আরশিকথা পর্ব-১১

0
800

আরশিকথা -১১

খালামণির বাসায় ঢুকে ফ্রেশ হয়েছে প্রভা। ভাত নিয়ে বসে আছে খালামণি, ফোন বেজেই চলেছে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে প্রভা দেখল৷ একটা আননোন নম্বর। তবুও কল ব্যাক করল, কত জরুরি ফোনই তো হতে পারে।

ফোন রিসিভ করার পরে ওপাশ থেকে বলল, প্রভা, আমি..

শুভ্র!

হ্যা।

বলেন কি প্রয়োজন?

প্রভা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে, আমার কথাগুলো একবার শোনো।

বলেন।

এভাবে বলা যাবে না, কোথাও বসি চলো?

আপনার আমার সাথে কি এমন কথা থাকতে পারে আমি বুঝতে পারছি না।

কথা তো আছেই প্রভা, কথা না থাকলে তুমি আমার কাছে আসতে পারতে না।

দেখুন, আমি তো মানুষ, মানবিক অনুভূতি আমারও আছে। একটা কথা তো অস্বীকার করার উপায় নেই, আমি আপনাকে পছন্দ করতাম!

পছন্দ! আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা শুধু পছন্দ অবধি ছিল!

না, আরো অনেক গভীর ছিল, বোকা প্রভা সামনে পেছনে না ভেবে নিজেকে উজার করে ভালোবেসেছিল। সে ভালোবাসার জন্য তাকে অনেক বেশি কাঁদতে হয়েছে। আজ আপনি আর আমি আলাদা দুজন মানুষ! হ্যা, সামনে আসার পরে আমিও ইমোশনাল হই, আপনিও নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা করেন না, আপনারও তো বান্ধবী আছে, দেখলাম তো, জামাকাপড় ছাড়াই আপনার সাথে গল্প করছিল!

সুযোগ পেয়ে প্রভা খোঁচা দিয়ে দিলো।

প্রভা, তুমি এখনি বিয়ের সিদ্ধান্ত নিও না। আমার সাথে একটু দেখা করো প্লিজ! আমাকে এক্সপ্লেইন করার সুযোগ দাও।

সুপ্রভা বলল, আজ বা কাল পারব না। তারপরে।

অবশ্যই তোমার ওই পাত্রের সাথে দেখা করার আগে।

না। আমি আগে দেখা করব, তারপরে।

প্রশ্নই আসে না, তুমি আগে আমার সাথে দেখা করবে, আমার সাথে কথা বলবে!

না। আমি যখন না বলেছি, তখন না!

শুভ্র বলল, ঠিক আছে। তোমার সময় হলে, আমাকে জানিও। আমি অপেক্ষা করব।

দীপ্র ঢুকেছে রুমে। শুভ্রকে জিজ্ঞেস করল, কার সাথে কথা বলছিলি, এত সিরিয়াস হয়ে গেলি কেন?

এমনি! প্রভা দেখা করতে যাবে কবে৷ জানিস?

কার সাথে?

জুবায়ের, সফটওয়ার ইন্জিনিয়ার।

ওহ৷ কাল বিকেলে। আমাকেও যেতে বলেছে! কেন?

কোথায় যাবে?

একটা রেস্টুরেন্টে, ধানমন্ডিতে।

শুভ্র মাথা চুলকে বলল, আমারও একটা মিটিং আছে ওইদিকে, এক বন্ধু খুব করে ধরেছে। ওখানেই আসতে বলি, তোকে নিয়ে গেলাম, একসাথে দুই কাজই হবে তাহলে।

অন্য কোথাও বস, তোকে দেখলে প্রভা যদি লজ্জা পায়।

শুভ্র মনে মনে ভাবল, হাঁদা একটা, এতদিনেও বুঝলি না প্রভা আমাকে কি চোখে দেখে!

মুখে বলল, কোনো সমস্যা নেই, আমি তোদের সামনে যাব না। আশপাশে থাকব!

★★★

প্রভা ঠিক করে নিয়েছে, জুবায়েরকে আগেই ওর প্রেমের কথাটা বলে দিবে। মাথার মধ্যে এসব রেখে প্রভা বিয়ে করতে পারবে না।

রেস্টুরেন্টে বসে প্রভা ভেবে নিলো, একটু আলাদা বসে জুবায়েরের সাথে কথা বলে নিবে।

দীপ্র ঢুকল প্রভার পরে। প্রভাকে দেখে হাত নাড়ল দীপ্র।

প্রভা উত্তরে হাসতেই দেখল, পেছনে শুভ্র। একটা হাফপ্যান্ট আর হোয়াই টি শার্ট পরে চলে এসেছে, টি শার্টে লেখা, আই লাভ ইউ!

প্রভা হতভম্ব হয়ে গেল, এখানে শুভ্র আসার মানে কি! দীপ্র এত গাধা কেন!

তবে শুভ্র ওদের সাথে বসল না। রেস্টুরেন্টের স্পেস অনেক বড়। শুভ্র বসল একদম রাস্তার দিকে, প্রভা যেখানে বসেছে, সেখান থেকে শুভ্রকে দেখা যাচ্ছে।

এ্যাই, তোকে একা আসতে বললাম না?- প্রভা বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল দীপ্রকে।

ওহ, ভাইয়া আমার সাথে আসে নি, ওর বন্ধু আসবে।

এখানে আসবে?

হু।

প্রভা আর কথা বলল না। আঁড়চোখে দেখল দীপ্র বেশ ফুরফুরে মেজাজে কফি খাচ্ছে। জুবায়ের এলো বেশ কিছুক্ষণ পরে। সমস্যা হলো, প্রভার চোখ একটু পর পর
শুভ্রর দিকে চলে যাচ্ছিল। ওদের কথা বলার সুযোগ করে দিয়ে দীপ্র উঠল।

জুবায়ের জিজ্ঞেস করল, আর কারো আসার কথা?

প্রভা বলল, না। কেন?

তুমি এদিক ওদিকে তাকাচ্ছ তাই।

প্রভা মনে মনে বলল, আসার কথা না, তবুও এসে বসে আছে, এমন হ্যাংলা ছ্যাচড়া আগে ছিল না। এত ঢং করছে এখন, তাহলে ছেড়ে চলে গিয়েছিল কেন! কেন এতগুলো বছরে একবারো কল করেনি!

প্রভা জুবায়েরকে বলল, আপনার সাথে আমার কিছু ব্যক্তিগত কথা বলার আছে।

বলো।

আমার একটা এ্যাফেয়ার ছিল!

একটা!! আমার তো।কয়েকটাই ছিল!

কয়েকটা!!

হুম।

আপনি সিরিয়াসলি নিচ্ছেন না, আমি মনে করি বিয়ের আগে আপনাকে আমার সম্পর্কে সব জানিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। কেউ আপনাকে না বললেও, আমি মন থেকে ভালো থাকতে পারব না।

বাই এনি চান্স, সে কি এখানে আছে?

প্রভা চমকে উঠল! শুভ্রর কথা জুবায়েরের বুঝতে পারার কথা না। ও নিশ্চয়ই দীপ্রর কথা ভাবছে।

না না, দীপ্র আমার বন্ধু।

আমি ওর কথা বলি নি!

তাহলে?

সামনের টেবিলে একজন তোমাকে খুব আগ্রহ করে দেখছিল, তুমিও দেখলাম এদিক ওদিকে তাকাচ্ছ। তাই জিজ্ঞেস করলাম।

প্রভা চারপাশে তাকিয়ে কোথাও শুভ্রকে দেখল না।

তারপর বলল, না, এখানে কেউ নেই। আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি।

প্রভা ওয়াশরুমে ঢুকতে গিয়ে দেখল, শুভ্র স্মোকিং জোনে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে।

চলবে

শানজানা আলম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে