#আমি_তোমারি_সনে_বেঁধেছি_আমারো_পরাণ💙
#শেষ_পর্ব
#Maisha_Jannat_Nura(লেখিকা)
(৬৯)
রুমির মুখে এরূপ কথাগুলো শুনে তেলে বেগুনে জ্ব*লে উঠেন যেনো রাহেলা ও রাজিবুল। রাহেলা নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে বললেন….
—“রুমি! তুই কি আদেও আমার গর্ভের সন্তান? নাকি প্র*স*বের পর পরই আমার আড়ালে আমার সন্তানকে নিয়ে অন্য কেউ তার সন্তানকে আমার কাছে রেখে গিয়েছিলো? টাকার লো*ভে এতোটা জ*র্জ*রিত হয়ে গিয়েছিস তুই ভাবতেও অবাক লাগছে আমার। আমার আর রাজিবুলের নামে বানোয়াট কথা বলার জন্য এবং রিজওয়ানের পক্ষ নেওয়ার জন্য ও-তোকে কতো টাকা দিয়েছে শুনি? বল নিজের বাবার সামনে গলা উঁ*চিয়ে। দেখি কতো জোর তোর গলায়।”
রাহেলাকে এতো জোরের সাথে রুমিকে মি*থ্যে প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লাগতে দেখে ঊর্মিলা কিছু বলতে নিবে সেইসময় রফিকুল ঊর্মিলার হাত ধরে ওকে থামিয়ে দিতে নিলে ঊর্মিলা রফিকুলের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আর সঙ্গে সঙ্গেই রফিকুল ঊর্মিলার হাত ছেড়ে দেয়। রাজিবুল রাহেলার কথার তালে তাল মিলিয়ে বললো….
—“ছি রুমি ছিহ্: তুই এতোটা নি*চে নেমেছিস? তোকে কিসের অভাব দিয়েছিলাম আমরা বলতো যে আজ অ*ন্যা*য় কারীর পক্ষ নিয়ে মি*থ্যে কথা বলতে হচ্ছে তোর? আল্লাহর ভ*য় করিস একটু। মি*থ্যে বলে আজ অ*ন্যা*য় কারীকে হয়তো শা*স্তির হাত থেকে বাঁচাতে পারবি ঠিকই কিন্তু পরকালের দুনিয়ায় শা*স্তি*র হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবি না।”
রুমি তেজী স্বরে বললো…..
—“বন্ধ করো বড় ভাইয়া, তোমার ঐ নোং*ড়া মুখ থেকে আল্লাহর পবিত্র নাম নেওয়া বন্ধ করো। নিজেদের পা*প কর্মকে বাবার সম্মুখে না আনার জন্য আল্লাহর দোহাই দেখাতে বিন্দুমাত্র লজ্জা করছে না তোমার তাই না! আল্লাহর ভয় তো তোমাদের মধ্যেই নেই। আমার ভিতর আছে জন্যই আজ আমি মি*থ্যে*র নয় সত্যের পক্ষ নিয়েছি। অ*ন্যায় কারীর নয় সত্যবাদী ও ভালো মানসিকতার মানুষদের পক্ষ নিয়ে দু’টো সত্য কথা বলছি।”
রুমির মুখে এরূপ কথাগুলো শুনে রাজিবুল এবার আর নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। নিজ স্থান থেকে উঠে রুমির কাছে এসে ওকে সকলের সম্মুখেই থা*প্প*ড় দেওয়ার জন্য উদ্যত হলে রিজওয়ান এবারও রাজিবুলের হাত ধরে সে হাত ওর পিঠের সাথে শক্ত করে মু*চ*ড়ে ধরে। মূহূর্তের মধ্যেই সম্পূর্ণ পরিবেশের রূপ পরিবর্তন হয়ে যায়। রাহেলা বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে ন্যকা কান্নার স্বরে শরীফ সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললেন….
—“ওগো আমাদের ছেলেটার হাত ভে*ঙে ফেললো গো। ঐ অ*মানুষটার হাত থেকে আমার নিষ্পাপ ছেলেটাকে বাঁচাও তুমি।”
শরীফ সাহেব গম্ভীর স্বরে বললেন….
—“রিজওয়ান..রাজিবুলের হাত ছেড়ে দাও।”
রিজওয়ান চোখ বন্ধ করে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে এক ঝ*ট*কা দিয়ে রাজিবুলের হাত ছেড়ে দেয়। রাজিবুল নিজের ব্য*থা দায়ক হাতে হাত বুলাতে বুলাতে রিজওয়ানের থেকে কয়েক কদম পিছিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো…
—“দেখলে তো বাবা, দেখলে তুমি! রিজওয়ান এভাবেই কথা নেই বার্তা নেই হুটহাট আমাকে আ*ঘা*ত দেওয়ার চেষ্টা করে। আমাকে যে রিজওয়ান নিজের বড় ভাই হিসেবে মানে না তার প্রমাণ তোমাকে দেখিয়ে দিলাম।”
শরীফ সাহেব রাজিবুলের দিকে তাকিয়ে বললেন….
—“আমি এখানে উপস্থিত আছি দেখেও কোন সাহসে রুমিকে থা*প্প*ড় দেওয়ার জন্য উদ্যত হয়েছিলে তুমি রাজিবুল? আমি কি তোমাকে বলেছিলাম যে তোমরা যা বলেছো তা-ই সত্য আর আমি তা বিশ্বাস করেছি তাই রুমির মি*থ্যে সহ্য করতে না পেরে ওকে থা*প্প*ড় দিতে উদ্যত হওয়ার অধিকার আছে তোমার!”
শরীফ সাহেবের এরূপ কথার প্রতিত্তুরে কি বলবে তা বুঝে উঠতে পারে না যেনো রাজিবুল। রাহেলা বললেন….
—“এখানে তুমি রাজিবুলের দো*ষ কেনো খুঁজতে বসলে! রুমি মি*থ্যে বলেছে নাকি সত্য তা আমরা খুব ভালো ভাবেই জানি। তাই নিজের ছোট বোন যখন মি*থ্যে*কে প্রশ্রয় দিবে তখন বড় ভাইয়ের রাগ হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু তো নয়। রাগের বশেই রাজিবুল রুমিকে থা*প্প*ড় দেওয়ার জন্য উদ্যত হয়েছিলো। কিন্তু রিজওয়ান যা করলো তা তো অত্যন্ত বাড়াবাড়িই। দো*ষ দেওয়ার হলে ওকে দাও। বয়সের দিক থেকে ছোট হয়েও তোমার সামনে ও কি করে রাজিবুলের হাত মু*চ*ড়ে ধরে?”
শরীফ সাহেব বললেন…..
—“কার দো*ষ আছে কার নেই তা বোঝার যথেষ্ট বয়স হয়েছে আমার রাহেলা। এমনি এমনিই মাথার সব চুলগুলো সাদা বর্ণ ধারণ করে নি আমার।”
শরীফ সাহেবের প্রতিত্তুর শুনে চুপ হয়ে যায় রাহেলা। শরীফ সাহেব আবারও বললেন….
—“এখানে উপস্থিত প্রত্যেকেরই নিজ নিজ মতামত পেষণ করার সম্পূর্ণ অধিকার। কে বা কারা সত্য বলছে আর কে বা কারা মি*থ্যা বলছে তা একে একে সবার মতামত শোনার পরই বোঝা যাবে।”
শরীফ সাহেবের এরূপ কথা শুনে রাজিবুল শেফালির পাশে এসে দাঁড়ায়। শেফালি চোখ তুলে রাজিবুলের দিকে তাকালে রাজিবুল শেফালিকে ইশারায় নিজের বলানুযায়ী কাজ করতে বলে। শরীফ সাহেব বললেন….
—“বড় বউমা, আমার সম্মুখে এসে দাঁড়াও তুমি।”
শরীফ সাহেবের কথায় শেফালি তার সম্মুখে এসে দাঁড়ায়। শরীফ সাহেব শেফালির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি স্থির করে বললেন…..
—“সত্যের পক্ষ নিবে নাকি মি*থ্যা*র তা তোমার উপর নির্ভর করছে। বলো এখন রাজিবুল আর রাহেলা এতোসময় ধরে যা যা বলেছে তা কি সত্য নাকি রুমি যা বলেছে তা সত্য?”
শেফালি রাজিবুলের দিকে একপলক তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে হালকা হাসির রেখা স্পষ্ট রেখে নিজের কমোরের ভাঁজ থেকে একটা মোবাইল ফোন বের করে। অতঃপর একটা অডিও রেকর্ড চালু করে। যে রেকর্ডে ঘন্টাখানেক পূর্বে রাজিবুল শেফালির শরীরে আ*ঘা*ত করার সময় ওকে রিজওয়ানের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য হু*ম*কি দিয়েছিলো তা সবাই স্পষ্ট শুনতে পারছে। শেফালির এমন কাজে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় রাহেলা ও রাজিবুল দু’জনেই। শেফালি এমন কিছু করতে পারে তা কল্পনাও করতে পারে নি ওরা। রাজিবুল বললো…..
—“এসব মি*থ্যে, আমি এমন কিছু করিই নি। শেফালি আমাকে ফাঁ*সা*তেই অন্য কাওকে দিয়ে আমার কন্ঠ ন*ক*ল করিয়েছে। আসলে বাবা তোমাকে বলতে লজ্জা লাগছে নিজের বউয়ের বিষয়ে। তবুও বলছি। শেফালিকে আমি পর পর কয়েকবার অন্য পুরুষের সাথে অন্তঃর*ঙ্গ অবস্থায় হাতে নাতে ধরেছিলাম। শেহজাদের কথা চিন্তা করে বারবার আমি ওকে ক্ষমা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ ও আমাকেই ফাঁ*সা*নোর চেষ্টা করছে দেখে নিজের মুখ আর বন্ধ রাখতে পারলাম না।”
রাজিবুলের মুখে এরূপ কথাগুলো শুনে শেফালির দু’চোখ নোনাজলে টইটম্বুর হয়ে উঠে। শেফালিকে মি*থ্যে প্রমাণ করতে রাজিবুল এতোটা নি*ম্ন মানসিকতার পরিচয় দিতে পারলো তা ভাবতেও শেফালির বুকের বাম পার্শে চিনচিন করে ব্য*থা অনুভব হচ্ছে। রাগে সর্বশরীর রিরি করে কাঁপছে রিজওয়ানের। মেহরিন রিজওয়ান হাত ধরে আছে ওকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। ঊর্মিলা আর নিরব থাকতে না পেরে রাজিবুলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে মুখের উপর থু*থু দেয়। ঘৃ*ণা*য় সঙ্গে সঙ্গে চোখ-মুখ কুঁ*চ*কে ফেলে রাজিবুল। ঊর্মিলা রাগ ও ঘৃণামিশ্রিত স্বরে বললো…..
—“নিজেদের সাজানো মি*থ্যাকে সত্য হিসেবে প্রমাণ করতে নিজের সন্তানের মায়ের চরিত্রের উপর এতো বড় মি*থ্যা ক*ল*ঙ্ক লাগাতে একটুও বুক কাঁপলো না আপনার! অবশ্য কাঁপবেই বা কি করে আপনারা তো মানুষের কাতারেই পড়েন না।”
ঊর্মিলার কাজে ও কথায় ক্ষি*প্ত হয়ে উঠে রাজিবুল। ঊর্মিলাকে মা*রা*র জন্য উদ্যত হলে পূর্বের ন্যয় রফিকুল নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আর তা দেখে না। দ্রুততার সাথে এগিয়ে এসে রাজিবুলকে ধরে বললো….
—“এর আগেও তুমি আমার বউয়ের শরীরে হাত উঠানোর জন্য উদ্যত হয়েছিলে, বড় ভাই হও তুমি আমার তাই সম্পর্কের কথা চিন্তা করে তোমাকে কিছু না বলে নিজের বউকেই সমযত থাকতে বলেছিলাম পরবর্তীতে। কিন্তু এটা যে আমার ভু*ল চিন্তা ছিলো তা আজ পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারলাম। আজ তুমি নিজেকে বাঁচাতে নিজের বউয়ের চরিত্রে মি*থ্যা ক*ল*ঙ্কে*র দাগ লাগাতেও দু’বার ভাবো নি। আজ তোমার পক্ষ নিয়ে আমি যদি বাবার সামনে মি*থ্যা বলিও, কাল তুমি যে আমাকেও রিজওয়ানের মতো তা*ড়া*তে কোনো নোং*ড়া পরিকল্পনা করবে না তার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। যে কেবল নিজ স্বার্থের কথাই চিন্তা করে তার পক্ষ নেওয়া কখনই উচিত না।”
এই বলে রফিকুল স্বজোরে রাজিবুলকে ধা*ক্কা দেয়। তাল সামলাতে না পেরে রফিকুলের থেকে কয়েক হাত দূরে মেঝের উপর ছিটকে পরে যায় রাজিবুল। অতঃপর রফিকুল আর কোনো চিন্তা না করে শরীফ সাহেবের পায়ের কাছে এসে বসে অনুনয়ের স্বরে বললো….
—“বাবা, তুমি আম্মাকে বিয়ে করে আমাদের নিয়ে এ বাড়িতে আসার পর পরই প্রবাসে চলে গেলে। তারপর থেকে আম্মা তোমার কথানুযায়ী রিজওয়ানকে নিজের সন্তান হিসেবে গ্রহন করে নি। আমাদের মাঝেও হিং*সা, অ*হং*কারের বিস্তার ঘটিয়েছিলো। রিজওয়ানকে সবসময় হে*য় করতো আম্মা, আমরাও এসব থেকে বাদ যাই নি। সকল ক্ষেত্রে রিজওয়ানকে খুব সামান্য ভাগ দিয়ে আমরা বেশিঅংশ নিয়ে এসেছি। রিজওয়ানকে আম্মা সরকারি স্কুলে পড়িয়েছেন আর আমাদের বেসরকারি স্কুলে। আর তোমার সামনে রিজওয়ানের নামে বানোয়াট কথা তুলে ধরেছিলেন। সে ব*খা*টে চালচলন করতো তাই বেসরকারি স্কুল থেকে ওকে বের করে দিয়েছিলো স্যার, ম্যডামরা। এভাবেই চলতে চলতে রিজওয়ান ১০ম শ্রেণির গন্ডি পেড়িয়ে কলেজে পড়ার ইচ্ছে পেষণ করলে আম্মা ওর নামে আরো বড় একটা বানোয়াট ঘটনা সাজিয়ে তোমার সামনে তুলে ধরে। যার দরুণ রাগের বশে তুমি ওর পড়াশোনাই বন্ধ করে দাও চিরতরের জন্য। কয়েকবছরের ভিতর আমি আর বড় ভাইয়া নিজেদের মতো করে বিয়ে নেই। তুমি এতে অ*সন্তুষ্ট হয়েছো তা বুঝেও আমাদের মাঝে কোনো ভাবান্তর হয় নি। কয়েকবছর পর দেশে ফিরেই তুমি রিজওয়ানের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে। আমরা সবাই চেয়েছিলাম বড় কোনো ঘরের মেয়েকে রিজওয়ানের বউ বানিয়ে আনতে। এতে মেয়ের বাড়ি থেকে দামি দামি জিনিসপত্র ও মোটা অংকের টাকা পাওয়া সম্ভব ছিলো। আমাদের চিন্তায় পানি ঢেলে দিয়ে তুমি মেহরিনের সাথে রিজওয়ানের বিয়ে দিলে। মেহরিন আমাদের সকলের অপছন্দের হলেও আমরা সবাই তোমার সামনে ওকে মেনে নেওয়ার নাটক করেছিলাম। রিজওয়ানকে যখন ফোন কিনে দিতে চেয়েছিলে তখন আমাদের সত্য যেনো তোমার সামনে না আসে তাই কৌশলে ওকে দিয়ে ওর ফোন কিনার বিষয়টা ধা*মা*চাপা দিয়েছিলাম আমরা। মেহরিন বিয়ের পরেও পড়াশোনা করবে এই বিষয়টা আমরা কেউ-ই মেনে নিতে পারি নি। তাই মেহরিনকে দিয়েই ও যে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক নয় এমনটা তোমাকে বলতে বাধ্য করিয়েছিলাম আমরাই। সবকিছু আমাদের ইচ্ছেনুযায়ীই চলছিলো। রিজওয়ান আর মেহরিনকে কথার ও আচারণের অ*ত্যা*চা*রের জাঁ*তা কলে পি*ষ্ট করতাম আমরা সর্বক্ষণ। প্রায় ১মাস আগে রিজওয়ানের মাঝে আকস্মিক পরিবর্তন লক্ষ্য করি আমরা। সে প্র*তি*বাদী হয়ে উঠে। আমাদের আসল জায়গাটা চিনিয়ে দিতে শুরু করে। আমরা যে এ বংশের সন্তান নই তা বুঝিয়ে দিতে থাকে। কিন্তু রিজওয়ানের এমন পরিবর্তন মেনে নিতে পারি নি আমরা কেউ-ই। ওকে তোমার সামনে ফাঁ*সা*তে সবরকম কূ*ট*নৈতিক পরিকল্পনা করতে শুরু করি। এর মাঝেই বড় ভাইয়া রুমির জন্য তার অফিসের চল্লিশোর্ধ্ব বয়সের ম্যনেজার যার প্রথম স্ত্রী মা*রা গিয়েছে ও বর্তমানে দু’টো ছেলে-মেয়ে আছে সেই লোকের সাথে বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে আসে। রুমি সেই সম্বন্ধে নারাজ হলে বড় ভাইয়া আম্মাকে দিয়ে রুমিকে জোরপূর্বক এই সম্বন্ধ মেনে নিতে বাধ্য করাতে বলে। বড় ভাইয়ার আসল উদ্দেশ্য ছিলো অফিসে নিজের পজিশন বাড়ানো, স্যলারি বাড়ানো পাশাপাশি ওর ম্যনেজারের যাবতীয় সয়-সম্পত্তির মালিকানা নিজের নামে করে নেওয়া। আমরা কেউ রুমির পাশে দাঁড়াই নি। রুমির সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলো রিজওয়ান আর ওর স্ত্রী। ওরা আমাদের সাথে কখনও অকারণে দূর্ব্যবহার করে নি। বড় ভাইয়ার দো*ষে*ই সে রিজওয়ানের হাতে মা*ই*র খেয়েছে বারংবার। কিছুদিন আগে ঊষাকে এ*ক্সি*ডে*ন্ট হওয়া থেকে বাঁচিয়েছিলো মেহরিন। সে চাইলেই পারতো নিজের স্বামীর সাথে হওয়া অ*ন্যা*য় গুলোর প্র*তি*শোধ নিতে৷ কিন্তু সে ভালো মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। ওদের ভালো আচারণ আমাদের সবার মাঝে ভালো প্রভাব ফেললেও বড় ভাইয়া বা মায়ের উপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারে নি। তারা আজও নিয়ত রেখেছিলো সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে তোমার সামনে রিজওয়ান আর মেহরিনকে ছোট করে এ বাড়ি থেকে তা*ড়ি*য়ে দিয়ে সব সয়-সম্পত্তি নিজের নামে করে নেওয়া। এ বাড়িজুড়ে নিজে একা রাজত্ব করা। আজ বড় ভাবী রিজওয়ানের পক্ষ নেওয়ায়, বড় ভাইয়ার সত্য সামনে আনায় তার চরিত্রেও ক*ল*ঙ্ক লাগানোর মতো ঘৃ*ণ্য কাজ করতেও দ্বিধাবোধ করলো না। এবার তুমি সিদ্ধান্ত নাও বাবা কি করবে তুমি। সব সত্য তোমার সামনে তুলে ধরেছি আজ আমরা। আমাদের কাজের জন্য আমরা সবাই ভিষণ অনুতপ্ত বোধ করছি। পারলে আমাদের ক্ষমা করে দিও তুমি।”
রফিকুলের মুখে এতোসময় ধরে এতোগুলো কথা শোনার পর শরীফ সাহেব যেনো স্তব্ধ হয়ে গিয়েছেন। রাজিবুল ক্ষি*প্ত নজরে রফিকুলের দিকে তাকিয়ে বললেন….
—“কাজটা তুই ঠিক করলি না রফিকুল। এর হিসাব তোকে দিতেই হবে। তোদের সবাইকেই আমি দেখে নিবো।”
শরীফ সাহেব বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন….
—“সৎ কখনও আপন হতে পারে না এই কথা আমি ভুলে গিয়েছিলাম। আজ আমার ভুলে যাওয়ার ফল আমার চোখের সামনে জ্বল জ্বল করে ভাসছে।”
এই বলে শফিক সাহেব একহাত দিয়ে নিজের বুকের বাম পাশ চেপে ধরেন। রফিকুল তাঁকে ধরতে নিলে তিনি অন্য হাত উঠিয়ে ওকে থামতে বলে বললেন…..
—“আমি ঠিক আছি।”
নিজের পরিস্থিতি হাতের বাহিরে চলে গিয়েছে বুঝে রাহেলা আর কোনো দিক-বেদিক চিন্তা না করে শরীফ সাহেবের সম্মুখে এসে তার পায়ের কাছে বসে কান্নারত স্বরে বললেন…..
—“ওগো, আমাদের ভুল হয়ে গিয়েছে। আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পেরেছি। রিজওয়ান এর সাথে বিগত বছরগুলো ধরে এমন করা উচিত হয় নি আমাদের। তুমি দয়াকরে আমাকে আর আমার ছেলেদের এ বাড়ি থেকে বের করে দিও না। আমি কথা দিচ্ছি আজকের পর আর কখনও রিজওয়ান বা ওর বউয়ের সাথে বৈ*ষ*ম্য*তা মূলক আচারণ করবো না। ওদের প্রাপ্য অধিকার পেতে কোনোরূপ বাঁ*ধা প্রদান করবো না। রিজওয়ানের যোগ্য মা আর মেহরিন বউমার যোগ্য শ্বাশুড়ি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করবো। আমাকে নিয়ে কোনো অভিযোগ করতে দিবো না ওদের। রাজিবুলকেও বুঝিয়ে বলবো। ও-ওও নিজেকে শু*ধ*রে নিবে। শেষ একটা সুযোগ দাও তুমি আমাদের।”
কথাগুলো বলে রাহেলা শরীফ সাহেবের পা স্পর্শ করতে নিলে শরীফ সাহেব কয়েক কদম পিছিয়ে যান সঙ্গে সঙ্গেই। তার কঠিন দৃষ্টি ও অন্যত্র স্থির। রাহেলা বুঝতে পেরেছেন তার একার ক্ষমা চাওয়াতে কোনো লাভ হবে না৷ রাহেলা বসা থেকে উঠে রাজিবুলের কাছে গিয়ে ওর হাতজোড়া ধরে বললেন……
—“রাজিবুল..বা’জান আমার। নিজের মাঝে আর ইগো রাখিস না। বাবার সামনে নিজের দো*ষ গুলো স্বীকার কর। ক্ষমা চা তোর বাবার কা…..!”
রাহেলার মুখে এরূপ কথা শুনে রাজিবুল চি*ল্লি*য়ে বলে উঠলো……
—“বাবা! কিসের বাবা হন উনি আমার! উনি আমাকে জন্ম দেন নি। তাই উনাকে আমি আমার বাবা হিসেবে মানি না। তাই উনার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠছে। শোনো মা..উনি তোমাকে বা আমাকে চাইলেও এ বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারবেন না। আর না এই সম্পত্তির ভাগ পাওয়া থেকে ব*ন্ঞ্চি*ত করতে পারবেন। ওনার সাথে আমার র*ক্তে*র কোনো সম্পর্ক না থাকলেও তুমি ওনার বিবাহিতা স্ত্রী হও। তাই তুমি তোমার ভাগ চাইবে ওনার থেকে। উনি তোমায় তোমার নায্য ভাগের সম্পত্তি না দিলে পুলিশের কাছে যাবো আমরা। এদের সবার বিরুদ্ধে এমন এমন অ*ভি*যো*গ করবো যে পুলিশ এদের বয়ান পেষ করার সময়টুকুও দিবে না। এদের সবার কমোরে দড়ি পড়িয়ে টানতে টানতে থানায়…….!”
রাজিবুল পুরো কথা শেষ করার পূর্বেই শরীফ সাহেব বললেন…..
—“এতো বড় অ*ন্যা*য় করেও তোমার ভিতর নূন্যতম চক্ষুলজ্জাও কাজ করছে না। খুব জোড়ের সাথে নিজের মা’কে অধিকার দাবি করতে বলছো। সেই অধিকার দাবি করার ক্ষ*ম*তাও এবার আমি তুলে নিচ্ছি। মিসেস. রাহেলা বেগম, আমি মোঃ শরীফ সাহেব সম্পূর্ণ সজ্ঞানে আপনাকে তালাক দিচ্ছি, তালাক দিচ্ছি, তালাক দিচ্ছি।”
শরীফ সাহেবের এরূপ কথা ও কাজে পুরো পরিবেশ যেনো থ*ম*থ*মে বর্ণ ধারণ করে। রাহেলা ধ*প করে রাজিবুলের পায়ের কাছে মেঝের উপর বসে পড়েন। রাজিবুল ও রাগের বশে বুঝতেই পারে নি শরীফ সাহেব এমনটাও করতে পারবেন। শরীফ সাহেব আবারও বললেন…..
—“এই মুহূর্তে তুমি তোমার মা’কে নিয়ে আমার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাবে। তোমার মায়ের সাথে আমার আইনত কোনো সম্বন্ধ নেই। আমাদের ইসলামি শরিয়ত মতে বিয়ে হয়েছিলো আজ তা শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই পরবর্তীতে তুমি এ বাড়িতে সম্পত্তির দাবি নিয়ে আসলে পুলিশ তোমার কমোরে দড়ি পড়িয়ে টানতে টানতে থানায় নিয়ে যাবে।”
রাজিবুল থ*ম লেগে দাঁড়িয়ে আছে। রাজিবুলকে কোনো রিয়াকশন করতে না দেখে শরীফ সাহেব বললেন…..
—“স্বইচ্ছায় যাবে নাকি ঘাড় ধরে বের করে দিতে বলছো আমায়!”
রাজিবুল আর দাড়িয়ে না থেকে নিজের মা’কে সেখানেই ফেলে রেখে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। শরীফ সাহেব রাহেলার দিকে তাকিয়ে বললেন….
—“নিজের দো*ষে আজ সর্বহারা হলেন আপনি রাহেলা বেগম। যে ছেলের জন্য সবার সাথে অ*ন্যায় করেছিলেন আজ আপনার খারাপ সময়ে সেই ছেলে আপনাকে ফেলে রেখেই চলে গেলো। আপনাকে নতুন করে চলে যাওয়ার কথা বলতে হবে না আশা করছি।”
রাহেলা বসা থেকে উঠে কান্নাভেজা দৃষ্টি নিয়ে সকলকে একপলক দেখে ঢলতে ঢলতে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলেন। রফিকুল অধীর চাহুনি নিয়ে তাকিয়ে আছে শরীফ সাহেবের দিকে। এবার যে তার সা*জা পাওয়ার পা*লা। শরীফ সাহেব রফিকুলের উপর দৃষ্টি স্থির করে বললেন…..
—“তুমি নিজের ভু*ল বুঝতে পেরেছো। তোমার চোখে আমি অনুতপ্ততার ছাপ ও স্পষ্ট দেখতে পারছি। কিন্তু অ*ন্যায় করলে শা*স্তি পেতেই হবে। তাই আজ থেকে তোমাকে আমি আমার উপার্জনের টাকা থেকে কোনো টাকা দিবো না। এ বাড়িতেই থাকতে পারবে তুমি তোমার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে কিন্তু নিজের ও নিজের স্ত্রীর যাবতীয় খরচ নিজের উপার্জনের টাকায় সামলাবে। আমার নাতনী ঊষাকে কোনোকিছুর অভাববোধ করতে আমি দিবো না কেবল। আর বড় বউমা, তোমার সততা ও সাহসিকতার জন্য তোমার উপর সন্তুষ্ট হয়েছি আমি। তাই তুমিও আমার নাতী শেহজাদকে নিয়ে এ বাড়িতেই থাকবে। তোমাদের যাবতীয় খরচ আমি সামলাবো। আজ থেকে এ বাড়ির মূল কর্তী হবে ছোট বউমা। সে সংসারের জন্য যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটা সকলেই মানতে বাধ্য হবে। আজকের পর আর কখনও যদি তোমাদের কারোর আচারণে আমি বিন্দুমাত্র হিং*সা, অ*হং*কার লক্ষ্য করেছি তাহলে তক্ষুনি তাঁদের এ বাড়ি থেকে চিরতরের জন্য বের করে দিবো আমি। আর কোনো রকম ক্ষমা করা হবে না কাওকে। রিজওয়ান আগামীকালই তুমি ছোট বউমাকে নিয়ে পুনরায় কলেজে যাবে আর ওকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করবে। আর রুমি, তুমি তোমার যতোদূর ইচ্ছে হয় ততোদূর পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারবে। তোমার যখন মনে হবে তুমি এখন বিয়ে করতে ইচ্ছুক আছো আমাকে জানাবে। এছাড়াও তোমার যদি কাওকে পছন্দ হয়ে থাকে সে বিষয়ে নির্দ্বিধায় আমাকে জানাবে। আমি তার সাথেই তোমার বিবাহকার্য সম্পন্ন করবো।”
এই বলে শরীফ সাহেব নিজ রুমে চলে গেলেন। সকলের চোখে-মুখেই প্রশান্তির ছাপ স্পষ্ট ফুটে আছে। শা*স্তি পেয়েও রফিকুল মনে মনে যে সন্তুষ্ট তা ওর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ঊর্মিলার চেহারাতেও অ*সন্তুষ্টির ছাপ দেখা যাচ্ছে না। রিজওয়ান হাসিমুখে মেহরিনকে একহাতে জড়িয়ে ধরে।
(৭০)
হাসপাতালে আরফার কেবিনরুমে ওর বাম হাতের উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে বসে আছে আরহাম। সেইমূহূর্তে আরহাম অনুভব করে আরফার হাত নড়ছে। আরহাম চট করে সোজা হয়ে বসে আরফার দিকে তাকাতেই দেখে আরফা বড় বড় করে চোখ মেলে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আরফার মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো ছিলো। আরফা ধীরস্বরে তা খুলতে বলে আরহামকে। আরহাম আকস্মিক ভাবে আরফার জ্ঞান ফিরে আসায় কি বলবে কি করবে তা যেনো বুঝে উঠতে পারছে না। পরক্ষণেই আরহামের ঘোর কেটে গেলে সে দ্রুততার সাথে আরফার মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্কটা খুলে দেয়। আরফার মুখের যে পার্শে আঘাত বেশি লেগেছিলো তা শুকিয়ে গিয়েছে অনেকটাই। ব্যন্ডেজ খুলে ফেলেছেন ডাক্তার গতকালই৷ আরফা বললো…..
—“বাবাই.. আমি স্টার হয়ে যাই নি মাম্মামের জায়গায়?”
আরফার মুখে এরূপ কথা শুনে আরহামের ভিতরটা ভে*ঙে দলা পাঁকিয়ে থাকা কান্নাগুলো বেড়িয়ে আসে। আরহাম ওর মাথা এপাশ ওপাশ নাড়িয়ে না সূচক জবাব দেয়। আরফা আবারও বললো…
—“বাবাই তুমি কাঁদছো কেনো?”
আরহাম কান্নারত কন্ঠে বললো….
—“আমার মেয়েটা আবারও আমার কাছে ফিরে এসেছে পুরোপুরি ভাবে তা দেখে আমার দু’চোখ দিয়ে খুশিরা অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ছে মামনি।”
—“বাবাই, আমি তো আমার কথা রাখতে পারি নি। তোমার কাছে মাম্মামকে এনে দিতে পারি নি। তবুও তুমি খুশি হয়েছো!”
আরহাম আরফার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো….
—“তোমার মাম্মাম চিরতরের জন্য আল্লাহর কাছে ফিরে গিয়েছেন। তাকে তুমি আমি শত বার চাইলেও আর ফিরিয়ে আনতে পারবো না আমাদের কাছে। তোমার মাম্মামের চলে যাওয়ার জন্য এতোগুলো বছর ধরে আমি তোমাকে দায়ী করে ভিষণ ভু*ল করেছি মামনি। তোমাকে বাবার ভালোবাসা দেই নি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও মামনি। আজ থেকে তোমাকে আমি বাবা-মা দু’জনের ভালোবাসাই দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। আর কখনও ক*ষ্ট দিবো না তোমায়।”
আরহামের কথায় আরফার ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠে। আরফা হাসিমুখে বললো….
—“আমি ব্যড বেবি নই তাহলে, আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন। আল্লাহ তোমার ভালোবাসা পাইয়ে দিবেন এখন থেকে আমায়। ইয়েএএএ…!”
আরফার এরূপ কথায় আরহামের ঠোঁটেও হাসির রেখা ফুটে উঠে। এতোসময় ধরে কেবিনের দরজায় দাঁড়িয়ে আমজাদ ওদের বাবা-মেয়ের ভালোবাসা মুগ্ধ নয়নে দেখছিলেন। তার ঠোঁটেও ফুটে উঠে প্রশান্তির হাসির রেখা। এখন যেনো তিনি নিশ্চিন্তে এই দুনিয়ার মায়া ত্য*গ করতে পারবেন।
#সমাপ্তি…………