#আলো-আঁধার🖤
#লেখিকা: সালসাবিল সারা
১.
বিকালের শেষ ভাগ।আকাশটা যেনো অন্য এক কমলা হলদেটে রঙে নিজেকে আবৃত করে নিয়েছে।আকাশের এমন রঙের কারণে পরিবেশটাও বেশ অন্য রকম লাগছে।এমন এক সুন্দর বিকেলের শেষ ভাগে ছেলেমেয়েদের কি ঘরে থাকা মানায়? একদমই না!
ঠিক তাই,কিশোর,ছোট ছেলে-মেয়ে সবাই একেকটা মাঠে,এলাকার রাস্তায় খেলাধুলা করছে।আর যুবক,মধ্য বয়সী লোকেরা এলাকার মুখের টঙের দোকানে বসে করছে নানান আলোচনা।যুবতী,তরুণী,কিশোরী এরা এখন রাস্তায় না নেমে খেলাধুলা করলেও বেশিরভাগ ছাদে তাদের দেখা মিলছে।অনেক কিশোরী আবার তাদের বাড়ির উঠানে বা এলাকায় নিজেদের মতো করে খেলা করছে বা কথা বলছে।ঠিক তেমনই “মমতা এতিম খানা” এর ছাদে তিনজন তরুণী মেয়ে নিজেদের হাত ধরে ঘুরে ঘুরে নাচছে,হাসাহাসি করছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে হাস্যজ্জ্বল মুখ হলো রাণীর।তবে বাকি দুইজন মেয়ে কলি এবং রিয়ার মুখেও হাসির কমতি নেই। তাদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে তাদের নাচ দেখেছে আজই এতিম খানায় আসা ফারিয়া।আর ফারিয়ার পাশে হুইল চেয়ারে বসে সিমি- রাণী,কলি এবং রিয়ার এমন নাচকে তালি বাজিয়ে সমর্থন করছে।নাচের তালেতালে রাণীর খিলখিল শব্দ যেনো সারা ছাদ মুখোর করে তুলছে।বিকালের শেষ আভায় সবাই আজ কমলা রং ধারণ করেছে।ফারিয়া অবাক চোখে তাদের নাচ দেখছে তো আরেকবার সিমির দিকে তাকাচ্ছে।ফারিয়া এটাই বুঝছে না,তারা আজ এতো খুশি কেনো?একটু আগেই ফারিয়াকে তার মামা মামী এই এতিম খানায় রেখে গিয়েছে।সেই থেকে এই চারজন মেয়েকেই তার ভালো লেগেছে।ছাদে উঠার পর এতিম খানার কেয়ার টেকার নাজিম এসে তাদের কিছু বলেছে আর অমনিই তারা নাচ শুরু করে দিল।সিমি মেয়েটা হুইল চেয়ারে বসে কি পরিমান গা নাড়িয়ে যাচ্ছে!ফারিয়া চিন্তা করছে,এই মেয়ে ভালো থাকলে নিশ্চয় এতক্ষণে সবার সাথে সঙ্গ মিলিয়ে নাচ করতো!বেশ কিছুক্ষণ পরে রাণীর নির্দেশে সবাই নাচ থামিয়ে দিলো। রাণীর মুখ ঘেমে একাকার।সাথে অন্যরাও একেবারে ঘেমে গেলো।ছাদে থাকা ট্যাংকির সাথে লাগানো পাইপের নল ছেড়ে দিয়ে তারা তিনজনই নিজেদের হাত মুখ ধুয়ে নিলো।নিজের ওড়না দিয়ে মুখ মুছে নিয়ে রাণী চিল্লিয়ে বলে উঠলো…
–” আমি আজ অনেক অনেক খুশি।আজ রাতে আমাদের জন্যে অনেক টাকা আসবে। আহ!এতদিন পর এতো টাকার মুখ দেখবো আমরা।ভাগ্যিস আমাদের এইবারের অর্ডারটা এই জেলার সবচেয়ে বড় লোক বাড়ি থেকে এসেছিল!”
কথাগুলো বলে সে বাকি দুইজনের দিকে তার হাতের মাঝে থাকা পানিগুলো মেরে দিল।এতে রিয়া আর কলি একটু দূরে সরে গেলো।রিয়া তার এক আঙ্গুল দেখিয়ে রাণীকে বললো…
–“একদম পানি মারবি না।গা ভেজাতে এখন মোটেও ইচ্ছে করছে না।”
রাণী হাসলো।আর হাসির সাথে সাথেই তার চোখের দুইপাশে ভাঁজ হয়ে গেলো,সাথেই তার এলোমেলো দাঁতগুলো বেরিয়ে এলো।
–“আচ্ছা!আর ভেজাবো না। তবে আজ আমার বেশ সুখ লাগছে।মনে হচ্ছে খুব শীগ্রই আমরা বড় লোক হয়ে যাবো।”
রাণীর এমন কথায় রিয়া,কলি,সিমি হেসে উঠলো প্রখরভাবে।সিমি তার পেট চেপে বললো…
–“চুপ কর ভাই।আমি আর হাসতে পারছি না।”
–“আসলেই, চুপ কর মা!সামান্য কিছু টাকায় তো আসছে হাতে। এতেই কিসের এতো স্বপ্ন দেখা তোর?ভুলে যাস না আমরা মাত্রই একটা এতিম খানার বাসিন্দা।”
কলির কথায় রাণীর মুখটা একদম চুপসে গেলো। রাণী সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নিজের গায়ে ওড়না মেলে দিলো।সিমি হুইল চেয়ারের চাকায় হাত চালিয়ে রাণীর কাছে গিয়ে রাণীর হাত ধরলো। সিমিকে দেখে রাণী মুহূর্তেই তার মুখের হাসি ফিরিয়ে আনলো। রাণী ধপ করে বসে পড়লো সিমির বরাবর।সিমি রাণীর মুখে হাত রেখে বলল…
–“আমি জানি,তুই ঠিকই একদিন সফল হবি।আমি এটাও জানি,তুই একদিন অনেক টাকা পয়সা ইনকাম করবি।”
রাণী কিছু বলার আগেই ফারিয়া হেঁটে তাদের কাছে গেলো।আর সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো..
–“কিসের কাজ করেছো আজ তোমরা?আর কিসের সফলতার কথা বলছো?”
রাণী সাথে সাথেই দাঁড়িয়ে পড়লো ফারিয়ার কথা শুনে। আর কোমরে হাত রেখে বেশ ভাব নিয়ে বলল…
–“আমরা হলাম মাটির জাদুকর। মানে আমরা মাটি দিয়ে অনেক ভালো ভালো জিনিস বানাতে পারি। ছোটকাল থেকেই আমরা এতিমখানায় বড় হয়েছি। এখানে তো আর কেউ আমাদের দামি দামি খেলনা দিয়ে যেতো না।তাই ছোট কাল থেকে মাটির সাথে খেলা করতাম আমরা চারজন। মাটি দিয়ে নানা জিনিস বানানো আমাদের ছোটকালের কাজ ছিল। সেই খেলনা গুলো দিয়ে আমাদের শৈশবকাল কেটেছে। ধীরে ধীরে মাটির সাথে আমাদের বন্ধুত্ব বাড়তে লাগলো। আর খেলনা থেকেও আমরা আরো ভালো জিনিস বানাতে শুরু করলাম। যেমন: রান্নার জন্য হাঁড়ি পাতিল, বিভিন্ন মূর্তি,নানান ধরেনের মৃৎশিল্প ইত্যাদি,ইত্যাদি।এই এলাকার অনেক মানুষজন আমাদের কাছে নানা জিনিস অর্ডার করে যায়।আর সেই অর্ডার থেকে আমরা যা টাকা ইনকাম করি সেগুলো দিয়ে আমাদের যাবতীয় জিনিস কিনতে পারি।কিছুদিন আগে কাজের জন্যে আমরা সাত হাজার টাকা পেয়েছিলাম।আর সেই টাকা দিয়ে আমাদের চারজনের জন্যে একটা স্মার্ট মোবাইল কিনেছি।নিচে গেলে,তোমায় দেখাবো।”
ফারিয়া খেয়াল করলো,রাণীর কথাগুলো বলার সময় রাণীর মুখটা একদম চকচক করছে আলোর মতো।যদিও এখন বেশ আলো নেই।তারপরও এখন মানুষের অবয়ব,ভাব ভঙ্গি সব বুঝা যাচ্ছে।ফারিয়া সেইসব মাথা থেকে ঝেড়ে পরক্ষণে আবারও বললো…
–“এইসব কাজের জন্যে তো কি যেনো একটা মাটির মেশিন লাগে!তোমরা এইসব কাজ কিভাবে করো?”
ফারিয়ার কথায় রাণী বাকিদের দিকে একনজর তাকালো।রিয়া তার হাত নাড়িয়ে দুইদিক দুলিয়ে বলল…
–“ডিজিটাল যন্ত্র আমাদের কেনার সামর্থ্য নেই।আমরা সহজ সরল নিয়মেই মাটির জিনিস তৈরি করি।যদিও অনেক অনেক পরিশ্রম হয়,তবে আমাদের রাণী তো আছেই, দশ হাতের মালিক!”
রাণী রিয়ার দিকে চোখ রাঙালো।এরপর ফারিয়ার হাত ধরে তাকে ছাদের একদিকে নিয়ে গেলো। রাণী একটা বড় পর্দা সরাতেই ফারিয়ার মুখ হাঁ হয়ে গেলো।মাটির জিনিস তৈরির সব সাধারণ সরঞ্জাম ফারিয়া এইখানে দেখতে পাচ্ছে।
–“এই যে দেখতে পাচ্ছো বড় একটা চাক!এই
চাক আমাদের বানিয়ে দিয়েছিল নাজিম ভাই, তাও অনেক বছর আগেই। প্রথমদিকে আমাদের এইসব চাকের দরকার হতো না। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন নতুন নতুন জিনিস বানাতে মন আঁকুপাঁকু করছিল আমার, তখন নাজিম ভাই আমাদের এটি বানিয়ে দেয়।আর আমাদের তো বেশি জিনিসের অর্ডার আসে না।তাই এই অল্প জায়গায় আমাদের কাজ আমরা করতে পারি।”
ফারিয়া দ্রুত এগিয়ে সেই জিনিসগুলো হাত দিয়ে ধরছে। আবারও সে রাণীকে প্রশ্ন করলো,
–” কিভাবে বানাও এইসব মাটির জিনিস?”
রাণী ফারিয়ার কাছে গিয়ে চাকে হাত রাখলো..
–“এইযে দেখছো চাক!প্রথমে এই চাকে মাটি দেওয়া হয়। এরপর চাক ঘুরিয়ে মাটিকে নানা আকৃতি দিয়ে যেটা বানানোর দরকার সেটা বানিয়ে নিই।মাঝে মাঝে কাঠের মাস্তুল ব্যাবহার করা হয় বিভিন্ন আকৃতির জিনিস বানাতে। এরপর পোড়ানো হয় আগুনে।
এইযে এইদিকে দেখো।এইখানেই আমরা এইসব জিনিস পোড়ায়।তবে মাটির মূর্তি,আর শোপিস বানানোর নিয়ম অন্যরকম।”
–“বাহ্!বেশ ভালই।আমাকেও শিখিয়ে দিও সব জিনিস বানানো।”
ফারিয়া রাণীর কথায় বেশ মুগ্ধ হয়ে বলল।আর ফারিয়ার কথার জবাবে কলি বললো…
–“অবশ্যই।”
এখন আকাশে একেবারে আঁধার নেমে এসেছে।তাই ছাদে জ্বলে উঠলো এখন রঙিন কিছু লাইট।আর মেয়ে পাঁচজন ছাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে রাস্তায় মানুষের নানা কীর্তি দেখে যাচ্ছে।তারা সবাই এক এক কথা বলছে।এরমধ্যে ফারিয়ার ফোন এলে সে গম্ভীর মুখে ফোন কেটে দিলো।এমনটা দেখে রাণী তাকে প্রশ্ন করলো…
–“তুমি ঠিক আছো? কার ফোন ছিল?”
–“মামা ছাড়া আর কে?বাড়িতে নিজের দাপট দেখাতে পারেনা, নিজের বউয়ের প্রতি একটা শব্দ পর্যন্ত করতে পারে না, সে আবার কেমন বেটা লোক?জানো, দুই বছর আগে যখন বাবা মা বেঁচে ছিল, তখন মামা মামী আমাকে তাদের চোখের মনি করে রাখতো। রোড এক্সিডেন্টে বাবা-মা মারা যাওয়ার পর আমাদের বাড়ি গাড়ি সবকিছু চলে যায় ব্যাংকের কাছে।কি যেনো একটা লোনের জন্যে এইসব হয়েছে। এরপর থেকে মামার বাড়ি ছিলাম। মামীও বেশ ভালো ব্যবহার করতো। কিন্তু কিছুদিন আগে মামী যখন জানতে পারলো আমার নামে যে কয়টা সম্পত্তি ছিল, সেগুলো ব্যাংকের কাছে চলে গেল, এরপরই মামী আমাকে গায়ে হাত তুলে অকথ্য ভাষায় গালি দেওয়া শুরু করলো।এরপর আজ এইখানে রেখে দিয়ে গেলো।শুনেছি,মামা আমাকে পড়ালেখা করাবে।যদিও আমার ইচ্ছে নেই,তবে আমার মা-বাবা যা করেছে উনার জন্যে সেই প্রেক্ষিতে আমিও কেনো উনার টাকা খরচ করা থেকে বিরত থাকব?”
–“হ্যাঁ,বেশ ভালো।পড়ালেখা বেশ জরুরী।তবে আমরা নিজেরাই পড়তে পারছি না।এখন পড়ালেখার জন্যে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। আমরা যতটুক পড়া লেখা করেছি,এটা আমাদের জন্যে অনেক।এইখানের হেড ম্যাডাম অনেক বেশি ভালো।আমাকে উনি ছোট কালে অনেক ভালো স্কুলে পড়িয়েছিলেন।তবে কলেজটা আমি রিয়াদের সাথে এলাকার একটা কলেজেই শেষ করেছি। এই যে গত বছর আমাদের কলেজ জীবনের ইতি ঘটলো।আমি কখন এসেছি এই এতিম খানায় আমি জানিনা। কিন্তু যখন থেকে বুদ্ধি হয়েছে তখন থেকে দেখছি ম্যাডাম আমাদের অনেক আদর যত্ন করেন।জানো, যখন আমি ছোট ছিলাম তখন ম্যাডাম অনেক সুন্দর ছিল, একদম জোয়ান। এখনো কিন্তু আমাদের সালেহা ম্যাডাম অনেক সুন্দর তাই না রে?”
রাণীর কথায় সিমিরা সবাই মাথা নাড়িয়ে “হ্যাঁ” বললো।পরক্ষণে রাণী আবারও বললো…
–“কিন্তু ফারিয়া,তোমার মামা শহরের এতো দামী এতিম খানা থেকে এইখানে কেনো রেখে গেলো তোমাকে?”
–“ঐযে বললে,তোমাদের ম্যাডাম অনেক ভালো।এই ম্যাডাম, মামার আগে থেকে চেনা।তাই সেই ভরসায় আমাকে এইখানে রেখে গেলো।দুনিয়াটা বড্ড স্বার্থপর।”
ফারিয়া কান্নার ছলে বললো। রাণী ফারিয়ার কাঁধে হাত রেখে বলল…
–“একদম মন খারাপ করবে না। তোমার কাছে নিশ্চয়ই তোমার মা-বাবার ভালো স্মৃতি আছে। সেই স্মৃতি আঁকড়ে ধরে তোমায় বেঁচে থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের দেখো আমরা কেউই ছোটকালের নিজের বাবা-মায়ের দেখা পায়নি। তোমার কাছে তো অন্তত তাদের ভালো স্মৃতিটুকু আছে। তাই সেটা ভেবে একদম মন খারাপ করবে না।”
রাণীর কথাই ফারিয়া তার চোখে জমানো জল গালে পড়ার আগেই মুছে ফেলো। আর রাণীকে উপহার দিলো একটা স্মিত হাসি।ফারিয়া হেসে সবার উদ্দেশ্যে বললো…
–“চলো একটা ছবি তুলে নিই সবাই! ছাদের লাইটের রঙিন আলোটা বেশ ভালো লাগছে।আর হ্যাঁ,নিচে গেলে অবশ্যই তোমাদের নাম্বার দিবে আমাকে।”
–“অবশ্যই।”
রাণী সম্মতি জানিয়ে বললো ফারিয়াকে। বেশ কিছু ছবি তুলে তারা আবারও নিজেদের কাজে লেগে গেল, অর্থাৎ তারা নিচে থাকা সকল মানুষের কান্ড দেখছে।হঠাৎই ফারিয়া তাদের প্রশ্ন করলো…
–“আচ্ছা!তোমরা আজ কোন বড়লোকের ঘরে জিনিস পাঠিয়েছো?”
রাণী কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে চাইলো। কিন্তু এর আগেই রাস্তায় হই-হুল্লোড়ের আওয়াজ শব্দ শুনে তার মুখ নিচে যে বন্ধ হয়ে গেল। নিচে তাকাতেই রাণীর চোখটা হয়ে গেলো অনায়াসে বড়।কারণ নিচে মারামারি চলছে হয়তো।একটা লোক দৌড় দিয়ে আর্তনাদ করে যাচ্ছে।আর সেই লোকের পেছনে আসছে অন্য একটি ছেলে।তবে ছেলেটির হাতে কোনো অস্ত্র নেই।অস্ত্র আছে ছেলেটির সাথে থাকা অন্য লোকদের হাতে।তাদের এতিম থানা পেরিয়ে যাওয়ার আগেই ছেলেটি খপ করে ধরে ফেললো লোকটিকে।রাণীর চিনতে দেরী হলো না,এই ছেলেটি কে!মুহূর্তেই ছেলেটির গর্জন ভেসে এলো রাণীর কানে….
–“তোকে মানা করেছি না! তূর্যয় থেকে পালাবি না? তূর্যয়কে সবাই যতটা খারাপ মনে করে তূর্যয় ততটা খারাপ না।আমি তোকে দুইটা অপশন দিয়েছিলাম,এক) হয় তুই নিজের হাতে মরবি,দুই) সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করবি, আর আমি তোকে ডিরেক্ট গুলি করবো।কিন্তু তুই আমার কোনো কথায় শুনলি না।কি করলি তুই?দৌড় দিলি।আমাকে হয়রানি করলি।মরবি তো তুই আজই।কিন্তু কথা হলো,তুই আমাকে কেনো হয়রানি করেছিস?”
