আরেকটি বার পর্ব-৩২

0
699

#আরেকটি_বার
#পর্বসংখ্যা_৩২
#Esrat_Ety

উর্বী স্তব্ধ হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। সে বুঝতে পারছে না সে কি করবে।
উচ্ছাস হাতের সিগারেটটা ফেলে পা দিয়ে পিষে দেয়, তারপর উর্বীর দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বলে,”তোমার স্বামীর বাড়িটা চমৎকার। দেখেই বোঝা যাচ্ছে মা’লদার পার্টি। এখন বুঝতে পারছি,এই সুখ,এই স্বাচ্ছন্দ্য রেখে যেতে ইচ্ছে হয়না তাইনা?”

উর্বী থরথর করে কাঁপছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। উচ্ছাস বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,”আমি বেকার তো কি হয়েছে! আমার বাবারও তো অনেক টাকা! সবকিছু আমার। এর থেকে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য পাবে তুমি!”

উর্বী কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,”তুমি এখানে!”

_হ্যা আমি। তোমাকে নিতে এলাম। চলো।
ঠান্ডা গলায় বলে উচ্ছাস।

উর্বী ভীত কন্ঠে বলে,”চলে যাও তুমি দয়া করে।”
তারপর উচ্ছাসের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিতে যায়। উচ্ছাস একহাত দিয়ে আটকায়,উর্বীর দিকে তাকি তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। উর্বী অসহায়ের মতো শুধু এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। তার দৃষ্টি এলোমেলো। ভয়াবহ বিপদের আশঙ্কা করে তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে।

শর্মী একবার তার আন্টির দিকে তাকায়, একবার উচ্ছাসের দিকে। কে এই লোক? আন্টি এমন করছে কেনো!

উচ্ছাস ধীরপায়ে সদর দরজা পেরিয়ে ঘরে ঢুকে পরে। উর্বী আ’ত’ঙ্কি’ত হয়ে বলে,”তুমি চলে যাও। প্লিজ চলে যাও। এখানে কিছু বাড়াবাড়ি করো না। আমার সুখের সংসার টা নষ্ট করে দিও না উচ্ছাস।”

উচ্ছাস উর্বীর দিকে এগিয়ে আসে। উর্বীর পা থেকে মাথা অবধি তাকায়। তারপর বলে,”কে কীট? কাকে কীট বলেছিলে সেদিন ফোনে? আমি কীট? এখন তবে কীটের মতোই আচরণ করবো!”

উর্বী কিছু না বলে হাতের ফোনটার দিকে তাকায়। এরমধ্যে ইলেক্ট্রেসিটি চলে আসে। উর্বী একপলক উচ্ছাসের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে রাওনাফের নাম্বার ডায়াল করে। উচ্ছাস ফোনটা কেড়ে নিয়ে আছাড় মে’রে ফোনটা ফ্লোরে ফেলে দেয়।

উর্বী মুখ চেপে ধরে তাকিয়ে থাকে সেদিকে, তারপর উচ্ছাসের দিকে তাকায়। উচ্ছাসের শীতল দৃষ্টি তার ভেতরটা নাড়িয়ে দিচ্ছে।

শর্মী চেঁ’চি’য়ে বলে ওঠে,”এই কে আপনি! আপনি আন্টির সাথে এমন করছেন কেনো। অভদ্র লোক কোথাকার। বেরিয়ে যান আমাদের বাড়ি থেকে।”

উচ্ছাস শর্মীর দিকে তাকায়, তারপর তাচ্ছিল্য মাখা হাঁসি দিয়ে উর্বীর দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমার পাতানো মেয়ে!”

শর্মী চেঁ’চি’য়ে বলতে থাকে,”বেড়িয়ে যান বলছি! আপনি জানেন আমার পাপা কে?”

উচ্ছাস হাসে। কিছুক্ষণ হেসে উর্বীর দিকে কঠিন দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে বলে,” চলো। ভালোয় ভালোয় বলছি।”

উর্বী পিছু এগোতে থাকে। মাথা নাড়িয়ে আ’ত’ঙ্কি’ত গলায় বলে,”দয়া করো,চলে যাও। আমি বিবাহিতা উচ্ছাস! আমি আমার স্বামীকে ভালোবাসি।”

উর্বী কথাটা শেষ করতে না করতেই উচ্ছাস এসে উর্বীর গলা চেপে ধরে। শর্মী ভয় পেয়ে “দাদু” বলে বিকট চিৎকার দেয়।

রওশান আরা মোনাজাতে ছিলেন। মোনাজাত শেষ করতেই শর্মীর চিতকার শুনে সে জায়নামাজ রেখে উঠে দাঁড়ায়।
নিচে শর্মী চেঁচাচ্ছে। তড়িঘড়ি করে রওশান আরা ঘর থেকে বেরিয়ে সিড়ির কাছে এসে দাঁড়ায়, নিচে তাকাতেই সে হতভম্ব হয়ে যায়। বৌমাকে কেউ গলা চেপে ধরেছে।
শর্মী ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে যাচ্ছে।

রওশান আরা দ্রুত সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে থাকে। উচ্ছাসের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলতে থাকে,
“এই ছেলে কে তুমি? আমার বৌমাকে মা’রছো কেনো? এই ,ছাড়ো। আমি এক্ষুনি পু’লি’শকে ফোন করবো।”

উচ্ছাস উর্বীকে ছাড়েনা, দাঁতে দাঁত চেপে উর্বীর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,”স্বামীকে ভালোবাসি,স্বামীকে ভালোবাসি,স্বামীকে ভালোবাসি। সেই এক কথা! একেবারে জানে শেষ করে ফেলবো।”

উর্বীর চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। উচ্ছাসের হাত থেকে ছাড়া পেতে প্রানপন চেষ্টা করছে সে। রওশান আরা ছুটে এসে উর্বীকে উচ্ছাসের হাত থেকে ছাড়াতে যায়। বৃদ্ধা শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি ব্যায় করেও পারছে না। উচ্ছাস হিং’স্রতার সাথে রওশান আরাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। রওশান আরা সোফার উপর গিয়ে পরে। সোফার হাতলে কপালে বারি খেয়ে কপাল কে’টে যায় তার। মৃদু আর্তনাদ করে ওঠে রওশান আরা।

উর্বী উচ্ছাসের থেকে নিজেকে কোনোমতে ছাড়িয়ে নিয়ে “মা” বলে বি’কট চিৎকার দিয়ে রওশান আরার দিকে ছুটে যায়।

হাঁটু গেড়ে বসে কাঁদতে কাঁদতে বলে,”মা আপনার কষ্ট হচ্ছে?”

শর্মী মুখে হাত চেপে ডুকরে কেঁদে ওঠে। উর্বী উচ্ছাসের দিকে ঘৃণামিশ্রিত দৃষ্টি দিয়ে তাকায়। উচ্ছাস সেই দৃষ্টি অগ্রাহ্য করে এসে উর্বীর চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে সদর দরজার দিকে নিতে চায়, চেঁ’চি’য়ে বলতে থাকে,”চল! চল আমার সাথে। বেশি বাড়াবাড়ি করবি তো আমিও বাড়াবাড়ি করে দেবো ।”

রওশান আরা কপালে হাত চেপে কাঁতরাতে কাঁতরাতে শর্মীকে বলে,”দাদু শিগগির তোমার পাপাকে ফোন দাও। শিগগিরই!”

শর্মী তাই করে, মেঝে থেকে ফোনটা উঠিয়ে রাওনাফের নাম্বার ডায়াল করে, রাওনাফ ফোন রিসিভ করে বলে “হ্যা মামনি বলো!”

শর্মী কেঁদে ওঠে,”পাপা।”

_কি হয়েছে মামনি??
রাওনাফের কন্ঠে উৎকণ্ঠা।

_একটা লোক বাড়িতে ঢুকে আন্টিকে মারছে। খুব মারছে আন্টিকে,জোর করে নিয়ে যেতে চাইছে।

_হোয়্যাট!
চেঁচিয়ে ওঠে রাওনাফ।

শর্মী আর কিছু বলার আগেই উচ্ছাস এসে শর্মীর হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে আবারও মেঝেতে ছুড়ে মেরে শর্মীকে সজোরে একটা চ’ড় মারে। শর্মী চ’ড়ের ধাক্কা সইতে না পেরে মেঝেতে পরে যায়।

উর্বী ছুটে এসে ওকে জরিয়ে ধরে। কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“আম্মু তোমার লেগেছে? কোথায় লেগেছে!”

শর্মী গালে হাত চেপে উচ্ছাসের দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে। তার মাথা ঝিমঝিম করছে।

উচ্ছাস উর্বীকে টানতে থাকে। উর্বী উঠে হাত বাড়িয়ে ছোটো টেবিলের ওপর থেকে একটা পেপার ওয়েট তুলে নেয়, ছুঁড়ে মা’রে উচ্ছাসের দিকে। উচ্ছাসের গায়ে পরলেও তাতে উচ্ছাসের কিচ্ছুটি হয়না। সে এসে আবারও উর্বীর চুলের মুঠি ধরে। উর্বী উচ্ছাসকে ধাক্কা দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে থাকে। তার গায়ে কোনো শক্তি খুজে পায়না সে। শরীরটা নিস্তেজ হয়ে পরছে।

উচ্ছাস উর্বীর পিছু পিছু ছুটে যায়। রওশান আরা বসে বসে কাতরাচ্ছে। খুব আহত হয়েছে সে। অতটুকু ধাক্কা তার বৃদ্ধ শরীরটাকে ঘায়েল করার জন্য যথেষ্ট।

শর্মী তার দাদুর মুখের দিকে একবার তাকিয়ে ছুটে যায় দোতলায়।

মেঝেতে পরে থাকা ফোনে রাওনাফ ফোন দিয়েই যাচ্ছে। কেউ ফোন রিসিভ করছে না।

উর্বী তার ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। সে হাপাচ্ছে। সে এখন কি করবে ? সে বুঝে গিয়েছে উচ্ছাস তাকে ছাড়বে না। ও উন্মাদ হয়ে গিয়েছে। উর্বী কি করবে এখন। শরীরটা তাকে আর সায় দিচ্ছে না, মেঝেতে লুটিয়ে পরে যেতে চাইছে শরীরটা।

উচ্ছাস দরজা ধাক্কাচ্ছে ! গলার স্বর এবার অত্যন্ত স্বাভাবিক করে বলে,
“পাখি। দরজা খোলো প্লিজ। দেখো এসব করে কোনো লাভ হবে না! আমি খালি হাতে ফিরে যেতে আসিনি আজ। এমন করো না, এতে তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে। সোনা প্লিজ দরজা খোলো।”

উর্বী দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে কাঁদতে থাকে। উচ্ছাস দরজায় সজোরে লাথি মারতে থাকে। উর্বী কেঁপে কেঁপে উঠছে।

উচ্ছাস গলার স্বর পাল্টে পুনরায় চিবিয়ে চিবিয়ে বলতে থাকে,”পাখি সেদিন তুমিই বোকামি করেছিলে পুলিশের কাছে আমার নাম না বলে। তোমার প্রত্যেকটা ভুলের শা’স্তি তুমি পাও। এতে আমার কি করার বলো? দরজা খোলো। ঠান্ডা মাথায় বলছি দরজা খোলো। চুপচাপ দু’জনে চলে যাবো। আমার পাখির বদনাম হোক এটা আমি চাই না। আমাকে খাটিও না। দরজা খোলো!”

উর্বী দরজায় ঠেস দিয়েই দাঁড়িয়ে থাকে। হাঁপাতে থাকে সে। পেটে হাত রেখে কাঁদতে থাকে সে।

রওশান আরা সিড়ির রেলিং ধরে ধরে কোনো মতে ওপরে ওঠে,শর্মী ছুটে এসে দাদুকে ধরে। রওশান আরা গিয়ে উচ্ছাসের হাত ধরে অনুরোধ করতে থাকে,
“বাবা তুমি দয়া করো,মেয়েটা অসুস্থ। তোমার ও তো মা বোন আছে। আমি বুড়ো মানুষ তোমার পায়ে পরছি। দয়া করো।”

উচ্ছাস সেকথা কানে নেয়না। সে দরজা ভাঙতে থাকে। রওশান আরা আহত,দুর্বল শরীরে উচ্ছাসকে টানছে। উচ্ছাস অগ্নিদৃষ্টিতে রওশান আরার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তার হাত ধরে টানতে টানতে পাশের ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা বাইরে থেকে লক করে দেয়।

শর্মী ছুটে যায়। উচ্ছাস ঘুরে তার দিকে তাকাতেই শর্মী দমে যায়, থ’ম’কে দাঁড়িয়ে যায়। পা থেকে মাথা ঠকঠক করে কাঁপছে তার।

উচ্ছাস এসে পুনরায় উর্বীর ঘরের দরজায় লাথি দিতে থাকে।
শর্মী এক কোনায় জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে ভয়ে চুপসে গিয়েছে। চোখের পানি মুছে সে মনে মনে দোয়া করছে,”আল্লাহ আন্টিকে বাঁচিয়ে দাও। আমার আন্টিকে বাঁচিয়ে দাও।”

উচ্ছাস দরজা ভেঙে ফেলে। সিটকিনি ভেঙে দরজা খুলে যায়।

উর্বী চ’মকে ওঠে,ঘুরে উচ্ছাসের দিকে তাকিয়ে কেঁদে দিয়ে বলে,”প্লিজ উচ্ছাস। আমি আমার স্বামীকে ভালোবাসি। প্লিজ উচ্ছাস।”

উচ্ছাস এসে আবারও উর্বীর চুলের মুঠি ধরে, দাঁত খিচিয়ে বলে,”চরিত্রহীনা মেয়ে! যখন মন চাইবে জীবনে আসবি,যখন মন চাইবে চলে যাবি তাইনা? ভেবেছিস কি তুই? শোন,যেটা উচ্ছাসের সেটা উচ্ছাসেরই। একদম মে’রে ফেলবো! আমার না হলে একদম মে’রে ফেলবো। চিনিস তো আমাকে তুই বল! চিনিস না?”

উর্বী নিজেকে ছাড়াতে প্রানপন চেষ্টা করছে। উচ্ছাস উর্বীর মুখের দিকে তাকিয়ে খানিকটা সদয় হয়। চুলের মুঠি ছেড়ে দিয়ে বলে,”সরি পাখি। দেখো তোমাকে আবার ব্যাথা দিয়ে ফেললাম। কতো খারাপ আমি। আচ্ছা আর করবো না এমন। এবার লক্ষি মেয়ের মতো চলো চুপচাপ। আচ্ছা আমি ছুয়েছি বলে তুমি এখনও রাগ করে আছো তাইতো? এই প্রমিজ করছি,এভাবে কখনো তোমাকে কষ্ট দেবো না। কখনো না।”

উর্বী কাঁদছে, বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে। পালাবার পথ খুঁজছে। তারপর হুট করে উচ্ছাসকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে দরজার দিকে যেতে নিলে উচ্ছাস উর্বীর শাড়ির আঁচল টেনে ধরে। উর্বী পারেনা সামনে পা বাড়াতে। অসহায়ের মতো এদিক ওদিক তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দরজার পাশের টেবিলের ওপর থেকে ফুলদানি টা উঠিয়ে ছুড়ে মারে উচ্ছাসের দিকে। কিন্তু উচ্ছাসের গাঁয়ে লাগে না। উচ্ছাস ক্ষে’পে গিয়ে উর্বীকে টেনে নিজের কাছে এনে সজোরে একটা চ’ড় মারে।

উর্বী নিচে পরে যায়। উচ্ছাস উর্বীর চুল ধরে উঠিয়ে আবার একটা চড় মারে। উর্বীর ঠোঁট কেটে রক্ত ঝরতে থাকে। এভাবে মারতেই থাকে উচ্ছাস। আর হিংস্র হয়ে বলতে থাকে,”তেজ দেখাস আমার সাথে! তেজ! ফালতু মেয়ে।”

উর্বী আর সহ্য করতে না পেরে “আল্লাহ” বলে বিকট চিৎকার দেয়। উচ্ছাস তবুও থামছে না। রেগেমেগে আরো একটা চ’ড় মারতেই উর্বী ছোটো একটি সেন্টার টেবিলের উপরে পরে যায়। যার ফলে পেটে ভীষণ আঘাত পায় উর্বী। ব্যাথায় কঁকিয়ে ওঠে সে।

শর্মী ছুটে গিয়ে দরজা খুলে ফ্লোরে পরে থাকা রওশান আরাকে ধরে। চিৎকার দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,”ও দাদু। তুমি ওঠো না। আন্টিকে খুব মারছে।”

রওশান আরা হাপাচ্ছে। হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,”তুমি গিয়ে ফোনটা আনো। ত্রিপল নাইনে ফোন দিতে হবে। যাও দাদু।”

রাওনাফ শেষ বারের মতো উর্বী,শর্মী,রওশান আরার ফোনে ফোন দিতে চেষ্টা করে,শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে পুলিশ স্টেশনে ফোন লাগায়। তার হাত কাঁপছে। বড্ড অসহায় লাগছে নিজেকে। সামিউল এখনও বাড়িতে ফেরেনি। রাওনাফ দ্রুত ওয়ালেট তুলে পকেটে রাখে, অনলাইনে রাজশাহী টু ঢাকা প্লেনের টিকিট কেটে অন্তরাকে ডাকতে থাকে। অন্তরা ছুটে আসে । রাওনাফ লম্বা লম্বা পা ফেলে ফ্ল্যাটের সদর দরজার কাছে যেতে যেতে বলে,”আমি ঢাকা ফিরছি। ন’টা বিশে ফ্লাইট।”

_এই রাতে ভাইয়া!
অবাক হয় অন্তরা।

_ইটস আর্জেন্ট!
গলা কাঁপছে রাওনাফের। মস্তিস্ক কাজ করছে না তার। রুদ্ধশ্বাসে বেরিয়ে যায় ফ্ল্যাট থেকে,যেতে যেতে সবার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতে থাকে সে।

উচ্ছাস উর্বীর যন্ত্রনায় নীল হয়ে যাওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে থেমে যায় ‌। তারপর ক্ষণবাদেই এসে চুলের মুঠি ধরে, উর্বী উচ্ছাসের দিকে তাকিয়ে হাত জোর করে বলতে থাকে,”উচ্ছাস তুমি আমাকে এভাবে মেরো না,আমি মা হতে চলেছি উচ্ছাস,তুমি আমাকে এভাবে মেরো না।”

উচ্ছাস উর্বীর দিকে তাকিয়ে থাকে। উর্বী কাঁদছে, কাঁপছে, হাপাচ্ছে। ধীরে ধীরে উচ্ছাস উর্বীর চুলের মুঠি থেকে হাত সরিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,”কি বললে!”

উর্বী ফুঁপিয়ে উঠে আঁটকে আঁটকে বলে,”আমি প্রেগনেন্ট।”

উচ্ছাস উর্বীর দিকে তাকিয়ে থাকে। উর্বী তার দিকে তাকিয়ে কাঁদছে, কেঁদে কেঁদে বলছে,”বাচ্চাটাকে অন্তত দয়া করো তুমি। তোমার দোহাই লাগে।”

উচ্ছাস কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উর্বীর পাশে বসে পরে। সে তার উর্বীকে দেখছে। তার উর্বী অন্য কারো বাচ্চার মা হতে যাচ্ছে!

উর্বী বলে,”চলে যাও তুমি উচ্ছাস। ছেড়ে দাও আমায়। আমাকে বাঁচতে দাও। বাচ্চাটাকে বাঁচতে দাও।”

উচ্ছাস একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বাঁকা হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। তারপর উর্বীর হাত ধরে, এবং আবারও উর্বীর হাত ধরে টানতে থাকে, এবং অত্যন্ত ঠান্ডা গলায় বলে,”সমস্যা নেই,তোর এই ভুলটাও ক্ষমা করলাম। এই আবর্জনা ন’ষ্ট করে ফেলবো আমরা।চল।”

উর্বী আহত চোখে উচ্ছাসের দিকে তাকায়। ঘৃণা মিশ্রিত কন্ঠে চেঁ’চি’য়ে বলে,”উচ্ছাস!”

উচ্ছাস উর্বীর দিকে তাকায়, দাঁত খিচিয়ে বলে,
_কেনো? বাচ্চা ন’ষ্ট করিসনি এর আগে? এটাও করবি । আমার বাচ্চা এ্যা’ব’র্শন করে এখন পরপুরুষের বাচ্চা পেটে নিয়ে বসে আছিস। চরিত্রহীনা মেয়ে।

একটু থেমে উচ্ছাস বলে,”এটা ন’ষ্ট করবি। তোকে বিয়ে করবো, তারপর যতগুলো বাচ্চা লাগবে তোর,দেবো। চল।”

উর্বী জোরে জোরে কাঁদতে থাকে। শরীর তাকে আর কতক্ষন সাপোর্ট দেবে বুঝতে পারছে না। মনে হচ্ছে এক্ষুনি সে পরে যাবে।

রওশান আরা নিজের ঘরে গিয়ে ফোন হাতরে খুজে বের করে ট্রিপল নাইনে ফোন দেয়। তাকে তার বৌমাকে বাঁচাতে হবে।

তারপর ঘর থেকে সে বেরিয়ে দেখে উচ্ছাস উর্বীকে টেনে হিচড়ে ঘর থেকে বের করছে।
উর্বী কেঁদে যাচ্ছে। কেঁদে কেঁদে আল্লাহ কে ডাকছে,”আল্লাহ আমার বাচ্চাটার যেনো কোনো ক্ষতি না হয়।”
উচ্ছাস তা শুনেও শুনছে না। হিং’স্রতা সবটুকু সে দেখিয়ে দিচ্ছে। বলিষ্ঠ হাতে দুর্বল উর্বীকে টানছে।

শর্মী গিয়ে তার আন্টিকে ছাড়াতে চায়। উচ্ছাসের শক্তির সাথে সে পেরে ওঠে না। রওশান আরাও যায়। তাকে আবারো উচ্ছাস ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।

এভাবে কিছুক্ষণ তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হতে থাকে।

ধস্তাধস্তি করতে করতে উর্বীকে উচ্ছাস সিঁড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসে।
শর্মী এসে আকরে ধরে থাকে উর্বী কে। সে কাঁদছে উর্বীকে আকরে ধরে। উর্বীর মাথা ঘুরছে, চোখের সামনে সবকিছু প্রায় ঘোলাটে দেখছে। শর্মী হঠাৎ উচ্ছাসের হাত খামচে ধরে তার হাত কামড়ে দেয়। এক পর্যায়ে উচ্ছাস শর্মীকে ধা’ক্কা মে’রে ফেলে দেয়। শর্মী টাল সামলাতে না পেরে সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পরে। উর্বী আর্তনাদ করে উঠে তাকিয়ে থাকে নিচের দিকে। অতো উঁচু সিঁড়ি দিয়ে পরে যাওয়ায় শর্মী মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়ে সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যায়।
উর্বী বিকট চিৎকার দিয়ে ওঠে,”শর্মী” বলে।
রওশান আরা “দাদু” বলে কান্নায় ভেঙে পরে।

উর্বী উচ্ছাসকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নামছে, চেঁ’চি’য়ে বলছে,”আল্লাহ তুমি আমার মেয়েটার কোনো ক্ষতি হতে দিওনা, আল্লাহ।”

রওশান আরাও নামছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে।

উর্বী শর্মীকে এসে ধরে। শর্মীর মাথার পেছনের দিক থেকে রক্ত ঝরছে। উর্বী শর্মীর রক্তাক্ত মাথাটা কোলে রেখে তরপাতে থাকে ‌। সে যেনো গলা কাটা মুরগী। গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে কাঁদতে থাকে। যেন তার কন্ঠনালী ছিঁড়ে যেতে চাইছে।

রওশান আরা রক্ত দেখে ধপ করে বসে পরেন। আল্লাহ তার মাসুম নাতনি টিকে এতো কষ্ট দিতে পারলেন!

চলমান….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে