আলো অন্ধকারে পর্ব-০৩

0
365

#আলো_অন্ধকারে (পর্ব ৩)

১.
বৈশাখ মাসের আজ দ্বিতীয় দিন। কিন্তু গরম পড়েছে জ্যেষ্ঠ মাসের। জাফর খান একবার মাথার উপর ঘুরতে থাকা ফ্যানের দিকে তাকান। জোর হাওয়া দিচ্ছে, কিন্তু গরম হাওয়া। এই বাসা সেন্ট্রাল এসি করা। আজ এসি চলছে না। কেন চলছে না সে নিয়ে অবশ্য জাফর খান কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। দিলশাদ কিছুদিন ধরেই এমন করছে, হয়তো খরচ বাঁচাতে।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনে বসা মানুষগুলোর দিকে তাকান – ফ্যাক্টরি ম্যানেজার মহিবুর, ব্যাংকের লোক, দলিল লেখক আর হালিমুজ্জামান সাহেব যিনি আজ ওর ফ্যাক্টরিটা কিনতে এসেছেন। সেদিন ওর ফ্যাক্টরির শ্রমিকেরা যখন বাসার মূল দরজায় ধাক্কা দিচ্ছিল ঠিক তখন পুলিশ এসে উপস্থিত হয়েছিল। ওদের লাঠিচার্জ করে সরিয়েও দিয়েছিল। কিন্তু জাফর খান আর ঝুঁকি নিতে চাননি। ওদের আশ্বস্ত করে বলেছিলেন দু’মাসের মধ্যেই সবার বকেয়া বেতন মিটিয়ে দেবেন। কেন জানি সেদিন খুব ভয় পেয়েছিলেন। আগুনে ওর সব পুড়েছে। কিন্তু এখন যে ওর প্রাণের চেয়ে প্রিয় মানুষদের জীবন সংশয়। কেন যেন আগের সেই সাহসটা আর নেই। ভীতু একজন মানুষ হয়ে গেছেন। তিনমাস হয়ে গেছে এখনও অচল হওয়া হাত পা সচল হয়নি। মাঝখান দিয়ে ওর ফিজিওথেরাপি দিতে জমা টাকাগুলো জলের মতো খরচ হয়ে যাচ্ছে। খুব সংকোচ হয় ইদানিং।

ইতোমধ্যেই সবাইকে চা দেওয়া হয়েছে। একেকজন একেক কথা বলছে। পেঁয়াজের দাম কেন কমছে না, রাস্তায় কী ভীষণ জ্যাম থাকে – এইসব হাবিজাবি কথা। জাফর খান ওদের গল্পের সাথে তাল মেলাতে পারেন না, বার বার খেই হারিয়ে ফেলেন।

ঠিক এমন সময় রেজিস্ট্রি অফিস থেকে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক এসেই তাড়াহুড়ো করে বলেন, ‘কই, দলিল রেডি?’

দলিল লেখক মনিরুল ইসলাম তেলতেলে হাসি দিয়ে বলে, ‘সেই কখন থেকে রেডি কইরা বইসা আছি। আপনি এখন খালি আঙুলের ছাপ নেন।’

লোকটা ব্যাগ থেকে কালির প্যাডটা বাড়িয়ে দেন।

মনিরুল জাফর খানের দিকে এগিয়ে এসে বলেন, ‘স্যার, বাম আঙুলটায় কালি লাগাইয়া এইহানে ছাপ দেন।’

জাফর অসহায় চোখে একবার তাকায়। মনিরুল ঠিক বুঝতে পারে না। এমন সময় ভেতর থেকে দিলশাদ আসতেই সবাই সালাম দেয়। দিলশাদ এসে জাফরের অচল বাম হাতটা তুলে ধরে।

তারপর একবার ওর দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলে, ‘আঙুলের ছাপ যে দিতে হবে। ভেবে দেখো, এখনও সময় আছে। তুমি না চাইলে আজ থাক।’

জমি কিনতে আসা হালিমুজ্জামান ঢোঁক গেলেন, তাড়াহুড়ো করে বলেন, ‘ভাবি, এখন কিন্তু জমির দাম বেশি আছে। আমারও হাতে টাকা আছে। পরে আপনারা বিক্রি করতে চাইলেও কিন্তু আমি নিতে পারব না।’

জাফর এবার কষ্ট করে বলে, ‘দিলশাদ, আঙুলের ছাপ নাও।’

দিলশাদ ঠোঁট কামড়ে চোখের জল আটকান। এমন করে এতদিনের কষ্ট করে গড়ে তোলা ব্যবসাটা বিক্রি করে দিতে হবে?