তূর্যয় এর কথায় লোকটি হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। তূর্যয়ের সামনে বসে লোকটি হাত জোর করে বললো…
–“আমার দোষ নেই আসলেই।নেশায় আমি বুদ ছিলাম।তাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে তুলে নিয়ে, আমি মেয়েটিকে কি ভেবে ধর্ষন করে আবার তাকে মেরেও ফেললাম,সেটাই বুঝতে পারলাম না আমি।আমাকে ক্ষমা করে দিন তূর্যয়!”
–“কেনো রে? পতিতায় কি মেয়েদের অভাব ছিল!তুই কেনো একটা ছোট মেয়ের জীবনটা কেড়ে নিলি?এতো কথা বাদ।মাইরের বদলে মাইর।তেমনি খুনের বদলে খুন।আমার ডিমান্ড বেশি দেখে মেয়েটার বাবা মধ্যবিত্ত হয়েও সম্পূর্ণ টাকা আমাকে দিয়েছে।যদিও আমি তোকে বিনা টাকায় মারতাম,কিন্তু মেয়েটির বাবা রাজি হোননি।নিজের পাপ কাজের শাস্তি নিজেই ভোগার জন্যে তৈরী করে নে নিজেকে।”
তূর্যয় লোকটির চুল টেনে বললো।
–“আমার বাবা অনেক প্রভাবশালী। আমার বাবাকে আপনাকে ছাড়বেনা।”
–“আমি তোর বাবার বাবা। মানে!তোর দাদা। তূর্যয় না কাউকে ভয় পায়,না কারো জন্যে তার মনে দয়া আছে। তূর্যয় হলো আঁধার।যে আঁধারে কেউ একবিন্দু আলো জ্বালাতে পারবে না, আর তূর্যয়ের মনটাও গলবে না।”
কথাটা বলেই তূর্যয় তার মানুষ থেকে ছুরি নিয়ে লোকটির গলায় ছুরি বসিয়ে দিল।আর লোকটি কেমন করে যেনো গুঙিয়ে উঠলো।এই দৃশ্য দেখে রাণীসহ,সবাই চিল্লিয়ে উঠলো।পরক্ষণে রাণী বাকিদের নিয়ে ছাদ থেকে দৌড়িয়ে সিড়ি ঘরে চলে এলো।কিন্তু তূর্যয়ের কানে এতো কিছু আসলো না।কারণ এই মুহূর্তে অনেকেই চিল্লিয়ে উঠেছে, তূর্যয়ের এমন কান্ড দেখে।সবার দিকে হাতের ইশারা করে তূর্যয় বলে উঠলো…
–“শান্ত হোন সবাই।এইখানে কি কিছু হয়েছে?আমি কি কাউকে কিছু করেছি?”
সবাই নিজের মুখ চেপে ধরলো আর দুই দিকে মাথা নাড়ালো। যার অর্থ “না”। তূর্যয় ভ্রু কুঁচকে নিলো।সাথে থাকা তার এক সঙ্গীকে বললো…
–“যেমন করে হোক,এইটাকে এক্সিডেন্ট এর কেস বানাতে চাই।প্রমাণ হবে একেবারেই স্বচ্ছ।”
আর কারো অপেক্ষা করলো না তূর্যয়।এর আগেই তার জিপ চলে এসেছে।এক লাফে ধপ করে সে জিপে উঠে পড়লো।তার ড্রাইভার জিপ চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।ততক্ষণে তুর্জিয় তার পকেট থেকে সিগারেট বের করে সেটি জ্বালিয়ে নিলো।
—
সিমিকে সিড়ি দিয়ে নামতে সাহায্য করলো রাণী আর রিয়া। দুইজনে আলগিয়ে সিমিকে উপরে তুললেও,
নামার সময় দুইজন সহজভাবে তাকে সাবধানে আলগানো ছাড়া,ঠিক ভাবে ঠেলে নামিয়ে আনলো নিচে।সিমিকে নামানোর সময় পেছনে ছিল রিয়া আর সামনে ছিল রাণী।কলিও তাদের সাহায্য করে অনেক সময়।নিচে নেমে তারা তাদের রুমে চলে গেলো।রুমে গিয়ে রাণী তার বুকে হাত চেপে বসে পড়লো।আবারও তাশরীফ তূর্যয়কে দেখলো সে।কিছুদিন আগেও দেখেছে সে তাকে,তখনো তূর্যয় কোনো এক মানুষকে মারছিল।রাণী কিছু ভাবার আগেই ফারিয়া বলে উঠলো….
–“নিচে কাহিনীটা কি হলো?”
–“তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে না! কার বাসায় জিনিস দিয়েছি আজ?যে ছেলেটা এইভাবে সবার সামনে খুন করলো,আমরা তার বাসায় জিনিস দিয়েছি।”
কলি গম্ভীর হয়ে বললো।
–“তাই নাকি!ছেলেটাকে তো কোনো দিক দিয়ে গুন্ডা মনে হয় না।তার পোশাক,স্টাইল সব দেখে তো বিত্তশালী মনে হলো।তাছাড়া ছেলেটার মুখ তো একেবারে স্নিগ্ধ,
দেহের গঠনটাও বেশ আকর্ষণীয়।এমন ছেলেকে কেউ গুন্ডা বললে আমি কখনোই মেনে নিবো না।”
ফারিয়া মাথায় হাত দিয়ে বললো।
–“এই ছেলে আস্ত একটা রাক্ষস।দেখলে না!কিভাবে একটা মানুষকে মেরে ফেললো?তার মনে আল্লাহ্ দয়া মায়া কিছুই দেয়নি।শুনেছি,তার বাবা অনেক বড়লোক হলেও,সে নিজের টাকায় চলে।আর সে টাকাগুলো কিভাবে ইনকাম করে?এই যে এইসব খুন করে।তার একেক খুনের দাম অনেক।অনেক বড় বড় গুন্ডার সাথে তার হাত আছে।তাকে এই শহরের সবাই ভয় পায়।শুধু তাই নয়,অন্য শহরের অনেকেই এই ছেলের সাথে কন্টাক্ট করে মানুষের খুন করায়।তাছাড়া,এর অনেক কালো বাজারির ব্যাবসাও আছে বলে শুনেছি।তার সকাল সন্ধ্যা অনেক গুন্ডা মহলের সাথে মিটিং থাকে।আর মিটিং এ যাওয়ার সময় সে অন্যসব অফিসারের মতো কোট প্যান্ট পড়ে সে,এখনকার মতো শার্ট আর ছেড়া স্টাইলিশ প্যান্ট পড়ে না। এলাকার সবাই এই তাশরীফ তূর্যয় সম্পর্কে ভালো জানে। তুমি অন্য শহর থেকে এসেছো, তাই হয়তো কিছু জানো না।পুলিশ, আইন সবাইকেও কিনে রেখেছে এই জল্লাদ ছেলেটা।কথায় আছে না!টাকা থাকলে দুনিয়াও কেনা যায়!এই ছেলের সব কিছুই টাকার খেলা।কিসের এতো সাহস তার মাঝে আমি এটাই বুঝি না।আসলেই ছেলেটা ঠিক বলেছিল,
তার মাঝে শুধু আঁধারই আছে। আলো একটা মায়াময় স্নিগ্ধ জিনিস। ঐ ছেলের আঁধারে আলো কখনোই মানাবে না।কতো মানুষের অভিশাপে এই ছেলে অভিশপ্ত হয়ে আছে,সেটা আল্লাহ্ ভালো জানেন।”
রাণী বেশ রেগে বললো।রাণীর কথায় সিমি বললো….
–“আমার মনে হয় না।আমার মনে হয় উনার মধ্যেও এক সময় আলো ছিল।আর উনার জীবনের এমন আঁধারের জন্যে সেই আলোয় দায়ী?অথবা উনার জীবনের আলোকে ভুলতেই উনি আঁধারকে বেছে নিয়েছেন?কোনো মানুষ সম্পর্কে না জেনে আমরা খারাপ মন্তব্য করতে তো পারি না।”
রাণী এবার বেশ রেগে গেলো। সে নিজের কোমরে হাত রেখে বললো…
–” এই রাণী, মানুষের গায়ের গন্ধ শুকে বলে দিতে পারে সেই মানুষটা কেমন হবে।আর সেখানে আমি দুইবার এই ছেলের খুনের দৃশ্য দেখেছি।ছেলেটা একটা পাষাণ,কষাই এই ছাড়া আর কিছু না।”
অনেক্ষণ ধরে তারা এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করলো।এরপর রাতের খাবার খাওয়ার পূর্বে ফারিয়া তাদের নাম্বার উঠিয়ে নিলো নিজের মোবাইলে আর “রাণী” দিয়েই সেই নাম্বার সেভ করলো।একটু পরে নাজিম এসে আজকে তাদের অর্ডারের টাকা তাদের দিয়ে গেলো।সাথে কে কতো টাকা পাবে সেটার একটা লিস্ট দিলো।যার যার টাকা রাণী সবাইকে ভাগ করে দিলো।যদিও সিমি কোনো কাজ করে না এখন তাদের সাথে,তাও রাণী তার ভাগ থেকে কিছু টাকা সিমিকে দিয়ে দিলো। সিমির এক্সিডেন্ট এর আগে কতোই না সাহায্য করেছিল রাণীকে!ফারিয়া তাদের নামের লিস্ট দেখতে লাগলো।সেখানে রাণীর নামটা দেখে একটু অবাক হলো সে।কারণ,বাকি সবার নামের আগে পিছে কিছু থাকলেও রাণীর নামের আগে পিছে কিছুই নেই।শুধু দেওয়া আছে, “রাণী”।কিন্তু এমনটা তো হয় না।সবারই নামের আগে পিছে কিছু না কিছু তো থাকেই।অবাক হয়ে ফারিয়া, রাণীর উদ্দেশ্যে বললো…
–“তোমার নামের আগে পিছে কিছু নেই কেনো?”
ফারিয়ার প্রশ্নে কলি তার কপাল চাপড়ে বললো…
–“আহারে রাণী!তোর এই নামের পিছনের কারণটা আমাদের আর কত বার যে শুনতে হবে?”
রাণীর মুখ যেনো চকচক করে উঠলো তার নিজের নামের পিছনের রহস্য ফারিয়া জানতে চাওয়ায়।সে মুখে হাসির রেখা টেনে বললো..
–“শুনেছি, আমাকে এইখানে রাখার পর ম্যাডাম আমার অন্য এক নাম দিয়েছিল। তবে স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে আমি ম্যাডামের দেওয়া আমার নামটা পরিবর্তন করে নিয়েছি। কারণ ছোটকালে যখন আমি টিভিতে নানান কার্টুন দেখতাম,তখন রাণী-রাজার কাহিনীগুলো আমার বেশ ভালো লাগতো।তাই আমি ম্যাডামকে বলেছিলাম আমাকে যেনো সবাই *রাণী* নামে ডাকে।এরপর থেকে আমার আগের নাম বাদ, আর সবাই আমাকে রাণী বলেই ডাকে।আমার কোনো জাত বংশ নেই,আমার আবার নামের আগে পিছে কিসের নাম থাকবে!আমি শুধুই রাণী।আমি আমার ছোট রাজ্যের রাণী।”
ফারিয়ার অবাকের পর্যায়ের যেনো শেষ নেই।এমন এক মেয়ের দেখা পাবে সে এইখানে এসে,এটা সে কখনোই ভাবেনি।মেয়েটির হাসির আলোতে তার মুখটা আরো বেশি আলোকিত দেখাচ্ছে।ফারিয়া কিছু বলার আগেই তাদের ডাক পড়লো রাতের খাবার খাওয়ার।অতঃপর সবাই মিলে চললো,রাতের খাবার খেতে।
‘
বাড়ি পৌঁছে তূর্যয় দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো। পেছন থেকে তার বাবা তাকে ডেকে চললো,
কিন্তু সেদিকে সে কান দিলো না।তবে রুমে যাওয়ার পূর্বেই তার সামনে হাজির হলো তার বোন।অবশ্য সে তার আপন বোন না।তার যে বাবা আছে, সেও তার আপন কেউ না। লোকটি তার সৎ বাবা। তূর্যয় যখন ছোট ছিল তখন তার মা এই লোককে বিয়ে করে।তবে, তূর্যয়ের মা মারা যাওয়ার পর পর, তূর্যয়ের সৎ বাবা অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করে।সেই সৎ মহিলারই এই মেয়ে।তূর্যয় তাকে নিজের বোনের মতোই মনে করে। সে তার বোনের চুল টেনে ধরে বললো…
–“সর, মণি।আমার অনেক ঘুম আসছে।”
–“রাতের খাবার না খেয়ে কোনো ঘুম নেই।আমি খাবার দিচ্ছি, আসো।”
মণি তূর্যের হাত ধরে বললো।
–“নাহ।আমার রুমে আছে খাবার।সেগুলো খেলেই আমার চলবে।”
–“তোমার সেই মদ?এইসব মদের কথা শুনলেই তো গা গুলিয়ে আসে।তুমি কিভাবে খাও এইসব! বলো তো?”
মণি তূর্যয়কে প্রশ্ন করলো।
–“তোর এত ভাবতে হবে না।ঘুমিয়ে যা।”
–“তূর্যয় কি এসেছে?”
সাবিনা বেগমের এমন কথা শুনতেই,তূর্যয় মণিকে ঠেলে তার রুমে ঢুকে গেলো।
সাবিনা বেগম মণির কাছে আসতেই, মণি রেগে তার মাকে বলল….
–“তুমি জানো,ভাইয়া তোমার নাম শুনলে ঠিকই রুমে চলে যাবে।তাই ইচ্ছে করেই এইসব করেছো, তাই না?”
–“বাহ্!আমার মেয়ে বেশ বড় হয়ে গেলো।সবকিছু দেখি বুঝতে শিখেছিস?তূর্যয় না খেলেই আমার শান্তি।তুই সৎ ভাইয়ের কথা চিন্তা না করে,নিজের ভাইয়ের কথা চিন্তা কর।”
মণি তার মাকে ধাক্কা দিলো…
–” তোমার ছেলেকে তুমি দেখো।আমার শুধু একটা ভাই, তূর্যয় ভাই।”
মণি নিজের চোখের পানি মুছে চলে গেলো।সাবিনা বেগম নিজে নিজে বলতে লাগলো…
–“ইস,দরদ দেখাচ্ছে সৎ ভাইয়ের জন্যে!”
তূর্যয়ের আড়ালে সাবিনা বেগম তাকে নিয়ে হিংসাত্মক আচরণ করলেও, তূর্যয় এর সামনে সেই মহিলা অনেকটা ভালো থাকার অভিনয় করে। কিন্তু এসব কিছুই তূর্যয়ের অজানা নয়। সে সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করে থাকে।এইযে এতক্ষণ, দরজার ওপাশ থেকে তূর্যয় তার সৎ মায়ের আচরণ এবং কথা শুনেছে।এই মহিলার সামনে তূর্যয় একটুও থাকতে চাই না।কেনো যেনো তার মাঝে অনেক ঘৃনা কাজ করে এই মহিলাকে দেখলে। তবে মাঝে মাঝে যখন মহিলাটা তার সামনে পড়ে যায়,না পারতে তূর্যয় সাবিনা বেগমের কথার জবাব দেই।তূর্যয় যখন সাবিনা বেগমের সামনে থাকে,তখন সাবিনা বেগম অনেক ভালোবাসা দেখায় তূর্যয়ের প্রতি।এই ভালোবাসার সব মিথ্যে,এর কিছুই তূর্যয়ের জানা আছে।কবেই সে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতো,কিন্তু তার মা মারা যাওয়ার একদিন আগেই তাকে একটা ওয়াদা করেছিল।সেখানে তূর্যয়ের মৃত মা তাকে বলেছিল…
–“আমি যদি তোর বাবার আগে মরে যায়,তাহলেও তুই এইখানে থাকবি,এই বাড়িতেই থাকবি।তোর বাবার মৃত্যুর পর,তোর ইচ্ছে হলে এই বাড়ি ছেড়ে যাবি।কিন্তু এর আগে নয়।মনে রাখবি আমি হাসান সাহেবকে বিয়ে করেছি।তুই আমার ছেলে,তাই এই বাড়িতে তোর অধিকার আছে।”
সেদিন তূর্যয় বাধ্য ছেলের মতো মাথা নাড়িয়ে ছিল।আজও সে তার মায়ের ওয়াদার কারণে এই বাড়িতে থাকছে।ধীরে ধীরে পা ফেলে সে তার কাছে থাকা একটা অস্ত্র বের করে তার ড্রয়ারে রেখে ড্রয়ার লক করে দিল। এরপর তার ডান পায়ের বুট জুতা খুলে, বাম পায়ে পরিহিত বুটের চেইন খুলে সেখান থেকে ছোট একটা ধারালো ছুরি বের করে নিল। সেই ছুরি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে সে চললো বাথরুমের দিকে।বেসিনের পানি ছেড়ে তার হাত ধুতে লাগলো সে। হাতের হালকা চোটের জন্যে অল্প জ্বালাপোড়া করছে তার হাতে।কিন্তু সেদিকে তোয়াক্কা না করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সে তার শার্ট খুলতেই,তার গায়ের খন্ড খন্ড মাংসের উপর কিছু দাগ দেখতে পাচ্ছে।এগুলা তার অতীতের দাগ। যেগুলো কখনোই মুছে যাবে না।তূর্যয় তার চোখ বন্ধ করে কিছু চিন্তা করলো।অতীতের আঁধার তার চোখে ভেসে আসতেই সে চোখ খুলে ফেললো।তার শরীরের সেই দাগে অল্প করে পানির ঝাপটা দিলো সে।আপনমনে তূর্যয় বললো…
–” আমার জীবনটা সেদিন আঁধারে ছেয়ে গেলো,যেদিন আমাকে তুমি ছেড়ে চলে গিয়েছিলে মা।এরপর থেকে আমি অনেক সমস্যায় পড়েছি।সব সমস্যাতে আমি বাস্তব দেখেছি আর হিংস্র হতে শিখেছি।আমার এই আঁধার দুনিয়া একান্তই আমার।আমি আমার এই আঁধার দুনিয়ায় বেশ আছি,মা।আমার এই আঁধার না আছে কোনো আলো আসার সুযোগ,আর না আছে আমার এই আঁধার দুনিয়ায় কারো প্রবেশের সুযোগ।”
আয়না থেকে চোখ ফিরিয়ে তূর্যয় বেসিনে জমা পানিতে নিজের মুখ ডুবিয়ে দিলো।
চলবে….