টু পিস করবো।আমার সিস আমার জন্যে অনেক ইম্পর্ট্যান্ট একটা পার্সন।অ্যান্ড আই লাভ হার এ লট।তার কোনো হার্ম,আমি মেনে নিবো না।অ্যান্ড ব্রো,জানলে তো তুই একেবারেই ফিনিশ!সো স্যাড,ইউ বিচ,সিমি।”
.
রান্নাঘরের টুকটাক শব্দে তূর্যয় রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো।রাণী রান্নায় ব্যস্ত।তূর্যয়ের মন জুড়িয়ে যাচ্ছে রাণীকে এমন বউ রূপে দেখে।রাণীর এমন রূপটা যেনো তূর্যয়কে একেবারে ঘায়েল করে দিচ্ছে।রাণীর চুলে খোঁপা করেছিল।কিন্তু,বর্তমানে সেই খোঁপা অর্ধেক খুলে আছে।রাণী নিজের শাড়ির আঁচল ঠিক করে চুলে খোঁপা করতে শুরু করলো।এইদিকে ধীর পায়ে তূর্যয় রাণীর কাছে গিয়ে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই রাণী দিলো এক জোরে চিৎকার,
–“তূর্যয়!”
রাণী ভয় পেয়েছে প্রচুর।তূর্যয় নিজের ভ্রু কুঁচকে কানে হাত রেখে বললো,
–“ধীরে বললেও হতো,রৌদ্র।আমি তোমার সাথে একেবারে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছি।”
তূর্যয়কে দেখে রাণী নিজের জীবন ফিরে পেলো।নিজের পেটের উপর রাখা তূর্যয়ের হাতে হালকা চড় দিয়ে রাণী বলে উঠলো,
–“এইভাবে কেউ করে?আমি আপনাকে টের পেয়ে ডেকে উঠিনি।আমাকে বাঁচানোর জন্যে ডেকেছিলাম।আমি ভেবেছি কে না কে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরছিল।একা বাসায় আমার হঠাৎ ভয় লেগে উঠলো।”
তূর্যয় আরো শক্ত করে রাণীকে চেপে ধরলো নিজের সাথে,
–“একা বাড়ি হলেও,ভয় নেই। কড়া সিকিউরিটি দেওয়া আছে তোমার বাসায়।কেউ আসার সাহস নেই এইখানে।আমি ছাড়া আমার বউকে কে ধরবে?হাহ?মেরে একেবারে আকাশে পাঠিয়ে দিবো।”
–“হ্যাঁ,আপনি তো একটা দানব।তাই।”
রাণীর কথায় তূর্যয় রাণীর কানে হালকা কামড় দিয়ে বললো,
–“উহুম,তোমার দানব।খেয়েছিলে কিছু?পেইন কিলার খেয়েছো?”
–“নাহ,ঠিক আছি আমি।একেবারে রাতের খাবার খাবো।রান্না শেষ প্রায়।”
রাণী কাঠি ঘুরিয়ে জবাব দিলো তূর্যয়কে।তূর্যয় রাণীর গলার একপাশে আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করে বলে উঠলো,
–“ইস,দাগ বসে গিয়েছে।”
–“আপনার জন্যে আরকি!”
রাণীর মৃদু কণ্ঠ।
রাণীর কথায় তূর্যয় রাণীর গালে শব্দ করে চুমু দিয়ে তাকে জবাব দিলো,
–“সব সময় করবো।”
রাণী লজ্জায় কুঁকড়ে উঠলো।

রাতের খাবার শেষে রাণী আর তূর্যয় দুইজনই বসে আছে ব্যালকনিতে।রাতের শান্ত পরিবেশ আর সমুদ্রের কোলাহলে দুইজন চুপ করে একে অপরের সাথে মিশে আছে।রাণী তূর্যয়ের বুকে হেলান দিয়ে বসে রইলো। একটু পরে ফোনে তূর্যয় হ্যারির সাথে আলোচনা করছে আগামীকালের মিশনের ব্যাপারে।রাণীর মাথায় ঘুরছে সালেহার কথা আর তূর্যয়ের মায়ের মৃত্যুর রহস্যর কথা।রাণী ভেবে পাচ্ছে না এইসব বিষয়ের কথা কি বলে শুরু করবে তূর্যয়ের সামনে।কারণ তূর্যয়ের রেগে যেতে এক মিনিটও সময় লাগে না।রাণী চুপ করে রইলো।হ্যারির সাথে কথা বলা শেষে,তূর্যয় রাণীর পেটে হাত দিয়ে তাকে নিজের কাছে টেনে নিলো গভীরভাবে।রাণী, সালেহার এবং তূর্যয়ের মায়ের মৃত্যুর ব্যাপারে তূর্যয়কে কিছু বলতে নিলে তূর্যয় শক্তভাবে রাণীর ঠোঁটজোড়া নিজের আয়ত্বে নিয়ে নিলো।রাণী চেয়েও আর কিছু বলতে পারলো না তূর্যয়কে।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে