#আমি_তোমারি_সনে_বেঁধেছি_আমারো_পরাণ💙(২৩)
#Maisha_Jannat_Nura(লেখিকা)
(৫৪)
রিজওয়ানের মু*চ*ড়ে ধরা সেই হাতে হাত বুলাতে রাজিবুল আঙিনা থেকে সোজা নিজের মা রাহেলা বেগমের রুমে এসে দরজার পাশে থাকা ছোট টেবিলের উপর রাখা ফুলদানিটা হাতে নিয়ে স্বজোরে মেঝের উপর আ*ছা*র মা*রে। রাহেলা বিছানার কর্ণিশে দাঁড়িয়ে নিজের পানের বাটি সাজাচ্ছিলেন। আকস্মিক কিছু ভাঙার শব্দ শুনতে পেয়ে তিনি কিছুটা ভরকে গিয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই রাজিবুলকে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে দেখলেন। রাহেলা দ্রুত পায়ে কিছুটা সামনে এগিয়ে আসতেই মেঝের উপর কাঁচের ফুলদানির অংশগুলো কয়েকশত টুকরোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেখতে পেয়ে বললেন….
—“রাজিবুল! বা’জান আমার, কি হয়েছে তোর? ফুলদানিটা ভাঙলি কেনো? তোকে দেখেও তো মনে হচ্ছে অনেক রেগে আছিস। ঐ রিজওয়ান আর ওর বউ আবার কিছু করেছে নাকি!”
রাজিবুল রাগী স্বরে বললো….
—“ওরা নিশ্চুপ থাকে কখন মা! যেদিন থেকে রিজওয়ান আমাদের মুখে মুখে কথা বলতে শুরু করেছে সেদিন থেকে এই বাড়িটা আমার জন্য জা*হা*ন্না*মে পরিণত হয়ে গিয়েছে। আমার যেনো কোনো ক্ষমতাই নেই এ বাড়িতে। পুরো রাজত্ব ঐ রিজওয়ানের। আমার থেকে শারিরীক দিক দিয়ে একটু বেশি সক্ষম হওয়ায় যখন তখন আমাকে আ*ঘা*ত করে বসে ও। এখন তো আমার ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে। শেফালি আর ঊর্মিলার মতো মেয়েদেরও নিজেদের বশে করে নিয়েছে ওরা। আমাদের দল এখন পাতলা হয়ে গিয়েছে মা। রফিকুলকে তো চিনোই। বউ বলতে অ*ন্ধ সে। বউ যা বলবে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করাই স্বভাব ওর। আজ শেফালি আর ঊর্মিলাকে হাত করে নিয়েছে ঐ রিজওয়ান আর ওর বউ। কাল ঊর্মিলাকে দিয়ে রফিকুলকেও নিজেদের হাতের পুতুল বানিয়ে ফেলবে। বাবা পুনরায় দেশে ফিরলে শুধু মাত্র তোমার আর আমার কথা মেনে নিয়ে রিজওয়ান আর ওর বউকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিবে না আমি নিশ্চিত।”
রাজিবুলের কথাগুলো শুনে রাহেলার মুখশ্রীতে চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট হয়। রাহেলা বললেন….
—“দরজা বন্ধ কর। আর সাবধানে বিছানায় এসে বোস। তোকে তো একটা বিষয় সম্পর্কে এখনও জানানোই হয় নি।”
রাজিবুল নিঃশব্দে মায়ের কথা মেনে নিয়ে দরজা আটকে দিয়ে সাবধানে বিছানায় এসে বসে। রাহেলা রাজিবুলের সম্মুখপানে বসে বললেন….
—“শরীফ সাহেবের কানে বি*ষ মন্ত্র আমি অনেক আগেই ঢেলে দিয়েছি। আর কাজটা এতোই নিঁখুত ভাবে শেষ করেছি আমি যে শরীফ সাহেব দেশে আসার পর আমাদের কথার গুরুত্বই বেশি দিবেন। আর রইলো শেফালি আর ঊর্মিলার উপর থেকে আমার সতীনের ছেলের বশ ম*ন্ত্র কাটানোর বিষয়! সেটা করা আমাদের বা হাতের খেলা। ভুলে যাস না তোর একটা ছেলে আছে আর রফিকুলের একটা মেয়ে আছে। ওরা দু’জনই ওদের মায়েদের কলিজার ধন। যদি শেফালি আর ঊর্মিলা আমাদের কথানুযায়ী কাজ না করে রিজওয়ান আর ওর বউয়ের দলে যোগ দেয় তাহলে ওদের সংসার জীবন ও মা ধর্মের সমাপ্তি খুব শীঘ্রই ঘটিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করবো আমরা। ছেলে-মেয়েদের থেকে কিছুদিন দূরে থাকলেই সব ভীমরতি ছুটে যেতে বাধ্য হবে।”
রাহেলার কথাগুলো শুনে রাজিবুলের ঠোঁটে বাঁকা হাসির রেখা ফুটে উঠে। রাহেলা আবারও বললেন…..
—“শেফালিকে কন্ট্রোলে আনার দায়িত্ব তোর বা’জান। আর ঊর্মিলাকে কন্ট্রোলে আমি আনবো। আর সেটা আজই৷”
অনেকদিন ধরেই নিজের আসলে রূপ দেখাই না বউমাদের।
(৫৫)
রিজওয়ান শেফালির সামনে এসে দাঁড়িয়ে শান্ত স্বরে বললো…..
—“বড় ভাবী…একটা কথা মনে রাখবেন অ*ন্যায় যে করে আর অ*ন্যায় যে সহে দু’জনেই সমপরিমাণ অপ*রা*ধের অপ*রা*ধী হয়। এই বাড়িতে আসলে মানুষ কে আর মানুষরূপী ‘কা * ল সা * প’ কে বা কারা তা আপনাদের ২জনের একজনকেও ভেঙে বুঝিয়ে দিতে হবে না। এই ক্ষণকালীন এক জীবনে ভালো থাকার জন্য অ*ন্যায় কারীদের সঙ্গ দিতে গিয়ে মৃত্যুর পরের চিরস্থায়ী জীবনকে ধ্বং*সের মুখে ঠেলে দেওয়ার মতো ভু*ল করবেন না। নিজে শক্ত থাকুন ও অ*ন্যা*য়ের বিরুদ্ধে প্র*তি*বাদ করুন। এর ফলে পুরো দুনিয়া আপনাদের বিপক্ষে চলে গেলেও আপনাদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াবে এই ছোট ভাই টা।”
এই বলে রিজওয়ান মেহরিনকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিজেদের রুমে চলে যায়। শেফালি আর ঊর্মিলা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিজওয়ানের বলে যাওয়া প্রতিটি শব্দ এখনও যেনো ওদের কানে বাজছে।
মেহরিন আর রিজওয়ান নিজরুমে আসার পর মেহরিন বললো….
—“চেয়ারম্যনের ছেলে জিহাদের সাথে রুমির বিষয়ে কথা বলতে চেয়েছিলে তো, এখনও বলা হলো না তোমার!”
—“একটার পর একটা স*ম*স্যা লেগেই আছে। বসের ছোট্ট মেয়েটার কি ক*রু*ণ অবস্থা যাচ্ছে। জানি না কতোদিনে সুস্থ হয়ে উঠবে ঐ ছোট্ট বাচ্চাটা। আবার বাড়িতে অ*শান্তি করার মানুষের তো অভাব নেই। বাবার সাথেও কোনো যোগাযোগ করতে পারলাম না এখনও। যখনই কল করছি ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। অনলাইন এ’ও এক্টিভ হয় নি সেদিনের পর থেকে। সবকিছুর ভিড়ে জিহাদের সাথে কথা বলার বিষয়টা আমার মাথা থেকেই বেড়িয়ে গিয়েছিলো। আজ বিকালে আমি জিহাদের সাথে দেখা করবো। আমার ফোনটা নিয়ে রুমির কাছে যেও একবার। জিহাদের ফোন নাম্বারটা নিতে হবে। আর ওকে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে যে পার্কটা আছে ওখানে ৪ টার পর আসতে বলতে হবে।”
—“আচ্ছা ঠিক আছে।”
(৫৬)
শেফালি নিজরুমে প্রবেশ করতেই দেখে রাজিবুল ওদের ছেলে শেহজাদকে নিয়ে বিছানায় বসে আছে। রাজিবুল শেহজাদকে কোনো একটা বিষয় নিয়ে বুঝাচ্ছিলো। শেফালিকে দেখা মাত্র সে চুপ হয়ে যায়। শেফালি কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেও রাজিবুলকে কিছু না বলে বিছানার একপার্শে বসে শেহজাদকে নিজের কাছে ডাকে। কিন্তু শেহজাদ শেফালিকে অবাক করে দিয়ে বিছানা থেকে নেমে এক দৌড়ে রুমের বাহিরে চলে যায়। শেফালি অবাক হয়ে শেহজাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয় কিছুসময়। নিজের কাজে সফল হয়েছে কিছুটা দেখে রাজিবুলের ঠোঁটের কোনে হালকা হাসির রেখা ফুটে উঠে। শেফালি রাজিবুলের দিকে তাকিয়ে বললো….
—“শেহজাদকে আমার বিরুদ্ধে কি উল্টো পাল্টা বুঝালে তুমি এতো সময় ধরে রাজিব?”
রাজিবুল কোনো প্রতিত্তুর করলো না। শেফালি আবারও বললো….
—“যেই ছেলে মা ছাড়া কিছুই বুঝতো না। সব কাজে, ভালো লাগা-খারাপ লাগায় যার সঙ্গী ছিলাম আমি আজ তাঁকে নিজের কাছে ডাকায় সে কি না ছুটে বাহিরে চলে গেলো! এটা তো নরমাল বিষয় লাগছে না আমার। কি বলেছো তুমি আমার ছেলেকে রাজিব? আমি উত্তর চাই।”
রাজিবুল বাঁকা হেসে বললো….
—“অনেক লম্বা সময় দিয়েছিলাম তোমায় নিজেকে শুধরে নাও। তোমার এই পরিবর্তন ও অতি ভালো মানুষি চাল-চলন মোটেও পছন্দ হয় নি আমার। কিন্তু আমার কথা তুমি ভিষণ ই সাধারণ ভাবে নিয়েছো। আজ তোমার জন্য রিজওয়ান আবারও আমার শরীরে হাত দেওয়ার সাহস দেখিয়েছিলো। কি ভেবেছিলে তোমার এই কর্মকান্ডের জন্য কোনো ফল তুমি ভোগ করবে না! এতো সহজে ছেড়ে দিবো আমি তোমায়!”
শেফালি রাগী স্বরে বললো….
—“তুমি যে আসলে কতো বড় অ*মানুষ তা আমার বোঝার বাকি নেই। ভালো ভাষায় বলে নিজের অ*ন্যায় কাজের সঙ্গী হিসেবে পাচ্ছো না আমায় তাই আমার দূর্বলতাকে ব্যবহার করছো। আমার প্রতি ছেলের মন বি*ষি*য়ে দিয়ে ওকে আমার থেকে দূরে সরানোর মতো নিম্ন কাজে নেমেছো। তবে একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো, তোমাদের মতো অ*মানুষদের সঙ্গ দিয়ে বিগত ১২ বছরে অনেক অ*ন্যায় করেছি, অনেক পা*প করেছি, ভালো মনের মানুষদের সাথে দূ*ব্যবহার করেছি, মুখের অ*প*ব্যবহার করেছি কিন্তু এখন থেকে আর সেসব করবো না। তুমি যতো নিচে নামার নামতে পারো। আমি সৎ পথে যখন একবার উঠেছি এ পথ ছেড়ে অ*সততার পথে আর পা বাড়াবো না কখনও। সৎ পথে চলতে গিয়ে যদি আমাকে আমার সংসার ও সন্তান উভয়কেই হারাতে হয় তাতেও কোনো আফসোস থাকবে না।
এই বলে শেফালি রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। শেফালির বলা কথাগুলো শুনে রাগে রাজিবুলের সর্বশরীর থর থর করে কাঁপছে যেনো। এই কোন শেফালিকে দেখছে সে! এই শেফালি তো সম্পূর্ণ নতুন রূপ নিয়ে দাঁড়িয়েছিলো তার সামনে। একে কি আদেও কা*বু করা সম্ভব হবে না রাজিবুলের পক্ষে!
#চলবে ইনশাআল্লাহ……
#আমি_তোমারি_সনে_বেঁধেছি_আমারো_পরাণ💙(২৪)
#Maisha_Jannat_Nura(লেখিকা)
(৫৭)
ঊর্মিলা সবেমাত্র গোসল সেরে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়েছে সেইসময় রফিকুল রুমে প্রবেশ করে তাড়া দিয়ে বললো….
—“আম্মা তোমাকে এক্ষুণি তার রুমে যেতে বলেছেন। জরুরী কোনো বিষয় নিয়ে তার তোমার সাথে কথা বলার আছে বললেন।”
ঊর্মিলা চুল মুছতে মুছতে বললো….
—“আচ্ছা।”
মিনিট পাঁচ পেরিয়ে গেলেও ঊর্মিলাকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে নিজের শারীরিক যত্ন নিতে দেখে রফিকুল কিছুটা রাগী স্বরে বললো….
—“মায়ের কাছে যেতে বলেছি, কোনো পাত্রপক্ষের সামনে বসতে বলি নি যে এতো যত্ন নিয়ে সাজতে হবে তোমায় এখন!”
রফিকুলের এমন কথায় বিরক্ত হয় ঊর্মিলা। রফিকুলের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো….
—“তোমার মা’কে দেখানোর জন্য আমি সবসময় পরিপাটি হয়ে থাকি না। সবেমাত্র গোসল সেরে বের হয়েছি। ভেজা চুলগুলো মুছে চিরুনিই করছিলাম যা এতেই অতিরিক্ত সাজগোছ করা হলো আমার! আর এতো তাড়া দেওয়ারই বা কি আছে এখানে? তোমার মা ডেকেছে বলেছো আমি শুনেছিও। এখন যখন আমার সময় হবে আমি যাবো।”
রফিকুল কিছুটা আটকানো স্বরে বললো….
—“তুমি নিজেই তো বলেছিলে আম্মার সঙ্গ হয়ে থাকতে সবসময়। বড় ভাইয়া রুমিকে ব্যবহার করে বাহ্যিক থেকে সম্পত্তি, টাকা-পয়সা হ*র*ণ করবে আমরা যেনো ঘরোয়া সম্পত্তি গুলো হ*র*ণ করতে পারি তার ব্যবস্থা করতে হবে। আমি তো সেই কথা ভেবেই তাড়া দিলাম তোমায়। আম্মা কি বলে তা দ্রুত শুনতে যাও।”
ঊর্মিলা শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে রফিকুলের পাশে এসে বসে ওর হাতের উপর নিজের হাত রেখে বললো…..
—“বহুবছর ধরে আমরা মরুভূমির পথ ধরে হেটে যাচ্ছিলাম। সামনে পানি আছে মনে করে মরিচিকার পিছনে ছুটছিলাম। আমাদের চোখের সামনে পরে থাকা লো*ভে*র পর্দাটা সরে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। কে আমাদের আসলে আপন আর কে আমাদের পর তা আমরা একটু ভালো ভাবে লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবো। একটা সত্য কথা শুনতে তিক্ত লাগলেও বলতে হচ্ছে আমায়। তোমার বড় ভাই কেবল নিজের স্বার্থ টা বুঝেন। নিজের স্বার্থ হাসিল করার জন্য উনি নিজের মা, বোন, ভাই সবাইকেই ব্যবহার করবেন কেবল। যখন তার স্বার্থ পুরোপুরি ভাবে হাসিল হয়ে যাবে তখন তিনি তোমাদের সবাইকে আ*স্তা*কুঁ*ড়ে ছুঁ*ড়ে ফেলে দিতে দু’বার ভাববেন না। তোমার মায়ের কাছে তোমার ও রুমির গুরুত্ব ততোটা নয় যতোটা তোমার বড় ভাইয়ের গুরুত্ব রয়েছে। নয়তো নিজের ছেলের ভালোর কথা চিন্তা করে মা হয়েও নিজের মেয়েকে কো*র*বা*নির প্রাণী বানাতে পারতেন না। কাল তোমার বোনের মতো তোমাকেও যে কু*র*বা*নি*র প্রাণী ঐ মহিলা বানাবেন না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই৷”
ঊর্মিলার মুখে এরূপ কথাগুলো শুনে রফিকুলের কপালে চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট হয়। কিয়ৎক্ষণ যাবৎ সম্পূর্ণ পরিবেশে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করে। নীরবতার দেওয়াল ভেঙে রফিকুল বললো….
—“আপন বলতে কি তুমি রিজওয়ান আর ওর স্ত্রীকে বুঝাচ্ছো ঊর্মি!”
—“রিজওয়ান আর মেহরিনের সাথে আমরা কম দূর্ব্যবহার করি নি বিগত সময়ে। তবুও সব ভুলে গিয়ে সেদিন মেহরিন নিজের জীবনের ঝুঁ*কি নিয়ে আমাদের মেয়েকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলো। ওদের এই ঋণ কি অস্বীকার করতে পারবে তোমরা! আম্মাকে এসে যখন ঊষাকে মেহরিনের এ*ক্সি*ডে*ন্ট হওয়া থেকে বাঁচানোর কথা বললাম আম্মা দায়সারা ভাবে বললেন সেখানে অন্য কেউ হলেও এমন কাজ করতো৷ এরপর বড় ভাবীকে নিয়ে আমরা হাসপাতালে রাত কাটালাম জন্য আজ বড় ভাইয়া বড় ভাবীর সাথে দূ*র্ব্য*বহার করলেন, গাঁয়ে হাত উ*ঠা*তেও নিয়েছিলেন কিন্তু বড় ভাবীর সামনে ঢাল হয়ে রিজওয়ান দাঁড়িয়েছিলো। ওরা তো চাইলেই আমাদের দূ*র্ব্যবহারের কথা স্মরণ করে আমাদের ক্ষ*তি হতে দেখতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা নিতো। ওরা এমন করে নি কারণ ওরা সৎ ও ভালো মানসিকতার অধিকারী। বিশ্বাস যদি চোখ বন্ধ করে কাওকে করা যায় তাহলে সেই তালিকায় রিজওয়ান ও মেহরিন ই থাকবে কেবল তোমার মা বা ভাই নয়। আর আমি এ’ও জানি এখন তোমার মা আমাকে শা*ষা*বেন জন্যই ডেকে পাঠিয়েছেন। হয়তো আমাদের সম্পর্ক ও ঊষার কথা বলে আমাকে মানসিক ভাবে দূর্বল করানোর চেষ্টা করবেন, বাধ্য করবেন ওনাদের সঙ্গ দিতে। কিন্তু আমি তোমাকেই পরিষ্কার ভাষায় একটা কথা বলে দিচ্ছি। আম্মা বা বড় ভাইয়া হাজার চেষ্টা করলেও আমার মন তাদের দিকে আর কখনও ঘুরাতে পারবে না। এবার থেকে আমি সৎ ও ভালো মানসিকতার মানুষদের সাথে থাকবো, নিজের সবটুকু দিয়ে তাদের সাহায্য করবো এতে আমার সাথে যা হওয়ার হউক।”
এই বলে ঊর্মিলা রফিকুলের পাশ থেকে উঠে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। উদ্দেশ্য রাহেলার রুমে যাওয়া।
(৫৮)
শ্বাশুড়ি মা রাহেলা বেগম এর রুমে প্রবেশ করতেই ঊর্মিলা দেখলো তিনি ঊষাকে কোলে নিয়ে বসে আছেন। ঊর্মিলা ঊষাকে উদ্দেশ্য করে বললো……
—“ঊষা..মামনি এখন তোমার রুমে যাও। পরে আবার এসে দাদী মা’র সাথে খেলা করো৷”
ঊর্মিলার কথায় ঊষা কোনো রেসপন্স করে না। ঠায় দাদীর কাছে বসে আছে। রাহেলা তার ঠোঁটে বাঁকা হাসির রেখা স্পষ্ট রেখে ঊষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। কিছুসময় পেরিয়ে গেলেও ঊষাকে নড়তে চড়তে না দেখে ঊর্মিলার বুঝতে বাকি রয় না তার বাচ্চা মেয়েটার মন বি*ষি*য়ে দেওয়ার কাজে ইতিমধ্যেই তার শ্বাশুড়ি মা লেগে পড়েছেন। ঊর্মিলা ঊষাকে ধমকের স্বরে বললো…..
—“ঊষা..তোমাকে রুমে যেতে বললাম না আমি!”
মায়ের ধমকে কেঁপে উঠে ছোট্ট ঊষা। মুহূর্তের মধ্যেই দাদীর শিখিয়ে দেওয়া কথাগুলো হজম হয়ে যায় ওর। কাঁদো কাঁদো নয়নে একবার দাদীর দিকে তাকিয়ে দ্রুততার সাথে বিছানা থেকে নেমে এক দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় সে। ঊষার এভাবে চলে যাওয়ায় বিরক্ত হন রাহেলা। রাগী স্বরে বললেন…..
—“আমার নাতনীকে ধ*ম*ক দেওয়ার সাহস পাও কোথায় তুমি মেজো বউমা!”
ঊর্মিলা স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো…..
—“দশ মাস দশ দিন পেটে রেখে মৃ*ত্যু য*ন্ত্র*ণা সহ্য করে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছি যেই সন্তানকে সে অবাধ্য আচারণ করে তাঁকে বাধ্য বানাতে যা করা দরকার মা হিসেবে সেই সব করবো আমি। আর আমার কাজের কৈফিয়ত আমি কাওকে দিতে রাজি নই। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা আমি বলতে পারি না। তাই সরাসরিই নিষেধ করে দিচ্ছি আমার মেয়ের থেকে আপনি দূরে থাকুন। আমার নামে আমার বাচ্চা মেয়ের কাছে বি * ষ মন্ত্র ঢেলে তাঁকে আমার থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করলে আপনাকে আমি ছেড়ে কথা বলবো না। আমি ঠিক কতোটা খা*রাপ আর জ*ঘ*ন্য হতে পারি সে সম্পর্কে আপনার সামান্যতম ধারনাও নেই শ্বাশুড়ি মা।”
এই বলে ঊর্মিলা রাহেলাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রুম থেকে বেড়িয়ে যায়৷ রাগে যেনো শরীর জ্ব*ল*ছে রাহেলার। তার ভ*য়ে একসময় থ*র থ*রি*য়ে কাঁ*প*তো যেই মেয়ে সেই আজ তাঁকে স্পষ্ট ভাষায় হু*ম*কি দিয়ে গেলো! এভাবে সবকিছু তার হাতের বাহিরে চলে যাবে ভাবতেও পারে নি রাহেলা। আকস্মিক ভাবে তার স্বামী শরীফ সাহেব দেশে ফিরলে দু’টো মানুষের হালকা দল নিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে জোড় গলায় রিজওয়ান আর ওর স্ত্রীকে বাড়ি ছাড়া করার দাবি করবেন কি করে! ইতিমধ্যেই রাহেলার কপালে চিন্তার কয়েকটা ভাঁজ স্পষ্ট হয়েছে।
(৫৯)
নিজবাড়ি থেকে কিছুটা দূরে পার্কের ভিতর বেন্ঞ্চে মুখোমুখি হয়ে বসে আছে রিজওয়ান ও জিহাদ দু’জনেই। জিহাদের মুখশ্রী জুড়ে অজানা চিন্তা ও হালকা ভ*য় ছাপ স্পষ্ট ফুটে আছে। বিকেল হয়ে গিয়েছে। সূর্যের তেজ একেবারে হালকা এখন। তবুও ঘেমে কপাল ভিজিয়ে ফেলেছে জিহাদ। রিজওয়ান তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে জিহাদকে দেখছে। জিহাদের এই রূপ রিজওয়ানকে কিছুটা সন্তুষ্ট করছে। কারণ একজন ছেলে তার ভালোবাসার মানুষের গার্জিয়ানদের সামনে তখনই ভয় পায় তখন সেই ভালোবাসার মানুষটার প্রতি তার ভালোবাসা প্রকৃত হয়। রিজওয়ান স্মিত হাসি দিয়ে নিজের পকেট থেকে রুমালটা বের করে জিহাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো….
—“কপালের ঘাম টুকু মুছে নাও। আমার সামনে এতো ঘা*ব*ড়া*নোর কিছু নেই।”
জিহাদ জোরপূর্বক হাসি দিয়ে রিজওয়ানের থেকে রুমালটা নিয়ে দ্রুততার সাথে কপালের ঘামটুকু মুছে পুনরায় রুমালটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিতে নিলে রিজওয়ান বললো….
—“তোমার কাছেই রেখে দাও এটা।”
জিহাদ নিঃশব্দে রুমালটা নিজের পকেটে রাখে। রিজওয়ান পুনরায় বললো….
—“কতোদিন থেকে আমার বোন আর তুমি একে-অপরকে মন দিয়ে রেখেছো শুনি!”
জিহাদ নিজের মাথার পিছনের চুলগুলো আলগা হাতে বুলাতে বুলাতে বললো….
—“ইয়ে মানে ভাইয়া, ২বছর হচ্ছে প্রায়।”
—“সারাজীবনের জন্য আমার বোনের দায়িত্ব নিতে পারবে!”
—“আমার শুধু একটা কাজ নেওয়া প্রয়োজন। রুমির খরচ বহন করার সামর্থ্য হলে আমি নিজেই আপনাদের কাছে আসতাম রুমিকে নিজের করে চাওয়ার দাবি নিয়ে।”
—“তোমার বাবার সম্পর্কে তোমাকে কিছু বলতে হবে আমায় আমি জানি। শুধু একটা প্রশ্নই করবো, তোমার বাবা যদি এই সম্পর্ক না মানেন তাহলে তখন তুমি কি সিদ্ধান্ত নিবে!”
—“হারাম উপায়ে অর্জিত সয়-সম্পত্তির উপর আগ্রহ শুরু থেকেই ছিলো না আমার। এখনও নেই। বাবা আমাদের সম্পর্কের কথা জানতে পারলে যদি বাঁধা প্রদান করেন আমি এক কাপড়ে সব ছেড়ে-ছুঁড়ে তার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসতে মানসিক ভাবে প্রস্তুত আছি ভাইয়া।
জিহাদের মুখে এমন প্রতিত্তুর শোনার জন্যই প্রস্তুত ছিলো রিজওয়ান। জিহাদ যে তার বোনের জন্য যোগ্য তা বুঝতে আর বাকি রয় না রিজওয়ানের।
#চলবে ইনশাআল্লাহ………
#আমি_তোমারি_সনে_বেঁধেছি_আমারো_পরাণ💙(২৫)
#Maisha_Jannat_Nura(লেখিকা)
(৬০)
রাতের বেলা,
নিজ রুমে চিন্তিত মুখশ্রী নিয়ে মেঝের উপর পায়চারি করছে রুমি। সেইসময় রিজওয়ান ওর রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শান্ত স্বরে বললো…..
—“আসবো!”
রিজওয়ান এর কন্ঠ কর্ণপাত হতেই রুমি ওর দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো….
—“ভিতরে আসতে পারমিশন চাইছো কেনো ভাইয়া! অনায়াসেই চলে আসতে পারো।”
রিজওয়ান ভিতরে প্রবেশ করতে করতে বললো…..
—“তুই একজন বিবাহযোগ্য বয়সের মেয়ে। এই রুমটা তোর একান্ত নিজের জায়গা। একজন ভাই হওয়ার পাশাপাশি আমি একজন ছেলে। তাই তোর রুমে প্রবেশ করার পূর্বে অবশ্যই আমাকে তোর অনুমতি নিতে হবে।”
রিজওয়ানের চিন্তাভাবনা বরাবরের মতো রুমিকে মুগ্ধ করে। রিজওয়ান রুমির সম্মুখে দাঁড়িয়ে বললো….
—“আজ জিহাদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম বিকালে।”
রুমি উৎসুক নয়নে তাকিয়ে আছে রিজওয়ানের দিকে। আশানুরূপ জবাব সে শুনতে চায় তার ভাইয়ের কন্ঠে। রিজওয়ান আবারও বললো…..
—“জিহাদ নিজের পায়ে দাঁড়ালে তোদের দু’জনের চারহাত এক করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো আমি। এখন শুধু কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। এই সময়ের ভিতর তোদের মাঝে যে বা যারা সমস্যার সৃষ্টি করতে চাইবে তাদের সর্বপ্রথম আমার সম্মুখীন হতে হবে। নিশ্চিন্ত থাকতে পারিস তুই।”
রিজওয়ানের মুখে আশানুরূপ কথাগুলো শুনে রুমির দু’চোখ খুশির নোনাজলে টইটম্বুর হয়ে যায়। রুমি সঙ্গে সঙ্গেই কোনো দ্বিধা ছাড়া রিজওয়ানকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করেই কেঁদে উঠে। রুমির আকস্মিক এমন কাজে কিছুটা অবাক হয় রিজওয়ান। পরক্ষণেই রিজওয়ান ওর ঠোঁটে প্রশান্তির হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে রুমির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো….
—“চোখের সব পানি যদি আজই শেষ করিস বিয়ের পর বিদায়বেলায় কিন্তু আর চোখে পানি আনতে পারবি না। আমাদের ছেড়ে নতুন বাড়িতে, নতুন পরিবেশে যেতে হবে। খুশির পাশাপাশি হালকা দুঃখ ও থাকবে। তাই কিছু পানি বাঁচিয়ে রাখ পাগলী৷”
রুমি রিজওয়ানকে ছেড়ে দু’হাতে নিজের দু’চোখের পানি মুছে হাসিমুখে বললো…..
—“তোমাকে আর ভাবীকে চিনতে বড্ড দেড়ি করে ফেলেছি আমি ভাইয়া। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। তোমার এই ছোট বোনটা তার খারাপ আচারণের জন্য ভিষণ লজ্জিত।”
—“তোর উপর আমার যদি সামান্যতমও রাগ জমে থাকতো তাহলে আজ তোর জন্য জিহাদের সাথে কথা বলতে যেতাম না আমি। তুই তোর ব্যবহারের জন্য অনুশোচনা করছিস এই যথেষ্ট। এখন ভালো মেয়ের মতো নিজের পড়াশোনায় মনোযোগী হ। জীবনে ভালো রেজাল্ট ও জরুরী।”
—“ঠিক আছে ভাইয়া।”
অতঃপর রিজওয়ান স্থান ত্যগ করে।
(৬১)
হাসপাতালে আরফার কেবিনরুমে ওর মাথার পাশে রাখা চেয়ারটাতে বসে আরফার উপর নিজের অ*প*রাধী দৃষ্টি স্থির করে রেখে আরহাম। আরহামের দু’চোখ নোনাজলে ভরপুর হয়ে আছে। আরহাম ঢোকের সাহায্যে গলা পর্যন্ত আসা কান্নার দলাগুলোকে গি*লে নেওয়ার চেষ্টা করে বললো……
—“আমার মেয়ের এতোটুকু শরীরে কতো কতো সুঁ*চ, যান্ত্রিক লাইন লাগিয়ে রেখেছে ডাক্তাররা। এগুলো তো মানুষকে য*ন্ত্র*ণা দিয়ে দিয়েই উপকার করে। আমার মেয়েটা তো পাথর মূ*র্তি*র ন্যয় শুয়ে আছে। মুখ দিয়ে একটা টু শব্দ করছে না। ওর ও নিশ্চয়ই অনেক য*ন্ত্র*ণা হচ্ছে! কিন্তু চেয়েও নিজের য*ন্ত্র*ণা গুলোকে বাহিরের মানুষদের সামনে প্রকাশ করতে পারছে না।”
আরহামের কথার মাঝেই কেবিনরুমের ভিতরে আমজাদও প্রবেশ করেন। আমজাদ আরহামের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ওর কাঁধে হাত রাখতেই আরহাম বললো….
—“বাবা, আমার মেয়েটা যখন অভিমানী স্বরে প্রথম বার বলেছিলো সে তার মাম্মামের জায়গায় স্টার হয়ে তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিবে তখনও কেনো আমার ভিতর মনুষ্যত্ব বোধ জাগ্রত হলো না বলো তো! সেদিন বুকের ভিতরে চাপা য*ন্ত্র*ণা হচ্ছিলো। যদি সেই য*ন্ত্র*ণা*কে নিজের নিচ চিন্তার জাঁ*তা*কলে না পি*ষ্ট করে আমার মেয়েটাকে আপন করে নিতাম ওকে আর পাঁচজন বাবার মতো আদর দিতাম তাহলে হয়তো আজ আরফা এভাবে আমাদের সামনে জীবন-মৃ*ত্যু*র ল*ড়া*ই করতো না।”
আমজাদ একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন……
—“মানুষ তখনই নিজের ভু*লটা বুঝতে পারেন যখন সেই ভুলের জন্য নিজের জীবনকে দূ*র্বি*ষহ মূহূর্তের মধ্য দিয়ে পার করেন। আর সেই বুঝ ও শিক্ষা হয় চিরস্থায়ী। মানুষ পুনরায় সেই ভু*ল করার আগে ২ বার ভাবেন অন্তত। তুমি জীবনে যে ভু*ল করেছিলে তার জন্য এখন তোমার জীবনকেও দূ*র্বি*ষহ মূহূর্তের মধ্য দিয়ে পার করতে হচ্ছে। আর তুমি অনুশোচনাও করছো। তোমার এই শিক্ষাও চিরস্থায়ী হবে। শুধু আল্লাহ তায়ালার নিকট দু’হাত জুড়ে নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা ভি*ক্ষা চাও আর নিজের এই ফুলের মতো মেয়েটার সুস্থতার জন্য দোয়া করো। আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং বলেছেন , আমার বান্দারা তোমরা আমার নিকট আর্জি নিবেদন করো তোমাদের মনের গহীন থেকে যতো পারো ততো, তোমাদের চাওয়া ফিরিয়ে দেওয়ার সাধ্য আমারও নেই, তোমাদের আর্জিগুলো যদি কারোর ক্ষতির কারণ না হয় তাহলে অবশ্যই আমি তা কবুল করে নিবো।”
নিজের বাবার মুখে এরূপ কথাগুলো শুনে আরহামের হৃদয় আগের তুলনায় অনেকটা শীতল হয়ে যায়। সে নিজের দু’চোখ দিয়ে এতোসময় ধরে জমে রাখা নোনাজলগুলো বের করতে করতে বললো….
—“আমার মেয়েটার সুস্থতা আমার আল্লাহর নিকট ভি*ক্ষা চাইলে তিনি আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না তাই না বাবা!”
—“ইনশাআল্লাহ এমনটাই হবে। একজন সন্তানের জন্য তার বাবা-মায়ের দোয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানকে জীবনে সুস্থ ও সফল দেখতে হলে আল্লাহর নিকট তার জন্য মন খুলে দু’হাত তুলে দোয়া করো। দোয়া ঔষধের থেকেও বেশি কার্যকরী হয়।”
এই বলে আমজাদ আরফার কেবিনরুম থেকে বেড়িয়ে যান। আমজাদের বলে যাওয়া শেষ কথাটা আরহামের কানে এখনও বাজছে, ‘দোয়া ঔষধের থেকেও বেশি কার্যকরী হয়।’ আরহাম বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ওজু করে আসে। আরফার বিছানার ডানপার্শে থাকা ছোট র্যকের ভিতর জায়নামাজ ভাঁজ করে রাখা দেখে আরহাম জায়নামাজ টা নিয়ে কেবলামুখিতে বিছিয়ে দিয়ে নফল নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে পরে।
(৬২)
রাতে ঘুমানোর পূর্বে শেহজাদের একগ্লাস গরম দুধ খাওয়ার রোজকার অভ্যাস জন্য শেফালি দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে শেহজাদের রুমে প্রবেশ করে। শেহজাদ বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বই পড়ছিলো। শেফালি শেহজাদের হাতের ডান পার্শে এসে দাঁড়িয়ে বললো…..
—“শেহজাদ, এই যে বাবা দুধটুকু খেয়ে নাও তো। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। আজ আর পড়তে হবে না। দুধটুকু শেষ করে ঘুমাতে হবে।”
শেফালির কথাগুলো শেহজাদের কান পর্যন্ত পৌঁছালেও সে কোনো রেসপন্স করে না। আগের ন্যয় নিজের মন ও দৃষ্টি সে হাতে থাকা বইয়ের উপরেই স্থির করে রেখেছে। শেফালি নিজের কথার পুনরাবৃত্তি করলো। শেহজাদকে এবারও কোনো রেসপন্স করতে না দেখে শেফালি নিজের রাগ আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। দুধের গ্লাসটা বেডসাইড টেবিলের উপর রেখে শেহজাদের হাত থেকে ওর বইটা কেঁ*ড়ে নিয়ে বিছানার অন্যপাশে ছুঁ*ড়ে মে*রে ধ*ম*কের স্বরে বললো…..
—“এতো বড় লায়েক হয়ে যাও নি তুমি যে এখনই আমার কথা গাঁয়ে লাগাবে না নিজের মর্জি মতো চলবে আর আমি তোমাকে কিছুই বলবো না শেহজাদ। জন্ম দিয়েছি তোমায়। ছোট্ট বাচ্চা থেকে এতো বড় করেছি। কখনও যত্ন ও ভালোবাসায় সামান্যতম ত্রুটি হতে দেই নি। যখন যেটা আবদার করেছো বাবার সাথে রাগারাগি করে হলেও সেই আবদার পূরণ করেছি। আর আজ সেই তুমি আমাকে এড়িয়ে চলার মতো দুঃসাহ*সিকতা দেখাচ্ছো কি করে! বলো!”
নিজের মায়ের ধ*ম*কে এবার শেহজাদ পুরোপুরি ভাবে নড়ে-চড়ে বসে৷ ওর দু’চোখে ইতিমধ্যেই নোনাজলরা বাসা বেঁধেছে। শেফালি আবারও বললো…
—“আজই শুরু করেছিলে আজ আজই শেষ হচ্ছে। এরপর যদি ভুলেও কখনও আমার কথার অবাধ্য হয়েছো কিংবা আমাকে এড়িয়ে চলার মতো দুঃসা*হসি*কতা দেখিয়েছো তবে তোমাকে আমি বোডিং স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়ার বন্দবস্ত করবো। থেকো সেখানে একা একা। কেউ তোমাকে আদর দেখিয়ে খাবার খাওয়াতে যাবে না, তোমার কাপড় ধুয়ে দিবে না, প্রতিরাতে তোমাকে দুধ গরম করে এনে খেতে দিবে না৷”
শেফালির বলা কথাগুলো শুনে শেহজাদ এবার শব্দ করেই কেঁদে দেয়। ছেলেকে কাঁদতে দেখে শেফালির মায়ের মন শান্ত হয়। শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে সে বেডসাইড টেবিলের উপর থেকে দুধের গ্লাসটা নিয়ে পুনরায় শেহজাদের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো…..
—“দুধ টুকু এই মুহূর্তে শেষ করো।”
শেহজাদ সঙ্গে সঙ্গেই ওর মায়ের হাত থেকে দুধের গ্লাসটা নিয়ে কয়েক ঢোকের সাহায্যে শেষ করে। শেফালি নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে শেহাজাদের দু’চোখ ও মুখ মুছে দিয়ে বললো…..
—“কান্না করেছো জন্য তোমার আজকের আচারণ আমি ভুলে যাবো আর পুনরায় তোমাকে এমন আচারণ করার সুযোগ দিবো এমনটা ভেবো না। আমি যা বলেছি তা মাথা থেকে বের করে দিও না। তাহলে ফল কি হবে সেটা সম্পর্কেও তুমি অবগত। এখন ঘুমিয়ে পড়ো।”
শেহজাদ বিছানায় শুয়ে পড়ে। শেফালি শেহজাদের শরীরে কাঁথাটা টেনে দিয়ে ওর রুমের লাইটটা বন্ধ করে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
#চলবে ইনশাআল্লাহ…….