#আমি_তোমারি_সনে_বেঁধেছি_আমারো_পরাণ💙(২৬)
#Maisha_Jannat_Nura(লেখিকা)
(৬৩)
পরের দিন সকালবেলা…..
ডাইনিং টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে রাজিবুল, রফিকুল, রাহেলা ও বাচ্চারা। শেফালি আর ঊর্মিলা ওদের প্রয়োজন অনুসারে খাবার পরিবেশন করে দিচ্ছে। পরক্ষণেই শেফালি চেয়ার টেনে রাজিবুলের পাশে বসতে নিলে রাজিবুল খাবার খেতে খেতেই বললো….
—“তুমি এখানে বসলে আমি উঠে যাবো।”
শেফালি থেমে গিয়ে চেয়ার স্পর্শ করে দাঁড়িয়ে বললো…
—“মানে!”
—“মানে তোমার মতো মেয়ের সাথে এক স্থানে বসে খাবার খাওয়ার থেকে ক্ষুধার্ত থাকা শ্রেয় মনে করি আমি। যদি তুমি এখানে রাখা কোনো চেয়ারে বসো তাহলে আমি খাবার না খেয়েই উঠে যাবো।”
সবার সামনে এমন অপমানমূলক কথা হজম করে নিতে পারে না শেফালি। রাগী স্বরে বললো….
—“আমার হাতে রান্না করে খাবার খাচ্ছো কি করে? রাতে এক রুমে এক বিছানায় থেকেছো কি করে? তখন এই অতি সম্মানবোধ কোথায় ছিলো!”
রাহেলা উচ্চস্বরে বললেন…
—“ছি বউমা। নিজেদের শোয়ার ঘরের কথা এভাবে নির্লজ্জের মতো সবার সামনে বলছো কি করে? এখানে বাচ্চারাও আছে সে বিষয় কি খেয়াল নেই?”
শেফালি কিছু বলার পূর্বেই ঊর্মিলা বললো….
—“ভাবী তো তেমন আহামরি কিছু বলে নি আম্মা। আর বাচ্চাদের কথা বড় ভাইয়ার সর্বপ্রথম খেয়াল করা উচিত ছিলো। তারা ১-২ বছর হলো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে আবব্ধ হন নি। প্রায় ১২ বছরের সংসার জীবন তাদের। তাদের মাঝে কোনো বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য হলে তা একান্তে সমাধান করে নেওয়া উচিত। বড় ভাইয়ার পাশে ভাবী বসলে তিনি খাবার শেষ না করে উঠে যাবেন এমন কথা বাচ্চাদের সামনে বলাটা কি তার খুব উচিত কাজ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে আপনার?”
ঊর্মিলার প্রতিত্তুরে ভিষণ রাগ ও বিরক্ত হন রাহেলা ও রাজিবুল দু’জনেই। উচিত সময় উচিত কথা বললে তা সহ্য না হওয়ারাই স্বাভাবিক। রাজিবুল রাগী স্বরে বললো….
—“রফিকুল তোর বউকে বল সীমা অতিক্রম না করতে। সাংসারিক কিংবা বাহ্যিক দুই ক্ষেত্রেই মেয়ে মানুষের মুখ এতো চলা ভালো না। আমি কিন্তু এসব সহ্য করবো না।”
ঊর্মিলা তেজী স্বরে বললো….
—“আপনি সেইসব কা*পুরুষের তালিকায় পড়েন যাদের ধারনা এতোটাই নিম্ন হয় যে, তারা মনে করে এ জগতে তারাই সর্বেসর্বা। তারা যেই কাজই করুক না কেনো সেটা খুব ভালো। সেটা অ*ন্যায় কাজ হলে কোনো নারী তার প্রতিবাদ করলেই শরীরে গিয়ে যেনো কাঁ*টা*র মতো বিঁ*ধে যায় তাদের। নারী জাতিকে, বিশেষ করে নিজের বউ, বাচ্চাদের পায়ের নিচে দা*বি*য়ে রাখার চেষ্টা আপনারা সর্বক্ষণ করে যান। আমি আপনার কথায় ভ*য় পাই না। আর না আপনি আমার মুখ বন্ধ করতে পারবেন।”
ঊর্মিলার কথায় এবার রাগ যেনো রাজিবুলের মাথায় চড়ে বসে। রাজিবুল নিজ চেয়ার থেকে উঠে দ্রুত পায়ে ঊর্মিলার সম্মুখে এসে দাঁড়িয়ে ওকে থা*প্প*ড় দেওয়ার জন্য উদ্যত হলে পিছন থেকে শেফালি রাজিবুলের হাত ধরে ফেলে। রাজিবুলের এমন উদ্দেশ্য দেখে রফিকুলও নিরব হয়ে বসে থাকতে পারে না। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায় সে। রাজিবুল কিছু বলতে নেওয়ার পূর্বেই শেফালি রাজিবুলের সম্মুখে এসে দাঁড়িয়ে ওর হাত ছেড়ে দিয়ে স্বজোড়ে ওর গালে একটা থা*প্প*ড় দেয়। মূহূর্তেই মধ্যেই সম্পূর্ণ পরিবেশের রূপ বদলে যায়। রাহেলা অত্যন্ত অবাক হয়ে একহাত নিজের মুখের উপর রাখলেন। শেফালির এমন কাজে বাচ্চারাও অবাক দৃষ্টি নিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ঊর্মিলার ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। রাজিবুল নিজের গালের উপর হাত রেখে নিজের দৃষ্টি মেঝের উপর স্থির করে রেখেছে। শেফালি তেজী স্বরে বললো…..
—“সাহস কি করে হলো তোমার ঊর্মিলাকে মারার জন্য ঊদ্যত হওয়ার! ভুলে যেও না সে তোমার বোন বা বউ না। সে তোমার ভাইয়ের বউ। তাঁকে উঁচু গলায় একটা কথা বলারও অধিকার নেই তোমার। এখানে তাঁর স্বামী উপস্থিত আছেন৷ যদি সে ভুল কিছু বলে থাকতো বা করতো তাহলে তাঁকে শা*ষণ করে নিজ নিয়ন্ত্রণে আনার দায়িত্ব তাঁর স্বামী পালন করতো। ১০ জনের সামনে যদি তুমি নিজের স্ত্রীকে অসম্মান করো তাহলে সেই ১০ জনের ভিতর অন্তত একজন তোমার চোখে আঙুল দিয়ে ভুলটা অবশ্যই দেখিয়ে দিবে৷ একজন মানুষ হিসেবে তা করার তার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। তোমার আর তোমার মায়ের কথা মেনে নেই নি জন্য গতকাল থেকে তোমরা আমাদের নিজেদের বাধ্য বানাতে কম চেষ্টা করো নি। এখন যখন কোনোভাবেই নিজেদের কাজে সফল হতে পারছিলে না তখন বাচ্চাদের সামনে ছোট বানাতে এমন কাজ করলে। যার কোনো মানেই কেউ খুঁজে পাবে না। শুরু তুমি করেছিলে আর শেষটা আমি করছি। আগেও বলেছিলাম এখন আবারও বলছি, একবার যখন আমি সৎ পথে উঠেছি তখন তোমরা শত চেষ্টা করলেও আমাকে অসৎ পথে পরিচালনা করতে সফল হবে না। তাই নিজেদের কাছে নিজেদের সম্মান যদি প্রিয় হয়ে থাকে, তা একেবারে খোঁয়াতে না চাও তাহলে নিজের চিন্তা, চালচলন ও কাজে সীমা বজায় রাখো।”
লজ্জায়, অ*পমানে থম থমে ভাব ধারণ করেছে রাজিবুলের সম্পূর্ণ চেহারা। রাহেলা ও একেবারে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। শেফালি কাজ ও কথা তাকে-ও কিছুটা কা*বু করে দিয়েছে। সেইসময় মূল দরজা থেকে ‘রাহেলা’ বলে কারোর ডাকার আওয়াজ ভেসে আসে। রিজওয়ান আর মেহরিন সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসছিলো। রিজওয়ান মূল দরজার দিকে লক্ষ্য করতেই নিজের বাবা শফিক সাহেবকে ভিতরে আসতে দেখে ওর চেহারায় এক অন্যরকম খুশির ছাপ স্পষ্ট হয়। মেহরিনের ঠোঁটেও হালকা হাসির রেখা ফুটে উঠে। ডাইনিং স্থান ত্যগ করে ওরা সবাই আঙিনায় এসে দাঁড়ায়। স্থান ত্যগ করে না শুধু রাজিবুল। ঊষা আর শেহজাদ ‘দাদু ভাই’ বলে ছুটে গিয়ে শফিক সাহেবকে জড়িয়ে ধরে। শফিক সাহেব ওদের দু’জনের মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে দিয়ে ওদের দু’জনের কপালে ও গায়ে পরম স্নেহের পরশ এঁকে দেন। রাহেলা একের পর এক ধা*ক্কা যেনো মেনে নিতে পারছেন না। একেই বাড়ির অবস্থা বেগতিক। হাতের নাগাল থেকে বেড়িয়ে গিয়েছে তার বউমারা, মেয়ে, নাতি-নাতনিরা ও ছোট ছেলে তার মাঝে আজ আকস্মিক ভাবেই শফিক সাহেবের আগমন ঘটলো। এ বাড়ি ছাড়া হতে যে তার আর খুব বেশি সময় লাগবে তা ভেবেই এখন থেকে তার ভিতর অন্যরকম দু*শ্চি*ন্তা কাজ করছে।
