#আমি_তোমারি_সনে_বেঁধেছি_আমারো_পরাণ💙(৮)
#Maisha_Jannat_Nura(লেখিকা)
(১৪)
পশ্চিমাকাশে ক্লান্ত সূর্য ধীরে ধীরে ঢলে পড়তে পড়তে সন্ধ্যা হওয়ার জানান দিচ্ছে। আমজাদ বললেন….
—“সন্ধ্যা হয়ে আসছে। বাড়ি ফিরতে হবে তো তোমাদের নিশ্চয়ই।”
মেহরিন শান্ত স্বরে বললো…
—“জ্বি চাচা।”
আমজাদ তৎক্ষনাৎ একজন গার্ডসকে ডাকলেন। গার্ডসটি তার সামনে এসে দাঁড়ানো মাত্রই আমজাদ বললেন…
—“মেহরিন মা আর রিজওয়ান বাবাকে গাড়ি করে ওদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে এসো। আমি আরফাকে নিয়ে এখানেই বসছি আরো কিছুসময়।”
রিজওয়ান বললো…
—“চাচা, এই পার্ক থেকে আমাদের বাড়ি যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না। হেঁটেই যেতে পারবো না। আপনার শরীর ভালো না। এখানে বসে আর অপেক্ষা করতে হবে না আপনাকে।”
—“গুরুজনরা কিছু বললে সেটা হাসিমুখে মেনে নিতে হয় বাবা।”
—“কিন্তু চাচা..!”
—“কোনো কিন্তু নয়। আচ্ছা তোমাদের যখন আমার শরীর নিয়ে এতো দুশ্চিন্তা হচ্ছে তখন আমরাও যাবো তোমাদের সাথে। তোমাদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে নিজ বাসায় চলে যাবো। তাহলে তো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না!”
আমজাদের এরূপ কথায় মেহরিন আর রিজওয়ান এবার আগের তুলনায় কিছুটা সন্তুষ্ট বোধ করে। অতঃপর ওরা সবাই পার্ক থেকে বেড়িয়ে গাড়িতে উঠে বসে। ওদের পিছনের গাড়িতে গার্ডসরা আছে। মিনিট ১৫ এর ভিতরেই গাড়িটি রিজওয়ানের বাড়ির মেইন গেইটের সামনে ব্রেক কষে। রিজওয়ান আর মেহরিন হাসিমুখে আমজাদ আর আরফার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। অতঃপর আমজাদ ও তাঁর গার্ডসদের গাড়িও তাদের নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
ছাদ থেকে নিজেদের শুকনো ও আধভেঁজা কাপড়গুলো উঠাচ্ছিলো শেফালি আর ঊর্মিলা। তাই এতোসময় ধরে পুরো বিষয়টাই লক্ষ্য করেছে ওরা। ঊর্মিলা শেফালির পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো….
—“ভাবী, এতো বড় গাড়ি করে ওদের দু’জনকে বাড়ির সামনে কে নামিয়ে দিয়ে গেলো বলো তো! এমন তো এর আগে কখনও হতে দেখি নি।”
শেফালি ভাবুক স্বরে বললো….
—“আমিও তো সেটাই ভাবছি। চল নিচে যাই। তাহলেই জানতে পারবো।”
—“এখন ওদের ভাব যেই পরিমাণে বেড়ে গিয়েছে তোমার মনে হয় আমাদের বলবে ওরা!”
শেফালি একপলক ঊর্মিলাকে দেখে কোনো প্রতিত্তুর না করে পরপরই নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে সামনের দিকে হাটা ধরে।
(১৫)
চৌধুরী মেনশনের মূল গেইট দিয়ে আমজাদ চৌধুরীর গাড়ি ভিতরে প্রবেশ করে। কাঙ্ক্ষিত স্থানে গাড়ি থামানো মাত্র আরফাকে নিয়ে গাড়ি থেকে নামেন আমজাদ। অতঃপর ছোট্ট আরফার হাত ধরে মূল দরজা ভেদ করে ভিতরে প্রবেশ করতেই ড্রয়িং প্লেসে সোফায় আরহামকে বসে থাকতে দেখে আমজাদ একজন মহিলা সার্ভেন্টকে ইশারা করেন। মহিলা সার্ভেন্টটি আরফাকে নিয়ে ওর রুমের উদ্দেশ্যে চলে যায়। ৩০ বছর বয়সী আরহামের দৃষ্টি তার হাতে থাকা ফাইলের উপরেই সীমাবদ্ধ দেখে আমজাদ লম্বা করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে আরহামের পাশে এসে বসে শান্ত স্বরে বললেন….
—“নিজের দায়িত্ব থেকে আর কতো কাল নিজেকে দূরে রাখবে তুমি আরহাম!”
নিজের দৃষ্টি ফাইলের উপরেই স্থির রেখে আরহাম বললো…
—“আমার কোন দায়িত্ব থেকে নিজেকে দূরে রাখার কথা বলছেন আপনি বাবা?”
—“আমার কথার মানে যে তুমি খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছো তা বুঝতে আমার এতোটুকুও সমস্যা হচ্ছে না আরহাম।”
—“অহেতুক, অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে আমার সাথে কথা বলতে না আসার কথা আপনাকে আমি বহুবার বলেছি। আপনি আমার কথা শুনলেই পারেন।”
—“আরফা ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। ভালো-মন্দের মাঝে পার্থক্য বুঝতে শিখছে। ওর ছোট্ট মনে তোমার এমন আচারণের কেমন প্রভাব পড়তে পারে সে সম্পর্কে একটা বারও চিন্তা করে দেখেছিলে তুমি?”
—“আপনার আদরের নাতনী দুনিয়াতে আসা মাত্র-ই আমার প্রিয়তমা স্ত্রীকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছিলো। ওর দিকে যখনই তাকাই আমার সানজিদের মুখশ্রী ভেসে উঠে চোখের সামনে। কতোটা য*ন্ত্র*ণা সহ্য করে ওকে পৃথিবীতে এনেছিলো সানজিদ ভুলে গিয়েছেন? তার প্রতিদান সরূপ আপনার নাতনী ওকে কি দিয়েছে? মৃত্যু! আমার স্ত্রীর মৃ*ত্যু*র কারণ যেই সন্তান তার প্রতি বিন্দুমাত্র স্নেহ দেখানোর ইচ্ছে আমার নেই আর না কখনও জাগবে।”
—“ঐ নিষ্পাপ প্রাণটাকে বউমার মৃ*ত্যু*র জন্য আর কতো দিন দো*ষা র…..!”
আমজাদ পুরো কথা শেষ করার পূর্বেই আরহাম ‘ব্যস’ বলে শব্দ করে নিজের হাতে থাকা ফাইলটা বন্ধ করে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন….
—“এ বিষয়ে যদি আর একটা শব্দ ও আপনি বলেছেন তবে আমার থেকে খারাপ আর কেও হবে না শেষবারের জন্য বলে দিলাম।”
এই বলে আরহাম দ্রুততার সাথে নিজরুমের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরেন। আমজাদ আরহামের যাওয়ার পানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রন কেবল।
(১৬)
রিজওয়ান আর মেহরিন নিজরুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠা মাত্র ওদের সামনে শেফালি আর ঊর্মিলা এসে দাঁড়ায়। রিজওয়ান আর মেহরিন ওদের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলে ঊর্মিলা হাত মেলে ওদের রাস্তা আটকায়। রিজওয়ান শান্ত স্বরে বললো….
—“কোনো সমস্যা?”
ঊর্মিলা বললো….
—“এ বাড়ির আশেপাশেও এর আগে কখনও চার চাকার গাড়ি আসতে দেখি নি। আজ হঠাৎ তোমরা দু’জনে বাহিরে গিয়ে কি এমন রাজকার্য উদ্ধার করলে শুনি, যে এতো বড় বড় দু-দু’টো গাড়ি বাড়ির সামনে পর্যন্ত এসে তোমাদের নামিয়ে দিয়ে গেলো!”
রিজওয়ান স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো….
—“সে বিষয়ে তোমাদের কিছু বলার প্রয়োজন আমরা মনে করছি না। রাস্তা আটকে অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে উভয়ের সময় নষ্ট করো না।”
রিজওয়ানের এমন প্রতিত্তুরে ঊর্মিলা রাগে দাঁতের সাথে দাঁত খিঁ*চে ধরে কেবল। শেফালি বললো…
—“পিপীলিকার পাখা গজায় ম*রি*বা*র তরে এই কথাটার বাস্তব প্রমাণ খুব শীঘ্রই পেতে যাচ্ছি আমরা।”
রিজওয়ান শেফালির দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললো…
—“সঠিক সময়ে সঠিক প্রবাদ বাক্য বলার জন্য তোমাকে বাহবা না দিয়ে পারছি না বড় ভাবী।”
এই বলে রিজওয়ান আর ওদের কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে মেহরিনের হাত ধরে ওদের পাশ কাটিয়ে নিজ রুমে প্রবেশ করে ভিতর থেকে দরজা আটকে দেয়।
ঊর্মিলা রাগে গজগজ করতে করতে বললো….
—“দেখলে ভাবী দেখলে! বলেছিলাম না এদের ভাব এখন আকাশ ছুঁই হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি কথার পিঠে কথা বলে আমাদের মুখ ই বন্ধ করে দিচ্ছে এরা।”
—“দেখছি ছোট সবই দেখছি।”
(১৭)
নিজরুমে এসে রিজওয়ান আর মেহরিন ফ্রেশ করে বাহিরের পোশাক পরিবর্তন করে ঘরের পোশাক পরিধান করে নেয়। মেহরিন শান্ত স্বরে বললো….
—“আগামীকাল সকাল ১০ টায় আমজাদ চাচা যে তোমাকে তার কোম্পানিতে ডেকে পাঠালেন এ বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নিলে তুমি?”
—“আল্লাহ তায়ালা আমাদের দিকে তার অসীম রহমতের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমজাদ চাচা আমাদের দুর্দিন শেষ করে সুদিন দেখানোর জন্য আল্লাহর পাঠানো উছিলা। তাই আমি আগামীকাল চৌধুরী গ্রুপ অফ লিমিটেড এ অবশ্যই যাবো। আমার একটা চাকরি ওদের সবার বিরুদ্ধে মো*কা*বি*লা করার জন্য শক্ত-পোক্ত অ*স্ত্রে*র মতো কাজ করবে।”
—“হুম ঠিক বলেছো। আচ্ছা তুমি তোমার সব কাগজ-পত্র একত্র করে নাও। আমি গিয়ে শেহতাজ আর ঊষাকে পড়িয়ে আসি। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে ওদের পড়ানোর কথা ছিলো। ওদের বাবা-মায়ের জন্য আমাদের দিক থেকে ওদের পড়াশোনায় কোনো খারাপ প্রভাব পড়ুক এমনটা আমি চাই না।”
—“হুম যাও। তবে ওরা যদি আমার আড়ালে তোমাকে একটাও ক*ষ্ট দায়ক কথা শোনায় তবে তুমি চুপ থাকবে না মেহরিন। অবশ্যই প্রতিটি কথার পিঠে উপযুক্ত প্রতিত্তুর করবে। আমি চাই না তুমি দূর্বল হও ওদের সামনে।”
মেহরিন হাসিমুখে ‘আচ্ছা’ সূচক জবাব দিয়ে রুম থেকে বের হয়। রিজওয়ান মেহরিনের যাওয়ার পানে কিছুসময় তাকিয়ে থাকার পর বিছানা থেকে নেমে আলমারীর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে আলমারি খুলে বিগত বছর গুলো ধরে নিজের অনেক ক*ষ্টে অর্জিত মার্কসিট ও সার্টিফিকেট গুলো বের করে সেগুলো নিয়ে আবারও বিছানায় এসে বসে।
#চলবে ইনশাআল্লাহ……..