আরশিকথা- ১০
প্রভার জন্য কোক নিয়ে এসেছে দীপ্র। শুভ্র বের হয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে আবার সিগারেট ধরিয়েছে। প্রভাকে কিছুতেই বলতে পারছে না, তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না প্রভা, আমার ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ তুমি প্লিজ ক্ষমা করে দাও, আমার কাছে ফিরে এসো! অভিমানের পাহাড় জমিয়েও তুমি আমাকে ভালোবাসো, আমি এই ভালোবাসাটা ফিরে চাই প্রভা!
দীপ্র প্রভাবে কোক দিয়ে বলল, এটা নে, এটা তো খাবি!
প্রভা বলার আগেই শুভ্র বলল, না। ও এখন আর কিছু খাবে না।
-আর কিছু মানে, তোরা কিছু খেয়েছিস? নেমেছিলি!
প্রভা নিচু হয়ে ফোন স্ক্রল করছিল।
শুভ্র, ইতস্তত করে বলল, পানি খেয়েছি। আর কিছু নয়।
দীপ্র গাড়িতে ঢুকে শুভ্রর পাশে বসল। স্টার্ট করার আগে প্রভা হঠাৎ একটা ছেলের ছবি বের করে দীপ্রকে ফোনটা দিলো।
দীপ্র বলল, এটা কে?
-জুবায়ের।
-মানে?
-সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, বলেছিলাম তোকে। এনগেজমেন্টের দিন হয়তো নেক্সট উইকে ঠিক হবে।
-মাই গড, তুই এখন বলছিস এটা! কংগ্রাচুলেশনস, অবশেষে সেটল করছিস! এতদিন পেটে নিয়ে বসেছিলি। বলিস নি কেন?
-সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম ওকে নিয়ে এসে। কিন্তু এখন মনে হলো, তোকে দেখাই!
শুভ্র আঁড়চোখে নয়, ভালো করে তাকিয়ে দেখে প্রভার দিকে তাকিয়ে বলল, কনগ্রাটস সুপ্রভা!
ব্যস এটুকুই। পুরো পথে দীপ্র বকবক করলেও ওরা আর কেউ কথা বলল না। মনে মনে কথা না হলেও শুভ্রর মনে তোলপাড় হয়ে যেতে লাগল!
প্রভা বিয়ে করবে বলে ঢাকায় যাচ্ছে। তাহলে আমাকে কেন এভাবে চুমু খেল! তখন তো মনে হয়েছে, আমার আগের প্রভা! যেমনটা হয়েছিল, সেই প্রথমবার!
কি প্রচন্ড বৃষ্টি ছিল সেদিন! তবুও প্রভা এসেছিল বাসায়। কেউ ছিল না, মা সেদিন দীপ্রকে নিয়ে বড়খালার বাসায় গিয়েছিল।
শুভ্রর সাথে প্রায় বছর পেরিয়েছে তখন সুপ্রভার সম্পর্কের। কেউ জানে না দুজনে প্রেম করছে বছর ধরে।
-আমাদের বাসায় আজ কেউ থাকবে না প্রভা!
-ওহ তাই! তুমি একা?
-হ্যা! আসবে?
-আমি!!
-তোমাকে একটা মিষ্টি খাওয়াতে চাই, এটা আসলে বাসার বাইরে আনা সম্ভব না।
সুপ্রভা বলল, আচ্ছা আসব!
কলিংবেল বাজার সাথে সাথেই দরজা খুলে দিলো শুভ্র।
-এসো। কি বলেছ বাসায়?
-বলেছি চৈতির বাসায় যাচ্ছি। দুপুরে থাকব।
-খুঁজতে যায় যদি।
সুপ্রভা তাকিয়ে বলল, গেলে যাবে, না পেলে ফোন করবে, কিছু একটা বলে দিব।
ভয় পাও না তুমি?
কিসের ভয়, ধরা পড়ে গেলেই ভালো, সবাই আমাদের বিয়ে দিয়ে দিবে তাহলে!
বিয়ে করতে চাও আমাকে?
মানে কী, তুমি চাও না?
শুভ্র মাথা চুলকে বলল, খুব চাই, আমার বউ হবে প্রভা!
সুপ্রভা ব্যাগটা রেখে শুভ্রর কাছাকাছি চলে গেল৷
কি যেন খাওয়াবে বলেছিলে?
শুভ্র বলল, তুমি ভীষণ দুষ্টু প্রভা!
প্রভা কাছাকাছি আসার পরে শুভ্র হঠাৎ প্রভার গালে আলতো করে একটা চুমু খেলো। কিন্তু সুপ্রভা! সে শুভ্রকে ছাড়ল না। ওর পুরু ঠোঁট শুষে নিলো নিজের তুলতুলে গোলাপি ঠোঁট দিয়ে।
আনাড়ি প্রভার চেষ্টা দেখে শুভ্র বলল, এভাবে না প্রভা।
প্রভা সরে গেল না, শুভ্রর গলা জড়িয়ে বলল, তাহলে কিভাবে?
শুভ্র প্রভার কানে ফিসফিস করে বলল, আমি শিখিয়ে দিচ্ছি তোমাকে।
তারপর……
শুভ্রর ঠোটে ঠোট রেখে ওর মাথা পিছনে দুহাত দিয়ে নেশাগ্রস্তের মত আঁকড়ে ধরেছিল প্রভা। নিঃশ্বাস আটকে না আসা অবধি ছাড়ে নি৷
ধুর, কি সব ভাবছে শুভ্র! শুভ্র হাসল মনে মনে। একদম একই রকম অভিমানী ক্ষ্যাপা আছে। মনে হচ্ছিল, চুমু খেয়ে রাগ কমিয়ে দিই! তাই কাছে গিয়েছিল হুট করেই!
শিট, আবারও একই রকম ভাবছে শুভ্র! আর প্রভা, বিয়ের কথা মাথায় রেখেও এত কাছে চলে এলো!
এটা কি ওর প্রতিশোধ নাকি প্রেম!
চলবে
শানজানা আলম