রিজওয়ান ওর বাবার সামনে এসে দাঁড়িয়ে নম্র স্বরে সালাম দিলে শফিক সাহেব দৃষ্টি অন্যদিকে স্থির রেখে গম্ভীর স্বরে সালামের উত্তর দিলেন। বাবার এমন আচারণে রিজওয়ানের বুকের ভিতরটা মো*চ*ড় দিয়ে উঠে। বিগত কয়েকদিন যাবৎ সে তার বাবার সাথে যোগাযোগ করার শত চেষ্টা করেও ব্য*র্থ হয়েছে। তবে কি ওর ধারণাই ঠিক হলো। ওর সৎ মা ইতিমধ্যেই ওর বাবার কান বি*ষ মন্ত্র দ্বারা ভরে দিয়েছেন! যার জন্যই আজ আকস্মিক ভাবে শফিক সাহেব উপস্থিত হলেন! রিজওয়ান একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে পিছিয়ে গিয়ে মেহরিনের পাশে পুনরায় দাড়িয়ে পরে। মেহরিন সম্পূর্ণ বিষয়টাই লক্ষ্য করেছে। ওর কাছেও সম্পূর্ণ বিষয়টা পানির মতো স্বচ্ছ ও পরিস্কার। একে একে রফিকুল, ঊর্মিলা, শেফালি শফিক সাহেবকে সালাম জানায়। শফিল সাহেব ডাইনিং সাইডে তাকাতেই রাজিবুলকে সেখানে স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন….
—“কি ব্যপার, রাজিবুল ওখানে ওভাবে দাঁড়িয়ে আছে কেনো? আমার উপস্থিতি কি সে উপলব্ধি করতে পারছে না!”
রাহেলা জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো….
—“পারবে না কেনো! পেরেছে নিশ্চয়ই। মাত্রই খাওয়া শেষ করে উঠলাম আমরা সবাই। তাই হয়তো…!”
শফিক সাহেব ‘রাজিবুলের’ নাম ধরে ডাক দেন। রাজিবুল ডাক শুনতে পেয়ে চোখ তুলে তাকাতেই শফিক সাহেবকে দেখতে পেয়ে বিরক্তিতে মুখ দিয়ে ‘চ’ শব্দ উচ্চারণ করে আঙিনায় এসে নিরব হয়ে দাঁড়িয়ে রয়।
#চলবে ইনশাআল্লাহ………
#আমি_তোমারি_সনে_বেঁধেছি_আমারো_পরাণ💙(২৭)
#Maisha_Jannat_Nura(লেখিকা)
(৬৪)
শরীফ রাজিবুলকে নিজের তীক্ষ্ণ নজর দ্বারা পর্যবেক্ষণ করে সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন….
—“আমার বিশ্রামের প্রয়োজন। এখন আমি রুমে যাচ্ছি। সকলে নিজ নিজ কাজে যাও। বিকেল বেলা ঠিক ৪ টে নাগাদ সকলের যেনো বাড়িতে উপস্থিত থাকা হয়।”
এই বলে শরীফ সাহেব নিজ রুমের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলেন। রাহেলা ও আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে শরীফ সাহেবের পিছন পিছন চলে গেলেন। রাজিবুল একবার রিজওয়ানকে রাগান্বিত চাহুনি নিয়ে দেখে শেফালিকে উদ্দেশ্য করে বললো….
—“শেফালি! এক্ষুণি রুমে এসো।”
এই বলে সে নিজেও স্থান ত্যগ করে। শেফালি একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্বামী আজ্ঞা পালন করতে রুমে যায়। রফিকুল আর ঊর্মিলাও বাচ্চাদের নিয়ে রুমের দিকে অগ্রসর হয়। রুমি রিজওয়ানের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো…..
—“ভাইয়া, তোমাকে অন্যরকম লাগছে কেনো! বাবার আকস্মিক বাড়িতে চলে আসা নিয়ে তুমি নি সন্তুষ্ট নও?”
—“মা মা*রা যাওয়ার পর এই পৃথিবীতে আপন বলতে বাবা-ই আছেন। আজ আসার পর থেকে বাবা আমার দিকে ফিরেও তাকালেন না। বাবার ছায়াতল আমার উপর থেকে হারিয়ে গেলে আমি নিজেকে সামলাতে পারবো না বোন।”
রিজওয়ানের কথায় রুমির বুঝতে বাকি রয় না সে কি বুঝাতে চাইছে। রুমি শুকনো হাসি দিয়ে বললো….
—“সৎ ও ভালো মানসিকতার মানুষদের পাশে এই পৃথিবীর মানুষরা না থাকলেও পৃথিবীর ও মানবজাতির স্রষ্টা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা থাকেন। তার রহমতের ছায়াতল থেকে কেউ তাদের ব*ন্ঞ্চি*ত করতে পারে না কখনও। পৃথিবীতে এখনও অব্দি পা*পে*র রাজ্য তৈরি করা অমানুষদের ক্ষমতা এতোটাও বেড়ে যায় নি যে তারা আল্লাহ তায়ালার রহমতের ছায়াতলে থাকা তার বান্দাদের চুল পরিমাণ ও ক্ষতি করতে সক্ষম হবে। জীবন অনেক অ*ন্যায় করেছি তোমার সাথে ভাইয়া। কিন্তু এখন আল্লাহ আমার উপর থেকে অ*ন্যায়ের বোঝা হালকা করতে অনেক বড় একটা সুযোগ দিয়েছেন আমাকে। আমি সেই সুযোগকে বৃথা যেতে দিবো না। আম্মা আর বড় ভাইয়া বাবার মন বি*ষি*য়ে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন ঠিকই কিন্তু বাবার চোখের উপর থেকে তাদের ফেলানো মি*থ্যে ষ*ড়*য*ন্ত্রের পর্দা সরাতে আমি আমার শেষ র*ক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও চেষ্টা করবো৷ তোমার মাথার উপর থেকে এভাবে বাবার ছায়াতল সরে যেতে দিবো না আমি।”
রুমির কথাগুলো শুনে রিজওয়ান ও মেহরিনের হৃদয়জুড়ে পরম তৃপ্তি কাজ করতে শুরু করেছে। মেহরিনের দু’চোখে খুশির অশ্রুরা এসে ভীর জমিয়েছে। ওদের মনে সত্যের জয় হবেই তার কিছুটা আশ্বাস জেগেছে।
(৬৫)
শেফালি রুমে প্রবেশ করতেই রাজিবুল দরজাটা ভিতর থেকে আটকে দিয়ে শেফালির পিছন থেকে ওর মাথার চুলগুলো নিজের পাঁচ আঙুলের ভাঁজে নিয়ে দেওয়ালের সাথে ওর মুখের বামপার্শ চেপে ধরে রাগে রি রি করতে করতে বললো…..
—“খুব নারী শক্তি জেগে উঠেছে তোর মাঝে তাই না! সবার সামনে আমাকে এই রাজিবুলকে থা*প্প*ড় দিয়েছিলি তুই। কোন হাত দিয়ে যেনো থা*প্প*ড়*টা দিয়েছিলি! এই হাত তাই না! এই হাত!”
এই বলে রাজিবুল শেফালির ডান হাত ওর পিঠের পিছনে বেঁকে ধরে। গাল, চুল ও হাত তিন দিকের য*ন্ত্র*ণা*য় মুখ দিয়ে কেবল গো*ঙা*নি*র মতো আওয়াজ বের করছে শেফালি। দু’চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে নোনাজলরা গড়িয়ে পড়ছে। রাজিবুল আবারও বললো…
—“সতি সাধ্যি সাজার শখ জেগেছে খুব। নিজের স্বামীর হুকুম অ*মান্য করে ঐ রিজওয়ানের পক্ষ নিবি তুই এমনটাই তো বলেছিলি তাই না! এই মুখ দিয়েই তো ঐ শব্দ গুলো বের করেছিলি তাই না!”
এই বলে রাজিবুল আরো শক্ত ভাবে শেফালির মুখ দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে। সে যেনো চাইছে দেওয়ালের ভিতর শেফালির সম্পূর্ণ শরীরটা ঢুকিয়ে দিতে। য*ন্ত্র*ণায় শেফালি মেঝের উপর পা দিয়ে আ*ঘা*ত করছে। রাজিবুল শেফালির কানের কাছে মুখ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে হি*স*হি*সি*য়ে বললো…..
—“শরীফ সাহেব এভাবে বাড়িতে হাজির হবেন এ বিষয়ে আমি পূর্ব থেকে অবগত ছিলাম না। বিগত দিনগুলো ধরে যা করে এসেছিস তার যে প্রভাব আমার উপর পরেছে তা আমি আমার মন ও মস্তিষ্ক থেকে বের করে দিবো। তোকে আগের ন্যয় ভালোবাসবো। শেহজাদ আর তোকে নিয়ে আগের মতো সুখে-শান্তিতে সংসারও করবো কিন্তু আমার দু’টো শর্ত তোকে কোনো প্রশ্ন ছাড়া মেনে নিতে হবে। ১ম শর্ত হলো তোকে আগের মতো হয়ে যেতে হবে। সেই শেফালি হতে হবে যে ছিলো অত্যন্ত লো*ভী, স্বামী-সন্তান বলতে অ*ন্ধ। স্বামীর সকল কাজে যে সমানতালে সঙ্গ দিতো। রিজওয়ান আর ওর স্ত্রী ছিলো যার দু’চোখের বি*ষ। ২য় শর্ত হলো আজ বিকালে যখন বাবা বৈঠক বসাবেন তখন আমার আর আম্মার বুঝানো কথার প্রেক্ষিতে তিনি তোকে যা যা প্রশ্ন করবেন তার উত্তর আমার মন মতো করে দিবি। সেখানে আমার বিরোধিতা করে কিছু বলবি না। যদি আমার শর্তগুলো না মানিস, আজ তোর জন্য আমি বাবার সামনে ফেঁ*সে গেলে এই বাড়ি ও যাবতীয় সয়-সম্পত্তি থেকে বন্ঞ্চিত হলে তোকে আমি ছেড়ে কথা বলবো না৷ এ বাড়ি থেকে আমার বেড়িয়ে যেতে হলে খুব তাড়াতাড়ি বাড়ির সামনে গেইটের উপর তোর লা*শ ঝুলন্ত অবস্থায় পাবে ওরা। আমার হাত থেকে তখন তোকে কেউ বাঁ*চাতে পারবে না।”
এই বলে রাজিবুল শেফালিকে ছেড়ে দিয়ে রুমের দরজা খুলে বাহিরে চলে যায়। শেফালি দেওয়াল ঘেঁষে মেঝের উপর বসে পরে। ওর দু’চোখ দিয়ে এখনও নোনাজলরা গড়ে পড়ছে। কিয়ৎক্ষণ নিরবে কান্না করার পর শেফালি একহাত দিয়ে নিজের অশ্রু গুলো মুছে নিয়ে বললো…..
—“এতো তাড়াতাড়ি আমাদের ১২ বছরের গড়ে তোলা ভালোবাসার সমাপ্তি ঘটবে আমি ভাবি নি।”
(৬৬)
শরীফ সাহেব ফ্রেশ হয়ে সবেমাত্র বিছানায় নিজের শরীরটা এলিয়ে দিয়েছেন৷ সেইসময় রাহেলা শরীফের পাশে বসে বললো…..
—“আমার এক কথায় তুমি সত্যিই চলে আসবে আমি ভাবতে পারি নি গো। আসার আগে জানাও নি যে এটা অনেক ভালো করেছো। নয়তো তোমার মুখোশধারী ছেলে তোমার সামনে সত্যের প্রকাশ যেনো না ঘটে তার জন্য আরো বড় কোনো ষ*ড়*য*ন্ত্র তৈ……!”
রাহেলা সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে পারে না। তার পূর্বেই শরীফ চোখ বন্ধ অবস্থায় নিজের হাত উঁচিয়ে রাহেলাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন…..
—“আমার বিশ্রামের প্রয়োজন। যা বলার বিকালে সবার সামনে বলিও। এখন নিরব থাকো।”
শরীফের এরূপ কথায় অ*স*ন্তু*ষ্ট হন রাহেলা। তবুও নিজের অ*স*ন্তু*ষ্টি ভাবকে নিজের মধ্যেই দাবিয়ে রেখে শরীফের পাশ থেকে উঠে রুম থেকে বেড়িয়ে যান।
(৬৭)
নিজরুমে বিছানায় পাশাপাশি বসে আছে ঊর্মিলা আর রফিকুল। ঊর্মিলার চেহারায় অসন্তুষ্টি ও রাগের ছাপ স্পষ্ট ফুটে আছে। রফিকুল ও নিরব হয়ে বসে আছে। নীরবতার দেওয়াল ভে*ঙে ঊর্মিলা বললো…..
—“কা*পুরুষের মতো ডাইনিং টেবিলে বসে অনরগল ভাবে খাবার গুলো গিলতে একটুও লজ্জা করছিলো না তোমার তাই না?”
ঊর্মিলার এরূপ প্রশ্নে অবাক হয় না রফিকুল। শান্ত স্বরে সে বললো…..
—“কি করতাম আমি তখন!”
—“কি করতে মানে! তোমার ভাই আমার শরীরে হাত উঠানোর জন্য উদ্যত হয়েছিলো মাঝখানে ভাবী না আসলে আমার গালে আজ তোমার ভাইয়ের থা*প্প*ড়ে*র দাগ জ্বল জ্বল করতো। এতো বড় একটা ঘটনা দেখেও জিজ্ঞাসা করছো তুমি কি করতে?”
—“ওখানে ভাবীর হয়ে ওভাবে কথা না বললেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না৷ কে বলেছিলো তোমায় মুখের লা*গা*ম ছুটাতে!”
রফিকুলের এরূপ প্রতিত্তুর ঊর্মিলার রাগের মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। ঊর্মিলা রফিকুলের সম্মুখে ঘুরে একহাতে ওর মুখ চে*পে ধরে হি*স*হি*সি*য়ে বললো…..
—“অ*ন্যায়ের প্র*তি*বাদ করতে জানো না আর আমাকে বলতে এসেছো আমি কেনো মুখের লা*গা*ম ছু*টি*য়েছি! আজ বিকালে বাবার সামনে যদি নিজের মা আর ভাইয়ের সমর্থন নিয়ে একটা কথাও বলেছো তাহলে তোমার পুরুষত্বের যে ছিটেফোঁটাও বাকি আছে তা ঘু*চি*য়ে হাতে চুড়ি পড়িয়ে ঘরে বসে রাখবো আমি বুঝলে!”
এই বলে ঊর্মিলা রফিকুলের মুখ ছেড়ে দিয়ে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমের ভিতরে প্রবেশ করে। ঊর্মিলার এমন কাজে রফিকুলের সম্পূর্ণ শরীর যেনো মুহূর্তের মধ্যেই ঘামে ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছে। সে নিজের মুখে হাত বুলাতে বুলাতে বার কয়েক শুকনো ঢো*ক গি*লে।
#চলবে ইনশাআল্লাহ………
#আমি_তোমারি_সনে_বেঁধেছি_আমারো_পরাণ💙(২৮)
#Maisha_Jannat_Nura(লেখিকা)
(৬৮)
বিকেল বেলা,
রিজওয়ানদের বাড়ি জুড়ে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে। আঙিনায় মাঝ বরাবর চেয়ারে বসে আছেন শরীফ সাহেব। তার পাশে রাজিবুল, রাহেলাও বসে আছে। বাকিরা সবাই দাঁড়িয়ে আর বাচ্চারা নিজ নিজ রুমে আছে। শরীফ সাহেব তীক্ষ্ণ নজরে সকলকে একবার দেখে নিয়ে রাজিবুলকে উদ্দেশ্য করে বললেন….
—“রাজিবুল, তোমার নাকে এই বে*ন্ডে*জটা কিসের! আ*ঘা*ত পেলে কি করে?”
রাজিবুল রিজওয়ানের দিকে একপলক তাকিয়ে বললো….
—“বাবা, আমি আর রফিকুল তো আপনার সৎ সন্তান। আপনি আমাদের জন্ম দেন নি। আপনার সাথে, এই বংশের সাথে আমাদের র*ক্তে*র কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের জন্মদাত্রী মা’য়ের সাথে আপনি ২য় বার বৈবাহিক বন্ধনে আবব্ধ হয়েছিলেন সেই সূত্রে আপনি আমাদের বাবা আর আমরা আপনার সন্তান। কিন্তু সৎ যে সৎ ই হয়, সৎ কে কখনও আপন ভাবা যায় না এমন চিন্তার ও বহিঃপ্রকাশ বিগত ১৭ বছর ধরে এই বাড়িতে আমরা থাকাকালীন সময়ে বহুবার। এটা অস্বীকার করবো না যে, আপনি আমাদের সন্নিকটে থাকাকালীন কখনও বাবার অভাব কিংবা অন্য কোনো কিছুর অভাব অনুভব করতে দেন নি৷ আমরা যেনো স্বচ্ছল ভাবে নিজেদের জীবন কাটাতে পারি তাই আপনি নিজের পরিবার, দেশকে ছেড়ে প্রবাসে গিয়ে থেকেছেন। নিজের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিন-রাত পরিশ্রম করে আমাদের জন্য অর্থ পাঠিয়েছেন। কিন্তু সত্যি কথা বলতে আপনার রোজগার করা অর্থ ও এ বাড়ির সয়-সম্পত্তির উপর আমার কিংবা আমার ছোট ভাই রফিকুলের কোনো অধিকার নেই এটাও আমাদের খুব ভালো ভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা যে উড়ে এসে জুড়ে বসা মানুষ এমন চিন্তা রাখার মতো মানুষও যথেষ্ট আছে এ বাড়িতে। আমরা এ বাড়ির কোনো কাজে, কোনো সিদ্ধান্তে মতামত পেষণ করতে পারি নি কখনও আর পারবোও না এমনটাও আমাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আপনার অগোচরে। যখন এসব অ*ন্যায় অ*ত্যা*চার সহ্য করতে না পেরে আমি জোর খাটানোর সামান্যতম ও চেষ্টা করতাম তখনই রিজওয়ান আমাকে যা*চ্ছে তাই ভাবে মারতো। সেসব ক্ষ*ত শুকিয়ে গিয়েছে শরীর থেকে ঠিকই কিন্তু মনের উপর যে দা*গ গুলো বসেছে তা মৃ*ত্যু না হওয়া পর্যন্ত ভোলা সম্ভব না। কিছুদিন আগেই আমার নাকে বা*জে ভাবে আ*ঘা*ত করেছিলো রিজওয়ান। যার ফলস্বরূপ আজও আমি আমার নাক থেকে ব্য*ন্ডে*জটা খুলতে পারি নি।”
রাজিবুলের মুখে এরূপ কথাগুলো শুনে রিজওয়ান বা উপস্থিত কেউ ই বিন্দুমাত্র অবাক হয় নি। কারণ রাজিবুল যে রিজওয়ানকে ফাঁ*সা*তে এমন কিছুই বলবে তা সবাই আগে থেকেই খুব ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছিলো। শফিক সাহেব গম্ভীর মুখশ্রী নিয়ে বসে আছেন। রাজিবুলের কথার তালে তাল মিলিয়ে রাহেলা ন্যকা কান্নার স্বরে বললেন….
—“এ সংসারকে ও রাজিবুল-রফিকুল-রুমির মতো রিজওয়ানকেও আমার সন্তান হিসেবে গ্রহন করেছিলাম আমি। ওর ভালো লাগা, খারাপ লাগা, ইচ্ছে-অনিচ্ছা গুলোর দিকে সর্বদা সতর্ক থাকতাম। তবুও আমরা কেউ ওর মনে বিন্দুমাত্র জায়গা করে নিতে পারি নি। সর্বদা আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে এসেছে ও। রাজিবুল-রফিকুল এ বংশের সন্তান নয় বলে ওদের উঠতে বসতো খোঁ*টা দিয়ে এসেছে। সাংসারিক অ*শান্তি এড়াতে এতোগুলো বছর ধরে আমরা সবাই ওর সকল অ*ন্যায়, দূ*র্ব্যবহার মুখ বুঝে সহ্য করে এসেছিলাম।
সহ্য করতে করতে এখন আমাদের সব সহ্যক্ষমতা শেষ হয়ে গিয়েছে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি যাকে বলে। তুমি এ বাড়ির প্রধান কর্তা। নিজের ১ম স্ত্রীর সন্তানের করা অ*ন্যায় গুলোকে সাপোর্ট করবে নাকি আমাদের উপর হওয়া অ*ন্যায়, অ*বিচারের জন্য রিজওয়ানকে শা*স্তি প্রদান করবে সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নাও।”
এই বলে রাহেলা থেমে যায়। শরীফ সাহেব চোখ তুলে রাহেলার দিকে তাকিয়ে বললেন….
—“এক পাক্ষিক মতামত শুনে বিচার করলে সেটাকে সঠিক বিচার বলবে না কেউ রাহেলা। তোমরা তোমাদের মত পেষণ করলে ঠিক আছে। এবার রিজওয়ানের মুখ থেকে আমার শোনা উচিত সে আসলে তোমাদের নিয়ে কেমন চিন্তাধারা রাখে।”
রাজিবুল কিছুটা বিরক্তির স্বরে বললো….
—“ওর মতামত শোনার কি আছে এখানে বাবা! ও তো এখন নিজেকে বাঁচাতে আমাদের বিরুদ্ধে উল্টো-পাল্টা কথা বলবেই। দুই পাক্ষিক মতামত শুনে তোমারই বরং একটা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হবে।”
রাহেলা ন্যকা কান্নার স্বরে বললেন….
—“থাম রে বা’জান, থাম তুই। তোর বাবার আমাদের প্রতি থাকা বিশ্বাসের জায়গাটা যে ঠিক কতোটা মজবুত তা তার কথার মধ্য দিয়েই বোঝা হয়ে গিয়েছে আমার। আমরা এতোগুলো বছর ধরে অ*ন্যায়-অ*ত্যা*চার সহ্য করে আসতে পেরেছি যখন তখন রিজওয়ানের মুখ থেকে আমাদের নিয়ে মি*থ্যে রটনা গুলোও শুনে সহ্য করে নিতে পারবো। তোর বাবা যদি আজ নায্য বিচার না করেন তাহলে আমাদের এক কাপড়ে এ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার মতো মানসিক শক্তি আছে।”
শরীফ সাহেব বললেন….
—“তোমরা যদি সত্যি বলে থাকো তাহলে তোমাদের আমার সিদ্ধান্তের উপর ভরসা রাখা উচিত। ভালো-খারাপ, সত্য-মি*থ্যার মধ্যে পার্থক্য বোঝার বয়স আমার যথেষ্ট হয়েছে। এমনি এমনিই মাথার সব চুলগুলো সাদা বর্ণ ধারণ করে নি। তাই অহেতুক কথা বাড়িয়ে সকলের মূল্যবান সময় ন*ষ্ট করো না তোমরা।”
রাহেলা আর রাজিবুল এবার নিরব হয়ে যায়। শরীফ সাহেব রিজওয়ানকে উদ্দেশ্য করে বললেন…..
—“রিজওয়ান, তুমি খুব ভালো ভাবেই জানো তুমি আমার কাছে তোমার মায়ের রেখে যাওয়া মহা মূল্যবান আমানত। তোমার দিকে আমি যখন-ই তাকাই তখন-ই তোমার মায়ের মায়া মাখানো, মন জুড়ানো মুখশ্রী আমার সামনে জ্বল জ্বল করে ভাসে। তোমার মা’কে আমি বড্ড ভালোবাসতাম। আজও আমার হৃদয়ের গহীনে তোমার মায়ের জন্য ভালোবাসা বেঁচে আছে। সে আমাদের সঙ্গে না থাকলেও আমার মন ও মস্তিষ্ক জুড়ে বেঁচে আছে। ওর সাথে কাটানো ১০ বছরের সংসার জীবনের সুমধুর সময়গুলোর স্মৃতি আমি আজও ভুলতে পারি নি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তা ভোলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সংসারের খরচ যোগানোর জন্য আমাকে কাজ করতে বাহিরে যেতে হবে। এই এতো বড় বাড়ি জুড়ে সদ্য মা হারা ৯ বছরের শিশু সন্তান তোমাকে একলা রেখে যাওয়া আমার পক্ষে অ*সম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। তোমার একাকিত্ব দূর করতে, তোমাকে মায়ের ভালোবাসা, ভাইয়ের স্নেহ দিতে পারবে এমন চিন্তা করেই আমি রাহেলার সাথে ওর দুই ছেলে সন্তান সমেত ২য় বার বৈবাহিক বন্ধনে আবব্ধ হওয়ার মতো এতো বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আজ দীর্ঘ ১৭ বছর পর এসে আমাকে শুনতে হচ্ছে তুমি ওদের কাওকে নিজের আপন মনে করো নি কখনও। ওদের সাথে দূ*ব্যবহার করেছো। এমনকি রাজিবুল যে তোমার থেকে ৬ বছরের বড় তার শরীরেও যখন ইচ্ছে তখন যা*চ্ছে তাই ভাবে আ*ঘা*ত করেছো। ওদের খোঁ*টা দিয়েছো। এসব কি তুমি সত্যিই ঠিক করেছো?”
রিজওয়ান কিছু বলার পূর্বেই রাহেলা বললেন……
—“এমন ইমোশনাল ভাবে কথা বলে তুমি রিজওয়ানকে আরো সাহস দিচ্ছো আমাদের নামে বানোয়াট কাহিনী সাজানোর জন্য৷ একটু কঠিন হ……!”
রাহেলা সম্পূর্ণ কথা শেষ করার পূর্বেই শরীফ সাহেব রাহেলার দিকে রাগে ভরপুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। সঙ্গে সঙ্গেই রাহেলার বাকিগুলো গলা পর্যন্ত এসেও আটকে যায়। রাহেলা শরীফ সাহেবের দৃষ্টি উ*পে*ক্ষা করতে না পেরে গলায় বে*ধে যাওয়া কথা গুলো বার কয়েক ঢো*কের সাহায্যে গি*লে নেন। রুমি বললো….
—“বাবা আমি কিছু বলতে চাই।”
শরীফ সাহেব অনুমতি দিলে রুমি পুনরায় বললো….
—“বাবা, আপনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন আমি জানি। আপনি আম্মা, বড় ভাইয়াকেও যথেষ্ট ভালোবাসেন এ কথাও আমি জানি। রিজওয়ান ভাইয়ের বিরুদ্ধে তাদের করা এই অ*ভি*যোগের সম্পূর্ণ বি*রো*ধীতা করছি আমি। কারণ রিজওয়ান ভাইয়ের. নামে এতো সময় ধরে আম্মা আর বড় ভাইয়া যা যা বলেছেন মূলত সেগুলোই ছিলো বানোয়াট ঘটনা। আপনি ওদের এক পাক্ষিক কথার উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেন নি দেখে ভিষণ ভালো লাগলো। আপনি বড় ও মেজো ভাবী এমনকি শেহজাদ, ঊষার মুখ থেকেও আসল সত্যটা শুনতে পারবেন। কারণ মি*থ্যু*করা শত চেষ্টা করলেও সমাজের চোখের সামনে থেকে সত্যের পর্দা সরিয়ে মি*থ্যার পর্দা ফেলতে সক্ষম হবেন না। সত্যের জয় সবসময় হবেই। বাচ্চারা অন্তত আমরা বড় মানুষদের মতো গুছিয়ে মি*থ্যা কথা বলতে পারবে না।”
রুমির মুখে এরূপ কথা গুলো শুনে তেলে-বেগুনে শরীর জ্ব*লে উঠে যেনো রাজিবুলের। কিন্তু বাবার সামনে তার বহিঃপ্রকাশ করতে পারবে না।
#চলবে ইনশাআল্লাহ……..