#আলো-আঁধার🖤
#লেখিকা:সালসাবিল সারা
৩৩.
তূর্যয়ের মুখে ভালোবাসার কথা শুনেও রাণীর মনটা নরম হলো না।কারণ,তার মাথায় এখনো সেদিনের ঘটনা ঘুরছে।আর রাণী তাই চাইছে,এখনই তূর্যয় তাকে সেদিনের জন্যে “সরি” বলুক।তবে, তূর্যয়ের এমন ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ আর তূর্যয়ের মুখে তার জন্যে ভালোবাসার কথা শুনে রাণীর অন্তরটা আনন্দে ছেয়ে আছে।কিন্তু; রাণীর মনের নাছোড়বান্দা ভাব,সেই আনন্দ উপভোগ করতে দিচ্ছে না তাকে।তূর্যয় নিজেও জানে রাণী সেদিনের জন্য রেগে আছে।তবে তূর্যয় নিজেই নিজেকে সবচেয়ে বেশি জেদি মনে করে।তাছাড়া রাণীর কথা আর কাজে মনে বেশ আঘাত পেয়েছে তূর্যয়। যার কারণে সে রাণীর মনের কথা, তূর্যয় তাকে সরি বলার স্বপ্নটা পূরণ করছে না।রাণী উল্টো দিকে ফিরে আছে।তূর্যয়ও রাণী থেকে একটু দূরে সরে দাঁড়িয়ে রইলো।রাণীর এমন ঘাড়ত্যাড়ামো দেখে তূর্যয়ের রাগের পরিমাণ যেনো হাজারগুণ বেড়ে গেলো।একটু আগেও রাণীকে যখন নিজের সাথে মিশিয়ে রেখেছিল তূর্যয়,
তখন রাণী ছটফট করতে থাকে।যার কারণে বাধ্য হয়ে সে রাণীকে নিজ থেকে আলাদা করে দেয়।আর দুইজন দুই দিকে সরে দাঁড়ালো।রাণী উল্টো দিকে ফিরে তাকালেও,তূর্যয় রাণীর দিকে চেয়ে আছে।এইদিকে তূর্যয় তার পেটেও প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছে।তূর্যয়ের ধারণা তার পেটের সেই সেলাইয়ে বেশ ক্ষতি হয়েছে।হবে নাই বা কেনো?এই সেলাই নিয়েই তো নিজের সব শক্তি দিয়ে মারপিট করেছে তূর্যয়।হাজার নিজেকে দানবের মতো পেশ করলেও,তূর্যয় তো মানুষ।তাই অতিরিক্ত নড়াচড়া করার কারণে তূর্যয়ের সেলাইয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।যদিও আগে অনেকবার নিজের সেলাই নিজে করে সুস্থ হয়েছিল সে,তবে সেক্ষেত্রে অন্তত একদিন পুরোপুরি বিশ্রাম করেছিল তূর্যয়।কিন্তু এইবার তূর্যয় তার জিদ আর রাগের কারণে নিজের ক্ষতিটা বেশি করে ফেললো।তূর্যয়ের ব্যাথা ধীরে ধীরে বাড়ছে।তাও সে মুখ বুজে সব সহ্য করে নিচ্ছে।তূর্যয় তার মনের কিছু গোপন পরিকল্পনায় অটল।নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সে দ্রুত রাণীর কাছে গিয়ে তার হাত ধরলো।রাণী চমকে উঠে তূর্যয়ের দিকে তাকিয়ে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে উঠলো,
–“আরে ছাড়ুন আমার হাত।”
–“এই হাত আমি আর ছাড়বো না।অনেক বেশি চালাক হয়েছিস তুই।তোর এই চালাকি আমি আজ ঘুচিয়ে দিবো।”
তূর্যয়ের রাগী জবাব।
রাণী তূর্যয়ের দিকে তাকিয়ে জোর গলায় বললো,
–“আমি যাবো না।আপনি..আপনি,একটা দানব সন্ত্রাসী।আসলেই, আপনি হিংস্র।আপনার কোনো মায়া দয়া নেই।আপনি খারাপ খুব,খুব খারাপ।সেদিন আমার সাথে আপনি যা করেছেন না!”
তূর্যয় রাণীর মুখ চেপে তাকে চিল্লিয়ে বললো,
–“সেদিন!আমি তোকে না সরিয়ে দিলে সেদিন কি অঘটন ঘটতো সেটা আল্লাহ্ জানে।কিন্তু, তোকে আমি এতো কথা বলবো না বুঝিয়ে।যেটা বুঝিস সেটা নিয়েই থাক।তোর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হলো,আমাকে দোকানের টাকা ফেরত দেওয়া।এটা দিয়ে তুই আমাকে পর করেছিস।কিন্তু আমি তোকে আমার পর হতে দিবো না।বরং বানিয়ে নিবো আমার সবচেয়ে আপনজন।”
তূর্যয়ের কথা রাণীর মাথায় গভীরভাবে প্রবেশ করলেও, তূর্যয়ের মুখ থেকে সেদিনের সরি শোনাটা যেনো তার কাছে মুখ্য হয়ে উঠলো।তাই রাণী জিদ করে তূর্যয়কে জবাব দিলো,
–“আমি আপনার মুখ থেকে সেদিনের জন্যে সরি শুনতে চাই।”
–“জীবনেও না।আগে তুই শাস্তি ভোগ কর নিজের ভুলের জন্যে,এরপরই আমি তোকে যা বলার বলবো।”
তূর্যয়ের কড়া জবাব।
রাণী কিছু বলার আগেই তূর্যয় রাণীর গাল ছেড়ে চিল্লিয়ে ডাকলো হ্যারিকে,
–“হ্যারি!”
তূর্যয়ের কথায় হ্যারি দরজা খুলে রুমে আসলো।হ্যারিকে দেখে রাণী হ্যারিকে বলে উঠলো,
–“দেখুন না,ভিনদেশী ভাই।এই দানব আমার সাথে কেমন করছে!”
হ্যারি রাণীকে জবাব দিলো,
–“সিস,এইবার আমার ব্রো এর কোনো ফল্ট নেই।ব্রো এইবার যা করবে,সেটার জন্যে তুমিই রেসপনসিবল হবে।”
হ্যারির কথায় রাণী জ্বলে উঠলো,
–“কি?আমি দায়ী হবো?কেনো?আমি কি করেছি?”
–“যা করেছিস কম করিসনি।হ্যারি!”
হ্যারি তূর্যয়ের কথা মতো বাইরে গেলো রুম থেকে।তূর্যয় রাণীর হাত টেনে তাকে নিয়ে যাচ্ছে হ্যারির পিছু পিছু।রুমের বাহিরে চোখ বুলিয়ে কাউকে দেখলো না রাণী। সে অনবরত চড় দিয়ে যাচ্ছে তূর্যয়ের হাতে।
তূর্যয়,রাণী,হ্যারি তিনজনই সালেহার অফিস রুমে গেলো।তারা অফিস রুমে ঢুকতেই এইবার সবাই অফিসের বাহিরে ভিড় করলো। তূর্যয় চেয়ারে বসলো,
এখনো সে রাণীর হাত ধরে আছে।হ্যারি বসলো অন্য চেয়ারে। সালেহাকে তূর্যয় বলে উঠলো,
–“এই মেয়েকে আমি নিয়ে যাচ্ছি সারাজীবনের জন্য।রাণী আর এইখানে থাকবে না।”
রাণী হাত ঝাড়ি দিয়ে তূর্যয়কে জবাব দিলো,
–“আমি যাবো না উনার সাথে কোথাও।”
সালেহা চুপ করে আছে।তূর্যয়ের সাথে চোখ মেলাতেও লজ্জা লাগছে তার।তূর্যয় উপরে যতো হিংস্র হোক না কেনো, সালেহা জানে তূর্যয় রাণীকে অনেক ভালোবাসে।নাহলে,তার মতো হিংস্র একজন সন্ত্রাসী কখনো রাণীকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে সালেহার অনুমতি নিতো না।সালেহা নিজেকে সামলিয়ে বললো,
–“রাণী তো যেতে চাইছে না।আর এইভাবে তো এতিম খানা থেকে কাউকে নিয়ে যাওয়া যায় না!এতিম খানা ছাড়ার জন্যে কাগজ বের করতে হয়।”
–“আমি যদি তাকে বিয়ে করে নিই, তাহলে কি কাগজ লাগবে?যদি আপনি এই এতিম খানাকে তার ঘর আর তাকে নিজের মেয়ে মনে করে থাকেন?”
রাণীর চোখ বড় হয়ে এলো। সে জোরে বলে উঠলো,
–“কি!বিয়ে?কখনো না।আপনি দানব একটা।আমাকে আগে আমার মন মতো সরি বলুন,এরপর আমি আপনার সব কথা শুনবো।এর আগে না।”
রাণীর কথায় সালেহা বুঝতে পারলো,রাণীর সাথে হয়তো তূর্যয়ের কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।আর ঠিক এই কারণেই তূর্যয় রাণীকে হারানোর ভয়ে সারাজীবনের জন্যে নিজের করে নিতে চাইছে।সালেহা গলা খাকারি দিয়ে রাণীকে বললো,
–“দেখ রাণী,তোদের কোনো সমস্যা হলে কথা বল তোরা।তাও,ছেলেটাকে এইভাবে ফিরিয়ে দিস না।হ্যারি,আমরা বাহিরে যায়?ওরা দুইজন কথা বলে নিক।”
–“ওকে,ম্যাডাম।”
হ্যারি হেসে উঠে পড়লো চেয়ার থেকে।
–“হ্যারি,রৌদ্র এর জন্যে বিয়ের কাপড়ের ব্যবস্থা করো।”
তূর্যয়ের থমথমে কণ্ঠ।
–“অফকোর্স ব্রো।”
হ্যারি আর সালেহা অফিসের বাহিরে চলে এলো। এতো মানুষের ভিড় দেখে হ্যারি সবার উদ্দেশ্যে ভয়ংকর গলায় বললো,
–“তূর্যয় ব্রো আর রাণীর ব্যাপারের টক কোথাও লিক হলে কিন্তু,সে বাঁচবে না।বিকজ, এইখানের সবার মোবাইল,টেলিফোন সব কিছুরই ট্র্যাক করার অ্যারেঞ্জমেন্ট করছি।কিছু ফল্ট দেখবো তো সোজা উপরে সেন্ড করে দিবো, গডের কাছে।”
হ্যারির কথায় সবাই কেটে পড়লো।আর হ্যারি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো রাণীর জন্যে কিছু কেনাকাটা করতে।ইতিমধ্যে মোল্লা সাহেবকে মমতা এতিম খানায় আসতে বলে দিয়েছে সে।হ্যারির কথা সিমির মাথায় ঘুরছে।একটুর জন্য সিমি বেঁচে গিয়েছে।কারণ,অফিসে তূর্যয়ের কথা শোনা মাত্রই বাকি কথা শোনার আগেই সে হুইল চেয়ারের চাকা চালিয়ে এতিম খানার এক কোণায় গিয়ে সাবিনাকে এই খবর দিয়েছিল।সিমি এখন বুকে হাত দিয়ে ভাবছে,
–“ভাগ্যিস,এই তূর্যয়ের চামচা কিছু বলার আগেই সাবিনাকে সব বলে দিয়েছি।আমি আর সাবিনা কেউ ভাবিনি,এতো জলদি সব ঠিক হয়ে যাবে;তূর্যয় আর রাণীর বিয়ে হবে এটা কেই বা জানতো!যাক, যতো জলদি বিয়ে তাদের ততো জলদি রাণীর মরণ হবে। আহা,কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।”
সিমি মনে মনে খুশিতে নানান গান গেয়ে যাচ্ছে।
;
রাণী শত চেষ্টা করেও তূর্যয়ের হাত ছাড়াতে পারেনি নিজ থেকে।শেষ পর্যন্ত রাণী জোরে কামড় দিলো তূর্যয়ের হাতে।রাণীর এমন কান্ড দেখে তূর্যয় বেশ বিরক্ত হলো।তূর্যয় রাণীর দিকে বেশ রাগী চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো,
–“সমস্যা কি?”
–“আমি এখন বিয়ে করবো না।প্লিজ!আপনি আগে নিজের এই দেমাগ কমান।এরপর আমি বিয়ে করবো আপনাকে।”
রাণী কান্নামাখা কণ্ঠে বললো।
তূর্যয় রাণীর হাত ধরে তাকে নিজের দিকে টেনে নিলো,
–“আমাকে বিয়ে করবি না?আমি দেমাগী?আজকে দুনিয়া উল্টে গেলেও তোকে বিয়ে করবো আমি।এরপর আমার ভালোবাসাময় শাস্তি ভোগ করবি তুই।”
রাণী ভয় পেলো তূর্যয়ের কথায়।তূর্যয়ের চোখে মুখে রাণীর জন্যে এতো হিংস্রতা কখনো রাণী দেখেনি।রাণীর জন্যে তূর্যয়ের এমন ভয়ংকর মুখ রাণী কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না।সে চায়,তূর্যয় আর রাণীর বিয়ে হবে ভালোবাসাময়।যেখানে রাণীর জন্যে তূর্যয়ের দেওয়া কোনো শাস্তি থাকবে না।ভালোবাসাময় শাস্তি বলতে তূর্যয় কি বুঝিয়েছে এটা রাণী বেশ বুঝতে পারছে।তাই সে তূর্যয়ের গালে হাত রেখে তাকে বলে উঠলো,
–“প্লিজ!আপনি এখন রেগে আছেন।আমার ভয় করছে আপনাকে।আপনি..আপনি এমন করছেন কেনো?”
তূর্যয় রাণীর দিকে সূক্ষ্ম নজরে চেয়ে আছে।রাণীর এমন কথা শুনে তূর্যয় রাণীর চুলে হাত পেঁচিয়ে তাকে কড়া ভাষায় জবাব দিলো,
–“আচ্ছা,আজ বিয়ে করছি না।কিন্তু,এর বদলে আমার এই এতিম খানা লাগবে।আমার মানে হলো,এই এতিম খানা আমি কিনে নিবো।এরপর এখানের সবাই কোথায় যাবে এটা আমার জানা নেই।হয় বিয়ে করবি আজ আমাকে,নাহয় এই এতিম খানা দিবি।এখন বল কোনটা করবি?”
রাণীর পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো তূর্যয়ের কথায়।তূর্যয়ের রাগ,হিংস্রতা সব অন্যর সাথে দেখেছিল রাণী।কিন্তু আজ নিজের সাথে তা দেখে সহ্য করতে পারছে না সে।সাথে সে এটাও বুঝছে,তূর্যয়কে টাকা ফেরত দেওয়াটাতেই রাণীর সব ভুল হয়েছে।কিন্তু এটার জন্যে ক্ষমা চেয়েও লাভ নেই তার।কারণ,তূর্যয় এখন অনেক হিংস্রতায় ডুবে আছে।রাণী তূর্যয়ের বুকে ধাক্কা দিয়ে তূর্যয়কে জবাব দিল,
–“আপনি আসলেই দানব। আপনি একটা দানব।আপনার সাহস কি করে হয় আমার সাথে ডিল করার?আমি কি আপনার বিজনেস পার্টনার?”
–“আমার লাইফ পার্টনার,তুই।”
তূর্যয়ের সোজা উত্তর।
রাণীর গায়ে শীতল হাওয়া বয়ে গেলো।রাণী তূর্যয়কে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে।আর আজকে তূর্যয়ের মুখে ভালোবাসার,আবেগী কথা শুনে রাণীর মনটা খুশিতে গদগদ করছে।তারপরও কোথাও একটা অভিমানের চাপে রাণী আজ বিয়ে করতে চাচ্ছে না।তার উপর তূর্যয় তার সাথে রাগের মাথায় বিয়ে করছে,এটা ভাবতেই রাণীর কান্না পাচ্ছে।রাণী চায়,তাদের বিয়েতে না থাকবে কোনো রাগ,না থাকবে কোনো অভিমান। রাণী আর কিছু ভাবতে পারলো না।এর আগেই হ্যারি আসলো হাতে কিছু প্যাকেট নিয়ে।এতিম খানার সবাই চুপ হয়ে আছে।সালেহা এসে রাণীকে বললো,
–“আয় মা,আমার সাথে আয়।”
–“ম্যাডাম,আমি এখন বিয়ে…”
রাণীর কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগে তূর্যয় কপালে হাত ঘষে রাণীকে বলে উঠলো,
–“আমার ডিল কোনটা পছন্দ হয়েছে তোর?”
রাণী ছলছল চোখে তাকালো তূর্যয়ের দিকে।সালেহা এসে রাণীকে উঠিয়ে নিয়ে গেলো রাণীদের রুমে।তার বন্ধুবীরা তার বিয়েতে মত না দিলেও,সিমি বুঝতে পারছে এখন যদি সে মধুর কথা না বলে সবাইকে, রাণী আর তূর্যয়ের বিয়েতে মত দিতে মানিয়ে না নেয় সবাইকে,তাহলে সবাই মিলে এর বিরোধিতা করবে, আর এতে সিমির লস হবে।এই সুবর্ণ সুযোগ সিমি মিস করতে চাই না।তাই সিমি সবার উদ্দেশ্যে বললো,
–“তোরা কেনো বুঝছিস না,তূর্যয় ভাই কতো ভালোবাসে আমাদের রাণীকে।দুইজনের মনোমালিন্য হয়েছে তাই রাণী এখন বিয়ে করবে না বলছে।কিন্তু বিয়ে করলে আমাদের রাণীরই ভালো হবে।আমাদের তূর্যয় ভাই রাণীকে সবকিছু থেকে আগলিয়ে রাখবে।”
সিমির কথায় সব বান্ধুবিরা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলো।অতঃপর রাণীর ভালোর জন্যে সবাই রাণীকে বোঝাতে লাগলো নানান কথা।
ধীরে ধীরে রাণীর সাজ সজ্জা শুরু করলো তার বান্ধুবিরা।রাণী বসে আছে চুপচাপ।সে মনে মনে ভাবছে,
–“একটু আগে বিয়ে নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা না থাকলেও,এখন আমার বেশ অন্যরকম লাগছে। যা করছে আল্লাহ্,সব আমার ভালোর জন্যেই করছে।হয়তো আজ আমার আর তূর্যয়ের বিয়েটা আমাদের দুইজনের জন্যে ভালো হবে।কিন্তু,এই দানবের এমন শর্ত দিয়ে আমাকে বিয়ে করা,এই দানবকে আমি হারে হারে বুঝিয়ে দিবো।আমিও যে তূর্যয়ের রৌদ্র এটা উনাকে আমি বেশ সুদে আসলো টের পাইয়ে দিবো।দানব সন্ত্রাসী কোথাকার!”
রাণীর সাজ সজ্জা শেষ।বাঙালি বধূদের মতো রাণী লাল বেনারসি পড়েছে।নাকে,কানে,গলায়,হাতে স্বর্ণের অলংকার পড়নে আছে তার।লাল টকটকে লিপস্টিকে রাণীর চেহারা যেনো জ্বলজ্বল করছে।মাথায় অর্ধেক ঘোমটা টেনে দেওয়া হলো রাণীর।সালেহার অফিসে নিয়ে যাওয়া হলো রাণীকে।তূর্যয়ের পাশের চেয়ারে বসলো সে।তূর্যয় ঘাড় বাঁকা করে তাকালো রাণীর দিকে।রাণীর নজর নিচে,নাকটা লাল হয়ে আছে।তূর্যয় অবাক হয়ে দেখছে রাণীর সৌন্দর্য।বিয়ের সাজে রাণীকে এতো সুন্দর লাগছে,নাকি রাণী তার বউ হতে যাচ্ছে তাই তাকে এতো অতিরিক্ত মনোরম দেখাচ্ছে,জানা নেই তূর্যয়ের।সবসময়ের মতো রাণীর চেহারা আজও তো একই,তারপরও কেনো আজ তূর্যয় রাণীর দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না,এটা তূর্যয়ের মাথায় আসছে না।মোল্লা সাহেব বেশ দ্রুত রেজিস্ট্রির পেপার তৈরি করলো। আড় চোখে উনি সালেহার দিকে কয়েকবার দেখেছে।মোল্লা সাহেব অপেক্ষায় আছে,কবে রাণী তূর্যয়ের বউ হবে আর কবে মোল্লা সাহেব তার সালেহাকে ফিরে পাবে।কারণ,তার বিশ্বাস একমাত্র রাণীই পারবে সবার মাঝের দুরত্ব মেটাতে।
ইসলামিক নিয়মে তূর্যয় আর রাণীর বিয়ে শেষ হলো কবুল বলার মধ্যমে।রাণীর বান্ধবীরা তার পাশে দাঁড়িয়ে রাণীর মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে।এইদিকে পেটের যন্ত্রণায় তূর্যয়ের অস্থির লাগছে।শরীর এর তাপমাত্রাও বেশ গরম অনুভব করছে সে।তূর্যয় বুঝছে না হঠাৎ এতো গরম লাগছে কেনো তার।সাথে মাথাটাও যেনো ভার লাগছে তূর্যয়ের।মুখ বুঁজে সব সহ্য করছে সে। রেজিস্ট্রি পেপারে সই করা শেষ করলে তারা দুজন, তখন মোল্লা সাহেব বলে উঠলো,
–“আলহামদুলিল্লাহ্,আমার তূর্যয় আর রাণীর বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।”
উনার কথায় তাল মিলিয়ে বাকি সবাই
“আলহামদুলিল্লাহ্” বললো।সালেহা,সিমি,কলি,রিয়া একে একে সবাই এসে রাণীকে জড়িয়ে ধরলো।রাণী কান্না করে যাচ্ছে সমান তালে। বিদায়বেলা সব মেয়ের জন্যেই বেশ কষ্টের।হোক সেটা নিজের বাড়ি বা এতিম খানা।রাণীর জন্যে এই এতিম খানাই তো নিজের বাড়ি।হ্যারির অনুরোধে সবাই মিলে একসাথে ছবি তুললো।একেকটা ছবি দেখে হ্যারি বলতে লাগলো,
–“আমার লাইফে এমন রেড ব্রাইডের পাশে এমন রাগী হাজবেন্ড দেখিনি কখনো।ব্রো,তুমি এই রক্তমাখা শার্ট চেইন্জ করতে পারতে।বাট,ব্রো। আই মাস্ট সে,তোমাকে আর আমার সিসকে বেশ মানিয়েছে।মে গড ব্লেস ইউ।”
তূর্যয় আর কিছু না দেখে রাণীর হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।রাণী তূর্যয়ের পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটছে।রাণী ভাবতে অবাক লাগছে,এই দানব সন্ত্রাসীটা তার বর।রাণীর গাল গড়িয়ে পানি পড়ছে।হ্যারি আসছে তাদের পাশাপাশি।রাণী তূর্যয়ের হাতের তালুর উত্তাপ অনুভব করতে পারছে।রাণী অবাক হয়ে তূর্যয়ের হাতের উপর হাত রাখলো।তূর্যয়ের গায়ের তাপমাত্রা বাড়ছে।রাণী নিজের গালে অন্য হাতের পানি মুছে নিলো।রাণী কিছু বলার আগেই তূর্যয় তাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিলো।তূর্যয় রাণী থেকে দূরত্ব রেখে বসেছে।এই দেখে রাণীর কান্নার পরিমাণ বাড়তে লাগলো।তূর্যয় ঘাড় বাঁকিয়ে রাণীর দিকে তাকালো।রাণী কান্নারত কণ্ঠে তূর্যয়কে বললো,
–“বিয়ে করেছেন অবহেলা করার জন্যে?”
–“কি করেছি আমি?”
তূর্যয়ের উল্টো প্রশ্ন।
–“ব্রো,সিস চাইছে তুমি ওর সাথে ফেবিকলের মতো চিপকে বসো।”
হাহাহা করে হাসতে লাগলো হ্যারি কথাটা বলে।তূর্যয় রাণীর দিকে তাকিয়ে তাকে আবারও প্রশ্ন করলো,
–“এইভাবে কান্না করছিস কেনো?বিদায়ের জন্যে নাকি আমি রাগ করে আছি তাই?”
–“আপনারা দুইজন কেউ ভালো না।ভিনদেশী ভাই আপনি তো আপনার ব্রো এর পক্ষে।আমার দলে আসবেন না আপনি আর।আর তূর্যয় আপনি অন্য দিকে ফিরুন।আমার দিকে তাকাবেন না।”
কথাগুলো বলে রাণী অন্যদিকে ফিরলো।হ্যারি তূর্যয়কে বলছে,
–“ব্রো,কেনো এমন করছো আমার সিসের সাথে?সি ইজ ইউর ওয়াইফ নাও।”
–“বউ বেশি পাকনামি করেছে।তাই তাকে একটা শাস্তি দেওয়া দরকার।”
কথাটা বলে রাণীর উন্মুক্ত কোমরে চিমটি কাটলো তূর্যয়।ব্যাথায় রাণী রাগী চোখে তূর্যয়ের দিকে তাকালো।তূর্যয়ের দিকে তাকাতেই সে দেখলো তূর্যয় সিটে হেলান দিয়ে আছে।হ্যারি থাকায় তূর্যয়ের অসভ্যতায় কিছু বললো না সে।নানান কথা ভাবনার মাঝে রাণীর মাথা থেকে তূর্যয়ের গায়ের উত্তাপের কথা ছুটে গেলো।তূর্যয়ের বাড়ির কাছাকাছি গাড়ি যেতেই তূর্যয় মনে মনে ভাবতে লাগলো,
–“তোমার ছেলের বউকে ঐ নরকে নিয়ে যাচ্ছি না,মা।তুমি তো জানো,ঐখানে যাওয়া এই মেয়ের জন্যে ভালো হবে না।আমি কি এতে তোমার ওয়াদা ভঙ্গ করেছি?উহু একদম না।কারণ, ঐ বাড়ির সবার থেকে আমার বউকে রক্ষা করা আমার অন্যতম দায়িত্ব।তুমি বেঁচে থাকলে,
নিশ্চই আমার এই কাজে আমার সাথ দিতে তুমি,মা।অনেক মনে পড়ছে তোমার কথা।”
নিজের মনের এইসব নানা কথা তূর্যয় ভেবে যাচ্ছে।
গাড়ি থেকে নেমে হ্যারি তূর্যয়ের পার্কিং এ রাখা নিজের বাইক নিয়ে চলে গেলো তার অ্যাপার্টমেন্টে।তূর্যয়ের মাথা ঘুরছে এক প্রকার দুর্বলতার কারণে।তূর্যয় অস্থির হয়ে যাচ্ছে ব্যাথায়।নিজের এমন বোকামিতে তূর্যয়ের নিজের রাগ লাগছে।রাণী তূর্যয়কে রেখে আগে আগে হাঁটছে।রাণী ভেতরে গিয়ে সোফায় বসে পড়লো।রাণীর মন খারাপ লাগছে তার বান্ধবীদের জন্যে।তূর্যয় সোফার সামনে গিয়ে রাণীর সামনে হালকা ঝুঁকে তাকে বলে উঠলো,
–“কেমন লাগছে বউ?”
তূর্যয়ের মুখে “বউ” শুনে রাণীর অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো।অজানা সুখ রাণীর গায়ে ভেসে বেড়াচ্ছে।রাণী বিড়বিড় করে বললো,
–“দানব একটা!”
তূর্যয় রাণীর কপালে চুমু দিলো,
–“তোর ভালোবাসার দানব আমি।”
তূর্যয় রাণীর কাছাকাছি আসতেই রাণী আবারও সেই গরমভাব অনুভব করলো।রাণী তূর্যয়ের গলায় হাত ছুঁয়ে বললো,
–“আল্লাহ্!এতো গরম কেনো আপনার শরীর?এই কি হয়েছে আপনার?বলুন না।আমি যেনো আপনার শরীর খারাপ বুঝতে না পারি,তাই গাড়িতে আমার একদম পাশে বসেননি, তাই না?”
তূর্যয় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রাণীকে বললো,
–“সেটাও একটা কারণ,আর একটা কারণ হলো আমি রেগে আছি তোমার সাথে।”
কথাটা বলে তূর্যয় দাঁড়ালো না।তার মনে হচ্ছে এখনই সে জ্ঞান হারাবে।তূর্যয় দ্রুত নিজের রুমে চলে এলো।তার দুর্বলতা কেনো যেনো রাণীকে দেখাতে চাইছে না সে।কারণ,রাণী চিন্তা করবে তার জন্যে।তবে রুমে যেতেই আর কিছু ভাবতে পারলো না সে।তীব্র ব্যাথা আর জ্বরের প্রকোপে জ্ঞান হারালো তূর্যয়।রাণী তূর্যয়ের ধপধপ পায়ের হাঁটার সাথে দৌড় দিয়েও তাকে ধরতে পারলো না।রুমে আসতেই রাণী দেখলো তূর্যয় বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।রাণী ভাবলো,তূর্যয়ের খারাপ লাগছে তাই শুয়ে আছে তূর্যয়।কিন্তু কি যেনো ভেবে রাণী তূর্যয়কে কয়েকবার ডাকলো। এরপরও সে সাড়া না দিলে,রাণী তূর্যয়ের দিকে যেতেই বেশ জোরে চিৎকার দিলো,
–“তূর্যয়!”
তূর্যয়ের পেটের দিক থেকে রক্ত বের হচ্ছে আর তা বিছানার চাদরে বিদ্যমান।রাণী বিছানায় উঠে তূর্যয়কে সোজা করার চেষ্টা করলো।কিন্তু পারলো না। জ্বরে তূর্যয়ের শরীর পুড়ে যাচ্ছে।রাণী কান্না করে যাচ্ছে তূর্যয়ের নাম ধরে।সে বুঝছে না কি করবে এখন!রাণীর দুনিয়াটা অন্ধকার লাগছে।কোনমতে,রাণী তূর্যয়ের পকেট থেকে মোবাইল বের করে ফোন করলো হ্যারিকে।
হ্যারি মাত্রই অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছিয়েছে,এরমধ্যেই ফোনে রাণীর কথা শুনে,হ্যারি সাথে সাথে ফোন করলো তূর্যয়ের ব্যাক্তিগত ডাক্তারকে।
এরপর ডাক্তার এবং হ্যারি একসাথে দুইজনই তূর্যয়ের বাড়িতে আসলো।উপরে যেতেই দেখলো রাণী কান্না করা অবস্থায় তূর্যয়ের পাশে তার পিঠে হাত দিয়ে তাকে ডেকে যাচ্ছে।হ্যারিকে দেখে রাণী বলে উঠলো,
–“ভিনদেশী ভাই,দেখুন না উনার কি হয়েছে!”
হ্যারি রাণীর কাছে গিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
–“রিল্যাক্স সিস, ডক্টর এসেছে।”
রাণী একটু সরে বসলো তূর্যয় থেকে।হ্যারি আর ডাক্তার মিলে তূর্যয়কে সোজা করলো।তূর্যয়ের মুখটা লাল হয়ে আছে,জ্বরের কারণে।রাণী আবারও কেঁদে উঠলো।তূর্যয়ের জন্যে রাণীর মনটা হাহাকার করছে।তূর্যয়ের শার্ট খুলতেই রাণী দেখলো কিছু ছোটখাটো আঘাতের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে তার শরীরে।তূর্যয়ের পেটের ব্যান্ডেজ দেখে রাণী মুখে হাত দিলো।ব্যান্ডেজ রক্তে ভিজে আছে।ডাক্তার ব্যান্ডেজ খুলতেই রাণী হাত চেপে ধরলো তূর্যয়ের।তূর্যয়ের হাত ধরে রাণী তূর্যয়ের হাত নিজের বুকের সাথে লেপ্টে ধরে রাখলো।ডাক্তার হ্যারিকে বললো,
–“আবারও সেলাই করতে হবে। নাহলে এই সেলাই থেকে বারবার রক্ত লিক হবে।”
–“ওকে,ওকে ডক্টর!”
হ্যারি জবাব দিলো।
ডাক্তার নিজের কাজ শুরু করলো।রাণী রেগে হ্যারিকে বললো,
–“দুইভাই মিলে এতো ব্যাথা পেয়েছেন আর আমাকে কিছুই জানানো হয়নি।কয়বার জিজ্ঞাসা করেছিলাম আপনার এই নাকের ব্যান্ডেজের কথা!উত্তর দেননি কোনো।”
রাণীর এমন মনমরা কণ্ঠ শুনে হ্যারি রাণীর কাঁধে হাত রেখে বললো,
–“তুমি ব্রো এর সাথে অ্যাংরি ছিলে।তাই,ব্রো চায়নি ব্রো এর ব্যাথা পাওয়ার কথা তুমি হেয়ার করে ব্রো এর কাছে যাও।ব্রো চেয়েছিল তোমাকে নিজের কায়দায় রাগ ভাঙ্গাতে।বাট;এর আগেই,তুমি ব্রোকে মানি পাঠিয়ে ব্রো এর কেয়ারিং ভাবকে ডাউন করেছো।তাই ব্রো রেগে গিয়ে তোমাকে ম্যারি করলো।যায় তুমি আন্ডারস্ট্যান্ড করো,ব্রো তোমার সবচেয়ে আপন অ্যান্ড তুমিও ব্রো এর সবচেয়ে ক্লোজ।”
রাণীর ভালো লাগছে না আর এইসব শুনতে।সে মাথা নাড়ালো।
–“আসলেই আমি মোটেও ঠিক করিনি এটা।এই লোক এতো ব্যাথা পেয়েও সব সহ্য করে আমার কাছে ছুটে গিয়েছে।আমি কিভাবে পারলাম এতটা স্বার্থপর হতে!আসলেই রাণী তুই বেশি বুঝিস।এখন থেকে তোর এই সন্ত্রাসী দানবটার ভালো থাকার সব দায়িত্ব তোর।”
ডাক্তার তার কাজ শেষ করে হ্যারিকে বললো,
–“কাজ শেষ হ্যারি।মেডিসিন নিতে হবে ঠিকভাবে।ব্যাথায় জ্বর এসেছে স্যারের।ঠিক হয়ে যাবে দ্রুত।উনি কে? উনাকে তো চিনলাম না!”
ডাক্তার রাণীর দিকে তাকিয়ে বললো।হ্যারি মাথা চুলকিয়ে ডাক্তারকে জবাব দিলো,
–“উনার দিকে লুক দেওয়ার সাহস ব্রো দেয়নি কাউকে।ব্রো এর ওয়াইফ উনি।এই ব্যাপারে মুখ সিল করে রাখবেন।আদারওয়াইজ, ইউ উইল ডাই।”
–“ওহ,সরি।ম্যাডাম,দুঃখিত আমি।”
–“সিস,আমি ডক্টরকে এগিয়ে দিয়ে আসছি।আজ আমি এইখানে স্টে করছি।নিচের রুমে থাকবো।কোনো নিড হলে,কল মি। অ্যান্ড খাবারও আনিয়ে দিচ্ছি।”
রাণী কিছু খাবে না বলে জানালো।হ্যারি আর জোর করলো না রাণীকে।রাণীর মনের অবস্থা হ্যারি ভালোই বুঝছে।হ্যারি চলে গেলো ডাক্তারকে নিয়ে।হ্যারি জানে রাণীর মনের অবস্থা এখন কেমন।তাই আর খাবার নিয়ে জোর করলো না রাণীকে হ্যারি।
রাণী গলায় একটা চিকন চেইন,হাতে চিকন চুড়ি আর নাকের ফুল রেখে বাকি সব হালকা গয়না খুলে রাখলো।রাণী জ্বরপট্টি দিয়ে যাচ্ছে তূর্যয়কে।একটু পর পর রাণী চুমু দিচ্ছে তূর্যয়ের কপালে। তূর্যয়ের জ্বর হালকা কমেছে মনে হলে,রাণী তূর্যয়ের বুকে মাথা রেখে তার পাশে শুয়ে পড়লো।তূর্যয়ের বুকের উপর হাত রেখে রাণী বলে উঠলো,
–“আমাকে সরি বলা লাগবে না।আপনি দ্রুত সুস্থ হোন।আমার ভালো লাগছে না,আপনার এই চুপচাপ অবস্থা।আপনি আমাকে বকুন প্লিজ।আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি।সরি সরি,আপনাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি।আমি অনেক দুঃখিত আমার সন্ত্রাসী।এখন থেকে আপনাকে আমি আর কোনো কষ্ট দিবো না।আপনার এই আংশিক অন্ধকার জীবনে আমি আলো ছড়িয়ে দিবো সম্পূর্ণভাবে।নিজের থেকে আর কখনো দূরে থাকতে দিবো না আমি আপনাকে।আমার জীবনের একমাত্র আশা ভরসা আপনি,তূর্যয়।”
বিড়বিড় করে কথাগুলো বলে রাণী তূর্যয়ের মাথায় হাত রাখলো।ধীরে ধীরে তূর্যয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে রাণীর নিজেরও চোখ বুজে আসছে।
চলবে।