বুড়ো আঙুলটা কালির প্যাডে চেপে ধরেন। তারপর হলুদ রঙের দলিলের পাতায় কালো ছাপ পড়ে। বুকটা কেঁপে ওঠে জাফরের। হঠাৎ করেই নিজেকে নিঃস্ব লাগে। এতদিন তাও “দিলশাদ গার্মেন্টসটা” কাগজে কলমে ওর ছিল। আজ যে একেবারে অন্যের হয়ে গেল। আজ থেকে ওর কোনো অধিকারই রইল না। সত্যিকারের নিঃস্ব হয়ে গেল ও।

দিলশাদ ওর মনের অবস্থাটা টের পান। একটা হাত শক্ত করে চেপে ধরেন।

ওদিকে হালিমুজ্জামান আঙুলের ছাপ দিয়ে বেশ জোরের সাথে বলেন ‘আলহামদুলিল্লাহ’।

কেউ একজন সবাইকে মিষ্টি খাওয়াতে থাকে। হালিমুজ্জামান একটা বড়ো অংকের চেক অন্য একটা ব্যাংকের নামে সই করে দেন। এই ব্যাংকেই জাফর খানের প্রায় পঞ্চাশ কোটি টাকার মতো ঋণ ছিল।

ব্যাংকের লোকটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলে, ‘স্যার, আমরা নিরুপায়। এতগুলো টাকা লোন ছিল আপনার। আমি তাও চেষ্টা করব আপনার ইন্টারেস্ট এর টাকাগুলো মওকুফ করতে। ব্যাংক তো মূল টাকা পেয়েই গেছে।’

জাফর খান গম্ভীরমুখে মাথা নাড়েন। এই ব্যাংকের লোকদের বিশ্বাস নেই। মূল টাকা নিয়েই ক্ষান্ত দেবে তেমন মনে হয় না।

হালিমুজ্জামান এবার সামনে এসে ঝুঁকে ওর হাত ধরে বলে, ‘ভাই, আপনার জন্য দোয়া করি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন। আপনি মন খারাপ করবেন না। আমার গার্মেন্টস মানে আপনার গার্মেন্টস। যখনই মন চাইবে চলে আসবেন। দুই ভাই মিলে অনেক গল্প করব।’

জাফর হাসার চেষ্টা করেন, কিন্তু সেটা ঠিক হাসির মতো হয় না।

ওরা সব একে একে বিদায় নেন। শুধু মহিবুর থেকে যায়।

সবাই চলে যেতেই মহিবুর দিলশাদের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘ম্যাডাম, ব্যাংকের লোন শোধ করে আর পঞ্চাশ লাখ টাকা আছে। এখান থেকে বকেয়া বেতন মেটাতে প্রায় চুয়াল্লিশ লাখ টাকা লাগবে। আর বাকি ছয় লাখ টাকা আমি আপনার একাউন্টে জমা করে দিচ্ছি।’

বুকটা কেঁপে ওঠে দিলশাদের। মাত্র নগদ ছয় লাখ টাকা হাতে থাকবে! তাও আগে কিনে রাখা সঞ্চয়পত্রে হাত পড়েনি এখনও। দু’জনের নামে মোট কোটি খানেক টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা ছিল। কখনও ভাবেনি এই টাকা থেকে পাওয়া ইন্টারেস্টের উপর ভর করে সংসার চালাতে হবে।

মহিবুর চলে যায়। দিনের আলো নিভে রাতের আয়োজন শুরু হয়। দিলশাদের হঠাৎ করেই মনে হয় ওদের জীবনে অন্ধকার রাত শুরু হলো।

২.
রেণু গুন গুন করে কাঁদছে। দিলশাদ যতই বোঝান ততই রেণুর কান্নার দমক বেড়েই চলছে। তাতে করে ওর গালের রোজ ধুয়ে মুখ মাখামাখি হয়ে যাচ্ছে। এই মেয়ে সারাক্ষণ সেজেগুজে থাকত। বাসায় ওর কাজ ছিল মেহমান আসলে আপ্যায়ন করা। দেখতে শুনতে মেয়েটা স্মার্ট ছিল। শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা রপ্ত করেছে। কিন্তু ওকে এখন আর রাখার সামর্থ্য নেই দিলশাদের। শুধু এই অল্প কাজের জন্য মাসে আট হাজার টাকা বেতন পেত। আর থাকা খাওয়া, জামা কাপড় ফ্রি তো পেতই। কিন্তু ওকে রাখা এখন বিলাসিতা।

দিলশাদ এবার ধমক দেন, তারপর বলেন, ‘রেণু, কান্না বন্ধ কর। কাল তুই এই বাসা থেকে চলে যাবি। আর এখানে তোর এক মাসের বেতন আছে, এটা রাখ।’

রেণু চোখ মুছে বলে, ‘ম্যাডাম, আমারে বেতন দিতে হইব না। শুধু পেটে ভাতে রাইখেন।’

দিলশাদ ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে বলে, ‘তোকে পেটে ভাতে রাখার অবস্থাও আমাদের নেই। কিছু মনে করিস না, বুঝিসই তো কী একটা বিপদ আমাদের।’

রেণু এবার বুঝদারের ভঙ্গিতে মাথা নাড়ে, ‘ম্যাডাম, আমি কাইলই চইলা যামু। আর এই টাকাটা লাগব না। আপনাগো এমন বিপদে এই টাকা আমি নিতে পারি না।’

দিলশাদের হুট করেই রাগ উঠে যায়। সামান্য কাজের মেয়ে ওকে আজ দয়া করছে! কর্কশ গলায় বলেন, ‘টাকা রাখ। এত গরীব হয়ে যাইনি যে তোর কাছ থেকে দয়া ভিক্ষা করতে হবে। কাল সকালে যেন তোকে চোখের সামনে না দেখি।’

রেণু হতভম্ব হয়ে বসে থাকে। ম্যাডাম কখনও রাগারাগি করত না। বিপদে পড়ে ম্যাডামের মাথার গোলমাল হয়ে গেছে।

দিলশাদ রাগে গজগজ করতে করতে বারান্দায় চলে যায়। জাফর অনেকক্ষণ ধরেই বারান্দায় একা বসা। ওর কাছে এসে ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ফেলে বলে, ‘রেণু পর্যন্ত আজ দয়া দেখাতে চায়, দেখেছ কী সাহস!’

জাফর বুকের ভেতর একটা কষ্ট টের পান। ও ডান হাতে দিলশাদের হাত চেপে ধরে অস্পষ্ট গলায় বলেন, ‘তোমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে সব একা সামলাতে।’

দিলশাদ মাথা নেড়ে বলে, ‘সেটা কোনো সমস্যা না। আমি মোটামুটি হিসেব করে ফেলেছি। কিছু খরচ কমিয়ে ফেলতে হবে। ভাবছি আরুশকে সামনের বছর কাছের একটা সরকারি হাইস্কুলে ভর্তি করে দেব। ওর স্কুলের বেতন, টিচারের খরচ প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকার মতো। ভাগ্যিস নওরিনের এ লেভেল শেষ। ওকে বলব পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির চেষ্টা করতে।’

জাফর বিড়বিড় করে বলে, ‘কিন্তু ও ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে পড়তে চেয়েছিল।’

দিলশাদের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়, উঁচু গলায় বলেন, ‘তোমারও দেখি মাথার ঠিক নেই। এই অবস্থায় এখনও তুমি ওসব আকাশ কুসুম ভাবছ?’

রাগ করে উঠে পড়েন। লিভিংয়ে যেতেই মেয়ের মুখোমুখি হন। নওরিন মায়ের মুখ চেয়ে বলে, ‘আম্মু, আমাকে দশ হাজার টাকা দিতে পারবে?’

দিলশাদ চোখমুখ শক্ত করে বলেন, ‘নওরিন, তুমি এখন বড়ো হয়েছ। নিশ্চয়ই আমাদের অবস্থাটা বুঝতে পারছ এখন। আগে মাসে মাসে যে হাত খরচের টাকা পেতে এখন থেকে সেটা আর পাবে না।’

নওরিন মুখ নিচু করে বলে, ‘কিন্তু আম্মু টাকাটা যে আমার খুব দরকার। আমি ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাই করব, তার জন্য এপ্লিকেশন বাবদ এই টাকাটা এখন লাগবে। দাও না প্লিজ।’

দিলশাদের মাথায় যেন আগুন ধরে যায়, চিৎকার করে বলেন, ‘তুই আর তোর বাবার কোনো বাস্তব জ্ঞান নেই। ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে পড়বে! এহ, একটা পয়সা নেই সংসার চালানোর আর সে ইয়েলে পড়বে। কান খুলে শুনে রাখ, দেশে পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষার প্রিপারেশন নে।’

কথাটা বলে দিলশাদ আর দাঁড়ান না। গজগজ করতে করতে রান্নাঘরের দিকে যান।

নওরিনের চোখ জলে ভরে যায়। আম্মু কখনও ওকে বকা দেয়নি। টাকা নিয়ে তো নয়ই। ওরা কী খুব গরীব হয়ে গেছে?

ঠিক এই সময় ওর বন্ধু আহনাফের ফোন আসে, ‘কী রে, তুই এপ্লিকেশন করবি না? কালই তো লাস্ট ডেট। কথা ছিল তুই আর আমি একসাথে একই ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাই করব।’

নওরিনের কেন জানি ভীষণ কান্না পায়। ও ফোনটা কেটে দেয়। ওপাশ থেকে আহনাফ বার বার ফোন দিতে থাকে। কিন্তু নওরিন কিছুতেই ফোন ধরে না।

আরুশ মন দিয়ে পড়ছিল। একটু আগেই আম্মু আপুকে বকেছে। ইদানিং অল্পতেই আম্মু বকা দেয়। আরুশের খুব ভয় করে। তাই ও আজ কিছু বলার আগেই বই নিয়ে বসেছে। পড়তে পড়তে আরুশ হঠাৎ করেই বাইরে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। নিচের লনটা অন্ধকার। রাতে তো লনটায় নানান রঙের আলো জ্বলে। বাতিগুলো নষ্ট হয়ে গেল? আম্মুকে জানানো দরকার। কথাটা মনে হতেই ও উঠে দাঁড়ায়। তারপর খুঁজতে খুঁজতে আম্মুকে রান্নাঘরে দেখতে পায়।

কাছে যেয়ে উদবিগ্ন গলায় বলে, ‘আম্মু, লনের বাতিগুলো জ্বলছে না, বাইরে অন্ধকার।’

দিলশাদ হতাশ চোখে ছেলের দিকে তাকান। এই বাসার কেউ কি বুঝবে না ওরা গরীব হয়ে গেছে?

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘এখন থেকে অন্ধকারই থাকবে। তুই তোর পড়া কর গিয়ে।’

আরুশ আর দাঁড়ায় না। মাথা নেড়ে ওর পড়ার রুমে চলে আসে। আম্মুর মুখে হাসি নেই। সেই যে বাবা অসুস্থ হলো তারপর থেকে আম্মু কেমন যেন হয়ে গেছে।

রাত একটার দিকে নওরিন আহনাফের ফোন ধরে। ওপাশ থেকে ওর ব্যাকুল গলা পাওয়া যায়, ‘কী রে, সেই কখন থেকে ফোন দিচ্ছি, ধরছিসই না। কাল কিন্তু লাস্ট ডেট।’

নওরিন রাগের গলায় বলে, ‘তুই কর, আমি করব না। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

ওপাশ থেকে আহনাফ হা হা করে হেসে ওঠে, ‘কী বললি! তুই দেশে পড়াশোনা করবি?’

