আরশিকথা -১৬
শুভ্র কোথায়, প্রভার মনে হলো সারা পৃথিবী কাঁপছে। ওর কিছু হয় নি তো!
দীপ্র মাথা ফাঁকা করে ফেলল, যে কোনো কিছু হতে পারে! সবার আগে ওখানকার লোকাল থানায় ফোন করতে হবে। রওনা হওয়া দরকার খুব দ্রুত! রাতেই বলছিল প্রয়োজনে হসপিটালে যাবে, কার কোন কথা কোন দিক থেকে সত্য হয়ে যায়, কেউ বলতে পারে না! একটা কথা বলার আগে একশবার ভাবা প্রয়োজন।
এসব কথা এখন ভেবে লাভ নেই, প্রভার কল ঢুকেছে।
দীপ্র আমি যাব- কল ধরেই প্রভা বলল।
দীপ্র বলল, একটা অচেনা জায়গায় তোকে নিয়ে যাওয়া বোকামি হবে!
প্রভা বলল, আমি অফিস থেকে গাড়ি নিয়ে নিচ্ছি!
দীপ্র ঠান্ডা মাথায় বলল, প্রভা, আমি জানি তুই স্ট্রং, এটা প্যানিক করার সময় না।
প্রভাও স্থির হয়ে বলল, আমি প্যানিক করছি না।
প্রভা আর দীপ্র বের হয়ে গেল দ্রুতই।
প্রভা অনুভূতি শূন্য হয়ে আছে, শুভ্র! যে কিনা প্রভার বুকের ভেতর প্রতি ইঞ্চি জায়গা জুড়ে রয়েছে, সে আর আছে কি নেই, সেটা প্রভা জানে না! গতকালও দেখা হয়েছিল, তখন কেন প্রভা বলে নি, শুভ্র আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি! সময় থাকতে কেন আমরা প্রিয় মানুষটাকে ভালোবাসি বলি না! কেন!
প্রভার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, দেশে আসার পরে শুভ্রর সাথে শুধু এটিচুডই দেখিয়েছে প্রভা। যেটুকু কাছে এসেছে, শুভ্র জোর করে এসেছে! কেন একটু নরম হলো না প্রভা! শুভ্র তো বারবার বোঝাতে চেয়েছে, প্রভাকেই ভালোবাসে শুভ্র!
দীপ্র প্রভার হাতটা ধরে আস্তে বলল, কাঁদিস না প্রভা। কিচ্ছু হবে না।
দীপ্রর কথায় কোনো ভরসা পেলো না প্রভা৷
★★
স্পটে পৌঁছে শুভ্রর ফোনে কল দিয়ে কন্ট্রাক্ট করল দীপ্র। একজন লোক এগিয়ে এলো, সাদা জোব্বা পরা। মাথায় পাগড়ি। স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষক তিনি। ফোনটা কুড়িয়ে পেয়েছেন৷ ওনার সহযোগিতায় ওরা থানায় পৌঁছে শুভ্রর গাড়িটা দেখতে পেলো।
থানার অফিসারকে পাওয়া গেল না। ভেতর থেকে জানা গেল, এখানে দুটো হাসপাতাল আছে, সেখানেই আহত সবার ট্রিটমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। এখন অবধি কেউ মারা যায় নি।
প্রভা দম বন্ধ করে হাসপাতালে ছুটলো। দীপ্র কিছুটা নিশ্চিত, এখানে হয়তো শুভ্রকে পাওয়া যাবে, কিন্তু ভাইয়া কারো কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে একটা ফোন কেন দিলো না! এজন্য নিশ্চিন্ত হতে পারছে না। প্রথম হাসপাতালে শুভ্রকে পাওয়া গেল না৷ ওর ছবি দেখেও কেউ কিছু বলতে পারল না।
পরের হাসপাতালেও কেউ শুভ্রকে চিনতে পারল না।
এদিক ওদিক অনেক ছোটাছুটি করেও কোনো লাভ হলো না।
প্রভা হতাশ হয়ে বসে পড়ল। দীপ্রর নার্ভাস লাগছে, কোথায় ভাইয়া!
প্রভার সামনে রিসিপশন ডেস্ক, ডেস্কের পেছনে গ্লাস লাগানো। হঠাৎ প্রভার চোখ গেল, মাথায় ব্যান্ডেজ করা শুভ্র। প্রভা জোরে চিৎকার করে উঠল, দীপ্র, ওই যে!!
দীপ্র দ্রুত হেঁটে গিয়ে শুভ্রকে জাপটে ধরল।
শুভ্র একটু হেসে বলল, ছাড় তো, কি পাগলামি শুরু করলি!
-তুই একটা ফোন কেন দিস নাই!
-আমার ফোন কোথায় ছিটকে গেল, খুঁজে পেলাম না। মাথায় চোট লেগেছে, এখানে প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট নেওয়ার পরে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। এরপর বের হয়েই তো তোকে পেয়ে গেলাম!
দীপ্র আস্তে বলল, প্রভা এসেছে!
শুভ্র এগিয়ে গেল প্রভার কাছে৷ প্রভা ওয়েটিং চেয়ারে বসে কাঁদছে। শুভ্র হাঁটু গেড়ে বসে বলল, কাঁদছ কেন!
প্রভা হাত দিয়ে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে উঠল।
শুভ্র প্রভার হাত টেনে নামিয়ে চোখ মুছিয়ে দিলো।
-এখন বুঝতে পারছ, আমি তোমার কে?
প্রভা কাঁদতে কাঁদতেই বলল, কেউ না! তুমি আমার কেউ না শুভ্র!
(শেষ)
শানজানা আলম
গল্পটা সত্যিই খুব ভালো লাগছে,,,,,,,, তবে পর্ব গুলি খুব ছোট ছোট হয়ে গেছে,,,,,,