নওরিন কঠিন গলায় বলে, ‘আমাদের এখন সেই সামর্থ্য নেই। আজ আম্মুর কাছে মাত্র দশ হাজার টাকা চেয়েছিলাম এপ্লিকেশন করার জন্য। দিতে পারল না। ভেবেছিলাম হয়ে গেলে তখন না হয় ওদেশে যেয়ে স্টুডেন্ট লোন ব্যবস্থা করে ফেলতাম। বাবার অনেক আত্মীয়-স্বজন ওখানে থাকেন। কিন্তু দেখ, মাত্র দশ হাজার টাকার জন্য আমি এপ্লিকেশনটাই করতে পারলাম না। অথচ আমার SAT স্কোর ১৬০০। আমি নিশ্চিত স্কলারশিপ পেতাম।’

ওর শেষ কথাতে দু:খ ঝরে পড়ে।

আহনাফ একটু ভাবে, তারপর বলে, ‘তুই তোর পেপারগুলো নিয়ে আমাদের বাসায় চলে আয়। টাকার ব্যবস্থা আমি করব।’

নওরিন অবিশ্বাস নিয়ে বলে, ‘তুই সত্যিই বলছিস?’

৪.
নওরিনের বুক কাঁপছে। মাত্রই এপ্লিকেশনটা সাবমিট করল। আহনাফ শেষ পর্যন্ত টাকার ব্যবস্থা করেছে। আনন্দে ও আহনাফের গলা জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলে, ‘থ্যাংকিউ মাই লাভ।’

আহনাফ সুন্দর একটা পারফিউমের ঘ্রাণ টের পায়। ওর রেশমের মতো নরম চুলে হাত বোলায়। নওরিন দেখতে একদম পুতুলের মতো সুন্দর। গায়ের রঙ দুধে আলতা। ইচ্ছে করে আদর করে মেরে ফেলে। কথাটা মনে হতেই একটা উত্তেজনা টের পায়। ও শক্ত করে ওকে বুকে চেপে ধরে। তারপর মুখটা কাছে টেনে নিয়ে পাগলের মতো চুমু খেতে থাকে। নওরিন প্রথমে একটু থমকে যায়, তারপর ও সাড়া দেয়। আহনাফ ওর এত বড়ো একটা উপকার করল।

নওরিন টের পায় আহনাফ ওকে ঠেলে বিছানায় শুইয়ে দিচ্ছে। এই রুমের দরজাটা বন্ধ। ও একটু বাধা দেবার চেষ্টা করতেই আহনাফ জোর করে ওকে শুইয়ে দেয়। তারপর ওকে চুমু খেতে খেতে বলে, ‘তোকে একটু দেখব প্লিজ। কতবার ভিডিও কলে দেখতে চেয়েছি, দিস নি।’

এই বলে ও ওর জামা খোলার চেষ্টা করতেই নওরিন ওর হাত ধরে বলে, ‘আজ থাক। আরেকদিন।’

আহনাফের চোখমুখ কেমন লালচে। ও পাগলাটে গলায় বলে, ‘আজকেই। আর বিদেশে পড়তে গেলে তো তখন এমনিতেই তুই আমার বউ হয়ে থাকবি।’

কথাটা বলেই ও আবার ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাগলের মতো বুকে গলায় মুখ ঘষতে থাকে। নওরিন টের পায় ও ধীরে ধীরে দূর্বল হয়ে পড়ছে। একটা অজানা নিষিদ্ধ সুখের হাতছানি ওকে কোথায় যেন নিয়ে যায়।

সেদিন বাসায় ফিরে নওরিন অনেকক্ষণ শুয়ে থাকে। সারা গায়ে একটা আরামদায়ক আলস্য। একটা সুখ ওকে যেন ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়। আবার সেইসাথে একটা কথা মনে হয়, আহনাফ ওকে টাকা দিয়ে সাহায্য করল বলেই কি আজ ওকে ও বাধা দিল না? অথচ এর আগে অনেকবারই এমন আদরের কথা বলেছে কিন্তু ও শক্ত ছিল। তাহলে কি ও আজ টাকার বিনিময়ে..

কথাটা ভাবতেই ওর বমি পায়। মুহূর্তে ওর সব সুখ উবে যায়। একটা অপরাধবোধ ওর সারা শরীরে ঘৃণার পাঁক মাখিয়ে দেয় যেন।

নওরিন সেদিন রাতে অনেকক্ষণ গোসল করে। বার বার ধুয়েও শরীরটা যেন পরিস্কার হয় না। কেন যে আজ ও মায়ের কথা না শুনে ওর বাসায় গেল?

(চলবে)

মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সুবাস
শিমুলতলী, গাজীপুর

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে